ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৫৩

0
420

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫৩

দুপুর দিকে রোদের বাড়ির সবাই এলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই একসঙ্গে বসেছে কথা বলতে। রুদ্র আর রাদ তো সেই মিষ্টিকে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেছে। এরা আর ভালো হবে না। রোদ যেয়ে কত করে বললো,

— মিষ্টিকে দাও। ঘুমানোর সময় এটা ওর।

মিষ্টি ও আজ পল্টি খেল। রাদের কোলে লুকিয়ে গিয়ে বললো,

— মাম্মা মিষ্টি আজ ঘুমাবে না।

এই কথায় যেন রাদ আর রুদ্র আরো পেয়ে বসলো। ওরাও এখন আর দিবে না। রেগে লাল হয়ে চলে গেল রোদ। আদ্রিয়ান খেয়াল করে পেছনে গেল ওর। রোদ সবার থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। আদ্রিয়ান যেয়ে ওর মাথায় হাত দিয়ে বললো,

— কি হয়েছে আমার লাল সুন্দরীর?

রোদ রাগী হয়ে তাকিয়ে বললো,

— মিষ্টিকে দিলো না। এই সময়ে ঘুমায় না ও? শুধু শুধু অনিয়ম হলো।

আদ্রিয়ান রোদের কথা কি শুনবে? ও তো রোদকে দেখতে ব্যাস্ত। রোদের সৌন্দর্য যেন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেমন একটা আদর আদর লাগে ওকে দেখতে। দেখতে থাকলো আদ্রিয়ান। রোদ নিজের গাল দুটো ফুলিয়ে রাখলো। ইস এই মেয়েটাকে এত কেন আদুরে লাগছে? আশে পাশে তাকালো আদ্রিয়ান। না কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে নেই। টুপাটুপ কয়েকটি চুমু খেল রোদের গালে। হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রোদ। একটু রেগে বললো,

— আপনি ভালো হবেন না? সবাই এখানে।

আদ্রিয়ান হেসে হেসেই বললো,

— কেউ দেখেনি বউ।

হঠাৎ ডাক পরলো ওদের। ওরা সবার দিকে গেল। সিদ্ধান্ত হলো এই মাসের শেষের দিকেই অনুষ্ঠান হবে। এখন থেকেই প্রিপারেশন নিতে হবে। মিষ্টি আজ অনেক খুশি। ওর মাম্মা আর বাবাইয়ের বিয়ে। আলিফ মুখটা গোমড়া করে আরিয়ানের কাছে গেল। ছেলের মন খারাপ দেখে কোলে তুলে নিলো আরিয়ান। জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে বাবা?

— আমিও তোমাদের বিয়ে দেখতে চাই। মিষ্টির আম্মু-আব্বুর মতো।

হেসে উঠলো আরিয়ান। জারবা মজা করে বললো,

— হ্যাঁ হ্যাঁ বড় ভাইয়া ভালো হবে। তুমিও বিয়ে করে নাও।

আলিফকে থামানোর বদলে উসকানি দিলো জারবা। আরিয়ান কোন মতে বুঝালো ছেলেকে। আজ জাইফাও সাথে এসেছে। আদ্রিয়ানের মা ওকে আদর করলো। থেকে যেতে বললেও জাইফা রাজি হলো না। ও জানে রাদ রাজি হবে না। অফিসে গেলেও ঘন্টায় ঘন্টায় কল দিবে। কি করছে না করছে সব তাকে জানাতে হবেই হবে। গাগল প্রেমিক এই রাদ কিন্তু আফসোস কেউ জানে না। এই যে জাইফা একটু দূরে দাঁড়িয়ে কয়বার যে চোখ দিয়ে ইশারা করলো পাশে বসতে হিসেবে নেই তার। কিন্তু জাইফা ই বা কি করবে? বড়দের মাঝে তো আর সং সেজে বসে থাকা যায় না। জাইফা জানে বাসায় নিয়ে এ নিয়ে ক্লাস নিবে রাদ।

____________

রোদের মা আজ মেয়েকে দেখলো। দুগালে হাত দিয়ে কপালে চুমু খেল। এ এক অন্য রকম সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে রোদের চেহারায়। আজ যেন বুঝা যাচ্ছে তার মেয়ে আর তার নেই বিবাহিত নারী সে। রোদ মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

— কি হয়েছে আম্মু?

