#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩০
ক্লাস শেষ হবার পর বাইরে এসে দেখি নিতি দাঁড়িয়ে আছে। তার দুই পাশে টিনা আর আনিকা। দেখে মনে হচ্ছে আমার জন্য’ই অপেক্ষা করছিলো তারা। ইতি আমার হাত ধরে পাশ দিয়ে যেতে নেবো তখনই নিতি আমার হাত টা ধরে ফেলল। আমি চমকে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছু একটা তো হবেই আজ মনে হচ্ছে। নিতি আমাকে টেনে নিয়ে গেল খালি ক্লাসরুমে। আমি খাবড়ে গেলাম। ইতি যদিও আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু তারা তাকে আটকে দিল। টিনা তাকে ধরে বাইরে নিয়ে গেল।
আমি খালি ক্লাসরুমে একা দাঁড়ানো। ক্লাসরুমটা যে শুধু খালি তা না তার সাথে বদ্ধ! দিনের বেলায় ও পুরো অন্ধকার এই ক্লাসরুম। আনিকা ক্লাসরুমের লাইট জ্বালিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। নিতি হেটে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। হুট করেই নিতি আমার হাত টা ধরে মুচরে দিয়ে বলে,
“সেদিন আহি তোমার এই হাত টা ধরে ছিলো না।
“আপু লাগছে আমার।
“লাগুক! দেখো কি কষ্ট হয়, তখন এর চেয়ে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছিলাম।
“এটা কি আমার দোষ! আহিয়ান ধরেছে আমার হাত। আমি কি উনাকে বলেছিলাম আমার হাত ধরতে।
নিতি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। অতঃপর আমার গাল দুটো চেপে ধরে বলে,
“ভালোই তো তর্ক করছিস দেখছি। তা এতোদিন কোথায়ও ছিল এসব। আগে তো কখনো বলিস নি একদিন আহিয়ান তো হাত টা ধরল আর এই সাহস পেয়ে গেলি।
খুব লাগছিল কিন্তু ছটফট করছিলাম না। কারন ছটফট করলেই ব্যাথা আরো লাগবে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথা শুনছি। নিতি একসময় বিরক্ত হয়ে আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল। আমি মেঝেতে বসে পড়ে গেলাম। নিতি আনিকা কে বলল আমাকে দরজা বন্ধ করে চলে যেতে।
আমি উঠে দরজার কাছে যাবার আগেই দরজা বন্ধ করে দিল। আমি কিছুক্ষণ দরজা ধাক্কালাম আর চিৎকার দিলাম। কিছুতেই কিছু হলো না। পুরো ভার্সিটি এখন ছুটি মানুষ না থাকাই স্বাভাবিক। যা আছে তাও নিচতলায়। আমার আওয়াজ এখান থেকে না শুনতে পাওয়া অসম্ভব কিছু না। কিছুক্ষণ দরজা বাড়ি দিতে লাগলাম।
একসময় হাঁফিয়ে বসে পড়লাম। আচ্ছা ইতি কোথাও? সেও কি চলে গেল নাকি। আমি লেট হচ্ছি। টিউশনি তে যেতে হবে আজ দেরি করলে রিনু’র মা আমায় ছেড়ে কথা বলবে না। গলা শুকিয়ে আসছে। মজার ব্যাপার হলো এতো বড় ঘরে একা থাকতে আমার বিন্দুমাত্র ভয় লাগছে না। ভয় লাগছে শুধু রিনু’র মা কে।
ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢক ঢক করে পানি খেলাম। হঠাৎ মনে হলো দরজার কাছে কেউ এলো। সে দরজা খুলছে। আমি নিজেকে সামলিয়ে দরজার দিকে তাকালাম। কে জানে এখন কয়টা বাজে। দেরি হয়ে গেলে সর্বনাশ করেছে।
দরজা খুলতেই আহিয়ান কে দেখতে পেলাম। তাকে দেখেই দৌড়ে তার কাছে গেলাম। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তার হাত ধরলাম। মানে তার হাতের ঘড়ি দেখার জন্য। দেখলাম সময় বেশি নেই যেতে লাগবে ৪০ মিনিট আছে ২০ মিনিট। আমি তার মুখের দিকে একবার তাকালাম। অবাক হচ্ছে না বিরক্ত হচ্ছে বোঝা দায়। কিন্তু এখন বোঝাবোঝির সময় নেই। আমি কোন কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। দ্রুত হাঁটছি। খানিকক্ষণ বাদেই টের পেলাম উনিও আমার পাশে পাশে হাঁটছেন। হাঁটতে হাঁটতে বাইরে এসে পড়লাম। দেখলাম ইতি আর আকাশ ভাইয়া কে একসাথে। দুজন”কেই বিচলিত লাগছে।
আমাকে দেখে তারা আমাকে জিজ্ঞেস করছে ঠিক আছি কি না। নিতি আমাকে কিছু বলেছি কি না। আমি স্বাভাবিক ভাবেই উওর দিলাম না। একবার তাকালাম আহিয়ান’র দিকে। সে শুধু তাকিয়েই আছে কিছু জিজ্ঞেস করছে না। এটা খুব অস্বাভাবিক! যেখানে সবার এতো কৌতুহল সেখানে কেন উনি এতো নিশ্চুপ বুঝতে পারছি না।
যত তাড়াতাড়ি পারি তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে মেইন রোডের কাছাকাছি চলে এসেছে। এই মেইন রোডের পর আরো ২০ মিনিট হাঁটা লাগবে কিন্তু আমি অনুমান করছি ১০ মিনিটের বেশি সময় আর নেই। যদিও এই সময়টা আমি অর্ণ কে পড়িয়ে বের হতাম কিন্তু এখন সবকিছুই উলোটপালোট হয়ে গেছে। সেটা আমার ক্লাসের জন্য’ই। সময় আবারো ঠিক করতে হবে। রাতের বেলায় মোটেও অর্ণ কে পড়ানো উচিত হবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি হঠাৎ করেই সামনে একটা বাইক এসে থামল। এটা যে আহিয়ান নিঃসন্দেহে সেটা আমি বলতে পারি। আহিয়ান আমাকে ইশারা করে বাইকে বসতে বলল। আমারো মনে হলো এটা বেশ ভালো হবে দ্রুত পৌঁছাতে পারব।
চড়ে গেলাম উনার বাইকে। উনি মোটামোটি ভালো গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছে। আমি উনার ঘাড়ে দু হাত রাখলাম । উনাকে পথ বলছিলাম আমি। একবার ডানে একবার বামে। উনি এখনো কিছুই জিজ্ঞেস করে নি আমায়।
রিনুর বাসার সামনে এসে থেমে গেলেন। আমি হেলমেট টা রেখে একটা বলি,
“থ্যাংকু!
