ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৫৫ এবং শেষ পর্ব

0
466

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫৫

এরমধ্যেই কেটে গেল প্রায় ১ মাস। রোদের শরীরের ও উন্নতি হয়েছে। শুধু বা পায়ের সমস্যাটা পুরো পুরি ঠিক হয় নি। আদ্রিয়ান নিয়ম করে ব্যায়ম করায় রোজ। রোদ এখন মেডিক্যাল এ ও যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ধরে দিয়ে আসে। বাকিটা সময় ইয়াজ, আরিয়ান, রিশান, সাহিল ওরা ওকে দেখে শুনে রাখে। রোদের ফ্রেন্ড সহ টিচাররাও যথেস্ট হেল্প করে। আদ্রিয়ানের এত্তো এত্তো যত্নেই রোদ হয়তো এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারলো।
আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেডিক্যালের সামনে। একটু পরই নেমে গেল। ভিতরে যেতেই দেখলো রোদ বসে আছে আর বাকিদের সাথে কথা বলছে। এগিয়ে গেল আদ্রিয়ান। সবার সাথে কথা বলে কোলে তুলে নিলো রোদকে। গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পরলো। রোদ কিছু বলবে বলবে ভাব তাই আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবে?

সাহস পেল রোদ। মুখ খুলে বললো,

— কিছু খেতাম।

— আজব ক্ষুধা লেগেছে বলবে না তুমি?

— আগে তো বলুন খাওয়াবেন?

–কি খাবে?

— শুনুন আজ প্রায় কয়েকমাস আমি ফুচকা খাই না। প্লিজ খাই আজ? অনেক মন চাচ্ছে।

আদ্রিয়ানের রাগ লাগলো। কিছু না বলে ধুপ ধাপ করে গাড়ি থেকে নামলো। রোদ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এটাই প্রতিদিনের কাহিনী। কিন্তু আজ রোদকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান এক প্লেট ফুচকা নিয়ে এলো। রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— খাচ্ছ না কেন? ধর।

আদ্রিয়ানের এমন কন্ঠ ভালো লাগলো না রোদের তাই বললো,

— খাব না।

— আজব তুমি না খেতে চাইলা?

— খাব না এখন।

আদ্রিয়ান ভিতরে ডুকলো। রোদকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

— তুমি তো জানো রোদ এসব খাবার আমার তেমন একটা পছন্দ না আর না ই তোমার স্বাস্থের জন্য ভালো। তবুও কেন জেদ করো?

— খাব না তো বল্লাম।

— সিউর?

— হুম।

রোদ ভেবেছিলো আদ্রিয়ান হয়তো আরেকটু তেল মারবে ওকে কিন্তু হায় আদ্রিয়ান সত্যি সত্যি প্লেট নিয়ে ফেরত দিয়ে বিল পে করে আসলো। রাগে নাকের ডগা লাল হয়ে এলো রোদের। কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলো। আদ্রিয়ান এসে ব্যাপারটা বুঝলেও ঘাটেনি। কিছু বললেই সমস্যা হবে। ঔ ফুচকা খায় নি তাই আলহামদুলিল্লাহ।

_________________

বাসায় এসেও মুখের বারটা বাজিয়ে রাখলো রোদ। আদ্রিয়ান ধমক দিয়েছে ওকে। আপাত আদ্রিয়ান ওকে চেঞ্জ করিয়ে মুখ ধুয়ে দিচ্ছে। এই পা নিয়ে সোজা হয়ে হাটতে পারে না রোদ আবার অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতেও পারে না। তাই না চাইতেও আদ্রিয়ান ছাঁড়া উপায় নেই। রোদকে বেডে বসিয়ে আদ্রিয়ান ডুকলো ওয়াসরুমে। এরই মধ্যে রোদ কল করলো জারবাকে। রিসিভ হতেই বললো,

— জারবা একটু রুমে আসো তো তারাতাড়ি।

জারবা দীন দুনিয়া ভুলে দৌড়ে রুমে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

— ছোট ভাবী কি লাগবে?

