ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৫৪

0
94

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫৪

দুপুর ২ টার দিকে জেগে উঠলো রোদ। সারাক্ষণ শুধু ঘুম পাচ্ছে ওর। হয়তো মেডিসিনের ইফেক্ট এটা। চোখ খুলে তাকালো রোদ। ঘাড় কাত করতেই নজরে এলো চেয়ারে বসে ঝিমানো আদ্রিয়ানকে। বা হাতটা এগিয়ে আলতো করে স্পর্শ করলো আদ্রিয়ানের হাত। সঙ্গে সঙ্গে তাকালো আদ্রিয়ান। ব্যাস্ত হয়ে পরলো রোদকে নিয়ে। আদ্রিয়ান বার বার করে বললো,

— কিছু লাগবে তোমার? ডক্টর ডাকবো? এই রোদ ব্যাথা করছে?

আদ্রিয়ানের মা আর রাদ এগিয়ে এলো। আদ্রিয়ানকে শান্ত হতে বললো কিন্তু আদ্রিয়ান কি আর শান্ত হওয়ার লোক। রোদের মা ওকে ধরে বললো,

— বাবা শান্ত হও। সমস্যা হবে তোমার। এমন করো না।

রোদ আস্তে করে বললো,

–ঠিক আছি আমি।

কথাটা শুনে যেন শান্ত হলো আদ্রিয়ান। রাদ এগিয়ে এসে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— কিছু লাগবে সোনা?

— উহু।

এমন সময় ইয়াজ আর আরিয়ান ডুকলো। পরপরই রিশান আর প্রান্তও এলো। ইয়াজ রোদকে জেগে থাকতে দেখে ডক্টরের কাছে গেল। ডক্টর এসে চেক করলো। নার্সকে স্যালাইন চেঞ্জ করতে বলে চলে গেলেন। আরিয়ান এসে রোদের মাথায় হাত রাখলো। কেমন আছে জিজ্ঞেস করতেই রোদ শুকনো মুখে একটু হাসলো। আরিয়ান আদ্রিয়ানকে বললো,

— আমরা আছি এখানে। তুই বাসায় যা রাদের সাথে। ফ্রেশ হয়ে আয়। এভাবে থাকলে সমস্যা বাড়বে আদ্রিয়ান।

— দরকার নেই। চেঞ্জ তো করেছি।

দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আরিয়ান। অনেক কষ্টে কাল ওকে নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করানো হয়েছিলো। পাশের কেবিনে যেখানে ওকে রেস্ট নিতে বলা হয়েছিলো সেখানে ও সকাল থেকে রোদের পাশে বসা। আরিয়ান রোদের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,

— আচ্ছা তোর কেবিনে যা এখন। ফ্রেশ হয়ে আয়। খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে তোর।

রোদ কিছুই বুঝলো না। কিসের মেডিসিন নিবে আদ্রিয়ান? আর আদ্রিয়ান কেই বা এমন দেখাচ্ছে কেন? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল।

______________

মিষ্টিকে বাসায় রাখা যাচ্ছে না। সকাল থেকেই কেঁদে যাচ্ছে ও। সাবা আর জারবার কাছে ও থাকছে না। আদ্রিয়ানের মা- বাবা মাত্র বাসায় এলো। তাদের কাছে ও থাকছে না মিষ্টি। ওর মা আর বাবাকে চাই। সকাল থেকে দেখছে না। কালও রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলো কিন্তু মা-বাবা এলো না। এখন ওকে আর রাখা যাচ্ছে না। খাচ্ছে ও না। কি করবে ভাবতেই আরিয়ানকে কল করলো সাবা।

রোদের কেবিনে ডুকলো আদ্রিয়ান। রাদ অনেক কষ্টে ওকে খায়িয়েছে একটু। এরপর মেডিসিন খায়িয়ে দিয়েছে। আদ্রিয়ান কেবিনে ডুকতেই রাদ ওর মাকে বললো,

— আম্মু আসো। গাড়ি এসেছে। বাসায় যাও এখন। সন্ধ্যায় এসো আবার।

— আমি যাব না রাদ। আমার রোদকে রেখে কিভাবে যাব আমি?

