ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৪৮+৪৯

0
90

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৮

ভোর ৪ টার দিকে জেগে উঠলো রোদ। নড়েচড়ে উঠতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো আদ্রিয়ানের নগ্ন বুকে। মনে পরলো রাতের কিছু আদুরে মুহূর্ত। কতশত বার মাফ চাইলো এই লোক। কতশত বার কাঁদলো রোদকে হারানোর ভয়ে। কত আদর করে চুমু খেল সারা মুখে। অথচ কি ভয়ংকর ই না লাগছিলো তখন। ভাবতেই গা শিউরে উঠলো রোদের। সরে যেতে নিলো আদ্রিয়ানের বুক থেকে কিন্তু পারলো না। আদ্রিয়ান শক্ত করে ধরে রাখলো। রোদের ও শরীরে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নড়াচড়া করার কারনে আদ্রিয়ান উঠে গেল। চোখ কঁচলে বললো,

— কি হয়েছে? খারাপ লাগছে?

রোদ কিছু না বলে সরার চেষ্টা করলো। আদ্রিয়ান ওকে না ছেড়ে একহাত কপালে ছুয়ালো। এখনও হাল্কা গরম। অসহায় চোখে তাকালো রোদের দিকে। তার রোদ কি এখনও রেগে আছে? রাগার ই কথা। তবুও সাহস করে কিছু কিছু বলার আগেই রোদ বললো,

— ছাড়ুন গরম লাগছে আমার।

আদ্রিয়ান এসিটা অন করে দিলো। রোদের কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— রেগে আছো?

— ছাড়ুন।

— আগে বলো?

— আপনার কি মনে হচ্ছে?

— মাফ করে দাও সোনা।

রোদ কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান বুঝলো ওর রাগ। তাই আবার বললো,

— শেষ বারের মতো মাফ করে দাও রোদ। আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার মাথা ঠিক ছিল না তখন।

আদ্রিয়ানের এতোবার মাফ চাওয়া বিরক্ত লাগলো রোদের। এই লোক এতো কেন মাফ চায়?তাই আদ্রিয়ান আবার কিছু বলার আগেই রোদ ওর ঠোঁটে নিজের আঙুল ছুঁয়িয়ে চুপ করিয়ে দিলো। ওর বুকের মধ্যে রয়েই বললো,

— ভয় পেয়েছিলাম আমি। ভয়ংকর লাগছিলো আপনাকে। মারলেন কেন হুম? আমি বুঝি ব্যাথা পাই নাই? কেউ কি তার বউকে মারে?

–মাফ করে দাও সোনা…

— বারবার এক কথা কেন বলছেন? আমি কি মাফ চাইতে বলেছি? শুধু বলেছি ব্যাথা পেয়েছি আর ভয় পেয়েছি।

আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে নিলো। পারে না বুকে ভরে রেখে দেয়। কতক্ষন আদর করে দিলো। কিছুক্ষন পর রোদের জ্বর ছেড়ে দিলো। ঘেমে উঠলো সারা শরীর। সরে যেতে নিতে বললো,

— ঘেমে গিয়েছি। ছাড়ুন। গোসল করব আমি।

— এখন করতে হবে না। ঠান্ডা লাগবে।

— আমার অসস্তি লাগছে। কাল গোসল করা হয় নি।

— আমি শরীর মুছিয়ে দিয়েছিলাম।

— আগে উঠতে তো দিন।

বলে উঠলো রোদ। সাথে সাথে ঘাড়ের ব্যাথায় “আহ” করে উঠলো। আদ্রিয়ানও তাড়াতাড়ি উঠে বললো,

— কি হলো?

— ঘাড়ে ব্যাথা করছে।

ব্যথাটা নড়া পড়ায় বেড়ে গেলো। কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান যেন ছটফটিয়ে উঠলো। সব ভুলে পাশে টেবিল থেকে মলমটা হাতে নিলো। রোদকে বুকে চেপে নিয়ে আস্তে করে লাগিয়ে দিলো। বুকে ধরেই বসে রইলো কতক্ষণ।
বেশ কিছুক্ষন পর ব্যাথা একটু কমলো তবুও শান্তি নেই। উঠতে নিলেই নিজের দিকে খেয়াল হলো রোদের। ওর পরিহিত টিশার্টটা ওর শরীরে নেই। শুধু মাত্র লং ইনার পড়া। এমন ভাবে বসে আছে ও আদ্রিয়ানের সামনে। ভাবতেই রোদের ফোলা ফোলা গাল দুটো লজ্জায় গরম হতে লাগলো। তড়িঘড়ি করে নিজেকে ব্লাংকেট দিয়ে ডাকলো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

— কি হয়েছে?

রোদ রাগী কন্ঠে বললো,

— আমার টিশার্ট কই?

— ঘেমে গিয়েছিলে তাই খুলে দিয়েছিলাম।

— আপনার টিশার্ট কই?

— তোমার দেহের উষ্ণতায় আমিও ঘেমে নেয়ে গিয়েছিলাম বউ।

রোদের রাগ হলো। তবুও বললো,

— যান এখান থেকে আমি সাওয়ার নিব।

আদ্রিয়ান অবাক হওয়ার ভান করে বললো,

–তুমি কি বেডে বসে সাওয়ার নিবা যে আমার যেতে হবে?

— আপনার সামনে কিভাবে যাব?

— সারা রাত এভাবেই আমার বুকে ছিলা বউ। আসো এবার।

বলে টেনে টুনে বের করে কোলে তুলে ওয়াসরুমে নিয়ে গেল আদ্রিয়ান। সাওয়ার অন করে দিয়ে বললো,

— বেশিক্ষন ভিজবে না।

আদ্রিয়ান বেরিয়ে যেতেই রোদ ভেংচি কাটলো। এখন এত কেয়ার দেখানো হচ্ছে তখন কেমন করছিলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো রোদ, আদ্রিয়ানের সাথে বেশি একটা কথা বলবে না। উচিত শিক্ষা দিবে রোদ। যদিও রোদ জানে এসবের সবই ভেস্তে যাবে আদ্রিয়ানের সামনে গেলে।
ভাবতে ভাবতেই গোসল শেষ করলো রোদ। কিন্তু ড্রেস আনেনি সাথে। তাই দরজা একটু ফাঁকা করে গলা বের করে যেই না আদ্রিয়ানকে ডাক দিবে তার আগেই দেখলো ঠিক দরজার বাইরে রোদের ড্রেস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। রোদ কিছু না বলে ড্রেস নিয়ে দরজা লক করে দিলো। একটু লজ্জাও পেল এই লোক ওর সবগুলো প্রয়োজনীয় কাপড় দিয়েছে। অবশেষে বের হলো রোদ। রোদ একটু খুড়িয়ে হাঁটছিলো পায়ের মোচকানোর জন্য। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলে সোজা বেডে বসিয়ে দিয়ে বললো,