— আমাকে ধরে একটু নিয়ে চলো তো।

জারবা ও কিছু না বলে ওকে নিচে নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান বের হয়ে রোদকে না দেখে বিরক্ত হলো। এই মেয়ে ওকে জ্বালিয়ে মারবে। নিজেও ড্রেস পড়ে নিচে নামলো। সোফায় বসে সবাই একসাথে। আদ্রিয়ান বসতেই রোদ মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস নিলো। হঠাৎ করে রোদের কল এলো। ওর মা কল করেছে। রোদ রিসিভ করে কিছু শুনেই চিৎকার করে উঠলো। উপস্থিত সবাই চমকে গেল। কিন্তু হাসি হাসি রোদকে দেখে কি হয়েছে বুঝতে পারলো না। আদ্রিয়ান ওকে ধরে বললো,

— এই রোদ কি হ’য়েছে?

— আমি ফুপি হচ্ছি।

— মানে?

— মানে আবার কি? আপু প্রেগন্যান্ট।

জাইফা প্রেগন্যান্ট শুনে সবাই খুশি হয়ে গেল। রোদ পারে না খুশিতে লাফায়। রাদকেও কল দিয়ে কতকিছু বললো। আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,

— চলুন।

— কোথায়?

— আমরা যাব না?

— কাল যাই।

রোদ মুখটা ভোতা করে রাখলো। আদ্রিয়ান হেসে ওর নাক টেনে বললো,

— আমার বোকারাণী চলুন।

রোদকে রুমে নিয়ে বোরকা পরিয়ে বের হলো দুজন। মিষ্টিকে নেয় নি। রোদই একা হাটতে পারে না রোদকে ধরবে না মিষ্টিকে? ঐ বাড়ীতে রোদকে দেখে ধুম লেগে গেল। খুশি খুশি রোদ ভাইকে জড়িয়ে ধরলো রোদ। জাইফাকে জড়িয়ে ধরেও অনেক আদর করলো। ফিরতে ফিরতে রাত ১১ টা বেজে গেল।

জাইফা আজ অনেক খুশি। রাদ প্রেগন্যান্সির খবর শুনেই জাইফাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,

— ভালোবাসি।

অবাক হয়ে গিয়েছিলো জাইফা। রাদ এই প্রথম বলেছিলো, ভালোবাসি। কেঁদে দিয়ে জাইফাও বলেছিলো, ভালোবাসি।
হোক না একটু দেড়ী, নিক না সামনের মানুষটা সময় তবুও ভালোবাসা হোক। ভালোবাসতে সময় দেয়া উচিত। দেড়ী হলেও রাদ ভালোবাসে জাইফাকে। পরিপূর্ণ একটি গল্প তাদের এখন।

_______________

রোদ বসে বই পড়ছে। আদ্রিয়ান ডুকলো রুমে তখন ১১:৪০। ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে বেজে গেল ১২ টা। রোদ বইটা রেখে দিলো পাশে। পেছনে হাত দিলো কিছু বের করতে। আদ্রিয়ান ও পেছনে হাত লুকিয়ে সামনে এলো। দু’জনের ঠোঁটেই লেগে আছে প্রাপ্তির হাসি। আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে রোদের ঠোঁটে চুমু খেয়ে একটা ফুলের তোরা ওর হাতে দিয়ে বললো,

— হ্যাপি সিক্স মানর্থ অব অ্যানিভারসিরি বউ। অসংখ্য ধন্যবাদ আমার অপূর্ণ জীবনটাকে পূর্ণ করার জন্য। আমাকে ভালোবাসার জন্য, আমার অর্ধেক অঙ্গ হওয়ার জন্য, আমার বা পাজরের হাড় হওয়ার জন্য, আমার মিষ্টির মা হওয়ার জন্য,আমার বুকের ব্যাথার কারণ হওয়ার জন্য। ভালোবাসি বউ।

রোদ ও একটা ছোট্ট ফুলের তোরা এগিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ানের ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,

— হ্যাপি সিক্স মানর্থ অব অ্যানিভারসিরি টু ইউ ঠু। অসংখ্য ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য, আমাকে ভালোবাসার জন্য, আমাকে মিষ্টির মা বানানোর জন্য, আপনার সঙ্গে আমাকে জড়ানোর জন্য। ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি।

আদ্রিয়ান জড়িয়ে ধরলো রোদকে। মাথায় চুমু খেল। রোদ একটু ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো কিন্তু আদ্রিয়ান প্রশয় দিলো না। কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— ঘুমাবে আসো।

— ঘুমাবো না।

বলে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ ঘষতে লাগলো। বেসামাল অনুভূতি সামলাতে পারলো না আদ্রিয়ান তাই মুখ ভর্তি আদর দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো। রোদ সরলো না আদ্রিয়ানের গলায় জোরে কামড়ে দিলো। “উফ” করে উঠলো আদ্রিয়ান। রোদ চুমু খেয়ে গলায় মুখ দিয়ে রাখলো। আদ্রিয়ান অনেক কষ্টে বললো,

— তোমার শরীর ভালো না রোদ।

— ঠিক আছি আমি।

— শুনো আমার ক..

