#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৯
গাড়ি থেকে নামিয়ে রোদকে কোলে করেই রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। ড্রয়িং রুমে সবাই ছিল। আদ্রিয়ান শুরু চিন্তিত হয়ে মাকে বলেছে যতে লেবুর শরবত রুমে পাঠিয়ে দেন। সবাই মুগ্ধ নয়নে দেখছে আদ্রিয়ানকে কতটা ভালোবাসে ফেলেছে ও রোদকে। কিন্তু একটা চোখ তা মোটেই ভালো নজরে দেখেনি।
আদ্রিয়ান রুমে ডুকে রোদক বিছানায় বসিয়ে নিজে ওর পরনের সু খুলতে গেলে রোদ দূর্বল কন্ঠে বলে,
— আরে কী করছেন? আমি পারব। প্লিজ পায়ে হাত দিবেন না।
— এত বেশি কথা বলো কেন?
বলে আদ্রিয়ান ওর সু খুলে দিল। তারপর পরনের জ্যাকেট খুলে দিল। ঠান্ডার মধ্যেও মেয়েটা ঘেমে গেছে। সাবা রুমে নক করতেই আদ্রিয়ান বলে,
— ভাবী ওকে চেঞ্জ করতে একটু হেল্প করবে আমি ওর ড্রেস বের করে দিচ্ছি।
বলে আদ্রিয়ান রোদের একটা টিশার্ট আর প্লাজু বের করে দেয়।সাবা ও তাড়াতাড়ি রোদকে চেঞ্জ করিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে পাঠায়। আদ্রিয়ান ও ততক্ষণে অন্য রুম হতে ফ্রেশ হয়ে আসে। আদ্রিয়ানের মাও শরবত হাতে রুমে ডুকে রোদের পাশে বিছানায় বসে। মেয়েটার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে বমি করে। শরবত খায়িয়ে ওকে রেস্ট করতে বলে সাবা আর মা চলে যেতে নিলে আদ্রিয়ান বলে,
— আম্মু গাড়িতে কিছু ব্যাগ আছে মিনুকে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিও তো।
আচ্ছা বলে তারা বেরিয়ে যায়। তারা যাতেই আদ্রিয়ান রোদের কাছে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
— এখনো খারাপ লাগছে??
রোদ হালকা মাথা নেড়ে বললো,
— অল্প।
আদ্রিয়ান রোদকে খোপাটা খুলে দিয়ে ওকে শুয়িয়ে দিল। রোদের ও মাথাটা এখন হালকা লাগছে। রোদ বললো,
— মিষ্টি কই? এখনো এলো না?
— ওয়েট আমি দেখে আসছি।
বলে পা বারাতেই মাম্মা বাবাই বলে দৌড়ে রুমে ডুকলো মিষ্টি। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলতেই মিনু সব ব্যাগ নিয়ে রুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান ওকে সব সোফায় রাখতে বললো। মিনুও রেখে চলে গেল। মিষ্টি কে রোদ নিজের কাছে ডাকলো। মিষ্টি কোলে আসতেই রোদ ওর কান ধরে দেখলো ঠান্ডা হয়ে আছে। রাগ দেখিয়ে বলল,
— মিষ্টু।।।। মাম্মা না কতবার বলে গেলাম কানটুপি না খুলতে। তাও খুলেছ কেন?
