ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
121

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৪

সারারাত ঘুমাতে না পারায় একটু পরই ঘুমিয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান সাবধানে ওকে বালিশে শুয়িয়ে দিল। কম্বল বুক পর্যন্ত তুলে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেল। কিছুক্ষন তাকিয়ে ভাবলো, রোদ চাইলেই আজ চলে যেতে পারত। কিন্তু গেল না অথচ কেমন সারাদিন কান্না করছিল বিয়ে করবেনা বলে। মেয়েটা মিষ্টিকে অনেক আপন করে নিয়েছে। আদ্রিয়ান উঠে আলমারি খুলে একটা ফাইল হাতে নিয়ে দেখলো। এরপর ফোন হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে গেল। বারান্দায় বাতাস অনেক তাই দরজা ভিরিয়ে দিল নাহলে ঠান্ডায় রোদের ঘুম ভাঙলে। একটা নাম্বারে কল দিল রিসিভ হতেই সালাম দিয়ে কিছুক্ষন কথা বলে কল কাটল। অতঃপর আবার একটা নাম্বারে কল দিল। কথা শেষে রুমে আসলো।

মাগরিবের আজানের সাথে সাথে রোদ উঠে পরলো। পাশে আদ্রিয়ান নেই। মিষ্টি বসে বসে পাজল সলফ করছে। রোদ হেসে বললো,

— আমার বাচ্চাটা কি করে?

— মাম্মা। দেখো একসাইড সলভ করেছি।

— হু। দেখতে হবে না কার মেয়ে।

— মাম্মা খাব।।

— আল্লাহ দাড়াও মা। নামাজটা পরে নি।

— ওকে।

রোদ নামাজ পরে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে নিচে যাবে ওমনি আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো।

— উঠে পরেছো?

— হুম। নিচে যাব। মিষ্টির ক্ষুধা লেগেছে।

আদ্রিয়ান মিষ্টিক নিজের কোলে তুলে নিল। হাত দিয়ে রোদের মাথার ওপর উরনাটা টেনে দিয়ে বললো,

— নিচে আমার ফ্রেন্ডরা এসেছে। তোমার জন্য।

— আমার জন্য কেন?

— কেন আবার আমার বউ দেখতে।

রোদ একটু লজ্জা পেল। আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। ড্রয়িং রুমে প্রায় ৫/৬ জন ছেলে বসা আর ৪ জন মেয়ে বসা। রোদের এমন অচেনা লোকজনের সামনে যেতে কেমন যেন লাগলো। আদ্রিয়ান ধরে এনে বসালো। রোদ সালাম দিল। মেয়েগুলো এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

— আল্লাহ আদ্রিয়ান এতো পুরোই বাচ্চা মেয়ে। এতো কিউট।।। মনে হয় পুতুল একটা।

একটা ছেলে বললো,

— ভাই ভাবী ডাকতে পারবো না। বেশিই ছোট আমাদের। রোদ আমরা তোমাকে নাম ধরেই ডাকব। কি বলো?

রোদ হালকা করে বললো,

— আচ্ছা ভাইয়া।

আদ্রিয়ান এর মধ্যে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অয়ন, রিশান,রাইফ,সাহিল,প্রণয় আর প্রান্ত। এদের মধ্যে প্রণয় আর প্রান্ত দুই ভাই। দুইজনই ইন্জিনিয়ার।অয়ন আর সাহিল ভাইয়া আর্কিটেকচার। আর রিশান আর রাইফ ভাইয়া হলো ডাক্তার। মেয়েদের মধ্যে প্রানো আপু হলো প্রনয় আর প্রান্ত ভাইয়ার বোন কিন্তু রিশান ভাইয়ার ওয়াইফ। বাকিরাও বিবাহিত বাকি অয়ন ভাইয়া। এরা সবাই নাকি ছোট বেলার ফ্রেন্ড। আরো আছে কিন্তু এরা একে ওপরের জান। হঠাৎ রিশান ভাইয়া বললো,

— রোদ তুমি ফাস্ট ইয়ারের না??

রোদ এতোক্ষণে মাথা তুলে তাকাতেই শকট কারন উনি দুই দিন ক্লাস নিয়েছে আমাদের। রোদ বললাম,

— জ্বি স্যার।

সবাই হো হো করে হেসে উঠল। রিশান ভাইয়া বললো,

— আরে বাসায় ভাইয়াই ডেকো।

রোদ মাথা নিচু করে বললো,

— জ্বি।

প্রনয় ভাইয়া বললো,

— কিরে শালা ভালো ই তো দিন যাচ্ছে তোর। হানিমুনে কবে যাবি?