আর কিছু বলার আগেই রোদ দু’জনের অধর মিলিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলে রোদকে কিন্তু সম্পূর্ণ সচেতন ছিলো রোদের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে। ভালোবাসাময় রাতটা কেটে গেল দু’জনের।

_____________________

দিন গুলো কারো জন্যই অপেক্ষা করলো না। নিজের মতো কেটে গেল। চলতে লাগলো সবার জীবন। ভিন্ন ভিন্ন রুপে ধরা দিলো ভালোবাসা গুলো। কখনো সুখ কখনো দুঃখ মিলেই চলতে লাগলো জীবন। আজ রাদ আর জাইফার ছেলেকে দেখতে যাবে সবাই। রোদ ধরে নিয়ে এলো মিষ্টিকে। এই মেয়ে এত দুষ্ট হ’য়েছে। রেডী করাতেই মিষ্টি দৌড়ে গেল আরিয়ানের রুমে। সেখানে ছোট্ট একটা পরী থাকে। আরিয়ান আর সাবার মেয়ে হয়েছে। নাম আরিয়ানা। দেখেতেও আরিয়ানের মতো।এ নিয়েই সারাদিন মিষ্টির দৌড়াদৌড়ি। আবার ছোট্ট ভাই হয়েছে এ নিয়েও তার চিন্তার শেষ নেই। রোদ রেডি হতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হলো টাওয়াল পেচিয়ে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— এত রেগে আছে কেন আমার বউ?

আদ্রিয়ানের এমন ছোঁয়ায় একদম শান্ত হয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান ওর কাঁধে নিজের ভেজা চুল ঘষে বললো,

— বলো?

— কই রেগে আছি? সরুন।

বলেই সরে গেল রোদ। আদ্রিয়ানের ড্রেস বের করে দিলো। আদ্রিয়ান রেডি হতে হতে বললো,

— লিপস্টিক দিও না রোদ।

— কেন?

— না বললাম তো।

রোদ কিছু না বলে রেডি হয়ে বের হতে নিলেই আদ্রিয়ান ঝাপটে ধরলো। লিপস্টিক না দিতে বলার কারণ ক্লিয়ার হলো রোদের কাছে।
সবাই অনেক ব্যাস্ত সময় পাড় করছে। একেতো ছোট্ট মেহমান এসেছে বাড়ীতে তার মধ্যেই এ মাসে আদ্রিয়ান আর রোদের অনুষ্ঠান করা হবে সাথে ইয়াজ আর জারবার আকদ করা হবে। দুবছর পর জারবাকে উঠিয়ে দেয়া হবে। ইয়াজও তখন ডক্টর হয়ে যাবে। দুই পরিবারের কেউ ই ছেলে মেয়েকে বেহায়াপনার সুযোগ দিবে না। সাধারণত আজ কালকার ছেলে-মেয়েরা যে এডভান্স তাই তারা দু’জনকে বলে দিয়েছেন বিয়ের আগে কোন বেহায়াপনা না করতে। ইয়াজ আর জারবাও এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করে নি। তাদের ভালোবাসা পবিত্র আর যাই হোক কোন অপবিত্র সম্পর্কে জড়াবে না তারা।

____________

রোদ আজ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ কিছুটা। জ্বর নেই তবে কেমন অরুচি ভাব ভাব। আজও খেতে পারলো না তেমন তাই সবার সামনেই আদ্রিয়ান দিলো এক ধমক। রোদ কিছু বললো না। শরীর একেবারেই ভালো না ওর। রাদ এগিয়ে এসে বললো,

— তোর চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?