— বসে থাক আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

রোদ কিছুই বললো না। আদ্রিয়ান ফ্রেশ হতে চলে গেল। রোদ আস্তে করে উঠে আলমারি থেকে নতুন বেডশিট বের করে চেঞ্জ করতে লাগলো। এমন সময় আদ্রিয়ান ওকে এসব করতে দেখে একটু রেগে গেল। এই মেয়ে কথা কেন শুনে না?কিন্তু রাগ করলে চলবে না। তাই বললো,

— রোদ তুমি যে এত ফাস্ট তা তো জানতাম না।

রোদ কিছু না বুঝতে পেরে কপাল কুচকে তাকালো। তা দেখে আদ্রিয়ান বললো,

— বেডসিট চেঞ্জ করার মতো কিছু হয় নি বউ। আমি তো শুধু তুমি ঘেমে গিয়েছিলে বলে তোমার টিশার্ট খুলে দিয়েছিলাম আর নিজেরটাও খুলেছিলাম। আর তুমি কি সব উল্টো পাল্টা ভেবে বেডসিট চেঞ্জ করছো।

রোদের চোয়াল ফাঁক হয়ে গেল আদ্রিয়ানের এমন টাইপের কথা শুনে। রোদ তো মোটেও এসব ভাবে নি। হঠাৎ আদ্রিয়ানের ঠোঁটে লজ্জা লজ্জা হাসি দেখে গা জ্বলে উঠলো রোদের। একটু রেগেই বললো,

— বাজে কথা বন্ধ করুন আপনি। ঘেমে আমার সাইডের বালিশের কাভার সহ ভিজে গিয়েছে তাই চেঞ্জে করছি।

আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো।যাক বউ কথা বলছে এই বেশি। এগিয়ে গিয়ে রোদকে নিজের কাছে টেনে আনলো। সরে যেতে চাইলো রোদ। হাজার সে মাফ করে দিক আদ্রিয়ানকে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের ঐ রুপ ব্যবহার এখনও মেনে নিতে পারে নি রোদ যা রোদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারে আদ্রিয়ান। তাই ওর গালে আদর করে বললো,

— এখনও মাফ করতে পারো নি।

— মাফ করে দিয়েছি কিন্তু ভুলতে পারছি না।

বলেই কেঁদে উঠলো রোদ। কেঁদে কেঁদে বললো,

— আপনার এমন করা উচিত হয় নি। মোটেও না। আমি ভুলতে পারছি না।

আদ্রিয়ান কি বলবে, কি করবে তাও বুঝতে পারলো না। আলগোছে জড়িয়ে ধরে বললো,

— তোমাকে আমি প্রতিদিন জিজ্ঞেস করতাম রোদ কিছু লাগবে কিনা?কোন বই কিনতে হবে কি না? প্রতিদিন হাত খরচ রেখে দিতাম তোমার ব্যাগে তবুও জিজ্ঞেস করতাম কি লাগবে না লাগবে। কিন্তু তুমি কি করলা রোদ? যেই টাকা আমি দিতাম তা আমার আলমারির ড্রয়ারে রেখে দিতা। সবসময় বলতা না কিছু লাগবে না, কোন বই লাগবে না। আর মামী যদি কিছু বলেও থাকে তোমার বুঝা উচিত ছিলো তুমি তোমার স্বামীরটা খরচ করবা তা না হলেও আমায় বলতে পারতা।

রোদ একদম চুপ করে গেল। আদ্রিয়ান ভুল কিছু বলে নি বরং প্রতেকটা কথা ঠিক। আদ্রিয়ান আবারও বললো,

— যখন রিশানের কাছে জানলাম তোমার ছুটি অনেক আগে হয়েছে ইভেন রোজই তুমি মিথ্যা বলতা রোদ। তারমধ্য আমি যেতেই কি দেখলাম বলো তো? একটা ছেলে তোমার তোমাকে প্রপোজ করছে তাও হাত ধরে রেখেছে। এজ এ হাজবেন্ড আমার ব্যাবহার কি স্বাভাবিক কি স্বাভাবিক ছিলো না? হয়তো একটু বেশীই করে ফেলেছি। আ’ম সরি এগেইন সোনা।

রোদ কিছু বললো না। চুপকরে শুনলো আদ্রিয়ানের কথা। আদ্রিয়ান জানে তার এই বোকাপাখি এখন নিজেকে দোষরোপ করবে। তাই বুক থেকে তুলে দু’হাতে রোদের গাল ধরে চুমু খেল কপালে। আস্তে করে বললো,

— মনে রাখবে আমার সব তোমার। এই আমিটাও তোমার। শুধু বুকের বা পাশের ছোট্ট হৃদপিণ্ডে ভাগ করা। সেখানে আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি ঠিক ততটাই আমার অনিমাকেও ভালোবাসি।
কখনো কিছু লুকাবে না। আমার থেকে। ঠিক আছে?

— হু।

— ভুলার চেষ্টা করো সব। ওকে?

— হু।

— এখন কেন মন খারাপ?

— আমার দোষেই সব হলো?

— একবারও বলেছি আমি একথা?

— আমি বুঝি।

— একটু বেশিই বুঝো তুমি।

বলে টান টেনে দিলো রোদের। এমন সময় কল এলো আদ্রিয়ানের। আরিয়ান করেছে। এত সকালে কেন করলো ভেবেই রিসিভ করলো আদ্রিয়ান। হ্যালো বলতেই আরিয়ান বললো,

— আমি মাত্র বাসায় এলাম। রোদের তো ইনজেকশন পুস করা হয় নি কাল রাতে। এখন দিয়ে যাব।

— মেডিসিন ও দেয়া হয় নি।

— বেশি কথা না বলে দরজা খুল।

— এমন করিস কেন? খুলছি তো।

আদ্রিয়ান দরজা খুলতেই আরিয়ান রুমে ডুকলো। রোদের যা বুঝার বুঝে গেল রোদ। আসহায় চোখ করে তাকালো আরিয়ানের দিকে। আরিয়ান একটু হেসে বললো,

— একটুও টের পাবে না দেখো।

আদ্রিয়ান যেয়ে রোদকে জড়িয়ে ধরলো। রোদ আদ্রিয়ানের পেটে মুখ গুজে রইলো। আরিয়ান পুস করতেই রোদ “উমম” করে উঠলো। আরিয়ান বললো,

— হয়ে গিয়েছে।

এরপর টুকটাক কথা বলে চলে গেল আরিয়ান। রোদকে কাউচে বসিয়ে আধ বিছানো চাদরটা আদ্রিয়ান বিছিয়ে দিলো। কাছে যেয়ে রোদের মাথার টাওয়াল খুলে নিজেই মুছিয়ে দিলো। অয়েনমেন্ট এনে ওর দুগালে, ঘাড়ে, হাতে লাগিয়ে দিলো। রোদের সামনে এসে বসে বললো,

–কি খাবে?রাতে তো কিছু খাও নি?