— সরি মাম্মা। খেলতে গিয়ে পরে গেছে।
রোদ ওর গাল টেনে বললো,
— ওলে আমার মাম্মাটা সরি বলতে হবে না।
বলে উঠতে নিতেই আদ্রিয়ান টুপি এনে মিষ্টিকে পরিয়ে দিল। আরেকটা এনে রোদকে পরিয়ে বললো,
— নিজের খেয়াল ও রাখতে হয়।
এর মধ্যে রুমে এলো আদ্রিয়ানের মা হাতে এতো খাবার। তা বেড সাইড টেবিলে রেখে রোদ আর আদ্রিয়ানকে খেতে বললো।রোদ খাবে না বলতেই আদ্রিয়ান মা জোর করে নিজেই খায়িয়ে দিল। মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করতেই উনি হেসে বললেন,
— সাবা খায়িয়েছে।
— আচ্ছা।
উনি চলে যেতেই আদ্রিয়ান রোদকে রেস্ট করতে বললো আর নিজে লেপটপ অন করে কাজে মন দিল। এদিকে রোদ রেস্ট না নিয়ে মিষ্টিকে নিয়ে এটা ওটা করছে। খেলছে। আবার হাসছে। ওই দিকে তাকিয়ে আদ্রিয়ান নিজে নিজেই বললো,
— কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে বমি করে অবস্থা খারাপ করে ফেলছিল আর এখন কি না মেয়ে নিয়ে খেলছে।
___________________
রাতের খাবার আদ্রিয়ানের মা রুমে দিয়ে যায়। রোদ মিষ্টিকে এশারের পরই খায়িয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়েছে। কন্তু এখন রোদের একটুও খেতে মন চাচ্ছে না। আদ্রিয়ানের মা ধমকে ধামকে নিজেই খায়িয়ে দিয়ে গেলেন। রোদও মুখ ভার করে খেয়ে নিল। আদ্রিয়ানের খাওয়া শেষ হতেই ওর মা বললো যাতে ওনার সাথে দেখা করে। আদ্রিয়ান ও আচ্ছা বলে বেরিয়ে মায়ের রুমে যায়।
— হ্যাঁ মা বলো। কিছু বলবা?
— হুম। আসলে আমার মনে হচ্ছে রোদের কোন সমস্যা আছে। ( ইতস্তত করে)
— মানে??? কি বলতে চাচ্ছ আম্মু।
আদ্রিয়ান মা আদ্রিয়ানের কাছে বসে বললেন,
— দেখ আব্বু রোদের খাওয়া দাওয়া আমার একদমই স্বাভাবিক মনে হয় না। ওর হেল্থ অনুযায়ীই তো একদমই না। ওকে দেখতে যতটা নাদুসনুদুস মনে হয় ওর খাওয়া ততটাই কম। প্রথম আমি ভেবেছিলাম হয় তো নতুন কিন্তু না ওতো বেশি খেতেই পারে না।
— হু। আমি ও খেয়াল করেছি। রাদকে ওর মেডিকেল ফাইল গুলোও আনতে বলেছি।
— ভালো করেছিস। বাচ্চা একটা মেয়ে। এ বয়সেই তো ভালোমতো খাবে।
— হুম। ভাইয়ার সাথে ও কথা বলতে হবে।
— হুম। যা এখন রোদের কাছে। মুখ ফুলিয়ে আছে। জোর করে খায়িয়েছি।
— ওর আর রাগ দুটা মিষ্টি কথা বললেই শেষ।
— হে রে মেয়েটা একদম সাদা মনের।
আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখে রোদ ওর মায়ের সাথে কথা বলছে আর নাক টানছে। মেয়েটা আবার ও কাদছে। কি করবে একে নিয়ে আদ্রিয়ান। কথা শেষে ফোন রাখতেই দেখলো আদ্রিয়ান ওর সামনে দাড়ানো।হকচকিয়ে রোদ প্রশ্ন করলো,
— কখন এলেন?
— যখন কান্না করছিলে।
— আম্মুর কথা মনে পরছে।
— হু
— নিয়ে যাবেন বলেছিলেন??
— যাব
— কবে??
উত্তর না দিয়ে ঝুকে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
— এতো পানি কোথা থেকে আসে??
— জানিনা
আসো ঘুমাবা বলেই লাইট অফ করে বরাবরের মতোই রোদকে ডান পাশে বুকে আর মিষ্টিকে বাম পাশে বুকে নিয়ে শান্তির ঘুম দিল তিনজন।
___________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে মিষ্টি আদ্রিয়ানের পেটের উপর গোল হয়ে বসে আছে। দুই মিলে এটা ওটা বলছে। আদ্রিয়ান সেদিকে তাকিয়ে বললো,
— বাহ ম্যাডাম আজ নিজে নিজে উঠলেন যে??
