ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
373

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৯

মিষ্টির দরজা ধাক্কানিতে আর বাবাই মাম্মা ডাকে ঘুম ভাঙল আদ্রিয়ানের। চোখ খুলে প্রথমে ঘড়ি দেখেই বললো,

— ওহ সেট!

কারণ তখন ১০ টা বেজে গিয়েছে। এতলেট কিভাবে হলো ভাবতেই পাশে তাকালো। রাত ঠিক রাতের মতো করেই বুকে মুখ গুজে গুটিয়ে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান ওর গায়ে হাত দিতেই দেখলো শরীর গরম। দীর্ঘ একটা শ্বাস ত্যাগ করে আস্তে করে উঠে দরজা খুলে দিল। মিষ্টি রুমে ডুকেই হাত বাড়িয়ে দিলো মানে কোলে নাও। আদ্রিয়ান একহাতে ওকে কোলে তুলতেই মিষ্টি বাবার গলা জরিয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো। আদ্রিয়ান বুঝলো মেয়ের মন খারাপ। মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল,

— আমার মা কখন উঠেছে?

………

— কেউ কিছু বলছে আমার মাকে? বাবাইকে বলো।

— কেউ তো উঠেই নি। সবাই ঘুম তো।তোমরা কেন উঠো নি আমি একা একা ছিলাম।

বলেই কেঁদে উঠলো মিষ্টি। সবাই অনেক লেট করে ঘুমিয়েছে তাই হয়তো কেউ উঠে নি। মা তো এখন ও হসপিটালে বাসায় আসে নি। আদ্রিয়ান মেয়েকে বুকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। হেটে হেটে এটা ওটা বলছে। কয়েকবার সরি বলেছে। মিষ্টি ফুপিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আর যাই হোক মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারে না। ভেতরে কেমন অস্থির অস্থির লাগে। হয়তো সব বাবাদের ই এমন হয়। আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়েই কাউচে বসলো। কান ধরে সরি বললো। মুখ ত্যারা ব্যাকা করে এটা ওটা করলো। মিষ্টি কান্নার মাঝেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আদ্রিয়ানের বুকটা শান্ত হলো। মিষ্টিকে নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে দাঁত ব্রাশ করিয়ে মুখ ধুয়ে দিলো। রুমে এনে মুখ মুছিয়ে মাথা আচরিয়ে ছোট চুলে একটা ঝুটি করে দিলো। রোদের পাশে বসিয়ে নিজে গেল ফ্রেশ হতে। মিষ্টি গোলে গোল চোখ করে ওর মাকে দেখলো। রোদ একপাশ হয়ে শুয়ে ছিলো। মিষ্টি নিজের নরম তুলতুলে হাত দিয়ে রোদের গাল, নাক, চোখ, ঠোঁট ছুয়ে দিল আবার নিজের সেই হাতে নিজেই চুমু খেল। রোদ একটু নড়লে মিষ্টি চোরের মতো চুপ হয়ে গেল। রোদ ঘুমাতেই মিষ্টি ওর গালে নিজেই চুমু খেল। বাচ্চাটা বুঝতে পারছে না মায়ের গাল ফুলে লাল হয়ে আছে কেন? আদ্রিয়ান বের হয়ে মিষ্টিকে রোদের সাথে এমন করতে দেখে বললো,

— কি করছ মা?

— বাবাই মাম্মা গালে ব্যাথা পেয়েছে।

আদ্রিয়ান তাকালো। হ্যাঁ রোদের গাল লাল হয়ে ফুলে স্পষ্ট দাগ পড়ে আছে। আদ্রিয়ান মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

— চল আমরা দুজন মাম্মার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করি।

বলে আদ্রিয়ান মিষ্টিকে নিয়ে কিচেনে ডুকে পরলো।
ফ্রিজ থেকে ৪টা ডিম সহ ব্রেড আর প্রয়োজনীয় সব বের করলো। এক চুলায় ডিম আর ব্রেড গুলো ভেজে নিলো। এরপর সুন্দর করে ট্রেতে সাজিয়ে একবাটি সুপ সহ গরম দুধ নিয়ে নিলো। মিষ্টি অনেক খুশি কারণ বাবাই আর ও আজ ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে।
মিষ্টিকে নামিয়ে হাতে ট্রে নিয়ে বললো,

— চল মা তোমার মাম্মাকে উঠাতে আবার যুদ্ধ করতে হবে।

মিষ্টি খিলখিল করে হেসে আদ্রিয়ানের সাথে উপরে চলে গেল।

রুমে ডুকে আদ্রিয়ান প্রথমে কয়েবার ডাক দিল। রোদের কোন হেলদুল নেই। মিষ্টি ও মাম্মা বলে ডাকলো। আদ্রিয়ান এবার হালকা ঝাকিয়ে ডাক দিতেই রোদ বিরক্ত হয়ে বললো,

— কি হয়েছে? আরেকটু পর উঠবো আমি।

মিষ্টি বলে উঠলো,

— মাম্মা খাব।

রোদ ফট করে চোখ খুলে তাকালো। মিষ্টিকে দেখে বললো,

— আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠেছে কেন মা?

উত্তরে মিষ্টি ওর গলা জরিয়ে ধরলো। রোদ ওর কপালে চুমু খেয়ে উঠে বসলো। মাথাটা এখনও ভার হয়ে আছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। ১০:৪৫ বাজে। তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— আল্লাহ কয়টা বাজে! আগে ডাক দিবেন না? মিষ্টি এখনও না খেয়ে আছে।

বলে উঠতে নিতেই আবার বসে পরলো। আদ্রিয়ান ওকে ধরে বললো,

— মাথা ঘুরাচ্ছে?

— না এমনি ভার হয়ে আছে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই বললো,

— মামনি বাসায় আসে নি?

— না।

— আমি ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিয়ে আসি।

বলে যেতেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে বসিয়ে দিলো। পাশের ট্রেতে ইশারা করে বললো,

— আমি আর মিষ্টি বানিয়েছি।

রোদ একটু হেসে বললো,

— আপনি রান্না ও পারেন?

— অল্প সল্প আরকি।

বলে তিনজন খেয়ে নিলো। একটু পর আদ্রিয়ান সব নিচে রাখতে এসে দেখলো সাবা উঠে কিচেনে কাজ করছে আর বুয়া ও এসে পরেছে। সাবা ওকে দেখে বললো,

— আজ দেরী হয়ে গেল রে। বস আমি ব্রেকফাস্ট তৈরি করছি।

— আমরা খেয়েছি। শুধু দু কাপ কফি দাও।

— দিচ্ছি।

____________

দুপুরের দিকে খবর এলো জাইফা রেসপন্স করছে। সাবার শরীরও আজ তেমন ভালো না। বুয়ার সাহায্যে কোনমতে রান্না শেষ করেছে। রোদ সাহায্য করবে বলার আগেই আদ্রিয়ান আর সাবা দুজনই ধমক দিয়েছে। আদ্রিয়ান আবারও এতোগুলো ফল এনে খাওয়ালো রোদকে কিন্তু রোদের দূর্বলতা তেমন একটা কমছে না। আজ আবার ওকে ইনজেকশন ও দিতে হবে। আদ্রিয়ান আরিয়ানকে বলেছে যাতে বাসায় নিয়ে এসে পুস করে। রোদকে কোনমতে বের হতে দিবে না আদ্রিয়ান। মিষ্টি পাশেই শুয়ে আছে। একটু আগে আদ্রিয়ানের মা বাসায় এসেছেন আবার যাবেন বিকেলে। আদ্রিয়ান ওর মায়ের সাথে কথা বলছে নিচে। রোদ আধশোয়া হয়ে ফোন হাতে নিলো। রাদের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে আদুরে কন্ঠে রাদ বললো,

— আমার পিচ্চিটা কেমন আছে?

— আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কোথায়?

— তোর কন্ঠ এমন কেন? কি হয়েছে?

— কিছুই হয় নি। বলো কোথায় তুমি?

— এই টাইমে কোথায় থাকে তোর ভাই?

— অফিসে।

— হুম।

— জাইফা আপু সুসাইড করেছে ভাইয়া।

……….

— ভাইয়া শুনতে পারছো?

— হুম।

— দেখতে আসবে না?

— না।

— মানবতার খাতিরে তো আসতে পারো?

