ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৩+৪

0
197

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#লেখিকাঃসাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩

আদ্রিয়ানের সাথে আরও কিছু কথা হলো।আর এটা ও জানতে পারলাম যে উনি একজন ইন্জিনিয়ার প্লাস রিসার্চার। নিজের পারসোনাল ল্যাব ও আছে। কিছুক্ষণ পরই মাগরিবের আজান দিবে তাই আমি যাওয়ার জন্য বললাম। আদ্রিয়ান ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। উনি আমার কোল থেকে মিষ্টিকে নিল। আমাকে বাসায় ড্রপ করে দেওয়ার কথা বললে আমি না করে দেই। উনি গম্ভীর হয়ে আবার ও বললেন। এইবার না করার আগেই ওনার ধমকে কেপে উঠলাম। মিষ্টি ও কিছুটা ঘুমের মধ্যে কেপে উঠলো।আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠলাম। গাড়ি ছেড়ে দিল আপন গতিতে।

………….……………………

মেডিকেলে আজ একটা ক্লাস হবে না। প্রচুর বিরক্ত হয়ে বসে আছি কারণ আমার বাচাল বান্ধবী প্রায় ১ঘন্টা ধরে প্যাঁচ প্যাঁচ করছে।কারণ উনি আজ মেডিকেলের এক স্যারের উপর ক্রাস নামক বাঁশ খেয়েছে। তাই তাকে ইমপ্রেস করার ধান্দায় আছে।তরীর উপর রাগ করে এবার আমি ব্যাগ নিয়ে সামনে এগুতে লাগলাম। বের হতেই ছোট পরীটা দৌড়ে আমার কাছে এলো, আমিও বুকে জড়িয়ে কোলে তুলে নিলাম। আজ ৫ দিন পর মিষ্টিকে দেখলাম। এই কয়েকদিন পড়ার চাপ ছিল তাই সময় হয় নি কিন্তু ভিডিও কলে বসে থেকে খাবার খাওয়াতে হতো।মিষ্টির কথায় ধ্যান ভাঙলো। সামনে গাড়িতে হেলান দিয়ে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সাথে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে।

……..….………………….

রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমি, মিষ্টি, আদ্রিয়ান আর তার বোন জারবা।মেয়েটা অনেক মিশুক। ও নাকি আমার সাথে দেখা করতেই এসেছে।
মিষ্টি কে আমি খাইয়ে দিচ্ছি আর তা মুগ্ধ নয়নে দেখছে আদ্রিয়ান আর জারবা। খাওয়ার মাঝে আমরা টুকটাক কথা বলছিলাম তখন ওয়েটার জিগাসা করল কিছু লাগবে কি না। ওরা না বললেও আমি বললাম মিল্কসেক দিতে উইথ লেস চকলেট।

কিছুক্ষণ পর ওয়েটার দিয়ে গেলে আমি স্ট্র টা মিষ্টির মুখের সামনে নিতেই ও প্যাচার মতো মুখ করে বসে আছে। এক কথা দুধ ওর অপছন্দের। আমিও কম কিসের ইনিয়েবিনিয়ে সবটুকু ওকে খাইয়ে বিশ্বজয়ের হাসি দিলাম।তারপর হাত দিয়েই ওর মুখ মুছে দিলাম।
এতক্ষণ হা হয়ে দেখছিল আদ্রিয়ান আর জারবা।যে মেয়ে দুধ খাবে না বলে কান্না করতে করতে জান দিয়ে দেয় সে কিনা ভদ্রমতো সবটুকু খেল। আর এটা একমাত্র রোদ ই পারবে যা আদ্রিয়ান বুঝেগেছে।

………………………

২ দিন পর,
রাত ১ঃ৪৫,
এতোরাতে ফোনের আওয়াজে চমকে গেলাম। স্ক্রিনে আদ্রিয়ান ভাইয়ার নাম দেখে বাকি টুকু ও চমকে গেলাম।মিষ্টির প্রচুর জ্বর আর বারবার মাম্মা বলে ডাকছে।আদ্রিয়ান না পেরে ফোন দিয়েছে। ভিডিও কলে মিষ্টির শুকনো মুখটা দেখেই বুকে মোচড় দিয়ে উঠল।চোখে একরাশ জ্বল।

………………………………………….

আদ্রিয়ান এতোক্ষণ মিষ্টিকে বুকে নিয়ে বসে ছিল। দরজার কাছে তাকাতেই শকট। দরজায় হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসছে রোদ। পরনে বোরকা, হিজাবের টাইম পায়নি তাই মাথায় ওরনা, হাতে ফোন।দৌড়ে এসে ছলছল চোখে মিষ্টকে দেখছে।আদ্রিয়ান তো পুরাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

তুমি এখানে এতো রাতে কি করছো????

