#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৪
আজ ভোরের দিকেই মিষ্টি উঠে গেলো কিন্তু মাকে ডিসটার্ব করলো না। সোজা বাবার বুকের উপর চড়ে বসলো। আদ্রিয়ান একটু করে চোখ খুলে তা আবারও বন্ধ করে ফেললো। মিষ্টির যেন তা পছন্দ হলো না। বাবাই কেন পাত্তা দিলো না। তাই ধুম করে বুকে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান একটু ব্যাথা পেলেও চুপ করে রইলো এই মা মেয়ে মিলে তার বুকের হাড় গোড় কবে যেন ভেঙে দেয়। মিষ্টি এবারেও বাবার রেসপন্স না পেয়ে ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে আদ্রিয়ানের চোখের পাতা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু হায় বাবাতো চোখ খুললো না। এবার নিজের ইদুর দাঁত দিয়ে ছোট করে কামড় বসালো বাবার গালে। আদ্রিয়ান ফট করে চোখ খুলতেই মিষ্টি নিজেকে লুকালো বাবার সুঠাম বুকে। আদ্রিয়ান হেসে উঠলো। মেয়েটা আগের মতো নীরব থাকে না। স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো অল্প সল্প দুষ্টামি করে। আদ্রিয়ান ও কম কিসে মেয়েকে সুরসরি দিতে লাগলো পেটে। মিষ্টি নিজেকে বাঁচাতে লাগলো আর খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আদ্রিয়ান নিজের দাঁত দিয়ে আলতো করে মিষ্টির হাতের তালুতে কামড় বসালো। মিষ্টি তাও হেসে লুটোপুটি খেল বাবার বুকে। আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
— আমার মা এতো তাড়াতাড়ি কেন উঠলো?
— মা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছিলো তাই।
— তাই না?
— হু তাই তো।
এদিকে বাবা মেয়ে মিলে তুলকামাল বাঁধিয়ে ফেললো এই ভোর ৬ টায় কিন্তু তাদের পাশে ঘুমন্ত রোদের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। এমনিতেই যে মেয়ে ঘুম থেকে সহজে উঠে না সে কাল ঘুমিয়েছে রাত ৩ টার দিকে আজ অতো সহজে উঠবেও না।
বাবার সাথে হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাবার বুকে লেগে রইলো মিষ্টি। আদ্রিয়ান ও আদরে আদরে ভরিয়ে তুললো মেয়েকে। কতশত আদুরে কথা বললো। মিষ্টি এবার মায়ের দিকে ফিরে আলত করে গালে ছুঁয়ে দিতেই রোদ নড়েচড়ে আবারও এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে গেল। মিষ্টি এবার বাবার দিকে তাকালো। দুই বাবা মেয়ে চোখ মিলতেই ফিক করে হেসে উঠলো।
ওদের বাবা মেয়ের এসব কান্ডে একঘন্টা চলে গেল। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ করিয়ে দিলো। ব্রাশ করিয়ে মুখ ধুয়িয়ে মুছে দিয়ে রুমে এনে ছোট চুল গুলো একত্রে করে ঝুটি করে দিলো। আদ্রিয়ান মেয়ের গালে চুমু খেয়ে বললো,
— কি খাবে আমার মা? বাবাইকে বলো।
— এখন না। মাম্মার কাছে পিজ্জা খাব। মাম্মা প্রমিজ করেছিলো আজ ব্রেকফাস্টে পিজ্জা হবে।
আদ্রিয়ান হেসে বললো,
— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।
— আমি দাদুর কাছে যাই। ভাইয়া, আমি আর দাদু আজ ঘুরতে যাব।
বলেই টুকটুক করে হেঁটে গেল দাদির রুমে। আদ্রিয়ান জানে ওদের ঘুরতে যাওয়া মানে বাড়ির পেছনের বাগানে যাওয়া।
___________
রুমে ডুকতেই দেখলো রোদ আলুথালু হয়ে শুয়ে আছে। এই মেয়ে জীবনেও ঠিক হবার নয়। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। হঠাৎ চোখ গেল টিশার্ট একটু উঠে পেট বের হয়ে আছে। লাল দাগ দেখতেই কপাল কুচকে হাত বাড়িয়ে আরেকটু উঁচু করতেই চক্ষু চড়কগাছ। কাল রাতে নিজের হাতেই একাজ করেছে আদ্রিয়ান। নাদুসনুদুস রোদের নরম পেটে আদ্রিয়ানের চার আঙুলের নখ ডেবে লাল হয়ে র*ক্ত জমে আছে।
গেলো বউয়ের মুড ঠিক করতে আর করে এলো রোমেন্স তাও আবার ব্যাথা দিয়ে নিয়ে এলো। ভাবতে ভাবতেই অয়েন্টমেন্ট এনে লাগিয়ে দিলো পেটে।
একটু পরই নড়েচড়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ানের মাথায় দুষ্টামি চেপে গেল। মিষ্টির মতো করে কোমড়ে সুরসুরি দিতে লাগলো। রোদ ঘুমের ঘোরেই নড়েচড়ে উঠছে বারবার আবার ঘুমিয়ে যাচ্ছে। এবার আদ্রিয়ান নিজের গতি বাড়িয়ে দিতেই ফট করে উঠে বসলো রোদ কিন্তু বেচারী চোখ খুলতে পারছে না। আদ্রিয়ান ওকে ধরেই হাসতে হাসতে শেষ। কোন মেয়ে কীভাবে এত ঘুমকাতুরে হতে পারে?রোদকে না দেখলে জানতই না।
রোদ এখনও চোখ খুলতে পারছে না। আদ্রিয়ান হেসে ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,
— থাক আপনার আর কষ্ট করে চোখ খুলতে হবে না। ঘুমান।
রোদ ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো,
— আপনি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছেন। কেন উঠালেন?
আদ্রিয়ান জোরে হেসে উঠলো। রোদকে বুকে নিয়ে শুয়ে বললো,
— হুম। খারাপ তো আমি হয়েই যাচ্ছি। কিন্তু দোষ টা তোমার বুঝলা?
রোদ আর কোন উত্তর দিলো না। চোখ খুলে কতক্ষণ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ান ওর মাথায় চুমু খেয়ে চুলের ভাজে হাত বুলিয়ে বললো,
— ঘুমাও। দেড়ী আছে।
— আর আসবে না মনে হচ্ছে? মিষ্টি কই?
— আম্মুর কাছে।
— আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেল?
— হুম।কাল নাকি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছে তাই।
— দেখি ছাড়ুন। ও না খেয়ে কোথায় গেল। ক্ষুধা লেখেছে নিশ্চিত। আরেকটু আগে ডাক দিতেন আমায়।
আদ্রিয়ানের কোন হেলদুল নেই। ও ছাড়ছে না। আদ্রিয়ান ওর কানে মুখ দিয়ে বললো,
— তোমার মেয়েকে বলেছিলাম কিন্তু ও খাবে না। তুমি নাকি প্রমিস করেছো পিজ্জা খাওয়াবে।
রোদ কোনমতে উত্তর দিলো,
— হুম।
এরপর দুজন চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান আধশোয়া হয়ে বসে আছে আর তার বুকে মাথা দিয়ে রোদ শুয়ে আছে। এমন সময় হুট করে দরজা খুলে গেল। দরজা লক করেনি আদ্রিয়ান। রোদ ভাবলো হয়তো মিষ্টি এসেছে কিন্তু না জারা দাঁড়িয়ে আছে। রোদ লজ্জা পেয়ে উঠে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করলো। রোদ এবার আরো বেশি লজ্জা পাচ্ছে। জারা বলপ উঠলো,
— ম্যানার্স নেই এই মেয়ের। দরজা লক করে রোম্যান্স করতে হয় জানো না?
