ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৩০+৩১

0
406

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩০

রোদ চোখ খুলে দেখলো আদ্রিয়ান ওর হাতের তালু নিজের গালে লাগিয়ে একধ্যানে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইশ লোকটার চেহারা এতো ফ্যাকাসে কেন লাগছে? কিছু কি হয়েছে? রাদ রোদের পায়ের পাশে বসে রিশান আর রিয়াদের সাথে কি কথা বলছে। আস্তে আস্তে রোদের সব কথা মনে পরলো। সাথে সাথে এক বালতি অভিমান জমা হলো ভাই আর আদ্রিয়ান উপর। কিভাবে ধোকাটা দিল। কত আর্তনাদ করলো রোদ তবুও এদের মন গললো না। চোখের কোনে পানি জমা হলো। আদ্রিয়ান হঠাৎ করে খেয়াল করলো রোদ চোখ খুলেছে। এতক্ষণ কোন এক ধ্যানে ছিল। সাথে সাথে গাল থেকে হাত সরিয়ে তা নিজের ঠোঁটে চেপে ধরলো। পরপর চুমু খেল রোদের হাতের তালুতে। রোদের গালে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বললো,

— রো.. রোদ। কেমন লাগছে এখন?

আদ্রিয়ানের আওয়াজে বাকি ৩ জনও তাকালো রোদের দিকে। রাদ উঠে এসে রোদের মাথায় হাত দিয়ে বললো,

— কিছু লাগবে? এখন ঠিক আছিস?

রোদ কোন কথার উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। রোদের অভিমান বুঝতে পারল সবাই।রিশান এসে চেক করে বললো,

— নাও সি ইজ ফাইন। বাট এখনও উইক। সেলাইন দিলে ভালো হতো।

রোদ একঝটকায় বেড থেকে উঠে জোরে বললো,

— দিব না স্যালাইন। বাসায় যাব আমি।

আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে রোদের হাত ধরে বললো,

— আচ্ছা…আচ্ছা রোদ চলো বাসায় যাব।

রোদ আদ্রিয়ানের হাত ঝামটা মেরে বললো,

— ধরবেন না আপনি। আবারও জোর করবেন করবেন জানি আমি।

আদ্রিয়ান ভেতরে এতক্ষণে ছোটখাটো ঝর বয়ে যাচ্ছিল কিন্তু তা প্রবল হলো যখন রোদ আদ্রিয়ানকে নিজের হাত ধরতে দিল না। বুকের মধ্যে সূক্ষ্ম ব্যাথা হলো তবুও বললো,

— আচ্ছা ধরবো না আমি রাদ ধরুক পরে যাবে তো তুমি। শরীর দূর্বল তোমার।

— কারো হেল্প চাই না। বাসায় যাব। ব্যাগ কই আমার?

— আচ্ছা চলো বাসায় যাবে।

— আমি আপনার বাসায় যাব না আমার বাসায় যাব।

রাদ বললো,

— আচ্ছা ঠিক আছে আয় আমার সাথে।

আদ্রিয়ান একটু আতকে উঠলো। বলে কি? রোদকে নাকি নিয়ে যাবে? ও কিভাবে থাকবে রোদকে ছাড়া। তাই নিজেকে শান্ত করে রাদকে বললো,

— রাদ আই ওয়ান্ট টু টক উইথ ইউ।

রাদকে নিয়ে রুমের বাইরে এসে কিছুক্ষন কথা বলে আবার রুমে ডুকে। ততক্ষণে আরিয়ান এসে হাজির। আদ্রিয়ান এবার একটু সাহস পেল। ভাবা যায় আদ্রিয়ানের মতো এতবড় ছেলের নাকি আবার সাহস প্রয়োজন? আরিয়ান এগিয়ে আসতেই আদ্রিয়ান সব খুলে বলে। আরিয়ান সহ আদ্রিয়ান আর রাদ রুমে ডুকে দেখে রিশান কিছু বুঝতে চেষ্টা করছে রোদকে কিন্তু রোদ উঠে নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান অনেক বুঝালেও রোদ মানতে নারাজ। এরমধ্যে আদ্রিয়ানের মা, বাবা হাজির। এদের এতোকরে বলা কথা আর রোদ ফেলতে পারলো না অগত্যা আদ্রিয়ানের বাসায় যেতে রাজি হলো। রাদ গাড়ির সামনে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেল। তারপর অনেকবার সরিও বললো। রোদ তেমন কোন কথা বললো না। আদ্রিয়ানের সাথে তো না ই।

_______________

বাসায় আসতে আসতে বেজে গেল ৩ টা। রোদ রুমে ডুকে কোন কথা না বলে ওয়াসরুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান বেচারা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। একপ্রকার যুদ্ধ করেছে ও। ভাবে নি এতোকিছু হবে। সামনেতো আরো কত কি না জানে রোদ তখন কি করে। আদ্রিয়ানের ভাবনার মাঝেই রোদ বেরিয়ে এলো। পরনে তার কুর্তি আর টাউজার। টাওয়ালটা মাথায় পেচিয়ে রাখা। আদ্রিয়ান কিছু বলতে যাবে ওমনি রোদ সাইড কাটিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। আদ্রিয়ান একটু আহত হলেও পরক্ষণেই ভাবলো এটা কি স্বাভাবিক না? আজ রোদের উপর কি গেল এটা শুধু রোদই বুঝতে পেরেছে। আদ্রিয়ান ও সাওয়ার নিয়ে এলো। বেরিয়ে দেখে রোদ কম্বল মুরি দিয়ে সুয়ে আছে। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি বেডে উঠে রোদের কপালে হাত দিল। হালকা গরম। রোদ কারো হাতের ছোয়া পেয়েই চোখ খুলে আদ্রিয়ানকে দেখে মুখ ডেকে ফেলে কম্বল দিয়ে। আদ্রিয়ান আস্তে করে বললো,

