ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৪৭

0
96

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৭

কাউচে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে রোদ। পাশেই রাগে ফুঁসছে আদ্রিয়ান। রোদের বা হাতের ব্যাথা যেন বেড়ে গেলো। গাল দুটো ও ব্যাথায় টন টন করছে। ঘাড়ের দিকে মনে হচ্ছে জ্বলে পুরে যাচ্ছে।আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতে পারলো না ভয়ে। আজ যেন ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে। হঠাৎ করে ফুসে উঠলো আদ্রিয়ান। টেনে দাঁড় করালো রোদকে। ভয়ে রোদের প্রাণপাখি যায় যায় অবস্থা। আদ্রিয়ান ওর হাতে চাপ দিয়ে ধরে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলো,

— বল কি করছিলি ওখানে?

রোদ কেঁদে উঠলো জোরে। এমন সময় বাইরে চলে আওয়াজ শুনা গেল আদ্রিয়ানের মা, সাবা ওরা সবাই ডাকছে। আদ্রিয়ান রাগ মুহূর্তে আকাশ চুম্বী হয়ে গেল। রোদকে ছেড়ে পাশে থাকা ফুলের দানি সজোড়ে আছরে দিলো। ভয়ে আম্মু বলে চিৎকার করে উঠলো রোদ। বাইরের সবাই ও ভয় পেয়ে গেল। আদ্রিয়ানের মা চিৎকার করে বললো,

— আদ্রিয়ান দরজা খুল। এই আওয়াজ কিসের? তুই কি করছিস ওকে?

চিৎকার করে আদ্রিয়ান বললো,

— এখান থেকে যাও নাহলে খারাপ কিছু করে ফেলব আমি। যাও।

কেঁপে উঠল রোদ সহ দরজার বাইরের সবাই। ভয়ে এক কোনায় যেয়ে গুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রোদ। আদ্রিয়ান এদিক ওদিক কিছু খুজছে। আচ্ছা সে কি রোদকে মারবে? এটা ভাবতেই সিটকে গেল রোদ। আগের বারের থাপ্পড়ের কথা মনে পড়ে গেল। গুটিয়ে বসে পারলো পর্দার সাইডের আড়ালে। আদ্রিয়ান নিজের মন মতো কিছু না পেয়ে যেন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। দরজায় করাঘাত বেড়ে গেলো। আদ্রিয়ানের মা বারবার বলছেন,

— আদ্রিয়ান কি করছিস ওকে? ওকে আমার কাছে দে। তোর বাবা আর আরিয়ান এখনই আসছে।

বলেই দরজায় আঘাত করলেন। সাবার চিন্তায় ঘাম ছুটে গেল। দরজা ধাক্কা দিয়ে বললো,

— আদ্রিয়ান ওকে দাও। কি করছো ওর সাথে।

আদ্রিয়ান কোন উত্তর দিলো না। রোদকে খুঁজত লাগলো। রোদ এক কোনায় গুটিয়ে আছে। আদ্রিয়ানের নজরে আসতেই আদ্রিয়ান ওর কাছে যেয়ে ঘাড় চেপে ধরলো। আগের ব্যাথা দেয়া জায়গায় আবারও ব্যাথা দেয়াতে জোরে কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান ওকে দাঁড় করিয়ে হুংকার দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— লাস্ট বার জিজ্ঞেস করছি বল কি করছিলি ওখানে? ওই ছেলের সঙ্গে তোর কি?

কান্না, ভয় সব মিলিয়ে রোদের অবস্থা বেগতিক। কথা গুলো দলা পাকিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে। চেয়েও বলতে পারছে না কিছু। আদ্রিয়ান এবার রোদের চোয়াল একহাতে চেপে ধরলো এতে করে এক গালের নিচে চার আঙুলের ও অন্য গালের নিচে এক আঙুলের নখ ডেবে গেল। ব্যাথায় চোখ বুজে “আম্মু” করে চিৎকার করে উঠলো রোদ। বাইরেও সমানে ধাক্কাছে দরজা। আদ্রিয়ান দাঁত চেপে ঠাই জিজ্ঞেস করলো,

— বল। মিথ্যা কেন বললি?

রোদ কোনমতে হাফ ছাড়লো যখন আদ্রিয়ান গাল ছাড়লো। দৌড়ে দরজা খুলতে যাওয়া আগেই চেপে ধরলো আদ্রিয়ান। দূর্বল রোদে থেমে থেমে বললো,

— ব..বলছি।

ফ্লাসব্যাকঃ~

প্রতিদিনের মতোই মেডিকেল শেষে কোচিং এ যায় রোদ। যদিও তিন দিন করায় তবে বাচ্চাদের পরিক্ষার জন্য রেগুলার যাচ্ছে। আজও তেমনই কিন্তু আদ্রিয়ান জানায় আজ ডক্টরের কাছে যেতে হবে। ইনজেকশন পুস করতে হয় প্রতি সপ্তাহে। রোদ ও বলছিলো সন্ধ্যা হবে আজ। কিন্তু এতো সামান্য বিষয় যে এত বড় আকার ধারণ করবে তা ঘুর্নাক্ষরে টের পায় নি রোদ।

কোচিং এ আজ হাফ ক্লাস করার পরই জানতে পারলো রাতুলের জন্মদিন আজ। ভদ্রতার খাতিরে শুভেচ্ছা জানায় রোদ। রাতুলের মুখ ভর্তি ছিলো তখন অমায়িক হাসি যার কারণ জানতো না রোদ। পরে জানতে পারলো রাতুল সবাইকে ট্রিট দিবে আজ পাশের ক্যাফেতে। রোদ না করে দেয়। কিন্তু সব বড় ভাই আর আপুরাও যাবে। রোদ ওদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে কিনা ফাস্ট ইয়ারে পরেই এ কোচিং পড়ায়। বায়োলজিতে খুবই ভালো রোদ আর স্টুডেন্টরাও প্রশংসা করায় রোদের আর তেমন সমস্যা হয় নি। বড়দের এতো করে বলার পর আর না করতে পারলো না রোদ। ইয়াজ তো সাথে আছেই তাছাড়াও আদ্রিয়ানকে বলপছে আজ সন্ধ্যা হবে তাই নো চিন্তা। ইয়াজের সাথে যেয়ে একটা সুন্দর ঘড়ি কিনলো গিফট হিসেবে।

ক্যাফেতে যখন যায় তখন প্রায় বিকেল। ইয়াজ বাদে সবাই যেন আলাদা এক প্রকার আনন্দ করছে। রাতুলকে এটা ওটা বলে খোঁচাচ্ছে। রাতুলের মুখেও মুচকি হাসি। ইয়াজ আর রোদ একবার ভাবলো কি নিয়ে এতো খোঁচাখোঁচি কিন্তু ওরা আর ঘাটেনি এ ব্যাপারে।

আদ্রিয়ান সন্ধ্যার একটু আগেই মেডিকেলে আসে। উদ্দেশ্য রিশান আর রিসাবের সাথে টুকিটাকি কথা বলা। রিশানের ক্যাবিনে ডুকতেই রিশান বললো,

— কিরে বউ ছাড়া তুই একা কেন?