আদ্রিয়ান চোখ শক্ত করে বললো,
— নক করে রুমে ডুকতে হয় জানো না। ম্যানার্স নেই।
— আমি তো…
— সু। কেন এসেছো বলে আউট হও।
— মম ওকে নিচে যেতে বলেছে।
— পরে আসবে যাও।
— মম..
— আউট এন্ড দরজা লাগিয়ে যেও।রোম্যান্সের সময় আই হেইট ডিসটার্ব।
জারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু আদ্রিয়ানের কথার উপর কিছু বললো না। ওর নজর রোদের উন্মুক্ত গলায় যা দেখে এটা স্পষ্ট যে আদ্রিয়ান আর রোদ একসাথে কতটা সুখী। চোখের পানি লুকাতে দ্রুত বেরিয়ে গেল জারা।
জারা বেরিয়ে যেতেই আদ্রিয়ান রোদের কপালে চুমু খেল আশ্চর্যভাবে রোদও প্রতিউত্তরে আদ্রিয়ানের কপালে চুমু খেয়ে উঠে গেল। সোজা ওয়াসরুমে ডুকে জোরে দরজা লাগিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান হা হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষন পর নিজেই একা একা হাসতে লাগলো।
__________
ফুপির কালকের কথা শুনে রোদ একটা হাটু সমান ফতুয়ার সাথে জিন্স পড়ে মাথায় ওড়না দিয়ে নিচে নামলো। নেমেই কিচেনে ডুকে পড়লো। শাশুড়ীকে হেল্প করতে লাগলো। আদ্রিয়ানের মা হাসে কতটুকু বড় রোদ আর জারবা থেকে তবুও বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই গৃহীনি হয়ে উঠলো মেয়েটা। সাবা কিচেনে ডুকতেই রোদ আর শাশুড়ী মিলে তাড়িয়ে দিলো। কত করে সাবা বললো,
— আরে আমি কি প্রথম মা হবো নাকি? আর মাত্র তো কয়েক সপ্তাহ কিছু হবে না।
ঠিক এমন সময় আরিয়ান কিচেনে ডুকে ধমক দিয়ে সাবাকে বের করলো কিচেন থেকে। রোদ খোঁচা দিয়ে বললো,
— আমরা বললাম ভালো লাগলো না। এখন খেলাতো ধমক।
— তুই চুপ থাক।
বলে সাবা চলে গেল। রোদ হাসতে হাসতে পরটা উল্টালো। সেগুলো সব টেবিলে রাখতে রাখতেই একে একে সবাই টেবিলে বসতে লাগলো। রোদের শশুড় সবার আগে চা খান। রোদ কিচেন থেকে চা এনে দিয়ে বললো,
— বাবা চিনি দেব আরো?
— না মামনী ঠিক আছে।
রোদ মুচকি হেসে আবারও কিচেনে ডুকে গেল। জারবা এসে ফ্রিজ থেকে জ্যাম বের করে টেবিলে নিয়ে রাখলো। না হয় একটুপরই ফুপি চিল্লাতে পারে ছোট ভাবীর সাথে। এটা বুঝতে চাইবে না যে ছোট ভাবী তো আর এসব জানে না। সবাই বসেছে টেবিলে। রোদের শাশুড়ী এটা ওটা দিচ্ছে রোদ নিয়ে আসছে। আদ্রিয়ানের জন্য গরম গরম তিনটা পরটা নিয়ে এসে বললো,
— ব্রেড ও আছে। দিব?
— না এটাই খাব। তুমি বসো।
— মিষ্টির টা হয় নি। নিয়ে এসে বসছি।
বলে চলে গেল রোদ। ফুপি আর জারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ছোট্ট রোদ এতটা ম্যাচিইউর তারা ভাবে নি।কীভাবে সব করছে।এমন সময় ফুপি বললো,
— আদ্রিমা ( মিষ্টি) ব্রেড জ্যাম নাও।
একটা এগিয়ে দিয়ে।
মিষ্টি সরিয়ে দিয়ে বললো,
— না এটা খাব না। মাম্মা পিজ্জা দিবে।
ফুপি কপাল কুচকে বললো,
— ওটা হেলদি না দাদুমনি। এটা নাও।
মিষ্টি মুখ লটকিয়ে বসে রইলো। তখনই রোদ পিজ্জা নিয়ে এসে ওর সামনে রেখে ব্রেডটা সরিয়ে দিলো। ফুপি রাগী কন্ঠে বললো,
— এসব কি খাওয়াও তুমি ওকে। আমেরিকার বাচ্চারাও সকালেও পিজ্জা খায় না।
জারা তাল দিয়ে বললো,
— হ্যাঁ মম। কাল ও দেখলাম সন্ধ্যায় কি সব বার্গার খাওয়াচ্ছে। এগুলো কত আনহেলদি।
জুরাইন মা আর বোনের আচরনে বিরক্ত।এমন সময় জারবা ফিক করে হেসে উঠলো। বাকি সবাই ও হেসে উঠলো। ফুপি আর জারা যেন বোকা বনে গেল। আদ্রিয়ান হেসে হেসেই বললো,
— ফুপি এটা পিজ্জায় কি আছে জানো? ব্রাউন আটা,গ্রিন ভিজিটেবল আর চিকেন। মিষ্টি যখন এগুলো খেতে চায় রোদ তখন নিজেই হেলদি সব দিয়ে এসব বানায়।
ফুপি আর কিছু বললো না কিন্তু জারার মুখটা চুপসে গেল।
সবাই যার যার মতো খেতে লাগলো। রোদ কারো দিকে ফিরে তাকালো না চুপচাপ মিষ্টিকে খাওয়াতে লাগলো। মানে সহ্য হয় এসব? যেখানে যার ছেলে, যাদের ফ্যামিলি তাদের প্রবলেম নেই বাইরের মানুষ এসে যত্তসব নাক গলায়। এসব ড্রামা আর সহ্য হচ্ছে না। হঠাৎ করেই রোদ খেয়াল করলো ওর মেজাজটা আবারও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনে চাচ্ছে জারা না ফারা ওকে আর ফুপিকে একটু সাবান ছাড়া ধুয়ে দিতে পারলে হয় তো শান্তি লাগলো। নিজের এসব চিন্তায় নিজেরই বিরক্ত লাগলো রোদের। আজব কি একটা অবস্থা সাবান ছাড়া কেন ধুবে রোদ সাবান দিয়েই ধুবে।
এমন হাজারো আজগুবি চিন্তা ভাবনার মাঝে খেয়ালই করে নি সবার খাওয়া প্রায় শেষ। আদ্রিয়ান আলত করে রোদের হাতের উপর হাত রেখে ডাকলো,
— রোদ?
— হুম।
— কি ভাবছো?
— আমার না..
এরপর আশে পাশে তাকিয়ে চুপ করে গেল। আদ্রিয়ান ইশারায় বলতে বললেই রোদ বললো,
— কিছু না।
বলে মুচকি হাসলো। আদ্রিয়ান নিজের আধ খাওয়া পরটা রোদের প্লেটে দিয়ে একটা ডিম তুলে দিয়ে বললো,
— ফিনিস করো।
রোদ কিছু না বলে খেতে লাগলো। রোদ আগের তুলনায় এখন একটু বেশি খেতে পারে।এতোদিনের এ ব্যাপারটা নরমাল সবার কাছে। কিন্তু নতুন গেস্টদের কাছে না। এতক্ষণে জুরাইন মুখ খুলে বললো,
— হাও রোম্যান্টিক ব্রো…।
আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকালো বললো,
— কি রোম্যান্টিক লাগলো তোর কাছে?