— খেয়ে তারপর ঘুমাও। রুমে নিয়ে আসি খাবার।

রোদ কোন কথা বললো না। আদ্রিয়ান টাওয়াল বারান্দায় রেখে রুমে আসতেই দেখে রোদ রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ও রোদের পেছনে গেল। নিচে যেতেই রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলতে নিলেই আদ্রিয়ান বললো,

— মা বাবাইয়ের কাছে আস। মাম্মার শরীর ভালো না।

মিষ্টি রোদের কাছ থেকে সরতে নিলেই রোদ কোলে তুলে নিল মিষ্টিকে। আদ্রিয়ান মা আর সাবা দেখেও কিছু বললো না। রোদের রাগ জায়েজ কিন্তু আদ্রিয়ান ওতো হেল্পলেস। খেতে বসতেই আদ্রিয়ান বললো,

— রোদ আমি খায়িয়ে দেই?

উত্তরে রোদ নিজের প্লেটে ভাত বেরে নিল। আদ্রিয়ান একটু অবাক হলো সাথে অবাক হলো আদ্রিয়ানের মা,সাবা আর উপস্থিত জাইফা। এই প্রথম রোদ পুরো প্লেট ভরে ভাত নিয়েছে। আদ্রিয়ানের মা অবাক হওয়ার পর্ব শেষ করে খুশি হয়ে রোদকে চুমু খেল এরপর মুরগির গোশত, সবজির ভাজি দিল। রোদ নিজের সুখে খেত লাগলো জেন খাওয়াই ওর একমাত্র কাজ। আদ্রিয়ানও খাওয়া শুরু করলো। রোদের খাওয়াটা যেন আদ্রিয়ানের কাছে অস্বাভাবিক লাগলো। এতদিনে যতটুকু চিনেছে রোদ এত খেতে পারে না হাজার জোর করলেও না। আর ডক্টরের কথা অনুযায়ী রোদ চাইলেও বেশি খেতে পারবে না। তাহলে কিভাবে খাচ্ছে? আদ্রিয়ান দেখলো রোদের অর্ধেক প্লেট খাওয়া শেষ। কিন্তু ও খাচ্ছে না বরং পানি দিয়ে গিলছে আর চোখেও পানি। খেতে পারছে না তবুও খেয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদকে বললো,

— এই রোদ খেতে হবে না তোমার আর। উঠো।

রোদ কথা না শুনে খেয়ে যাচ্ছে।আদ্রিয়ান এবার প্লেট সরিয়ে ফেলতে রোদ মুখে হাত দিয়ে উপরে দৌড় দিল। এদিকে কেউ ছিল না তাই আদ্রিয়ান ও তারাতাড়ি রোদের পেছনে দৌড়ে রুমে ডুকলো। রোদ ওয়াসরুমে বেসিক ভরে বমি করে করছে। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ওকে ধরলো। রোদ ৩ বার বমি করে পেটের সব খাবার বের করলো। নেতিয়ে পরলো সাথে সাথে। আদ্রিয়ান ধরতেই সরে যেতে চাইলো। আদ্রিয়ান ছাড়লো না জোর করে রোদকে হাত মুখ ধুয়িয়ে দিল। মুছে বেডে হেলান দিয়ে বসালো। রোদ চোখ বুজে আছে। আদ্রিয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। ওর তখনই বুঝা উচিত ছিল রোদ তেজ দেখিয়ে এতো খাবার নিয়েছে।

আদ্রিয়ান নিচে থেকে জুস আর সুপ বানিয়ে রুমে ডুকলো। মেয়েটা বমি করেছে নিশ্চিত গলা জ্বলছে। তাই লিকুইড খাবার নিল। রুমে ডুকতে দেখে রোদ শুয়ে আছে। আস্তে করে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকে,

— রোদ উঠো তো দেখি। খাবে উঠো। আমি রান্না কের এনেছি। দেখো তো কেমন হয়েছে?

…………….

— প্লিজ সোনা উঠো।তোমার শরীর ভালো না।

…………..

আদ্রিয়ান এবার রোদের হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে দিলে রোদ আদ্রিয়ানের হাত সরিয়ে দিল।কোন কথাও বলছে না। আদ্রিয়ান খাওয়াতে নিলেই রোদ উঠে চলে যেতে নিলে আদ্রিয়ান আটকালো। রোদ হাত মুচরামুচরি শুরু করলো। আদ্রিয়ানের রাগ হলেও কোনমতে চেপে রেখে বললো,

— অনেক হয়েছে আর না খাবা এখন বসো।

— ছড়ুন। খাব না আমি। কি করবেন?