— আর কত ঘুমাব? কাল সন্ধ্যা থেকেই তো প্রায় ঘুম।
— হুম।
বলে আদ্রিয়ান ওয়াশরুম গেল। এদিকে রোদও বেড ঠিক করে মিষ্টিকে মাফলার পেচিয়ে পুতুল বানিয়ে কোলে তুলে নিল। আদ্রিয়ান বের হয়ে ওদের দেখে প্রশ্ন করলো,
— কোথায় যাও?
— নিচে।
— হুম।
বলে আদ্রিয়ান ও একটু পর নিচে আসলো। নিচে নেমেই মিষ্টিকে সোফায় বসিয়ে কিচেনে উকি দিল রোদ। তা দেখে সাবা বললো,
— উঠে গেছিস।
— হু আপিপু। আমি হেল্প করি।
আদ্রিয়ানের মা বললো,
— মাইর খাবি। চুপচাপ যা এখান থেকে। এতটুকু মেয়ে আসছে কাজ করবে।
রোদ মুখটা কালো করে ফেললো দেখে সাবা বললো,
— রোদ এগুলো টেবিলে নিয়ে রাখ তো।
রোদ দাত বের করে একটা হাসি দিয়ে সব নিতে লাগলো। আদ্রিয়ানের মা তা দেখে বললো,
— পাগল একটা।
সোফায় অপরিচিত মহিলাকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে থাকলো রোদ। পাশ থেকে আদ্রিয়ানের মা বললো,
— রোদ এটা তোমার বড় মামি শাশুড়ী। বলেছিলাম না। কাল এসেছেন উনারা।
এটা শুনে মামি বললো,
— রাতে তো রুম থেকেই বের হয় নি। কারো খোজ রাখার প্রয়োজন ও মনে করে না। শশুর বাড়ীর প্রতি দায়িত্ব নাই দেখলেই বুঝা যায়।
ওনার কথায় রোদ মুখ লটকিয়ে ফেললো। আদ্রিয়ানের মা বললো,
— ভাবী এমন টা না। ও অসুস্থ ছিল।
— হুম সবই বুঝি। অদব কায়দা শিখাও নি বউকে।
এটা শুনে রোদ একটু হেসে বললো,
— আসসালামু আলাইকুম মামি।
— এখনকার বউরা কি আর বললো। মুখে সালাম দেয়। আমরা তো বড়দের পায়ে হাতদিয়ে সালাম করতাম।
রোদ এবার চুপ না থেকে বললো,
— তাহলে আপনারা ভুল করতেন। আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করা নিষেধ। তাহলে আমি কেন ঝুকে সালাম করবো?
রোদের উত্তরে থমথমে মুখ করে রাখলো মামি। উনি ভাবে নি এটুকু মেয়ে মুখের উপর উত্তর দিবে। আদ্রিয়ানের বাবা তা দেখে হেসে বললেন,
— রোদ মামনি এখানে আসো তো পেপারটা দাও।
আচ্ছা বলে রোদ পেপার দিতে চলে যায়। আদ্রিয়ানের মা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো ওনার এই ভাবীটা এমনই।আদ্রিয়ান ও সব উপর থেকে দেখেছে। বাকা হেসে নিজেও নিচে নামলো।
হঠাৎ করে একটা মেয়ে ভাবী বলে এসে জড়িয়ে ধরায় টাল সামলাতে না পেরে রোদ পরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে ফেলে ধামকিয়ে বলে,
— এখন তো পরে যেত। আস্তে ধরা যায় না।
— উপস। সরি ব্রো।
বলে ছাড়তেই মেয়েটা রোদের গাল টেনে বললো,
— কেমন আছ রোদ?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
— ভালো।
রোদ কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান বললো,
— ও হলো জাইফা। বড় মামার মেয়ে।
— ওহ্।
এরমধ্যে একটা ছেলে এসে বললো,
— ভাবী আমি জাইফ।
রোদ খেয়াল করলো মেয়েটার সাথে ছেলেটার ওনেক মিল। দুইজন ই ফরসা আর লম্বা। বয়স ও প্রায় সেম। ২০/২১ হবে।এর মধ্যে জাইফ বললো,
— আমি হলো আপনার দেবর। মানি মামাতো দেবর।
রোদ একটু হেসে বললো,
— কেমন আছেন ভাইয়া??
