ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-২১+২২+২৩

0
123

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২১

রোদ চমকিয়ে গেল এত ঠান্ডা শরীর দেখে। কিন্তু আদ্রিয়ান বলেছে শীতের কারনে এমন হয়েছে তবুও রোদের মনের মধ্যে একটু খচখচ রয়েই গেল। তাই আদ্রিয়ানকে বিছানায় বসিয়ে কম্বোল দিয়ে ডেকে বললো যাতে এখানেই থাকে। কিন্তু আদ্রিয়ানের ও কাজ আছে তাই রোদ ল্যাপটপটা ওর কোলে দিয়ে বললো,

— নিন তবুও কম্বোল থেকে বের হবেন না।

আদ্রিয়ান ও কিছু না বলে মাথা নেড়ে কাজ শুরু করলো।রোদ ও আলিফ আর মিষ্টিকে চকলেট দিতে গেল। এসে দেখলো আদ্রিয়ানের পা বের করা তাই যেয়ে পায়ে হাত দিতেই দুজন ই অবাক হয়ে গেল। রোদ অবাক হলো কারন আদ্রিয়ানের পা বরফ হয়ে আছে। আর আদ্রিয়ান অবাক হয়েছে হঠাৎ পায়ে হাত দেয়াতে। রোদ রেগে বললো,

— কেন গিয়েছিলেন বাইরে?? কি দরকার ছিল চকলেটের?

— কি করব আমার পুচকি বউ তো রেগে কথা বলছিল না।

দিল আবার ও রোদকে লজ্জা লাগিয়ে। রোদ পাঁচটা চকলেট হাতে নিয়ে ঘুরঘুর করছিল। আদ্রিয়ান ঐ দিকে দেখে মুচকি হেসে বললো,

— এই যে ম্যাডাম শীত করছে। কম্বল এ পোষাচ্ছে না। আপনাকে লাগবে।

বলতে দেড়ি সুরসুর করে রোদ কম্বলে ডুকতে দেরি হলো না যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল কখন আদ্রিয়ান ডাকদিবে। আদ্রিয়ান আবার ও হেসে টেনে রোদকে টেনে নিজের কাছে নিল। রোদও আদুরে বিড়ালের ন্যায় গুটিয়ে মিশে রইলো আদ্রিয়ানের সাথে।

আদ্রিয়ান বসে লেপটপে কাজ করছে আর রোদ আদ্রিয়ানের বুকে ঠেস দিয়ে বসেবসে চকলেট খাচ্ছে। মাঝে মধ্যে আদ্রিয়ানকেও খয়িয়ে দিচ্ছে। দুইজন এর দৃষ্টি লেপটপে আটকে। বেচারী রোদ হাজার বুঝার চেষ্টা করলেও কিছুই বুঝতে পারলো না। তাই কয়েকবার তো বিরক্ত হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কত সুন্দর লাগে আদ্রিয়ানকে। ফর্সা, লম্বা, স্মার্ট, আর লুক তো মাশাআল্লাহ। আর এই আস্ত হেন্ডস্যাম কি না রোদের জামাই ভাবতেই লজ্জায় রোদ লাল, নীল, বেগুনী হয়ে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ লুকালো। ইস কি লজ্জা এই এতো সুন্দর আদ্রিয়ান সুধুমাত্র রোদের পারসোনাল প্রপার্টি। রোদকে দেখে আদ্রিয়ান বললো,

— কি হয়েছে??

রোদ চমকিয়ে গেল নিজে নিজেই আওরালো,

— আল্লাহ কি সব ভাবছি আমি।

কিন্তু আদ্রিয়ানকে বললো,

— কই কি হবে? আপনি না বলেছিলেন বাসায় নিয়ে যাবেন? কবে যাব??

— যাব তো। আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলো।

— ওই ভাবে মন ভরে না। আপনি তো আর আপনার আম্মু থেকে দূরে থাকেন নি তাই বুঝবেন না।

— উহুম উহুম ম্যাডাম আমি পাঁচ বছর লন্ডনে পড়াশোনা করেছি।

রোদ চমকিয়ে আদ্রিয়ানের হাত ঝাঁকিয়ে উঠে বললো,

— আল্লাহ সত্যি???

— জ্বি।

— কিন্তু আমার তো কষ্ট হচ্ছে। ( মন খারাপ করে)

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ টা অফ করে পাশে রেখে রোদকে আবার ও বুকে চেপে ধরে বললো,

— আমি জানি তো আমার রোদুপাখির যে কষ্ট হচ্ছে। আমি সরি সোনা আমার জন্য এমন হলো। তোমার এখানে কষ্ট হচ্ছে তা বুঝতে পারছি।

রোদ তারাতাড়ি উঠে বললো,

— আরে আরে আমি এভাবে বলি নি তো। আমার এখানে কষ্ট হচ্ছে না। আমি সরি। বিশ্বাস করুন আমি এভাবে বলতে চাইনি। আমার শুধু আম্মুর আর রুদ্রের কথাটা বেশি মনে পড়ে তাই।

— হুম।

বলে আদ্রিয়ান আাবার ও রোদকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল। অনেকক্ষণ পর রোদ বললো,

— ডিনার করবেন না?