— কেউ তো উঠে নি মাত্র তো ৭ টা। মিষ্টি কি জারবার কাছে?

— না ভাবীর রুমে।

— আল্লাহ ও কি খেয়েছিলো রাতে?

বলেই উঠে দাঁড়িয়ে গেল রোদ কিন্তু হুট করে দাঁড়ানোতে পায়ে চাপ পড়ে। ব্যাথায় “আম্মু” বলে বসে পড়লো রোদ। আদ্রিয়ান এসে পায়ে হাত দিতেই ছিটকে সরিয়ে দিলো রোদ। আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে বললো,

— কি?

— পায়ে হাত দিতে হবে না।

— চুপ থাক।

— প্লিজ। ব্যাথা করছে।

— তোমায় তো একটা কথা বলাই হলো না।

— কি?

— রাদ আর জাইফার বিয়ের অনুষ্ঠান করবে আগামী সপ্তাহে। তোমাকে নিয়ে কাল যেতে বলেছিলো কিন্তু কাল তো আর যাওয়া গেল না। আজ যাব। ঠিক আছে।

রোদ রেগে বোম হয়ে গেল। ওকে মেহমানদের মতো দাওয়াত দেয়া হচ্ছে নিজের বাসায়? যাবে না রোদ। কিছুতেই যাবে না?রাদ যদি বউয়ের অভাবে দিবানিশি হয়েও যায় তবুও রোদ যাবে না। পরক্ষণেই মনে পরলো ওর ভাই দিবানিশি কীভাবে হবে?বউ তো ভায়ের কাছেই আছে। ওর আজগুবি সব চিন্তার মধ্যেই পায়ের ব্যাথায় জোরে “আম্মু” বলে চিৎকার করে উঠলো। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ওর মুখ চেপে ধরলো। রোদের চোখে পানি চলে এলো। আদ্রিয়ান মুখ ছেড়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,

— এভাবে চিল্লিয় না বউ? এমনিতেই বাসার সবাই আমার সাথে রেগে আছে। তোমার চিল্লাচিল্লি শুনলে আব্বু এবার আমায় বাসা থেকে বেড় করে দিবে।

— আপনি এমন করে ব্যাথা দিলেন কেন?

— ব্যাথা গায়াব করলাম। পা মোচকে গিয়েছিল তাই ঠিক করলাম।

____________

রোদকে রুমে বসিয়েই আদ্রিয়ান গেল কিচেনে। জুস আর ডিম সিদ্ধ , নিজের জন্য কফি করে রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। রোদ চুপচাপ বসে আছে। আদ্রিয়ান যেয়ে ওর হাতে জুস দিয়ে বললো,

— এটা শেষ করো রোদ।

রোদ কিছু না বলে গ্লাস নিয়ে একচুমুক খেয়ে হাতে ধরে বসে রইলো। আদ্রিয়ান নিজের কফির মগে এক চুমুক দিয়ে বললো,

— ফিনিস করো।

— করছি।

— বাসায় যাওয়ার কথা শুনে খুশি হলে না?

— যাব না আমি।

রোদের এমন কথায় চকিত নজরে তাকালো আদ্রিয়ান। বুঝার চেষ্টা করলো সারাক্ষণ বাড়ির জন্য মন খারাপ করে রাখার মেয়েটা আজ বাড়ি কেন যাবে না? বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো,

— যাবে না মানে? এমনিতে তো সারাক্ষণ লাফাও যাওয়ার জন্য।

— আপনার মন চাইলে আপনি যান। যাব না আমি।

— আচ্ছা ঠিক আছে। রেগে যাচ্ছো কেন বউ? ভয় পাই তো আমি নাকি?

আদ্রিয়ান এমন খাপছাড়া আচরণে বিরক্ত হয়ে রোদ জুসে শেষ চুমুক দিলো। আদ্রিয়ান ডিমও খায়য়ে দিলো। রোদের গালে চুমু দিয়ে বললো,

— ঘুমাবে এখন আসো।

— আজব এই সকাল বেলা সকালে আমি কেন ঘুমাবো? আপনি ঘুমান।

আদ্রিয়ান কিছু না বলে রোদকে নিয়ে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে রইলো। দেখতে দেখতে ১ ঘন্টা পার হয়ে গেল। রোদও ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ান হাসলো এই ঘুম কাতুরে বউ নিয়ে সে কই যাবে?
এমন সময় মিষ্টি এলো রুমে। পড়নে হাটুর উপর প্যান্ট আর পাতলা গেন্জি। চোখে মুখে এখনও ঘুমের রেশ লেগে আছে। আস্তে করে যেয়ে আদ্রিয়ানের পেটের উপর চড়ে বসলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বাবাই।

— জ্বি মা।

— মাম্মা উঠবে না?

— বাবাইকে বলো মা কি লাগবে?

মিষ্টি কিছু না বলে বাবাইয়ের বুক শুয়ে পরলো। মেয়ের কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পারলো আদ্রিয়ান। তাই কাঁপলে চুমু খেয়ে বললো,

— আমার মায়ের কি হয়েছে? মন খারাপ?

মিষ্টি বাবার বুকে লেগে গলায় মুখ লাগিয়ে আদর করে দিলো। আদ্রিয়ান হেসে উঠলো। মেয়ে আদর করে দিচ্ছে। মিষ্টি আবারও বাবার বুকে থেকে একটু উঠে উঁচু করে বাবার ঠোঁটে চুমু খেল। আদ্রিয়ান মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— আমার মা আজকে এত আদর করে কেন?

মিষ্টি টুপ করে চুমু খেল বাবার চাপ দাড়ি ভর্তি গালে। আদ্রিয়ানও চুমু খেল। মিষ্টি ভেবে পেল না আর কিভাবে আদর করা যায় বাবাকে তাই গালে গাল ঘঁষে বিড়ালের মতো আদর দিল বাবাকে। আদ্রিয়ান ও আদরে আদরে ভরিয়ে তুললো মেয়েকে। বাবা মেয়ের সম্পর্কটা পৃথিবীর অন্যতম একটা ভালোবাসাময় সম্পর্ক। যা আমৃত্যু বহমান থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব মানুষটার দুঃখী রাজ্যের রাণী হয়ে জন্মায় তার মেয়ে। এই যে এখন আদ্রিয়ানের মন চাচ্ছে মেয়েকে পৃথিবীর সর্ব সুখ এনে দিতে। মিষ্টি আদ্রিয়ানকে অবাক করে দিয়ে বললো,

— বাবাই?