— এতো কিউট ভাবী থাকতে খারাপ কীভাবে থাকি?
আপনি এখন কেমন আছেন কাল তো শুনলাম অসুস্থ?
— জ্বি ভালো।
আদ্রিয়ান বললো,
— অনেক পরিচয় হয়েছে এবার খেতে চলো।
____________________
খাবার টেবিলে বসে রোদ সবার আগে খাবার নিল। সবাই জানে রোদ মিষ্টির মিষ্টির জন্য নিয়েছে । তা দেখে মামি বলে উঠলো,
— কই আগে সবাইকে বেরে দিবে তা না আগে নিজে খেতে বসে পরলো।
ওনার কথা শুনে সবাই চোখ গরম করে ওনার দিকে তাকালো। রোদ লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। এর আগে কেউ ওকে কখনো খাবার নিয়ে খোটা দেয় নি। ওর এখন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ খোটা হলো খাবারের খোটা। আদ্রিয়ান তেড়ে এসে কিছু বলবে এর আগেই ওর মা ওর হাত ধরে অসহায় চোখে তাকালো। বড় ভাবী কিছু বলতেও পারছে না। তাও বললো,
— ভাবী। ও তো মিষ্টিকে খাওয়ানোর জন্য নিয়েছে।
এর মধ্যে আদ্রিয়ান বললো,
— এটা রোদের ও বাসা ও যখন খুশি যেখানে খুশি খাবে।
এটা শুনে মামি একটু চুপ হলো।তবুও মহিলা দমে গেল না। বলে উঠলো,
— বাড়ির বউদের এতো লাই দিও না।
আরিয়ান বলে উঠলো,
— ও বাড়ির বউ না মেয়ে। জারবা, সাবা, রোদ সবাই এক।
ওনি আর কিছু বললো না। মুখ ভেংচি দিয়ে খেতে লাগলো।আদ্রিয়ান সহ বাকি সবাই খেয়াল করলো রোদ মুখ কালো করে মিষ্টিকে খাওয়াচ্ছে। আদ্রিয়ান ও খাচ্ছে না কারন মিষ্টিকে খাওয়ানো হলে রোদের সাথে খাবে তাই ফোনে কিছু করছে। সবাই খেয়ে দেয়ে যার যার মতো উঠে যাচ্ছে। সবাই যাওয়ার পর মিষ্টির খাওয়া শেষ হলো দুধ খেতেই মেয়েটা দেরি করলো। সবাই চলে গেলে আদ্রিয়ানের মা কফি আানতে গেল। আদ্রিয়ান রোদকে উঠে যেতে দেখে হাত ধরে আটকে নিয়ে বললো,
— কই যাও?
— রেডি হব উপরে যাচ্ছি।
— ব্রেকফাস্ট করো এরপর উপরে যাবে।
— ক্ষুধা নেই।
— চুপচাপ বসো।
— খাব না
বলেই হাত ঝারা দিয়ে দৌড়ে উপরে চলে যায় রোদ। আদ্রিয়ানের বুঝতে আর বেগ পেতে হয় নি যে রোদ কেন এমন করলো। মামির বলাতে রোদ কষ্ট পেয়েছে। রোদের আত্মসম্মান বেশি তাই এটা স্বাভাবিক। কিচেন থেকে সাবা আর আদ্রিয়ানের মা সবই দেখেছে। আদ্রিয়ান মায়ের দিকে তাকিয়ে প্লেটে খাবার নিয়ে উপরে গেল।
___________________
রোদ ওয়াসরুম থেকে কান্না করে ফ্রেশ হয়ে এসে কাবার্ড থেকে ড্রেস বের হচ্ছে। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে দরজা অফ করে রোদের কাছে যেয়ে দু হাত ধরে নিজের কাছে আনলো। চুল গুলো কানের পিছনে গুজে বললো,
— আমার রোদু পাখি কি রাগ করেছে?