— হুম।

__________________

ডিনার টেবিলে সবাইকে বসে আছে। সাবা আর রোদ সব এনে এনে রাখছে। রোদ চেষ্টা করছে নিজের দায়িত্ব পালনের যদিও শাশুড়ী মা না করেছিল তবুও রোদের জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয়েছে। মিষ্টিকে রোদ এশার পর পরই খায়িয়ে দিয়েছে ঘুম পারিয়েছে। এখন বাজে ১০ টা। যদিও রোদ এখন খেতে চায় নি তবুও আদ্রিয়ান জোর করে বসিয়েছে। রোদ বেচারি ভালোমতো খেতেও পারছে না মামি কেমন করে তাকিয়ে আছে। খাবার টেবিলে জানতে পারলো আদ্রিয়ান ফুপিদের ফ্লাইট কেন্সেল হয়ে গিয়েছে তাই আসতে দুই দিন লাগবে। আদ্রিয়ান আজ ভালোমতো খেতে পারলো না কেমন জানো লাগছে। রোদ ও কোন মতো খেয়ে উঠে পরলো।

রাতে যথারীতি একপাশে মিষ্টি আরেকপাশে রোদকে বুকে নিয়ে ঘুমাচ্ছে আদ্রিয়ান। রোদ দেখলো আদ্রিয়ানের শরীর গরম হয়ে আছে। তাই বললো,

— আপনার শরীর কেমন গরম হয়ে আছে।

— কিছু না ঘুমাও।

রোদ আর কিছু বলতে পারলো না।

রাত তখন প্রায় ১ঃ৩০। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। ঠান্ডার মধ্যে বৃষ্টি শীত যেন বেশি করছে। এতো ঠান্ডার মধ্যেও রোদ অনেক উষ্ণতা অনুভব করছে। হঠাৎ কারো গোংরানির আওয়াজে ঘুম যেন ছুটে গেল। উঠতে চেয়ে ও পারছে না, আদ্রিয়ান চেপে ধরে রেখেছে বুকে। রোদ খেয়াল করলো এই ঠান্ডার মধ্যে ও আদ্রিয়ান শরীর অসম্ভব গরম হয়ে আছে। তারাহুরো করে নিজেকে ছারিয়ে নিয়ে আদ্রিয়ানের কপালে হাত দিল। অসম্ভব গরম হয়ে আছে। তারাতাড়ি উঠে দেখলো মিষ্টি এখনো ঘুমাচ্ছে। কি করবে ভেবে না পেয়ে জারবাকে কল দিল। কল রিসিভ হতেই রোদ বললো,

— জারবা একটু রুমে আসবা।

ঘুমের মধ্যেই চমকিয়ে গেল জারবা। তারাতাড়ি আসলো রুমে। রোদ বললো,

— মিষ্টিকে আজ তোমার রুমে নিয়ে যাও না। ওনার তো জ্বর আাসছে। কি করবো আমি।

— ভাইয়ার তো সহজে জ্বর হয় না। তুমি টেনসন নিও না। আমি বড় ভাইয়াকে ডাক দেই।

— না না সাবাই তো ঘুম কারোকে ডাকতে হবে না। আমি দেখছি। তুমি একটু মিষ্টি কে নিয়ে যাও।

— আচ্ছা। কিছু লাগলে ডাক দিও।

— হুম।

জারবা চলে গেলেই রোদ দরজা আটকে নিজের ব্যাগ থেকে প্যারাসিটামল বের করলো। যদিও জ্বর হলে তিন দিন আগে মেডিসিন দেয়া ঠিক না কিন্তু আদ্রিয়ানের জ্বর বেরেই যাচ্ছে। রোদ ডাকলেও আদ্রিয়ান জবাব দিচ্ছে না। অনেক কষ্টে ঔষধ খায়ালো। বাটিতে করে পানি এনে কপালে জ্বল পট্টি দিচ্ছে। আদ্রিয়ানের হাত পা কাপছে। তা দেখে রোদের চোখে পানি চলে এলো। ওর জন্য ই তো এমন হলো। না রোদ রাগ করতো না আদ্রিয়ান বাইরে যেত চকলেট আানতে আর না ভিজে জ্বর আসতো। ১ঘন্টা টানা জল পট্টি দিয়েও লাভ হচ্ছে না। জ্বর কমছেই না বরং বেড়ে যাচ্ছে। ঔষধ তো দিল। রোদ জানে এখন কি করতে হবে কিন্তু এটা করতে তো ওর প্রচুর লজ্জা লাগছে।

মনে সাহস জুগিয়ে ওয়াশরুম থেকে বলাতি করে পানি আনলো তাতে টাওয়াল ভিজিয়ে ভালোমতো চিপরে নিল। এবার পালা আদ্রিয়ানের টিশার্ট খুলতে হবে। উদ্দেশ্য সারা শরীর মুছে দেয়া। অনেক কষ্টে আদ্রিয়ানের টিশার্ট খুললো রোদ। এতো ঠান্ডার মধ্যে ও রোদ ঘেমে গেছে। এরপর টাওয়াল দিয়ে আদ্রিয়ান বুক, গলা, হাত পেট ভালো মতো মুছে দিল। আদ্রিয়ানকে উঠাতে পারলে পিঠটাও মুছিয়ে দিত কিন্তু তা সম্ভব না। তাই পরপর দুবার মুছিয়ে দিল। পা ও মুছিয়ে দিল। অবশ্য টাওজার হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে মুছে দিয়েছে। আদ্রিয়ানের তখন একটু হুস আছে। বিরবির করে কিছু বলছে যা রোদ বুঝতে পারল না। তাই আবার শুকনা টাওয়াল দিয়ে মুছিয়ে। টিশার্ট পরিয়ে দিল। এসব করতে করতে রোদ বেশ ক্লান্ত কারন আদ্রিয়ান এর মতো শক্তপোক্ত মানুষকে শরীর ছেড়ে দেয়া অবস্থায় শরীর মুছানো কষ্ট সাধ্য।

টিশার্ট পরিয়ে কম্বল দিয়ে ডাকতে গেলেই আদ্রিয়ান টান দিয়ে রোদকে নিজের বুকে ফেলে দেয়। রোদ হকচকিয়ে যায়। আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়েই দুজন কে ডেকে নেয়। রোদ কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর এখনো ছাড়ে নি তবে একটু কমেছে। থার্মোমিটার কই তাও জানে না নাহলে চেক করা যেত। ওর ভাবনার মাঝেই আদ্রিয়ান ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল। রোদ কিছু বুঝে উঠার আাগেই……….