— দেখ রোদ এখন যদি আমি আসি ও মানবতার খাতিরে ও এটাকে অন্য কিছু ভেবে নিবে। আম্মু আব্বু কে পাঠিয়ে দিব নে।

— হু।

— মন খারাপ করে না। খেয়াল রাখিস নিজের।

–তুমিও।

কল কাটতেই দেখল আদ্রিয়ান দাড়িয়ে আছে। রোদ কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান বললো এসব বিষয় নিয়ে না ভাবতে। রোদ ও সম্মতি দিলো। আদ্রিয়ান একটা জেল বের করে রোদের গালে লাগিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— শুয়ে থাক।

— আপনি হসপিটাল যাবেন না?

— বিকেলে যাব।

— আমিও যাব।

আদ্রিয়ান কঠোর ভাবে না বলে দিলো। রোদ জেদ করলেই আদ্রিয়ান জোরে ধমকে উঠল। রোদ সহ ঘুমন্ত মিষ্টি কেঁপে উঠল। মুখ গোমরা করে রোদ উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বললো,

— মেজাজ খারাপ করবা না রোদ। রুম থেকে বের হলেই পা ভেঙে দিব।

রোদ চুপ করে মিষ্টির পাশে শুয়ে ফোন টিপাটিপি শুরু করলো। আদ্রিয়ান ব্যালকনিতে গেল। ওর এখনও হজম হচ্ছে না মামি কিভাবে রোদের গায়ে হাত তুলে?

আধ ঘন্টা পর আদ্রিয়ান খেয়াল করলো কেউ পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল ওকে। পিঠে নাক ঘঁষে মাথা রেখে হাত দুটো বুকে চেপে ধরলো। আদ্রিয়ানের বুকের ধুকপুকানি নিমিষেই বেড়ে গেল। এক পশলা শান্তি অনুভব করল বুকে। সব রাগ যেন ঝরে গেল। রোদ আদুরে গলায় বললো,

— রাগ কমেছে মি.বাবাই?

— হুম।

— এত রাগ কোথায় থাকে আপনার? আল্লাহ জানে আর আমি জানি কত ভয় পাই।

আদ্রিয়ান হেসে উঠল। রোদকে ছাড়িয়ে নিজের সামনে এনে বুকে জড়িয়ে নিল। রোদ ও জড়িয়ে ধরলো। মিহিয়ে যাওয়া গলায় বললো,

— প্লিজ আমি যাব। আপুকে দেখেই এসে পরব।

আদ্রিয়ানের মেজাজ খারাপ হলো। রোদকে ছাড়াতে চাইলেই রোদ টাইট করে ধরে বুকে মিশে রইলো। আদ্রিয়ান কঠিন ভাবে বললো,

— ছাড়ো।

— উহু।

— রোদ!

— কি?

— যাবে না তুমি। লাস্ট কথা আর কিছু শুনতে চাই না।

— যাব আমি।আজই লাস্ট। এমন করেন কেন?

— দেখি ছাড়ো।

— কেন ছাড়ব? আপনাক বলে ধরেছি যে আপনি বললেই ছাড়ব?

— ইদানীং সাহস বেড়ে যাচ্ছে তোমার।

— দেখতে হবে না কার বউ।

হেসে উঠল আদ্রিয়ান। রোদ ও হেসে ওকে ছেড়ে রুমে ডুকতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে এনে সামনে দাড় করিয়ে একগালে হাত দিয়ে টুপ করে চুমু খেল গালে। রোদ অল্প লজ্জা পেল। আগের মতো তেমন লজ্জা লাগে না এখন। অনেকটা সহজ হয়েছে আদ্রিয়ানের সাথে।

_____________

বিকেলে আদ্রিয়ান ওর মা, জারবা আর রোদকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হলো। শেষ মেষ রোদের জেদের সামনে হার মানতে হয়েছে ওকে। তবুও যথেষ্ট কেয়ারফুল ভাবে ওকে নিয়ে এসেছে।
রোদের মনটা একটু খারাপ কারণ আদ্রিয়ানের মা ওর সামনে তেমন কথা বলছে না। রোদ কিছু বললেও হু হা করে উত্তর দিয়ে আর কিছু বলে নি। রোদের খারাপ লাগলো ওর মামনি ও কি ভুল ভাবছে ওকে।

হসপিটালে পৌছাল ওরা। জাইফাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। একটু আগেই রোদের মা আর বাবা এসে দেখে গিয়েছিলো। রোদ মন খারাপ করো মিনমিন করে বললো,

— একটু আগে আসলে দেখা হতো।

আদ্রিয়ান শুনলেও কিছু বললো না। কেবিনে ডুকতেই ওরা অবাক। যদিও ধারণা আছে পুরাণ ঢাকার মানুষ কেমন তবুও যেন অবাক না হয়ে পারলো না। এত বড় কেবিনের পুরো অর্ধেক যেন ফলে ভরা। পরে শুনলো জাইফার হাতে ১০ হাজার টাকাও দিয়ে গিয়েছেন। এখন ড্রাইভার আর ছোট মামা মিলে সব বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। জাইফাকেও কাল পরসু রিলিজ দেয়া হবে। বড় মামি যেন রাদের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। এত বড় লোক বাড়ি হাত ছাড়া করতে নারাজ উনি অথচ এটা বুঝতে চাইছে না ছেলেই রাজি না। ওনার কথা রোদ ও তো রাজি ছিলো না কিন্তু বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে গিয়েছে রাদ ও বিয়ের পর সব মেনে নিবে। বড় মামা ওনাকে ধমকে না বলে দিয়েছেন।

রোদ কেবিনে ডুকতেই জাইফাকে বললো,

— কেমন আছ আপু।

— ভালো।

বাকিরাও টুকটাক কথা বললো। আদ্রিয়ান ভাবছে রোদ যেহেতু হসপিটাল এসেছে ইনজেকশনটাও তাহলে পুশ করিয়ে নিয়ে যাবে। ও জারবাকে বললো যাতে রোদের পাশে থাকে। বলে নিজে গেল আরিয়ানের কেবিনে। আদ্রিয়ানের মা ও বাইরে ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন। কেবিন শুধু রোদ, জারবা,মামি আর জাইফা। মামি জারবাকে বললো,

— জারবা আমার জন্য একটু কফি নিয়ে আসবে ক্যান্টিন থেকে?

— আপনি যেয়ে নিয়ে আসুন।

— আমি যেতাম কিন্তু পায়ে ব্যাথায় হাটতে মন চাচ্ছে না।

জারবা বিরক্ত হয়ে বললো,

— লিফট ই তো আছে। আমাকে দেখলেই কাজ করাতে মন চায়।

বলে উঠে গেল। মামিকে এখন সহ্য হচ্ছে না রোদের। ও উঠে চলে যেতে নিলেই মামি বললো,

— তোমার সাথে কথা ছিলো।

— আমি চাই না বলতে।

— শোন মেয়ে বড়রা বকতেই পারে এতে তেমন কিছু না।

— আপনি বিনা দোষে গায়ে হাত তুলেছেন।ভুলিনি আমি।

বলে চলে যেতে নিলেই মামি বলে উঠলেন,

— তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলে বলো যাতে জাইফার সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। এতে তোমার সংসার ভালো হবে।

রোদ কপাল কুচকে বললো,

— মানে?

— আদ্রিয়ানক তোমাকে জোর করে বিয়ে করতে পারলে ছাড়তেও পারবে।

রোদ কিছু বলার আগেই কেউ চিল্লিয়ে আদ্রিয়ানকে ডাক দিলো। মামি,জাইফা সহ রোদ ভরকে গেল। রাদ আবারও ডাকতেই আদ্রিয়ানের বড় মামা, মা সহ আদ্রিয়ান আর আরিয়ান হাজির হয়। রাদ বোনের হাত চেপে ধরে বললো,

— আমার বোনকে নিয়ে যাচ্ছি আমি।

বড় মামা বললো,

— কি হয়েছে বাবা?

— আপনার স্ত্রী বারবার আমার বোনকে অপমান করবে আর আমি চুপ করে থাকব তা ভাববেন না।

বড় মামা মামির দিকে তাকিয়ে বললো,

— তুমি আবার ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করছো?