রোদ হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আদ্রিয়ান আরো জোড়ে ধরে বললো,
— সরি সোনাপাখি।
বলে বুকে জড়িয়ে নিল আদ্রিয়ান।
— রাগ কমেছে?
— উহু। রাগ করিনি।
আদ্রিয়ান আরেকটু চেপে ধরে বললো,
— খাবে এখন। আমার ক্ষুধা লেখেছে।
— আপনি খেয়ে নিন।
— চুপ কোন কথা না। তুমি তোমারটা খাচ্ছ।
বলেই বিছানায় বসিয়ে খায়িয়ে দিল।
#চলবে……..
#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২০
মেডিকেল যেতে এখনো প্রায় ১ ঘন্টা বাকি। রোদ রেডি হয়েছে বাকি শুধু হিজাব পরা। জেকেট পরেই মাথায় উরনা পরে মিষ্টিকে খুজতে বের হলো সাথে আদ্রিয়ানকে ও কফি দিতে হবে। বেচারা এতো আদর করে তাই রোদ একটু কফি তো দিতেই পারে। কফির জন্য কিচেনে যাবে এমন সময় মামি ডেকে বললো,
–এই মেয়ে শুনে যাও।
— জ্বি।
— এক কাপ চা করে দাও তো।
— আচ্ছা মিনুকে বলছি করে দিতে।
— কেন তুমি করে দিতে কি সমস্যা?
— আমি তো ভালো চা বানাতে পারি না।
— তা কেন পারবে। জামাই এর সাথে শুধু ঘুরে ঘুরে টাকা উরাবে। কোলে করে ঘুরবে। মা বাবা কিছু শিখায় নি যে সামান্য চা ও বানাতে পারো না।
ওনার কোন কথা গায়ে না লাগলেও টাকার আর বাবা মা তুলে বলা কথা ঠিকই বুকে বিধলো।তাই অশ্রুসিক্ত নয়ানে মাথা তুলে রোদ বললো,
— মা বাবাকে তুলে কেন কথা বলেন? আর আমি বলিনি ওনাকে যাতে আমায় শপিং করায় আর কোলে তুলে।
— এই মেয়ে উচু গলায় কথা বলো আমার সাথে সাহস তো কম না।( ধমকে)
রোদ এবার চোখের পানি আটকাতে পারে না। কিন্তু তারাতাড়ি তা মুছে ফেলে। আপনজন ছাড়া কারো সামনে নিজেকে দুর্বল দেখাতে রাজী না রোদ। তাই তারাতাড়ি কিচেনে চলে যায়। জারবা সবই দেখে। ওর ও এই মামিকে পছন্দ না, মহিলাটা খামাখা পিছু পরে থাকে। রোদ কিচেনে দেখে কেউ নেই। তারাতাড়ি কফি করে সাথে চোখের পানি তো পরছেই। তা মুছে কফি নিয়ে রুমে ডুকে তা টেবিলে রেখে ওয়াসরুমে ঢুকে ইচ্ছা মতো কেদে নিজেকে হালকা করে। চোখে মুখে ভালোমতো পানি দিয়ে ধোয়। আদ্রিয়ান খেয়াল করেছে রোদ কফি হাতে না দিয়ে টেবিলে রেখে গেছে। ওইদিকে মনোজোগ না দিয়ে রেডি হতে থাকে। রোদ ১০ মিনিট পর বের হয়ে মুখ মুছে রেডি হতে থাকে। আদ্রিয়ান এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও হঠাৎ খেয়াল করলো রোদের চোখ ফোলা। ডাক দিলেও রোদ তাকায় না। আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে নিজের কাছে আনে। দু হাতে মুখ তুলে দেখে চোখর পার গুলো ফুলে উঠেছে তা দেখে বুকে যেন চিনচিন ব্যাথা হয়। তবুও শান্ত কন্ঠে বলে,
— কি হয়েছে?