………

কি হলো বল? আর বাসা কিভাবে চিনলা??
…………
কথা বলছো না কেন??? ( ধমকে বললো)

আমি এবার ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম।।।

আদ্রিয়ান কিছুটা শান্ত হয়ে দেখতে লাগলো রোদের চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে, গোলাপি ঠোঁট জোড়া কাঁপছে, কেমন মায়াবী লাগছে। টুপটুপ করে চোখ দিয়ে পানি পরছে।
আদ্রিয়ানের এবার খারাপ লাগলো।কিছু বলতে যাবে ওমনি জারবা এলো আর বললো,
আরে ভাবী, এরপর জ্বীব কেটে আই মিন আপি কাদছো কেন?? মিষ্টি তো তোমার সামনেই আছে।
আমি নিচু স্বরে বললাম,

আমি একটু মিষ্টির কাছে যাই?

(আদ্রিয়ানের অনেক খারাপ লাগলো রোদের জন্য। যে কিনা তার মেয়েকে এতো ভালোবাসে সে এখন তার ভয়ে ওর কাছে যাওয়ার অনুমতি চাইছে…)

জারবা বলে উঠলো,
তুমি মিষ্টর কাছে যাবা এতে অনুমতির কি আছে??

রোদ আর চোখে আদ্রিয়ানের দিকে একপলক তাকালো তারপর বিছানায় শুয়ে থাকা মিষ্টিকে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।মিষ্টি ঘুমের মধ্যে ই মাম্মা বলে ডাকে রোদের কোলে মুখ গুজলো।

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে দেখছিল। জ্বরের মধ্যে ও মিষ্টি রোদ কে চিনে ফেলে। জারবা বললো জানো ভাইয়া ভাবি আই মিন আপি আমাকে ফোন দিয়ে সে কি কান্না। পরে আমি বাসার এড্রেস দেই। এতো রাতে আসবে আমি ভাবতে পারি নি।

এতো রাতে কি ভাবে এলো একা?

একা না তো।ওনার ফ্রেন্ডের সাথে এসেছে উনি নিচে আছে।

কোন ফ্রেন্ড? মেয়ে??

না ছেলে।

ছেলে শুনে আদ্রিয়ানের ভ্রু কুচকে এলো।রোদ কেন এতো রাতে একটা ছেলের সঙ্গে বের হব? আদ্রিয়ানের রাগ হলো।কিন্তু কিছু বললো না।

#চলবে…….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪

রোদের কোলে মিষ্টি ঘুমাচ্ছে।জ্বর কমে তো নি বরং বেরেছে।এজন্য রোদ ও একটু পরপর কান্না করছে।
রোদ জ্বল পট্টি দিচ্ছে।
আদ্রিয়ান রোদের ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে নিচে গেছে। ছেলেটা সুন্দর, বয়স রোদের থেকে ২/৩ বেশি হবে। নাম ইয়াজ। সেও মেডিকেলের স্টুডেন্ট। রোদ আর ও খুব ভালো বন্ধু। আদ্রিয়ান জানতে পারল রাতে রোদ ইয়াজকে কল দিয়ে কান্না করে আর বলে মিষ্টকে দেখতে যাবে।রোদ জানালা দিয়ে নিচে নেমে ইয়াজের বাইক দিয়ে এখানে এসেছে।

সব শুনে আদ্রিয়ান চরম অবাক। এই মেয়ে এতো রাতে পালিয়ে মিষ্টিকে দেখতে এসেছে। আদ্রিয়ান ইয়াজকে বলে বাসায় চলে যেতে ও রোদকে দিয়ে আসবে।কিন্তু ইয়াজ না করে দেয়, ও রোদ কে নিয়ে ই যাবে।আদ্রিয়ানের এবার প্রচন্ড রাগ হয়।ধুপধাপ পা ফেলে উপরে চলে যায়।

আদ্রিয়ান উপরে গেলেই রোদ ব্যাস্ত হয়ে যায়। ব্যাস্ত হয়ে বলে,
ভাইয়া মিষ্টির জ্বর তো বেরে যাচ্ছে।বলেই কেদে দেয়।
আদ্রিয়ান ও ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি মিষ্টির কাছে যেয়ে কপালে হাত দেয়।জ্বর বেরেছে।
রোদ কান্না মাখা কন্ঠে বলে,
ভাইয়া ওকে সাওয়ার নেওয়ালে হয়তো জ্বর কমতো।

আদ্রিয়ান ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। বেচারা ভয় পেয়ে গেছে। মেয়ে ছাড়া ও বাচবে না।

রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলে নিয়ে সামনে এগুতেই পারে যেতে নেয়। মিষ্টি পুরো শরীরের ভর ছেরে দিয়েছে তাই সামলাতে পারে না।পোরে যাওয়ার আগেই এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত ওর কোমর চেপে ধরে। রোদ ভরকে এদিক ওদিক তাকায়।এরপর সোজা হয়ে দাড়ায়।আদ্রিয়ান ও ছেড়ে দেয়।