— খেতে বলেছি আমি। নাহলে অসুস্থ হয়ে যাবে।

রোদ তেজি গলায় বললো,

— আমি অসুস্থ হই মরে যাই আপনার কি? ছাড়ুন আমার হাত।

আদ্রিয়ান “রোদ” বলে নিজের হাত উঠায় মারার জন্য। ভয়ে রোদ সিটিয়ে আছে। কিন্তু কই থাপ্পড় তো গালে পরলো না। রোদ চোখ মেলে দেখলো আদ্রিয়ান রাগে ফুসছে। রোদ কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান রোদের মুখ চেপে ধরলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

–মরার কথা জানো আর না শুনি এই মুখে।

বলে আদ্রিয়ান রোদকে বসিয়ে জোর করে খায়িয়ে দিল।

________________

সারাদিন আর রোদ আদ্রিয়ানের সামনে আসে নি। সন্ধ্যায় দেখলো সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আদ্রিয়ান যেতেই পড়ার বাহানা দিয়ে চলে গেল। আদ্রিয়ান সবার সাথে কথা বলা শেষ করে রুমে ডুকে দেখে রোদ কিছু লিখছে মেবি কোন কিছু নোট করছে।আদ্রিয়ান সামনে যেয়ে বললো,

— আজ আর পরতে হবে না।

রোদ কথা না বলে নিজের মতো কাজ করতে লাগলো। আদ্রিয়ান চেয়েও কিছু বললো না। আদ্রিয়ান রুমে দেখে রোদ রুম থেকে বের হয়ে গেল। রাত ৮ টার দিকে জরুরী কিছু কাজে আদ্রিয়ান বের হলো। রোদের সাথে আর দেখা হয় নি। রোদ নিচে ছিল। রোদ কথার মধ্যে আদ্রিয়ানের মাকে আন্টি ডাকাতে নানু ভিসন নারাজ হলো। তিনি বললেন,

— ছোট নাত বউ এটা কেমন কথা।স্বামীর মাকে কেউ আন্টি ডাকে? মা ডাকবা আর জানো না শুনি।

আদ্রিয়ান মা বললো,

— থাক না মা। সময় হলে নিজে বলবে।

— তুই বেশি বুঝিস।

কেউ আর কিছু বললো না। রোদও মাথা নিচু করে রাখলো। রাতে রোদ মিষ্টিকে নিয়ে জারবার রুমে ডুকলো। জারবা খুশি হয়ে বললো,

— ছোট ভাবী তুমি এই সময়। গল্প করবা বুঝি। মজা হবে।

— হু আজ গল্প করবো। আচ্ছা জারবা আজ তোমার রুমে ঘুমালে সমস্যা হবে?

— আল্লাহ কি বলো! ইয়াহু মজা করবো আমরা।

জাইফাও তাল মিলালো। পরে আবার বললো,

— ভাইয়া কিছু বলবে না?

— না কিছু বলবে না।

এরপর রোদ মিষ্টিকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে রাত ১১ পর্যন্ত আড্ডা দিল।দূর্বল শরীর আর সায় দিল না। ঘুমিয়ে গেল।

এদিকে আদ্রিয়ান বাসায় ফিরলো রাত ১২ টায়।শরীর ক্লান্ত লাগছে। রুমে ডুকে লাইট না জ্বালিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় যেতে দেখে বিছানা খালি।বুকটা ধক করে উঠলো। রোদ কি চলে গেল। ব্যালকনিতো ভেতর থেকে অফ। ভাবতে ভাবতে কল দিলে ফোন রুমে বেজে উঠলো। সস্তি পেল রোদ বাসায় ই আছে। কিন্তু কোথায়?

#চলবে……

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩১(১)

আদ্রিয়ান যথেষ্ট চালাক একজন মানুষ। তার ব্রেন তাকে আগেই সতর্ক করে দিল রোদ এতরাতে কোথায় আছে মানিই তা জারবার রুম। জারবার রুমের বাইরে দাড়িয়ে নক করলে রোদের ঘুম ছুটে গেল। জারবা তখন সজাগ ছিল। ফোনে টুকটাক কিছু করছিল। এতরাতে দরজায় নক হওয়ায় তাকালো রোদের দিকে। রোদ বললো,

— কে এসেছে?

— জানি না তো ছোট ভাবী। মনে হয় ছোট ভাইয়া এসেছে।

— তাহলে খুলতে হবে না।

— ভাইয়া বকবে পরে আমায়।

— আরে ভিতু কোথাকার। কি বলবে তোমার খারুস ভাই?

— তুমি বুঝি ভয় পাও না?

— মোটেও না।

ওদের কথার মধ্যে আদ্রিয়ান আরো জোড়ে নক করতেই জাইফাও উঠে গেল। ওদের দিকে তাকিয়ে দরজা খুলতে গেলেই রোদ আতকে উঠে বললো,

— আপু প্লিজ খুলো না।

জারবা বললো,

— ওমা তুমি না ভয় পাও না?