— বলো মা।

— আমাকে ভাই বোন এনে দিবে।

— আলিফ ই তো তোমার ভাই।

না বুঝে বললো আদ্রিয়ান। মিষ্টি প্রতিবাদ করে বললো,

— না না ছোট্ট ভাই লাগবে বোন লাগবে। ভাইয়ার ছোট ভাই বোন আসছে।

আদ্রিয়ান বুঝলো কাহিনি তাই বললো,

— কোথায় পাব মা?

মিষ্টি নিজেও এই উত্তর জানে না। অসন্তুষ্ট হয়ে বাবার গালে দিলো এক কামড়। আদ্রিয়ান নিজেও আলত করে কামড় খেল মেয়ের হাতে। মিষ্টি ছটফট করতে লাগলো। ওদের দু’জনের হুরোপাসরিতে ঘুম ছুটে গেল রোদের। মিষ্টিকে দেখেই নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— গুড মর্নিং মা।

— গুট মাম্মা।

— বলো গুউড

— গুউড

— ম য়র নিং

— ময়রনিং

রোদের এমন ভেঙে ভেঙে মিষ্টিকে শিখানো অভিভূত করে আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান মিষ্টিকে ফ্রেশ করে রুমে আনলো। এমন সময় কল এলো আদ্রিয়াননের ফোনে। রাদ কল করেছে। রিসিভ করে সালাম দিয়ে রাদ বললো,

— কখন আসছেন আপনারা? আম্মু বলছিলো এখানে এসে ব্রেকফাস্ট করতে।

— রোদ তো আসতে চাইছে না।

রোদ আসতে চাইছে না কথাটা শুনতে পেলেও যেন বিশ্বাস হলো না রাদের আবার আদ্রিয়ান ওর সাথে মজা করবে এমন মানুষ ও না। তাই আবার জিজ্ঞেস করলো,

— বুঝতে পারি নি। কি বললেন?

— রোদ আসতে চাইছে না রাদ।

ভরকে গেল রাদ। তার বোন কেন আসতে চাইছে না? বুকের ভেতর কেমন যেন লাগলো। আদ্রিয়ানের পরিবার আবার কোন ভাবে প্রেশার দিচ্ছে না তো রোদকে?নিজের চিন্তা ভাবনাকে ধিক্কার জানালো রাদ। কি সব ভাবছিলো সে? একটু থেমে বললো,

— ওকে একটু দেয়া যাবে?

— অবশ্যই।

বলে রোদকে দিলো। রোদ নিবে না তাই আদ্রিয়ান স্পিকার অন করে রাদকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— বলো রাদ শুনছে ও।

— হ্যালো। হ্যালো রোদ।

রোদের উত্তর না পেয়ে রাদ আবারও বললো,

— রোদ। সোনা বোন আমার কি হয়েছে? ভাই কি কিছু করেছি? অজান্তে কি ভাই তার রোদকে কোন কষ্ট দিয়েছে?

রাদের কাতর কন্ঠে একেবারে গলে মম হয়ে গেল রোদ। তবুও ভরাট কন্ঠে বললো,

— আমি কারো বোন না। কার্ড দিলেই হবে আমরা এসে পরবো দাওয়াতে।

চমকালো রাদ সহ আদ্রিয়ান। ভাই পাগল রোদের আবার কি হলো? রাদ ঝটপট বললো,

— এই রোদ কি হয়েছে? এভাবে বলছিস কেন? কি করেছি আমি?

— কি আর করবা? কিছুই করোনি। আমি তোমাদের কেউ না। তাই তো গেস্টদের মতো করে অনুষ্ঠানের ডেট ফিক্সড করে দাওয়াত দিলা আমাকে। তাও আবার আমাকে কল করো নি। আসবে না রোদ। মন ভরে অনুষ্ঠান করো তুমি।

— এই রোদ। পাগল সবার আগেই তোকে কল করেছি আমি। ফোন অফ থাকায় আদ্রিয়ানকে জানিয়েছি। এখনও তেমন কেউ জানে না। বিশ্বাস কর।

— এতসব জানি না। গেলাম আমি।

বলে মিষ্টিকে কোলে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো রোদ। আদ্রিয়ান সেদিকে তাকিয়ে বললো,

— রেগে আছেন ম্যাডাম।

অস্থির হয়ে রাদ বললো,

— কি হলো দেখেন তো। এই মেয়ে কেমন রেগে আছে।

— একটু পর ই ঠিক হয়ে যাবে জানোই তো।

— হুম।

বলে কল কাটলো রাদ। ভিতরে ও কতটা অস্থির তা কেবল ওই জানে। পাশে বসা জাইফা তাকালো রাদের দিকে। ছেলেটা বোনকে পারে না কলিজায় ভরে রাখে। আর এই বোনকেই কিনা জাইফার মা অপমান করলো, জাইফা মিথ্যা বললো। উঠে যেয়ে জাইফা রাদের কাঁধে হাত রাখলো। রাদ অসহায় চোখে তাকালো। জাইফা বললো,

— এত অস্থির হবেন না। ওতো এমনিতেই নরম স্বভাবের। একটুপরই ঠিক হয়ে যাবে।

— ওকে এক মুহূর্তের জন্যও নিজের উপর রাগ করে থাকতে দেখতে পারি না আমি জায়ু। আমার কলিজার টুকরা এই ভাই বোন। জানো এতটুকুন হয়েছিলো রোদ।

হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো রাদ। আবার বললো,

— সবাই প্রথমে মা ডাকে বাবা ডাকে। জানো রোদ কি ডেকেছে? ও ডেকেছে ভাই। বুঝতে পারছো কতটা ভালোবাসে আমায়? আমি ওকে ছাড়া কিভাবে থাকি আমার আল্লাহ জানে জায়ু।

প্রথমের কথাগুলো যতটা উৎসুখ হয়ে বললো ঠিক ততটাই মন খারাপ করে বললো পরের কথাগুলো। জাইফা অবাক হয়ে যায়। ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে। মনে পড়ে গেল জাইফের কথা। দুই ভাই বোনের কতশত সুন্দর সুন্দর মুহূর্তে ছিলো। ভাবতেই ভিজে উঠলো চোখ। রাদ হুট করে জড়িয়ে ধরলো জাইফাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— জাইফের কথা ভাবছো?

জাইফা অবাক হলো। তাও বললো,

— হুম।

______________

রুদ্র ভাইয়ের রুমে নক করলো। রাদ কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই রুদ্র চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,

— ভাইয়া! ভাইয়া!

রাদ দরজা খুলে বললে,

— তোকে আর রোদকে কতবার বলেছি আস্তে ধীরে কথা বলতে। চিল্লাস কেন বুঝি না আমি।

— ভাইয়া আম্মু ডাকে। নাস্তা রেডি। ভাবী কই?