………..
— বাসার কথা মনে পরছে?
…………
— কথা বলবা না??
রোদ কিছু না বলে জড়িয়ে ধরে আছে। আদ্রিয়ানের বুকে মিশে আছে। আদ্রিয়ানের যেন বুকে ব্যাথাটা বারলো। দুহাতে ধরে বললো,
— রোদপাখি বলো না প্লিজ কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
— মেডিকেল যাবা না?
— হু।
আদ্রিয়ান কথা না বাড়িয়ে বললো,
— চলো তা হলে।
এরপর দুজন রেডি হয়ে বের হলো।
_________________
রোদ চিন্তা করেছে ও কিছুতেই আদ্রিয়ানের উপর ডিপেন্ড করবে না। আজ যদিও দুপুরের আগে ক্লাস শেষ তবুও রোদ বাসায় না যেয়ে ইয়াজের সাথে বাইরে গিয়েছে। এর আগেও রোদ টিউশনি করেছে। এরপর একটা কোচিং এ পরাতে বললেও রোদ না করে দিয়েছে। এখন ও কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। যদিও রোদের বাবা ভাইয়ের টাকা আছে তবুও আজ মামির কথাটা গায়ে লেগেছে। বাবা প্রতি মাসে একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। মেডিকেল সহ বই টই যা লাগবে তার। আর এমনি পকেট মানি আলাদা দেয়। ইয়াজ ও ওখানে পরায় বিধায় ইজিলি জবটা হয়ে যায়। সপ্তাহে ৩ দিন পরাবে ২০ হাজার বেতন যা পরে বারবে।
রোদ বাসায় ফিরলো দুপুর ২ঃ৩০ এ যদিও ছুটি হয়েছে ১২ঃ৪৫ এ। আদ্রিয়ান কল দিলেও মিথ্যা বলেছে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে মিষ্টি কে ঘুম পারাতে যেয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেছে। আদ্রিয়ান মা খেতে ডাকতে এসে দেখলো ঘুমিয়ে আছে তাই আর ডাকলো না। আসরের সময় রোদের ঘুম ভাঙলো। মিষ্টি ও উঠেছে। রোদ ফোন নিয়ে দেখে আদ্রিয়ান ৮ বার কল দিয়েছে। তরাতারি কল ব্যাক করলো।আদ্রিয়ান কল কেটে আবার ব্যাক করলো।রোদ রিসিভ করেই বললো,
— সরি সরি আমি আসলে মিষ্টিকে ঘুম পারাতে যায়ে নিজেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম তাই ফোনের আওয়াজ পাই নি।
একদমে সব কথা বললে।
— আরে আরে রোদুপাখি শ্বাস নাও।
— আপনি রাগ করেন নি?
— হু। করেছিলাম পরে জারবাকে কল দিয়ে জানলাম তুমি নাকি ঘুমাচ্ছ।
— হুম।
— খেয়েছো?
— না ঘুম থেকে উঠলাম মাত্র।
— এই মেয়ে কয়টা বাজে হুস আছে তোমার? এক্ষুনি খাও গো।
— আরে বকেন কেন? নামাজ পরে খাচ্ছি। আপনি খেয়েছেন?
— না। খাব।।
— আপনি কেন খান নি হুম??