#চলবে……..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২২

রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই আদ্রিয়ান ওর কপালে, পরপর দু গালে, নাকে, থুতনিতে চুমুতে ভরিয়ে দিল। এই প্রথম আদ্রিয়ানের এমন স্পর্শে কেপে উঠলো রোদ। যদিও এর আগে রোদের কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়েছে কিন্তু আজকের এই স্পর্শ সম্পূর্ণ নতুন। আচ্ছা রোদ কি জানে এমন স্পর্শের মানে? অবশ্যই জানে। কিন্তু আদ্রিয়ান তো এর আগে কখনো এমন ভাবে স্পর্শ করে নি। আদ্রিয়ান বুকে ঘুমাতে ও কখনো এমন অনুভব হয় নি। হবে কিভাবে আদ্রিয়ান তো কখনো ওমন ভাবে রোদকে স্পর্শ করে নি। দুইজনের নিঃশ্বাস একহতে আর সময় নিল না। সকল অনুভূতি মাথাচারা দিয়ে উঠছিল। দুই জনের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। কিন্তু আদ্রিয়ানের তখন ও হুস ছিল। তাই তো অধরের কাছে অধর নিয়ে ও তড়িৎ বেগে ফিরে এলো গলায়। হঠাৎ গলায় চিনচিন ব্যাথায় ঘোর কাটলো রোদের। খেয়াল করলো আদ্রিয়ান ওর গলায় কামর দিয়েছে। কিছু বলার আগেই আবার ঘারের কাছে একটা কামর দিল। কামর গুলো বেশি জোরে ছিল না আবার আস্তে ও ছিল না। আদ্রিয়ান গলায় কতক্ষণ মুখ গুজে রইল। রোদের শ্বাস প্রশ্বাস তখন বেসামাল। আদ্রিয়ান ওভাবেই ঘুমিয়ে গেল। প্রায় ১৫ মিনিট পর রোদের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হলো। মাথায় কিছুই ডুকলো না যে হঠাৎ কি হলো কিন্তু তবুও বুঝলো যে আদ্রিয়ান জ্বরের কারনেই এমন করেছে। অবাক হলো রোদ কিভাবে একজন পুরুষ একজন নারীর এতো নিকটে এসেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখে যা জ্বরের মধ্যে ও হারায় নি। সম্মান আরো প্রখর হলো আদ্রিয়ানের প্রতি। কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কমেনি। উঠতে চেয়ে ও পারছে না। অবশেষে অনেক কষ্ট করে উঠল।

ভোরের আলো ফুটতে আরো দেরী। এখন বাজে ৪ঃ৪৫। এতোক্ষণ ধরে রোদ জল পট্টি দিয়েছে। এখন জ্বর অনেকটাই কমে এসেছে। তবুও হালকা উষ্ণ। রোদ আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। লোকটা কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। একটু আগেও কি জানি বিরবির করে বলছিল। কিছু না বুঝতে পারলেও এতটুকু ঠিকই বুঝতে পেরেছিল যে আদ্রিয়ান বলছিল যাতে রোদ ওকে ছেড়ে না যায়। কয়েকবার মাফ চেয়েছে জোর করে বিয়ে করার জন্য। এটাও বলেছে যে রোদে নাকি আরো ভালো ছেলে ডিজার্ভ করে। কিন্তু একথা শুনে রোদের কেমন যানো লাগলো। আদ্রিয়ান ছাড়া অন্য কেউকে রোদ নিজের কাছে কল্পনা ও করতে পারে না। একদম ই না। আদ্রিয়ান প্রথম পুরুষ যে কি না রোদের এতো কাছে এসেছে। বাবর পরে প্রথম কারো বুকে মাথা মাথা রেখে নিজেকে সেফ ফিল করেছে। আদ্রিয়ান ই একমাত্র যার এতো কাছে রোদ নিরদ্বিধায় এসে পরে। আদ্রিয়ান কি এসব বুঝতে পারে? বুঝতে তো আর ঔ সব বলতো না। রোদের ও যে আদ্রিয়ানকে ভালোলাগে।

আজানের আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রোদের। তারাতাড়ি উঠে ওযু করলো। ঠান্ডার মধ্যে ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করায় বার বার কেঁপে উঠল রোদ। নামাজে দারিয়ে পরলো। মোনাজাতে আজ শুধু মাত্র আদ্রিয়ানের সুস্থতাই স্থান পেল। মিষ্টির সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই মোনাজাতে মিষ্টি স্থান পেয়েছে আর আদ্রিয়ান পেয়েছে বিয়ের পর দিন থেকে।

নামাজ শেষে কোরআন শরিফ থেকে ইয়াসিন সূরা বের করলো। এই সূরার গুরুত্ব খুবই বেশি। রোদের প্রায় অর্ধেক মুখস্থ। তাই পরে ফেললো তারাতাড়ি। কারো গুনগুনিয়ে কোরান তিলাওয়াতের আওয়াজে দূর্বল চোখ মেললো আদ্রিয়ান। সামনের কাউচে রোদ বসে কুরআন শরীফ পরছে। আদ্রিয়ান আবার ও চোখ বন্ধ করলো।ভালো লাগলো অনেক।

হঠাৎ উষ্ণ বাতাসে হালকা করে চোখ খুললো আদ্রিয়ান। বুঝলো কেউ ফু দিচ্ছে সারা মুখে মাথায়। চোখ মেলে দেখলো যা ভাবছিল তাই। মাথা হিজাবে ডাকা, চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তার দিকে ঝুকে ফু দিচ্ছিল রোদ। নিশ্চিত আদ্রিয়ানের জন্য এই পানি। কেন জানো অনেক ভালো লাগলো আদ্রিয়ানের। রোদের চোখে পানি তো আদ্রিয়ানের জন্যই। এর আগেও ওর চোখের পানির জন্য আদ্রিয়ান দায়ী ছিল কিন্তু ওটা তো আদ্রিয়ানের প্রতি রাগে করেছিল। এখনকার পানি তো আদ্রিয়ানের চিন্তার।
এসব ভেবেই বুকের ভিতর শীতল হয়ে এলো। আদ্রিয়ান রোদের হাত ধরে বললো,

— সারা রাত তো ঘুমাতে পারলে না বউ???