আদ্রিয়ান বললো,

— এখন ও এসব নিয়ে ভাবি নি।

এরমধ্যে অয়ন বললো,

— হু হু সবতো করেই ফেললা মামা আর এখন বলো ভাবো নি।

রোদ বেচারী লজ্জায় শেষ। তাই কোনমতে বললো,

— আমি মিষ্টি কে দেখে আসি।

বলে উঠে গেল।

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

–মানে? কি করে ফেললাম?

প্রান্ত বললো,

— আমাদের চোখ ফাকি দিতে পারবি না শালা। সবই দেখি বুঝলি। পিচ্চি বউ গলা টলা ঢেকে রাখবি তো নাকি।

বলে অট্ট হাসিতে সবাই ফেটে পরলো। আদ্রিয়ান যা বুঝার বুঝে গেল। ওর এই বান্দর ফ্রেন্ডরা এমন ঠোঁট কাটা টাইপের ই। কিছুই মুখে আটকায় না। আদ্রিয়ান বললো,

— বেটা তেমন কিছুই না।

এতক্ষণে সাহিল মুখ খুলে বললো,

— বিয়ে করা বউ তোর এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন?

আবার ও একরোল হাসি পরলো। এর মধ্যে সবাই বলে গেল যাতে ওদের রিইউনিয়ন পার্টি তে রোদকে নিয়ে যায়। রোদ ও আচ্ছা বলেছে। ওরা সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছিল রোদ কিভাবে মিষ্টি কে খাওয়াচ্ছিল।

_________________

মামি আর রোদের সামনে তেমন একটা আসে নি কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাত ১২টায় আদ্রিয়ানের নানু, বড় মামা, ছোট মামা, মামি আর তাদের সন্তানেরা হাজির। সবাই তো এদের দেখা মাত্র অবাক। রাতে টায়ার্ড ছিল বলে কেউ আর তেমন কথা বলে নি সবাই রুমে গেছে রেস্ট নিতে। আর আদ্রিয়ানের বাবা মায়ের বুঝতে ১ মিনিট ও লাগে নি যে এদের হঠাৎ কে আনলো। আদ্রিয়ানই এনেছে তখন কল দিয়ে মামাকে সব বলেছে।

রাতে রোদ যথারীতি আদ্রিয়ানের পাশে সুয়ে আছে মন খারাপ করে। আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়ে বললো,

— ঘুমাচ্ছো না কেন?

— আম্মুর সাথে কথা বললাম। মনে হয় ভাইয়া কিছু বলে নি।

— হু।

— বাসায় কবে যাব?

— যাব। এখন ঘুমাও।

রোদ বাসায় যাওয়ার কথা যতবার বলে আদ্রিয়ান ততোবার ই নিয়ে যাবে বলে কিন্তু আর নেয় না। রোদ কিছু বুঝতে পারে না। ঐ দিনই শুধু রোদকে নিয়ে গিয়েছে আর তো নিল না আদ্রিয়ান। কিছু বলতেও পারছে না। কিন্তু আদ্রিয়ান জানে ও নেয় না। ইচ্ছা করেই নেয় না। মনের ভয়টা যে কাটছে না। যদি রোদ আর আসতে না চায়।

রোদ ঘুমাবে না দেখে আদ্রিয়ান বললো,

— তাহলে কি করবে এতো রাতে?

রোদ আদ্রিয়ান বুকে মুখ ঘষে বললো,

— ইমমম গল্প করবো।

— আচ্ছা বলো গল্প।

— কি বলবো? আপনি বলেন?

— আমি তো গল্প জানি না। আচ্ছা তুমি বলো ছোট বেলার গল্প।

ব্যাস রোদকে আর পায় কে সারা দীনদুনিয়ার কথা বলা শুরু করলো। আদ্রিয়ান মনোযোগ দিয়ে রোদের ঠোঁট নেড়েনেড়ে বলা কথা শুনছে।

— জানেন আমি তো ছোট বেলায় ইন্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলাম।

— তাহলে হলে না কেন?

— কিভাবে হবো? ম্যাথ ভালোলাগে না। ছোট বেলায় সব মুখস্থ করতাম। মুখস্থ বিদ্যা ভালো ছিল। তাই ক্লাস ৩ আর ৭ ও পরি নি। তাই তো এতো তাড়াতাড়ি মেডিকেলে উঠে গেলাম। ভাইয়া আমাকে ম্যাথ করাত কিন্তু পরে ভাইয়াও বিজি হয়ে গেল তাই বাসায় স্যার রেখেছিল আব্বু কিন্তু ঐ স্যারটা….