বলেই কেঁদে উঠলেন।রাদ মাকে জড়িয়ে ধরে উঠালো। শান্ত করে বললো,

— রুদ্র আর জাইফা একা আম্মু। ওরাও আসতে চাইছে। রুদ্র আবারও কান্না করছে। তুমি এখন যাও।

রোদের মা যাওয়ার আগে আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ওনাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। রাদ কোন মতে সামলালো। ওরা বের হতেই সিক্ত চোখে তাকালো আদ্রিয়ান তার রোদের দিকে। মুখটা ছোট হয়ে আছে। ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে গেছে। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। গালে হাত দিয়ে চুমু খেল। বসে বসে দেখতে লাগলো রোদকে। একটু পরই রোদ চোখ খুললো। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানিও পরলো। আদ্রিয়ান তা মুছে দিয়ে চোখে চুমু খেল। ওর নিজের চোখ দিয়ে ও পানি পড়ছে। আস্তে করে রোদের শুকনো ঠোঁটে চুমু খেল। সিক্ত করলো দু-জনের অধর। আদ্রিয়ান ওর উপর ঝুকে রইলো। রোদ আস্তে করে বললো,

— মিষ্টি কোথায়?

— বাসায়।

— আপনি গিয়েছিলেন?

— উহু।

— একা কাঁদছে হয়তো।

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই দরজা দিয়ে হিচকি তুলতে তুলতে পাতটা একটা গেঞ্জি আর হাঁটুর উপর প্যান্ট পড়া মিষ্টি ডুকলো। পেছনেই জারবা, সাবা আর আরিয়ান। মিষ্টির কপালে ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ যা তখন ধাক্কা খেয়ে পরে হয়েছিলো। ভাবতে পারলো না রোদ। কাল যদি রোদ ধাক্কাটা না দিতো?কি হতো তার ছোট্ট প্রাণটার? ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান ব্যাস্ত হলো। মিষ্টি মায়ের কাছে এসে মাকে এমন করে দেখে জোরে কেঁদে দিলো। আদ্রিয়ান ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো। এই দুজনই ওর কলিজার টুকরা। কারো কিছু হলে বাঁচবে না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান একহাত রোদের মাথায় রাখলো। রোদ বা হাতটা এগিয়ে ডাকলো,

— মিষ্টি।

মিষ্টি তাকালো একবার আবারও বাবার কাঁধে মুখ গুজে কেঁদে উঠলো। রোদ আবারও ডাকলো,

— মা আসবে না?

মিষ্টি মুখ ঘুরিয়ে তাকালো। অল্প স্বরে বললো,

— আসবে।

রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ওকে আমার কাছে দিন।

— ব্যাথা লেগে যাবে সোনা।

— বা সাইডে তেমন কিছু হয় নি। এখানে দিন।

রোদের জোরাজুরিতে আদ্রিয়ান আস্তে করে মিষ্টিকে শুয়িয়ে দিলো রোদের পাশে। মিষ্টি মায়ের গলার দিকে মুখ গুজে ঘ্রাণ নিলো মায়ের। কান্না থেমে গিয়ে একটু পর পর হিচকি তুলছে শুধু। রোদ ওর মাথায় চুমু খেল। বা হাতটা দিয়ে বুকে চেপে ধরে ডুকরে উঠলো। আদ্রিয়ান ওর চোখের পানি মুছে চুমু খেয়ে বললো,

— কাঁদে না রোদ।

— কাল যদি ওর কিছু হয়ে যেত কি করতাম আমি?

এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই আদ্রিয়ান। নিজের চোখ দিয়েও পানি পরলো। সাবা আর জারবা এগিয়ে এসে রোদের সাথে টুকটাক কথা বলে ওর মন হালকা করলো। আরিয়ান আদ্রিয়ানকে আবারও রেস্ট নিতে বললো কিন্তু শুনে নি আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পারলো রোদ কিন্তু কি? আরিয়ান ই বা কেন বারবার বলছে ওকে রেস্ট নিতে,মেডিসিন নিতে? রোদ জিজ্ঞেস করতেই সবাই এরিয়ে গেল ব্যাপারটা।

কিছু সময় পরই ঘুমিয়ে গেল মিষ্টি। আদ্রিয়ান ওকে তুলে পাশের বেডে শুয়িয়ে দিলো। সবাই একে একে দেখে যেতে লাগলো। আদ্রিয়ান আর রোদের সব ফ্রেন্ডরা, আত্নীয়রা, আর বাসার লোকজন তো সারাক্ষণই থাকে। সন্ধ্যার দিকে রুদ্র এসে আরেকদফা কাঁদলো সাথে যোগ দিলো আজ রাদ। তিন ভাই বোন কান্না করতে করতে শেষ। আরিয়ান এসে শান্ত করালো। মিষ্টিকে বাসায় নিতে চাইলেও গেল না মিষ্টি। বারবার কেঁদে উঠলো। রুদ্র যেন বড় হয়ে উঠলো। মিষ্টিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের সাথে বাসায় নিয়ে গেল।

