ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-১+২

0
236

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#লেখনিতেঃসাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১

কোচিং থেকে মাত্র বের হলাম এমন সময় ছোট একটি মেয়ে দৈড়ে দিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে আর মাম্মা বলে ডাকছে……বয়স ৩/৪ হবে।
.
.
.
আমি রুদ্রিতা খান রোদ। বয়স ১৮। মেডিকেল এ পরি। কিছু দিন আগে ভর্তি হলাম। দুই ভাই, একজন ৬ বছরের বড় একজন ৬ বছরের ছোট। মা আর বাবা। বেস এই আমার পরিবার।
.
.
.
নিকাব এর জন্য শুধু আমার চোখ দেখা যাচ্ছে। মেয়ে টা এখন ও আর ধরে আছে। আর মাম্মা বলে ডাকছে।আমার সব বান্ধবীরা ও হা হয়ে গেছে। কিছু বুঝতে পারছি না।মেয়ে টা আমাকে শক্ত করে ধরে আছে যেন ছাড়লেই হারিয়ে যাব।কিন্তু কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকব।তাই মেয়ে টিকে জিজ্ঞেস করলাম,

–কি নাম তোমার?কোথায় থাক? বাবা, মা কোথায়?

উত্তরে সুধু মাম্মা মাম্মা করে যাচ্ছে। আসে পাশে ও কাও কে দেখা যাচ্ছে না। কি আর করব কোলে তুলে নিলাম। গন্তব্য স্যার এর কাছে যাব।স্যার যদি হেল্প করে। মেয়ে টি আমার সাথে লেপ্টে রয়েছে। স্যার রাস্তায় খোঁজ খবর নিল।ফলাফল শূন্য। এতক্ষণে মেয়ে টিকে ভালো করে দেখলাম। সারা মুখে মায়া দিয়ে ভরা।ঠোঁট যেন লাল রক্তজবা।আল্লাহ যেন পুরো পুরো পবিত্রতা এর মধ্যে দিয়ে দিয়েছে।মেয়েটির চোখ ভর্তি পানি।
.
.
.
.
এর মধ্যে হুট করে এক লোক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসল।বয়স ২৬/২৭। দেখে মনে হচ্ছে অনেক চিন্তিত ছিলেন। আমার কোল থেকে মেয়ে টিকে কেড়ে নিল যেন আমার কোন অস্তিত্ব নেই এখানে।
.
.
.
মেয়েকে কোলে নিয়ে সারা মুখে চুমু দিতে দিতে বলছে,
— “কেথায় গিয়েছিলা মা?? বাবাই কখন থেকে খুজতেছি…..”

মেয়েটি ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে বলল,
— মাম্মা

লোকটি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো।কেমন আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে যেন পলক ফেলতে ও ভুলে গেছেন। আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে আমি একপা পিছিয়ে যাই। উনিও কিছু ভেবে পিছয়ে যান।স্যার কে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিতে চাইলেই কোলের বাচ্চা টি মাম্মা বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে চায়।
.
.
.
আমার কোলে মিষ্টি। সামনে মি. আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের। অপর দিকে স্যার বসে আছে। আমার কোলে মিষ্টি মানে মি. আদ্রিয়ান এর মেয়ে আদ্রিমা আবরার জুহানি( মিষ্টি)। আমার চোখে পানি কারন এই ছোট মেয়েটির মা অনিমা ওর জন্মের সময় আল্লাহর কাছে চলে গেছেন।আর কোইনসিডেন্টলি ওনার আর আমার চোখ নাকি সেম।আমি তো অবাক। কেমনে কি ভাই? কিন্তু মেয়ে টিকে দেখেই আদর আদর লাগে। আর মাম্মা ডাক টা ভুলতে পারছি না। এত মায়া ভরা অসহায় কন্ঠের ডাক বুঝি হয়? যেখানে নিজের মা ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারি না আমি সেখানে বাচ্চা মেয়েটি কীভাবে থাকে? আর ভাবতে পারলাম না। এরমধ্যেই ওর বাবা ওকে আমার কোল থেকে নিতে গেলে ও যাবে না।আমি বল্লাম,

— থাক না ভাইয়া আমার কোলে, বাহির পর্যন্ত আমি চলি।”