— আচ্ছা তাহলে আমি ঘুমিয়ে থাকি। উনি আসলে বলবা আমি ঘুম।

বলে রোদ কম্বল দিয়ে পুরো শরীর পেচিয়ে নিল। জাইফা দরজা খুলতেই আদ্রিয়ান দিল এক ধমক।

— কি করছিলি? কতক্ষণ ধরে ধাক্কাছি দরজা।

জাইফা ভেবলার মতো তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ান ওকে ঠেলে রুমে ডুকে দেখে জারবা বেডে বসে আছে আর পাশে মিষ্টি ঘুম তার সাথে কম্বল দিয়ে পুরো শরীর পেচিয়ে রোদ সটান হয়ে আছে। আদ্রিয়ান বললো,

— রোদ রুমে আস তারাতাড়ি।

……….

— দেখ রোদ ভালোলাগছে না। উঠো।

রোদের কোন সারা নেই। জারবা বললো,

— ভাইয়া ভাবী তো ঘুম।

— হু দেখতেই পাচ্ছি।

বলে কম্বল সহ রোদকে কোলে তুলে নিলেই রোদ চিতকার করে উঠলে আদ্রিয়ানের গলা ধরে। আদ্রিয়ান বাকা হেসে বললো,

— কিরে তোর ভাবী নাকি ঘুমাচ্ছে?

জারবা হরহর করে বলে উঠলো,

— ভাবী তুমি না আমাকে এটা বলতে বললা বলো?

রোদ চোখ বড় তাকাতেই আদ্রিয়ান বললো,

— তাই নাকি? আর কি বলেছে?

— ভাবী বলেছ তোমাকে ভয়ও পায় না। আর…

আরকিছু বলার আগেই রোদ ছটফট করতে লাগলো আর বললো,

— নামান আমাকে।

— উহু।রুমে চলো তারপর দেখ কি করি।

বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আদ্রিয়ান বললো,

— মিষ্টিকে তোর কাছে রাখ।আর রাতে জেগে না থেকে ঘুমা নাহলে দেখিস কি করি।

জারবা ভয়ে তাড়াতাড়ি উঠে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। বেচারী বড় ভাই থেকে ছোট ভাইকে ভয় পায়।

________________

রুমে ডুকে দরজা আটকে রোদকে বিছানায় সুয়িয়ে দিল আদ্রিয়ান। রোদ কিছু না বলে উল্টো ঘুরে সুয়ে রইলো কম্ফোডার পেচিয়ে। এখন আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলতে মতেও ইচ্ছে নেই রোদের। আদ্রিয়ান লাইট অফ করে রোদের পাশে বসে দেখলো রোদকে। এরপর কম্ফোডারের ভিতরে ডুকে পরলো।রোদ ছিটকে সরে যেতেই আদ্রিয়ান টেনে ধরে নিজের ঠান্ডা হাত রোদের গলায় ধরলো। রোদ কেপে উঠলো। আদ্রিয়ান হাত অনেক ঠান্ডা। তবুও কথা বললো না। আদ্রিয়ান বুঝতে পারল এই মেয়ে সহজে কথা বলবে না তাই রোদের কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে আনলো। রোদ তবুও কথা বলছে না। আদ্রিয়ান নিজের নাক দিয়ে রোদের গালে স্লাইড করতেই রোদ থ মেরে গেল। আস্তে করে বললো,

— প্লিজ সরুন।

আদ্রিয়ান বললো,

— সারাদিন কথা বলছিলে না কেন? হু?

বলে আদ্রিয়ান রোদকে বুকে নিলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কপালে চুমু খেল। আর কি লাগে রোদের গলতে। ফুপিয়ে কেঁদে দিল আদ্রিয়ানের বুকে। আদ্রিয়ান চোখ মুখ মুছিয়ে দিলে আবারও পানি পরতে শুরু করলো। আদ্রিয়ান টাইট করে ধরে বললো,

— তোমার ভালোর জন্যই এতকিছু রোদ। আমি জানতাম না তুমি ব্লাড দিতে ভয় পাও।

উত্তরে রোদ নিজের মুখ আদ্রিয়ানের বুকে ঘষে দিল। কম্ফোডারের নিচে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল দুজন। শুধু জড়ানো হলো না দুজনের অনুভূতি।

এদিকে রাদের মেজাজ ভয়াবহ খারাপ হয়ে আছে। কে বারবার ফোন দিচ্ছে কিন্তু কথা বলছে না। রাদ ভেবে নিল আরেকবার কল দিলে দিবে কয়েকটা কটু বাক্য শুনিয়ে। ফোন আসতেই তা ধরলো রাদ তাকে অবাক করে দিয়ে একটা মেয়েলি কন্ঠ সালাম দিল।

____________

ডাইনিং টেবিলে বসে মিষ্টিকে খাওয়াতে ব্যাস্ত রোদ। আর মেডিক্যাল শেষে কোচিং করাতে যাবে। তারমধ্যে সকাল বেলা সকালে আদ্রিয়ান ধমক দিয়েছে। রোদ নিজের উপরই নিজে বিরক্ত। কেন রাগ ধরে রাখতে পারে না। রাতে রাগ বিসর্জন দিল তো সকালে আদ্রিয়ান আবার ধমকালো যদিও কারন ছাড়া ধমকায় নি। সকালে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে ওর ফোন আদ্রিয়ানের হাতে। তবুও কিছু না বলে চুল বাধতে নিলেই আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— এটা কিসের ম্যাসেজ?