— এই যে এভাবে নিজের খাওয়া বউকে দিলা। আই লাইক ইট।আমিও আমার বউকে দিব।
আরিয়ান কফি খেতে খেতে বললো,
— জুরু ব্রো সবাই তো আর রোদ না যে তোর এটো খাবে।
সাবা খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,
— আর ইউ টেলিং দিস টু মি?
আরিয়ান চুপসে গেল। জুরাইন আর জারবা হেসে ড্রয়িং রুম কাঁপিয়ে তুললো।
__________
রোদ কফি হাতে রুমে ডুকতেই দেখলো আদ্রিয়ান প্রায় রেডি। তাড়াতাড়ি কফি দিয়ে বললো,
— আজ তো লেট করে উঠি নি। তাও লেট হয়ে গেল।
আদ্রিয়ান কফি হাতে নিয়ে বললো,
— লেট হয় নি। আমি ই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেলাম। তুমিও রেডি হও। একটু হসপিটাল যেতে হবে।
— কেন?
— তোমার মেডিসিন চেঞ্জ করবে মেবি।
— ওহ।
বলে রোদ রেডি হতে চলে গেল। দুজনে রেডি হয়ে বের হয়ে গেল। এরমধ্যেই জারা অনেক জানার চেষ্টা করলো কেন আদ্রিয়ান রোদকে বিয়ে করলো। রোদের পরিবারই বা কেন রাজি হলো। যতদূর জানে তারা শিক্ষিত এবং ধনী তাহলে কেন এক মেয়ে সহ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিলো?উত্তর পেতে একটু খোজ নিলো জারা।
___________
জাইফা সকাল সকাল কাউকে না বলে চলে গেল বাইরে। সবার সামনে নরমাল বিহেব করা মেয়েটা সারা রাত ছটফট করে ভালোবাসার মানুষের জন্য। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যায় যখন মনে পড়ে সেই মুহূর্ত যেদিন রাদ বললো, “মিথ্যুক”। কেন মায়ের কথা শুনলো? কেন? কীভাবে রোদকে মুখ দেখাবে? সেই রোদের র*ক্তই তো তার দেহে।
জাইফা লুকিয়ে আছে বড় একটা গাড়ির পেছনে। একটু পরই রাদ এসে ডুকলো অফিসে। জাইফার সব ক্লান্তি, সব অবসাদ শেষ। এক নজড়ের দেখায় চোখ জুরিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর চলে গেল সেখান থেকে।
ধীরে ধীরে কেমন হয়ে যাচ্ছে জাইফা তা নিজেরও জানা নেই। নিজেকে পাগল পাগল লাগে অথচ যার জন্য পাগল তার পাত্তা নেই। ভাবতে ভাবতেই জাইফা হাটতে লাগলো রাস্তায়। দুপুরে আবার আসবে এখানে। রাদ তখন বাসায় যায়। এক পলক দেখা যাবে তখন।
রাস্তায় হাটতে হাটতে ভাবতে লাগলো জাইফা।
__________
রোদের চেক আপ করিয়ে মেডিকেল এ ড্রপ করে দিয়ে আদ্রিয়ান চলে গেল। রোদও ডুকে পরলো। ইদানীং ইয়াজের উপর ওর যথেষ্ট সন্দেহ হয়। এই ছেলে ফোনে এতো কিসের কথা বলে। জিজ্ঞেস করলেও কেটে পরে। তাই আর ঘাটলো না রোদ।
কোচিং করিয়ে বের হয়ে দেখলো ৩ টা বাজে। ইয়াজ সাথে থাকায় ভাবলো বাইকে যেতে টাইম বেশি লাগবে না আর সামনে ফুচকা দেখেও লোভ সামলাতে পারলো না। অনেক দিন হলো ফুচকা খায় না রোদ। ইয়াজ কতো না করলো কিন্তু রোদের অসহায় চেহারা দেখে আর না করতে পারলো না। দুজন দু প্লেট খেয়ে নিলো। এরমধ্যেই রোদ আরেক প্লেট অর্ডার দিতেই ইয়াজ বাধ সাধলো। রোদের তাতে আসে যায় না। জোর করে বেশি করে ঝাল দিয়ে খাচ্ছে। এই মেয়ের ঝাল খাওয়া দেখলে ইয়াজেরই ঝাল লেগে যায়।
ওদের খাওয়ার মধ্যে রাতুল এসে হাজির। সেও ফুচকা অর্ডার করলো। ইয়াজের সাথে টুকটাক কথা বলে রোদকে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি ফুচকা খাও?
— দেখতেই তো পাচ্ছেন। জিজ্ঞেস করার কি আছে?
রাতুল একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেল।রোদ যে এমন উত্তর দিবে ভাবে নি। রোদ আরেক প্লেট খেত কিন্তু রাতুলকে দেখেই মেজাজ বিগরে গিয়েছে তার। তাই বিল দিতে গেল। রাতুল ফট করে উঠে বললো,
— আমি দিচ্ছি বিল।
— ক্যান? আমরা খেয়েছি বিল আমরাই দিব। ওই ইয়াজ টাকা বের কর।তুই দিবি বিল আজকে।
ইয়াজ ভরকে গেল। কি হলো হঠাৎ? রোদের রাগের কারন তার অজানা। কিন্তু কথা না বাড়িয়ে টাকা দিয়ে রোদকে নিয়ে বাইকে উঠলো। রাতুল হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো। কি হলো কিছুই বুঝলো না সে।
ইয়াজ বাইকে রোদকে জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে এমন রেগে গেলি ক্যান?
— জানি না। কয়েকদিন দিন ধরে হুট হাট মেজাজ বিগরে যাচ্ছে।
— ভাইয়ের সাথে ঝগরা?
— না।
__________
বাসায় আসতে আসতে হঠাৎ পেট জ্বলতে শুরু করলো রোদের। কারণ ওর জানা। আজ ফুচকায় বোম্বে মরিচ ছিলো তার উপর রোদ শুকনো মরিচের গুড়ো দিয়ে খেয়েছে। নিজের মুখ তা গ্রহণ করলেও পেট বেইমানি শুরু করে দিয়েছে।
রোদ কোনমতে বাসায় ডুকতেই মিষ্টি সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে লাগলো। রোদ তাড়াতাড়ি বললো,
— আস্তে আস মা। পরে যাবে।
বলতে দেড়ী কিন্তু পড়তে দেড়ী হয় নি। দু সিঁড়ির উপর ধুপ করে পড়লো মিষ্টি। রোদ চিল্লিয়ে দৌড় লাগালো। জুরাইন সামনে থাকায় মিষ্টিকে ধরে ফেলে নাহলে আরো ব্যাথা পেত। রোদের চিল্লানোতে সবাই বেরিয়ে এলো। রোদ দেখলো হাটু ছিলে র*ক্ত বের হচ্ছে। মিষ্টির চোখে পানি আর এদিকে রোদের কলিজার পানি যেন শুকিয়ে গেল। রেগে গিয়ে দিলো এক ধমক মিষ্টিকে।
— কত বার বলেছি দৌড়ে নামতে না। শুনো তুমি কথা আমার? কে পেল ব্যাথা এখন?