— মিথ্যা কথা। জাইফাকে জিজ্ঞেস করুন।

জাইফা বললো,

— রোদ ই আম্মুর সাথে বেয়াদবী করছিলো।

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই রাদ চিল্লিয়ে বললো,

— এই চুপ! একদম গলা চেপে কথা বন্ধ করে দিবো বেহায়া মেয়ে কোথাকার। মায়ের মতো মিথ্যুক।

বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— আশা করি তোমার পরিবারের মন মানুষিকতা এতোটাও নিচু না যে এই নিয়ে রোদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে।

বলে রোদের হাত ধরে টেনে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। জাইফা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।ওর মায়ের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

— তোমার জন্য হয়েছে সব। এখন উনি আমাকে আরো দেখতে পারবেন না। কেন শুনলাম আমি তোমার কথা?

আদ্রিয়ান যাওয়ার আগে শুনলো জাইফার কথা।
তারাতাড়ি যেয়ে রাদকে থামিয়ে বললো,

— রাদ শান্ত হও। আজ ওকে ইনজেক্ট করতে হবে। ভাইয়ের কেবিনে চলো।

রাদ বোনের হাত ধরেই গেল। রোদ কতকিছু বললো লাভ হলো না। ইনজেকশন পুস করার সময় রাদ ওকে বুকে চেপে ধরলো। আদ্রিয়ানের খারাপ লাগলো এটা তো ওর করার কথা।
হঠাৎ রোদের নিকাব ঢিলা হয়ে গেলে রাদ পেছন থেকে খুলে দিয়ে বললো,

— ভালোকরে বেধে নে।

বলতেই রোদের গাল দেখে আতকে উঠে বললো,

— এই তোর গালে কি হয়েছে?

রোদ সহ আদ্রিয়ান ও ভয় পেয়ে গেল। না জানি রাদ বলে বোন আর দিবেই না। রোদ তোতলিয়ে বললো,

— এ এলা এলার্জি ভাইয়া।

— মিথ্যা বললে থাপ্পরিয়ে আরেক গাল লাল করে দিব। বেয়াদব। আমাকে শিখাস তুই কোনটা মারের আর কোনটা এলার্জি।

এরপর আদ্রিয়ানর দিকে তাকিয়ে বললো,

— ওর গায়ে হাত তুলার সাহস কি করে পেলেন আদ্রিয়ান?

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে আছে। রোদ বললো,

— ভা ভাইয়া। উনি কিছু করেন নি।

— আমিও জানি। এবার সত্যি টা বল।

রোদ চুপসে গেল। আদ্রিয়ান বললো,

— মামি মেরেছে।

— আপনারা কি দাড়িয়ে দেখছিলেন?

— শুনো আমার কথা।

— প্রয়োজন মনে করছি না।

বলে রোদকে নিয়ে হাটা ধরলো। রোদ কতকরে বললো বাট রাদ মানলো না। আদ্রিয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। রোদ এবার কেঁদেই দিলো। রাদ হাত ছেড়ে দিলো ধমক। ধমক খেয়ে এবার জোরে কেদে দিল। আদ্রিয়ান এগিয়ে এলো সাথে আরিয়ানও। আদ্রিয়ান রাদকে শান্ত কন্ঠে বললো,

— ধমকিও না রাদ।

— আপনারা মারতে পারলে আমার বোনকে ধমকালে তো সমস্যা হওয়ার কথা না। আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি।

বলে দাড়ালো না। রোদকে নিয়ে দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল। আদ্রিয়ান ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। রাদ ভুল কিছু করে নি। ওকি কখনো জারবার সাথে এমন হলে মানতো? হঠাৎ করেই কি থেকে কি হয়ে গেল।

#চলবে…

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪০

বাসায় এসে কারো সাথে কথা না বলে রোদ নিজের রুমে ডুকে দরজা অফ করে দিলো। রাদ ওর ফোন নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। গাড়িতে রোদ যখন কিছু বলতে যাবে রাদ একটা রাম ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। এদিকে রোদের মা, রুদ্র রোদকে দেখে অনেক খুশি কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না। রাদ রাগে ফুসছে। ওর বুঝতে কিছু বাকি নেই রোদ গালের থাপ্পড়ের কারণ। ওর এতো আদরের বোনকে মারে সাহসের তারিফ করতে হয়। রোদের মা সব শুনে মনটা খারাপ করে ফেললো। রুদ্র ছোট বলে ওকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে রাদ। রাদের মা রাদকে বললো,

— সব বুঝলাম। উনি ঠিক করেনি আর আমি নিশ্চিত আদ্রিয়ান সহ বাকি সবাই ওনাকে ছেড়েও দেয় নি। তুই আদ্রিয়ানের সাথে মোটেও ভালো করিস নি। এভাবে রোদকে আনাও ঠিক হয় নি।

রাদের মেজাজ এমনি খারাপ হয়ে আছে। তার মধ্যে মা কি না ঐ বাড়ির লোকের সাপ্রোর্ট করছে। কিছু বলবে তার আগেই মা আবার বললেন,

— পাগলকে কাঁদিয়েছিস আগে ওকে ঠান্ডা কর। আর তার আগে নিজের মাথা ঠান্ডা কর।

রাদ মাথা নিচু করে সোফায় বসে রইলো। সত্যিও তো নিশ্চিত আদ্রিয়ান মামিকে ছাড়েন নি।

______________

এদিকে আদ্রিয়ান সন্ধ্যার পর হসপিটাল থেকে বের হলো। আজ কতদিন পর বাসায় মিষ্টির জন্য টেনসন হচ্ছে যা আগে হতো রোদকে বিয়ে করার আগে। রোদ যখন ছিলো না তখন আদ্রিয়ান বারবার বাসায় কল দিত, চিন্তাত থাকতো মেয়েকে নিয়ে। কি করছে, কি খাচ্ছে এসব চিন্তায় মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। যদিও বাসায় সাবা, জারবা, মা আছে তবুও রোদের মতো আসলে মায়ের মতো যত্ন কেউ করতে পারে না। সোজা বাসার সামনে গাড়ি থামালো আদ্রিয়ান। বাসায় ডুকতেই নজরে এলো সোফায় আলিফের সাথে বসে টিভি দেখা মিষ্টিকে। বাবাকে দেখেই দৌড়ে বাবার কোলে উঠলো। আদ্রিয়ান ও মেয়েকে কোলে তুলে আদর করলো। মিষ্টি উকি ঝুঁকি দিয়ে কিছু খুজছে দেখে আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করল,

— কি খুজে আমার মা?

— মাম্মা কোথায়? সবসময় তো তোমার সাথে আসে।

আদ্রিয়ানের মনটা খারাপ হয়ে এলো। ঠিক এই টেনশনেই ছিলো ও। এখন কি বলবে ও মিষ্টিকে? ওর মায়ের খেয়াল রাখতে না পারায় ওর মামা নিয়ে গিয়েছে। আর রাদ যেই রেগে ছিলো আল্লাহ জানে কবে আসতে দেয়। যতযাই হোক রোদকে ছাড়া থাকতে পারবে না ও আর নাই মিষ্টি। মেয়েকে কোলে নিয়েই রুমে ডুকতে ডুকতে বললো,

— আমার মা কি কিছু খেয়েছে?

— মাম্মার কাছে খাব। ভাইয়া খেয়েছে কিন্তু আমি খালামনিকে না করেছি।

আদ্রিয়ান মিষ্টিকে বিছানায় বসিয়ে কল দিল রোদের নাম্বারে। কল রিসিভ হলো না। কিছু একটা ভেবে রুদ্রকে কল দিল। রুদ্র রিসিভ করে সালাম দিলো। আদ্রিয়ান উত্তর দিয়ে রোদের খবর জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র জানালো ও দরজা অফ করে আছে। মা আর রুদ্র ডেকেছে শুনে নি আর ফোন ও রাদের কাছে। আপাতত এসব শুনার পর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়া বাদে কিছু করার নেই আদ্রিয়ানের। তবুও রুদ্রকে বললো,

— দরজায় নক করে বলো মিষ্টি কথা বলবে।

রুদ্র তাই করলো। সাথে সাথে খট করে রোদ দরজা খুলে ছো মেরে ফোন কেড়ে নিলো। কানে নিয়ে সাথে সাথে বললো,

— হ্যালো মিষ্টু! মা আমার খেয়েছো? কি করছো এখন আর তোমার বাবাই কোথায়? বাসায় আসেনি এখনও?

একদমে সব বললো রোদ। ওপর পাশে এতক্ষণে সব শুনে মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান। মেয়েটা পাগল। নিশ্চিত এতক্ষণ গাল ফুলিয়ে বসে ছিলো। আদ্রিয়ান আস্তে ধীরে বললো,

— আগে তো দেখ কার নাম্বার।

রোদ বুঝলো আদ্রিয়ান তাহলে বাসায়। শান্ত হয়ে বললো,

— মিষ্টি কোথায়? খেয়েছে কিছু?