এবার রোদ লজ্জা পেল না। লজ্জা পাওয়ার সময় নেই এখন। কান্না আটকে বললো,

— এখন কেমন লাগছে??

— খারাপ কিভাবে থাকি হুম। আমার রোদুপাখি সারারাত সেবা করলো দোয়া করলো। ভালো তো হতেই হবে।

রোদ এবার শব্দ করে কেদে দিল। অনেকক্ষণ আটকে রেখেছিল। আদ্রিয়ানের এবার কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটা সারারাত ঘুমায় নি তার উপর এতো কান্না করছে। আদ্রিয়ান ওকে বুকে জড়িয়ে নিল।

— আমার বউ কাদে কেন?

এমন আল্লাদী কথায় কান্না আরেকটু বারলো। কান্না করছে আর বলছে,

— আ.. আমি ভয় পে…পেয়েছিলাম। আপনার কষ্ট হ..চ্ছিল না। আমার ভা..ভালো লাগে ন…নি।

বেচারী আর বলতে পারলো না। আবারও কান্নার আওয়াজ আসছে। আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। না লাভ হচ্ছে না। কতকিছু বললো তবুও লাভ হলো না। এবার বললো,

— বউ দেখ তো মনে হয় আবার জ্বর আসছে।

বলতে দেরি রোদের উঠতে দেরি হলো না। তারাতাড়ি কপালে হাত দিয়ে বললো,

— দেখি দেখি। আরেকটুখানি পরই সকাল হয়ে যাবে। তখন ডাক্তারের কাছে যাব। আমি কি মাথা টিপে দিব। ব্যাথা করছে??

আদ্রিয়ান হতবাক হয়ে গেল। কতক্ষণি ভালোবাসা থাকলে এমন করে। আবার চিন্তা করে হয় তো মোহ। নাহলে বিয়ের ১ সপ্তাহ ও হয় নি এতো তারাতাড়ি তো আর ভালোবাসা হয় না। তবুও নিজেকে শান্ত করে বললো,

— আমি ঠিক আছি। কান্না করো না। আসো তো বুকে আসো ঘুমাবা নাহলে সারাদিন মাথা ব্যাথা করবে।

–উহু। ঘুমাব না। উঠুন আপনি। ফ্রেশ হন। আমি কিছু নিয়ে আসি খাবেন।

— এখন না। আসো তুমি ঘুমাবা।

— না বললাম তো। আমার কথা না শুনলে কিন্তু আমিও আপনার কথা শুনব না।

হার মনলো আদ্রিয়ান। বললো,

— ঠিক আছে।

আদ্রিয়ান উঠতে নিলে রোদ হেল্প করলো। আদ্রিয়ান বের হতেই টাওয়ার এগিয়ে দিল। তারপর আবারও কম্বলের নিচে ডুকিয়ে দিল। নিজে নিচে গেল। ঝটপট করে চিকেন সুপ করে নিল। উপরে এসে দেখলো আদ্রিয়ান কপালে হাত দিয়ে চোখ বুজে আছে। রোদ হালকা ডাক দিতেই উঠে বসলো।

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই রোদ চামুচে করে সুপ আদ্রিয়ানের মুখের সামনে ধরল। আদ্রিয়ান অবাক হলেও মুচকি হেসে মুখে নিল। সবটা খায়িয়ে রোদ বললো,

— কফি আনব?

— উহু। কফি না অন্য কিছু লাগবে?

— কি লাগবে। বলুন আমাকে।

— তোমাকে।

রোদ একটু হকচকিয়ে গেল। হাজার জ্বরের মধ্যে হোক রাতের ব্যাপারটা রোদের এখনও হজম হয় নি। একটু ইতস্তত করে গেল আদ্রিয়ানের কাছে।

— কাছে আসো। তোমার ঘুমের প্রয়োজন।

রোদ ও কিছু না বলে আদ্রিয়ানের কাছে কম্বলে ডুকে পরলো। আদ্রিয়ান ও বুকে নিয়ে মাথায় বিলি কেটে দিল। একটুপর ই রোদ ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ান ও মুচকি হেসে রোদর মাথায় চুমু খেল। আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেল। শরীরটা এখনও দূর্বল লাগছে।

___________________

আদ্রিয়ানের জ্বর কথাটা সারাবাসায় ছড়াতে বেশি বেগ পেতে হয় নি। জারবা নিজ দায়িত্বে এ কাজ করছে। সবার রুমে যেয়ে যেয়ে বলে এসেছে। তার ভাইয়ের এতো বছর পর জ্বর এসেছে বলে কথা। এতো কাজ করে ক্লান্ত হয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল। বাড়ির সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো। আদ্রিয়ানের জ্বর হলে সহজে ছাড়ে না। মা, বাবা, সাবা, আরিয়ান, মামি, জাইফ, জাইফা, ছোট মিষ্টি ও আলিফ ও রুমের বাইরে ভির জমালো। নক করলেও কোন সারা নেই। তাই এবার একটু জোরে নক করল। আদ্রিয়ান ঘুম হালকা হওয়ায় তা ভেঙে গেল। আস্তে করে রোদকে বালিশে শুয়িয়ে দিল। রোদও কম্বল জড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ান একপলক তাকিয়ে হাসল। মেয়েটা একদম ঘুমকাতুরে তাও কি ভাবে কাল সারারাত ঠান্ডায় জেগে সেবা করলো। এসব ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে দিল। ওমনি হুরমুরিয়ে সবই ডুকলো। সবাইকে এভাবে দেখে আদ্রিয়ান বেচারা ভরকে গেল। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করার আগেই সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরলো ওকে নিয়ে। ওর মা বললো,

— তোর নাকি জ্বর হয়েছে? ( কপালে হাত দিয়ে)

বাবা বললো,

— আমাদের ডাকিস নি কেন?