— কি হবে দেখছি আমার ছোট্ট রোদ কত বড় হয়ে গিয়েছে।

রোদ মাকে জড়িয়ে ধরলো। জড়ানো কন্ঠে বললো,

— আই মিস ইউ আম্মু।

রোদের মায়ের চোখে পানি চলে এলো। তার ছোট্ট সোনাটা এখন তার কাছে থাকে না। বুকটা আজ ভার হয়ে এলো যেন।

আলোচনা অনুযায়ী কাল যাবে শপিং এ। বউয়ের শপিং শেষ করে রাখবে আগে। সবাই মতামত দিলো। রাতে চলে যাবে রোদের পরিবার। রুদ্র আজও বোনকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। অনেক কষ্টে ছাঁড়ালো রাদ। কিন্তু আজ যেন ওর নিজের ও কান্না জুড়ে দিতে মন চাইলো। কোন মতে চলে গেল ওরা।মিষ্টি ঘুম ছিলো নাহলে ও নিজেও যোগ দিতো এই কান্নায়। জাইফা জানে রাদ এখন বাসায় যেয়ে কাঁদবে। বোন তার অনেক প্রিয়। রোদও এদিকে কেঁদে যাচ্ছে রুমে। আদ্রিয়ান ওকে থামাতে চেষ্টা করলো কিন্তু রোদ কি আর থামে? অনেক কষ্টে থামলো রোদ। আদ্রিয়ান ওকে টেনে নিজের কাছে এনে বললো,

— এত কেউ কাঁদে?

— আমি কাঁদি।

— আচ্ছা আচ্ছা রেগে যাচ্ছ কেন? চেঞ্জ করো। ঘুমাবে এখন।

রোদ আদ্রিয়ানের বুক একটু ঘেঁষে বসলো। আদ্রিয়ান হেসে জড়িয়ে ধরে বললো,

— বাহ্! পাখি আজ নিজেই ধরা দিচ্ছে।

রোদ কিছু বললো না। আদ্রিয়ান আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,

— ভালোবাসি বউ।

বাকিটা সময় কাটলো দু জনের গভীর ভালোবাসায়।

________________

ভোরের দিকে আদ্রিয়ান রোদকে গোসল করিয়ে দুজন রুমে ডুকলো। বারকয়েক হাঁচি দিলো রোদ। আদ্রিয়ান ওর চুল মুছিয়ে দিলো। ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁপতে লাগলো রোদ। আদ্রিয়ান এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিলো। চুল গুলো গুছিয়ে কম্ফোডার পেচিয়ে দিলো। নিজেও চেঞ্জ করে এসে ডুকে পড়লো কম্ফোডারে। ডুকেই রোদকে পেচিয়ে নিজের বুক চেপে ধরলো। রোদও জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো। শুরু হলো আদ্রিয়ানের খুনশুটি।রোদ মুখটা একটু বের করে বললো,

— আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

— কি?

— বিয়ে।

হেসে দিয়ে আদ্রিয়ান বললো,

— আমার তো লজ্জা লাগছিলো অনেক। কি একটা অবস্থা বলো তো?আমার নাকি বিয়ে?

খিলখিল করে হেসে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আজ যেন দেখতেই মন চাইছে এই ছোট্ট বউটাকে। মন যেন ভরছে না। রোদ হাসি থামিয়ে বললো,

— ভাবা যায় আপনার মতো বড় মানুষের কি না আবার লজ্জা লাগে?

— আজ রিশান, অয়ন, প্রান্তরাও ফোন দিয়ে কি সব বলে মজা করছিলো। কাল ওরাও আসবে শপিং এ।

— শুনুন!

— বলুন।

— আমি,আপনি আর মিষ্টি মেচিং মেচিং পড়বো কিন্তু।

— আচ্ছা। তুমি যা বলবা তাই ঠিক।

বেশ কিছু সময় পর ঘুমিয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ানের চোখে ঘুম নেই। আজ যেন রোদকে ছেড়ে ঘুমাতো মন চাইলো না। অনুভব করতে লাগলো বুকের উপর রাখা এই ছোট্ট দেহটাকে। আদরে ভরিয়ে তুললো মুখটা।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলো মিষ্টি রোদের বুকে। রোদ হেসে চুমু খেলো ওর কপালে। মিষ্টি ও মাকে বিনিময়ে চুমু খেল। রোদ ওকে শুরশুরি দিতে লাগলো। খিলখিল করে হেসে উঠলো মিষ্টি। এমন সময় রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। দুজনকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। নিজেও যোগ দিলো ওদের সাথে। ক্লান্ত হয়ে পড়লো তিন জনই। রোদ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

— আল্লাহ আমি শেষ!