আদ্রিয়ান একটু হেসে বললো,

— বউ তো ক্লাসে।

— কিসের ক্লাসে?

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

— ক্লাস চলছে না ওর। সন্ধ্যার পর নাকি শেষ হবে আজ।

— ক্লাস তো আজ ৪ টার সময়ই শেষ হয়ে গিয়েছে।

— তাহলে ও তো আমাকে কল দিতো। এমনি সময় তো সন্ধ্যা হলে কল দেয়।

— কি বলছিস তুই। গত ১ মাসে তো হাতে গনা কয়েকদিন সন্ধ্যা হয়েছে এছাড়া আগেই শেষ হয়ে যায়।

আদ্রিয়ানের একটু খটকা লাগলো। রিশানকে আসছি বলে উঠে বাইরে এসে কল দিলো রোদকে। রোদ রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো,

— বলুন।

— কোথায় তুমি?

রোদ একটু ভরকে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে আস্তে করে বললো,

— ক্লা..ক্লাসে।

— ওহ। কখন শেষ হবে?

— আপনাকে না বল..বললাম সন্ধ্যায়।

— হুম। আমি ভাবলাম ভুলে বলেছো। কোথায় করছো ক্লাস?

এবার একটু ভয় পেল রোদ। মিনমিন করে বললো,

— মানে? কোথায় আবার ম্যেডিকেলে।

— ওহ। আচ্ছা। এতো হইচই কিসের?

— এ..এমনি।

— হুম। রাখি।

— আচ্ছা।

আদ্রিয়ান এবার একশত পারসেন্ট শিউর যে রোদ এতদিন রোদ ওকে মিথ্যা বলে আসছে। রাগে কপালের রগটা ফুলে উঠলো। কিসের জন্য এই মিথ্যা? আর কার কাছে আছে এখন ও? ভাবতেই ফোনের বিশেষ অ্যাপ অন করলো আদ্রিয়ান। রোদের ফোনের সাথে ওর টা কানেক্ট করা যা রোদ জানে না। যদি কোন বিপদ হয় তাই একাজ করেছিলো আদ্রিয়ান। ভাগ্য ভালো থাকায় আজ কাজে লেগে গেল। রোদের লোকেশন ধানমন্ডির দিকে। গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলো আদ্রিয়ান। জ্যাম না থাকায় তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল সেখানে। রাগ ওর তিরতির করে বেড়েই যাচ্ছে। আজ ও রোদের মিথ্যা বলা বের করেই ছাড়বে। এটকুন মেয়ের সাহস কত? ক্যাফের সামনে থামলো গাড়ি। ভাগ্য আজ সহায় ছিলো না রোদের।
অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটে গেল অনাকাঙ্খিত ঘটনা৷ কেক কাটার পর যখন রোদ গিফটটা রাতুলকে দিলো ইয়াজ বাদে সবাই হই হই করে উঠলো যা বোধগম্য হলো না ইয়াজ আর রোদের। রাতুল ঠোঁট এলিয়ে হেসে ধন্যবাদ জানালো। রোদ যাওয়ার জন্য তাড়া দিতেই রাতুল হুট করে হাটু গেড়ে বসলো রোদের সামনে। একটা গোলাপের বুকে সামনে তুলে বললো,

— আই লাভ ইউ রুদ্রিতা।

সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। কেউ কেউ সিটি বাজালো। কত প্রশংসা করলো। আশে পাশের লোকজনও তাকালো। রোদের উত্তর শুনার অপেক্ষা করতে লাগলো। রোদ আর ইয়াজ হতবাক হয়ে রইলো। অনেকক্ষন পরে রোদ বললো,

— আমার মেয়ে আছে জেনেও এমন কেন করলেন ভাইয়া?

— ও তোমার মেয়ে না জেনে গিয়েছি আমি। আই লাভ ইউ। উইল ইউ ম্যারি মি?

রোদ বাকহারা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। খারাপ ব্যবহার কিভাবে করবে ছেলেটার জন্মদিন বলে কথা। তাই বললো,

— ভাইয়া উঠুন প্লিজ।

— ভাইয়া ডাকলে আজ সারাদিনেও উঠবো না। নাম ধরে বলো।

বলেই রোদের হাত ধরলো।রোদ ছাড়াতে চাইলেও ছাড়ছে না রাতুল।ইয়াজ তাড়াতাড়ি উঠে এসে হাত ছাড়ালো।
আর কিছু শুনার বা বলার অপেক্ষা কি আদ্রিয়ান করে? নিজের চোখে সব দেখেছে সে। ভালোমন্দ বিচার করার সময় নেই তার কাছে। রোদ এরজন্য মিথ্যা বলেছে ওকে?প্রতিদিন এই ছেলের সঙ্গে সময় কাটায়? না আর ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। ঘাড়ের রগ টন টন করছে তাই একহাত দিয়ে ঘাড়ে ঘষলো। ধুপধাপ পা ফেলে ওদের সামনে গেল। রোদ এতক্ষণ তেমন কিছু না ভাবলেও এখন ওর হাড়ে কাঁপন ধরে গেল আদ্রিয়ানকে দেখে। ও তো মিথ্যা বলেছে।
আদ্রিয়ান কিছু না বলে শুধু রোদের হাত ধরে শুধু টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। রাতুল উঠে বাধা দিতে গেলেই ওর নাক বরাবর এক ঘুসি মারে আদ্রিয়ান। ছিটকে গিয়ে পাশে পড়লো রাতুল।সবাই ওকে ধরলো। রোদ ভয়ে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান কিছু না বলে শুধু ওকে গাড়িতে উঠিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। একটা কথাও বলে নি। ভয়ে রোদ ও চুপ করে ছিলো।

বাসায় গাড়ি থামিয়েই টেনে বের করলো রোদকে তখনই হোচট খেয়ে পায়ে ব্যাথা পায়। আদ্রিয়ানের তাতে কোন যায় আসে না। রোদের বা হাতে নখ ডাবিয়ে চেপে ধরে টেনে নিতে থাকে ভিতরে। ব্যাথায় রোদ কেঁদে উঠলো। ড্রয়িং রুমে ছিলো সাবা, আদ্রিয়ানের মা, জারবা আর জুরাইন। ফুপি আর জারা গিয়েছে বাইরে। টেনে ভিতরে আনতেই রোদের কান্নার আওয়াজে সবাই তাকায় ওর দিকে। কি হয়েছে বুঝার আগেই সজোরে এক থাপ্পড় পড়ে রোদের গালে৷ আদ্রিয়ান মা চিৎকার করে উঠে।বাকিরাও হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ছাড়াতে যেতে চাইলেই আরেকটা থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে পড়ে রোদ। ঠোঁটের কোনা কেটে যায় দাঁত লেগে। হু হু করে কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ানের মা রোদকে ধরে চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— আদ্রিয়ান! কি করছিস?