— কিছু না ভাইয়া। ভালো লাগছে না। অস্থির লাগছে।

বলে দাঁড়াতেই রাদের বুকে হেলে পরলো রোদ। রাদ সহ আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে উঠলো। বাকিরাও অস্থির হয়ে উঠলো। রাদ ওকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান চোখ মুখে পানি দিলো। অনেকক্ষণ পরে চোখ খুললো রোদ। আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে বললো,

— এই রোদ কি হয়েছে? উঠো হসপিটালে যাই।

রাদও একই কথা বললো। কিন্তু রোদ যাবে না। ওর কথা এমনি এমন হয়েছে গরমে। ঠিক হয়ে যাবে।কাল যেহেতু অনুষ্ঠান তাই আজ ঐ বাড়ী যেতে হবে। সেই কথা শুনে রুদ্র বোনকে ধরে বসে রইলো। ভালোবাসা গুলো এমনই। সময় যতই যাক কিছু জিনিস বদলানোর নয়।

মিষ্টিকে অনেক কষ্টে নিয়ে আসা হলো। ছোট্ট ভাই রেখে আসবে না ও। শেষে যখন ঘুমালো তখন আনা হলো। আদ্রিয়ান আছে টেনশনে। সারা রাস্তায় রোদ মিষ্টিকে কোলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। বাসায় এসে আদ্রিয়ান মিষ্টিকে বেডে শুয়িয়ে দিলো। রোদ চেঞ্জ করার জন্য ড্রেস বের করছিলো ওমনও দৌড়ে ওয়াসরুমে ডুকলো। আদ্রিয়ান ও তাড়াতাড়ি ডুকলো। বেসিন ভরে পর পর দুবার বমি করলো রোদ। আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে উঠলো। রোদের মুখ ধুয়িয়ে দিলো। রোদ ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করলো,

— আরো বমি পাচ্ছে?

— আসবে কিন্তু আসছে না।

বলে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। একটুপরই গড়গড় করে বমি করে দিলো রোদ। অস্থির হয়ে উঠলো। আদ্রিয়ান ঝর্ণা ছেড়ে রোদকে ফ্রেশ করিয়ে টাওয়াল পেচিয়ে রুমে এনে বসালো নিজেও গোসল করে টাওয়াল পেচিয়ে বের হলো। রোদ কাউচেই মাথা হেলিয়ে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি ওকে ড্রেস পড়িয়ে নিজেও পড়ে নিলো। বুকে নিয়ে শুয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাল হসপিটাল নিতেই হবে।

রাত ৩ টা জেগে উঠলো রোদ। ক্ষুধা লেগেছে প্রচুর। উঠতে নিলেই আটকে গেল আদ্রিয়ানের বাহুতে। আদ্রিয়ান ও জেগে উঠলো। জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে রোদ? খারাপ লাগছে?

— ক্ষুধা লেগেছে।

— দেখি উঠো। কি খাবে?

রোদ উঠে বসলো গোল হয়ে। গালে হাত দিয়ে বললো,

— কাচ্চি খেতে মন চাইছে।

— এত রাতে কাচ্চি কই পাব রোদ? এখন তো রান্না ও করা যাবে না।

— হুম তাই তো। থাক খাব না।

— কি খাব না? অন্য কিছু খাবে। বসো নিয়ে আসি আমি।

বলে আদ্রিয়ান প্লেট ভর্তি ভাত আর গোশত গরম করে নিয়ে এলো। খায়িয়ে দিতেই সবটুকু খেল রোদ। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। রোদ বললো,

— আরেকটু খেতাম। নেই আর?

আদ্রিয়ান হা হয়ে তাকিয়ে বললো,

— আছে নিয়ে আসি দাঁড়াও।

বলে আদ্রিয়ান নিয়ে এলো কিন্তু রোদ এক লোকমা খেয়ে বললো,

— উহুম। মজা না। আর খাব না।

— এটাই তো তখন খেলা।

— এটা ভালো না। আর খাব না।

বলে পানি খেয়ে মিষ্টিকে ধরে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান সব রেখে এসে নিজেও শুয়ে পরলো।

_______________

সকাল সকাল রোদ বমি করে অস্থির। আজ অনুষ্ঠান রাতে এরমধ্যে রোদের অবস্থা খারাপ। আদ্রিয়ান জোর করে ওকে নিয়ে হসপিটাল গেল। ডক্টর কিছু টেস্ট করতে বললো। টেস্ট করলো রোদ। রিপোর্ট দিবে সন্ধ্যায়। রাস্তায় রোদের ক্ষুধা লাগলো। আদ্রিয়ান কত বললো,

— বাসায় যেয়ে নেই। এমনিই শরীর খারাপ তোমার আবার না বমি হয়?