জাইফা ভেতর থেকে বললো,

— আমি এখানে রুদ্র।

রুদ্র ভাইকে ঠেলে রুমে ডুকে পড়লো। জাইফার সামনে যেয়ে বললো,

— ভাবী। আসুন। নাস্তা খাবেন না। আর আমি আজকে আপনার জন্য পাশের বাড়ি থেকে পেয়ারা চুড়ি করে এনেছি।

— হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো।

ওরা যেতে নিলেই রাদ ওদের থামিয়ে দিয়ে রুদ্রকে দিলো এক ধমক। ভয়ে রুদ্র ভাবীর পেছনে লুকালো। রাদ ওকে আবার ধমকিয়ে বললো,

— এই লুকাস কেন? কতবার বলেছি কারো গাছের কিছু চুড়ি করবি না। বের হ পেছন থেকে।

জাইফা রুদ্রকে আগলিয়ে বললো,

— থাক না৷ বাচ্চা তো এমন করেন কেন?

বলে রুদ্রকে নিয়ে নিচে গেল। রাদের বুকের মধ্যে আবার ও ছোট্ট বোনটার জন্য ব্যাকুলতা অনুভব হলো। জাইফা আসার পর থেকে জাইফার মধ্যে রোদকে খুঁজে রুদ্র। বোনের শূন্যতা পূরণ করার চেষ্টা করে। যদিও হয় না। তবুও যতটুকু নিজের মনকে মানানো যায়।এই তো সেদিন স্কুল থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে এসেছিলো রুদ্র জাইফার জন্য। এটা রোদের পছন্দের। জাইফাও রুদ্রকে যথেষ্ট ভালোবাসে যা বুঝে রাদ।

___________

নিচে খাওয়ার সময় জারা কেমন করে তাকিয়ে রইলো রোদের দিকে। এত কিছু হওয়ার পরও কীভাবে শান্ত আছে রোদ। জারা হলেও কোন দিনও থাকতো না। এমন সময় হঠাৎ জুরাইনকে দেখে ভিষণ লজ্জা পেয়ে গেল রোদ। কাল জুরাইনের সামনেই আদ্রিয়ান থাপ্পড় মেরেছিলো। রোদ কেঁদেছিলো। ভাবতেই লজ্জা পেয়ে কিছু না বলে মিষ্টিকে খায়য়ে রুমে এলো রোদ।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৯

পরেরদিন সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল রোদের। সারা বাড়িতে চিৎকার চেচামেচি শুনা যাচ্ছে। কয়েক বার এসে রোদের রুমে নক করে গেল ওর কাজিনরা যার মূল কারণ হলো দুলাভাই চাই।রোদ বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বললো,

— দরজা ভেঙে নিয়ে যা। আর একবার আওয়াজ করলে হলুদ কেন্সেল করাব আমি।

ব্যাস ভয়ে ভয়ে সব চুপ কিন্তু ছোট্ট রুহা কি তা বুঝে। আতু আতু, দুতাভাই দুতাভাই বলে ডেকেই যাচ্ছে। মহাবিরক্ত হয়ে রোদ তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনুমতি পাওয়ার আশায় আছে রোদ বললেই দরজা খুলে দিবে। রোদ বুঝতে পারলো আদ্রিয়ানের কাহীনি তাই বললো,

— যান আপনি তবুও আমি বাঁচি।

মিষ্টি ঘুমুঘুমু কন্ঠে বললো,

— আমিও যাব বাবাই।

আদ্রিয়ান হেসে উঠলো। ও জানে এখন রোদ যাবেই কারণ মিষ্টি উঠে গিয়েছে। রোদ অসহায় মুখ করে বললো,

— মা আরেকটু ঘুমাও।

মিষ্টি মায়ের বুক থেকে উঠে বললো,

— মাম্মা মামার কাছে যাব।

রোদ একটু রেগে বললো,

— ঐ আলুর প্যাকেট আমার মেয়েকে জাদু করেছে।

আদ্রিয়ান হেসে বললো,

— যেমন তুমি করেছো আমায়। দুই ভাই বোন জাদুবিদ্যা জানো নাকি?

রোদ রেগে তাকিয়ে ধুম করে উঠে বসলো। মিষ্টিকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ করে বেরিয়ে গেল। আদ্রিয়ান ও ওদের সাথে নিচে গেল। নিচে ছোট বড় সবাই আছে। একটু অপ্রস্তুত হলো রোদ কারণ ওর পরনে টিশার্ট আর টাউজার। আদ্রিয়ান ওর সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে ওকে আড়াল করে। একটু ঝুকে বললো,

— উপরে যাও। এখানে অনেক মানুষ।

রোদ আবার চেঞ্জ করে এলো। আদ্রিয়ান হাঁপিয়ে উঠলো জামাই আদর খেতে খেতে। এত কিভাবে খাবে ও বুঝতে পারলো না? রোদের মা মিষ্টিকে খাওয়াতে ব্যাস্ত। সবাই একসাথে নাস্তার পর্ব শেষ করলো। এরমধ্যেই পার্লারের মেয়ে আসলো জাইফার নাক ফুরাতে। চাচি শুধু একবার বলেছিলো,

— বউ নাক ফুরালে তোমাকে পুরোই বউ বউ লাগতো।

ব্যাস জাইফা রাজি হয়ে গেল সে নাক ফুরাবে। চাচি তাই পার্লারের মেয়ে আনিয়েছেন বাসায়। জাইফার নাক ফুরানো শেষ হতেই চাচি চেপে ধরলো রোদকে। রোদ এক বাক্যে না করে দিলো। চাচি তবুও বললো,

— দেখ রোদ সুন্দর লাগবে তোকে অনেক। বউদের মতো লাগবে। মা না ভালো আয় ফুরিয়ে নে।

রোদ দুই লাফে দূরে সরে গেল। দূর থেকেই বললো,

— যতই পটাও না কেন আমি নাক ফুটো করব না। কানে এখনও বড় কিছু পরতে পারি না ব্যাথা করে। নাক আমি কিছুতেই ফুটো করব না।

চাচি তবুও বলেই যাচ্ছে। রাদ এসে বললো,

— চাচি জোর করেন না। আমার বোন এমনই সুন্দর।

চাচি দ্বিমত করে বললেন,

— তুই বুঝবি না সর এখান থেকে। রোদ মা আয় একটুও টের পাবি না।

রোদ দূর থেকেই বললো,

— তুমি কি শুরু করলা চাচি?

আদ্রিয়ান অবশেষে এসে বললো,

— চাচি থাক না। ওকে জোর করার দরকার নেই। এমনিতেই ভালোলাগে ওকে।

জামাইয়ের কথার উপর আর কিছু বললো না চাচি। আচ্ছা বলে চলে গেলেন। রোদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু আদ্রিয়ান কি রাগ করলো?ও কি চাচ্ছিলো যাতে রোদ নাক ফুটো করে? ভাবতেই মুখটা কালো করে ফেললো রোদ। জারবা এসে বসলো ওর পাশে। সাথে দিশা আর তিশা। জারবা নিজের হাতের মেহেদী দেখালো রোদকে। রোদ হালকা একটু হাসলো।জারবাকে বললো,

— মামনিরা কখন আসছেন জারবা?