— কি স্যারটা কি?? বলো?

— উনি কেমন যেন ব্যবহার করতো। আমাকে মনে হয় পছন্দ করতো। উনি অনেক হ্যান্ডসাম ও..

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ওকে ধমকে বললো,

— আমি বলেছি কেমন ছিল? কি করেছে তা বলো।

রোদ একটু ভয় পেল আদ্রিয়ানকে দেখে । তবুও বললো,

— প প্রোপস করেছিল।

— এরপর?

আদ্রিয়ানের উদিগ্ন হওয়ায় রোদ মজা নেওয়ার জন্য বললো,

— এরপর আর কি? যা হয় তাই।

রোদের উত্তর যেন আদ্রিয়ানের পছন্দ হলো না। বুক থেকে ঝাটকা মেরে বিছানার ফেলে দুই হাত দিয়ে টাইট করে রোদের বাহু ধরলো। ব্যাথায় রোদের চোখে পানি চলে এলো। মুখের সামনে এসে দাতে দাত চেপে বললো,

— বল এরপর কি? তুই প্রোপস একসেপ্ট করেছিলি? ওনার হাত ধরে ঘুরেছিলি? কি করেছিলি বল?

আদ্রিয়ানের আচমকা এমন আচরনে রোদ ভয়ে আর হাতের প্রচন্ড ব্যাথায় কান্না করে বললো,

— ন না। ভা ভাইয়া কে বলেছিলাম। ভাইয়া ওনা ওনাকে ধ*মকে না করে দ দিয়েছিল।

আদ্রিয়ান রোদের উপর থেকে উঠলো। রোদ হাত দিয়ে ব্যাথা জায়গায় ধরে দেখছে। আদ্রিয়ানের ওর কান্না দেখে হুস এলো। কি করলো ও হঠাৎ। এভাবে তো রোদ দূরে সরে যাবে। ও সিট, বলে আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়ে রোদকে ধরতে গেলে রোদ সরে গেল ভয়ে। আদ্রিয়ানের যেন বুকে মোচর দিল। রোদ কান্না করতে করতে বিছানা থেকে উঠে গেল আর বললো,

— আ আমি আপনার সাথে আ আর কোনদিন ও গ গল্প করবো ন না। শুধু শুধু ব্যাথা দিলেন, ধমকালেন।

বলে রোদ রুম থেকে বের হতে লাগলো। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পেছন থেকে রোদকে ঝাপটে ধরলো। রোদ ছাড়াতে চাইলেও আদ্রিয়ান ছাড়ছে না।

— ছা ছড়ুন আমি থাকবো না আপনার সাথে। চলে যাব বাসায়।

আদ্রিয়ান ওকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে বললো,

–কোথাও যাবি না তুই। আমার কাছে থাকবি। আমার বুকে থাকবি।

রোদ কান্না করেই যাচ্ছে। কোন থামাথামি নেই। আদ্রিয়ান নিজের দিকে ঘুরালো। আবার জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেল। অনেকক্ষন পর রোদ হিচকি তুলে কাদছে। আদ্রিয়ান ওর কোমরে হাত পেচিয়ে উচু করে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে নিজে হাটু গেরে ওর সামনে বসলো। হাত দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিল। রোদের দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেল। শান্ত কন্ঠে বললো,

— সরি সরি বউ। আমি অনেক সরি। কারো সাথে তোমাকে কল্পনা ও করতে বুকে কেমন জানো হয়। মাথা ঠিক থাকে না। প্লিজ কান্না করো না। আমি সরি সোনাপাখি।

রোদ কিছুই বলছে না। আজকে অনেক মন খারাপ হয়েছে ওর। আদ্রিয়ান হাত ছেড়ে বাহুর দিকে তাকালো। দেখেই বললো,

— সিট।।।

আদ্রিয়ানের হাতের আংগুলের ছাপ পরে গেছে। আদ্রিয়ান মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে লাল হওয়া জায়গায় চুমু খেতে লাগলো।