— ও আমার কাছে। মাত্র বাসায় এলাম আর ও কিছু খায় নি। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলো।

রোদের কান্না চলে এলো। দুপুরে রোদকে ছাড়া খেলেও সকাল,বিকেল,রাত রোদকে ছাড়া খেতে চায় না মিষ্টি। কাদো কাদো গলায় বললো,

— ওকে প্লিজ কিছু খায়িয়ে দিন। ভাইয়া তো আসতে দিচ্ছে না? আব্বু আসলে বিচার দিব ভাইয়ার নামে।

আদ্রিয়ান হাসলো আবারও। ফোন মিষ্টির কাছে দিলো। রোদ ইনিয়ে বিনিয়ে ওকে বুঝালো যাতে এখন খেয়ে নেয়। মিষ্টি রাজি হলো। রোদ বললো ও তাড়াতাড়ি আসবে।

______________

রাতের ১০টার দিকে রোদের বাবা এলো। সব শুনে রেগে গেলেন। তার কলিজার টুকরোকে সে কিনা কখনো ধমক ও দেন না যদিও রোদ বাবাকে একটু ভয় পায়। কিন্তু বাবা কখনো ওকে কখনও হাত তো দূরে থাক ধমকও দেয় নি। কিন্তু ছোট বেলা থেকে অনেক চাপে রেখে পড়ালিখা করিয়েছেন। কোথায়ও তেমন ঘুরাঘুরি করতে দিতেন না। সেই মেয়েকে কিনা কেউ থাপ্পড় মারলো তাও বিনা দোষে। আদ্রিয়ান কয়েকবার কল দিয়েছিলো মিটিং এ থাকায় খেয়াল করেন নি। সব শুনে গম্ভীর ভাবে আদ্রিয়ানকে কল দিলেন। সাথে সাথেই আদ্রিয়ান তা রিসিভ করলো। সালাম দিল। মি.রহমান গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— দেখ আমি রাদের সাথে একমত যদিও রাদ এভাবে রোদকে এনে ঠিক করেনি তবুও রাদ নিজের জায়গায় ঠিক। সাহস কি করে পেল আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলার? তুমি কি করছিলে তখন? দায়িত্ব নিলেই হয় না পালন করতে জানতে হয়।

— আমি জানি বাবা আমি আমার কথা রাখতে বারবার ব্যার্থ হচ্ছি। মাফ করে দিন আমায়। পরবর্তীতে অভিযোগের সুযোগ দিব না। রোদকে ফিরিয়ে দিন বাবা। আমি আর আমার মেয়ের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে ও।

মি.রহমান এবার যেন একটু নরম হলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন,

— আজ তো রাত হয়ে গিয়েছে কাল নাহয় আমি দিয়ে আসবো।

— ধন্যবাদ বাবা।

— মনে রেখ তুমি অনুরোধ করায় মেয়েকে তোমার কাছে দিয়েছি নাহয় সারাজীবন আমার কাছে রাখতে সমস্যা নেই আমার।

— দুঃখীত আমি বাবা। মাফ করুন আমায়।

— হুম।

বলে সালাম দিয়ে কল কাটলো আদ্রিয়ান। যাক বাবাতো রাজি এবার রাদ মানলেই চলে। কিন্তু আজ সারারাত থাকবো কি করে?মিষ্টি একটু আগে কান্নাকাটি করে ঘুমিয়েছে। আদ্রিয়ান ও বিচলিত হয়ে আছে। হঠাৎ করে জারবা এসে বললো,

— ভাইয়া বড় ভাবীর শরীর অসুস্থ। বড় ভাইয়া তো বাসায় নেই।

আদ্রিয়ান জারবার সাথে বেরিয়ে এলো। বাসায় যেহেতু মা নেই তাই ডক্টর বাসায় ডাকা হলো। এরমধ্যেই আরিয়ান এসে হাজির। হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো,

— সাবা কোথায়? ও নাকি জ্ঞান হারিয়েছে?

আদ্রিয়ান ওকে রিলাক্স হতে বলে বললো,

— ভাবী রুমে। ডক্টর এসেছে।

এর মধ্যে ডক্টর ইরিন বেরিয়ে বললেন,

— কনগ্রেকচুলেশনস মি.আরিয়ান। ইউ আর গোয়িং টু বি এ ফাদার এগেইন।

হকচকিয়ে গেল আরিয়ান। চোখে পানি চলে এলো। আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিলো। বাবা হওয়ার অনুভূতিই হয়তো এমন। পাচ বছর পর আবার বাবা হচ্ছে। আদ্রিয়ান হেসে উঠল। আরিয়ানকে ধরে বললো,

— কংগ্রেস ভাই। এবার আমার আরেকটা মা আসবে দেখিস।

ডক্টরকে বিদায় জানিয়ে রুমে ডুকলো আরিয়ান। দূর্বল সাবা বিছানায় শুয়ে। আরিয়ান ওর একহাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বসলো। কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— ধন্যবাদ জান। দ্বিতীয়বার বাবা বাবা সুখ এনে দেয়ার জন্য।

বলে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। সাবা তো কান্না করেই দিল। আরিয়ান সযত্নে তা মুছে দিলো।

__________

জারবা সবাইকে কল দিয়ে জানলো খুশির খবর। আদ্রিয়ানের বাবা, মা ছুটে বাসায় এলেন। সবাই অনেক আনন্দ করলো। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে দেখলো মিষ্টি কিছুটা কেপে কেপে উঠছে। তাড়াতাড়ি করে কাছে যেতেই কম্ফোডার দিয়ে ডেকে বুকে জড়িয়ে নিল। মেয়েটা তার প্রেরসীর একমাত্র চিহ্ন।
ঘুম এখন আসছে না। রোদের চিন্তা ঘিরে ধরছে। ওর মেডিসিন বাকি।

এদিকে রাদ এত আইসক্রিম আর চকলেট নিয়ে বাসায় ডুকলো। রুদ্র দৌড়ে এসে বললো,

— ভাইয়া!!!

— গেলি! এগুলো রোদের জন্য।

— একবাক্স দাও।

— একটাও না। কয়েকদিন আগে জ্বর কার ছিলো?

— আপু তো দরজা খুলছে না।

— আয় তো একটু আমার সাথে।

— ভয় পাচ্ছেন নাকি ভাইজান?

— এই তুই আমার সাথে মজা নিস। কতবড় তোর আমি? ১২ বছরের বড় আমি।

— চেঁতে যাও কেন? চল আমি যাই তোমার সাথে হাজার হোক এটা আমার দায়িত্ব তোমাকে সাহস দেয়া।

— হু হু চল।

রুদ্র হেসে কুটিকুটি। ওর ভাই নিজের অজান্তে স্বীকার করলো তার সাহস প্রয়োজন।

দুই ভাই মিলে ১০ মিনিট লাগিয়ে দরজা খুলালো। রোদ দরজা খুলেই আবারও কম্বল জড়িয়ে শুয়ে পরলো। রাদ রুদ্রকে ইশারা করলো। রুদ্র ঢং করে বললো,

— আপু তুমিতো রাগ করেছো ভাইকে বলো না আইসক্রিম গুলো আমাকে দিতে।

কথাটায় একটু গললো রোদ। আজ কতদিন ও আইসক্রিম খায় না। আদ্রিয়ান তো ছুতে ও দেয় না। মাথাটা বের করে বললো,

— আমার টা আমিই আমি। তুই সবাইকে আমার রুম থেকে যেতে বল।

রাদ বোনের অভিমান বুঝলো। এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। রোদ মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রাদ টেনে তুললো ওকে। রোদ কিছুই বললো না। রাদ পরিস্থিতি বুঝে কিছু বলার আগেই রুদ্র ঝাপ দিয়ে বিছানায় এলো। রোদের সাথে ঘেঁষে বসে বললো,

— ভাইসা ইউ ক্যান ডু ইট! ইউ ক্যান ডু ইট!

রাদ আর রোদ দুজনই হঠাৎ এমন হওয়ায় চমকে গেল। রাদ ধমকে বললো,

— ওই তুই চিল্লাছিস ক্যান? গরু কোথাকার।

— আল্লাহ! তুমি তো আমাকে ভারা করে আনলা তোমাকে সাহস দেয়ার জন্য।

রাদ একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। রোদ জোরে হেসে উঠল। রাদ একটু সস্তি পেল। কিছু বললো না শুধু রোদকে জড়িয়ে নিলো। জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— সরি আর ধমকাবো না। এতগুলো সরি সোনা।

— তুমি ওনার সাথে এমন ব্যবহার করলা কেন? কষ্ট পেয়েছেন না উনি?