বলতে বলতে চোখ জ্বলে উঠলো রোদের। মায়ের ধমক খেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো মিষ্টি।জুরাইন বললো,
— কিছু হয়নি। ঠিক হয়ে যাবে।
রোদ ওর ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে চেপে ধরলো হাঁটুতে। জারা এসে মিষ্টিকে কোলে তুলে বললো,
— এই তোমার সাহস তো কম না। ওকে ধমকানোর সাহস কোথায় পাও?
বলে মিষ্টিকে নিয়ে যেতে চাইলেই রোদ আটকে মিষ্টিকে নিজের কোলে নিয়ে বললো,
— আমার মেয়েকে আমি ধমকাবো না আদর করবো এটা আমার মেটার আপু। নেক্সট থেকে ইন্টারফেয়ার করবেন না। আমার পছন্দ না।
সবাই হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। অপমানে জারা রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। সাবা, জুরাইন আর আদ্রিয়ানের মা রোদের পেছনে রুমে ডুকলো।
রোদ মিষ্টির হাঁটুতে ফু দিয়ে ব্লাড পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। আবার চোখ দিয়ে টুপটাপ পানিও পরছে। মিষ্টি রোদের বুকে মুখ গুজে দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বললো,
— মাম্মা তুমি কাঁদলে আমারও কান্না পায়। কেঁদো না। মিষ্টি আর দৌড় দিবে না।সত্যি।
রোদ ওকে নিজের বুকেই চেপে ধরলো। কপালে অসংখ্য চুমু খেয়ে বললো,
— আমি সরি মা। অনেকগুলো সরি৷ মাম্মা ধমক দিয়েছি। মাম্মাকে মাফ করে দাও।
মিষ্টি মায়ের বুকে মুখ ঘষে দিলো। রোদ ওকে শুয়িয়ে হাঁটুতে চুমু খেল। বাকিরাও রুমে ডুকে দেখে আদর করে চলে গেল।
মিষ্টি ঘুমিয়ে যাওয়াতে রোদ গোসল করে নিলো। পেট ব্যাথাটা বেড়ে যাচ্ছে। কোন মতে মেডিসিন হাতে নিলো। আগের বার এই মেডিসিনই দিয়েছিলো ডক্টর। রোদ একটা খেয়ে মিষ্টির সাথে শুয়ে পড়লো। রাত ৮ টায় ঘুম ভাঙলো রোদের৷পেটে সামান্য ব্যাথা আছে। সামনে আদ্রিয়ান বসা। তার কোলে মিষ্টি। রোদ ঘড়ি দেখে চমকে গেল। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। কিছু বললো না। মিষ্টিকে আদর করে বললো,
— চলো মা ডিনার করবে?
রোদ চমকে তাকালো। মিষ্টিকে তো রাতে রোদ খাওয়ার। আর আদ্রিয়ান এ সময়ে বাসায় কেন? তাই জিজ্ঞেস করলো,
— আপনি এসময় বাসায় কেন?
………
উত্তর না দিয়ে মিষ্টিকে কোলে তুলে নিলো।রোদ ভাবলো হয় তো খেয়াল করে নি। তাই আবার বললো,
— আমি ফ্রেশ হয়ে এসে খায়িয়ে দিচ্ছি।
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চলে গেল। রোদ কিছু ভাবতে পারলো না। কি হলো? পরক্ষণেই মনে পরলো আদ্রিয়ান কি তাহলে ওর উপর রেগে আছে? মিষ্টিকে ধমক দিয়েছে তাই? কষ্ট পেল রোদ। এজন্যই হয়তো কথা বলছে না। ফ্রেশ হয়ে এসে বই নিয়ে বসলো। এমন সময় জারবা ডুকে বললো,
— ছোট ভাবী আসবো?
— এসো জারবা।
— এখন কেমন আছো? নাও ভাইয়া জুস দিয়েছে। খেতে বললো।
— কেন আমার আবার কি হবে?
— ওমা কি হবে মানি? সবাই কতো টেনশনে ছিলাম জানো?
রোদ বোকা বনে গেল। তাই প্রশ্ন করলো,
— টেনশনে কেন ছিলা জারবা?
— তুমি তো ঘুমের মধ্যেই অঙ্গান হয়ে গিয়েছিলা ছোট ভাবী। তুমি যখন ব্যাথায় কাঁদছিলে তখন মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে আমাকে বলে পরে আমি আসতে আসতেই তুমি ঘুমের মধ্যে ঙ্গান হারাও। ছোট ভাইয়াতো পাগল হয়ে গিয়েছিলো। হসপিটালে নিয়েই ছাড়বে বড় ভাইয়া ধমকে তোমাকে ব্যাথার ইনজেকশন দিলো। তুমি বোধ হয় বাইরের কিছু খেয়েছিলা তাই ইনফেকশন হয়েছিলো।নাও জুস শেষ করো।
রোদ চরম লেভেলের চমকে গেল। এতো কিছু হলো আর ও জানে না। এরজন্যই আদ্রিয়ান এমন করলো বুঝি। আর কি সব ভাবছিলো।
জারবা চলে যেতেই রোদ এক চুমুক খেয়ে রেখে দিলো। পড়ায় মনোযোগ দিলো।
অনেকক্ষন পর ওর শাশুড়ী, ফুপি, জুরাইন, সাবা আর আরিয়ান দেখে গেল। এর মধ্যে জারা ও এলো। রোদ কথা বলছিলো সবার সাথে। জারা কাউচে কিছু ফাইলে রোদের নাম দেখে খুলে দেখলো কিন্তু তেমন কিছু বুঝলো না। ফটফট কয়েকটা ছবি তুলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷
_________
রাত প্রায় ১২ টার দিকে আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো। হাতে দুধের কাপ। মেডিসিন গুলিয়ে রোদের সামনে রেখে চলে গেল ওয়াসরুমে। রোদ চুপ করে খেয়ে নিলো। আবার পড়ায় মনোযোগ দিলো। আদ্রিয়ান বেরিয়ে কাপ সরিয়ে রাখলো৷ কিছু না বলে ফোনে টিপাটিপি শুরু করলো। মিষ্টিকে আজ ওর শাশুড়ী রেখে দিয়েছে। দাদুর কাছে গল্প শুনতে শুনতে ওখানেই ঘুমিয়ে যাওয়াতে তিনি আর দেন নি মিষ্টিকে।
রোদ বই গুছিয়ে রেখে অনেক ভয়ে ভয়ে চেষ্টা করলো আদ্রিয়ানের মনোযোগ পাওয়ার। কিন্তু আদ্রিয়ান ফিরেও তাকালো না। ফুল এভয়েড করলো। রোদ লাইট করে পাশে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান ও ফোন রেখে পাশ ফিরে শুয়ে রইলো। ভয়ে ভয়ে রোদ ওর পিঠে আলত করে হাত রাখতেই ঝামটা মেরে ফেলে দিলো আদ্রিয়ান। রোদ আবারও রাখলো একই কাজ করলো আদ্রিয়ান।
রোদ দমে গেল না। সাহস জুগিয়ে আদ্রিয়ানের পেছন থেকে ঝাপটে ধরে পিঠে মুখ ঘষে বললো,
— কথা বলুন প্লিজ এভাবে কষ্ট হচ্ছে আমার।
আদ্রিয়ান জোর করে ওকে ছাড়িয়ে নিলো। রোদ এবার ঘুরে সামনে এসে বুকে ডুকে পড়লো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। আদ্রিয়ান ছাড়াতে চাইলে আরো জোর ধরে রাখলো। এক প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল। অবশেষে আদ্রিয়ান শান্ত হলো। রোদ ওর গলায় মুখ গুজে শুয়ে রইলো।
আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে বললো,
— রোদ ছাড়ো।
— উহু।
— ছাড়তে বলেছি।
— এমন করেন কেন?