বলেই যেতে নিবো তখনই আহিয়ান আমার হাত টা ধরে ফেলল। আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম। উনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এখনো ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বাকি।
“হুম! তা কি জিজ্ঞেস করবেন? কেন আপনার ঘড়ি থেকে এতো তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম, নাকি নিতি কি বলেছে এইসব। যদি এইসব’ই হয় তাহলে..
বলার আগেই উনি নিজের হেলমেট খুলে বললেন,
“আমি জানি তুমি কেন এতো তাড়াহুড়ো করে চলে এলে। নিতি তোমাকে কিছুই বলে নি। বললে ছেড়ে দিত আটকে রাখতো না। যাই হোক অন্ধকার ঘরে তুমি মোটেও ভয় পাও। শুধু আশায় ছিলে কখন আমি আসবো আর দরজা খুলবো। কারন তুমি জানতে আমি এসেই দরজাটা খুলবো। শুধু সময় গুনছিলে আর কিছু না তাই তো!
উনি যা বললেন তা যে সত্যি এটা আমি অস্বীকার করতে পারবো না। মনে মনে বেশ অবাক হলেও উনার সামনে স্বাভাবিক ভাবেই বলি,
“তাহলে হাত টা ধরে আছেন কেন?
“খেয়েছ কিছু?
“না বাসায় গিয়ে খাবো।
“বাসায় যাবে কখন?
“মনে হচ্ছে সন্ধ্যার দিকে।
“আইসক্রিমের দোকানের গলিটাতে..
“হ্যাঁ
অতঃপর আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“নাও তোমার সময় শেষ চলে যাও!
আমি চলে যেতে নিবো উনি আবারো আমার হাত ধরলেন। বিরক্ত মুখে তাকালাম। উনি আমার হাতে কিছু একটা রেখে চলে গেলেন। তাকিয়ে দেখি একটা বিস্কিট এর প্যাকেট। এটা দেখে কেন জানি অজান্তেই মুখে হাসি ফুটল। সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলে গেলাম!
.
রিনু কে পড়ানোর পর রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর বিস্কিট খাচ্ছি। রিনু’র বাসা থেকে তোহা’র বাসা এতোটাও দূরে না, কাছেই তবে তিহান আর অর্ণ’র বাসাটাই খুব দূরে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি, রিনু’র মা আজ বেশ অদ্ভুত ভাবে তাকালেন আমার দিকে না, বিরক্ত চোখে না। সন্দেহের চোখে! খানিকটা কৌতুহলী দৃষ্টিও বলা যেতে পারে তবে এটার কাহিনী টা কি?
অর্ণ কে পড়িয়ে বাসা থেকে বের হতেই দেখি আহিয়ান বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“পাক্কা ১০ মিনিট লেট তুমি!
“১০ মিনিট লেট করে আসলে ১০ মিনিট লেট করেই যেতে হবে।
“হুম বসো!
আমি উনার বাইকে চড়ে বসলাম। উনি বাইক চালাতে শুরু করলেন। আমি উনাকে বলি,
“আপনি বলেছিলেন আজ চাচা’র সাথে কথা বলাবেন!
“হুম বলো, ফোন এনেছি।
“ফোনটা কখন হাত ছাড়া করেন আপনি? সারাদিন তো হাতের নিয়ে গুঁতাগুঁতি করেন।
“ফোন কি গুঁতাগুঁতি করার জিনিস নাকি।
“তা না হলে আপনি কি করেন?
“দেখো বাইক চালানোর সময় ঝগড়া করো না। নাহলে শেষে তুমি আমি দুজনেই এক্সিডেন্ট করে উপরে চলে যাবো। তবে তুমি তো আগে থেকেই ভুতনি তাহলে এখানে কি হবে জানো!
“ইদানিং খুব বেশি কথা বলছেন না আপনি।
“তোমার এটা মনে হয়।
“তা নয় তো কি? আগে তো কথাই বলতেন না সবসময় চুপচাপ থাকতেন। ১০ টা কথা বললে একটা কথা বলতেন।
“সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে কথাটা শুনে!
“এখানে এটার যুক্তি কি?
“এর মানে হলো ভুতনি তোমার সঙ্গে থেকে আমি বাচাল হয়ে গেছি।
“আমি বলতে চান আমি বাচাল!
“একটু আগেই তো তুমি বললে তুমি নাকি একসাথে ১০ টা কথা বলো। আর এটা তো বাচাল রাই করে!
“অপমান করছেন।
“সেদিন তুমি ও তো করলে। আজ না হয় আমিও করলাম। শোধ হয়ে গেল।
“আচ্ছা তাহলে আপনি শোধ নিলেন।
“মোটেও না। এটা এমন কোন ব্যাপার না যে শোধ নিতে হবে।
“বেশি কথা না বলে মন দিয়ে বাইক চালান। বাসায় যেতে হবে।
“এখন রান্না করবে বাসায় গিয়ে!
“হুম! কেন এখন কি দাওয়াত চাইবেন।
“এক কাপ চায়ের জন্য যা কথা শোনালে এরপর আর..
“আচ্ছা আজকে যাবার সময় একটু দোকানে নামিয়ে দিয়েন চা পাতা আর বিস্কিট কিনে নিবো।
“রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাই তোমাকে?
“না!
“কেন?
“ওখানকার খাবার আমি খেতে পারি না। অস্তিত্ব লাগে! বাসায় চলুন।
উনি আর কথা বাড়ালেন না। সোজা বাসার সামনে এনে থামালেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“আজ কি চা খাবেন না!
“খাবো তুমি যাও আমি সব কিছু নিয়ে আসছি!
“হুম।
অতঃপর আমি চলে যেতে নিলাম। উপরে একবার তাকিয়ে দেখলাম দাদু দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের একসাথে দেখেছে নিশ্চিত। আমি মাথা নিচু করে সিঁড়িতে উঠতে গেলাম। ব্যাপার কি আমি ঘাবড়ে যাচ্ছি কেন?আমি কি কিছু করেছি। বাইকে করেই তো শুধু এসেছি। এজন্য দাদু কি আমায় খারাপ ভাববে।
ঘরে এসে ঘরটা ঝাট দিলাম। আপু সকালেই বলে গেছিল আজ রাতে আর আসবে না। নাইট ডিউটি করবে। যাই হোক এই নিয়ে আমার ভাবনা চিন্তা নেই। উনি বেশি হলে আর ১০ মিনিট’ই থাকবেন। এর বেশি কি?