মিষ্টি মুখটা তুলে মায়ের ঠোঁটে চুমু খেল। আদ্রিয়ান ডাকলো রোদকে,

— রোদ?

–বলুন।

— উঠো আবার বেরুতে হবে। রাদ কল করেছিলো একটু আগে।

— রুদ্র আসবে না?

— আসবে। জাইফাও আসছে। দিশা, তিশা আর ইশান নাকি পরে জয়েন করবে। কোন কাজ আছে মেবি।

— হু হু দিশাদের এক্সাম। ইশান ভাইয়ারটা জানি না।

— ওহ্। উঠো আসো।

মিষ্টি মায়ের বুকে লেগে বললো,

— মাম্মা যাবে না।

রোদ ওকে আদর করে বললো,

— মাম্মা একা যাবে নাকি? মাম্মার মেয়ে মিষ্টি ও তো যাবে।

মিষ্টির তবুও কোন হেলদুল নেই। ও মাকে ছাঁড়লো না। আদ্রিয়ান বুঝিয়ে শুনিয়ে কোলে তুলে নিলো। রোদ উঠে বসলো। দাঁড়াতে নিলেই আবার ধপ করে বসে পরলো। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ধরে বললো,

— অ্যাই রোদ কি হলো?

রোদ মাথাটা ধরে বললো,

— হুট করে উঠাতে এমন হলো মনে হচ্ছে।

আদ্রিয়ান ধরে বললো,

— দেখি আসো আমি ধরি।

বলে আদ্রিয়ান ওয়াসরুমে দিয়ে আসলো। ব্রেকফাস্টে কতক্ষণ আলোচনা হলো।কি করবে, কিভাবে করবে এসব। রোদ মিষ্টিকে খাওয়াচ্ছে। আরিয়ান,সাবা আর জারবাও যাবে শপিং এ। সামনে যেহেতু রোজা তাই একসঙ্গে সব শপিং শেষ করে রাখবে। রোদের মনটা আজ অনেক ভালো। তাই সবার আগোচড়ে আদ্রিয়ানকে খায়িয়ে দিলো। হঠাৎ এর মানে বুঝলো না আদ্রিয়ান। তবুও বেজায় খুশি ও। রোদ বায়না করলো,

— এবার আমায় খায়িয়ে দিন।

অবাক হলো আদ্রিয়ান। যে মেয়েকে খায়িয়ে দিতে গেলেই লজ্জায় লাল, নীল হয়ে যায় সে কি বললো খায়িয়ে দিতে। আদ্রিয়ান তবুও অতো ভাবলো না। রোদের প্লেটে হাত দিতে নিলেই রোদ বললো,

— আপনার থেকে খাব।

অবাক আদ্রিয়ান আরেকদফা অবাক হলো। কিছু না বলে খাওয়াতে লাগলো। রোদকে আজ অনেক ফুরফুরা লাগলো। আদ্রিয়ানের মনটা বারবার খচখচ করলেও তা উপেক্ষা করলো রোদের খুশি খুশি মুখটা দেখে।

________________

সবাই রওনা দিলো শপিং এ। আদ্রিয়ান, রোদ, মিষ্টি এক গাড়িতে অন্যটাতে আরিয়ান, সাবা, আলিফ আর জারবা। আদ্রিয়ান গাড়িটা অন্য দিকে নিতেই রোদ জিজ্ঞেস করলো,

— কোথায় যাচ্ছেন?

— সামনেই।

রোদ বুঝলো আদ্রিয়ান জবাব দিতে চাচ্ছে না তাই মিষ্টির সাথে কথা বলতে লাগলো। গাড়ি থামলো একটা কবরস্থানের সামনে। আদ্রিয়ান নেমে বললো,

— ভিতরে থাক। আসছি আমি।

রোদ যা বুঝার বুঝে গেল। পেছনে মিষ্টিকে নিয়ে নামলো। আদ্রিয়ান একটা কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া দুরুদ পড়ে মোনাজাত করে দোয়া চাইলো তার শায়িত প্রিয়তমার জন্য। মিষ্টি বাবাকে ইশারা করে মাকে বললো,

— মাম্মা বাবাই কি করছে?