#চলবে……

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৫

রোদ বিছানার একেবারে সাইডে শুয়ে আছে। একটু আগেও আদ্রিয়ান অনেক সরি বলেছে। কিন্তু রোদের কষ্ট কমেনি। কেন হুটহাট এমন করে রোদ বুঝে উঠতে পারে না। এই ভালো তো এই বকাঝকা শুরু। কেন রে ভাই রোদের বুঝি খারাপ লাগে না। অভিমানে টাইটুম্বুর হয়ে রোদ মুখ ঘুরিয়ে সাইডে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান ডাক দিলেও কথা বলেনি।আদ্রিয়ানের ও খারাপ লাগছে। নিজের সবকিছু নিয়ে সে একটু বেশিই পসেসিভ বাট রোদের বেলার যেন তা হাজার গুন বেড়ে যায়। এই যে রোদের ছোট বেলার ছেলের দেয়া প্রপোসও আদ্রিয়ান মানতে নারাজ। আদ্রিয়ান চিন্তা করছে, আগে ও এমন ছিল। অনির যথেষ্ট বুঝদার ছিল কিন্তু রোদ বোকাসোকা টাইপের। আর হারানোর কষ্ট আদ্রিয়ান থেকে ভালো আর কে জানে? তাই তো রোদের সাথে এমন করলো। কিন্তু এতে তো তার রোদ আরো দূরে সরে যাবে। আজ ভাইয়ের কাছে ও বকা খেয়েছে। সব চিন্তায় আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাশে তার পাখির দিকে তাকালো। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। না লাভ হচ্ছে না তাই ঘাড়ে মুখ গুজে বললো,

— সরি তো!!!

……….

আদ্রিয়ান এবার জোর করে টেনে নিজের কাছে আনলো। চোখের পানি মুছে দিল। করুন কন্ঠে বললো,

— আমাকে কি মাফ করা যায় না?

রোদ কিছু বললো না। আদ্রিয়ান আরো জোড়ে ধরে বললো,

— এই বউ!!

………

এবার আদ্রিয়ান চোখে চুমু দিল।রোদ হাত দিয়ে চোখ ডেকে ফেললো। আদ্রিয়ান গালে চুমু দিলে রোদ গালও ডেকে ফেললো। আদ্রিয়ান নাকেও দিল রোদ হুট করে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। আদ্রিয়ান হো হো করো দিল। রোদ দেখলো কি সুন্দর সে হাসি। ছেলেদের হাসি বুঝি এতো সুন্দর হয়! আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়ে বললো,

— কাল বাসায় নিয়ে যাব? কেউ কি যাবে আমার সাথে?

রোদ ফট করে উঠে বললো,

— হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো তো!!!

— আগে বলো মাফ করেছো?

রোদ চুপ করে আদ্রিয়ানের বুকে মিশে গেল। আদ্রিয়ান ও উত্তর পেয়ে মাথায় চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

__________________

সকাল থেকে রোদের মন ফুরফুরা আজ ৫ দিন বাসায় যাবে মুখের কথা! কতদিন মাকে, বাবাকে, রুদ্রকে সরাসরি দেখে না। ভাবতেই কান্না আসে। আদ্রিয়ান ব্রেকফাস্টে যাওয়ার আগে হাত টেনে রোদকে বিছানায় বসালো। রোদ কি হয়েছে জানতে চাইলে আদ্রিয়ান চুপ বলে আলমারি থেক বক্স বের করে রোদের হাতে দিল। রোদ বললো,

— কি এটা?

— গিফট।খুলে দেখ?

— গিফট কেন?

— বিয়ের রাতে দেয়ার জন্য ছিল এটা। কিন্তু পরিস্থিতিতে পরে আর দেয়া হলো না তাই আজ দিলাম। খুলে দেখ।

রোদ খুলে দেখলো ভিতরে একটা পেনডেন্ট সহ চেইন যেটাতে ইংরেজি এ এবং আর ডিজাইন করে পাশাপাশি গোল বৃত্তে আবৃত , একজোড়া ইয়ারিং সেম ডিজাইনের টপ, নোস পিন, হাতের ব্রেসলেট যাতেও এ এবং আর দিয়ে ডিজাইন করা। পুরো সেটটাই প্লাটিনাম আর ডায়মন্ড এর। রোদ স্বাভাবিক ভাবেই বললো,

— ধন্যবাদ।

— ভালোলাগে নি?

— হুম। সুন্দর।

— পরিয়ে দেই?

— আমি তো এগুলো রেগুলার ইউজ করি না। এখন রেখে দেই?

— উহু। রেগুলার ইউজ করবা। আমি পরিয়ে দিচ্ছি। আর কোন কথা না।

বলে আদ্রিয়ান সব পরিয়ে দিল। কানে আগের ছিল বিধায় তা খুলে দিল আদ্রিয়ান। এতে রোদ একটু ব্যাথাও পেয়েছে না জানি কত বছর আগে খুলেছিল। এগুলোর প্রতি ওর ইনটেরস্ট জিরো। বাট নোস পিন পরতে পারল না কারণ রোদের নাকে ফুটো নেই। তাই বললো,

— এটা থাক। কখনো ছিদ্র করলে তখন পরিয়ে দিব।

— আমি কখনো করবো না। কান ছিদ্র করতে যেয়ে যে ব্যাথা পেয়েছি।

— করতে হবে না এমনি তোমাকে সুন্দর লাগছে। একদম আমার বউ।

রোদ একটু লজ্জা পেয়ে বললো,

— আচ্ছা আগে বাসায় যাব নাকি মেডিকেল শেষ করে যাব?