আমি চুলোয় পানি বসিয়ে দিলাম। এর মাঝেই দরজা কেউ বাড়ি দিলো। মাথায় হঠাৎ করেই ব্যাথা করতে লাগলো। অসহ্য ব্যাথা! মনে হচ্ছে কেউ মাথা খেয়ে ফেলছে আমার।
মাথায় হাত দিয়েই দরজা খুললাম। আহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার আবার মাথা ফাটালো কে?
বিরক্ত হয়ে বলি,
“মাথা কেন ফাটাবে, মাথা ব্যাথা করছে।
“ওহ আচ্ছা। এই নাও!
বলেই আমার দিকে দুটো ব্যাগ ধরলেন। অতঃপর ঘরে ঢুকে গেলেন। আমি প্যাকেটে দেখি কিছু চা পাতি, বিস্কিট, দুধ, ডিম, আর কিছু আছে মনে হচ্ছে ভিতরে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“এগুলো কি এনেছেন আপনি।
“কেন চোখ নেই তোমার?
“আছে কিন্তু কেন আনলেন।
“খাবো বলে।
“আপনার বাড়ি থেকে কি বের করে দিয়েছে নাকি এখানে খাবেন।
“বার করে দেয় নি। মা আর বাবা গেছে কুমিল্লা। বাবা অফিসের একটা কাজে সেখানে গেছে। তার সাথে যাবার জন্য ইয়ান জেদ করছিল। আর ইয়ান কে দেখাশোনার জন্য মাও চলে গেছে। কাহিনী দেখলি নিজের ছেলের কথায় ভুলে গেল।
“বাসায় আর কেউ নেই।
“আছে তো। কয়েকজন সার্ভেন্ট আর গার্ড আছে। কিন্তু তবুও পুরো বাড়ি খালি খালি লাগছে।
“কখন গেলো তারা।
“সকালে গেছে।
“তার মানে আপনি দুপুরে কিছু খান নি।
“বিস্কিট খেয়েছিলাম একা একা বাসায় ভালো লাগছিলো না।
“এটা কি এই প্রথমবার হলো নাকি?
“মানে!
“মানে এটাই এমন আরো কয়েকবার হয়েছে তখন কি করেছিলেন!
“আকাশের সাথে ছিলাম।
“হুম বুঝলাম!
বলেই জিনিসপত্র নিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম। উনাকে”হুম বুঝলাম”বললেও আমি কিছুই বুঝতে পারি নি। আগে তো ছিল আকাশ ভাইয়া’র কাছে তাহলে এখন এখানে কেন এলো! এমনেই না কোন মতলব আছে। এভাবেও ছেলে মানুষ কে বিশ্বাস করতে নেই। তবে আইনগত সে আমার স্বামী কিছু হলে তো কেস ও করতে পারবো না।
হঠাৎ করেই কেন জানি গা ছমছম করতে লাগলো। ভাবতেও ভয় এখানে শুধু আমি আর উনি। পুরো ঘর খালি। আমি আস্তে আস্তে করে ঘরের ভিতর উঁকি দিলাম। দেখি উনি রুমে নেই। কি হলো? গেলো কোথায়? হঠাৎ মনে পড়ল হয়তো ওয়াশরুমে গেছেন। তাই হলো কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হলেন উনি। আমার থেকে তোয়ালে নিয়ে মুখ মুছে চুপ করে বিছানায় বসে পড়লেন। অতঃপর ফোনের মাঝে মুখ গুঁজে দিলেন। উনাকে এভাবে থেকে কিছুটা হালকা বোধ হলো। মনের ভিতর থেকে বোঝা নেমে গেল। আমি আবারো রান্না ঘরে এলাম। খানিকক্ষণ বাদে দু কাপ চা আর বিস্কুট নিয়ে রুমে এলাম। এখনো আগের অবস্থায় বসে আছেন উনি।
চা হাতে নিয়ে চুমুক দিলেন। আমি উঠে রান্না ঘরে এলাম ভাত চড়ানোর জন্য। কিছুক্ষণ বাদে ঘরে ফিরে এলাম। উনি বলে উঠলেন,
“তুমি চা খাবে না।
“হুম খাবো।
“ঠান্ডা হলে খাবে না কি? একটু আগে না বললে মাথা ব্যাথা করছে!
“আসছি!
আমি গিয়ে বসলাম। উনি একটা বিস্কিট নিয়ে মুখে দিলেন। আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মুখে দিতে যাবো দেখি উনি আমার কাপের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার খাবড়ে গেলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে চায়ে কিছু একটা মিশিয়েছেন উনি। উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“কি হলো? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। আজ কেন জানি অদ্ভুত সব চিন্তাভাবনা আমার মন কে অস্থির করছে। কিন্তু কেন? এর আগেও তো উনি একবার এলেন কিন্তু তখন তো এমন কিছু হয় নি। তবে আজ কেন হচ্ছে? আচ্ছা মিতু আর মুন্নি আপু যে রাতে আসবে না এই কারনে কি উনি এমন করছেন। কিন্তু আপু যে আসবেনা সেটা তো উনার জানার কথা না। আমি বলে নি। তাহলে!
“ভুতনি!
“হ্যাঁ..
“কি হলো? এভাবে থম মেরে বসে চায়ের কাপ হাতে আছো কেন?
আমি আনমনে বলে উঠি..
“আমি আপনার চা খাবো!
উনি তখন বিস্কিট মুখে দিচ্ছিলেন। আমার কথা শুনে নিজের মুখে নিজেই কামড় খেলেন। গালে হাত দিয়ে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন..
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩১
“কি বললে তুমি? তুমি আমার চা খাবে।
আমি কথা না বলে উনার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে আমার টা উনার হাতে দিয়ে বলি,
“আমি এটাই খাবো!
বলেই চা খেতে থাকি। উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর চায়ের কাপে চুমুক দেন। আমি চোখ ছোট ছোট করে দেখছি উনি কি সত্যি ‘ই চা খাবেন কি না। উনি চা খেলেন। আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে চায়ের কাপে মুখ দিতেই উনি বলেন,
“দেখলে মরি নি আমি, বিষ ছিল না এতে।
বির বির করে বলি,
“আমি কখন বললাম বিষ আছে
“তাহলে আমার ভাগের আর্ধেক খাওয়া চা কেন খেলে, ভালোবাসা বাড়াতে বুঝি!
উনার কথায় গরম চায়ে আমার জিহ্বা পুড়ে গেল। আমি উনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলি,
“কি বললেন?