রোদ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে বাবা রোদের একাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে যা প্রতি মাসেই দেয়। তাই রোদ আবার ঘুরে চুল বাধতে বাধতে বললো,

— বাবা সেন্ড করেছে।

— কেন?

— প্রতিমাসেই দেয়। পড়াশোনার খরচ বাবাদ তবে এই মাসে বেশি দিয়েছে কেন বুঝলাম না।

আনমনেই বলে যাচ্ছিল রোদ। আদ্রিয়ান বললো,

— আমি জানি কেন দিয়েছে। ভেবেছে তার মেয়ের খরচ আমি চালাতে পারবো না। আজই টাকা রিটার্ন করবা আর বলবা টাকা যেন আর না পাঠায়।

–কেন?আমি আপনার টাকায় পরবো কেন?

— তোমাকে বিয়ে আমি করেছি। তোমার সব দায়িত্ব আমার। আশা করি তোমার খরচ চালাতে আমি পারবো।

— লাগবে না।

— বেশি কথা না।

— আমি আপনার টাকায় পরবো না।

— তোমার জামাইর টাকায় টাকায় পরবে। এবার ঠিক আছে।

বলে মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান।

— আমি নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারি।

আদ্রিয়ান এবার ধমকে বললো,

— নো মোর ওয়ার্ডস। নিজের পড়ায় মন দাও।

বলে রোদের বাবাকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো। রোদ ততক্ষণে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।

এসব ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ান নিচে এলো। মিষ্টিকে খায়িয়ে মুখ মুছিয়ে দিল রোদ। এরপর দুধ খাওয়াতে নিলে মিষ্টি আজ প্রথম দুধ খাবে না বলে বায়না ধরেছে। আদ্রিয়ান বললো,

— মাত্র তো খেল পরে দুধ খায়িও। এখন খেয়ে নাও।

রোদ কিছু না বলে কিচেনে গেল। সবাই টেবিলে খাওয়া শুরু করেছে রোদ কিচেনে গিয়ে আদ্রিয়ানের জন্য গরম পরটা ভেজে নিয়ে এলো। রোদ খেয়াল করেছে আদ্রিয়ান মাঝে মধ্যে পরটা খায়। আজ যেহেতু টেবিলে ব্রেড নেই তাই রোদ সিউর আদ্রিয়ান পরটা খাবে। ৫ টা পরটা এনে আদ্রিয়ানের সামনে দিল। এরপর রোদের শাশুড়িও কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। ওনার মুখ জুরে হাসি। এটুকু তার ছেলের বউ ছেলের খেয়াল রাখে। রোদ পরটা দিতেই আদ্রিয়ান বললো,

— এখানেই তো ছিল আবার ভাজতে গেলে কেন কষ্ট করে।

রোদ কিছু বলার আগেই জারবা মুখে খাবার নিয়েই বললো,

— ওহো…. ছোট ভাইয়া তুমি না গরম পরটা ছাড়া খাও।

বলতে বলতে নাকে মুখে উঠে গেল। ছোট মামি তারাতাড়ি পানি খাওয়ালো। জাইফ বললো,

— মুখে খাবার নিয়ে পকপক করলে এমনই হবে।

আরিয়ান খেতে খেতে বললো,

— বেচারী সত্যি কথা বলছে। আমাদের আদ্রিয়ান নাকি বউয়ের কষ্ট দেখে বলছে ঠান্ডা পরটা খাবে।

খেতে খেতে সবাই একচোট হাসলো। আদ্রিয়ান কপাল কুচকে আবার খাওয়া শুরু করলো। রোদ একটু লজ্জা পেল। এরা ভাইবোন সব এক। রোদকে লজ্জা দিতে এসপারর্ট। আদ্রিয়ান রোদের হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।তার ভালোই লাগছে রোদ নিজে হাতে তার জন্য পরটা নিয়ে এসেছে যদিও একটু আগে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিল। লজ্জা নিয়েই রোদ হালকা পাতলা খেয়ে উঠলো। বেশি খেলেই অস্থির লাগে কেমন। বুঝে না রোদ। আগে এমন হতো। পরে ঠিক হয়ে গিয়েছিল কিন্তু ইদানীং ২/৩ মাস ধরে আবার এমন হচ্ছে।

খাওয়া শেষে অনেক বুঝিয়ে মিষ্টিকে খাওয়াতে পারলো রোদ। তারপর রেডি হয়ে বের হলে আদ্রিয়ানের সাথে। আদ্রিয়ানের গাড়ি মেডিকেলের সামনে থামলো। রোদ নামতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে এনে কপালে চুমু খেল। রোদ কিছু বলার আগেই বললো,

— যাও। খেয়াল রেখ আর বাইরের কিছু খাবে না।

রোদ ভিতরে গেলেই আদ্রিয়ান চলে গেল।

___________________

দুপুর ২ টায় বাসায় এসেছে রোদ। ক্লান্ত খুব। আদ্রিয়ান আজ নিতে যায় নি। আবার একাও আসতে দেয় নি। আরিয়ান ভাইয়ার সাথে এসেছে তার নাকি বাসায় কাজ আছে। রোদ গোসল করে মিষ্টিকে ঘুম পারিয়ে নামাজ পরে নিল। এরপর মিষ্টির পাশেই ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ানের মা কয়েকবার খেতে ডাকতে এসে গেছে।

ডক্টরের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে আদ্রিয়ান। সাথে রিশান আর রাদ। ডক্টর শাহ্ মনোযোগ সহ ফাইল দেখা মাত্র দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আদ্রিয়ান ভয়ে আছে। রিশাদই প্রশ্ন করলো,

— কি হয়েছে?