রোদ মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো,

— ওখানে তোমার আম্মু আছে সোনা। তার জন্যই বাবাই দোয়া করছে।

মিষ্টি অবুঝ গলায় বললো,

— আম্মু?

— হু আম্মু আর আমি তোমার মাম্মা।

মিষ্টি মাম্মা বলে মায়ের গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা দিয়ে রাখলো। একটু পরই আদ্রিয়ান এসে বললো,

— বের হলে কেন?

— এমনি।

— আচ্ছা চলো।

বলে গাড়িতে উঠলো তিনজন।

রাদরা অপেক্ষা করছে বসুন্ধরার এরিয়াতে।গাড়ি থামলো একসাথে দুটো। রোডের অপজিটে দাঁড়িয়ে আছে রাদ, রুদ্র আর জাইফা। আরিয়ানরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে। আদ্রিয়ান গাড়ি সাইড করে রাখছে। নেমে দাঁড়িয়েছে রোদ, মিষ্টি। হঠাৎ রোডের অপজিটে রুদ্র আর রাদকে দেখে দৌড়ে ওদের কাছে যেতে লাগলো মিষ্টি। রোদ পাশে তাকাতেই দেখলো মিষ্টি নেই। সামনে তাকালেই নজরে পরলো দৌড়ে যাওয়া মিষ্টির দিকে।এটা যেহেতু ওয়ান বাই রোড তাই গাড়ি গুলো পুরো স্প্রিড এ চলছে। রোদ “মিষ্টি” বলে দৌড়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। রাদ মিষ্টিকে তুলতেই চিৎকার করে উঠলো।আদ্রিয়ান নামতেই এমন কিছু দেখে কিছু বুঝার আগেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিলো রোদকে। ছিটকে পড়লো রোদ। আদ্রিয়ান জোরে “রোদ!” বলে চিৎকার করে উঠলো। কিন্তু ভাগ্য হয়তো সহায় ছিলো না। পরে যাওয়া রোদ উঠে দাঁড়ানোর আগেই একটা মাইক্রো এসে ধাক্কা মারলো। আদ্রিয়ান ধপ করে বসে পরলো। হাত, পা অবস হয়ে এলো। হৃদপিণ্ডটা ছটফট করতে লাগলো। রাস্তাটা মুহূর্তেই লাল হয়ে উঠলো। আদ্রিয়ান জোর করে উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে গেল রোদের কাছে। রাদ চাইলেও যেতে পারলো না। মিষ্টি ঙ্গান হারিয়েছে। পুলিশ রাস্তা আটকে দিলো। রাদ, আরিয়ান ওরা বারবার যেতে চাইলেও পুলিশ যেতে দিলো না। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো রুদ্র। তার বোন কি না র*ক্তাক্ত হয়ে শুয়ে আছে। জাইফা কোন মতে ধরে রাখলো ওকে। সাবা আর জারবাও কেঁদে অস্থির হয়ে উঠলো।

আদ্রিয়ান রোদের র*ক্তাক্ত দেহটাকে কোলে তুলে নিলো। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে লাগলো,

–রোদ! অ্যাই রোদ! উঠো। এই কি হলো তোমার? তাকাও আমার দিকে।

নিভু নিভু চোখ গুলো খুলে তাকালো রোদ। আদ্রিয়ানের কান্না মাখানো কন্ঠ শুনে যেন অবশিষ্ট শক্তিও শেষ হয়ে গেল। নিজের র*ক্তাক্ত হাত দিয়ে খামচে ধরলো আদ্রিয়ানের সাদা শার্ট। যেন উঠার চেষ্টা করছে। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি বুকে চেপে ধরে ওকে। অঝোরে কাঁদতে লাগলো। চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,

–রোদ! আমার সোনাপাখি কিছু হবে না। দেখি তাকাও।

রোদ ওর কানে মুখ লাগিয়ে চুমু খেয়ে ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললো,

— ভালোবাসি! ভালো…বাসি! ভা..লো..ব..বা..সি..