— আজব খাব আমি কিছু হবে না।

অগত্যা ওকে নিয়ে ডুকলো বেকরিতে। রোদ স্যান্ডউইচ, রোল,সাব সহ বার্গার নিলো। আদ্রিয়ান কিছু বললো না। গাড়িতে বসে সব একাই খেল রোদ। গাড়ি থেকে নেমে আবার ঢেলেও দিলো। চিন্তিত আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে রুমে ডুকলো। রোদ ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলো।

বিকেল দিকে পার্লারের লোক এলো ওকে সাজাতে। এখন মোটামুটি সুস্থ রোদ তবুও আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে আছে। নিজেও রেডি হয়ে গেল আদ্রিয়ান। রোদ, মিষ্টি আর আদ্রিয়ান সেম কালারের এবং কিছুটা সেম ডিজাইনের ড্রেস পড়েছে। রোদকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান। এ যেন অন্য কোন রোদ। পুরো বউ বউ লাগছে ওকে।
মিষ্টিকে কেলো নিয়ে রোদের হাত ধরে ভ্যানুতে ডুকলো আদ্রিয়ান। সবাই প্রসংশা করলো রোদ -আদ্রিয়ান জুটির। ভালোবাসাময় সময়টা কেটে গেল। ইয়াজ আর জারবারও আকদ হয়ে গেল।

সবশেষে করে বাড়ী ফিরলো সবাই রাত ১২ টার পর। রোদ রুমে বসে আছে। মিষ্টি ঘুমিয়েছে ৯ টার আগেই। আপাতত জারবার রুমে ও। রিপোর্ট হাতে রুমে ডুকলো আদ্রিয়ান। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। রিপোর্ট রিশান নিয়ে এসেছিলো। আদ্রিয়ান কোন মতে দরজা খুলে ভিতরে ডুকলো। দরজা অফ করে দিলো। কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকলো,

— রোদ?

রোদ ফিরে তাকালো এমন অবস্থায় আদ্রিয়ানকে দেখে দৌড়ে এসে হাত ধরে বললো,

— এই কি হয়েছে আপনার? আপনাকে এমন লাগছে কেন? আল্লাহ বুকে ব্যাথা করছে? ভাইয়াকে ডাকি?

বলেই দরজার কাছে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ঝাপটে ধরলো ওকে। ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে ও। রোদ কিছু বুঝতে পারলো না। আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

— কি হয়েছে প্লিজ বলুন। টেনশন হচ্ছে আমার।

— আমি আবারও বাবা হচ্ছি রোদ। তুমি আবারও মা হবে রোদ। ছোট্ট একটা ভাই-বোন আসছে মিষ্টির রোদ।

রোদ অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে পেটে হাত দিয়ে বললো,

— এখানে আছে ও রোদ।

রোদ ডুকরে কেঁদে উঠলো। মিষ্টি কতশত বলেছে,

— মাম্মা ভাইয়ের মতো আমার ও ছোট্ট ভাই -বোন চাই।

আদ্রিয়ান রোদকে জড়িয়ে ধরলো। সারা মুখে চুমু খেল। ভারী পোশাক বদলে সাওয়ার নিলো দু’জন। বেডে শুয়িয়ে রোদের টিশার্ট তুলে পেট উন্মুক্ত করলো আদ্রিয়ান। চুমুতে ভরিয়ে তুললো পেট। কতশত আদুরে কথা বললো আদ্রিয়ান।

________________

৫ মাস চলছে রোদের। পেটটা এখন উঁচু হয়েছে একটু। নাদুসনুদুস রোদ এখন গোলুমোলু হয়ে গিয়েছে। সবাই সারাক্ষণ খেয়াল রাখে ওর। রোদের পরিবার কতবার এলো রোদকে নিতে কিন্তু আদ্রিয়ান দিলে তো? এরমধ্যেই কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো রোদ। রাত ভর আদ্রিয়ান বুকে নিয়ে বসে থাকে। কতশত পাগলামি এই ছোট্ট প্রাণটাকে ঘিরে। আদ্রিয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হলো। রাগী কন্ঠে বললো,

— জুসটা এখনও খেলে না?