ডক্টর শাহ্ বললেন,

— ওনার যেহেতু ট্রিটমেন্ট শুরু করেছিলেন তাহলে অফ কেন হয়েছিল?

রাদ বললো,

— রোদকে প্রথম ৪/৫ আমরা ধরে মেডিসিন খাওয়ালেও পরবর্তীতে ও নিজেই খেত কিন্তু কয়েক মাস আগে আবারও সমস্যা হওয়ায় বুঝলাম রোদ মেডিসিন না খেয়ে না ফেলে দিত যা ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলেছে।

— হু এরজন্যই সমস্যা দিন দিন বারছে।ওনার খাদ্য নালির সংকোচন সৃষ্টি হয়েছিল যা মেডিসিন গ্যাপে আবার বেড়ে যাচ্ছে। তবুও আল্লাহর রহমতে বেশি ক্ষতি হয় নি। মেডিসিন এখন থেকে সময় মতো দিতে হবে। বর্তমানে উনি চাইলেও বেশি খেতে পারবে না। আস্তে আস্তে ওনার খাবার কমে যেত এরপর একসময় রুগী… ইউ নো।

আদ্রিয়ান আর রাদের বুকটা কেপে উঠলো। এ রোগের লাস্ট স্টেজে রুগীর মৃত্যু নিশ্চিত। রোদের যেহেতু আগে মেডিসিন চলছিল তাই সমস্যা কম।

আদ্রিয়ান এবার সাহজ জুগিয়ে জিজ্ঞেস করল,

— আর ঐ ব্যাপারটা? মানে রোদের প্রেগন্যান্ট হওয়ার।

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩১(২)

আদ্রিয়ানের প্রশ্নের উত্তরটা আদ্রিয়ান অথবা রাদ কারোই পছন্দ হয় নি, হবে কিভাবে ডক্টর শাহ্ ডিরেক্ট বলেছেন রোদের কনসিভ করা অনেক টাফ। ছোট বেলায় হঠাৎ পেট ব্যাথা জনিত কারণে হসপিটালে আনলে জানা যায় রোদের ডিম্বাণুতে সমস্যা আছে যার দরুন ৫০/৫০ চান্স আছে কনসিভ করার। কিন্তু এখন এর ট্রিটমেন্ট সঠিক ভাবে করলে রোদ কনসিভ করতে পারবে। সমস্যা হলো খাবার ঠিক মতো না খাওয়া। এর জন্য সমস্যা আরো বেড়েছে। ডক্টর শাহ্ যতদ্রুত সম্ভব ট্রিটমেন্ট শুরু করতে বলেছেন। মেডিসিনের লিস্ট হাতে নিয়ে ডক্টরের সাথে কুশল বিনিময় করে চেম্বার থেকে বের হয়ে গেল আদ্রিয়ান, রাদ আর রিশাদ। রাদ আদ্রিয়ানের কাধে হাত দিয়ে বললো,

— চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হবে।

— ইনশাআল্লাহ।

রিশাদ বললো,

— আদ্রিয়ান আমার মনে হয় না তুই বেশি দিন লুকিয়ে রাখতে পারবি। এত মেডিসিন দেখে ডাউট করবে রোদ।

— আমি দেখে নেব কিন্তু ওকে জানতে দিব না কারণ রোদ এমনিতেই ইমোশনাল টাইপের আর ও যদি নিজের সম্পর্কে এমন কিছু জানে তা সহ্যকরা কষ্ট সাধ্য।

— হুম। খেয়াল রাখিস। আমার পেসেন্ট এটেন্ড করতে হবে যাই দোস্ত।

— অনেক কষ্ট দিলাম।

— আরে ব্যাটা ফরমালিটি বাদ দে। গেলাম আমি।

বলে রিশাদ চলে গেল। রাদ আর আদ্রিয়ান সামনে এগুতেই কথা হলো টুকটাক। রাদ বললো,

— আদ্রিয়ান আমি দুঃখীত প্রথমে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করাতে।

— আরে ব্যাপার না। তখন ঐটাই স্বাভাবিক ছিল।

— তবুও আমার বুঝা উচিত ছিল।

— ইটস ওকে রাদ। রোদকে পেয়েছি তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। আমি ভাবি নি তোমার আব্বু এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে।

— আমরা সবাই টেন্সড ছিলাম। বাট রোদ মেডিসিন রেগুলার নিলে হয়তো সমস্যা এতদূর এগুতে পারতো না। সারাদিন পড়ার মধ্যে থাকতো ঠিকমতো খেতও না। রাতে শুধু বকে ঝকে আম্মু জোর করে খাওয়াতো। আমি, আব্বু বকতাম তবে মাঝে মধ্যে। বুঝই তো কত আদরের। আমরা বকলে কথা বলতো না শুধু গাল ফুলিয়ে রাখতো।ছোট থেকেই ও পড়ার মধ্যে থাকতো বড় হয়ে ও নিজের মতো স্বাধীন ভাবে চলতে চেয়েছিল তাই বিয়ে নিয়ে ওর এতো আপত্তি ছিল যদি নিজের মতো চলতে না পারে। বাট আই টাস্ট ইউ। আর ওর এই প্রবলেমের কথাও ওকে জানানো হয় নি।