আর কিছু বলতে পারলো না রোদ। আদ্রিয়ানের গলায় মুখটা পরে রইলো। কেঁদে উঠলো আদ্রিয়ান।মন পাড়লো রোদের কথা যখন নলেছিলো,”মৃত্যুর আগে আপনার উত্তর দিয়ে যাব দেখিয়েন।” মুখে আলত করে হাত দিয়ে চাপড় মারতে মারতে ডাকলো আদ্রিয়ান,

— এই রোদ এই আমি ও ভালোবাসি তো। উঠো তো দেখি। সোনা পাখি না তুমি আমার? এমন করো না প্লিজ উঠো সোনা।

আদ্রিয়ানের ডাকে একটু তাকালো রোদ। ছোট্ট করে একটা হিচকি তুলে মুখ ভর্তি র*ক্ত বেরিয়ে এলো। আদ্রিয়ানের সাদা শার্টটা বুকের দিকে লাল হয়ে এলো। ভাবতে পারলো না রোদ। ছোট্ট প্রাণটা বের হতে এত সময় কেন নিচ্ছে? রোদের যে অনেক কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই তো আর একটু প্রাণটা বের হবে হবে বলে। ভালোবাসার মানুষের বুকে মৃত্যু লিখা ছিলো বুঝি? ভাবতেই ব্যাথার্থ চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো। চোখ বুজে নিলো রোদ। আর কোন সাড়া দিলো না। শুধু মুখে একটা মুচকি হাসি লেগে রইলো।
চিৎকার করে “রোদ” বলে ডাকলো আদ্রিয়ান। কেঁদে কেঁদে বললো,

— এমন করো না রোদ। তাকাও। কষ্ট হচ্ছে আমার সোনা। তাকাও দেখো তোমার আদ্রিয়ানের কেমন কষ্ট হচ্ছে।

রোদ আর তাকালো না। দেখতে পেল না তার ভালোবাসাকে। রোদের সাড়া না পেয়ে ওর র*ক্ত ভর্তি সারা মুখে চুমু খেল আদ্রিয়ান। বুকে চেপে ধরে বসে রইলো। একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল। শুধু বুকের মধ্যে ভরতে চাইলো। মনে পরলো ঐ দিনের কথা, “প্রমিজ করুন আর বিয়ে করবেন না আপনি।” বুকের মধ্যে কেমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। আগেও হয়েছিলো তবে আজ একটু বেশি। হৃদপিণ্ডটা আজ বেশিই ছটফট করছে। দেহে আজ আর থাকতে চাইলো না যেন। বের হওয়ার জন্য তোরজোর করতে লাগলো।

পুলিশদের নিজে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ভীর ঠেলে ডুকলো আরিয়ান। কয়েকজন পুলিশ রোদকে নিতে চাইছে আদ্রিয়ান থেকে কিন্তু আদ্রিয়ান শক্ত করে ধরে আছে ছাঁড়ছে না৷ চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো আরিয়ানের। এমন করে কেন বসে আছে আদ্রিয়ান? দৌড়ে গেল ঐ খানে। পুলিশদের সরিয়ে দিলো। আস্তে করে বসে ডাকলো,

— আদ্রিয়ান?

মৃত্যু দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিয়ান। আরিয়ানের যেন বুক মোচড়ে উঠলো। তবুও বললো,

— ওকে আমাকে দে ভাই।

আদ্রিয়ান আস্তে করে যত্ন করে দিলো রোদকে। যেন কোন নবজাতককে প্রথমবার কেউ তুললো। আরিয়ান কোলে তুলে যেই না দাঁড়ালো ওমনি রোদের র*ক্তে র*ক্তাক্ত পিচ ঢালা রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়লো আদ্রিয়ান।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫৩(বর্ধিতাংশ)

চিনচিন করে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে বুকে। মাথাটাও ভার ভার লাগলো। আস্তে করে চোখ খুললো আদ্রিয়ান। মাথার উপর ঘূর্ণয়মান ফ্যান। ঠোঁটে একটু হাসি ফুটে উঠলো। এরমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো সে। কি ভয়ংকর ই না ছিলো সেই মুহূর্ত গুলো। কিন্তু আফসোস সেই হাসিটুকু বেশিক্ষণ টিকলো না। তীব্র ফিনাইলের গন্ধ নাকে এলো। আশে পাশে তাকিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলো হসপিটালের বেডে। উঠতে চাইলেই হাতে টান লাগলো। তাকিয়ে দেখলো স্যালাইন চলছে। হুট করেই যেন মনে পরলো না এ স্বপ্ন ছিল না। তাহলে তার রোদ? কোথায় রোদ? মুহূর্তেই পাগল হয়ে উঠলো আদ্রিয়ান। হাতের স্যালাইন টেনে খুলে ফেললো। বুকের ব্যাথাটা বাড়তে লাগলো। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো,

— রোদ! রোদ! এই রোদ? কোথায় তুমি? রোদ!