“কিছু না।
“তাহলে আমি কি শুনলাম।
“সেটা তো তুমি জানো।
আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলি,
“আমাদের মধ্যে কোন ভালোবাসা নেই যে বাড়বে। তবে ঝগড়া আছে আর আমার মনে হচ্ছে সেটাই বাড়বে।
বলেই রান্না ঘরে চলে এলাম। চা মুখে দিয়ে ডিম সিদ্ধ বসলাম। অতঃপর আবারো ঘরে এলাম। উনি এখনো বসে বিস্কিট খাচ্ছে। মাথায় চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে। ঠিক মতো চা খেতে পারলাম না আজ উনার কারনে। উনি আমাকে ডেকে বসতে বললেন। অতঃপর আমি বসার পর উনি আমার হাতে ফোন দিয়ে বললেন,
“নাও ফোন নাও।
আমি উনার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলি,
“কি করবো।
“ফোন দাও।
“লক কি ফোনের?
“ইয়ান!
আমি ইয়ান লেখার সাথে সাথে ফোনের লক খুলে গেল। একটা হাসি মাখা বাচ্চার মুখ ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। বাচ্চাটা অনেক মিষ্টি দেখতে। তার সাথে আহিয়ানের চেহারার মিল আছে বলে মনে হচ্ছে। উনি বলে উঠে,
“এটা ইয়ান। আমার আপুর ছেলে।
“ওহ আচ্ছা!
বলেই আমি নাম্বার ডায়াল করতে লাগলাম। অর্ধেক ডায়াল করার পর চাচা নামটা ভেসে উঠল। দেখলাম এটা চাচা’র নাম্বার। আমি সেই নাম্বারে টাচ করলাম। কল যাচ্ছে উনি বলে উঠেন,
“তোমার চা খাওয়া শেষ!
মুখ ভেংচি দিয়ে বলি,
“যেই না আর্ধেক চা সব তো আপনি একাই খেলেন।
উনি হাসতে হাসতে চায়ের কাপ টা নিচে রাখল। আমি তাকিয়ে রইলাম তার হাসির দিকে। স্নিগ্ধ একটা হাসি। এর মাঝেই ওপাশ থেকে চাচা’র আওয়াজ পেলাম। আমি ফোন টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে এলাম!
“হ্যালো চাচা!
“কেডা, মা নিহা!
“ভালো আছো চাচা!
“আছিরে মা, আল্লাহ রাখছে। তুই বল তোর শশুড় বাড়ি কেমন? সব ঠিকঠাক আছে তো।
“জ্বি চাচা এখানে সব ঠিক আছে। মা কেমন আছে, বাবা’র শরীর কেমন!
“ভাবী ভালো আছে। ভাইয়ার শরীল টাও ভালা!
অতঃপর এভাবেই কিছুক্ষণ কথা চলতে লাগল
আমাদের। মা, বাবা সবার সাথেই কথা বললাম। অতঃপর ঘরে এসে দেখি উনি জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। এই জানালার পাশেই রাস্তা।
আমি উনার পিছনে গিয়ে দাঁড়ানোর পর উনি নিজ থেকেই পিছনে ফিরলেন। বললেন,
“কথা বলেছো!
“হুম,এই যে আপনার ফোন!
উনাকে ফোন টা দিয়ে রান্না ঘরে এলাম। ডিম সিদ্ধ হয়ে গেছে, ভাত হতে এখনো একটু সময় লাগবে। যত তাড়াতাড়ি উনি খেয়ে বিদায় হবে তত’ই ভালো।
“তুমি আমাকে তাড়াতে চাইছো।
আমি পিছনে ঘুরে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছে। আমি এবার সামনে ঘুরে ডিমের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলি,
“একটা মেয়ের বাসায় এতো রাতে থাকাটা কেউ সহজ ভাবে নিবে না বুঝলেন।
আমার পাশে দাড়িয়ে,
“হুম বুঝলাম!
“কি বুঝলেন।
“জানি না!
আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
“দাদু আপনাকে আসার সময় দেখেছে, এতোক্ষন আমার বাসায় থাকলে জানেন তিনি কি ভাববে।
“না দেখেনি!
“এতো সিউর হয়ে কিভাবে বলছেন।
“কারন তখন আজান দিচ্ছিল। আর তাদের বয়সের মানুষেরা আজানের সাথে সাথেই নামাজে দাড়ায় তাই। বাই দ্যা ওয়ে তুমি ডিম দিয়ে কি করবে।
“আলু দিয়ে রাঁধবো।
“ওহ আচ্ছা।
“আপনার মা বাবা কবে আসবে।
“চলে আসবে, ৩ বা ৪ দিন পর। ভালো কথা তোমাকে আর এখানে রাধতে হবে না। আমার বাসায় গিয়ে রাঁধবে।
“মানে!
“আপুর সাথে কথা হয়েছে, দু’সপ্তাহ পর চলে আসবেন তিনি। তখন’ই নিয়ে যাবো তোমায়।
“আমি যাবো না আপনার সাথে।
“কেন?
“ভাবছি আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে আবারো একা থাকা শুরু করব।
“কিন্তু তুমি তো বলেছিলে জীবন চলার পথে নাকি কারো সঙ্গ চাই!
“হুম বলেছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই সব’ই বিধা। জীবন চলার পথে একটু সাহস আর শক্তি থাকলেই চলে।
“কবিদের মতো কথা না বলা ছাড়ো। ডির্ভোস দিবে ভালো কথা কিন্তু এজন্য ও তোমাকে আমার সাথে ৬ মাস থাকতে হবে। নিউ কাপলদের এতো তাড়াতাড়ি ডির্ভোস হয় না। আর এখানে তো তোমার আমার বিয়ের আজ ২ দিন হলো সবে।
“এই বিয়ের কোন দাম নেই আমার কাছে
“আমার কাছেও নেই তবে দায়িত্ব আছে
আমি উনার দিকে তাকিয়ে আবারো রান্নায় মনোযোগ দিলাম। আলু আর পেঁয়াজ কাটছি। উনি কিছু মসলা পাতি নিয়ে এসেছে আজকে। কি আর করবে কথায় আছে না ‘কাজ নেই তো খই ভাজ” উনার অবস্থাও এখন এটা। একপাশে পা দিয়ে হেলান দিয়ে ফোন নিয়ে গুঁতাগুঁতি করছে।
.