আদ্রিয়ান দ্বিগুন জোরে চিল্লিয়ে বললো,

— ওর সাহস কত আমাকে মিথ্যা বলে। আর… আর..

বলতে পারলো না আদ্রিয়ান। মায়ের হাত থেকে টেনে ছাড়িয়ে নিলো রোদকে। সিড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দিলো আদ্রিয়ান। বাইরে থেকে সবাই ডাকলেও দরজা খুলে নি।

_____________

বর্তমানঃ~

আদ্রিয়ানের রাগ কমলেও শান্ত হয় নি পুরোপুরি। রোদ ওখানে ওই ছেলের সঙ্গে কিসের সম্পর্ক? তাই শক্ত চোয়ালে জিজ্ঞেস করলো,

— ওই ছেলের সঙ্গে তোর কতদিনের পরিচয়?

রোদের চোখ নিভে নিভে আসছে। সারা শরীরে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কোন মতে উত্তর দিলো,

— এ..এক মাসের মতো।

— কিভাবে চিনিস ওকে।

চেপে ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে জিজ্ঞেস করতেই ঢলে পড়লো রোদ। আজ সকালের পর থেকে না খাওয়া রোদ। তার উপর এতো কিছু যেন সহ্য হলো না। এতক্ষণের সমস্ত রাগ যেন নিমিষেই আতঙ্কে পরিণত হলো যখন ঢলে পড়া রোদের নাক, মুখ দিয়ে লালা বেরিয়ে আসলো। ভয় পেয়ে গেল আদ্রিয়ান। চিল্লিয়ে ডাকলো,

— আম্মু! ভাবী!

বাইরের সবাইও ভয় পেয়ে গেল। কি হলো ভেতরে? আদ্রিয়ান কেন এভাবে ডাকছে? এতক্ষণে আরিয়ান এসে হাজির। জুরাইন আর ও মিলে দরজা ধাক্কা দেয়ার আগেই আদ্রিয়ান তড়িৎ বেগে তা খুলে রোদের কাছে এলো। বাকি সবাই হা হয়ে গোলো রোদকে এভাবে দেখে।ফ্লোরে পড়া রোদের মাথা নিজের কোলে তুললো আদ্রিয়ান। হাত দিয়ে মুখের লালা মুছে দিলো। অস্থির কন্ঠে ডাকলো,

— রোদ? এই রোদ। কি হয়েছে? ভয় পেয়েছো? আচ্ছা আর বকবো না। দেখি উঠো।

রোদের কোন হেলদুল নেই। চোখের পাতাগুলো শুধু একটু করে নড়ছে। আদ্রিয়ান কোলে তুলে নিয়ে অস্থির হয়ে বললো,

— ভাইয়া হসপিটালে নিতে হবে। কথা বলছে না রোদ।

আরিয়ান যেন রেগে গেলো আদ্রিয়ানের উপর। ধমকে উঠে বললো,

— যা নিয়ে যা। যখন জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে তখন বলিস বউ পিটিয়েছি। অসভ্য কোথাকার।

বলতেই রোদকে বেডে শুয়িয়ে দিলো আদ্রিয়ান। আরিয়ান রোদের পাল্স চেক করলো। জারবাকে বললো,

— জারবা রুম থেকে ফাস্ট এইডের বক্স নিয়ে আয়।

জারবা কান্না বাদ দিয়ে দৌড়ে গেল ভাইয়ের রুমে।
আদ্রিয়ান রোদকে ধরে বসে আছে। কি করে ফেলেছে ও এখন ভাবতেও পারে না। অন্য পাশে রোদকে ধরে আছে আদ্রিয়ানের মা।
আরিয়ান নিজের মতো চেক করলো। কপালের কাটা অংশে ছোট ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। মেডিসিন লিখে জারবার হাতে দিয়ে বললো,

— কাউকে দিয়ে আনা।

জারবা দৌড়ে যেতে নিলেই জুরাইন বললো,

— আমাকে দে।

জারবা দিতেই জুরাইন গেল মেডিসিন আনতে। আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে রইলো। আরিয়ান শক্ত কন্ঠে বললো,

— আম্মু রোদের মা-বাবাকে খবর দাও।

চমকে তাকালো আদ্রিয়ান। বলে কি? তাই জিজ্ঞেস করলো,

–বাবা – মাকে কেন খবর দিবে?

— দেখতে যে তাদের আদরের মেয়ের কী অবস্থা করেছিস তুই।

একটু শক্ত হলো আদ্রিয়ান। সেভাবেই বললো,

— তুই জানিস কি করেছে ও?

— যাই করুক তুই কোন সাহসে গায়ে হাত তুলিস?

— ও আমাকে মিথ্যা বলেছে। অন্য…

আটকে গেল আদ্রিয়ান। জারবা বলে উঠলো,

— ছোট ভাইয়া ছোট ভাবীর কোন দোষ নেই। মামি টাকা নিয়ে কথা শুনানোর পর থেকেই ছোট ভাবী কোচিং এ পরায়। আর রাতুল ভাইয়ারা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে ওই কোচিং খুলেছে। ভাবীর ফ্রেন্ডও পড়ায় সেখানে। ভাবী যাতে নিজের খচর নিজে চালাতে পারে তাই কোচিং করায়। তুমি না করার পর থেকে তো ভাবী নিজের বাসা থেকে টাকা নেয় না।

এতক্ষনে যেন সব ক্লিয়ার হলো আদ্রিয়ানের কাছে তবুও একটু চাপা রাগ রয়ে গেলো। কেন রোদ মিথ্যা বললো।কিন্তু সবাই কতকিছুর মধ্যে মিস করে গেল জারবাকে জিজ্ঞেস করতে যে ও এতকিছু কিভাবে জানে? আরিয়ান আবার বললো,

— আম্মু রোদকে নিয়ে যাই। এরুমে রাখার দরকার নাই।

আদ্রিয়ান একটু বিচলিত হলো। রোদের হাতটা চেপে ধরে বললো,

— ও এখানেই থাকবে।

— তোকে দিয়ে বিশ্বাস পাচ্ছি না আমি।

— দেখ আরিয়ান..