দৌড়ে কেবিনে ডুকলো নার্স সহ বাকিরা।শান্ত হতে বলতে লাগলো। আদ্রিয়ানের কি আর দিন দুনিয়ায় হুস আছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে র*ক্তাক্ত অবস্থায় শেষ দেখেছিলো ও। কোথায় আছে এখন? ভাবতেই পাগলামি শুরু করে দিলো। ওয়ার্ড বয়রাও ধরে রাখতে পারলো না। আদ্রিয়ানের মা জোরে কেঁদে উঠলো। এই দিন ও দেখার ছিলো তার? প্রথম ভালোবাসাকে হারিয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলো আদ্রিয়ান কিন্তু আজ যেন পাগল হয়ে গিয়েছে। আরিয়ান মাত্রই বের হয়েছিলো আদ্রিয়ানের চিৎকার চেচামেচি শুনা মাত্র দৌড়ে কেবিনে ডুকলো। তারাতাড়ি যেয়ে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ানকে থামানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যার্থ হলো। আদ্রিয়ান ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আরিয়ানকে পরক্ষণেই আবার আরিয়ানের দুই হাত ধরে বললো,

— এই আরিয়ান রোদ কোথায়?

— আদ্রিয়ান শান্ত হ। শুন আমার কথা।

আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে বললো,

— কি শুনবো? তুই রোদকে দে। আমার মনে আছে শেষবার তুই না চাইলি রোদকে? আমি না দিলাম তোর কাছে? এখন ফিরত দে ওকে। কোথায় ও বল? ওকে দে ভাই। আমার বুকে ব্যাথা করছে। টিকতে পারছি না আর।

জারবা নিজের ভাইকে দেখে কেঁদে উঠলো। বাকিরাও কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান দাঁড়ানো থেকে বসে পরলো। এক হাত বুকে চেপে ধরলো। আরেক হাত আরিয়ানের পায়ে চেপে বললো,

— ওকে দে ভাই। কষ্ট হচ্ছে আমার। কোথায় রাখলি ওকে?

এমন কতশত আত্মীয় স্বজনদের হাহাকার আর কান্না দেখেছে আরিয়ান। এসব নতুন না তার কাছে। কিন্তু আজ নিজের ছোট ভাইয়ের এমন আহাজারি যেন আর সহ্য হলো না আরিয়ানের। নিজেও কেঁদে দিলো। ছোট্ট রোদকে সে ভাই বউ মনে করি নি কোন দিন। নিজের বোন মেনেছে। ধপ করে আদ্রিয়ানের কাছে বসে জড়িয়ে ধরলো আরিয়ান। আদ্রিয়ানের যেন বাঁধ ভেঙে গেল। বাচ্চাদের মতো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। ২৯ বছরের আদ্রিয়ানের পুরুষনালী কন্ঠে যেন কেঁপে উঠল পুরো করিডর। এ কেমন বিভৎস কান্না? কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ কি এভাবে কাঁদে? না কাঁদে না কিন্তু আদ্রিয়ান কাঁদছে। বার বার গলা ফাটিয়ে ডাকতে লাগলো,

— রোদ! আমার রোদ! আমার রোদ এনে দে আরিয়ান। আমার রোদ এনে দে।

বাকিরাও যেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। আরিয়ান বহু কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে বললো,

— আদ্রিয়ান থাম। উঠ। চল আমার সাথে।

আদ্রিয়ানের উঠার শক্তি নেই আর না আছে উঠার চেষ্টা। আরিয়ান সহ ওয়ার্ড বয়রা মিলে অনেক কষ্টে ধরে উঠালো আদ্রিয়ানকে। ওদের সহায়তায় আস্তে করে হাটতে লাগলো আদ্রিয়ান। সমস্যা হচ্ছে এই বুক ব্যাথায়। একটা রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো ওরা। রুমের বাইরে চেয়ারে বসে রাদ মাকে জাড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে যাচ্ছে। ওর মা তসবিহ পড়ছে। তার পাশেই জাইফার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমের মধ্যেই ফুপিয়ে যাচ্ছে রুদ্র। এদের চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে এরা বিগত কয়েক ঘন্টা যাবৎ কেঁদে যাচ্ছে। রোদের বাবাও আজ যেন ভেঙে গিয়েছেন। শক্ত পোক্ত লোকটাও যেন মেয়ের বিরহে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছেন। রোদের চাচা চাচি সহ,খালারাও এখানে। আদ্রিয়ানের পুরো পরিবার সহ মামা আর ফুপিরাও এখানে। ঐ তো পাশে অয়ন, প্রান্ত, প্রণয় ওরাও দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানের এতদিকে হুস নেই। রোদ কেন নেই এখানে? ভাবতেই চিৎকার করে ডাকলো,