— মেডিকেল থেকে ডিরেক্ট নিয়ে যাব।

— মিষ্টি যাবে না আমাদের সাথে? ওকে ও নিয়ে যাই প্লিজ।।। সবাই কতো খুশি হয়ে যাবে। আর আম্মু আর রুদ্র তো পুরাই সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে। আমরা কয় দিন থাকবো? মিষ্টির জন্য ড্রেস বের করে যাই।

অনেক উচ্ছাস নিয়ে রোদ বলে আলমারি থেকে ড্রেস বের করলো। আদ্রিয়ান অপলক তাকিয়ে আছে। কত খুশি হয়েছে তার পাখিটা। কেমন প্রজাতির মতো ছুটাছুটি করছে খুশিতে। আদ্রিয়ান ও হালকা হাসল। রেডি হয়ে নিচে গেল।

নিচে আজ সবাই একসাথে কারন এতো মেহমান এসেছে। মা আর সাবা আপু কিচেনে।কাজের লোকজন ও আছে। আদ্রিয়ান সবার আগে ওর নানুর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

— নানুমনি কেমন আছ?

— আলহামদুলিল্লাহ ভাই। তোমাকে এত বছর পর খুশি দেখে আমি অনেক খুশি।

— আমার বউ দেখবে না?

বলে রোদকে টেনে সামনে আনলো।রোদ সালাম দিল। নানুমনি রোদকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলো। বললো,

— ভাই এতো পুরো মমের পুতুল। চোখ আর গলার স্বর তো পুরাই…

বলে থেমে গেল।

রোদ বললো,

— অনি আপুর মতো। তাই না??

নানুমনি চোখের পানি মুছে বললো,

— আমার ভাইয়ের খেয়াল রেখ কিন্তু।

রোদ মাথা নিচু করে রাখলো।এরপর মামা, ছোট মামা তার বউ আর মেয়ে ছেলে রাইফা আর রাফির সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। এরমধ্যে বড় মামি মুখ কালো করে মাথা নিচু রেখেছে। রোদ বুঝতে পারল নিশ্চিত বড় মামা আর নানুমনি ঝেরেছে।তাই তো এতো ভদ্র হয়ে আছে।

_______________

মেহমানরা সবাই আজ অবাক রোদ আর মিষ্টির এমন মিল দেখে। কিভাবে মিষ্টিকে তুলেতুলে খাওয়াচ্ছে। রোদ খাবার শেষে সবার জন্য চা কফি নিয়ে এলো। বড় মামা চা নিয়ে রোদের হাতে মোটা একটা খাম দিয়েছে। ছোট মামা ও দিয়েছে। আর নানুমনি স্বর্ণর বালা আর ঝুমকা দিয়েছে। যদিও রোদের তেমন ইনটেরস্ট নেই তবুও ধন্যবাদ দিল।

খাবার শেষে আদ্রিয়ানের মা বললো,

— রোদ আজ কি মেডিকেল যাবি মা।

— জ্বি।

— ওহ।আজ তাড়াতাড়ি ফিরবি কিন্তু।।

আদ্রিয়ান বললো,

— কেন?

— কেন আবার বিয়ের ৫ দিন হলো। আশেপাশের সবাই বউ দেখবে বলে মাথা খেয়ে ফেলছে।এতোদিন তো রোদের শরীর ভালো ছিল না তাই আজ বিকেলে সবাই আসবে।

— আজ না হলে হয় না?

— মানে কি?? অনুষ্ঠান তো হয় নি সবাই আজ আসবে। তোর কি সমস্যা?

আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে দেখলো রোদের নাকের পাটা ফুলছে, চোখ ও চিকচিক করছে। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই রোদ উপরে রুমে চলে গেল। ওয়াশরুমে ডুকে ১০ মিনিট কান্না করলো। এখন একটু সস্তি লাগছে। মুখ ধুয়ে বের হয়ে দেখলো আদ্রিয়ান বিছানায় বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ কিছু না বলে হিজাব বেধে মেডিকেলের জন্য রেডী হলো। নিকাব পরবে এর আগেই আদ্রিয়ান সামনে এসে হাত ধরে বললো,

— মন খারাপ?