— দেখাদেখি রোদের মা বাবা এলে হবে।

বল দাঁড়িয়ে গেল আরিয়ান। ওর মাকে বললো,

— আম্মু রাতে রোদের ইনজেকশন আমি বাসায় দিয়ে দিব। আর ওকে এখন খায়িয়ে মেডিসিন দিয়ে দিয়ো। অয়েনমেন্টও আছে। তোমার ছেলে কোথায় কোথায় আঘাত করেছে সেখানে লাগাতে বলিও।

বলে সাবাকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। আদ্রিয়ান অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো। ওর মাও ওর দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। জারবাও মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ানের মা জারবাকে বললো,

— ওর কাছে বস। আমি খাবার নিয়ে আসি।

বলে উঠে গেলেন উনি৷ জারবা বুঝলো তার ভাইয়ের হয়তো একটু স্পেস চাই৷ এমন সময় জুরাইন মেডিসিন নিয়ে এলে জারবা তা টেবিলে রেখে জরবা জুরাইনের সঙ্গে বেরিয়ে গেল। আদ্রিয়ান আস্তে করে উঠে দরজা লাগিয়ে দিয়ে এলো। রোদের পরিহিত হিজাব ওড্রেসটা খুলে দিলো। ভেতরে চিকন হাতার একটা পেট পর্যন্ত একটা ইনার পরা রোদ। ওতো দিকে খেয়াল নেই আদ্রিয়ানের। রোদের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো। ঠোঁটের সাইড দিয়ে আবারও লালা বেরিয়ে আসলো যা নিজের হাতেই মুছে দিলো আদ্রিয়ান। কপালে সময় নিয়ে চুমু খেল। কাটা ঠোঁটে কতক্ষণ নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে রাখলো। না কাজ হচ্ছে না। পুরোপুরি শান্তি পাচ্ছে না আদ্রিয়ান। ওয়াসরুম থেকে ভিজা টাওয়াল এনে মুখ, গলা, ঘাড়,হাত, পা মুছিয়ে দিলো। খেয়াল করলো পায়ে ছিলে গিয়েছে। ভেবে পেল না কখন পেল ব্যাথা। মাথাটা কাজ করলো না। অস্থির লাগছে আদ্রিয়ানের। বুকে কেন জানি ব্যাথা লাগছে। অন্য সময় রোদের এমন রুপ দেখলে হয়তো ঘোর লেগে যেত আদ্রিয়ানের কিন্তু আজ তা হলো না। ভালোকরে মুছিয়ে দিয়ে মলম লাগালো পরপর হাতে,পায়ে। টেনে বুকে তুললো রোদকে। ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে সেখানে মলম লাগিয়ে দিলো। নখ ডেবে গিয়েছে ঘাড়ে। আদ্রিয়ান চুমু খেল রোদের গালে, গলায়, ঘাড়ে, হাতে, পায়ে। কি করবে, কি করবে আর ভেবে পেল না তাই আবারও ঠোঁট ডুবিয়ে রাখলো রোদের ঠোঁট। ছেড়ে দিয়ে রোদের একটা টিশার্ট এনে পরিয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। চোখ গলিয়ে পানি পরলো আদ্রিয়ানের। কেন সে আজ নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না? কেন হাত তুললো? ভুলতে পারছে না ঐ মুহূর্ত যখন রোদ আদ্রিয়ানের ভয়ে গুটিয়ে লুকিয়ে ছিলো। কি হবে যখন রোদের মা- বাবা আসবে? তারা আর দিবে না রোদকে। মিষ্টি কিভাবে থাকবে? আর আদ্রিয়ান ও কিভাবে রাতে ঘুমাবে? রোদকে ছাড়া তো ঘুম হয় না ইদানীং।

____________

কিছুক্ষন পরেই নড়েচড়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান ওর পাশে বসে আছে। এক হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অন্যহাতে রোদের একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আছে। রোদ নড়েচড়ে হঠাৎ করে পিটপিট করে চোখ খুললো। সামনে আদ্রিয়ানকে দেখা মাত্রই কি হয়েছে একটু আগে। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল রোদ। হুট করে উঠে বসলো। আদ্রিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদ চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,

— মামনি! ভাইয়া!

বলতে বলতে নিজের হাত ছাড়াতে লাগলো আদ্রিয়ান থেকে। আদ্রিয়ান হাত ছেড়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে বলতে লাগলো,

— রোদ। শুনো রোদ। আমার কথাটা…

আর কিছু বলার আগেই রোদ বেড থেকে উঠে গেল আর ডাকতে লাগলো। হুরমুর করে আদ্রিয়ানের মা, আরিয়ান, সাবা আর জারবা রুমে এলো। রোদ দৌড়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানের মাকে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— আ..আমাকে মারবে।

আদ্রিয়ানের মা অবিশ্বাস্য চোখে ছেলের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান তা বুঝে বললো,

— আম্মু আমি কিছু করি নি। ও উঠেই চিৎকার করছে।

ওনারা বুঝলো রোদ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আছে। আরিয়ান বললো,

— রোদ ও মারবে না। শান্ত হও বোন।

কে শুনে কার কথা রোদ কেঁদেই গেল। আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে বললো,

— রোদ এদিকে আসো।

ভয়ে আরিয়ানের পিছনে লুকালো রোদ যা দেখে আদ্রিয়ানের কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। রোদের চোখে শুধু আদ্রিয়ানের জন্য ভয় আর আতঙ্ক দেখতে পেল আদ্রিয়ান অথচ এই চোখে আদ্রিয়ানের জন্য ভালোবাসা, লজ্জা দেখতো আগে। আরিয়ান রোদকে বললো,

— রোদ ও কিছু করবে না। সামনে আসো।

সাবা রোদকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— রোদ আমার রুমে চল।

রোদ কেঁদে কেঁদে বললো,

— না না আম্মু আর ভা..ভাইয়াকে ড..ডেকে দাও। বাসায় য..যাব। থা..থাকব না আ..আমি।

আদ্রিয়ানের যেন এবার ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠল। এই রোদ বলে কি? কোথায় যাবে। এগিয়ে গিয়ে ওর মাকে বললো,