— সরি বলে নিব আমি।

আমিও আমিও বলে রুদ্র ও ঝাপিয়ে জড়িয়ে ধরলো। ৩ ভাই বোন মিলে আইসক্রিম খেল। রোদ চকলেট কতগুলো মিষ্টির জন্য রেখে বাকি গুলো রুদ্র আর ও খেল। রোদ পুরো এক টাব আইসক্রিম খেল। একটু পর মা এসে তিন ভাই বোনকে বকে খেতে নিয়ে গেল।
খাবার টেবিলে আজ কতদিন পর সবাই একসাথে। রোদের মা খায়িয়ে দিলো রোদকে। দুলোকমা খেয়ে আর খেতে পারলো না রোদ। খাওয়া শেষই রোদ ঐ বাড়ি যাওয়ার কথা বললো। রোদ কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো

— এই একটুখানি মেয়ে লজ্জা করেনা সারাদিন জামাই জামাই করিস?কয়েকদিন থেকে পরে যাবি।

— ভাই মিষ্টির কথা চিন্তা করো। আমাকে ছাড়া থাকবে কি করে?

— আচ্ছা নে ফোন। কথা বল।

রাদ ওকে ফোন দিলেই রোদ আদ্রিয়ানকে কল দিল। আদ্রিয়ান সাথে সাথে রিসিভ করতেই রোদ বললো,

— কি করে মিষ্টি? আর আপনি? খেয়েছেন?

………….

— হ্যালো…হ্যালো… শুনছেন?

………….

__________

কলিং বেল বাজতেই রুদ্র দরজা খুললো। সামনের ব্যাক্তিকে দেখেই চমকে উঠলো। রোদের মা কে এসেছে বলে সামনে এগুতেই থেমে গেল। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। উনি তাড়াতাড়ি ওকে ভেতরে আনলেন। রোদের বাবা বেরিয়ে এলেন। আদ্রিয়ানকে দেখে যা বুঝার বুঝে গেলেন। রোদের মা মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলেন। ছোট পরীটা ঘুমিয়ে আছে। রাদ আদ্রিয়ানকে দেখে মাথা নিচু করে রাখলো।একটু পর এসে বললো,

— আমাকে মাফ করে দিন। তখন মাথা ঠিক ছিলো না। সরি।

আদ্রিয়ান ওর পিঠ চাপরে বললো,

–তুমি একজন দায়িত্বশীল ভাই রাদ। সরি বলার কিছু নেই।

— আপনি এতকিছু করছেন রোদের জন্য আর আমি কিনা।

— ইটস ওকে।

উপর থেকে রোদ চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,

— রুদ্র দেখ তো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না কেন?

বলে নামতেই আদ্রিয়ানকে দেখে চমকে গেল। মায়ের কোলে মিষ্টিকে দেখা আরো চমকালো। এগিয়ে এসে বললো,

— আপনি!

রোদের মা ওকে পাত্তা না দিয়ে বললো,

— সর আমার নাতনীটা ঘুমিয়ে আছে ওকে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে আসি।

রোদের বাবা এগিয়ে এসে বললো,

— আমি তো কোলেই নিলাম না। আমাকে দাও।

— ঘুমাচ্ছে ও। সকালে নিও।

সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরলো আদ্রিয়ানকে নিয়ে। রোদ এখনও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান রোদকে দেখে একটু শান্তি পেল। রাত অনেক হওয়ার সবাই যার যার রুমে ডুকে পরল।
মিষ্টি ঘুমিয়ে আছে। আদ্রিয়ান এখানেও মেডিসিন নিয়ে এসেছে। রোদ বিরক্তি মাখা চাহনি দিলে আদ্রিয়ান ইশারায় খেতে বললো। রোদ গোমরা মুখ করে খেয়ে নিলো। আদ্রিয়ান ওকে বসিয়ে বললো,

— একটা খুশির খবর আছে?

— কি?

— ভাবী প্রেগন্যান্ট।

— আল্লাহ সত্যি। আলহামদুল্লিলাহ।

— হুম। সবাই অনেক খুশি ।

রোদ উঠে এসে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজলো। আদ্রিয়ান ও জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মুখ গুজে দিল। রোদ ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান কিছু বললো না। কিছুক্ষন পর আদ্রিয়ান ওর কাঁধে মুখ ঘষতেই রোদ কেঁপে উঠল। সরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান চেপে ধরলো। রোদের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

— মিস ইউ পাখি.

রোদ ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে বললো,

— আমিও।

— ভালোবাসি.

— আ…

— আ কি? বল.

রোদ কিছু বললো না। ওকে বুকে চেপে ধরে বিছানায় শুয়িয়ে বুকে নিয়ে আরেকপাশে মিষ্টিকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

#চলবে…

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪১

সকালের সবার ঘুম পাখির কিচিরমিচির বা এলার্মের টুটটুট শব্দে ভাঙ্গে অথচ আজকে আদ্রিয়ানের ঘুম ভাঙল মানুষের হৈ চৈ এর শব্দে। দেড়ীতে ঘুমানোর কারণে এখনও ঘুম ঘুম লাগছে। আশেপাশে তাকাতেই মনে পরলো ও এখন নিজের শ্বশুর বাড়ি আছে। পাশেই মিষ্টি আর রোদ উল্টো পাল্টা হয়ে শুয়ে আছে। কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো আদ্রিয়ান। এখনও বুঝতে পারছে না এত চিল্লাচিল্লির কারণ। ঘড়িতে নয়টা বাজে। আস্তে করে রোদকে ডাক দিলো। রোদের কোন হেলদুল নেই। আদ্রিয়ান নিজের বোকামিতে নিজের উপর বিরক্ত হলো রোদ কি আর আস্তে ডাকলে উঠার মেয়ে। আবারও হালকা ঝাকিয়ে ডাক দিতেই মিষ্টি উঠে গেল তবুও রোদ ঘুম। একপ্রকার যুদ্ধ করতে হলো ওকে উঠাতে। রোদ চোখ খুলে বললো,

— এমন করেন কেন? ঘুমাচ্ছি না আমি।

— উঠো। দেখ তো বাহিরে এত হৈ চৈ কিসের।

রোদ লাফিয়ে উঠলো। ওর তো জাস্ট মনেই ছিলো না ও যে নিজের বাসায়। কাল মন খারাপ থাকলেও আজ ভালো কারণ আদ্রিয়ান আর মিষ্টি তো ওর কাছেই আছে। আদ্রিয়ান ওর মনোভাব বুঝতে পেরে বললো,

— আরে বাবা এটা তোমারই রুম। এখন ও উঠো।

— হু উঠছি তো।

মিষ্টি চারদিকে তাকিয়ে নিজের বাবার কোলে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,

— বাবাই আমরা কোথায়?

আদ্রিয়ান ওর গালে আদর করে বললো,

— এটা তোমার মাম্মার বাসা।

মিষ্টি কি বুঝলো আল্লাহ জানে খুশি হয়ে গেল। রোদ ওর গালে চুমু খেয়ে এলোমেলো ভাবেই হাতে উরনা নিয়ে দরজা খুলে দিল। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি ওকে ধরে টেনে রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দিল। হকচকিয়ে গেল রোদ। অবুঝ গলায় জিজ্ঞেস করল,

— আরে কী করছেন?

— ফ্রেশ হয়ে এরপর বাইরে যাও।

— এভাবে কি সমস্যা? দেখে আসি নিচে কি হয়েছে?

আদ্রিয়ান ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— বিবাহিত মেয়ে এভাবে রুম থেকে এলোমেলো হয়ে বের হলে সবাই কিন্তু স্বাভাবিক ভাববে কিন্তু লজ্জা তো তুমি পাবে বোকাপাখি। আর আমি কিন্তু এখনো এমন কিছু করিনি সো.. ইউ নো?