— উহু।

— সত্যি?

— হু।

— তাকাও।

— উহু।

— রোদ!!

এবার রোদ চোখ তুলে তাকালো। আদ্রিয়ান ওর চোখের তিলে চুমু খেয়ে বললো,

— মন খারাপ করো না প্লিজ। মা তো দাওয়াত দিয়ে ফেলেছে নাহলে আমি না করে দিতাম।

— হু।

আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেই নিকাবটা পরিয়ে দিল।

— আজ ছুটি কয়টায়?

রোদ একটু চুপ থেকে বললো,

— ৪ টা।

–আচ্ছা আমি নিতে আসবো।

— হু।

রোদ ইচ্ছা করেই মিথ্যা বললো কারন আজকে কোচিং এ পরাতে যাবে। ওখানে শেষ হতে হতেই ৩ঃ৩০ বাজবে৷ তাই সবমিলিয়ে ৪ বললো।

____________

আজ আদ্রিয়ান বাসায় কফি খায় নি রোদকেও খেতে দেয় নি। গাড়ি থামালো একটা ক্যাফের সামনে। রোদ জিজ্ঞেস করতেই বললো,

— কেউ দেখা করতে চায় তোমার সাথে

— আমার সাথে কিন্তু কে?

— ভেতরে গেলেই দেখতে পাবা।

ভিতরে যেতেই দেখলো রাদ বসে আছে চেয়ারে। রোদ কে দেখা মাত্রই উঠে আসলে নিলেই রোদ ঝাপটে পরলো ভাইয়ের বুকে। রাদ পরে যেতে নিয়েও সামলে নিয়ে বললো,

— কিরে পুচকি। এখন তো পরে যেতাম।

— সরি ভাইয়া।

— সরি বলে লাভ হবে না।

— প্লিজ রাগ করে থেক না। আই লাভ ইউ।।।

রাদ রোদকে বুক থেকে উঠিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,

— আই লাভ ইউ টু পুচকি।

এর মধ্যে একজন বললো,

— এই এই আই লাভ ইউ একশশশশশ।।।

রোদ পিছনে ঘুরে দেখে রুদ্র। দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরে। কতদিন পর ভাইটাকে দেখলো।

ওরা সবাই টেবিলে বসে কফি অর্ডার করে খেতে খেতে কথা বলছে। রোদ নিয়েছে নরমাল কফি, আদ্রিয়ান নিয়েছে ব্লাক কফি, রুদ্র নিয়েছে কেপিচিনে আর রাদ নিয়েছে স্পেসো। রোদ নিজের টা একটু খেয়ে আবার রাদের ওখান থেকে একটু খেল। খেয়ে মুখ বাংলার পাঁচ বানিয়ে বললো,

— ইয়াক কি এটা। মজা না।

— তো তুই খেলি কেন?(রাদ)

এবার রোদ রুদ্র থেকে একটু খেয়ে বললো,

— হু এটা চলে।।

— তুমি এটা খাবে? ( রুদ্র)

— না তুই খা। আমারটাই ভালো।

রোদ নিজেরটা একটু খেয়ে আবার রাদের হাত ধরে রাদেরটাকে চুমুক দিয়ে বললো,

— এটা কেন খাচ্ছ? নাও আমারটা খাও।

বলে নিজের টা রাদকে দিল। আদ্রিয়ান ওর কাহীনি বুঝার চেষ্টা করছে। রাদ তা দেখে বললো,

— ও এমনই। কিছু মনে করো না।

আদ্রিয়ান হেসে উঠল।

রোদের মনটা আবার ভালো হয়ে গেল।আদ্রিয়ানকে ধন্যবাদও দিয়েছে। রোদকে মেডিকেলে নামিয়ে নিজে রাদের সাথে হসপিটালের গেল। রুদ্র ও স্কুলে গেল।

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৬

আদ্রিয়ান আর রাদ বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে। সাথে রিশান আর রাইফ ও আছে। ওদের সাথে আদ্রিয়ান আগেই কথা বলে রেখেছে। রিশান বললো,

–রোদকে না জানিয়ে ট্রিটমেন্ট কেমনে সম্ভব?

— ওকে আমি এখন কিছু জানাতে পারবো না। এমনিতেই কম বুঝে।( আদ্রিয়ান)

— কিন্তু মেসিডিন দেখলে আনদাজ করে ফেলতে পারে আফটার অল ও নিজেও মেডিকেল এর স্টুডেন্ট। (রাইফ)

— আমি দেখে নিব।

মাথা নিচু করে রাখা রাদ এতক্ষণে মাথা তুলে বললো,

— ডাক্তার কখন আসবে?