— আম্মু ওর খাবার নিয়ে এসো।

ওর মা আরিয়ানের দিকে তাকাতেই আরিয়ান ইশারায় যেতে বললো। উনি যেতেই আদ্রিয়ান অসহায় চোখে ভাইকে দেখলো। আরিয়ান যা বুঝার বুঝলো। সাবার কাছ থেকে রোদকে ছাড়ালো। নিজের সামনে ধরে বললো,

— আমি ভাই না তোর। কাঁদবি না। ও আর একবার কিছু বললে তোকে তোদের বাসায় দিয়ে আসবো। ওয়াদা করলাম।

আদ্রিয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রোদ যাবে না ওর কাছে। সাবাকে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

— রোদ আমি সরি। মাফ করে দাও প্লিজ। আর কোন দিন গায়ে হাত তুলব না।

শান্ত হলো না রোদ। বাসায় যাব, বাসায় যাব বলতে লাগলো। আদ্রিয়ান ইশারায় কিছু বলতেই সাবার থেকে রোদকে ছাড়িয়ে নিলেই রোদ সরে গেল। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রোদকে নিজের রুমে নিয়ে গেল আরিয়ান। এদিকে একবুক কষ্ট নিয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো আদ্রিয়ান।

_______________

সাবার রুমে খাবার নিয়ে এলো আদ্রিয়ানের মা। রোদ এখনোও সাবার বুকে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। বারবার বলছে বাসায় যাবে। শাশুড়ী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— মা না ভালো খাবি এখন।

রোদ কোন উত্তর দিলো না। নিজের মতোই রইলো। আরিয়ান কি বলবে ভেবে পেল না। রুম থেকে বেরুতে নিলেই দেখলো সাইডে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে অসহায় ভাবে। আরিয়ানকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। আরিয়ান ওকে নিয়ে নিচে গেল। দুজন বরাবর বসা। আরিয়ান বলা শুরু করলো,

–দেখ আদ্রিয়ান দেখে শুনে তুই ওকে বিয়ে করেছিস। জোর করে সব করেছিস। একরাতের মধ্যে বিয়ে করলি। কতটুকু একটা মেয়ে বিয়ে করে ওর কোলে একটা বাচ্চা দিয়ে দিলি। সবই তো করছে ইভেন বেশি করছে। আর কি চাইছিস তুই ওর থেকে? ও যে ইমমেচিউর তা তো তুই জানিস তাহলে বুঝা। তা না করে গায়ে হাত তুলা। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না তুই কি না এতো জঘন্য কাজ করলি।

কোন উত্তর দিলো না আদ্রিয়ান। মাথা নিচু করে রাখলো। আরিয়ান আবার বললো,

— দেখ না চাইতেও আমি বাধ্য হচ্ছি বলতে, তুই রোদের মাঝে অনিমাকে খুজছিস। চোখ আর কন্ঠ এক হলে মানুষ এক হয় না আদ্রিয়ান। অনিমার মতো মেচিউর না ও যে সব বুঝবে। আর কোন দিন এমন হলে আমি নিজে ওকে ওর বাড়ি দিয়ে আসবো। মনে রাখিস।

আদ্রিয়ান বসেই রইলো। এমন সময় মিষ্টি ঝাপিয়ে পরলো বাবার বুকে। জড়িয়ে ধরে বললো,

— বাবাই মাম্মা কোথায়?

আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। এখন কি করবে? রোদ তো আর এখন ঔ অবস্থায় নেই যে মিষ্টিকে সামলাবে।

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৭(বর্ধিতাংশ)

রাদের বাবা চাচারা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাদ আর জাইফার বিয়েটা ধুম ধাম করে দিবেন। একেতো মেয়ের বিয়ে হুট করে হয়ে গেল এখন যদি ছেলের ও এমন হয় তাহলে এলাকার লোকজন কী ভাববে। এছাড়াও এলাকায় খাঁন পরিবারের একটা নাম ডাক আছে। রাদকে জানালে সে ও দ্বিমত করে নি। শুধু বলেছে যাতে রোদকে এখানে আনার ব্যাবস্থা করে। জাইফার বাবাকেও ফোন করে জানানো হলো। দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিলো আগামী সপ্তাহে হলুদ,চলন, রিসিপশন সেরে নিবেন। এতকিছুর মধ্যে জাইফাকে জানালে ও শুধু বললো,

— আমি ঐ বাসায় যাব না রাদ।

রাদ একটু চমকে তাকালো। পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে জাইফার সামনে বসে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— একটা প্রশ্ন করি?

— এভাবে কেন বলেন রাদ? করুন।

— তোমার মায়ের সাথে তোমার কি সমস্যা জায়ু?

একটু অভিমান জমা হলো জাইফার। ইদানীং মায়ের কথা বলতে বা শুনতে ইচ্ছা করে না ওর। তবুও সে তো আর তার রাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে থাকতে পারে না। তাই বলা শুরু করলো,

— আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই আম্মু নানু বাড়ির প্রতি বেশি যত্নশীল ছিলো। বাড়ির বড় বউ বলে সবাই সম্মান করত। মাঝে মধ্যে আব্বু আর দাদু একটু আকটু বলতো। আম্মু তার ভায়ের ছেলে মেয়েদেরকে সবসময়ই বেশি আদর করত। এমনকি রোদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার কারণও তাই।

— মানে?

— অনিমা ভাবী মারা যাওয়ার পর আম্মুর ভাই জানায় তার বড় মেয়ের সাথে আদ্রিয়ান ভাইয়ার বিয়ের কথা কিন্তু আদ্রিয়ান ভাই তা সরাসরি না করে দেয়। আম্মু অনেক চেষ্টা করেও লাভ হয় নি। তাতেই সে রোদকে দেখতে পারেন না।
না সে রোদের সাথে এমন করত, না আপনি ঐ দিন এসব শুনতেন, না আমাকে খারাপ ভাবতেন, না এমন হতো রাদ।

বলতেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরলো জাইফার। রাদ ওকে সন্তপর্ণে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— কেঁদো না জায়ু। সব ঠিক আছে। যতটুকু নেই তা আমরা ঠিক করে নিব।

— আপনার ঘৃণা করে না আমাকে ছুঁতে?