_____________

হসপিটালে আজ ১০ দিন হয়ে এলো। রোদের পায়ের প্লাস্টার কাটবে আজ। ভয়ে ভয়ে কয়েকবার কেঁদেছে রোদ। আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিলেও তেমন একটা কাজে দেয়নি। এই কয়দিন রাত দিন এক করে আদ্রিয়ান পাশে ছিলো রোদের। কতশত আদর,যত্ন, ভালোবাসা আর কান্না দেখেছে রোদ আদ্রিয়ানের। রোদের কান্নায় আজ আবার বুকে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে আদ্রিয়ানের। বুকে হাত চেপে বসতেই তারাতাড়ি আরিয়ান আর রাদ ধরলো। আরিয়ান ডাকতে লাগলো,

— আদ্রিয়ান? এই? বেশি ব্যাথা হচ্ছে তোর?

রোদ নিজের কান্না ভুলে গেল। আদ্রিয়ানের হাত চেপে ধরলো। ডক্টর চেক করতেই বললো,

— আপনি এভাবে স্ট্রেস নিচ্ছেন কেন? কতবার বলেছি। এরপর তো আপনি মেজর স্ট্রোক করবেন।

রোদ আদ্রিয়ানের চেপে রাখা হাতটা আস্তে করে ছেঁড়ে দিলো। আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকালো। রোদ জেনে গিয়েছে ভাবতেই ধরতে গেল।রোদ নিজের মুখে হাত চেপে রাখলো। আদ্রিয়ান ধরতেই কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান নিজেও কেঁদে উঠলো। রোদের মাথাটা বুকে চেপে ধরলো। রোদ কেঁদে কেঁদে বললো,

— কত বার জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু আপনি মিথ্যা বললেন। কেন এমন করলেন? আপনার কিছু হলে কি করতাম আমি বলুন?

আদ্রিয়ান রোদের সারা মুখ ভর্তি আদর দিলো। বুকে চেপে রেখেই ডক্টরকে বললো যাতে প্লাস্টার কাটে। কাটার সময় রোদ ব্যাথায়ও কাঁদলো কতক্ষণ। আদ্রিয়ানের ক্ষণে ক্ষণে বুক কেঁপে উঠে যখন রোদ ব্যাথায় কাঁদে।

রোদকে ধরে ধরে হাঁটাতে বলেছে ডক্টর। হাতে পায়ের কিছু ব্যায়ামও দিয়েছে। আপাতত রোদকে কোলে করে নামিয়ে পেছন থেকে ধরে ধরে হাটাচ্ছে আদ্রিয়ান। রোদ পা ফ্লোরে রাখতেই ব্যাথায় কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে উঁচু করে তুললো। আস্তে করে বেডে বসিয়ে দিয়ে বুকে চেপে ধরলো। অনেকক্ষণ পরে থামলো রোদ। বুক থেকে মুখটা তুললো। আদ্রিয়ানেরও চোখ ভেজা। রোদ ওর বুকে চুমু খেয়ে বললো,

— এই বুকে না আমি থাকি তাহলে কেন এখানে হয় হুম?

— কে বলেছে ব্যাথা হয়? এই বুকে যতক্ষণ তুমি থাক ততক্ষণ শান্তিতে থাকি আমি।

রোদ মুখ তুলে বললো,

— আপনার ব্যাথা হতো তবুও কেন অবহেলা করতেন বলুন? আপনার কিছু হলে আমার আর মিষ্টির কি হবে?

— এই ব্যাথা সবসময় ছিলো না রোদ। বিগত চার বছর ধরে যখনই মিষ্টি আর ওর মায়ের কথা মনে করতাম তখনই এই ব্যাথা হতো রোদ। এরপর যখন তোমাকে পেলাম তখন যতবার তোমাকে হারানোর ভয় পেয়েছি ঠিক ততবারই এই বুক ব্যাথা হতো।

বলে চুমু খেল রোদের ঠোঁটে। রাদ একটু পর ডুকে বললো,

— ও হেঁটেছে?