ব্যাস আদ্রিয়ান আবার ও অবাক কারন গলার স্বরে ও মিল।এ ও কি সম্ভব?
.
.
.
আমি একপা করে এগিয়ে গেলাম, পিছনে আদ্রিয়ান। ওনাদের গাড়িতে ড্রাইভার বসা ছিল। মিষ্টি ততক্ষণে ঘুম। আমার কোল থেকে মিষ্টিকে নিয়ে মৃদুস্বরে ধন্যবাদ জানান আমাকে।উত্তরে আমি মৃদু হাসলাম। উনি চলে গেলেন। আমি ও বাসায় ফিরে এলাম। কিন্তু ভুলতে পারলাম না কিছুক্ষণ আগের পরিচয় হওয়া মেয়েটিকে। কেমন যেন মায়া হলো। হয়তো মা নেই শুনেই এমন হচ্ছে।
এক দেখাতে এমন তো হওয়ার কথা না? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে লাগলাম। সব চিন্তা বাদ দিয়ে এখন খেয়ে দিলাম ঘুম।
.
.
হঠাৎ করে ফোনের আওয়াজে ঘুম পাখি উড়ে গেল। আননোন নাম্বার দেখে মেজাজ টা গেল খারাপ হয়ে। কোন শালা এই সন্ধ্যা বেলা কল দিল।কল ধরে সালাম দিলে অপর দিক থেকে সালামের উত্তর দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, আমি আদ্রিয়ান। সরি টু ডিসটার্ব। আসলে মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে আপনার জন্য কান্না করছে। যদি একটু কথা বলতেন। আমি সাথে সাথে বললাম আরে ভাইয়া এভাবে বলছেন কেন, দিন ওকে আমি কথা বলবো।
.
.
ফোন ওকে দিতেই,

–হ্যালো মাম্মা, কেথায় তুমি? আমার কাছে চলে আস।

জানি না কেন বাট চোখে পানি চলে এলো। নিজেকে শান্ত করে বললাম,

–কি হলো সোনা কান্না করছো কেন?

মিষ্টি বললো,

–আই মিস ইউ ( কান্না করে)।

আমি বললাম,

–আচ্ছা কান্না অফ করো না হলে মাম্মা কষ্ট পাচ্ছি তো।তুমি চাও মাম্মা কষ্ট পাই?

মিষ্টি বললো,
–উহু।

এরপর বললাম,

–কিছু খয়েছো?

ও বললো,

–না।

আমি ইনিয়ে বিনিয়ে ওকে খেতে রাজি করালাম। বিনিময়ে আগামীকাল দেখা করতে যাচ্ছি। ও ফোন ওর বাবা কে দিল।যদিও এতক্ষণের সব কথা আদ্রিয়ান শুনেছে কারণ ফোন স্পিকারে ছিল। উনি ধন্যবাদ জানানোর আগেই আমি বললাম,

— প্লিজ ধন্যবাদ দিবেন না,এর বদলে কালকে মিষ্টিকে নিয়ে পার্কে আসবেন, প্লিজ প্লিজ।

আদ্রিয়ান মৃদু হাসলো।মেয়েটা চঞ্চল আর অনেক মিশুক টাইপের। যেখানে আদ্রিয়ানের রিকুয়েষ্ট করার কথা সেখানে ও করছে। আদ্রিয়ান রাজি হয়ে গেল।
.
.
চলবে।

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে বিচরন করছে যেন উঠে পরে লেগেছে আমার পিছনে যে ঘুমটা নষ্ট করে ই থামবে। কিন্তু আমি তো আমি, ঘুম থেকে উঠবো না কারণ মাত্র বাজে ৯ টা। তার সাথে আজ ক্লাস ও নেই। তাই কাথাটা গায়ে জরিয়ে নিয়ে দিলাম ঘুম। কিন্তু শান্তি তো আর আমার কপালে নেই। ৫ মিনিট হয়নি ওমনি আম্মু দরজা নক করছে কিন্তু আমি তো আর দরজা খুলছি না।কেন খুলব?? হু। আমি তো ঘুমাবো।আর আমার মা তিনি আজ ওয়াদা করেছিলেন মনে হচ্ছে যে মেয়ের ঘুম হারাম করেই ছারবেন। এ সব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে আবার ঘুম। আর এ দিকে আম্মু চিল্লাতেই আছে, কেন উঠছি না??? প্রচন্ড বরক্ত হয়ে উঠে বসলাম,,

কি হয়েছে মা??? এত চিল্লাছ কেন???

কয়টা বাজে? আর তুই ঘুমাচ্ছিস???