ক্ষিপ্ত হয়ে আদ্রিয়ান ওকে ছাড়িয়ে নিজের নিচে ফেলে ওর উপর চড়ে দুবাহু শক্ত করে ধরে বললো,
— বল কি করেছি আমি? আমার সাথে তোর কি? এতো কিসের ঢলাঢলি তোর?
রোদ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
— হাতে ব্যাথা পাচ্ছি।
— ভেঙে যাক তোর হাত। কি পেয়েছিস আমায়? দুই দিন পরপর তুই অসুখ বাধাবি আর পাগল হয়ে ঘুরবো আমি। কি পেয়েছিস আমায়? পাগল বানাতে চাস? তোর কিছু হলে কি করতাম আমি। তোর বাপ, ভাই এসে তো আর দেখতো না কি হয়েছে টেনে তোকে নিয়ে যেত। তখন কি করতাম আমি বলো? কেন এতো অসহায় করে তুলছো আমায়?
শেষের কথা গুলোতে শুধু আকুতি শুনতে পেল রোদ। আদ্রিয়ান ওর হাত আলগা করে রোদের উপর শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। রোদও জড়িয়ে ধরে রাখলো। আদ্রিয়ান ওর কাধে মুখ গুজে রইলো। রোদ আদ্রিয়ানের কানে মুখ নিয়ে বললো,
— সরি। ফুচকা দেখে কন্ট্রোল হয় নি। আর হবে না।
— প্রমিস?
— প্রমিস দিতে পারব না।
— আরেকবার খেলে তোমার বারোটা বাজাবে আমি।
রোদ হেসে উঠে বললো,
— নামুন আমি তো আলু ভর্তা হয়ে গেলাম।
–উহু।
___________
টেনশনে হাত পা কাঁপছে জাইফ আর ওর বাবা মায়ের। রাত ১২ টার উপর বাজে কিন্তু জাইফা আজ এখনও ফেরে নি। আর না জাইফ আর ওর বাবা যথাসম্ভব খুঁজেছেন কিন্তু পায় নি খোজ। বাকি সবাই চিন্তিত।বাধ্য হয়ে ছুটলেন পুলিশ স্টেশনে। নানুমনি তো সেই থেকে অসুস্থ হয়ে পরলেন। কি হলো হাসিখুশি মেয়েটার? দুদিন ধরে তো আগের মতো হয়ে যাচ্ছিলো। ছোট মামি বললেন,
— রাত কতো হলো। না জানি কি হলো? কোথায় গেল মেয়েটা?
বড় মামিও মেয়ের চিন্তায় আল্লাহ আল্লাহ করছেন?
কিন্তু সবসময় তো আর এক হয় না।কিছু কিছু সময় বাবা মায়ের শাস্তি ও সন্তান পায়। মানুষ ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ছাড় দেয় না। সামনে কি অপেক্ষা করছে তা সবার অজানা। ভয়ে হাত পা জমে যাচ্ছে মামি সহ পুরো পরিবারের।
#চলবে…..
#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৫
রাত ৩ টা বাজে হসপিটালের করিডরে ভেসে আসছে এক মায়ের আর্তনাদ, এক স্ত্রীর স্বামীর জন্য কান্না।এক কেবিনে তার মেয়ে আরেক কেবিনে স্বামী। এমন দৃশ্য বুঝি খুবই কম দেখা যায়। পাশেই জাইফ মাথা নিচু করে বসে আছে। দৃষ্টি ফ্লোরে আবদ্ধ। বড় মামির বাঁধ ভাঙ্গা কান্নায় ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে পুরো করিডর। ছোট মামা আর মামি মিলে কোন মতে বাচ্চাদের নানুর কাছে রেখে হসপিটাল ছুটে এলেন। পথেই ফোন করলেন আদ্রিয়ানদের বাসায়। আদ্রিয়ানের মা এত রাতে ফোন পেয়ে একটু ভয় পেলেন। বৃদ্ধ মায়ের কিছু হলো নাকি ভাবতেই রিসিভ করে যা শুনলেন এতেই হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলেন। কোন মতে স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে উঠালেন। আদ্রিয়ানের বাবা সব শুনে হতবাক হয়ে গেল। কোন মতে স্ত্রীকে সামলে ছেলেদের ডাকতে গেলেন।
আদ্রিয়ান রোদকে বুকে নিয়ে গভীর ঘুমে ছিলো। দরজায় জোরে করাঘাতে আর আরিয়ানের আওয়াজে ঘুম ভাঙে গেলো। রোদও নড়েচড়ে উঠলো। আদ্রিয়ান ওকে বালিশে শুয়িয়ে দরজা খুলতেই আরিয়ান এমন কিছু যা বললো যা শুনে পিলে চমকে গেল আদ্রিয়ান। আরিয়ান ওকে তাড়া দিয়ে বললো,
— নিচে আয়। আমি সাবাকে দেখে আসছি।
— হুম।
আদ্রিয়ান কোন মতে বেডে যেয়ে বসলো। কোন মতে রোদকে ডাকলো। রোদের ঘুম হালকা হতেই আস্তে করে উঠে বসলো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই বাকি ঘুম উড়ে গেল। রোদ জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
কম্পমান গলায় আদ্রিয়ান উত্তর দিলো,
— জাইফার রেপ হয়েছে রোদ। বড় মামা স্ট্রোক করেছেন।
— কি?
চমকে বললো রোদ। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি যাচ্ছি। তুমি মিষ্টিকে রুমে এনে শুয়ে থাক।
— আমিও যাব।
— না। বাসায় থাক।
— প্লিজ।
— জেদ করো না। বড় মামি না জানি আবার কি করেন। তুমি থাক আমি কল দিব।
বলে রুম ত্যাগ করলো আদ্রিয়ান। রোদ ও নেমে গেল। আরিয়ান,আদ্রিয়ান, মা,বাবা,জুরাইন আর ফুপি গেল হসপিটাল। রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলে সিড়ি দিয়ে রুমে যেয়ে শুয়িয়ে দিলো। বেরিয়ে দেখলো জারবা দাঁড়িয়ে। রোদ কিছু বলার আগেই জারবা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। রোদের চোখে ও পানি চলে এলো। সবসময় হাসি খুশি দুষ্ট জারবা আজ যেন বোনের শোকে কাতর কন্ঠে কাঁদছে। বারবার বলছে,
— আপুর সঙ্গে এমন কেন হলো ছোট ভাবী? আপু তো ঠিক ছিলো হঠাৎ কি হলো?
— শান্ত হও জারবা। আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।
__________
হসপিটালে রাদকে দেখা মাত্র চমকে তাকালো আদ্রিয়ান। পাশে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি এখানে?
— হুম।
রাদের বেখায়ালী উত্তরে আদ্রিয়ান ওর কাঁধে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— রাদ?
— জ্বি। আপনি কখন এলেন?
— মাত্রই।
— ওহ।
— রোদ এসেছে?