রোদ মিষ্টি কে গোসল করিয়ে ভালোমতো মাথা মুছিয়ে রুমে ফিরে আসে। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে কোলে নিয়ে বিছানায় সুয়িয়ে দেয়। রোদ নিজে ও একটু ভিজে গেছে,আসলে বেশি ই ভিজে গেছে। আদ্রিয়ান খেয়াল করলে ওকে বোরকা খুলে ফেলতে বলে।প্রথমে ইতস্তত করলেও আদ্রিয়ানের ধমকে খুলে ওরনাটা ভালোভাবে জরিয়ে নেয়। বেচারি একটা ঢোলা টিশার্ট আর প্লাজু পরা।

একটু পরই ইয়াজ ডাক্তার নিয়ে রুমে আসে।ডাক্তার মিষ্টিকে চেক করে আর বলে এখন ঠিক আছে।গোসল করানোর জন্য রোদের প্রসংশা করে।এরপর মিষ্টি কে চেক করতে থাকে। আদ্রিয়ান রোদের দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। রোদের হঠাত করে ঐ দিকে চোখ যাওয়াতে আতকে উঠে। আদ্রিয়ান ইশারায় ওকে কিছু বলে কিন্তু রোদ তার কিছু ই বুঝতে পারে নি। এবার যেন আদ্রিয়ান রোদ কে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।ডাক্তার কিছু মেডিসিন দিয়ে চলে যায়।ইয়াজ ও রোদ কে নিচে আছি বলে চলে যায়।

সবাই রুম থেকে বের হলেই আদ্রিয়ান হেচকা টান দিয়ে রোদকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে ধরে। বাহুতে জোরে চাপ দিয়ে ধরাতে রোদ ব্যাথায় কুকরে উঠে। চোখ দিয়ে পানি পরা শুরু করে। আদ্রিয়ান দাতে দাত চেপে বলে,
তখন ওদের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন? নিজের রুপ দেখাতে চাস?আমি যে ইশারায় বললাম তাও কেন সরলি না??? বল???
রোদ ভয় আর ব্যাথায় কিছু বলতে পারছে না। হিচকি তুলে কাঁদছে।কাঁপা কাপ গলায় বলে,
আমমি,, বুঝতে পাররিননি।।
আদ্রিয়ানের হঠাৎ হুশ আসে যে ও কি করেছে। রোদ কে ছেড়ে দেয়। যেই না কিছু বলতে যাবে ওমনি রোদ দৌড়ে রুম থেকে রের হয়ে যায়।আদ্রিয়ান ডাকলেও সারা দেয় না।।।।।

…………………….
জারবা ইয়াজ আর নিজের জন্য কফি করে বসে বসে দুই জন কথা বলছিল।হঠাৎ রোদকে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে আসকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।কেও কিছু বলার আগেই রোদ বলে,
ইয়াজ বাসায় চল।মিষ্টি ঠিক আছে এখন।
কাউকে কিছু বলতে না দিয়েই হনহন করে বের হয়ে যায়।

………………………

আদ্রিয়ান রোদের পেছনে আসতে চায় কিন্তু জড়তার কারনে তা হয়ে উঠে না।বারান্দা দিয়ে ইয়াজের পিছনে বাইকে করে যাওয়ার পানে চেয়ে রয়।নিজের উপর নিজেই বিরক্ত। কেন রোদের সাথে কাউকে সহ্য হয় না? কেনই বা তখন ওর সাথে এমন ব্যবহার করতে হলো??? রুমে ফিরে এসে মিষ্টি কে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

____________________________

কেটে গেছে ৫ দিন। এই কয়েক দিন রোদ আর মিষ্টির সাথে দেখা করে নি।তবে জারবার কাছ থেকে মিষ্টির সব খোঁজ নিয়েছে।মিষ্টি আজ কিছুতেই খাবার খেতে রাজি না।তার এক কথা মাম্মা কে চাই।আদ্রিয়ান ও সকালে ল্যাবে গিয়েছে।

রোদ মেডিকেল কলেজ থেকে সবে মাত্র বের হতেই ফোন বেজে উঠল। আননোন নাম্বার দেখেই কপাল কুচকে এলো।রিসিভ করতেই কারো কান্না মাখা কন্ঠে মাম্মা ডাক শুনে সারাদিনের ক্লান্তি শেষ হয়ে গেল। মিষ্টি কান্না করছে। রোদ বিচলিত হয়ে বলল,

কি হয়েছে সোনা? কান্না করছো কেন???

ঐ পাশ থেকে মিষ্টি বললো,

মাম্মা তুমি কোথায়? আমার কাছে আসো।।।।

রোদ বলল,

আচ্ছা মা কান্না করে না। বাবাই কেথায় তোমার???

জানি না। তুমি আসো।( মিষ্টি)

আচ্ছা এটা কার নাম্বার? তাকে দাও ফোন।

মিষ্টি ফোন দিল সাথিকে।সাথিকে মিষ্টির দেখা শুনা করার জন্য রাখা হয়েছে।
রোদ সাথিকে মিষ্টি কে নিয়ে পার্কে আসতে বলল।

#চলবে……..