— ব্যাথা পাচ্ছে। পা রাখতে পারছে না।

রাদ এসে বোনের মাথায় চুমু খেয়ে ডক্টরের কাছে গেল। ডক্টর চেক করে বললো ব্যাথা হবেই কিন্তু হাঁটতে হবে। আদ্রিয়ানকে মেডিসিন নিতে হবে তাই রিশান এসে ডেকে নিয়ে গেল। কিছু খাওয়াতে হবে একে। বউ পাগল আদ্রিয়ান গত ১০ দিনে খাওয়া দাওয়া ভুলে গিয়েছে। কেউ ধরে খাওয়ালে তবেই খায়। এ নিয়ে রোদ ও রেগেছিলো কয়েকবার।
আদ্রিয়ান যেতেই রাদ বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড় করালো। ব্যাথার ভাইয়ের বুকে চেপে রইলে রোদ। রাদ আস্তে আস্তে করে ধরে হাঁটালো বোনকে। একটু পরই আদ্রিয়ান এলো। রাদের কাছ থেকে রোদকে নিয়ে নিজে হাঁটালো। প্রায় ১০ মিনিট হেঁটে আর হাঁটবে না রোদ। ব্যাথায় ওর জান যায় যায় অবস্থা। আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়ে শুয়িয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে গেল রোদ।

মাগরিবের পরই একে একে সবাই আসা শুরু করলো। ইয়াজের সাথে রাতুল ও এলো। এর আগেও এসেছিলো তখন রোদ ঘুম ছিলো। আজ কোচিং এর অনেকও এসেছে। কেবিনে ডুকতেই চোখে পড়লো আদ্রিয়ানের বুকে ঘুমন্ত রোদকে। রাতুলের মন খারাপ হলো। অনেক চেয়েছিলো রোদকে কিন্তু রোদ তো আগেই অন্য কারো হয়ে গিয়েছে। রোদ জাগতেই সবাইকে দেখলো। কথাবার্তা বলে চলে গেল ওরা ইয়াজ বাদে। ইয়াজের বাবা মা ও এসেছিলো কয়েকবার। জারবা কফি হাতে ডুকতেই ইয়াজকে দেখলো সাথে সাথে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। ইয়াজও একই কাজ করলো। মিষ্টিকে নিয়ে রুদ্র আর জাইফা আর রোদের বাবা এলো। মিষ্টি তো এসেই মায়ের বুকে লেগে রইলো। এত্তো এত্তো ভালোবাসা আর দোয়ায় ই যেন সুস্থ হতে লাগলো রোদ।

______________

আজ পুরো ২৫ দিন পড়ে বাড়ি ফিরলো রোদ, আদ্রিয়ান। এই কয়েকদিন আদ্রিয়ান ও বাড়ী আসে নি। রোদের মা-বাবা সহ রাদও অনেক জোর করেছিলো যাতে ওদের বাড়ী নিয়ে যায় সাথে আদ্রিয়ান আর মিষ্টি ও যাক। কিন্তু আদ্রিয়ান শুনলে তো। ওর এক কথা রোদ সুস্থ হোক তারপর যাবে। আদ্রিয়ানের কথা চিন্তা করেও আর তেমন জোর করে নি সবাই। রোদকে কোলে তুলে রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। বেডে শুয়িয়ে দিলো। সবাই এখন ওর রুমে। একে একে দেখে দেখে সবাই যাচ্ছে। এখন যেহেতু দুপুর টাইম তাই রোদকে খাওয়াতে হবে। ওর শাশুড়ী গেল খাবর রেডি করতে। সবাই যেতেই রোদ আদ্রিয়ানকে বললো,

— একটু জারবাকে ডেকে দিবেন।

আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে বললো,

— কি লাগবে সোনা? আমাকে বলো।

— আরে আপনি এমন হুট হাট অস্থির হয়ে যান কেন?

— আচ্ছা বলো কি লাগবে?

— গোসল করব আমি। ভালোলাগছে না। শরীর থেকে হসপিটালের গন্ধ আসছে।

— ড্রেস চেঞ্জ করলেই হবে আমি নাহয় মাথায় পানি দেই।

— না না গোসল করব।

— বেশি বুঝ তুমি।

বলে দরজা লাগিয়ে এলো আদ্রিয়ান। রোদকে বিছানার কিণারে বালিশে শুয়িয়ে দিলো। বালতি আর বোলে করে পানি নিয়ে এলো। মাথায় পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ধুয়ে দিলো। টাওয়াল পেচিয়ে দিয়ে ওকে উঠিয়ে বসালো। পরণের কাপড় খুলে দিয়ে পুরো শরীর স্যাভলোনের পানি দিয়ে পরপর দু বার মুছিয়ে কাপড় পড়িয়ে দিলো। মুখ মুছাতে গেলেই দেখলো গাল ফুলিয়ে রেখেছে রোদ। আদ্রিয়ান চুমু খেয়ে বললো,

— আচ্ছা ঠিক আছে কাল গোসল করিয়ে দিবো। খুশি?