— না।
এরমধ্যেই ডক্টর বের হলো বড় মামার কেবিন থেকে। সবাই ঐ দিকে গেল। ডাক্তার জানালেন,
মাইল্ড স্ট্রোক করেছেন তিনি। কিন্তু কোন প্রকার মানষিক চাপ দিতে নিষেধ করলেন।
সবাই দেখা করলো বড় মামার সাথে। জাইফ বাবাকে ধরে কেঁদে উঠলো।
পরক্ষণেই খবর এলো জাইফার ঙ্গান ফিরেছে। কিন্তু সবাইকে দেখা করতে দিবে না। যে কোন একজন কি দুজন দেখা করবে। বড় মামি তরাক করে দাঁড়িয়ে বললেন,
— আ..আমি যাব।
রাদ সবাই সামনে ওনাকে পাত্তা না দিয়ে বললো,
— আমি ভিতরে যাচ্ছি।
বলে ভিতরে চলে গেল। জাইফা চোখ খুলে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। কপালে ব্যান্ডেজ করা, গাল একপাশে ফুলে আছে। হাতে,গলায়, গালে খামচির দাগ স্পষ্ট। রাদ আস্তে করে ওর পাশে বসলো। আলত করে মাথায় ছিঁয়ে দিতেই জাইফা ঘাড় কাত করে তাকালো। সাথে সাথে গাল বেয়ে পানি পরলো। রাদ খুব যত্ন করে তা মুছে দিয়ে ডাকলো,
— জায়ু।
চমকে তাকালো জাইফা। কথা গুলো কান্নার কারনে সব গলায় দলা পাকিয়ে গেল। নাহলে তার রাদের এতো আদুরে ডাকে সে বুঝি সাড়া না দিয়ে থাকতে পারতো? আর কি বলে ডাকলো “জায়ু”। মনে মনে কয়েকবার উচ্চারণ করলো জাইফা সেই নাম। কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। রাদ ওকে অবাক করে জিজ্ঞেস করলো,
— বিয়ে করবে আমায়?
জাইফা হা করে তাকিয়ে রইলো। আগে কেন এই কথা জিজ্ঞেস করলো না রাদ? ধরা গলায় বললো,
— আপনাকে দেয়ার মতো কিছু নিয়ে আমার নেই রাদ। আমি আজ শেষ হয়ে গেলাম রাদ। আমার অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেল। কিছু নেই আমার কাছে।
— আমার প্রতি ভালোবাসা ও শেষ?
— উহু। সেটা আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থাকবে। খুব যত্ন করে রাখি আমি ওটা।
— তাহলে বিয়ে করো আমায় জায়ু।
— দয়া দেখাচ্ছেন?
— না।
— এই ধর্ষিতাকে ভালোবাসেন?
— তোমায় ভালোবাসি না ঠিক। তুমি নাহয় শিখিয়ে নিও।
— আমি দূষিত রাদ। আমার সাথে আপনাকে জড়িয়ে আপনাকে কীভাবে দূষিত করি আমি?
— উহু। যে খারাপ করে সে দূষিত সে সেটার স্বীকার হয় সে নয়।
— সবাই মানবে না রাদ।
— আমি মানি এটা কি যথেষ্ট নয়?
জাইফা কি আর না করতে পারে? সে তো চরম মাত্রার বেহায়া হয়ে গিয়েছে রাদের ভালোবাসায়। রাদ যদি দয়াও করে তাও ঠিক। সে তো তার রাদের সাথে থাকবে এটাই অনেক। কিন্তু তার যে ঠকে গেল? এটা কি ঠিক হলো?
রাদ ওকে অপেক্ষা করতে বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো৷ নিজের বাবা মাকে নিজের সিদ্ধান্ত জানাতেই তারা চমকালেন। কিন্তু না বলেন নি আবার হ্যাঁ ও বলেন নি। আসছি বলে কল কেটেছেন।
কেবিনের বাইরে এসে সবাই কে চমকে দিয়ে রাদ জানালো সে বিয়ে করেছে জাইফাকে। সবাই ভিষণ অবাক হলো। রাদ শুধু আদ্রিয়ানকে বললো,
— রোদকে একটু নিয়ে আসবেন প্লিজ।
— রাদ তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিতে নেই।
— আমি ভেবেই নিয়েছি।
— আচ্ছা কি হয়েছে? আর কিভাবে?
রাদ দীর্ঘ শ্বাঃস নিয়ে বললো,
— জাইফা প্রতিদিন ফলো করতো আমায়। আমি দেখেও এই কয়েকদিন দেখি নি। আজ রাত প্রায় ১২ টার দিকে অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম তখন দেখি জাইফা সাইডে সরে গেল। আমিও গাড়ি নিয়ে চলে যাই৷ কিন্তুু কিছু দূর যাওয়ার পর খেয়াল হয় রাত ১২ টা বাজে একরাতে ঐ হাইওয়ে নিশ্চিত সেফ না কোন মেয়ের জন্য। তাই আমি গাড়ি ঘুরাই কিন্তু জাইফা ছিলো না সেখানে। চলে আসার সময় কারো ফোনের আওয়াজ পাই যা পায়ের সামনে ছিলো৷ রিসিভ করতেই জাইফের কন্ঠ শুনতে পাই। ওকে লোকেশন জানিয়ে পুলিশে খবর দিয়ে আমি অনেক খুজি কিন্তু পাই নি। পুলিশ খুজতে খুজতে আর ওকে পেতে পেতে যা হওয়ার…
বলে থেমে গেল রাদ। জাইফ এবার কেঁদে উঠলো। আরিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরলো। রাদের একচোখ দিয়ে টুপ করে একফোঁটা পানি পরলো। রাদ আবার বললো,
— জাইফরা আসার আগেই পুলিশের সাহায্যে জাইফাকে হসপিটাল আনি। আপনার মামা এটা শুনেই স্ট্রোক করেন। কিন্তু ভাগ্য ভালো থাকায় গ্যাং রে.. রেপ হয় নি। সবচেয়ে ভালো খবর আপনার মামি বলেছে, আমি রেপ করেছি তার মেয়েকে। আমরা দুই ভাই বোন নাকি প্রতিশোধ নিয়েছি।সে নাকি আমার নামে কেস করবে আর রোদকেও আদ্রিয়ানের থেকে ডিভোর্স দেওয়াবে।
একটা মেয়ের কতটা কষ্ট হবে ভাবতেই আমার গা গুলাচ্ছে তাই আর ডিএনএ টেস্ট করে প্রমাণ করলাম না যে আমি নির্দোষ। বাকি খবর পুলিশের কাছে জানতে পারেন। ঐ খানে আমার সাথে তারা ছিলো।
শেষের কথা গুলো কিছুটা তাচ্ছিল্যের সাথে বললো।
সবাই কষ্ট পাওয়ার সাথে সাথে মামির উপর ভীষণ রেগে গেল।আদ্রিয়ান হাত মুঠ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করলো। আদ্রিয়ানের মা এই প্রথম নিজের বড় ভাবীকে কিছু কথা বললেন যার প্রতিউত্তরে বড় মামি চুপ ছিলেন।
____________
আদ্রিয়ান রোদকে নিতে বাসায় গেল। রুমে ডুকে দেখলো রোদ হেলান দিয়ে বসে আছে। একহাত জারবার মাথায়। পাশে মিষ্টিও ঘুম। আদ্রিয়ান যেয়ে ডাক দিলো,
— রোদ।
ফট করে চোখ খুললো রোদ। উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে? ঠিক আছে? আপু কেমন আছে আর মামা?