রান্না শেষ করে উনাকে খেতে দিয়েছি। উনি প্লেট’র দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি খাবে না।
“না আপনি খান আমি পরে খাবো।
“আরে এখন খেয়ে নাও নাহলে আবার কিছু মিশিয়ে দেবো আমি।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে উঠে গেলাম। উনি পেছন থেকে বলেন,
“সারাদিন না খেয়ে আছো শেষে কিছু হয়ে গেলে সবাই আমাকে দায়ি করবে বুঝেছ।
“আস্তে কথা বলুন উপরে দাদু রা থাকেন।
“আমি জোরে কথা বললাম কখন?
“এই যে বলছেন।
“আর তুমি তো ঝগড়া করছো। এজন্য বলে কারো ভালো করতে নেই।
“নিজের টা আগে করুন লাভ হবে।
অতঃপর উনি প্লেট নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসলেন খেতে। আমিও বসলাম কারন খুব ক্ষিধে পেয়েছে আমার। উনি খাবার মুখে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে বলে,
“বুঝলে ভূতনি তুমি আমার ধারনা পাল্টে দিয়েছ।
“কেমন?
“এমন যে আমি ভাবতাম তোমার মতো মেয়েরা হয়তো রান্না করতে পারে না।
“আমার মতো মেয়ে না।
“তোমার মতো ঝগড়াটে ভূতনি!
“খাওয়ার সময় ঝগড়া করিয়েন না। চুপচাপ খেতে থাকুন।
“তা তো খেতেই হবে। নাহলে দেখা যাবে তুমি চায়ের মতো আমার ভাতের প্লেট ও নিয়ে যাবে। আবারো বলবে আর্ধেক খেলে ঝগড়া বাড়বে!
বলেই মুচকি হাসলেন। এই প্রথম উনার হাসি দেখে আমার রাগে শরীর জ্বলছিল। আমি উনার থেকে মুখ ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে খেতে লাগলাম। এবার উনার জোরে জোরে হাসার শব্দ পেলাম।
খাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই উনি বলে উঠেন,
“ভূতনি!
“কি?
“লবণ দাও!
“তরকারিতে তো লবণ ঠিক আছে।
“তো কি? আরো লাগবে নিয়ে আসো।
আমি বিরক্ত ভঙ্গিতে উঠে রান্না ঘরে গিয়ে লবণ নিয়ে এলাম। অতঃপর বসার পর উনি আবারো বলেন,
“ভূতনি!
“কি?
“পানি দাও!
আমি এবার উনার দিকে ফিরে বলি,
“সমস্যা কি বলুন তো?
“কোন সমস্যা নেই।
“তাহলে আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?
“বিরক্ত কোথায় করছি, শুধু পানি খেতে চাইলাম। মেহমান কে খেদমত করবে না নাকি।
বির বির করে বলি,
“বিন বোলায়ে মেহমান!
“কি বললে!
“কিছু না, আনছি পানি।
আবারো উঠে পানি আনলাম। এর সাথে পানির জগও নিয়ে এলাম। উনার দিকে তাকিয়ে আবারো খেতে বসলাম। খেতে গিয়েও শান্তি দিবেন না উনি আমায়।
অতঃপর উনি খেয়ে উঠলেন। কিন্তু আর বসলেন না চলে গেলেন। উনাকে ছাড়তে নিচ অবদি গেলাম না। এটা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। দরজা থেকেই বিদায় দিলাম উনাকে। উনি বলেন,
“সকালে আমি নিতে আসবো তোমায়, তৈরি থেকো! বলেই নেমে গেলেন। আমি রান্না ঘরে এসে দাঁড়ালাম। উনি মাথায় হেলমেট দিয়ে আমার দিকে তাকালেন। অতঃপর বাইকে চড়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
থালা বাসন সবকিছু ধুয়ে বিছানায় এসে বসলাম। বেশ ক্লান্ত লাগছে আজ। মিতু আর মুন্নি আপু আজ আসবে না তার মানে পুরো ঘরে আমি একা থাকবো।
বিছানায় বসে ছিলাম। কখন যে এভাবে ঘুমিয়ে গেলাম জানি না তবে ঘুম ভাঙল একটা দুঃস্বপ্ন দিয়ে। দুঃস্বপ্ন টা অনেক ভয়ানক ছিলো। আমি চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। আশপাশ তাকিয়ে দেখি কেউই নেই। মাথার উপর ভন ভন করে ফ্যান চলছে। ঘেমে একাকার আমি। অনেক অস্থির লাগছে নিজেকে। বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গিয়ে মুখে পানি দিলাম।
ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছি! মুখ মুছে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। বাইরে এখনো আলো ফুটেনি। এর মানে এখনো মাঝরাত। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩.৫০ বাজে। ভোর হবে কিছুক্ষণ বাদে। আমি শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বিছানায় বসলাম। নিজেকে শান্ত করছি। অপেক্ষা করছি ভোর হবার।
স্বপ্নটার কিছু কিছু স্মৃতি আমার মস্তিষ্কে ঘুরছে। আমি ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা ঘরে। কোন আরো নেই সেই ঘরে। হঠাৎ করেই আমার মাথার উপর একটা লাইট জ্বলে উঠলো। চমকে উঠলাম আমি। আমি আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু চারপাশ শুধুই অন্ধকার। সেই অন্ধকার থেকে লম্বা লম্বা কয়েকটা হাত এগিয়ে আসছে আমার কাছে। ভয়ে আতকে উঠলাম। চিৎকার করার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না। তারা আমার কাছে আসছে আরো কাছে..
অতঃপর স্বপ্ন টা এখানেই ভেঙে গেল।
কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলাম। চারদিকে কোন আওয়াজ নেই। রাস্তায় কিছু কুকুর দের আওয়াজ আসছে। তারা রাত জেগে শুধু ডেকেই যায়। ফ্যানের শো শো শব্দ আসছে আমার কানে। কতোক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর আজানের ধ্বনি কানে এলো। ভয় আবার কমতে শুরু করল। আমি উঠে অযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।
মিতু আপু আর মুন্নি আপু চলে এলো। দুজনেই এসে ঘুমিয়ে পড়ল কিন্তু আমার যে আর ঘুম আসছে না। নিজেকে খুব ক্লান্ত লাগছে। তাই বসে না থেকে গোসল টা সেরে নিলাম।
গোসল করে কাপড় নিয়ে ছাদে চলে এলাম শুকাতে দেবার জন্য। অতঃপর সেখানে দোলনায় বসে রইলাম। আশপাশের পরিস্থিতি দেখতে লাগলাম। গাছের ডালে পাখিরা কিচিরমিচির ডাকছে। হয়তো পাখিদের ছানা। ক্ষিধে পেয়েছে তাদের। তাদের মা উড়ে চলে গেল খাবারের সন্ধানে। ছানাদের ক্ষিধে নিবারণ যে করতে হবে।
দূরে দেখলাম খবরের কাগজ নিয়ে একটা ছোট ছেলে সাইকেল নিয়ে আসছে। এই ছোট ছেলেটা ও কাজ করছে বেঁচে থাকার জন্য। খুব সমস্যায় না পড়লে এতো কম বয়সে কেউই কাজ করতে চায় না। সকালের আকাশ বরাবরই কুয়াশায় ভরপুর হয়। আজও তার ব্যতিক্রম না। পুরো আকাশ কুয়াশায় ঢাকা। চারদিক কুয়াশায় ভরা। শীত লাগছে আমার আমি গায়ের উড়না টা অযথা জড়িয়ে নিলাম কারন এটা দিয়ে আমার শীত কমবে না।
গুটিসুটি মেরে দোলনায় বসে রইলাম। একসময় এইখানেই ঘুমিয়ে গেলাম। হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেল আমার। ঘুম ভাঙতেই দেখি অনেক বেলা হয়ে গেছে। কিভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম এখানে আমি!