আরিয়ান বললো,

— বস আমি স্থোরোস্কোপটা আর থার্মোমিটারটা নিয়ে এসে চেক করি।

সাবা বললো,

— সুপ করে আনি?

জাইফা আর জাইফ বললো,

— ভাইয়া জ্বর কিভাবে হলো?

ছোট মিষ্টি আর আলিফ কেন বাদ যাবে। ওরা বললো,

— বাবাই কোলে নাও।

আলিফ বললো,

— চাচ্চু আমার সাথে খেলবে?

এত প্রশ্ন শুনে আদ্রিয়ান এখন নিশ্চিত অসুস্থ হয়ে যাবে। কাকে কি বলবে। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিল। এরপর বললো,

— ওয়েট থাম সবাই। মা, জ্বর হয়েছিল এখন ঠিক আছে। বাবা, ডাকার প্রয়োজন হয় নি। ভাই, কিছু আনতে হবে না। ভাবী, সুপ খেয়েছি। জাইফা আর জাইফ, কাল ঠান্ডায় বাইরে ছিলাম তাই হয়তো এমন হয়েছে। আর লাস্ট উত্তর, আলিফ, খেলবো বাট পরে।
হয়েছে তোমাদের। না হলেও আমি আর উত্তর দিতে পারবো না। ঐ জারবাকে আমি পরে দেখে নিব। এসব ওরই কাজ।

সবাই একটু শান্ত হলো।

এতক্ষণ পর মামি মুখ খুললো,

— জারবাকে কেন দোষ দিচ্ছ? ও না বললে তো আমরা জানতাম ই না। তোমার বউ তো ঘুম। জামাইয়ের প্রতি কোন দায়িত্ব নাই। বাড়ির সবাই এসে হাজির আর উনি ঘুম। ছোট বলে ওতো ও ছোট না যে এই রকম মাথায় তুলে রাখবে।

ওনার কথায় সবার মুখ থমথমে হয়ে গেল। আদ্রিয়ান হাত মুঠ করে নিজেকে শান্ত করে মিষ্টিকে আর কে নিচে জারবার কাছে যেতে বললো। এরপর বললো,

— বউ আমার কতটুকু ছোট তা আমি ভালো বুঝি। আর দায়িত্ব আমার বউ সারারাত পালন করেছে। নাহলে বাড়ির সবাই জানে আমার জ্বর সহজে যায় না। বুঝুন তাহলে বউ কোন সেবাটাই না করলো।মাত্র ঘুম পারালাম। আর আমার বউ আমি মাথায় তুলে রাখব নাকি আলমারিতে তুলে রাখব এটা আমার নিজস্ব ব্যাপার কারো এ বিষয়ে কথা বলা পছন্দ না আমার।

আদ্রিয়ানের উত্তরে মামি চুপসে গেল। সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। জাইফা আর জাইফ ও মায়ের এ আচরণে তিক্ত। জাইফ তো জোরে হেসে বললো,

— ভাইয়া একদম ঠিক। আমার বিয়ের আগে কিছু টিপস দিও তো। নাহলে আম্মু আমার বউকে ও জালিয়ে মারবে।

সবাই এবার হেসে উঠল। মামি রাগে গজগজ করতে করতে নিচে গেলেন। এরপর সবাই ধীরে ধীরে চলে গেল। আদ্রিয়ান আস্তে করে রোদের কাছে এলো। মনে করলো কিভাবে রোদ সারা গা মুছে দিল, কিভাবে কান্না করলো। এসব ভেবে মুখে বড় করে হাসি ফুটে উঠলো। হঠাৎ কিছু মনে হতেই চমকিয়ে গেল। তড়িৎ বেগে কম্বল সরিয়ে………

#চলবে……

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৩

কম্বল সরিয়ে রোদের গলায় তাকাতেই আতকে উঠলো আদ্রিয়ান। গলার মধ্যে কালচে লাল দাগ। হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দেখলো ঘাড়ে ও সেম। ফর্সা গলায় কেমন ফুটে আছে দাগ গুলো। আদ্রিয়ানের ভাবছে নিশ্চিত রোদের খারাপ লেখেছে, ব্যাথা পেয়েছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে। জ্বরের ঘোরে ও এমন কিছু করবে নিজেও ভাবে নি। রোদ হয় তো বুঝতে পেরেছে তাই রিএক্ট করেনি। কিন্তু আদ্রিয়ান তবুও চিন্তিত। ওর বয়স ২৭ আর রোদের মাত্র ১৮। ৯ বছরের একটা গ্যাপ রোদ কি মন থেকে ওকে মেনে নিতে পারবে? রোদ তো আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করে। আদ্রিয়ান তো স্বার্থপরের মতো রোদকে বিয়ে করেছে। এসব ভেবেই তো আদ্রিয়ানের কেমন লাগে। এগুতে যেয়েও গুটিয়ে রাখে নিজেকে। শুধু মনে করে ও শুধু নিজের প্রিয়তমার কাছে করা ওয়াদা পূরন করছে। আসলে কি তাই? তা হলে রোদই কেন? রোদকে তো আদ্রিয়ান ভালোবেসে ফেলেছে। কি ভাবে তা নিজেও জানে না। শুধু এই সহজ, সরল, নিসপাপ মেয়েটাকে তার লাগবেই।