— রোদ! কোথায় তুমি? এই আরিয়ান আমার রোদ কই? তুই এখানে কেন আনলি? রোদ কোথায়?

সবাই তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। রোদের মা কেঁদে উঠলো। রাদও জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান নিজের ভর ছেড়ে দিলো। বুকের ব্যাথা যেন সহ্যর সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান সহ রাদ উঠে এসে ধরলো। অয়নরাও দৌড়ে এসে ধরলো। আরিয়ান ডাকতে লাগলো,

— আদ্রিয়ান? এই উঠ। ঔ যে ওখানে আছে তো রোদ। উঠ। এমন করলে সমস্যা হবে তোর।

কিছুই শুনতে পেল না আদ্রিয়ান। ঙ্গান হারিয়ে গেছে ওর। মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলো আদ্রিয়ান। বুকের ব্যাথা আগে থেকে থাকলেও তেমন একটা পাত্তা দেয় নি ও। আজ নিজের প্রিয়তমার এমন অবস্থা হয় তো সহ্য হয় নি তাই স্ট্রোক করে ফেলেছিলো। ধরা ধরি করে কেবিনে নেয়া হলো ওকে। হার্ট স্পেসিয়ালিস্ট এসে চেক করলো আদ্রিয়ানকে। বলে গেলেন যাতে স্ট্রেস না নেন আদারওয়াইজ বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে ইভেন লাইফ রিস্ক ও আছে। আরিয়ান কি বলবে ভেবে পেল না। ঙ্গান ফিরলেই ই বা কিভাবে শান্ত করবে?

_____________

রাত প্রায় ৩ টা। কারো চোখে ঘুম নেই। সবাই বসে আছে তো কেউ দাঁড়িয়ে। আদ্রিয়ানের ঙ্গান ফিরেছে। উঠা মাত্রই পাগলামি শুরু করলো। আরিয়ান ওকে ধরে একটু জোড়ে বললো,

— আদ্রিয়ান! তুই এমন করলে রোদকে কে সামলাবে?

আদ্রিয়ান অস্থির কন্ঠে বললো,

— আমি রোদের কাছে যাব আরিয়ান। নিয়ে চল আমায়। কেমন যেন লাগছে আমার।

রিশান এগিয়ে এসে বললো,

— কি শুরু করলি তুই? এমন করলে তো এবার মেজর স্ট্রোক করবি তুই? রোদ আর মিষ্টির কথা ভাব একবার। পাগলামি বন্ধ কর।

— আমাকে ওর কাছে নিয়ে চল রিশান।

দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রিশান। আরিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,

— আচ্ছা চল। কিন্তু কোন কান্না কাটি করবি না।

আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে যেতে নিলেই রিশান আর রাদ ধরলো। আই সি ইউতে রোদ। তাই বিশেষ পোশাক পড়িয়ে দিলো আদ্রিয়ানকে। ধরে পাশে বসিয়ে দিলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান। এটা কি না তার রোদ? মুখে অক্সিজেন মাস্ক, হাতে স্যালাইন চলছে, ডান হাত আর ডান পা পুরোটা ব্যান্ডেজ করা। মাথায় ও ব্যান্ডেজ। চেহারা ফুলে নীল হয়ে আছে। বা হাতেও অনেক খানি ছিলে গিয়েছে। থেমে থেমে শ্বাস নিচ্ছে রোদ যেন অনেক কষ্টে অক্সিজেন নিচ্ছে ও। আদ্রিয়ান শুধু দেখলো। কি কষ্টটাই না হচ্ছে ওর রোদের। এক মুহূর্তে কি সব হয়ে গেল? ভাঙা গলায় ডাকলে,

— রোদ?