রাদ ঝিটকে সরিয়ে দিলো জাইফাকে। জাইফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। রাদ শান্ত কন্ঠে শাসিয়ে বললো,

— আমি কিন্তু মানুষটা বেশি সুবিধার না জাইফা। রাগলে মাথা ঠিক থাকে না আমার। রাগীও না আমায়। রেগে গিয়ে কি করব নিজেও জানি না।

জাইফা অবাক হয়ে শুনলো। এই প্রথম বিগত দুই দিনে রাদ ওকে জাইফা বলে ডাকলো। রাদ এগিয়ে এসে আবারও ওকে জড়িয়ে ধরলো। মাথাটায় চুমু বললো,

— তুমি আমার বাম পাঁজরের হাড় না? আমার অর্ধেক অঙ্গ না? তাহলে কেন নিজের অঙ্গকে ছুঁতে ঘৃণা হবে জায়ু। ওয়াদা করো এ বিষয়ে আর কোন দিন কথা উঠবে না। করো ওয়াদা।

— করলাম।

জাইফা অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে এমন রাদকে দেখে। রাগচটা রাদের এমন রুপ বুঝি আছে? যেমন রুপে সে জাইফাকে ভালোবাসে। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত। আদোও বাসে কি না আল্লাহ মালুম।

_____________

আদ্রিয়ান মিষ্টিকে অনেক কষ্টে বুঝতে পারলো ওর মাম্মা অসুস্থ তাই তার কাছে যাওয়া যাবে না। ছোট মিষ্টি বুঝলো কিন্তু বেশিক্ষনের জন্য না। একটু পরই কান্না জুড়ে দিলো মাম্মাকে ডেকে। আদ্রিয়ান ওকে সামলাতে পারলো না। আবার রোদের কাছেও যেতে পারলো না।
আদ্রিয়ানের মা অনেক কষ্টে রোদকে দু লোকমা ভাত খাওয়ালো। ক্ষুধা থাকলেও খেতে পারলো না রোদ। কান্নার কারণে গলা দিয়ে খাবার নামছিলো না। আজ যেহেতু আরিয়ানের নাইট ডিউটি তাই রোদকে সাবার কাছেই রাখবে। একথা শুনে এখন আদ্রিয়ানেরই কান্না আসছে। ওতো আর মিষ্টির মতো কাঁদতে পারছে না। এভাবে রোদ দূরে দূরে থাকলে ও কিভাবে থাকবে তা কি কেউ ভাবছে? ভাববে কিভাবে কেউ তো কথাই বলছে না ওর সাথে।
আদ্রিয়ানের দিকটা কেউ বুঝতে পারলো না আর নাই বুঝতে চাইলো। নিজের বউকে যখন মিথ্যা বলতে শুনলো তার উপর অন্য এক ছেলের কারণে আর দেখলো কি না সে ছেলেই ওর বউকে প্রপোজ করছে ফুল দিয়ে আর হাতও ধরে ছিলো। তখন কোন পুরুষ কিভাবে ঠিক থাকে? আদ্রিয়ান ও ঠিক থাকতে পারে নি।
একটু পর রোদকে শুয়িয়ে সাবা রুম থেকে বের হতেই দেখলো আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সাবা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান বললো,

— ভাবী।

— বলো।

— প্লিজ ভাবী। এমন করো না। আমি একটু ওর কাছে যাই?

সাবার মায়া হলো। তবুও বললো,

— নিজের বউয়ের কাছে যেতে অনুমতির প্রয়োজন হয় এমন কাজ করো কেন?

……..

— যেতে পারো যদিনা রোদ কিছু না বলে ।

বলে চলে গেল সাবা। আদ্রিয়ান ধীর পায়ে ভিতরে ডুকলো। খাটে গুটিয়ে শুয়ে আছে তার রোদ। নাদুসনুদুস রোদ যেন ঘন্টার ব্যাবধানে ভেঙে গিয়েছে। ফুলা ফুলা গাল দুটো যেন আরো ফুলে লাল হয়ে আছে। আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। কি করেছে আদ্রিয়ান তার নিজের হাতে ভাবতেই নিজের হাত মুঠ করে সজোরে দুইটা ঘুষি মারলো দেয়ালে। এতে কি তার মন শান্তি পেল? না পেল না। আওয়াজে চোখ খুললো রোদ। আদ্রিয়ানকে দেখে ভীত চোখে তাকালো। পেছাতে লাগলো। না জানি আবার মেরে বসে? আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে হাত বাড়িয়ে ডাকলো,

— রোদ।

রোদ একটু পেছালো। আদ্রিয়ান আবার ডাকলো,

— রোদ।

ভয়ে ভয়ে রোদ বললো,

— না। আপনি মারবেন।

রোদের এই ভয় যে আদ্রিয়ানের কলিজায় সুক্ষ্ম সুচের বিধে যাওয়ার ব্যাথা দিচ্ছে তা কি রোদ বুঝে? না বুঝে না। বুঝলে বুঝি দূরে যেত? আদ্রিয়ানের চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে। ধরা গলায় হাতটা বাড়িয়ে রেখেই বললো,

— প্লিজ রোদ। কাছে আসো।

রোদ ভয়ে কোন ঘেঁষে বসে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান হাঁটুতে ভর দিয়ে ওর কাছে গেল। রোদ হয়তো কান্নার কারণে খেয়াল করেনি। যখন নিজের এতো কাছে আদ্রিয়ানকে দেখতো তখন সরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ঝাপটে ওকে নিজের বুকে পুরে নিলো। ছটফটিয়ে উঠলো রোদ। ছাড়া পেতে চাইলো। আদ্রিয়ানও ততটাই শক্ত করে ধরে রাখলো। রোদের শান্ত হওয়ার নাম নেই তাই আদ্রিয়ান একটু ধমকে বললো,

— এত ছটফট করলে কিন্তু…

আর কিছু বলতে হলো না তার আগেই একেবারে শান্ত হয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান শুধু বললো,

— আমার মাথা ঠিক ছিল না রোদ। কিছু বুঝতে পারি নি আমি। কিভাবে এমন করলাম আমি রোদ? তুমি ভালো নেই সোনা৷ আমার কাছে ভালো নেই। ওরা জানলে নিয়ে যাবে তোমায়। দিবে না আর আমাকে। আমি কি করব রোদ?

অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে রইলো আদ্রিয়ান। দূর্বল রোদ আর নড়াচড়া করলো না। শেষ সময়ই শুধু শুনতে পেল কান্না জড়ানো কন্ঠে,

— মাফ করে দাও সোনা। আর কোন দিন মারব না। প্লিজ মাফ করে দাও।

এরপর আর মনে নেই ওর। আদ্রিয়ান বুক থেকে তুলে দেখলো রোদ ঘুমিয়ে গিয়েছে। আস্তে করে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। এমন সময় হিচকি তুলতে তুলতে ঢুলু পায়ে মিষ্টি ডুকলো রুমে। পেছনে জারবাকে দেখে আদ্রিয়ান ওকে যেতে বললো।জারবা যেতেই মিষ্টি হাত বাড়িতে দিলো আদ্রিয়ানকে। মানে আমাকে খাটে উঠিয়ে দাও। এই রুমের খাটটা একটু উঁচু। আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়ে মেয়েকে তুলে দিলো। মিষ্টি মায়ের কাছে যেয়ে দেখলো মা ঘুম। তাই বাবার দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান অপরাধীর মতো মুখ করে বসে আছে। মিষ্টি কিছু বুঝলো না। মায়ের গাল গাল লাগিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু ঘুম আসলো না। আসবে কি করে মা তো ঘুম পারিয়ে দেয়। একা একা কি ঘুম আর আসবে? ঠোঁট উল্টে বাবার দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান মেয়ের কান্ড দেখছে। মা ছাড়া বড় হওয়া সন্তান হঠাৎ মায়ের আদর পেলে তখন কি আর তার আর মা ছাড়া চলে? উহু একটু চলে না। এই যে মিষ্টির চলছে না। মিষ্টি এবার মায়ের বুকে নাক, মুখ ঘঁষে দিলো তবুও মা নড়লো না শুধু একটু গুটিয়ে শুয়ে পরলো। মিষ্টি ছলছলে চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ানের এখন নিজেকে দুনিয়ায় সবচেয়ে অসহায় লোক মনে হচ্ছে।
একটুপরই মিষ্টি মায়ের গালে নিজের ছোট্ট আঙুল ছুঁয়ালো৷ লাল লাল দাগ দেখতেই নিজের গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট দিয়ে আদর করে দিলো। এমন সময় রোদ হুট করে জড়িয়ে নিলো মিষ্টিকে নিজের বুকে। মিষ্টি ও আদুরে বাচ্চার মতো মায়ের বুকে মুখ গুজে শুয়ে রইলো।
আদ্রিয়ান হা হয়ে দেখলো নিজের মেয়েকে। কতটা চালাক তার মেয়ে। নিজের অধিকার নিজে আদায় করে নিলো হোক সেটা নিজের ঘুমন্ত মা থেকে। কিছু সময়ের মধ্যে মিষ্টিও ঘুম।

একটুপরই দরজায় নক করে দাঁড়িয়ে রইলো জারবা। আদ্রিয়ান তাকাতেই জারবা বললো,

— আব্বু ডাকে।

আদ্রিয়ান দীর্ঘ নিশ্বাস নিল। এখন কি হবে তার জানা আছে। জারবার সাথে নিচে গেল আদ্রিয়ান। বাবার রুমে যেয়ে নক করতেই ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর এলো,

— ভেতরে এসো।

ভেতরে বাবা মা বসা। আদ্রিয়ান ডুকে পাশের সোফায় বসলো। ওর বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— কি শুরু করেছো তুমি।

মাথা নিচু করে আদ্রিয়ান বললো,

— ভুল হয়ে গিয়েছে বাবা।

— ভুল? কেমন ভুল? একটা মেয়েকে টেনে হিচরে বাড়ি এনে ছোট বড় সবার সামনে মারলা। এটা ভুল? নাকি সবাই থামানোর পরও রুমে আটকে মানষিক অত্যাচার করলা ওটা ভুল?

আদ্রিয়ান চমকে তাকালো। প্রতিবাদী শুরে বললো,

— বাবা! মানুষিক অত্যাচার বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছ?

— তুমি অতোও অবুঝ নয় আদ্রিয়ান। বিয়ের আগেই ওর পরিবার স্পষ্ট বলেছে যে রোদ নরম স্বভাবের। ওর বাবা মা যেখানে বকা দেয় না মেয়েকে সেখানে তুমি হাত কিভাবে তুললা? রুমে আটকে ভয় কিভাবে দেখালা? এটা কি মানুষিক অত্যাচার না? আমার বাড়িতে বউ মারা আমি সহ্য করব না আদ্রিয়ান। প্রয়োজনে রোদকে ওর বাড়ি পাঠিয়ে দিব।

— বাবা!

— ওই মেয়েটাও আমায় বাবা ডাকে আদ্রিয়ান। আজ যদি জারবার সাথে এমন হতো তুমি কি করতে?

— আমার মাথা ঠিক ছিল না বাবা। মাফ করে দাও। আর হবে না।

আদ্রিয়ানের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ছেলেকে বললেন,

— আর হলে কথার সুযোগ থাকবে না আদ্রিয়ান। খেয়াল জানো থাকে।

— থাকবে।

উঠে বাইরে চলে গেল আদ্রিয়ান। বুকের ব্যাথাটা যেন বেড়ে যাচ্ছে। এই ব্যাথা বাড়ানোর জন্য সেই মুহূর্তে হাজির হলো আদ্রিয়ানের আপন মা। ভাবা যায় এসব? মা হয়ে ছেলের বুকের ব্যাথা বাড়াতে এসে বললো,

— আদ্রিয়ান। রাদ আর জাইফার বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে আগামী সপ্তাহে। রোদ আর মিষ্টিকে নিয়ে আজ যেতে বলেছে।

— আমি এখন ওদের নিয়ে কিভাবে যাবো?

— আমি কি জানি? তুই যা খুশি কর।

বলে চলে গেলেন উনি। আদ্রিয়ান ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। কি করবে ভেবে পেল না আদ্রিয়ান। এমন সময় জারবা এসে বসলো ভাইয়ের কাছে। আস্তে করে ডাকলো,

— ভাইয়া?

— হুম।

………

— কি হলো কিছু বলবি নাকি সবার মতো মুখ ঘুরিয়ে রাখবি?

কেঁদে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো জারবা। আদ্রিয়ান প্রথমে চমকে গেলেও বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। শান্ত কন্ঠে বললো,

— কি হয়েছে? শয়তানের নানী কাঁদে কেন?

— আমি ভয় পেয়েছিলাম ভাইয়া। তোমাকে এমন দেখি নি কখনো। তুমি তো এমন না ভাইয়া। তাহলে?

আদ্রিয়ান বোনকে জড়িয়ে ধরলো। সহসা ওর আত্মা কেঁপে উঠল। জারবা দূর থেকে এতোটা ভয় পেলে রোদ তখন কতটা ভয় পেয়েছে? এজন্য আদ্রিয়ানকে দেখতেই গুটিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ ফোন বাজাতেই জারবা সরে গেল। আদ্রিয়ান দেখলো রাদ কল করেছে। রিসিভ করতেই সালাম দিয়ে রাদ বললো,

— আদ্রিয়ান। কখন আসছেন আপনারা? রুদ্র পাগল হয়ে যাচ্ছে। রোদ ও নিশ্চিত লাফাচ্ছে?