হঠাৎ রোদ নড়ে উঠতেই আদ্রিয়ানের ধ্যান ভাঙলো। এতক্ষণের চিন্তায় ভাটা পরলো। রোদ পিটপিট করে তাকালো। আদ্রিয়ানের হাত ধরে টান দিতেই আদ্রিয়ান ঝুকে গেল রোদের মুখের সামনে। রোদ হাত বাড়িয়ে কপাল ছুয়ে দিল। নরম তুলতুলে হাতের ছোয়ায় চোখ বন্ধ করলো। রোদ ঘুম জরানো কন্ঠে বললো,

— এখন ও জ্বর আছে।

আদ্রিয়ান ওর কথা খেয়াল করলো না। মুখ নামিয়ে আনলো রোদের গলায়। লাল হওয়া জায়গায় ঠোঁট লাগিয়ে চুমু খেল গভীর ভাবে। রোদর বাকি ঘুম পালিয়ে গেল। নিজের চোখ বন্ধ করলো। আদ্রিয়ান ঘাড়েও একই কাজ করলো। হঠাৎ করে ফোনের আওয়াজে চমকে আদ্রিয়ান সরে গেল। রোদ ও চোখ খুললো। আদ্রিয়ান কল রিসিভ করতেই রোদও উঠে গেল। ১০ঃ৩০ বাজে আল্লাহ জানে মিষ্টি কিছু খেয়েছে নাকি। ও উঠতে নিলেই আদ্রিয়ান ইশারায় বললো, উঠছে কেন?

রোদ বললো,

— লেট হয়ে গেল আল্লাহ জানে মিষ্টি খেয়েছে নাকি?

আদ্রিয়ান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রোদ ওয়াশরুম ডুকে পরলো। কেন জানি ওর লজ্জা লাগছে আদ্রিয়ানের সামনে যেতে।

ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো আদ্রিয়ান এখন ও কথা বলছে। আবার হাসছে ও। মুখ মুছে একটা সুয়েটার পরে নিল। আজকে ঠান্ডা টা একটু বেশি। আদ্রিয়ান কল রেখে ওর সামনে এলো। হাত বাড়িয়া গলায় ছুয়ে দিতেই রোদ “উফ” শব্দ করলো। এতক্ষন কিছু না হলেও আদ্রিয়ান ছুতেই জ্বলে উঠলো গলা। আদ্রিয়ান হাত সরিয়ে আবার চুমু খেল আর বললো,

— সরি।

এবার লজ্জায় রোদের মন চাচ্ছে জানালা দিয়ে লাফ দিতে। কিন্তু তা আপাতত সম্ভব না। তাই এই চিন্তা বাদ দিল। আদ্রিয়ানকে কোনমতে বললো,

— আপনি চলুন খাবেন। এরপর ডাক্তারের কাছে যাব।

— জ্বর নেই আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।

রোদ কপালে হাত দিয়ে বললো,

— আগে চলুন খাবেন। পরে বাকি কথা।

বলে নিচে গেল দুজন। টেবিলে আদ্রিয়ান বসতেই রোদ মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করতেই জানলো সাবার কাছে খেয়েছে কিন্তু অল্প তাই রোদ ওকে নিয়ে আবার ও খেতো বসলো।

___________________

আজ আর আদ্রিয়ানকে বের হতে দেয় নি রোদ। নিজে ও যায়নি। কিন্তু সকাল থেকে অসম্ভব মাথা ব্যাথা করছে। ঘুম না হলেই ওর এমন হয়। রুমে যেয়ে ঘুমালে ভালো হতো কিন্তু মামির জন্য তা পারছে না। হঠাৎ বেশি খারাপ লাগায় রোদ রুমে ডুকেই ওয়াশরুমে দৌড় দিল। বেসিনে গিয়ে মুখ ভর্তি বমি করে দিল। আদ্রিয়ান লেপটপে কিছু কাজ করছিল রোদকে এভাবে দেখে নিজেও ওয়াশরুমে ডুকলো। রোদকে এভাবে বমি করতে দেখে অস্থির হয়ে গেল। একহাত রোদের কপালে আরেক হাত দিয়ে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। এর মধ্যে জরবা আর জাইফা এলো রুমে। জারবা এসেছিল ঐ দিন মামি যে রোদকে টাকা নিয়ে কথা শুনালো তা বলতে কিন্তু রোদকে বমি করতে দেখে বললো,

— ছোট ভাবী কি হয়েছে?

আদ্রিয়ান রোদের মুখে পানি দিয়ে ধুয়ে ধরে রুমে নিয়ে এলো। বিছানায় শুয়িয়ে দিল। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে দিল। ওর পাশে বসে হাত ধরে বললো,

— রোদ বেশি খারাপ লাগছে? ডাক্তারের কাছে যাই?

রোদের বমি করাতে এখন ভালো লাগছে। মাথা ব্যাথা ছিল যা আর নেই। কিছু বলবে তার আগেই জারবা বললো,

— ও মাই গড ভাবীইইইই!!!!!!! কনগ্রেকচুলেসনস।।।।। আমি আবার ও ফুপি হবো।

একনাগারে কথাগুলো বলে দম নিল জারবা। আদ্রিয়ান, রোদ আর জাইফা হতবাক হয়ে গেল ওর কথা শুনে। এই মেয়ে সবসময়ই এমন অস্থির হয়ে থাকে।
জারবা আবার বললো,

— ওয়েট সবাই কে বলে আসি দাড়াও।

ও যেতে নিবে এর আগেই আদ্রিয়ান দিল এক ধমক। ধমক শুনে জারবা চুপ হয়ে গেল। জাইফা বললো,

–গাধা বিয়ের ১ সপ্তাহ আগে কেও কি কনসিফ করে। চল আমার সাথে।

বলে টানতে টানতে নিয়ে গেল। ওরা যেতেই রোদ হেসে কুটিকুটি হয়ে গেল।

__________________

দুপুরে খেয়ে সবাই রুমে চলে গেল। মিষ্টি ঘুমাবে না তো নাই। আদ্রিয়ানের কথা ও শুনলো না। আজ ওর নাকি খেলতে মন চাচ্ছে। রোদকে বললো,