অপর দিক হতে কোন শব্দ এলো না। আদ্রিয়ান কাঁপা কাঁপা হাতে ছুঁয়ে দিলো রোদের ফুলে নীল হওয়া মুখ। পরপরই হাত সরিয়ে নিলো যদি ব্যাথা পায় রোদ? মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকলো,

— সোনাপাখি। উঠবে না?

এবারও নিশ্চুপ। কোন উত্তর নেই। এবার কেঁদে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদের ভালো হাতটা নিজের হাতে মুঠ করে চুমু খেয়ে ডাকলো,

— এ..এই রোদ? উঠো তো। উঠো না সোনা। এভাবে থাকে কেউ হুম? উঠো।

আদ্রিয়ান আবারও অস্থির হয়ে উঠলো তাই রিশান ওকে ধরে বের করে আনলো। অনেক বুঝালেও লাভ হলো না। অবশেষে ঘুমের ইনজেকশন পুস করা হলো। কিছু করার নেই নাহলে এবার আদ্রিয়ানের জীবন নিয়ে টানাটানি লাগবে।

_______________

ভোরের দিকে রেসপন্স করলো রোদ। তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষণ কিন্তু কিছু বলে নি। অবস্থা একটু ভালোর দিকে তাই কেবিনে শিফ্ট করা হলো। সবাই একে একে দেখলো। কাছে আসলো না রুদ্র। রাদকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে একটু দূরে দাঁড়িয়ে। রাদও একই অবস্থা। এদের চোখ মুখে তাকানো যাচ্ছে না। রোদের কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে। চোখের পলক ঝপকালো কয়েকবার। ওর মা কতক্ষন কাঁদলো। রোদ ইশারায় ডাকলো রুদ্রকে। রুদ্র এবার ভাইকে জড়িয়ে ধরে জোরে কেঁদে উঠলো। যেখানে রাদের ওকে থামানোর কথা সেখানে রাদও কেঁদে উঠলো। দুই ভাই যেন বোনকে ফিরে পেয়ে দুনিয়ার সব ভুলে কেঁদে যাচ্ছে। সান্ত্বনাই কে দিবে?অবশেষে অয়ন, রিশান, প্রান্তরা সামলালো। জারবাকে বাসায় পাঠানো হলো কারণ সাবা মিষ্টি আর আলিফকে নিয়ে বাসায় একা।
সাবাও আজ অনেক কেঁদেছিলো। এক বোন হারিয়ে আর হারাতে চায় নি ও। অনেক কষ্টে রুদ্রকে ধরে রোদের সামনে আনা হলো। এমন অবস্থায় বোনকে দেখে যেন দুই ভাইয়ের প্রাণ যায় যায়। রাদ দৌড়ে বেরিয়ে গেল। এভাবে আর সহ্য হচ্ছে না রোদকে। রুদ্রকে আরিয়ান সামলালো। রোদের চোখ আরো দুটো মুখকে খুজলো কিন্তু পেল না। কিছু সময় পর আবারও ঘুমিয়ে গেল রোদ।

সকাল ৮ টার দিকে আদ্রিয়ান জেগে উঠলো। ওকে নিয়ে যাওয়া হলো রোদের কাছে। আদ্রিয়ান বসতেই চোখ খুলে তাকালো রোদ। গাল গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা পানি। আদ্রিয়ান রোদের গলার দিকে মুখ গুজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। রোদের চোখ দিয়ে ও পানি পরলো। কোন কথা নেই কারো মুখে। দুই জন শুধু দুই জনকে দেখতে আর অনুভব করতে মত্ত। আদ্রিয়ান উঠে ঝুকলো রোদের মুখের উপর। টপটপ করে পানি পরলো রোদের চোখে মুখে সাথে নিজের চোখ দিয়ে ও পানি পরলো। দুই জনের অশ্রু আজ এক হয়ে বেয়ে পরলো।

বেশ কিছু সময় পর আস্তে করে রোদ বললো,

— মিষ্টি কোথায়?

আদ্রিয়ান জবাব দেয়ার অবস্থায় নেই। ও রোদের নীল হয়ে ফুলে যাওয়া মুখে চুমু দিতে ব্যাস্ত। রোদ নিজের ভালো হাত দিয়ে আদ্রিয়ানের গাল ছুঁয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ওই হাতেও চুমু খেয়ে কেঁদে উঠলো। রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এভাবেও বুঝি আদ্রিয়ান কাঁদে?

#চলবে…..