উঠে দাদা আর দাদু’র সাথে দেখা করলাম। অতঃপর ঘরে চলে এলাম। মিতু আর মুন্নি আপু মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। আমি রান্না ঘরে এসে রাতের খাবার সব গরম করলাম। অতঃপর খাবার খেয়ে পড়তে বসলাম। অনেকক্ষণ ধরেই পড়লাম অতঃপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভার্সিটির সময় হয়ে গেছে। কিন্তু উনি এখনো এলেন না।
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে বাইকের আওয়াজ শুনতে পেলাম। রান্না ঘরে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখি উনি এসেছেন। ঘরে এসে উড়না টা গায়ে দিয়ে চুল আঁচড়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম। আমাকে দেখে হেলমেট টা এগিয়ে দিলেন। আমি হেলমেট টা পরার পর বাইকে উনার পিছনে বসলাম। উনি বাইক চালাতে শুরু করলেন।
বাইক এসে থামল ভার্সিটিতে! আমি উনার বাইক থেকে নামলাম না অন্য কোথা থেকে নামলাম বুঝতে পারলাম না। সবাই কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ব্যাপারটা খুব অস্বস্তিকর! তবে ভালো হয়েছে নিতি এখানে নেই। আমি বাইক থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। উনি বললেন,
“ক্লাস শেষে দাঁড়াবে বুঝলে!
আমি মাথা নাড়িয়ে চলে এলাম, এসে বসলাম ক্যাম্পাসে। উনাকে দেখতে পেলাম না। খানিকক্ষণ পর’ই এসে পড়ল ইতি। দুজনে মিলে গল্প শুরু করে দিলাম। হুট করেই কেউ পিছন থেকে আমার কানের কাছে এসে বলল,
“হেই সুন্দরী!
তার কথায় আমি চমকে উঠলাম। অতঃপর ফিরে তাকালাম…
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩২
পিছনে ঘুরে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও গলার আওয়াজ শুনে আমি আন্দাজ করেছিলাম এটা একটা ছেলে তবুও এখন নিশ্চিত হলাম। তবে তাকে আমি চিনি না। ছেলেটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার চাহনিতে আমার বেশ অদ্ভুত লাগল। ছেলেটা আমার বেশ কাছে। আমি তার থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলাম।
ছেলেটা একগাল হেসে বলে,
“মনে হচ্ছে তোমাকে ভয় পাইয়ে দিলাম!
আমার মুখ থেকে কোন কথাই বের হলো না। ইতি বলে উঠে,
“তুমি এখানে কি করছো?
“আরে ইতি যে, তা একি তোমার বান্ধবী নাকি।
“সেটা জেনে তুমি কি করবে, ওর থেকে দূরে থাকবে বুঝলে।
“দূরেই তো আছি। কিন্তু এই সুন্দরী কি এতোদিন কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে বলো।
“লুকিয়ে কেন রাখবো।
“তাহলে আমার চোখে কেন এতো দিন পড়ে পরল। তবে শুনেছি সুন্দর জিনিস নাকি চোখে পড়তে সময় লাগে সেটাই সত্যি হলো।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ছেলেটার দিকে। ছেলেটা আমাকে একটা চোখ টিপ দিল। আমার বিরক্ত লাগলো। ইতি কে বললাম,
“ইতি চল এখান থেকে!
“হুম চল! এখানে থেকে ফালতু কথা বলার কোন মানেই নেই।
বলেই দুজনে চলে যেতে নিলাম, হঠাৎ ছেলেটা আমার হাত ধরে বলল,
“আরে পালিয়ে যাচ্ছো কেন, অনেক দিন পর সিফাতের কোন মেয়েকে চোখে পড়েছে। এতো সহজে যে কি পালিয়ে যেতে দিবো না।
আমি চোখ মুখ শক্ত করে বলি,
“তাহলে চোখ বন্ধ করে রাখুন আর আমার হাত ছাড়ুন।
ছেলেটা হেসে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল,
“নাও ছেড়ে দিলাম।
ইতি রেগে বলল,
“একটু বেশি করছো কিন্তু সিফাত। আমি তো তোমার নামে স্যারের কাছে বিচার দেবো।
“দিও, সমস্যা নেই।
আমি বলে উঠি,
“পরবর্তীতে আমার হাত ধরার সাহস করবেন না।
অতঃপর বলেই চলে এলাম। ছেলেটা পেছন থেকে বলে উঠে,
“আরে এই সুন্দরী’র নামটা কি সেটাই তো জানা হলো না। নামটা তো বলে যাও!
ছেলেটার কথাগুলো কাঁটা’র মতো আমার শরীরে বাধছিল। খুব রাগ হচ্ছিল। ইতি বলল ছেলেটা নাকি খুব খারাপ। সারাদিন মেয়েদের পিছনে ঘোরাঘুরি করাই এর কাজ। কিন্তু এই ছেলে এখন আমার পিছনে লেগে আছে কেন?
প্রশ্নটার উত্তর পেতে বেশিক্ষণ লাগলো না। ক্লাস শেষ করে বের হবার পর’ই দেখলাম টিনা, নিতি ওরা ছেলেটার সাথে হেসে কথা বলছে। কেন জানি মনে হচ্ছে তারাই ছেলেটাকে বলেছে আমার পিছনে ঘুরতে। জ্বালাতন করতে! এটা শুধু আমার ভাবনা না ইতিও’র সেও এই একই কথা ভাবছে।
আমরা দু’জনেই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। হঠাৎ করেই আহিয়ান, আকাশ ভাইয়া সবাই এলো। সিফাত কে দেখে আহিয়ান নিজ থেকেই তাকে জড়িয়ে ধরল। অতঃপর সেও তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মনে হচ্ছে সিফাতের সাথে আহিয়ানের সম্পর্ক ভালো। আকাশ ভাইয়া কেও অনেক কমফোর্টেবল দেখাচ্ছিল তার সাথে। ইতি অবাক হয়ে বলে,
“এগুলো কি হচ্ছে?