— মাম্মা। ও মাম্মা। চলো না ওই পার্কে যাই।

— বাচ্চা এখন তো অনেক ঠান্ডা। তোমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে।

— প্লিজ।।।

— মিষ্টু মা আমার জেদ করে না।

মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বসে রইল আদ্রিয়ানের পেটের ওপর। রোদ অসহায় চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান নিজেও বুঝালো কিন্তু লাভ হলো না। রোদ হঠাৎ করে মিষ্টিকে সুরসুরি দিতে শুরু করলো। আর মিষ্টি ওতো হেসে হেসে লুটিপুটি খাচ্ছে আদ্রিয়ানের বুকে। ওদের দেখে আদ্রিয়ান ও হাসছে আর ভাবছে, মা ও মেয়ে একই দুইটাই বাচ্চা।

মিষ্টি আবদার করেছে খেলতে হবে। অগত্যা রোদকে রাজি হতে হলো। আলিফ, মিষ্টি আর রোদ খেলছে। তাও বরফ পানি। দুষ্ট দুই জন রোদকে চোর বানালো। রোদ ও ধরতে দৌড় দিচ্ছে। পুরো বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছে। আদ্রিয়ান উপর থেকে দেখছে ওর পাশে ওর মা এসে দাড়ালো। বললো,

— মেয়েটা পুরাই বাচ্চা।

— হু

— কেমন করে খেলছে। বাড়িটা আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি টাও কেমন হয়ে থাকতো কিন্তু এখন সবসময় হাসিখুশি থাকে। মা তো মাই হয়।

— হুম।

আদ্রিয়ান ওদের দেখলো। কিছুক্ষন পর রুমে গেল। জ্বরের দূ্র্বলতা টা কাটেনি।

রোদ দৌড় দিতে গিয়ে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরতে গিয়েও থেমে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখতেই একটা ঢোক গিললো। না জানি কি হয়। সামনে মামি দাড়িয়ে। উনি রেগে বললেন,

— এই মেয়ে সমস্যা কি। বেহায়া মেয়ে। কে বলবে বাড়ির নতুন বউ? সবসময় বাচ্চামি। মা বাবা তো কিছু শিখায় নি কিছু দিয়ে ও দেয় নি। না জানি কোন ঘরের মেয়ে নিয়ে এসেছে আদ্রিয়ান। কোন গয়না ও তো পরে না যে দেখে কেউ বুঝতে পারবে বউ। বড়লোক ছেলে দেখে মেয়ে বিদায় করে বেঁচে গেছে।

ওনার কথা শুনে রোদ মাথা নিচু করে রাখলো। চোখ দিয়ে টুপ টাপ পানি পরতে লাগলো।

— হয়েছে কান্না করে বাড়ি এক করতে হবে না। না জামাকাপরের ঠিক আছে না কিছু। আল্লাহ জানে আদ্রিয়ান কি দেখে…

আর কিছু বলার আগেই কারো হুংকার শুনে রোদ কেপে উঠলো। মামিও কিছুটা থেমে গেল। সামনের ব্যাক্তি তেরে এলো। পারেনা মামিকে এখানে গেরে দেয়। চোখ লাল হয়ে কপালের রগ ফুলে উঠেছে। রোদ তো ভয়ে শেষ। না জানি কি হয়। কারন ওর সামনে ওর দুইমাত্র ভাই রাদ দাড়িয়ে। ভাইকে দেখে জড়িয়ে ধরবে নাকি ভয়ে কাপবে রোদ ভাবছে। না জানি ভাই কি করে। নিশ্চিত মামির কথা শুনেছে। রাদ রাগে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,

— সাহস কত আপনার আমার বোনকে ধমকান?

মামি কিছুটা ভয় পেল কিন্তু তবুও বললো,

— এই ছেলে কে তুমি? আমাদের বাসায় দাড়িয়ে আমার সাথে চিল্লিয়ে কথা বলছো? বেয়াদব।

— আমি কে তা যার বাড়ি তাকে জিজ্ঞেস করুন। আপনার কতো বড় সাহস আমার মা বাবা তুলে কথা বলেন আমার বোনকে।

— ওহ ভাই। তা যেমন বোন তেমন ভাই।

চিল্লা চিল্লিতে সবাই বের হয়ে এলো। মিষ্টি তো কেঁদেই দিল। আলিফ ওর হাত ধরে আছে। আদ্রিয়ান দৌড়ে নিচে এলো। বাকি সবাই ও এলো। সাবা শুরু থেকেই সব দেখছে। কিন্তু ও নিচে আসার আগেই এসব ঘটে গেল। আদ্রিয়ান রাদকে দেখে সামনে এলো। ওই একটা কাজে রাদকে আজ আসতে বলছিল। নামতে নামতে কিছু কথা শুনেছে। কিন্তু পুরো ঘটনা জানে না। কেউ কিছু বলার আগেই রাদ রোদের হাত টেনে ধরলো আর বললো,

–চল এখান থেকে। এই বাড়িতে কোন দরকার নেই থাকার। আর এইজে আপনি শুনে রাখুন ( মামিকে ইশারা করে) ওর ভাই আর বাপের এতো আছে যে ওকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্বর্ণে মুরে রাখতে রাখতে পারবে। আর আমাদের বাবা মা শিক্ষা দিয়েছে দেখেই আজ আপনাকে কিছু করলাম না। নাহলে রাদ খানের বোনের সাথে এমন জঘন্য ব্যবহার করলে তাকে কি করতাম দেখিয়ে দিতাম।