রোদ লজ্জায় মরিমরি হয়ে আদ্রিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মিনমিন করে বললো,

— অসভ্য লোক।

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বললো,

— এখনও তো এই উপাধি পাওয়ার কাজ করি নি।

রোদ অতিরিক্ত লজ্জায় মিষ্টিকে ব্যালকনিতে যেয়ে কোলে তুলে নিল। মিষ্টি এতক্ষণ ওর ব্যালকনিতে ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখছিলো। রোদ ওকে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিলো।রোদ বের হতেই আদ্রিয়ান ডুকে পরলো ফ্রেশ হতে। রোদ চুল বেধে মিষ্টিকে কোলে নিয়ে নিচে গেল।

_____________

আদ্রিয়ান সহ রোদ চরম পর্যায়ের অবাক। রোদের চাচার পুরো পরিবার হাজির সাথে মামাতো,খালাতো ভাই বোন সহ এলাকার অনেক ছোট বড় ভাই বোন হাজির। বড়রা নাকি আসবে একটু পর। মিষ্টিকে নিয়ে টানা হেচরা লেগে গেল। রাদ আর রুদ্র ওকে কাউকে দিবে না। এদিকে রোদের বাবা মি.রহমান ওকে কোলে নিয়ে আর নামাচ্ছেন ই না। রোদের মা ঘুরে ঘুরে এটা ওটা খাওয়াচ্ছেন। রুদ্র মুখ জোকারের মতো ভঙ্গি করে মিষ্টির সাথে কথা বলছে। রাদও এটা ওটা বলছে। মিষ্টি খিলখিল করে হাসছে আর এটা ওটা বলছে। আদ্রিয়ান হতবাক হয়ে গেল এতোটা আদর করে তারা মিষ্টিকে। মিষ্টি নানা নানুর আদর তেমন পায় নি। তারা দেশে থাকে না। পুরো ফ্যামিলি এবরোড থাকে আজ ২ বছর।শুধু সাবা এখানে আছে। হঠাৎ ওর টনক নড়লো রোদের চিল্লানিতে।
রোদ বারবার ওর মেয়েকে ফিরত চাচ্ছে। আর ওর মাকে বলছে যাতে এটা না খাওয়ায় ওটা না খাওয়ায়। আদ্রিয়ান রোদের উপর এসব নিয়ে অবাক হয়। রোদ কখনো নিজের খাবারের যত্ন করে না অথচ মিষ্টিকে নিয়ে প্রচন্ড কনসার্ন।
একদল ছোট বড় ছেলে মেয়ে এসে হাজির। এরা রোদের ভাই বোন। সবাই নিজেদের পরিচয় দিলো। একটা মেয়ে আল্লাহ মালুম ৩ বছর হয়েছে কি না তবে গোলুমোলু সে ও এসে আদো আদো কন্ঠে ডাকছে,

— দুতাভাই! দুতাভাই

আদ্রিয়ান ভিষণ লজ্জা পেল। ওর নিজের মেয়েও এর চেয়ে বড়। আর এতটুকু বাচ্চা কি ওকে দুলাভাই ডাকে। পরপর খেয়াল করলো ৫,৭,১০ বছরের শালাশালী আছে ওর। সবাই কি খুশি। আবার একটু বড় ও আছে। যারা রোদের বড় তারাও অনেক কথা বললো। চাচাতো বোন তিশা বললো,

— দুলাভাই আজ আপনাকে এতদিন পাই নাই। পকেট আজ খালি করেই ছাড়বো।

আদ্রিয়ান হেসে উঠল। বললো,

— পকেট তো ভরে আনি নি। আগে বললে ভরে আনতাম।

— ওতো কিছু জানি না। আজ আপনাকে ছাড়বো না। শালা শালীদের সন্তুষ্ট করতে হবে।

এরমধ্যেই রোদের মা এসে সবাইকে সরিয়ে আদ্রিয়ানকে নিয়ে টেবিলে আসতে বললো। ছোট্ট শালী রুহা আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,

— দুতাভাই তলুন।

আদ্রিয়ান হেসে ওর গাল টিপে কোলে তুলে নিল। এরপর সবাই খাবার টেবিলে বসলো। রোদের মা,চাচি, চাচাতো, মামাতো বড় বোনরা টেবিল সাজিয়ে ফেলছে। আদ্রিয়ান রোদর কথা জিজ্ঞেস করতেই রোদ পাশে এসে দাড়ালো। আদ্রিয়ান ওকেও বসিয়ে দিলো। একে একে রাদ, রুদ্র সহ সব কাজিনরা বসে পড়লো। কয়েকজন দাড়িয়ে রইলো আদ্রিয়ানের পাশে। বড়রা আগেই খেয়েছেন।

আদ্রিয়ান হা হয়ে তাকিয়ে আছে টেবিলের দিকে। এতবড় টেবিল ভরা নানা রকমের পিঠা,হরেক পদের খাবার, পরটা, ব্রেড স্যান্ডইউচ, ওমলেট,নুডুলস, খিচুড়ি, গরুর মাংস সহ নানা পদের ভর্তা, ফলের একটা গোল থালা সাজানো সহ আরো কত কি।আদ্রিয়ান বুঝল পুরন ঢাকায় শশুর বাড়ী মানেই হলো বাহারি রকমের খাবার আর একগাদা শালাশালী।

খেতে বসে ঘটলো বিপত্তি। ওরা আদ্রিয়ানের হাত ধোঁয়াবে। এটা নাকি নিয়ম যা ওরা বিয়ের দিন পালন করতে পারে নি। অবশেষে রুদ্র সহ তিনজন শালা মিলে হাত ধোঁয়ালো কিন্তু তারা এখানে ক্ষ্যান্ত হলো না হাত ধোঁয়ার বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করলো। আদ্রিয়ান এমন নিয়ম জানে তাই রোদকে বললো যাতে ওয়ালেট রুম থেকে নিয়ে আসে। রোদ আনতেই আদ্রিয়ান ৫ হাজার টাকা ওদের হাতে দিলো। বিনিময়ে সে কি খাতির যত্ন করে খাওয়ালো। পারে না মুখে তুলে দেয় তাও না পারলে চিবিয়ে দিতো ওরা। হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে ছাড়লো। এরমধ্যে রোদের মা চাচি এটা ওটা এনে দিলো।আদ্রিয়ান আর খেতে পারছে না। রোদের দিকে তাকাতেই রোদ শয়তানি হাসি উপহার দিলো। এর মানে বেশি করে খান!

___________

সোফায় বসে একটু রেস্ট নিচ্ছে আদ্রিয়ান। সবাই বিভিন্ন কথা বলছে। রোদের বাবা মা না করলেও শালাশালীর আবদার জামাই বাজার করতে হবে। একেতো এতো খাবার খেয়ে ক্লান্ত আদ্রিয়ান এরমধ্যেই নাকি বাজারে যেতে হবে। আদ্রিয়ান ঠিক আছে বলে উঠে রোদের রুমে গেল। রোদ ও হাতে কফি নিয়ে রুমে ডুকে পরল। রোদ ডুকতেই আদ্রিয়ান দরজা লাগিয়ে দিল। কফি নিয়ে সাইডে রেখে রোদের কোমর চেপে ধরলো। রোদ একটু ব্যাথা পেয়ে মুখ কুচকালেই আদ্রিয়ান সরি বলে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে দিল। রোদ শক্ত হয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ চিনচিন ব্যাথায় “আহ” করতেই আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে বাইট করা জায়গায় গভীর ভাবে ঠোঁট ছুয়ে দিল। রোদ সরে গিয়ে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বললো,

— রাক্ষস হয়ে গেলেন নাকি?

— তা তো হলাম ই।

বলেই কাছে টেনে কোলে বসিয়ে বেডে হেলান দিলো। ফিসফিস করে বললো,

— বাবার বাড়ি এসে সাহস বেড়ে গেল নাকি হুম? ঠিক মতো খেলে না কেন? পিটিয়ে সোজা করে দিব যদি শরীর খারাপ হয় তো।

রোদ মুখ কালো করে বললো,

— বকেন কেন? গলা ব্যাথা করায় খেতে পারিনি।

— নিশ্চিত এ বাড়ি এসে ঠান্ডা কিছু খেয়েছো।

রোদ একটু চিন্তা করে বললো,

— কাল রাতে ভাইয়া আইসক্রিম এনেছিলো তাই খেয়েছি।

— কতটুকু?

— দুই টাব।

আদ্রিয়ান বিস্মিত হয়ে বললো,

— সিরিয়াসলি তুমি মেডিক্যাল স্টুডেন্ট?

— সন্দেহ আছে আপনার।

— একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট কিভবে দুই টাব আইসক্রিম খায়?