— হুম। তাই বাবাকে বিয়ের কথা বলার পরই উনি সব খুলে বলেন। প্রথমে রাজি হয় নি পরে অনেক কষ্টে রাজি করালাম। কেই বা নিজের একমাত্র মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দিবে।

— তেমন কিছু না আদ্রিয়ান। ও মিষ্টিকে কিভাবে এতো আপন করে নিল আমি ভেবে পাই না। তাই আম্মু আব্বু হয়তো ভেবেছে রোদ কনসিভ না করলেও মিষ্টি তা পূরণ করে দিবে তাই রাজি হয়ে গেল। সন্তানের জন্য মা বাবারা স্বার্থপর হয়ে যায়।

–সব মেয়েরই অধিকার আছে মা হওয়ার। রোদকে আমি সেই অধিকার হতে বঞ্চিত হতে দিব না। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।

— আল্লাহ ভরসা। সব ঠিক হবে।

___________________

আদ্রিয়ান চলে গেল বাসায় আর রাদ এলো রেস্টুরেন্টে। ওই মেয়েকে আজ রফা দফা করেই দম নিবে। কল দিয়ে দিয়ে মাথা খারাপ করে দিয়েছে। রাদ ডুকেই দেখলো টেবিলের উল্টো দিকে ঘুরে একটা মেয়ে বসা। রাগচটা রাদ সামনে এগুতেই দেখতে পেল সুন্দরী এক মেয়ে বসা। লং টপসের সাথে জিন্স পড়া। ঠোটে হালকা লিপস্টিক,গলায় পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখা উরনা। রাদকে দেখেই দাড়িয়ে গেল। রাদের কেমন সন্দেহ হলো। কোথায় দেখেছে বলে মনে হলো। পরক্ষনে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এই মেয়ে আর কেউ না জাইফা। গম্ভীর কণ্ঠে রাদ বললো,

— বসো।

জাইফা বসতেই রাদ ওয়েটারকে ডাক দিল। ওয়েটার আসতেই রাদ মেনু হাতে নিয়ে জাইফাকে বললো,

— আর্ডার করুন।

জাইফার ভয়, সংকোচ আর লজ্জা সব মিলিয়ে বেহাল দশা। তবুও অনেক কষ্টে কন্ঠনালী থেকে বের করলো,

— কিছু খাব না।

–পেমেন্ট আমি দিব। ডোন্ট ওয়ারী।

জাইফার একটু মাইন্ডে লাগলো তবুও বললো,

— তেমন কিছু না।

রাদ এবার নিজেই কফি, চাউমিন, পাস্তা, সেন্ডউইচ, রোল, সর্মা,নুডুলস,মিট বক্স, ড্রিংক আর্ডার করলো।ওয়াটার ২০ মিনিট টাইম লাগবে বলে চলে গেল। জাইফা এখনো শকড।এতো খাবার কে খাবে। রাদ শান্ত কন্ঠে বললো,

— ইউ হেব 20 মিনিটস। যা বলার বা করার শুরু করো।

জাইফা ফেল ফেল করে তাকিয়ে রইলো। কিছুই বের হচ্ছে না তার মুখ দিয়ে। সব জেন গলায় পেচিয়ে আছে। জাইফার এখন মনে হচ্ছে একটু বমি করতে পারলে ভালো হতো। হয়তো শান্তি পেত। এই যে এতো সুন্দর রাদ তার সামনে বসে আছে সে কিছুই বলতে পারছে না। অথচ তার গলা ফাটিয়ে বলতে মন চাইছে,

— রাদ আই লাভ ইউ। আপনাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলছি। ২৩ বছরের জীবনে আপনি প্রথম যাকে ভালোবাসি।

কিন্তু না কিছু বের হলো না এই মরার গলা দিয়ে। রাদ তার মতো বসে আছে। কেউ কিছু বলছে না। রাদ যেদিন আদ্রিয়ানদের বাসায় এসে ওর বড় মামিকে ঝেরেছিল ঐ দিন থেকেই জাইফা পাগল হয়ে আছে। রোদের ফোন থেকে নাম্বারও চুরি করেছে।বাট কিছুই বলতে পারলো না। এরমধ্যে ওয়েটার একে একে সব টেবিলে রাখলো।ওয়েটার যেতেই রাদ বললো,

— ইউর টাইম ইজ ওভার মিস. হোয়াটএভার। খেয়ে দেয়ে বিদায় হউ। আমি বিল দিয়ে যাচ্ছি।

বলে ওয়েটার ডাক দিয়ে বিল দিতে বললো। ওয়েটার বিল দিতেই রাদ টাকা দিয়ে দিল।
উঠতে নিলেই জাইফা ভয়ে ভয়ে বললো,

— শুনুন এ..একটু।

— টাইম ইজ ওভার। আর নেক্স টাইম কল করার আগে ভেবে নিবে। নাহলে থাপ্পর একটাও নিচে পরবে না সব তোমার গালে পরবে।আর এখন খেয়ে যাও। আমাদের বাবা মা আবার শিক্ষা দিয়েছে বুঝলা।