বলে টানতে টানতে রোদকে নিয়ে যেয়ে লাগলো। আদ্রিয়ান সহ সবাই বিচলিত হয়ে পরলো। সবাই আটকাতে চাচ্ছে কিন্তু রাদ রেগে বম হয়ে আছে। সাহস কত ওর একমাত্র আদরের বোন যাকে মাথায় করে রাখে তার সাথে এমন ব্যবহার! আদ্রিয়ান বারবার রাদকে মাথা ঠান্ডা করতে বলছে। রোদ বারবার হাত ছাড়াতে চাইছে আর বলছে,

— ভাইয়া ভাইয়া শুনো আমার কথা। ভাইয়া প্লিজ। দেখো আগে শুনো আমার কথা।

রাদ ছাড়ছেই না৷ রোদ কেদে কেদে আবার বললো,

— ভাইয়া প্লিজ ছাড়ো। ভাইয়া আমার মেয়েটা কান্না করেছে দেখো ওর আমাকে লাগবে। আমি যাবো না ভাইয়া।

রোদ এগুছে না দেখে রাদ পিছনে ঘুরতেই রোদ হাত ছাড়াতে চাইলেই রাদ রেগে চড় মারার জন্য হাত তুললো। আদ্রিয়ান এসে ওকে নিজের পিছনে লুকিয়ে নিল। রোদ আদ্রিয়ানের পিছনে ভয়ে কাদছে আর ওর পিঠের দিকের টিশার্ট হাতে মুঠো করে রেখেছে। আদ্রিয়ান বললো,

— রাদ দেখো রোদ ভয় পেয়ে আছে। মাথা ঠান্ডা করো। ভেতরে চলো আমরা কথা বলি।

রাদ চিল্লিয়ে বললো,

— কোন কথা নেই তোমাদের কারো সাথে। আমি আমার বোন নিয়ে যাব৷ টাকার অভাব নেই আমাদের যে ওই মহিলা আমার বোনকে অপমান করছে। কত স্বর্ণ লাগবে বলতে বলো ওর বাপ ভাই যথেষ্ট। আমার বোনকে কিভাবে বিয়ে করেছো ভুলে গিয়েছো! কেন ও কথা শুনবে বাইরের মানুষের।

— দেখ রাদ ও ভয় পাচ্ছে। আমি মাফ চাইছি প্লিজ ভেতরে চলো। আমরা কথা বলি।

রাদ রাগে ফসফস করছে। আদ্রিয়ানের মা বাবা বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে গেল ভিতরে। আদ্রিয়ানের মা বললো,

— সরি বাবা। আসলে উনি আমার বড় ভাবী। বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই পুরো ফ্যামিলি সামলেছেন তাই ভাবীকে আমরা সম্মান করি।

— তাই বলে আমার বোনকে যা খুশি তা বলার অধিকার ওনার নেই। আর রইলো গয়না তা জত ভরী লাগবে বললেই হতো রোদকে এতো কথা শুনানোর মানি হয় না।

আদ্রিয়ানের বাবা বললো,

— বাবা প্লিজ রাগ করো না। আমাদের কোন কিছুই চাওয়ার নেই সবচেয়ে মূল্যবান রত্মটিই তো নিয়ে এলাম। আমি মাফ চাইছি ভাবীর পক্ষে।

— প্লিজ আংকেল। আমাকে লজ্জা দিবেন না। জাস্ট খেয়াল রাখবেন নেক্সটাইম যেন এমন কিছু না হয়। তাহলে রোদকে আর এ বাড়ি রাখব না। আর এর জন্য আমার বাবার অনুমতির ও প্রয়োজন নেই আমার। অনেক আদরের বোন আমার।

কথাগুলো একপ্রকার হুমকি দিয়ে বললো রাদ। বলে উঠে যেতে নিলে আদ্রিয়ানের মা বসতে বললো কিছু খাওয়ার জন্য। রাদ সরি বলে আদ্রিয়ানের হাতে কিছু ফইল দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল। আদ্রিয়ান সারাসময় মাথা নিচু রাখলো। রোদকে কিভাবে এনেছে এটা ও আর ওর মা বাবা জানে। আর প্রথম বার কিনা ওর ভাই এসে এমন কান্ড দেখলো। যদিও আদ্রিয়ানের বাবা রিকুয়েষ্ট করেছে যাতে বাসায় কিছু না বলে তবুও আদ্রিয়ানের টেনসন হচ্ছে যদি ওরা ওর রোদকে নিয়ে যায় কিভাবে থাকবে আদ্রিয়ান আর মিষ্টি।

সাবার কাছে পুরো ঘটনা সবাই জানতে পারলো। আদ্রিয়ানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিভাবে এমন মনমানুষিকতা থাকতে পারে বড় মামির। বাড়ির সবাই ও বেশ রাগ করে আছে। রোদ তখনই মিষ্টি কে নিয়ে উপরে চলে গিয়েছিল। মিষ্টি এখন জারবার রুমে। এতকিছুর পরও একজনের মুখে লজ্জা মাখা হাসি তা আর কেউ না জাইফা।

__________________

আদ্রিয়ান রুমে আসতেই রোদ বললো,

— ভাইয়া কোথায় নিচে?

— চলে গিয়েছে।

— কি??? আমার সাথে দেখাও করলো না।

বলে কেদে দিল রোদ। আদ্রিয়ান বিছানায় এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

— কাদে না সোনা। প্লিজ কাদে না।

— ভাইয়া আমার উপর রেগে আছে। আমাকে মারতে চেয়েছিল। বলেন আমি কিভাবে যেতাম মিষ্টি কান্না করছিল না।

,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর বলছে। আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে শুয়ে পরলো। বুকে জড়িয়ে নিল আর বললো,

— কিছু হয় নি রোদ। কেদো না। তোমার ভাইয়া আসবে আবার।

— ভাইয়া আসবে না।রেগে আছে আমার সাথে।

আদ্রিয়ান ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিল এরপর চোখে চুমু খেল।

#চলবে…..