— ওনেক বিজি যে বউ।
“বউ “শুনে রোদের গাল গরম হয়ে গেল। লোকটা ওকে লজ্জায় ফেলে দিল। কিছু না বলে রোদ বললো আচ্ছা রাখি।সাবধানে আসবেন বলে রেখে দিল। ওপর পাশে ঠোঁট কামরে হাসলো আদ্রিয়ান।
_________________
সন্ধ্যায় সবাই সোফাররুমে বসে আছে। সবাই বলতে আমারা ছোটরা। সাবা,জারবা, জাইফ, জাইফা। মিষ্টি আর আলিফ টিভিতে ডোরেমন দেখছে। একটু আগে ওদের খায়িয়ে দিয়েছি।আন্টি আর ঐ হিটলার মামি রুমে কিছু কথা বলছে। হিটলার বলার কারন হলো ঐ মহিলা সারাক্ষণ বেঝেই আছে। আল্লাহ জানে কি সমস্যা তাই রোদ ও একটু দূরে সরে থাকে। রোদ একটুপর ই প্লেট ভর্তি পাকোরা আর কিছু স্নেক্স নিয়ে আসে। এগুলো বানাতে মূলত সাবা আর জাইফা হেল্প করেছে। জাইফা মেয়েটা একদম মায়ের বিপরীত। সাবা ও উঠে যেয়ে সবার জন্য কফি নিয়ে আসে। সবাই বিভিন্ন কথা বলছিল আর খাচ্ছিলো। এমন সময় আরিয়ান ভাইয়া ও এসে জোগ দিল আমাদের। সবাই অনেকক্ষণ গল্প করলাম। কথার মাঝে আমি বললাম,
— আচ্ছা আপিপু আমিতো আলিফের চাচি হই তাহলে খালামনি কেন ডাকে?
আপিপু মুখটা গোমরা করে ফেললো। আরিয়ান ভইয়া বললো,
— কারন তুমি ওর চাচি প্লাস খালামনি লাগো।
— মানে???
— সাবা আর অনিমা দুই বোন।
শুনে রোদ বড়সরো একটা শক খেল। তাইতো প্রথম দেখে কেমন কান্না করে দিয়েছিল। রোদ উঠে সাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— সরি আপিপু। আমি আছি তো মন খারাপ করো না।।।
— আরে বোকা তুই কেন সরি সরি বলছিস।।
বলে সাবা ও জড়িয়ে নিল। এরপর সবাই আাবার আড্ডা দিতে লাগলো। এমন সময় জাইফ বললো,
— ভাবী আমরা তো ভাবতেই পারি নি ভাইয়া তোমাকে পেতে এতো ডেস্পারেট হয়ে যাবে। একদিকে বিয়ে। ভাবা যায়?
রোদ এবার কিছুটা লজ্জা পেল। যখন সবাই এ নিয়ে হাসাহাসি শুরু করলো তখন রোদ পারলে পালায় এখান থেকে কিন্তু আফসোস তাও সম্ভব না। তখনই সবাই চুপ হয়ে গেল কারো গম্ভীর কণ্ঠে।
— কি নিয়ে এতো হাসাহাসি হুম?( আদ্রিয়ান)
সবাই আমতা আমতা করতে লাগলো। যদি শুনে ওকে নিয়ে মজা করে ওর বউকে বিব্রত করছিল তাহলে খবর আছে। কেউ কিছু বলছে না দেখে আদ্রিয়ান আবার বললো,
— আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেল?