………

— এখন কথা বলো না কেন? দেখ রোদ নেক্সট এমন কিছু হলে তোমাকে যে কি করব তার জন্য তুমিই দায়ী থাকবে।

রোদ কিছু বললো না। মাথা নিচু করে উঠে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে বসিয়ে নাকে নাক ঘষে বললো,

— একটু কিছু বলা যায় না ওমনি মুখ বাংলার পাঁচ করে রাখ।

……….

— এই রোদ?

……….

— এই বউ কথা বলো?

বলেই রোদের দুগালে চুমু খেল। রোদ আদ্রিনের কাঁধে মুখ গুজে বললো,

— কি বলবো?কথা নাই আপনার সাথে। শুধু বকেন।

— তাই তাহলে তো একটু ভালোবাসতে হয়।

রোদ চট করে উঠে দাড়িয়ে বারান্দায় চলে গেল। আদ্রিয়ান হু হা করে হেসে কফি হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। রোদের পাশে দাড়িয়ে দুজনেই চুপচাপ কফি শেষ করলো। এরমধ্যেই দরজায় নক হতে রোদ যেয়ে দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেল।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪১(বর্ধিতাংশ)

দরজার অপরপাশে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের সব ফ্রেন্ডরা। রিশান,রিয়াদ,অয়ন প্রান্ত, প্রণয় সহ বাকি সবাই। টোটাল ৬/৭ জন হবে। রোদ মিষ্টি করে হেসে সালাম দিল। ওরা উত্তর দিয়ে রুমে ডুকে বললো,

— নতুন জামাই কই?

আদ্রিয়ান রুমে ডুকে ওদের দেখা মাত্র চমকে গেল। এগিয়ে এসে বললো,

— তোরা এখানে?

— ক্যান রে শালা তুই একাই তোর শশুর বাড়ী রসের হাড়ি সাবার করবি নাকি? আমারও একটু খাই।

আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,

— খা না কে না করেছে? কিন্তু হুট করে কোথা থেকে ল্যান্ড করলি আমার শশুর বাড়ী?

অয়ন বেডে আয়েস করে বসে বললো,

— তুই তো বাটপার তাই আমাদের বলিস নি। রাদ কল দিলো আমারা এসে পরলাম।

রোদ ঝটপট করে বললো,

— চলুন ভাইয়া আপনারা ব্রেকফাস্ট করবেন।

ওরা সবাই খেয়ে এসেছে তাই রোদ শুধু কফি নিয়ে এলো সবার জন্য। একটুপর আদ্রিয়ান ওদের নিয়েই বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বের হয়ে নিজের জুতা খুজতেই বিপত্তি ঘটলো। জুতা কই? রোদ এদিক ওদিক খুজলো ফলাফল শূন্য। একটু পরই বানরের দল মানে ওর শালাশালী হাজির হলো।সবার চোখে মুখে চোরা হাসি। আদ্রিয়ান সহ ওর বন্ধুদের বুঝতে বাকি নেই যে জুতা কোথায়। তবুও অয়ন বললো,

— আদ্রিয়ান তুই খালিপায়ে চল নাহয় আমারটা পর। বাইরে যেয়ে কিনে নেব।

সবাই মুখ কালো করে ফেললো। এরমধ্যেই ছোট্ট রুহা বললো,

— দুতাভাই দুতা নিবেন না? তাকা দিন জুতা নিন।

সবাই হু হা করে হেসে উঠল। রিশান আদ্রিয়ানের পিঠ চাপরে বললো,

— ভাইরে ভাই কি কপাল আমার বন্ধুর। এতছোট্ট আবার শালী হয় নি রে?

আবার একরোল হাসির আওয়াজ শুনা গেল। রোদ বিরক্ত হয়ে বললো,

— ওই জুতা বের কর। কোন টাকা না।

রুদ্র ত্যারামি করে বললো,

— তুমি চুপ কর। শালাশালীদের মাঝে বউয়ের কি কাজ? যাও।

রোদ তেঁড়ে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ওকে আটকে আবার ৫ হাজার টাকা দিলো ফলসরুপ ১ টা জুতা পেল। আরেকটা চাইতেই তিশা বললো,

— পার পিস ৫ হাজার টাকা।

আদ্রিয়ান বললো,

— জুতাই তো ৪ হাজার টাকা। আর পুরানো জুতা কি না কিনবো ১০ হাজার টাকা দিয়ে।

প্রান্ত বললো,

— আল্লাহ বাচাইসে এই বাড়ি বিয়ে হয় নি আমার নইলে ফকির হয়ে বাড়ি ফিরতে হতো।

এরমধ্যেই রোদ টেনেটুনে জুতা কেড়ে নিলো। সবাই হা হয়ে গেল। আদ্রিয়ান ওদের মন খারাপ বুঝে আরো ২ হাজার টাকা দিলো কিন্তু এতে ঘটলো বিপত্তি। রোদ আদ্রিয়ানের ওপর রেগে বম।কেন দিলো টাকা? রোদ যে যুদ্ধ জয় করে জুতা বিজয় করলো তার কি দাম নেই? কি আর করার আদ্রিয়ান ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বের হলো। এদিকে আদ্রিয়ানের বন্ধুরা ওর লেগ পুল করতে করতে জান খেয়ে ফেলছে।

________________

দুপুর ১২ টায় ক্লান্ত আদ্রিয়ান সহ ওর বন্ধুরা বাসায় ফিরলো। পুরো এলাকাকে তাক লাগিয়ে ১০ ভ্যান বাজার সহ বড় খাসি হাটিয়ে এনেছে আদ্রিয়ান। গরুর আর খাসির গোসত সহ ৩ ডর্জন মুরগি। এছাড়াও দুই ভ্যান ফল সহ কাচা বাজার সহ বড় বড় মাছ এনেছে। এক মুন মিষ্টি সহ দই এনেছে ২০ হাড়ি। আশে পাশের সবাই উকি ঝুঁকি দিচ্ছে। কেউ কেউ বের হয়ে বলাবলি করছে খান বাড়ির ছোট জামাই বাজার এনেছে। যদিও রোদের চাচাতো দুই বোনের বিয়ে হয়নি।ইতিমধ্যেই রান্নার তোরজোর চলছে। জামাই বাজার রাতে রান্না হবে। ওসব বাবুর্চিরা রান্না করবে। আদ্রিয়ানরা ডুকতেই মামি,চাচি,খালা সহ বাকি সবাই আরেকদফা হালকা নাস্তা দিলো। শরবত খেয়ে আর কিছু খেতে পারলো না আদ্রিয়ান। সবাই ওদের জোর করে খাওয়াচ্ছে। প্রণয় অস্থির হয়ে বললো,

— ভাই এটা হালকা নাস্তা হলে ভারী নাস্তা কি?

আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

— কেন এখন খা বেশী করে রসের হাড়ি।

এরমধ্যই রুদ্রকে ডেকে আদ্রিয়ান রোদ আর মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করতেই রোদ উপর থেকে বললো,

— ফ্রেশ হবেন না আপনারা। উপরে আসুন।

সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। আদ্রিয়ান রোদের মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করল রোদ কিছু খেয়েছে কি না। উনি আল্ত হেসে বললেন,

— ও কে আমি হাজার চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারি না। তোমার ভয়ে তো তাও খায়।

আদ্রিয়ান ওনাকে সাইড হতে জড়িয়ে ধরে বললো,

— আমি ওর খেয়াল রাখব মা। আপনি আমাকে প্লেটে কিছু ফ্রুটস দিন।

উনি দিতেই মুচকি হেসে আদ্রিয়ান উপরে গেল। রোদের মায়ের চোখটা টলমলে হয়ে উঠলো। মেয়েকে ছাড়া কিভাবে থাকেন তা কেবল উনিই জানেন কিন্তু কি বা করার? তবুও আলহামদুল্লিলাহ আদ্রিয়ানের মতো মেয়ের জামাই পাওয়া আজকের দিনে কঠিন যে কিনা খাওয়া থেকে শুরু করে সব দিকের খেয়াল রাখে। কত না করলো এসব জামাই বাজার না করতে তবুও ছেলেটা পাগল সব পূরন করছে। তার মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছে তাও কি তার অগচরে যাতে করে রোদ কষ্ট না পায়।

_____________

আদ্রিয়ানের সব ফ্রেন্ডরা একটা রুমে আপাতত রেস্ট নিচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদের রুমে ডুকে দেখলো রোদ মিষ্টিকে গোসল করিয়ে বের করে চুল ড্রাই করছে। আদ্রিয়ান পাশে দাড়িয়ে বললো,

— মিষ্টির ড্রেস পেলে কোথায়?