— সন্ধ্যায় আসবে। বড় ভাবীর একটু শরীর খারাপ তাই বিকেলে আসতে পারছে না।

শুনে রোদ কল দিলো সাবাকে। খোঁজ খবর নিলো কিছুক্ষন। ফোন রাখতেই কানে এলো বাড়ির মানুষের কথা। প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। আদ্রিয়ান জামাই হয়ে যে এভাবে উঠে পরে কাজ করবে ভাবতে পারে নি কেউ। রোদের কেন জানি অনেক ভালোলাগা কাজ করলো আদ্রিয়ানের প্রশংসা শুনে। মনটা হুট করেই ভালোহয়ে গেল।
এই গরমে আদ্রিয়ান বাইরে বাবুর্চিদের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে। ছটপট লেবুর শরবত বানালো রোদ। নিয়ে গেল বাইরে। ফর্সা আদ্রিয়ান গরমে লাল হয়ে গিয়েছে। রোদ আরেকটু এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

— আপনি রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কি করেন? ছাঁয়াতে এসে দাঁড়ান।

আদ্রিয়ান তাকালো রোদের দিকে। এই মেয়ে দুদন্ড হয় নি এখানে এসেছে এর মধ্যেই ফুলা গাল দুটো লাল হয়ে আছে। রোদ শরবতটা আদ্রিয়ানের হাতে দিলো। আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে পাশের গাছের কাছে দাঁড়িয়ে এক চুমুক দিলো শরবতে। পুরো দেহটা শান্ত হয়ে গেল। পাশ থেকে ইশান বললো,

— বইন তুই কেমন রে? জামাইয়ের জন্যই আনলি আর আমরা ভাইগুলো যে সকাল থেকে কামলা খাটতাসি আমাদের জন্য না হয় পানিই আনতি।

রোদ মুখ কুচকে বললো,

— ওই নজর দিবা না। তোমার বউ কই? ভাবীকে বলো তোমার জন্য শরবত আনতে।

বলে ভিতরে চলে গেল রোদ। কিছু সময় বের হলো ট্রে তে গ্লাস ভর্তি শরবত নিয়ে। সবাইকে দিলো শরবত। রোদ আদ্রিয়ানের কাছে যেয়ে বললো,

— শুনুন রোদের মধ্যে না দাঁড়িয়ে ছাঁয়াতে দাঁড়ান। কেমন ঘেমে গিয়েছেন।

আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— এই রোদ আমাকে আর এতটুকু পুরাবে বউ? রোদ নামক তুমি তো নিজের প্রেমে ঝলসে দিয়েছো আমায়।

রোদ একটু ভরকে গেল। এই আদ্রিয়ানের আবার কি হলো? মিনমিন করে বললো,

— রেগে আছেন?

— কেন?

— নাক ফুটো করাই নি দেখে।

— কি জানি।

বলে অন্য পাশে গেল আদ্রিয়ান। রোদ বুঝলো নিশ্চিত আদ্রিয়ান রাগ করেছে। এরমধ্যেই ডাক পরলো মায়ের। যদিও মেয়ে ছেলের বাসায়ই আছে তবুও তারা মেয়ের বাড়ি ডালা পাঠাবেন হলুদের। সাথে যাবে সব কাজিন সহ ভাবীরা। রোদকে বলাতে আদ্রিয়ান সোজা না করে দিলো। একথা শুনে রুদ্রও যাবে না। অনেক বলে কয়ে পাঠালো ওকে।
আদ্রিয়ান ঘেমে চুপচুপা হয়ে রুমে ডুকলো। রোদ মাত্রই মিষ্টিকে গোসল করিয়ে দিয়ে নিজে ডুকবে এমন সময় আদ্রিয়ান এলো তাই হালকা ভেজা রোদ বেরিয়ে বললো,

— আপনি আগে যান।

— তুমি ভিজে গিয়েছো ঠান্ডা লাগবে।

— আপনি ঘেমে গিয়েছেন। আগে যান।

ফট করে আদ্রিয়ানের মাথায় দুষ্টমি চেপে ধরলো। রোদকে ঠেলে নিজেও ডুকে পড়লো। সাওয়ার অন করে ভিজলো দুজন। রোদ প্রথমে রাগ করলেও পরে চুপ করে রইলো। ভিজেই তো গিয়েছে এখন আর বললেই বা কি। আদ্রিয়ান ওকে অমনোযোগী দেখে বললো,

— কি ভাবে আমার ভাবনার রাণী?

আচমকা রোদ জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। ওভাবেই বললো,

— আপনি চাইলে আমি আজই নাক ফুটো করব।

আদ্রিয়ান ভেবে পেল না এই কথার মানে। তাই জিজ্ঞেস করলো,

— এই রোম্যান্টিক মোমেন্টে তোমার এই কথা মনে পড়লো?

— আপনি ত…

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান ওকে চুপ করিয়ে দিলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

— হুস। এইসব পরলেও তুমি আমার বউ না পরলেও তুমি আমার বউ।

বলে রোদের কাঁধে চুমু দিয়ে বললো,

— ক্ষুধা লেগেছে বউ নাহলে আরো রোম্যান্টিক মোমেন্ট বানাতাম আমি।

রোদ লজ্জায় ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান নিজের মতো গোসল করে টাওয়াল জড়িয়ে বের হলো। রোদ নিজেও গোসল করে বের হলো।

_____________

দুপুরের খাবারের পর আর রেস্ট নেয়া হলো না কারো। সবাই আরও বেশি ব্যাস্ত হয়ে গেল। রাদ রুমে ডুকে সব কাজিনদের বের করলো। দরজা লাগিয়ে জাইফার কাছে এসে বসলো। রাদের ক্লান্ত মুখ দেখে মায়া হলো জাইফার। রাদের কপালের ঘাম নিজের হাতে মুছে দিয়ে বললো,

— অনেক ক্লান্ত?