“কি আর হবে। বন্ধুত্ব দেখছিস না।
“এই বাজে ছেলেটার সাথে।
“আমি কি জানি।
বলেই নেমে এলাম। যদিও আমার খুব রাগ হচ্ছিল। কেন এই ছেলেটা উনার সাথে। উনি কি ছেলেটার স্বভাব সম্পর্কে অবগত নন। বাজে ছেলে না হলে প্রথম দেখাতেই কোন মেয়ের হাত ধরতে আসে না সে।
আমি আর ইতি বের হয়ে গেলাম ভার্সিটি থেকে। উনাকে ক্রস করেই এসেছিলাম। দু’জনেই একটা নির্দিষ্ট সময় অবদি হাঁটার পর দু’জনের রাস্তা আলাদা হয়ে গেল। গন্তব্য হলো ভিন্ন! ইতি চলে গেল এক রাস্তায় আর আমি অন্য টায়।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই পিছন থেকে বাইকের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এটা উনি বলে মনে হচ্ছে। ধারনা সত্যি হলো যখন উনি এসে আমার সামনে ব্রেক করলেন। আমি উনার দিকে খানিকটা বিরক্ত নিয়ে তাকাই। কেন জানি সেই ছেলেটার সাথে তার মেলামেশা আমার মোটেই ভালো লাগছে না। এটা স্বাভাবিক। তোমার যা কে ভালো লাগে না, সে যার সাথে থাকে তাকেও তোমার ভালো লাগবে না।
উনি বলে উঠেন,
“দাঁড়াতে বলেছিলাম তোমায়?
“কোথায় দাঁড়াব আপনার মাথায়।
“এর চেয়ে ওর রাস্তার মোড়ে দাঁড়ালে বেশি ভালো হবে।
“ধ্যাত!
বলেই পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। উনি আমার পাশে পাশে বাইক নিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে বলে,
“এতো রেগে আছো কেন?
আমি উনার হাত ধরার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,
“বাইকে বসো। তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অতঃপর ভাবলাম উনার উপর রাগ করে কি লাভ। উনি কি কিছু করেছেন নাকি। আমি কেন তার উপর বিরক্ত হচ্ছি। মাথা ঠান্ডা করে উনার পিছনে বসলাম। কিন্তু এবার আর উনার ঘাড়ে হাত রাখলাম না।
উনি বাইক চালাচ্ছে। হঠাৎ বলে উঠেন,
“তুমি কার রাগ আমার উপর ঝাড়ছো বলো তো।
“কারো রাগ না
“তাহলে হঠাৎ এই ব্যবহার কেন করছো।
“কি ব্যবহার করলাম
“না কিছু না। এখন কি বাসায় যাবে।
“না।
“কেন?
“এমনেই মন চাইছে তাই।
“কিন্তু সময় তো আছে। বাসায় গিয়ে খেয়ে নাও তারপর টিউশনিতে যেয়ো।
“আপনি বাইক থামান তো।
“কেন।
“থামাতে বলেছি তাই।
উনি বাইক থামিয়ে বলে,
“কি হয়েছে?
“আপনি আপনার বাইক নিয়ে যান এখান থেকে। আমি হেঁটেই যেতে পারবো।
বলেই সামনে ফুটপাতে হাঁটতে লাগলাম। উনি পেছন থেকে দুবার “ভূতনি” বলে ডাকলেন। আমি সাড়া না দিয়ে চলে এলাম।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই আবারো কেউ আমার হাত ধরল। আমার হাত ধরে সে তার দিকে ঘুরাল। নিরব এই দুপুরে আশেপাশে তেমন কেউ নেই শুধু কিছূ গাড়ি ছাড়া। ফুটপাতের কিছু দোকান খুলা। আহিয়ান ঠিক আমার সামনে আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দুটি স্থির। মুখটায় খানিকটা বিরক্ত, নাকি অনেক বিরক্ত।
হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে, এই বাতাস শরীরে কাটা দিয়ে তুলছে। শীত লাগছে, আমি খানিকটা শক্ত হয়ে বলি,
“আমার হাত ছাড়ুন।
উনি ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“কি হয়েছে সেটা তো বলো!
আমি উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে বলি,
“ছুঁবেন না আমায়।
বলেই চলে এলাম। হাঁটতে হাঁটতে অনেকখানি চলে এসেছি। উনি এখনো আমার পিছু পিছু হাঁটছে আর বলছে,
“ভূতনি, এই ভূতনি শোন না।
আমি পিছনে না ফিরে হেটে যাচ্ছি। হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ গুঁতো দিলো আমায়। আমি পিছনে ফিরে দেখি উনি একটা গাছের ডাল হাতে নিয়ে আমাকে খোঁচা দিচ্ছে। আসার সময় আশপাশ অনেক বড় বড় গাছ দেখেছি। সেখান থেকেই তুলেছে নিশ্চিত। আমি বলে উঠি,
“খোঁচা দিচ্ছেন কেন?
“ছুঁতে মানা করেছো তাই খোঁচা দিচ্ছি। তোমার জন্য মাঝ পথে বাইক ছেড়ে চলে এসেছি। বাইকের চাবি ও বাইকে।যদি আমার বাইক তোমার কারনে চুরি হয় না তো দেখো তোমার কি করি।
“আপনাকে বাইক এভাবে ফেলে কে আসতে বললো।
“তুমি!
“কিহ? আমি কখন বললাম।
“মানে তুমি বাধ্য করেছো তাই।
“এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ওখানে গেলেই তো পারেন।
“তুমিও চলো আমার সাথে।
“আপনার সমস্যা কি বলুন তো।
“কিছু না।
“ধুর।
উনি কোমরে হাত দিয়ে বলে,
“ভূতনি! যদি বাইকের কিছু হয় না দেখো!
“আমাকে থ্রেড না দিয়ে গিয়ে দেখুন না।
আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে সরে দাঁড়ালেন। আমি রেগে আবারো উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম। একটু শান্তি দিবে না এই লোকটা আমায়। কতোখানি পথ হাটাচ্ছে আমাকে দিয়ে। আমার পিছনে পিছনে ডাল টা হাতে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে আসছে। আজব লোক একটা!