— আরে না তেমন কিছু না। তুই ফ্রেশ হয়ে এসে জয়েন কর আমাদের। ( আরিয়ান)
— না এখন কাজ আছে।
বলে আদ্রিয়ান রোদকে বললো,
— রোদ এককাপ কফি নিয়ে রুমে আসো তো।
— আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন নিচে সবার সাথে খান।।( রোদ)
আদ্রিয়ান কিছু না বলে একপলক রোদকে দেখে মিষ্টিকে চুমু দিয়ে উপরে চলে গেল। তখন সাবা বললো,
— রোদ যা কফি দিয়ে আয়।
— আপিপু উনি তো নিচে আসবেন।
— ও আসবে না। ( আরিয়ান)
সবাই বললো আসবে না কিন্তু রোদ বললো আসবে। এ নিয়ে জাইফ বললো,
— ওকে এভরিবডি সাইলেন্স প্লিজ। আমরা বেড ধরি যে ভাই নাকি আসবে না। যে জিতবে সে ট্রিট হিসেবে আইসক্রিম পাবে।
ডান বলে সবাই একদল যে আদ্রিয়ান আসবে না কারন উনি নাকি ৩ বছর ধরে কারো সাথেই তেমন কথা বলে না আড্ডা তো দূরের কথা। কিন্তু রোদ একা এক দল কারন ওর মন বলছে উনি আসবে। একা ভালো লাগছে না দেখে আলিফ আর মিষ্টিকে টেনেটুনে নিজের দলে নিল। বেচারা দু জন কিছু না বুঝতে পেরে বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। রোদ যেয়ে কফি ও করে নিয়ে এলো কিন্তু আদ্রিয়ান আসছে না তাই সবাই ওকে খেপাতে লাগলো। জাইফা মজার ছলে বললো,
— কি গো জুলিয়েট তোমার রোমিও এলো না বুঝি।
ওর কথায় সবাই হাসলেও মুখ কালো করে রোদ বসে আছে। এমন সময় আদ্রিয়ান বললো,
— মামাকে বলে তোকে রোমিওর কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি ওয়েট।
বলে টেবিল থেকে কফি নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসলো। সবাই আবাক হয়ে আছে। এমন সময় আলিফ বললো,
— খালামুনি উই উইন দা বেট।
বলে লাফাতে লাগলো সাথে মিষ্টি ও যোগ দিল। রোদও কম কিসের ওও হাসতে লাগলাম। আদ্রিয়ান বললো,
— কিসের বেট?
— তুই নিচে এলি সিরিয়াসলি!! ( আরিয়ান)
— কেন এনি প্রবলেম??
— আরে তা হবে কেন?
এর মধ্যে মিষ্টি আর আলিফ রোদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আমরা আইসক্রিম কখন খাব?
— কি ভাইয়া কখন দিবেন? (রোদ)
— হুম। ভাই আমার পল্টি মারসে। দিতে তো হবেই। ( আরিয়ান)
এরমধ্যে আদ্রিয়ান বললো,
— কিসের কথা বলছিস?
জাইফ গরগর করে সব বলে দিল। সব শুনে আদ্রিয়ান শুধু রোদকে একবার দেখলো এরপর শান্ত সুরে বললো,
— আইসক্রিম খাওয়া যাবে না। রোদ এর টনসিলের প্রবলেম আছে।
— এই না না ভাইয়া আমি আইসক্রিম ই খাব।( রোদ)
— বেশি বুঝ তুমি।( ধমকে)
— আচ্ছা ঠিক আছে রোদ আমি অন্য কিছু দিব।( আরিয়ান)
— আমি আইসক্রিম ই খাব। ( জেদ করে বললো)
আদ্রিয়ান চোাখ গরম করায় রোদ আর কিছু বলে না।
রুমে আসতেই আদ্রিয়ান রোদকে ডাক দিলে রোদ কোন উত্তর দিল না। ভিষণ রেগে আছে। আইসক্রিম খেতে দিল না।
বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। এই ঠান্ডার মধ্যে বৃষ্টি যেন আবহাওয়া আরো ঠান্ডা করে দিয়েছে। এর মধ্যে আদ্রিয়ান একটু আগেই বাইরে গেল। বৃষ্টি যেন বেরেই চলছে। হঠাৎ করে ভেজা শরীরে রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। হাতে কিছুর প্যাকেট। তা রোদের হাতে দিয়ে বললো,
— রোদ প্রচুর ঠান্ডা লাগছে। টাওয়ালটা দেও তো।
বলেই ওয়াশরুম ডুকলো। রোদ টাওয়াল, টাওজার আর টিশার্ট নিয়ে দিল। একটুপর আদ্রিয়ান বের হয়ে বললো,
— কি হলো খুলে দেখ
রোদ প্যাকেট খুলে দেখে ভিতরে কিটকেট আর ডেরিমিল্ক এর এতো গুলো প্যাকেট। খুশি হয়ে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— থ্যাংক ইউ।।।।।।।।
কিন্তু অনুভব করল আদ্রিয়ানের শরীর অনেক ঠান্ডা হয়ে আছে।
#চলবে…….