— বলছি। চলো আমার সাথে।
— কোথায়?
— হসপিটাল।
বলে রোদের বোরকা বের করে নিজেই পরিয়ে দিলো। ওরনা দিয়ে মাথা ডেকে দিলো। জারবাকে আস্তে করে ডেকে বললো যাতে মিষ্টিকে দেখে রাখে।
বলেই রোদকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়িতেই সব জানালো রোদকে। সব শুনে রোদ কেঁদে ফেললো। আদ্রিয়ান হুট করে গাড়ি থামালো। রোদকে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুক্ষন। হয়তো নিজেকে শান্ত করলো। এরপর আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
হসপিটালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর প্রায় ৪.৩০ বেজে গেল। রোদ রাদকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। রাদও ওকে জড়িয়ে ধরলো। এতক্ষনে যেন একটু সস্তি পেল। সামনেই দেখলো ওর মা বাবা দাড়িয়ে আছে। তারাও জাইফার বাবাকে দেখে জাইফার সাথে দেখা করলো। একটু পরই ফজরের আজান দিবে তাই তখন কাজি পাওয়া যাবে।
রাদের বাবা মা ওকে আর রোদকে ডেকে একটা কর্নারে নিয়ে রাদকে জিজ্ঞেস করলো,
— রাদ তুই কি সিরিয়াস?
— জ্বি।
— দেখ রাদ বিয়ে করবি ভালো কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে যাতে জাইফা অবহেলিত না হয়।
— হবে না আব্বু।
মি.রহমান ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন। জাইফার বাবাকেও সব জানানো হলো। তিনি রাদের হাত ধরে কেঁদে ফেললেন। নিজের মেয়ের সাথে কি হলো ভাবতেই তার বুকের ব্যাথা বেড়ে গেলো।নামাজ পড়ে এসেই কাজি নিয়ে হসপিটালের কেবিনে ডুকলো সবাই। প্রথম বার ডক্টর সহ সব নার্সরা অবাক হয়ে দেখলো সেই বিয়ে। বেডে শুয়ে কবুল বললো জাইফা আর তার পাশে বসে কবুল বললো রাদ। পবিত্র বন্ধনে বাঁধা পরলো দুজন। রাদ সবার সামনেই জাইফার কপালে চুমু খেল।
কাজি যেতেই বড় মামি বললেন,
— বিয়ে যখন হয়েই গিয়েছে তাহলে কেসটা তুলে নাও। শুধু শুধু আমার বদনামী হবে। যা হয়েছে সব এখানে মিটে যাক।
সবাই হা হয়ে শুনলো ওনার কথা। রাদ রাগী কন্ঠে বললো,
— কোন কেস তুলা হবে না। আপনি এর মধ্যে কোন কথা বলবেন না।
–আমি ওর মা।
— আমি ওর হাজবেন্ড।
রাদ কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,
— অপরাধী শাস্তি পাবেই আর তা আমি নিশ্চিত করব। আর জাইফাকে আজই বাসায় নিয়ে যাব।
ডক্টর জানালেন সকাল ১০ টায় ডিসচার্জ করা হবে জাইফাকে। বড় মামাও মোটামুটি সুস্থ। তাকেও দু এক দিনের মধ্যে ডিসচার্জ করা হবে। সবাই কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই রোদকে ডাকলো জাইফা। রোদ এগিয়ে গিয়ে পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু লাগবে আপু?
জাইফা কেঁদে উঠলো। রোদের হাত ধরে বললো,
— আমাকে মাফ করে দাও রোদ । মায়ের কথা শুনে তোমার নামে মিথ্যা বলেছিলাম আমি।
— কাঁদবেন না আপু। আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।
— আল্লাহ সব ঠিক করে দিয়েছে রোদ। আমাকে রাদকে দিয়েছেন। তুমি মাফ করে দাও।
— মাফ করে দিয়েছি আপু ।
এমন সময় রাদ ডুকে রোদকে বললো,
— রোদ আদ্রিয়ান ভাই ডাকে যেয়ে দেখ।
— যাচ্ছি।
বলে বেরিয়ে গেল রোদ। রাদ জাইফার সামনে বসে একটু উঁচু করে জড়িয়ে ধরলো। কপালে চুমু খেল। জাইফা অবাক হয়ে কান্না রত গলায় বললো,
— এই সুখও আমার কপালে ছিলো?
— সব সুখ দিতে চেষ্টা করবো জায়ু। তুমি স্ট্রং থেক।
— রোদ আমাকে মাফ করে দিয়েছে।
— জানি। ও বেশিক্ষন রেগে থাকতে পারে না।
_________
আদ্রিয়ান রোদকে বাসায় দিয়ে আসতে চাইলেও রোদ যাবে না। জেদ করে বসে রইলো। আদ্রিয়ান হার মেনে বললো,
— ঠিক আছে। আমার কাঁধে রেখে চোখ বন্ধ করে রাখ।
— আমার লজ্জা লাগবেনা? আম্মু, আব্বু এখানে তো।
আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
— শেষ লজ্জা। এসো এবার।
বলে আদ্রিয়ান ওকে টেনে নিজের কাঁধে মাথা রাখালো। রোদের মাথার উপর নিজের মাথা রেখে একহাতে জড়িয়ে ধরে রাখলো। দূর থেকে এই দৃশ্য রোদের মা,বাবা মন ভরে দেখলো। মেয়েকে তারা সঠিক হাতে দিয়েছেন।
১০ টায় জাইফার রিলিজ হলো। বাবার কাছে বিদায় নিয়ে জাইফকে জড়িয়ে ধরে রাখলো কিছু ক্ষন৷ রাদ ওকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো। মায়ের দিকে ফিরেও তাকালো না জাইফা। একে একে সবাই চলে গেল। থেকে গেল বড় মামি,ছোট মামা আর আদ্রিয়ানের মা।
আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে বাসায় আসতে আসতে ১১ টা বেজে গেল। গাল ফুলিয়ে বসে আছে রোদ। কোন কথা নেই মুখে। কতকরে বললো ও বাসায় যাবে আদ্রিয়ান শুনলো না। তাই নো কথা। আদ্রিয়ানরা বাসায় আসতে আসতে সাবা তাড়া দিলো নাস্তা করার জন্য। রোদ মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করতেই জানলো ও খেয়েছে এখন আলিফের সঙ্গে আছে। রুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো রোদ। আদ্রিয়ান ডাকলো কিন্তু শুনলো না সোজা নিচে চলে গেল। বুয়া নাস্তা বানিয়েছে। রোদ আর জারবা মিলে সবাইকে সার্ভ করে দিলো। সাবাকে ধরতে দিলো না। আদ্রিয়ান এসেও জয়েন করলো।
ঘুম না হওয়ায় মাথা ব্যাথা করছিলো রোদের তাই শুরুতেই কফি হাতে নিলো। আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বললো,
— খালি পেটে কফি না। ব্রেড নাও।
— মাথা ঘুরাচ্ছে।
— জানি।
বলে নিজের প্লেটের রুটির মধ্যে ডিম দিয়ে রোল করে রোদের হাতে দিলো। রোদ অসহায় মুখ করে এক কামড় দিলো। আদ্রিয়ান নিজে খেয়ে রোদকে নিয়ে উপরে যেতে চাইলেই রোদ বললো,
— এগুলো গুছিয়ে আসি।
— অন্য কেউ করবে তুমি আসো।
— আপুপির শরীর ভালো না আর জারবা পারবে না।
জারবা এগিয়ে এসে বললো,
— ছোট ভাবী আমি পারব। তুমি যাও। বুয়া হেল্প করবে নে।
— আচ্ছা তুমি নাহয় আমাকে হেল্প করে দাও। বুয়া তো দুপুরের জন্য কাটাকাটি করছে।
আদ্রিয়ান রোদকে বসিয়ে নিজেই টেবিল গুছাতে লাগলো। জারবা ভাইকে হেল্প করলো। ফুপি আর জুরাইন রুমে রেস্ট নিচ্ছে। জারা দাঁড়িয়ে সব দেখলো। আদ্রিয়ান সব ঠিক করে রোদকে বললো,
— চলো।
রোদ ও কিছু না বলে ওর সাথে উপরে গেল। জারবাকে বললো যাতে মিষ্টি আর আলিফকে দেখে। রুমে ডুকে রোদের বমি বমি পাচ্ছে। সারা রাত না ঘুমালে যা হয় আর কি। আদ্রিয়ান ওর মুখে আবারও পানি দিয়ে বেডে বসিয়ে মেডিসিন দিলো। রোদ চুপ করে খেয়ে নিলো। রোদকে শুয়িয়ে এসি অন করে দিলো। পেটে হাত রাখতেই রোদ চোখ খুলে তাকালো। আদ্রিয়ান পেটে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— এখনও ব্যাথা?