বলেই চলে গেল রাদ। জাইফা বুঝতে পারল ওর মায়ের জন্যই রাদ ওকে অপমান করলো। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। আশে পাশে মানুষ তাকিয়ে আছে বলে জাইফা উঠে বেরিয়ে এলো।

_________________

আদ্রিয়ান রুমে ডুকতে ডুকতে কিছুর আওয়াজ পেল। হুম গানের আওয়াজ যা আদ্রিয়ানের রুম থেকেই আসছে। দরজায় দাড়িয়ে দেখলো রোদের কোলে মিষ্টি বসা আর দুজন লেপটপে কিছু দেখছে আর হেসে হেসে গাইছে,

–zindagi sawar du, ek nayi bahar du..

Duniya he badal du
me to peyara sa chamatcar hu……

Me kisika sapna hu jo aj ban chucahu cahc
Ab e mera sapna he k
sab k sapne chac me karo…….

Asma co chu lu..
Titli ban uruuuuuu…

Aa ha ha me hu ek urta robot
Doraemon………

আদ্রিয়ান হা হয়ে তাকিয়ে আছে। রোদ পুরাই বাচ্চাদের মতো হেসে হেসে গাইছে আর মিষ্টির মুখে কিছু দিচ্ছে। আদ্রিয়ান খেয়াল করেছে রোদ কখনো মিষ্টিকে ফেরিটেইলের গল্প বা অবাস্তব কোন গল্প শুনায় না। সব সময় ইসলামিক ছোট গল্প শুনায়। যার দ্বারা ছোট থেকেই মিষ্টি ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারবে।কিন্তু ডোরেমোন আর সিনচেন রোদ দেখবেই দেখবে। ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো আদ্রিয়ানের পরক্ষনে আবার মিলিয়ে ও গেল কারন রোদের মেডিসিন বেশিরভাগই ওকে না জানিয়ে দিতে হবে তারমধ্য আবার সপ্তাহে একদিন ইনজেকশন ও নিতে হবে। ভাবতেই আদ্রিয়ানের খারাপ লাগে। রোদকে একটা টেবলেট খাওয়াতেই দিন রাত এক করতে হয় সেখানে এতো মেডিসিন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে ডুকে ফাইল আর কিছু মেডিসিন ড্রয়ারে লক করে রাখলো যাতে রোদ না দেখে।

রোদ আদ্রিয়ানকে দেখেই বললো,

— কখন এলেন?

— যখন তোমরা ডোরেমন দেখছিলে।

মিষ্টি দৌড়ে আদ্রিয়ানের কোলে উঠল। আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়ে কপালে, গালে চুমু খেল। আদরে আদরে ভরিয়ে বললো,

— কি খাচ্ছিলো আমার মা?

–জানি না তো…

— তাই??

— হু।তুমি খাবে বাবাই?

— হু আমার মা কি দিবে বাবাইকে?

— হু দিবে তো। আসো আমি মাম্মাকে বলে দেই।

আদ্রিয়ান রোদের সামনে দাড়াতেই রোদ ওকে এগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান তাকিয়ে দেখলো কয়েক পদের ড্রাই ফ্রুটস রাখা। আদ্রিয়ান মাঝে মধ্যে অবাক হয় রোদ মিষ্টির ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। এই যে এখন কার্টুন দেখার ফাকে ওকে ড্রাই ফ্রুটস খাওয়াচ্ছে যা মিষ্টি খেতে চায় না। মিষ্টি বলে উঠলো,

— বাবাই খাও।

আদ্রিয়ান বললো,

–কি হলো রোদ দাও?

— নিন।

— মুখে তুলে দাও।

রোদ কয়েকটা আদ্রিয়ানের মুখে ডুকরি বললো,

— ফ্রেস হয়ে আসুন। আমি খাবার নিয়ে আসি।

আদ্রিয়ান মিষ্টিকে বিছানায় বসিয়ে নিজে ফ্রেস হতে চলে গেল।

খাবার নিয়ে এসে দেখলো আদ্রিয়ান মিষ্টির সাথে খেলছে। রোদ সাইড টেবিলে খাবার রেখে বললো,

— আসুন।

— তুমি খেয়াছো?

— হু।

— মিথ্যা।

— না মানে.. খেয়েছি।

— কি খেয়েছো?

— পাস্তা।

— দুপুরে পাস্তা খায় কেউ?

–সব ফ্রেন্ডরা জোর করছিলো।

— হু। বুঝলাম। বসো এখন।

বলে আদ্রিয়ান নিজেও খেল রোদকেও অল্প খায়িয়ে দিল। কারন রোদকে জোর করে লাভ নেই।

______________

কাল নানুমনিরা সবাই চলে যাবে। শুধু রোদকে দেখতে এসেছিল। জাইফ বললো,

— ভাবী যাওয়ার আগে তোমার হাতে কিছু খাব কিন্তু।

রোদ হেসে বললো,

— আচ্ছা ভাইয়া।

সবাই কথা বলছিল কিন্তু জাইফা একদম চুপ। সবাই জিজ্ঞেস করলেও কিছু উত্তর দেয় নি।

#চলবে……