— হু।

আদ্রিয়ান ওর চুল মুছিয়ে শুকিয়ে বেঁধে দিলো। শুকনো ব্যাথা গুলোতে মলম লাগিয়ে দিলো। ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,

— বস আসছি আমি।

বলে ঝটপট গোসল করে এলো আদ্রিয়ান। দরজায় নক হচ্ছে দেখে খুলে দিলো। ওর মা খাবার নিয়ে এসেছে। আদ্রিয়ান রোদকে খায়িয়ে দিলো। রোদ মিষ্টির কথা জিজ্ঞেস করতেই জানলো ও খেয়েছে আজ সাবার কাছে। এখন ঘুমাচ্ছে। আদ্রিয়ান নিজেও খেয়ে নিলো। রোদের মেডিসিন খায়িয়ে দিতেই রোদ বললো,

— আপনার মেডিসিন কোথায়? খেয়ে নিন।

— খাচ্ছি।

______________

রাতে ঘটলো বিপত্তি। আজ আদ্রিয়ান একটু ঘুমিয়ে গিয়েছিল। রোগ এতদিন পর বড় বেড পেয়ে মোচড় দিতে গিয়েই পেল হাতে ব্যাথা। ঘুমের মধ্যেই জোরে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান ধরফরিয়ে উঠলো। লাইট অন করে ডাকতে লাগলো,

— রোদ? এই কি হয়েছে?

রোদ কেঁদেই যাচ্ছে। আরিয়ানকে কল করলো আদ্রিয়ান। আরিয়ান এসে চেক করলো। হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করতেই শান্ত হলো রোদ। সারারাত আর ঘুমালো না আদ্রিয়ান। রোদকে বুকে নিয়েই বসে রইলো।

আদ্রিয়ানের এমন নির্ঘুম রাত কাটানো এখন একদমই উচিত না। রোদ বুঝতে পেরে আদ্রিয়ানকে বললো,

— শুনুন।

— বলো।

— আমাকে নাহয় বাসায় দিয়ে আসুন। কয়েকদিন…

আর কিছু বলার আগেই ধমক খেয়ে চুপসে গেল রোদ। আর কিছু বললো না। আদ্রিয়ান কিছুক্ঘ্ষণ পর শান্ত স্বরে বললো,

— আমার থেকে দূরে যেতে চেও না রোদ। মরেই যাব এবার।

রোদ ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— তাহলে প্রমিজ করুন রাতে ঘুমোবেন।

— আচ্ছা ঘুমাবো তো।

— ভালোবাসি।

কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এই উত্তর ঐ দিন ওভাবে পাওয়া থেকে সারাজীবন না পেলেও শান্তি পেত আদ্রিয়ান। আচমকাই রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কাঁধে ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকে বললো,

— ভালোবাসি ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি।

— আমিও।

একটু পরই মিষ্টি ঢুলু পায়ে ডুকলো। রাতে রোদের কাছে ঘুমানোর পরই আদ্রিয়ান ওকে জারবার কাছে দিয়ে আসে। এই মা মেয়ের ঘুম একটার ও ভালো না। যদি আবার রোদের শরীরে পা তুলে দেয়। মিষ্টি রুমে ডুকেই মায়ের বুকে এলো। রোদও মেয়েকে আদর করে বললো,

— মা খাবে যাও বাবাই ফ্রেশ করিয়ে দিবে।

মিষ্টি উঠে বসলো। মায়ের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,

— আচ্ছা।

বলে আদ্রিয়ানের কোলে উঠলো। আদ্রিয়ান ও ওকে ফ্রেশ করিয়ে আনলো। খাবার রুমে এনে আদ্রিয়ান দুজনকে খায়িয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। রোদ একটা বই নিয়ে পড়ছিলো ওমনি ইয়াজ এলো। ইয়াজই ওকে হেল্প করছে সব পড়া গুছাতে। নাহলে ইয়ার গ্যাপ যাবে যা রোদ কোন মতেই চাচ্ছে না। আদ্রিয়ান কত বুঝালো এক ইয়ার গ্যাপ গেলে যাক কিন্তু রোদ কেঁদে কেঁদে দুনিয়া ভাসালো না পেরে রাদ ইয়াজকে বললো। ইয়াজ নিজেই এসে এসে ওকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। আজও তাই। এরমধ্যেই জারবা এলো কফি নিয়ে। ইয়াজ আর ও যেন একজন আরেকজনকে দেখেই নি এমন একটা ভাব। আসলে মানুষ যখন অতিরিক্ত স্বাভাবিক ব্যাবহার করতে চায় তখনও অস্বাভাবিক আচরণ করে বসে। ইয়াজ আর জারবার ক্ষেত্রেও তাই যা সবারই নজরে আসছে।

#চলবে…..