তো কি করবো?? তুমি সাকি সাকি গান ছাড়ো আমি নাচি।।।

আম্মু এবার প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে যেই না কছু বলতে যাবে ওমনি টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ওয়াশরুমে দৌড় দিলাম।
.
.
.
ফ্রেশ হয়ে একবারে নিচে নাস্তা করতে গেলাম। আব্বু অফিসে আর বড় ভাইয়া ঘুম। টেবিলে ছোট ভাই নাশতা করছে।
কিরে পোটলা কি করিস???( ওর নাম রুদ্র, একটু হেলদি তাই আমি পোটলা ডাকি।।)

খাচ্ছি।

আমার টা বাদে খাইস।। বলে নিজে ও খেলে লাগলাম।খাওয়া শেষে টুকটাক কথা আর কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে এলো।কয়েকবার মিষ্টির কথা মনে পড়েছে।বিকেলে নুডুলস রান্না করলাম। একটা বক্সে প্যাক করে লং সুতির গাউন আর হিজাব পরিধান করে রের হলাম।
.
.
. পার্কে যেতে দেখা পেলাম আমার ছোট মেয়েটির যে হয়তো আমার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।কিন্তু আমি তো টাইম মতো আসলাম।
সামনে যেতেই দৌড়ে আমার কাছে এলো।আমিও কোলে তুলে নিলাম। ও মাম্মা বলে ডাক দিল ব্যাস আমার অশান্ত মনে যেন এক পশলা বৃষ্টির আগমন ঘটল।কিছু তো আছে এই মেয়ের মধ্যে।

মাম্মা এতো লেট?? ১ ঘন্টা ধরে ওয়েট করতে করতে আমি শেষ। আমি অবাক হয়ে বললাম আমি তো টাইম মতো আসলাম।

আমরা ই আগে চলে এসেছি। কারো গম্ভীর কণ্ঠে সামনে তাকালাম।

ওকে নিয়ে সামনে এগুতেই দেখা মিললো আদ্রিয়ানের।
কেমন আছেন ভাইয়া?
ভালো।
আর কিছু বললো না। আমি কেমন আছি তাও জিজ্ঞেস করলেন না। হাউ রুড!!!!
.
.
মিষ্টির সাথে অনেক কথা বললাম। কিছু ক্ষণ খেললাম। টায়াড্ হয়ে দুই জনই বেঞ্জে বসলাম। মিষ্টি কে ব্যাগ থেকে পানি খাওয়ালাম। নুডলস বের করে খায়িয়ে দিলাম। এরপর সুন্দর করে মুখ মুছে দিলাম।
ও আমার কোলে ঘেঁষে বসে আছে। আমিও আগলে রেখেছি।
.
.
এসব কিছু পাশ থেকে দেখছে আদ্রিয়ান। কিন্তু এমন ভাব সে ফোনে কাজ করতে ব্যাস্ত।

আদ্রিয়ান মুগ্ধ নয়নে দেখছে। রোদ আর মিষ্টিকে। মনে হচ্ছে মা মেয়ে। মনে পড়ে গেল তার প্রিয়তমার কথা। এগিয়ে গেল তাদের কাছে।

ঘুমিয়ে গিয়েছে?
হু
আমার কাছে দাও.. তোমার কষ্ট হচ্ছে…
না না ভাইয়া কষ্ট হচ্ছে না। প্লিজ থাকুক আমার কাছে।
আদ্রিয়ান উত্তরে মুচকি হাসি দিয়ে পাশে এসে বসল।
.
.
অনেক ধন্যবাদ। তোমার জন্য মেয়েটা স্বাভাবিক হচ্ছে।
আমি চমকালাম। পাশে তাকালাম কিন্তু কিছু বললাম না। উনি আবার বলা শুরু করলেন,,,

অনি মারা যাওয়ার পারে আমি মিষ্টিকে আকরেই বেচে আছি। কিন্তু আমি যতোই আদর, ভালোবাসা ই দেই না কেন মা এর অভাব অপূরণীয়। মিষ্টি সবসময় চুপচাপ হয়ে থাকে। আমি ছাড়া বাসায় সবার সাথে থাকে কিন্তু একদম নিশ্চেজ।আমি চাইলেই মেয়েটাকে খুশি রাখতে পারিনা।আমার সব থেকেও মেয়ের জন্য কিছু করতে পারি না।

চলবে…..