— উহু।

বলে জাইফার কপালে চুমু খেল। দুগালে হাত দিয়ে বললো,

— এখন একটু ঘুমাও জায়ু। রাতে অনেক লেট হবে।

— আপনার ঘুম দরকার।

রাদ কিছু না বলে জাইফাকে পাশে সুয়িয়ে নিজেও পাশে সুয়ে পরলো। বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল জাইফা। রাদ আস্তে করে উঠে বসলো। লাইট অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

বিকেলের দিকেই পার্লারের মেয়েরা এলো। আদ্রিয়ান আগেই রোদকে বলেছে বেশি সাজতে না। রোদও দ্বিমত পোষণ করে নি। সেনসেটিভ স্কিন হওয়াতে নুন থেকে চুন খসলেই মুখে লাল লাল দাগ পরে যায়।
সবার রেডি হতে হতে রাত ৮ টা বেজে গেল। জাইফার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো রাদ। হলুদ লেহেঙ্গায় অসাধারণ লাগছে ওকে। রাদও পাঞ্জাবি পরেছে সাদা। চুলগুলো সেট করা। রাদ জাইফার সামনে এসে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় জায়ু।

লজ্জা পেয়ে একটু হাসলো জাইফা। দুজনেই একসঙ্গে বেড়িয়ে গেল বাইরে।
এদিকে রোদ মিষ্টিকে রেডি করাচ্ছে। হলুদ গাউনটা পরিয়ে মাথায় গোল্ডেন কালার ক্লিপ লাগিয়ে দিলো। ছোট্ট মিষ্টিকে যেন জীবন্ত পুতুল মনে হচ্ছে। আদ্রিয়ান মেয়ের দিকে তাকিয়ে চুমু খেল গালে। মিষ্টিও বাবার ঠোঁটে চুমু খেল। আদ্রিয়ান নীল কালারের পাঞ্জাবি পরেছে। রোদ হলুদ কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। সাজগোজ শেষ এখন শুধু নিজের হিজাব নিজেই বাধছে। রোদ হিজাব বেঁধে একটা ব্যাগে মিষ্টির জন্য পাতলা ড্রেসও নিলো যদি মেয়েটা অস্থির হয়ে যায়। মিষ্টি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল সবাইকে দেখাতে। আদ্রিয়ান যেন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো। দরজা লাগিয়ে রোদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় পিন লাগাতে গিয়ে তা রোদ নিজের কাঁধেই একটু ডুকিয়ে দিলো। ব্যাথায় চোখ বুজে “আহ” করে উঠলো। আদ্রিয়ান তড়িৎ বেগে সরে গেল। রোদের কাঁধ থেকে হিজাব সরিয়ে দেখলো একটু র*ক্ত বের হচ্ছে। তারাতাড়ি নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো ওখানে। চোখ বন্ধ করে ফেললো রোদ। একটু পর আদ্রিয়ান ছেড়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অপরাধীর মতো ফেস করে বললো,

— আ’ম সরি রোদ। বুঝতে পারি নি এমন হয়ে যাবে।

— আরে মুখটা ভোতা করে রাখলেন কেন? কিছুই হয় নি।

তবুও যেন মন খারাপ করে রাখলো আদ্রিয়ান। তা বুঝে টুপ করে চুমু খেল রোদ ওর গালে। চমকে তাকালো আদ্রিয়ান তার আগেই রোদ হিজাব বাঁধতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। ঠোঁট এলিয়ে হাসলো আদ্রিয়ান।

_____________

অনুষ্ঠান যেহেতু কমিউনিটি সেন্টারে তাই সবাই রওনা হলো সেখানে। পাশাপাশি বসানো হলো রাদ আর জাইফাকে। রাদের কোলে মিষ্টি। আদ্রিয়ান আর রোদ অনেক চেয়েছে দেয় নি রাদ। একটা মাত্র ভাগ্নী তার। তার কোলেই থাকবে। মিষ্টি ও অনেক ইনজয় করলো। জাইফার বাসার সবাই এলো। ওর বাবা আর জাইফ তো আবেগ আপ্লূত হয়ে পরলো। সান্ত্বনা দিলো রোদের পরিবার। জাইফার মা ও এসেছে। ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলো রাদ। জাইফা ফিরে ও দেখলো না। আদ্রিয়ানের পরিবারের সবাই এলো। রোদের পরিবার পারে না সাবাকে মাথায় তুলে রাখে। অবাক হয় সবাই। এমন পরিবার আজ কাল পাওয়া দুষ্কর। এই যে রাদ সহ পুরো পরিবার মিষ্টিকে কেমন ভালোবাসা দিচ্ছে। আদ্রিয়ান জামাই বলে যা করছে সব ওকে বলে বলে করছে। ওদের পরিবারকে কতই না আদর যত্ন করছে।

রোদের মা এক পেয়ালা ফ্রুট সালাত নিয়ে এলো। সাবার হাতে দিয়ে বললো,

— এটা খাও মা।

সাবা অবাক হয়ে যাচ্ছে এমন ব্যবহারে। আদ্রিয়ান মাত্রই এসে বসলো আরিয়ানের সামনে। আরিয়ান খোঁচা দিয়ে বললো,

— কিরে শশুড়বাড়ী তো ভালোই চলছে।

— হুম। অনেক আদর যত্নে আছি আমি।

বেশ ভাব নিয়ে বললো আদ্রিয়ান। আরিয়ান ওর ভাবের বারোটা বাজিয়ে দিল এই বলে,

— হুম হুম ভালো ভালো। এখন যদি এরা কোন মতে জানতে পারে এদের আদরের একমাত্র মেয়েকে দুই আগে তুই মেরে তক্তা বানিয়েছিস কি হবে ভাবতে পারিস?

আদ্রিয়ানের মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল। মুখটা গোমড়া করে বললো,

— এক ভুলের খোটা আর কত দিবি?

— যতদিন মনে থাকে।

এমন সময় রুদ্র এসে ডেকে নিয়ে গেল আদ্রিয়ানকে। আনন্দ, মজা, গানবাজনায় কেটে গেল হলুদের অনুষ্ঠান। জাইফার সুখ দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো ওর পরিবার।
বিদায় নিয়ে চলে গেল তারা। আজ জাইফাকে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নিতে দেয় নি রাদ। ইয়াজও ছিলো। জারবা যেন ওকে দেখেও দেখে নি এমন ভাব করলো। যা দেখে রোদ কিছুই বুঝলো না।

________________

মিষ্টি ঘুম রাদের কোলে। গাউন খুলেছে সে অনুষ্ঠানের ১ ঘন্টার মধ্যেই। ছোট্ট মিষ্টি এখন নিশ্চিতে ঘুম। বারোটা বেজে গেল রোদের। হিল পড়ে এখন পায়ে ব্যাথা নিয়ে বসে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে আদ্রিয়ান ধমকালো কয়কবার। না করেছিলো হিল পড়তে কিন্তু শুনে নি রোদ। অবশেষে রুদ্র কোথা থেকে একজোড়া স্লিপার এনে দিলো বোনকে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ৩ টা বেজে গেল। ক্লান্ত সবাই যে যার রুমে চলে গেল।
আদ্রিয়ান এক বোল গরম পানি নিয়ে রুমে ডুকলো। রোদ সব খুলে ফ্রেশ হয়ে মাত্রই বের হলো। আদ্রিয়ান ওকে বসিয়ে পা ডুবিয়ে রাখলো বোলে। ব্যাথায় মুখ খিঁচে রাখলো রোদ। আদ্রিয়ান পাশে বসলো ওর। গালে আদর করে বললো,

— কথা শুনো না। এখন ব্যাথাটা কে পাচ্ছে?