— ভাইয়া এনেছে। আপনারটাও এনেছে।

— আমি বাসা থেকেই আনিয়ে নিতাম। কি দরকার ছিল?

— এটা নিয়ম শশুর বাড়ী শাশুড়ের টাকার ড্রেস পরতে হয় প্রথম দিন,চাচি বললো।

— আল্লাহ জানে আরো কতশত নিয়ম আবিষ্কার করবো এখানে।

— আপনি না করলেই হয়। শুধু শুধু কেন করছেন?

— মানে?

রোদ কিছু না বলে মিষ্টির চুল বেধে লোশন লাগিয়ে পরিপাটি করতেই রাদ বাইরে থেকে বললো,

— রোদ আসবো?

— তুমি কবে থেকে পারমিশন নাও?

— তুই বুঝবি না। মিষ্টিকে দে।

রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,

— একটু ও না। যাও দিব না। আমার মেয়েকে নিয়ে এতো টানাটানি কেন হ্যাঁ?

রাদের মনটা কেমন করে উঠলো। ছোট্ট বোনটা কেমন করে বললো ওর মেয়ে। কেউ কি এত অল্প সময়ে কাউকে এতো আপন করে নিতে পারে? রক্তের না হলেও কিছু সম্পর্ক আত্মার হয়। যা রোদ আর মিষ্টির সাথে রোদের পুরো পরিবারের।
রাদ এগিয়ে এসে বললো,

— আমার ভাগ্নি হয়। দে তুই। আম্মু পাগল হয়ে গিয়েছে ওকে খুজতে খুজতে। তুই বলে আনবি না।

বলে হাত বাড়ালেই মিষ্টি রাদের কোলে উঠে গেল। রোদ চোখ ছোট ছোট করে মিষ্টির দিকে তাকালো। রাদ মিষ্টিকে বললো,

— এই তো আমার ভাগ্নি পুরো মামার পক্ষে। চলো মা নিচে যাই।

বলে রাদ চলে গেল। আদ্রিয়ান দরজা লাগিয়ে রুমে এলো। রোদ নিজের ড্রেস বের করছিল সাওয়ার নিবে বলে। আদ্রিয়ান পেছন থেকে বললো,

— রোদ?

……..

উত্তর না পেয়ে রোদকে নিজের দিকে ঘুরালো আদ্রিয়ান। গালে হালকা ছুয়ে দিয়ে বললো,

— মন খারাপ কেন?

— কই না তো।

— মিথ্যা বলতে না করিনি?

একটু রেগে বললো আদ্রিয়ান। রোদ চুপচাপ এসে আদ্রিয়ানের বুকে মাথা রাখলো। আদ্রিয়ান যেন বুকে হালকা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করল। রোদের মাথায় একহাত রেখে অন্য হাত দিয়ে ওর পিঠে রেখে নরম গলায় বললো,

— কি হয়েছে সোনা?

ফুপিয়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে কেঁদে দিয়ে বললো,

— ওরা কেন বলে আমি সৎ? আমি মিষ্টির মা না? বলুন। যদি মিষ্টি শুনত কি মনে করত? কেন বললো আমি ওর মা না? কি করলে ওর মা হবো? কি করব আমি?

নিমিষেই আদ্রিয়ানের চোখ জ্বলে উঠলো যেন পানি পরবে মাত্রই। রোদকে বুকে চেপে ধরলো টাইট করে। কি বলবে রোদকে? তবুও জড়ানো গলায় বললো,

— কান্না করছো কেন রোদ? আজ যদি কেউ বলে তোমার মা তোমার মা না তাহলে কি তুমি তার কথায় কষ্ট পাবে? বলো? পাবে না। কারন তুমি জানো সেই তোমার মা আর এটাই সত্যি তাহলে আজ যখন বাইরের কেউ মিষ্টিকে নিয়ে বলছে তাহলে কেন কান্না করছো? তাহলে কি তুমিও বিশ্বাস করো তুমি ওর মা না?

চুপ হয়ে গেল রোদ। শুধু হালকা ফুঁপানোর আওয়াজ পেল আদ্রিয়ান। বুক থেকে তুলে চোখ মুছিয়ে চুমু খেল চোখে। আদ্রিয়ান জানতো এমন সময় আসবে। না জানি কবে রোদের সমস্যার কথাও জানতে পারে। তাই বাসয় ফিরতে হবে তারাতাড়ি। রোদকে ফুপাতে দেখে আদ্রিয়ান বললো,

— কি বউ? বাপের বাড়ি ভালোলাগছে না বুঝি? শশুর বাড়ী যাবে?

রোদ ফুপানো বাদ দিয়ে ফুসে উঠলো। তা দেখে আদ্রিয়ান হেসে উঠল। রোদকে বেডে বসিয়ে ওর সামনে হাটু গেরে বসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। রোদ কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান বললো,

— কে বলেছে তোমাকে এমন কথা?

— বাদ দিন। আমি ভুল গিয়েছি।

— বলতে বলেছি?

— পাশের বাসার আন্টি।

— আর কিছু বলেছে?

— বলেছে আমার বড় নাকি বুড়া।

আদ্রিয়ান উঠে সোজা কোলে তুলে নিল রোদকে। রোদ ভরকে যেয়ে বললো,

— কি করছেন?

— আদর।

বলে ওয়াসরুমে ডুকে পরলো। সাওয়ার অন করতেই দুজন ভিজে চুপচুপা হয়ে গেল। রোদ ছটফট করতেই আদ্রিয়ান কোল থেকে নামিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে ভিজতে লাগলো। এদিকে লজ্জায় রোদ মুখ তুলতে না পেরে আদ্রিয়ানের বাহুতে মুখ লুকিয়ে রাখলো। আদ্রিয়ান মুহূর্তের মধ্যেই নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালো। রোদের মুখ উঠিয়ে দুহাতে ধরলো। ভালোবাসার বর্ষণ ঘটালো সারা মুখে। কেঁপে উঠল রোদ। একদম চুপ হয়ে গেল। আদ্রিয়ান ওকে আবারও জড়িয়ে ধরে বললো,

— আমি জুয়ান হতে গেল তুমি তো পুরো কেঁপে কেঁপে শেষ হয়ে যাবে বউ।

রোদ ছিটকে সরে গেল। আদ্রিয়ান সাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো। রোদ লজ্জায় পেছনে ফিরে নি।ঠাই দাড়িয়ে ছিলো উল্টো করে। রোদ বের হলো কিছুক্ষন পর।

______________

দুপুরে একচোট খাওয়া শেষ করলো সবাই। রোদ খেতে বসলেই আদ্রিয়ান জোর করে এটা ওটা খাওয়ালো। তা দেখে মুগ্ধ হলো বাড়ীর প্রতিটি সদস্য। রোদ খাওয়া শেষে মিষ্টিকে খুজতে লাগলো। না পেয়ে মা কে জিজ্ঞেস করতেই জানলো রুদ্রর কাছে। অবশেষে খুজে পেল সোফার পেছনে। দুজন বসে চকলেট খাচ্ছে। রুদ্র নিজের জমানো চকলেট মিষ্টিকে খাওয়াচ্ছে। মিষ্টির মুখ চকোলেটে লেপ্টে আছে। রোদের মাথা গেল গরম হয়ে। রুদ্রর পিঠে ধুম করে দিলো এক কিল। রুদ্র ভয়ে দিল ভো দৌড়। রোদ পিছন থেকে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,

— আলুর দম তোকে একবার পাই আমি দেখিস কি করি। কি করলি ওকে দেখতো।

রোদের চিল্লানিতে এগিয়ে এলো আদ্রিয়ান সহ কয়েকজন। মিষ্টিকে দেখেই হেসে উঠল। কোলে তুলতেই দিশা এসে ভেজা টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল। রোদ ওকে কোলে তুলতেই ওর মা বললো,

— আমার কাছে দে।

রোদ কিছু না বলে মার কোলে দিলো। ১০ মিনিট পর রুদ্র আবার ওকে নিয়ে খেলতে লাগলো।রোদ কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ইশারায় না করলো।
বিকেল দিকে সবাই অনেক মজা করলো। একসাথে ভালোসময় কাটালো।

রাতে আদ্রিয়ানদের বাড়ীর সকলে আসলো। মি.রহমান নিজে যেয়ে দাওয়াত করে এসেছেন।

#চলবে…..