— গন্ধ আসছে ওটা থেকে। বিশ্বাস না করলে খেয়ে দেখুন।

আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এই মেয়ের ইদানীং সবকিছুতেই গন্ধ লাগে। এক চুমুক খেল আদ্রিয়ান। এবার রোদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

— কোন গন্ধ নেই। এক ঢোকে খেয়ে নাও।

রোদ নাক ধরে এক ঢোকে খেয়ে নিলো। ৫ মিনিট পরই বমি করে দিলো। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ওকে ধরলো। ফ্রেশ করিয়ে আনলো। মিষ্টি রুমে ডুকেই মায়ের কাছে গেল। রোদ ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— মা ঘুমাবে না।

— উহু। মা এখন বেবির সাথে কথা বলবে।

মিষ্টি রোদের উঁচু হওয়া পেটে চুমু খেল। রাতের দিকে রোদের পেট ব্যাথা করছে। ঘুমের মধ্যেই কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান ওকে বুকে তুলে নিলো। রোদ ” উফ” আওয়াজ করে বললো,

— ও এত নড়ে কেন?

— তুমি তো এত বড় বিছানায় ও শুয়ে এদিক ওদিক গড়াগড়ি করো। ও তো এতটুকুন একটা পেটে আছে। একটু তো নড়বেই সোনা।

পেটে হাত বুলিয়ে দিতেই শান্ত হলো রোদ। কতশত বার যে ব্যাথায় কেঁদে উঠে এই মেয়ে। আদ্রিয়ানের খারাপ লাগলেও কিছু করার থাকে না।

৮ মাস থেকেই শরীর ভার হয়ে গেল রোদের। হাটতে পারে না ঠিক মতো। আজ পরিক্ষা ছিলো। ইয়াজ ধরে ধরে বাইরে নিয়ে এলো ওকে। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ধরলো। আজই শেষ। লম্বা ভ্যাকেশন শুরু কাল থেকে। রোদকে গাড়িতে বসিয়ে পানি খাওয়ালো আদ্রিয়ান। চোখ মুখ শুকিয়ে আছে ওর। বসায় যেয়েই গোসল করিয়ে দিলো। শরীর ব্যাথায় কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান হাত,পা, ঘাড় আস্তে আস্তে টিপতে লাগলো। রোদের পড়িহিত ঢোলা ফ্রোকটা উপরে তুলে উন্মুক্ত করলো পেট। কেমন ফুলে আছে। আদ্রিয়ান চুমু খেল পেটে। কতক্ষণ কথা বললো। আবারও চুমুতে ভরিয়ে তুললো পেট। পেটে ঠোঁট লাগিয়ে বললো,

— আমার সোনা বাচ্চা মা ছোট না। কেউ এতটুকুন মাকে এত কষ্ট দেয়? বেশি কষ্ট দিও না মাকে। মা কাঁদলে তো বাবার বুকেও ব্যাথা লাগে।

মিষ্টি এসে মায়ের বুকে মুখ গুজে শুয়ে রইলো। রোদ কান্নারত অবস্থায়ই ওকে জড়িয়ে নিলো। এ এক অপরুপ দৃশ্য যা দেখে মুগ্ধ হলো রোদের পরিবার। আজ তারা আবারও এসেছিলো রোদকে নিতে যদি আদ্রিয়ান রাজী হয় কিন্তু তার কোন দরকার নেই। আদ্রিয়ানই যথেষ্ট।

আজ রাতে ছটফট করে উঠলো রোদ। এমনকি সময়ও ব্যাথা হয় তবে আজ অনেক বেশি। চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আদ্রিয়ান কি করবে ভাবতেই বাড়ীর সবাই রোদের কান্নায় রুমে ডুকলো। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়া হলো। গাড়িতে রোদের গালে গাল লাগিয়ে আদ্রিয়ান শুধু বললো,

— আমার সোনাপাখি সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখো ও তারাতাড়ি এসে যাবে।

— আর পারছি না। মরে যাচ্ছি আমি। অনেক কষ্ট হচ্ছে।

— এভাবে বলো না সোনা। আমি মরে যাব এবার। আল্লাহ সহায় হও।

— পারছি না আর।

বলেই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো রোদ।

অস্থির হয়ে আদ্রিয়ান পায়চারী করছে। আজ থেকে ৫ বছর আগে এই পরিস্থিতি ছিল। আর ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। মাথা ঘুরাতে লাগলো ওর। রাদ ওকে ধরে বসালো। ঐ খানেই ঙ্গান হারিয়েছে আদ্রিয়ান।

সবাই পরে কত হাসলো এ নিয়ে। আপাতত ছোট্ট জীবন্ত একটা ছেলে পুতুল আদ্রিয়ানের কোলে। ছেলেকে কোলে নিয়ে রোদের ঠোঁটে চুমু আদ্রিয়ান। হঠাৎ করে কেঁদে উঠলো ছোট্ট প্রাণটা। তা দেখে মিষ্টি ও কেঁদে উঠলো। ক্লান্ত রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

— কাঁদছে কেন ও?