……….

— বেশি ব্যাথা লাগছে?

— অল্প কমেছে এখন।

রোদের ব্যাথা কমতেই আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে শুয়ে পরলো। রোদ চোখ বন্ধ করতেই আদ্রিয়ান ডাকলো,

— এই রোদ।

— হু।

— ঘুমিয়ে গেলে?

— কি করব?

— বউ এমন কেউ করে?

— আজব কি করলাম?

— আদর টাদর তো তেমন একটা করো না আমায়। ঐ একটু আদটু যা করো আজ তো তাও করলা না বউ।

রোদ হা হয়ে দেখলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান চেপে ধরলো। রোদ জানে এই লোক ছাড়বে না। তাই আস্তে করে চুমু খেল গালে। কিন্তু এতে কি আর আদ্রিয়ানের চলে?নিজের মতো আদর দিল বউকে। যা সাদরে গ্রহণ করলো রোদ।

___________

পরের দিন বিয়ে ও সম্পূর্ণ হলো। এলাকার মানুষ তো নতুন বউয়ের বেশ প্রসংশা করলো। আদ্রিয়ান কেও অনেকে চিনে না তাই পরিচয় করিয়ে দিলো রাদ আর ওর বাবা,চাচারা। আজও জাইফাকে নিতে দিলো না রাদ। জাইফাও যাবে না। বাবা, ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো কিছুক্ষন। বাসায় এসে ক্লান্ত রোদ। এই আদ্রিয়ান ঐদিন এই ব্রাইডাল লেহেঙ্গা কিনেছিলো ওর জন্য। এত ভারী যে সামলাতেই রোদ শেষ।

জারাকে দেখতে কাল। তাই আদ্রিয়ানদের বাড়ীতে যেতে হবে। বিয়ে বাড়ীর পরিস্থিতি যেন মুহূর্তেই পাল্টে গেল। এ যেন মেয়ের বিয়ে। রুদ্র সেই কান্না জুড়ে দিলো তা দেখে মিষ্টি ও সমান তালে কেঁদে যাচ্ছে। তার এত আদরের মামা কেন কাঁদছে? তাই সেও কাঁদলো। রাদের চোখেও পানি। বাবা, মাও বাদ নেই। এতদিন মেয়েটা ছিলো বাড়ির আমেজটাই ছিলো অন্যরকম। আজ চলে যাবে ভাবতেই কেঁদে উঠলো রাদের মা। রাদ মাকে সান্ত্বনা দিলো। কিন্তু যাকে ঘিরে এত কান্না সে কোথায়?

রোদ একদম স্বাভাবিক ভাবে আদ্রিয়ানকে বললো,

— আজ যাব না আমি।

— যাবে না মানে?

— যাব না মানে আজ যাব না। কয়েকদিন পর যাব।

আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে রোদের গাল ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

— জারাকে দেখতে আসবে কাল।

— এই জন্যই যাব না আমি। আপনার ফুপি আর তার মেয়েকে সহ্য হয় না আমার। আগেরবার ও তাদের জন্য…

— রোদ!

ধমকে উঠলো আদ্রিয়ান। ভয় পেলেও থামলো না রোদ। তেজি স্বরে বলে উঠলো,

— ধমকান কেন? অন্য কারণ হলে যেতাম। এই কারণে যাব না আমি।

নিজেকে শান্ত করলো আদ্রিয়ান। রোদকে বসিয়ে নিজেও হাটু গেড়ে বসলো ওর কাছে। হাত দুটো ধরে বললো,

— ফুপিকে ভুল ভেবো না রোদ। ফুপি একটু কঠর এই যা। প্লিজ সোনা আবার আসবো আমরা প্রমিস।

কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায় রোদ। বোরকা বের করে পড়ে। মিষ্টির কাপড় সব গুছিয়ে নিলো। আদ্রিয়ানকে কিছুই বললো না এমনকি ডাকলে জবারও দিলো না।

রোদকে একদম রেডি হয়ে নামতে দেখে রুদ্রর কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। রোদ অনক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছে যা রাদ আর রুদ্র মিলে ভেঙে দিলো। দুই ভাই বোনকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। আজ কাল এমন ভাই বোনের মিল পাওয়া যায় না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালো রাদ। মায়ের বুকে কতক্ষণ কাঁদলো রোদ। আদ্রিয়ান অসহায় চোখ করে সব দেখলো। কিছু করার নেই ওর।

অনেক কষ্টে রুদ্র থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে গাড়িতে উঠলো রোদ। ক্লাস এইটে পড়া রুদ্র বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কাঁদলো। জাইফা এসে রুদ্রকে সামলালো।

গাড়িতে টু শব্দ করলো না রোদ। মিষ্টি ঘুমিয়ে গেল রোদের কোলে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০ টা। ফ্রেশ হয়ে মিষ্টিকে নিয়ে শুয়ে পরলো রোদ। আদ্রিয়ানও একটু কাছে ঘেঁষে শুয়ে পরলো। রাতে ঠিকই বুকে নিয়ে ঘুমালো আদ্রিয়ান।

____________

জাইফা পরনের সব ভারী কিছু খুলে ফেললো। নাকে রাদের নামে পড়া নোসপিনটা জ্বল জ্বল করছে। ফ্রেশ হয়ে বের হলো রাদ। রুদ্রকে ঘুম পারিয়ে তবেই রুমে এসেছে ও। জাইফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

— মেডিসিন নিয়েছো?

— হুম।

— আসো ঘুমাবে। টায়ার্ড লাগছে?

— একটু।

জাইফাকে কাছে টেনে নিলো রাদ। চুল গুলো কঁপাল থেকে সরিয়ে চুমু খেয়ে বললো,

— মন খারাপ?

— আপনি আমার ভালো থাকার কারণ রাদ। তাহলে মন কেন খারাপ হবে?

— এত কেন ভালোবাসো জায়ু?

— ভালোবাসতে কারণ লাগে না রাদ। অকারণে হয়ে যায়।

— আমি তোমায় তোমার প্রাপ্ত ভালোবাসা দিতে পারছি না।

— নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে আপনাকে পেয়েছি আমি রাদ। আপনি যেভাবে রাখবেন সেটাই আমার কাছে প্রিয়।

— আজকে যদি আমি তোমায় ভালোবাসি গ্রহণ করবে?

দুচোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকালো জাইফা। এত সুখ কোথায় রাখবে ও? রাদ টেনে কোলে তুলে নিলো জাইফাকে। ভালোবাসায় ডুবে গেল দুজন পিপাসিত মানব মানবী। রাতটা কেটে গেল দু’জনের গভীর আলিঙ্গনে।

#চলবে…..