— এসে পরবে? তোমরা ওয়েট কর। কিন্তু রোদের কিছু টেস্ট করাতে হবে ওটা কিভাবে করবি আদ্রিয়ান?

রিশানের প্রশ্নের উত্তরে আদ্রিয়ান নিচু স্বরে বললো,

— আই উইল ম্যানেজ।

ওদের কথার মধ্যেই একজন নার্স এসে নক করে বললো,

— স্যার ডক্টর শাহ্ এসে পরেছে।

রিশান বললো,

— আসছি আমরা।

বলে উঠে আদ্রিয়ান আর রাদকে আসতে বললো। রাইফ ও সাথে গেল। নক করে কেবিনে ডুকলো তিনজন। রাইফ আর রিশান হ্যান্ডশেক করলো। আদ্রিয়ান আর রাদও কুশল বিনিময় করলো। বসে একে একে সব ফাইল তার সামনে দিল। ডক্টর শাহ্ তা দেখে চিন্তিত ভংগিতে বললো,

— ফাইল আর টেস্ট গুলো যেহেতু ৩ বছর আগের তাই বর্তমান পরিস্থিতি জানতে আবার ও টেস্ট গুলো করাতে হবে প্লাস নতুন কিছু টেস্ট ও করতে হবে যেহেতু আমনি বলছেন আপনার ওয়াইফ কম খাবার খাচ্ছে।

আদ্রিয়ান বললো,

— ঠিক আছে।

মিসেস শাহ্ বললো,

— এ ধরনের রোগ সময়ের সাথে সাথে ট্রিটমেন্ট না কারালে পরবর্তীতে আরো বেশি সমস্যা হয়।

আরোকিছু কথা বলে ৪ জন বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। রিশান বললো,

— কাল তাহলে রোদকে নিয়ে আয়। আমি সব ব্যাবস্থা করে রাখছি।

— হুম।

ওরা আদ্রিয়ান আর রাদকে বিদায় দিয়ে নিজেদের কেবিনে গেল। গাড়ির সামনে এসে রাদ আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরলে আদ্রিয়ান একটু চমকে যায় পরক্ষনেই হেসে ও নিজেও জড়িয়ে ধরে। রাদ বললো,

— তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। আমরা যদি আগে খেয়াল করতাম যে রোদ মেডিসিন গুলো না নিয়ে ফেলে দিচ্ছে তাহলে এমন হতো না।

— আমার তার জন্যই চিন্তা হচ্ছে। দেখা যাক। ওকে কাল আনতেই অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে।

— জানি যে দুষ্ট।।

________________

আজ কোচিং এর প্রথম ক্লাস ভালোমতো ই নিল রোদ। স্টুডেন্টগুলো ও ওকে পছন্দ করেছে। এখন বাজে ৩ঃ৩০। রোদ সব গুছিয়ে আবার মেডিকেল যেতে উদ্দত হলো। ইয়াজ বললো যাতে ওর সাথে বাইকে যায় কিন্তু রোদ আদ্রিয়ানের ভয়ে বলেছে ওকে যেতে রোদের কাজ আছে। ইয়াজ তাও জোড়াজুড়ি করায় রোদ রাজি হয়ে গেল। দুইজন ই মেডিক্যালের পৌছালো। রোদ সামনে তাকাতেই একটু চমকে গেল কারন আদ্রিয়ান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়ানো। রোদ ইয়াজকে বলে একটু দূরে নেমে গেল। এরপর ধীরে ধীরে আদ্রিয়ানের সামনে গেল। আদ্রিয়ান মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,

— আজ মনে হয় একটু বেশি ক্লান্ত?

— হুম একটু।

— কিছু খাবে?

রোদ খুশি হয়ে বললো,

— সত্যি খাওয়াবেন? তাহলে ফুচকা খাব একদম ঝাল দিয়ে। কতদিন খাই না।

একদমে কথা গুলো বলে সামনে এগুতেই হাতে টান পরলো। মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো আদ্রিয়ান শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। রোদ বুঝতে না পেরে বললো,

— কি??