বাইকের কাছে এসে আমি বাইক উঁকি দিয়ে দেখছি। উনি ডাল টা নিয়ে আমার মাথায় বাড়ি দিয়ে বলে,
“কি খুঁজছো!
“চাবি! বাইকের চাবি কোথাও?
“মনে হয় চোর শুধু চাবি নিয়ে চলে গেছে, বাইক নিতে ভুলে গেছে।
“পাগল হয়েছেন!
“না তুমি হয়েছ! ধরতেই পারলে না আমি মিথ্যে বলেছি!
অতঃপর বাইকে বসে বলল,
“নাও বসে পরো। তোমার চেয়ে আমার কাছে আমার বাইক ইম্পর্ট্যান্টে, এটাকে হারাতে পারবো না আমি।
আমি চোখ ছোট ছোট করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। ইচ্ছে তো করছিল ওই ডাল টা দিয়ে উনার মাথা ফাটিয়ে দিই। যদিও ডাল টা ভেঙে যাবে উনার মাথাও আস্ত থাকবে, মাঝখান থেকে আমার হাতটা যাবে!
উনি আমার সামনে চুটকি বাজিয়ে বললেন,
“বসবে কি না বলো। তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে এখন। তোমার জন্য অনেক হেঁটেছি।
আমি হেলমেট মাথায় দিয়ে পেছনে বসে বলি,
“আপনার কারনে আমি আজ অনেক হেঁটেছি। এক রাস্তা দুবার হাটালেন আপনি।
“তাহলে তোমার কি মনে হয় এই রাস্তা আমি একা একা আসতাম। যদিও বাইক নেবার জন্য এখানে আবার আমাকে আসতে হতো। আর আসতেই যদি হয় একা কেন আসবো। তোমাকেও সাথে করে নিয়ে যাবো।
“সোজা বললেই তো হয় মরলে একা কেন মরবো..
“ভূতনি কে সাথে নিয়ে মরবো! হি হি হি!
“রাখুন আপনার হি হি হি! চলুন
“যাচ্ছি। লেট হলে তোমার জন্য হবে আমার কোন দোষ নেই।
“আপনি তো সাধু না।
“না সাধুরা তো বিয়ে করে না কিন্তু আমি তো করেছি!
আমি একটা মুখ ভেংচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। বেশ বিরক্ত লাগছে। সিফাতের বাজে ব্যবহারের কারনে আমার মনটাই খারাপ হয়ে আছে। উফ কি ছেলে আমার পুরো মনের উপর প্রভাব ফেলে দিল। সারাটা দিন মনে হচ্ছে আজ খারাপ যাবে।
উনি আজও আমাকে রিনুর বাসার সামনে নামিয়ে দিলেন। আমি কোন কথা না বলে বাড়িতে চলে গেলাম। উনার সাথে কথা বলতেই কেন জানি ইচ্ছে করছে না। আমি সিফাতের সাথে তাকে একসাথে দেখতে পারছি না। ছেলেটার জন্য আমার ঘৃণা কোনমতেই কমছে না। ধাপ্পাবাজ ছেলে একটা!
.
অর্ণ’র বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি উনি বাইক নিয়ে বসে আছেন। হাতে তার বিখ্যাত ফোন টা নিয়ে। তবুও উনি এসেছেন আমি তো ভেবেছি আসবে না উনি। আমি গিয়ে উনার বাইকে বসলাম। তখনকার ব্যবহারের জন্য বেশ খারাপ লাগছে। কেন করলাম এমনটা।
বাইকে বসার পর উনার ঘাড়ে হাত রাখলাম, কেন রাখলাম জানি না কিন্তু রাখতে ইচ্ছে হলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি খুব তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে। কারন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। নাহলে আগে আমি দুপুরে বাসায় এসে তারপর ওখান থেকে রিনু কে পড়াতে গিয়েছি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সময় সব ফুরিয়ে যাচ্ছে। নাগাল পাচ্ছি না সময়ের। যদিও সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
আমাকে নামিয়ে দেবার পর আমি উনার হেলমেট টা রেখে বলি,
“চা খাবেন!
“না।
“বলছিলাম কি?
“লেট হচ্ছে আমার যেতে হবে।
বলেই ফুড়ৎ করে বাইক নিয়ে চলে গেলেন। মনে হচ্ছে রেগে আছেন। যদিও উনাকে আমার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে দেখে নি। সেদিন এতো কিছু বলার পর ও ট্রেনে উনি ভালোভাবেই কথা বলেছিলেন আমার সাথে। মনে হচ্ছে এই রাগও তেমন’ই ক্ষণস্থায়ী থাকবে। উনার রাগ বেশি কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। ঘরে এসে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়লাম। কিছুই করতে মন চাইছে না।
ফ্রেস হয়ে এসে রান্না করলাম, ক্ষিধে পেয়েছে খুব। আচ্ছা উনি কি খেয়েছেন? আজ হয়তো আকাশ ভাইয়া’র বাসায় থাকবেন উনি। তাহলে তো খাবেন। রান্না আজ তেমন কিছু করলাম না। শুধু ভাত রান্না করেছি। গতকালকে বাসি তরকারি এখনো আছে। এগুলো দিয়েই কোনমতে খেয়ে উঠৈ যাবো। সত্যি বলতে আমার রাঁধতেই মন চাইছে না।
মিতু আর মুন্নি আপু চলে এলো। মুন্নি আপু এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। মিতু আপু ফ্রেস হয়ে রাঁধতে শুরু করলেন। আমি বিছানার উপর বসে পড়তে বসলাম।
হঠাৎ করেই বাইকের আওয়াজ পেলাম। নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে গেলাম। মুন্নি আপু ঘুমাচ্ছে আর মিতু আপু রাধছে। আমি রান্না ঘরে গেলাম। দেখি আপু নিচে বসে সবজি কাটছে।
আমি হাঁটতে হাঁটতে জানালার কাছে এলাম। উঁকি দিলাম জানালা দিয়ে কিন্তু কেউ ছিল না সেখানে। তাহলে এটা কি আমার ভ্রম। আপু বলে উঠে,
“কিরে কিছু বলবি!
“না আপু। কি রাধছো দেখতে এলাম।
“তেমন কিছু না। বাঁধাকপি এনেছি ভাজি করবো বলে। আর ভাবছি ডিম ভুনা করবো।
“ওহ আচ্ছা।
“জানিস নিহা কি হয়েছে?
“কি?
“আচ্ছা রান্না শেষ করে নেই ছাদে গিয়ে বলবো।
আমি মাথা দুলিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।
#চলবে….