সালামের উত্তর দিয়ে আদ্রিয়ান বললো,

— ও এখনও জানে না রাদ।

— মানে?

— শরীর ভালো না তাই ঘুমাচ্ছে। তাই ডাকতে চাচ্ছি না।

— এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালো? কি হয়েছে?

— না৷ তেমন কিছু না। কাল না হয় নিয়ে আসবো।

— আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। ওর খেয়াল রাখবেন প্লিজ। যদিও আমি জানি আপনার মতো খেয়াল কেউ রাখে না।

— হুম।

বলে কল কাটলো আদ্রিয়ান।

______________

রাতে ঘটলো আরেক কান্ড। রোদকে নিজের রুমে নিতে দিবে না আদ্রিয়ানের মা। কি আর করার? একাই নিজের রুমে এলো আদ্রিয়ান। লাইট অফ করে শুয়ে পরলো। এক ঘন্টা এপাশ ওপাশ করলো। লাভ হলো না। ঘুম এলো না। রোদের টেনশনে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। ধপ করে উঠে বসলো। লাইট অন করে বাহির হলো রুম থেকে। আরিয়ানের রুমের সামনে এসে দরজা নক করতেই সাবা খুলে দিলো। আদ্রিয়ানকে দেখেই ফিক করে হেসে উঠলো। আদ্রিয়ান অপ্রস্তুত হয়ে গেল। সাবা বললো,

— যাও।

আদ্রিয়ান ভেতরে গিয়ে আস্তে করে পাজকোলে তুলে নিলো রোদকে। রোদের শরীর গরম গরম লাগছে। আদ্রিয়ান সাবাকে বললো,

— মিষ্টিকে রেখে গেলাম।

— যাও। আর কিছু যেন না হয়।

— হবে না ভাবী।

বলে রোদকে নিয়ে রুমে এলো আদ্রিয়ান। আস্তে করে শুয়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান আস্তে করে লাইট অফ করে এলো। পাশে শুয়ে বুকে টেনে নিলো রোদকে। এখন কিছুটা শান্তি পাচ্ছে বুকে। মাথায় চুমু খেল পরপর সারা মুখে সহ গলায় সময় নিয়ে চুমু খেল। এতে করে কিছুটা জেগে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ানের তাতে হেলদুল নেই। ও নিজের কাজে ব্যাস্ত।একটু পর রোদ নড়েচড়ে উঠলো। আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরলো। গালের সাথে গাল লাগিয়ে আদর করলো। চুমু খেল। রোদ চুপ করে আছে। হঠাৎ ঘাড়ে ভেজা অনুভব হলো। ফুঁপানোর শব্দ পেল। বুঝলো আদ্রিয়ান কাঁদছে। দেখতে মন চাইলো আদ্রিয়ানের কান্না কিন্তু পারলো না। আদ্রিয়ান শক্ত করে বুকে আটকে রেখেছে পারে না ভেতরে পুরে নেয়। রোদ ভাবলো,
আচ্ছা কেমন লাগে যখন আদ্রিয়ান কাঁদে?

দূর্বল কন্ঠে রোদ বললো,

— কাঁদছেন কেন?

উত্তরে আদ্রিয়ান রোদের ঘাড়ে ঠোঁট চেপে কান্না আটকালো। রোদ নিজের হাত দিয়ে আদ্রিয়ানকে সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। এই শক্ত আদ্রিয়ান ছাড়ছে না। তাই বললো,

— ছাড়ুন। সরুন।

— উহু

— মারলেন কেন? কখনো দেখেছেন আমার আব্বুকে আমার আম্মুকে মারতে?

……..

— আপনার জ..জন্যই আম্মু প্র..প্রথমবার থাপ্পড় মেরেছি..লো আমায়। আপনি কেন মারলেন? আপনার কাছে থাকব না আমি। ভা..ভালোবাসেন না আমায়৷ ভালোবাসার মা..মানুষকে বুঝি কেউ মারে?

আদ্রিয়ান কি বলবে ভেবে পেল না। ঘাড় থেকে মুখ তুলে রোদের ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। রোদ কিছু বললো না।রোদের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট নেড়ে নেড়ে আদ্রিয়ান বললো,

— আমায় মাফ করে দাও সোনা। আর হবে না এমন।ওয়াদা দিলাম। সোনাপাখি আমার মাফ করে দাও।

আটো কতশত আদুরে কথা বললো আদ্রিয়ান। শেষ বড় একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো।

__________

রোদের জ্বর বেড়েই যাচ্ছে। তন্দ্রা লেগে গিয়েছিলো আদ্রিয়ানের। এমন সময় টের পেল রোদ নিজের ঠোঁট দিয়ে আদ্রিয়ানের গলায় বুলাচ্ছে যেন কিছু খুঁজছে। তন্দ্রা কেটে গেল আদ্রিয়ানের। রোদ নিজের কাজ করেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান আস্তে করে ডেকে বললো,

— রোদ। পানি খাবে?

উত্তর দিলো না রোদ। আদ্রিয়ান আস্তে করে উঠে ল্যাম্প জ্বালালো। রোদকে নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে বসালো।এক গ্লাস পানি রোদের মুখের সামনে দিলে পুরোটা খেল রোদ। আরো এক গ্লাস দিলে তাও খেলো। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে আরেক গ্লাস দিলে তার অর্ধেক খেয়ে আর খেল না রোদ। আদ্রিয়ান নিজের টিশার্ট খুলে ফেললো। গরম লাগছে ওর। রোদের শরীরের গরমে ওর শরীর ঘেমে যাচ্ছে। এসিও অন করতে পারছে না। ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে তবুও জ্বর ছাড়ছে না। ওকে নিজের বুকে নিয়েই শুয়ে রইলো আদ্রিয়ান।
একটু পরই ঘেমে উঠলো রোদ। ভিজে গেল পুরো। আদ্রিয়ান নিজেই রোদের পরনের টিশার্ট খুলে দিলো। ভিতরে চিকন হাতার ইনার পড়া রোদ। টাওয়াল দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিলো আদ্রিয়ান।
এসি অন করে দিলো। এমন অবস্থায় রোদকে দেখে পাগল হওয়ার জোগার হয়েছে আদ্রিয়ানের। রোদের গলার নিচে কয়েকটা চুমু খেয়ে লাইট অফ করে দিলো আদ্রিয়ান।

#চলবে…..