— ফুচকা বাদে অন্য কিছু খাও।

— ওমা কেন? আমি ফুচকা খাব। অন্য কিছু কেন খাব। চলুন।

বলে আদ্রিয়ানের হাত ধরে টানা শুরু করলো কিন্তু সামনে যেতে না পারায় আবার পিছনে তাকালো। আদ্রিয়ানের কোন হেলদুল নেই। রোদের বুঝতে আর বাকি নেই এই লোক যে খেতে দিবে না তাই রোদ রেগে বললো,

— ধুর।

বলে গাড়িতে উঠে পরলো। আদ্রিয়ান বুঝলো আর রোদু পাখির রাগ কিন্তু কিছু করার নেই। এসব খেলেই এখন অসুস্থ হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ড্রাইভিং সিটে বসল। পাশে রোদের দিকে তাকালো। রোদ কপাল কুচকে বিরক্ত জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান “উহুম” শব্দ করলো কিন্তু লাভ হলো না। তাই গাড়ি স্টার্ট দিল।

রোদের মনটা একটু বেশিই খারাপ। একে তো এত ক্লান্ত লাগছে।টানা ক্লাস করে আবার কোচিং কারালো। তাও ভাগ্য ভালো ইয়াজ লিফট দিল নাহলে জ্যামে বসে বসে বারোটা বাজাত। এতসবের পর যখন ফুচকা খেতে মন চাইলো আদ্রিয়ান দিল না। সেই লাস্ট ফুচকা খেয়ে অসুস্থ হলো আর খাওয়া হলো না। অসুস্থর কথা মনে পরতেই মনে পরলো আদ্রিয়ানের কথা। উনি ঐ দিন রোদের বাসার থেকে যাওয়ার পরই তো সব হলো। কিভাবে কি হলো রোদ কিছুই বুঝলো না। যদিও প্রথম দিনের মতো খারাপ লাগে না তবুও প্রশ্ন তো রয়েই যায়। কেন আদ্রিয়ান বিয়ে করলো রোদকে জাস্ট এক রাতের ব্যাধানে? উত্তর জানা নেই রোদের। কিন্তু মা আর পরিবারের কথা মনে পড়ে বারবার। হুট করেই কি সব ভুলা যায়। প্রতি রাতে মনে পরে। কিন্তু আদ্রিয়ান তো নিবে, নিচ্ছি করেও আর যাওয়া হচ্ছে না। কি অদ্ভুত?? ভাবা যায় রোদ নিজের বাসায় যাবে তাও কারো পারমিশনের দরকার যেখানে কি না রোদ চাইলেই যেতে পারে। আদ্রিয়ান কি বুঝে এসব? এতসব কথা ভাবতে ভাবতে সিটে গা এলিয়ে দিল রোদ না চাইতেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি পরলো।

চলতি রাস্তায় হুট করে গাড়ি ব্রেক করায় রোদ ঝুকে গেল। ভাগ্যিস সিটবেল্ট লাগানো ছিল না হলে কি হয়ে যেত। ভয়ে রোদ হালকা কেপে উঠলো না চাইতেও মুখ দিয়ে ভয়ের চিতকার বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকানোর আগেই আদ্রিয়ান হুট করে রোদের সিট বেল্ট খুলে দিল। একটানে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে অস্থির কন্ঠে বললো,

— কি হয়েছে রোদ। আমি তো তোমার ভালোর জন্যই খেতে না করলাম। ও গুলো খেয়েই তো লাস্ট অসুস্থ ছিলা। প্লিজ পাখি আমার কেঁদো না। অন্যকিছু বলো।

রোদ একটু আশ্চর্য হলো। কি বলে আদ্রিয়ান? রোদ তো ফুচকার জন্য কাঁদে নি। এমনি পুরোনো কিছু কথা মনে পরেছিল। আবার রোদের একটু ভালো লাগলো। লোকটা রোদের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। রোদ আদ্রিয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মাথা নিচু করে শান্ত কন্ঠে বললো,

— ফুচকার জন্য না।

— তাহলে???

— এমনি বাসার কথা মনে পরছিল আর…

— আর???

— কিছু না।। চলুন দেড়ি হয়ে যাচ্ছে?

আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— হোক দেড়ী। তুমি বলো আর কি??

রোদ চোখ তুলে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। কিছুটা জড়তা নিয়ে বললো,

— কেন বিয়ে করলেন আমায়?

হঠাৎ রোদের এমন প্রশ্ন আশা করে নি আদ্রিয়ান। কিছু না বলে কোল থেকে রোদকে সিটে বসিয়ে দিল। এরপর গাড়ি আবার স্টার্ট দিল। রোদ আদ্রিয়ানের এমন আচরণে একটু ভয় পেল। উনি কি রেগে গেল? কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। আর এদিকে আদ্রিয়ান ভাবছে, কি উত্তর দিবে রোদকে? কেন বিয়ে করেছে?

সারা রাস্তা আর কেউ কিছু বললো না। দ্বিধা রয়েই গেল।

#চলবে……