নার্স ডুকে বললো,

— বেবিকে খাওয়াতে হবে স্যার।

সবাই বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান বাদে। নার্স সব ঠিক করে দিয়ে নিজেও বেরিয়ে গেল। রোদকে সাহায্য করলো আদ্রিয়ান বাচ্চাকে ফিডিং করাতে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা পানি। আদ্রিয়ান তা মুছে দিয়ে বললো,

— ভালোবাসি রোদ। আমার জীবনটা গুছিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ বউ।

ছেলেটা ঘুমিয়ে গেল। আদ্রিয়ানের “আ” আর রুদ্রিতার “দ্র” মিলিয়ে ছেলের নাম রাখা হলো “আদ্র আবরার।”

__________

নরমালে বেবি হওয়াতে ২ দিন পরই রিলিজ দেয়া হলো। রোদ একটু হিমশিম খাচ্ছে ছেলেকে সামলাতে। একটু পর পরই কাঁদে। ওর কান্না দেখে আবার মিষ্টি ও কাঁদে। ভাই তার জান। সারাক্ষণ ভাই নিয়ে ঘুরঘুর করবে। সবাই থাকাতে রোদের তেমন সমস্যা হয় নি তারমধ্যে আদ্রিয়ান তো আছেই। রাতে মাত্রই ঘুমিয়েছে রোদ। আদ্রিয়ান আদ্রকে কোলে নিয়ে ঘুম পারাচ্ছে। বাবার বুকের উষ্ণতা পেয়ে ঘুমিয়ে গেল আদ্র। আদ্রিয়ান ওর কপালে চুমু খেয়ে শুয়িয়ে দিলো। পরপর মিষ্টি আর রোদের কপালে চুমু খেল। রোদকে দেখলেই বুঝা যায় কি ধকল গেছে ওর উপর দিয়ে। পুরোটা প্রেগন্যান্সির সময় ধুকেছে ও। কেঁদেছে অসহ্য যন্ত্রণায়। অবাক হয়ে যায় আদ্রিয়ান। তার ছোট্ট বউ কত কিছু উপহার দিলো তাকে। আদ্রিয়ান শুতেই ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো আদ্র। অনেক চেষ্টা করলেও ঘুমালো না। আদ্রিয়ান বুঝলো হয় তো ক্ষুধা লেগেছে। আস্তে করে ডাকলো রোদকে। ক্লান্ত রোদ তাকিয়ে বললো,

— ও কাঁদে কেন? ক্ষুধা লেগেছে মনে হচ্ছে।

— হুম।

আদ্রিয়ান রোদকে ধরে বসালো। আদ্রিয়ানের সাহায্য ফিডিং করাতে লাগলো রোদ। ডুলতে লাগলো রোদ। ঘুমাতে পারে না ঠিকমতো। ঘুমাইলে আদ্র কেঁদে উঠে। খারাপ লাগে আদ্রিয়ানের। রোদের অবস্থা হাড়ে হাড়ে টের পায় আদ্রিয়ান। এমনিতেই দুর্বল রোদ তারমধ্য এক্সিডেন্টে আরো কাহিল হয়েছে মেয়েটা পরপরই প্রেগন্যান্সি। রোদের পেছনে বসে মাথাটা বুকে নিয়ে নিলো আদ্রিয়ান। ওভাবেই ছেলেকে খাওয়ালো রোদ। রাতে আবারও জেগে উঠলো আদ্র। আদ্রিয়ান উঠে ওর ডায়াপার চেঞ্জ করে দিতো তবুও থামলো না। না পেড়ে রোদকে ডাক দিলো কিছু করার নেই বুকের দুধ খায় আদ্র নাহলে আদ্রিয়ানই যথেষ্ট ছিলো। রোদ টেনে টুনে চোখ খুললো। ছেলের কান্না শুনে তারাতাড়ি উঠে বসে কোলে তুলে নিলো রোদ। ঘুম জড়ানো চোখেই ফিডিং করাতে লাগলো। ছোট্ট রোদ এখন দায়িত্ববান মা হয়ে উঠেছে। আদ্রিয়ানের যতটুকু না খুশি লাগে তার থেকে বেশিই ছটফট লাগে। রোদকে আরেকটু সময় দিলে হয়তো ভালো হতো।