— একটু।
— তারপর ও কথা শুনতে চাও না। ঐ বাড়ী গেলে মেডিসিন মিস যেত না।
— ভালোলাগছে না।
— দেখি।
বলে ওকে বুক টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কিছু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল রোদ।
___________
জাইফাকে কোলে নিয়েই বাড়ি ঢুকলো রাদ। মাকে বলে সোজা নিজের রুমে ডুকে পরলো। জাইফাকে বেডে বসিয়ে দরজা লক করে আবার আসলো। জাইফা মাথা নিচু বসে আছে। শরীর টা ভীষণ দূর্বল মনে হচ্ছে। রাদ এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখলো জাইফার মুখটা উঁচু ধরলো। মেয়েটার চোখ টলমলে। রাদ আদুরে ভাবে জিজ্ঞেস করলো,
— আমার জায়ুর চোখে পানি কেন? সে কি খুশি নয়?
জাইফা কেঁদে উঠলো। রাদ ওকে জড়িয়ে ধরলো। জাইফা কেঁদে কেঁদে বললো,
— আমার সাথে এমন কেন হলো রাদ? কেন হলো? আমি কি দোষ করেছি? নিজের হাতে সব শেষ করে দিলাম আমি। নিজেকে বাঁচাতে পারি নি আমি রাদ। আমার কষ্ট হচ্ছিল অনেক। নিজেকে ছাড়াতে চাইছি পারিনি। ছেড়ে দিতে বললেও ছাড়েনি আমায়…. অপবিত্র করে দিলো আমায়।
বলে একটু থামলো। রাদ ওকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে ডুকলো। সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে তা অন করে দিলো। মুহূর্তে ভিজে গেল দুজন৷ জাইফাকে কোল থেকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
— কেঁদে নাও জায়ু। চেপে রেখো না আর। বেশি করে কাঁদো। নিজেকে হালকা করো।
কান্নার বেগ বেড়ে গেলো জাইফার। সদ্য নিজের সম্মান হারানো ভালোবাসার এক কাঙ্গাল মেয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। সব কিছু ভুলে কাঁদলো। রাদ ওকে জড়িয়ে ধরে নিচে বসে পরলো। পানির আওয়াজ আর বদ্ধ দরজায় এ আর্তনাদ আর কারো কানে গেল না।
— আমি আপনাকে ঠকিয়ে দিলাম রাদ। ঠকিয়ে দিলাম। নিজে ভালোবাসি বলে নিজের অপবিত্র শরীর নিয়ে আপনাকে বিয়ে করলাম। আমি কি করব রাদ? কি করব?
রাদ ওকে কাঁদতে দিলো নিজের মতো। কাল থেকে তেমন কান্না করেনি জাইফা। নিজের মধ্যেই চেপে রেখেছিলো সব। বেশ কিছুক্ষন পর জাইফা থামলো। রাদ ওর মুখটা ধরে বললো,
— চাইলে আরো কাঁদো কিন্তু এটাই যাতে শেষ কান্না হয়।
জাইফা কেঁদে উঠে বললো,
— আপনি ঠকে গেলেন রাদ। ঠকিয়ে দিলাম আমি।
— চুপ।
— আমার শরীরে অপবিত্র সব ছোঁয়া রাদ।
— আমি সব মুছে দিবো।
বলেই জাইফার কপালে চুমু খেল। কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে রইলো দুজন। রাদ নিজে জাইফাকে সকল অপবিত্র ছোঁয়া থেকে মুক্ত করলো। নিজের পবিত্র ছোঁয়ায় সিক্ত করলো তার সদ্য বিয়ে করা বউকে। গোসল করিয়ে টাওয়াল জড়িয়ে বের হলো দুজন। রাদ জাইফাকে বেডে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার কোন ড্রেস কেনার সময় পেলাম না। আপাতত রোদের কিছু এনে দেই? নাকি কিনে আনবো?
— এভাবে কেন বলছেন রাদ? রোদ আমাকে মাফ করে দিয়েছে।
— তবুও মানুষের মন তো কখন কি ভাবে বুঝা দায়।
বলে নিজে ড্রেস পড়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে রোদের রুম থেকে একটা লেডিস লং টিশার্ট আর প্লাজু নিয়ে এসে জাইফাকে দিলো। রাদ নিজে জাইফার চুলে টাওয়াল পেচিয়ে দিলো।
এমন সময় দরজা নক হতেই রাদ খুলে দেখলো ওর মা দাঁড়িয়ে আছে হাতে প্লেট ভর্তি খাবার। মা ভিতরে ডুকতে ডুকতে বললো,
— রান্না করতে দেড়ি হয়ে গেল রে মা। ক্ষুধা লেগেছে নিশ্চিত। দুজন বসে পর।
বলে খাবার মাখতে মাখতে জাইফার মুখে তুলে দিলেন এক লোকমা। জাইফা অবাক হয়ে দেখলো তার স্বাভাবিক ব্যবহার যেন কিছু হয়নি। মা আরেক লোকমা রাদের মুখে তুলে দিতে দিতে বললেন,
— তোর চাচারা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু তোর বাবা না করলো। কাল আসতে বলেছে।
— আচ্ছা।
রাদের মা দুজনকে খায়িয়ে হাত ধুয়ে জাইফার চুল মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন,
— চুল ভেজা কেন মা? ঠান্ডা লাগবে তো।
বলে উনিই মুছিয়ে আঁচড়ে দিলেন। দুজনকে রেস্ট করতে বলে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে। রাদ জাইফাকে সব মেডিসিন খায়িয়ে দিলো। জাইফার অবাক চাহনি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— কি ভাবে আমার জায়ু?
— সবাই এতো স্বাভাবিক কেন? আর আপনার চাচারা ও জানে?
— সবকিছু স্বাভাবিক তাই সবাই স্বাভাবিক। আর চাচারা জানে আমি বিয়ে করেছি আর কিছু না। তোমার সম্মানে দাগ লাগতে দিব না আমি।
বলে জাইফাকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ক্লান্ত জাইফার চোখ বেয়ে কয়েকফোটা পানি পরলো রাদের বুকে যা ছিলো সুখের।
#চলবে….