______________

২ মাস এখন আদ্রর। ছোট্ট ছেলেটা আআ উউ করে সারাক্ষণই কি বলে আল্লাহ জানে। গত ১ সপ্তাহ মায়ের কাছে ছিলো রোদ, আদ্রিয়ান, মিষ্টি। আজ চলে যাবে। রুদ্র এখন মামা, চাচা হ’য়েছে। সবার সামনে কাঁদে না। রোদকে জড়িয়ে ধরে বিদায় দিলো দুই ভাই। এরপরই যার যার রুমে চলে গেল। সবাই যানে এই দুই ভাই এখন কাঁদবে।

রাতে আদ্রিয়ান বাড়ি ফিরলো ১১ টার পর। রোদ মাত্রই মিষ্টিকে ঘুম পারালো। আদ্র ঘুমাচ্ছে না। রোদ পড়তেও পারছে না। একহাতে বই নিয়ে আরেক হাতে ছেলের বুকে আলত হাতে চাপড় দিচ্ছে তবুও থামলো না উল্টো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো। অসহায় রোদের চোখে পানি চলে এলো। এমন সময় আদ্রিয়ান ডুকে তারাতাড়ি এগিয়ে এসে ছেলেকে বুকে নিলেই কান্না থেমে গেল। রোদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। মাত্রই না কাঁদছিলো এই ছেলে? আদ্রিয়ান রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

— কাউকে ডাক দিতে।

— আপু আরিয়ানাকে নিয়েই পারে না, মামনি সারাদিন পর ঘুমাতে গেল আর জারবার কাল পরিক্ষা। কাকে ডাকবো আমি?

আদ্রিয়ানের কিছু করার নেই শুধু খারাপ লাগা ছাড়া। আদ্র আবার ঠোঁট ফুলাতেই রোদ কোলে নিয়ে ফিডিং করাতে লাগলো। ঘুমালেই ছেলের কপালে চুমু খেয়ে পাশে শুয়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান এসে রোদের কপালে চুমু খেল। মিষ্টিকে জারবার কাছে দিয়ে এলো। আদ্রকে দোলনায় শুয়িয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিলো রোদকে। সারা মুখ ভর্তি আদর দিলো। রোদ আদ্রিয়ানের বুকে মুখ গুজে দিলো। আদরে আদরে ভরিয়ে তুললো রোদকে আদ্রিয়ান।

সকালে রোদ ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো আদ্রিয়ান ছেলেকে আদর করতে ব্যাস্ত। পাশে মিষ্টি বাবার কাঁধে মাথা দিয়ে আছে। ছোট্ট আদ্র বাবাকে দেখেই কি সব আওয়াজ করতে লাগলো। মুখ দিয়ে লালা পরতেই আদ্রিয়ান হাত দিয়ে মুছিয়ে দিলো। আদ্র হেসে উঠলো। রোদ এসে পাশে বসতেই আদ্রিয়ান একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,

— ভালোবাসি

— ভালোবাসি।

মিষ্টি ও পাশ থেকে বললো,

— আমিও ভালোবাসি।

ছোট্ট আদ্রও বাদ গেল না। আআ ইই আওয়াজ করলো। হয়তো বলতে চাইছে আমিও ভালোবাসি।

আদ্রিয়ানের বুকে আদ্র কাঁধে মাথা দেয়া মিষ্টি একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে রোদকে। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলো আজ ওর কাছে। হয়তো প্রিয় একজন পাশে নেই তাতেও আফসোস নেই। সে বুকে আছে। একদম হৃদপিন্ডের মধ্যে। ভালোবাসার কতশত রুপই না দেখলো আদ্রিয়ান, রোদ। হুট করেই যেন সব পেয়ে গেল। ভিন্ন রুপে ধরা দিয়েছে এই ভালোবাসা গুলো।
রাদ আর জাইফার ভালোবাসাও আজ পূর্ণ। হোক দেড়ীতে হোক ভিন্ন কোন রুপে তবুও তারা আজ সুখী।
জারবা আর ইয়াজের রয়েছে এক ভিন্ন রুপের ভালোবাসা। অপেক্ষা যতই তিক্ত হোক না কেন তারা অপেক্ষা করছে। একদিন এক হবে তাদের ভালোবাসা। সব ভালোবাসারই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রুপ। সে সব ভালোবাসা পূর্নতা পেতে প্রয়োজন শুধু কাছের মানুষটিকে আর তার অগাধ ভালোবাসাকে।

#সমাপ্ত।