#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫
৪ঃ৫০ বাজে। ক্লান্ত রোদ পার্কের বেঞ্জএ বসে আছে।পড়নে হাটু পযন্ত লং টপস এবং জিন্স। মাথায় হিজাব। কোলে মিষ্টি। জড়িয়ে ধরে আছে যেন ছাড়লেই হারিয়ে যাবে।
রোদ ওর ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করল। ফ্রাইড রাইস আর চিকেন কারি ঐটাতে।বাসায় যেয়ে হন্তদন্ত করে প্যাক করেছে।যদিও মা জিজ্ঞেস করছিল রোদ কোনমতে মাকে বুঝিয়ে এসেছে।
চামচ দিয়ে একটু করে রাইস আর চিকেন ফ্রাই নিয়ে মিষ্টির মুখে তুলে দিল। মিষ্টি ও ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে খেলাধুলা করল। ক্লান্ত হয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল রোদ। মিষ্টি ও দৌড়ে মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পরল।রোদ যেন বুকে এক পশলা শান্তি অনুভব করল।ব্যাগ থেকে একটা বেবি ফ্লাস্ক বের করল। মিল্কসেক টা যত্ন করে খায়িয়ে দিল।এরপর কোলে নিয়ে বসে রইল। ক্লান্ত মিষ্টি ও রোদের বুকে ঘুমিয়ে পড়ল।সাথিতো অবাক হয়ে রোদ কে দেখছে। যেন মা মেয়ে।
এসব দৃশ্য গাছের আরাল থেকে এতক্ষণ আদ্রিয়ান দেখছিল।একবুক কষ্ট যেন কিছুটা হালকা হলো।ঐ দিনের ব্যবহারে আদ্রিয়ান নিজের উপর নিজে বিরক্ত।
সাথি মিষ্টিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই গাড়ি চোখের আরাল হয়ে গেল। রোদর চোখে বিচরন করা পানি এবার পড়তে শুরু করল।মনে হচ্ছে কেউ ওর থেকে ওর কলিজা কেরে নিচ্ছে। নিমিষেই চোখ মুখ ফুলে গেল।যা আদ্রিয়ান দেখে যেন ওর ভিতরে মোচর দিয়ে উঠল।রোদ চলে গেলে আদ্রিয়ান ও চলে গেল।
_________________
রোদ আর মিষ্টি এখন প্রতি দিনই দেখা করতে যায়।রোদ প্রতি দিন ই কিছু না কিছু রান্না করে নিয়ে যায় কারন ও জানে ওর মেয়ে বিকেলে ওর রান্না করা খাবারই খাবে।শত ব্যাস্ততার মধ্যে ও রোদ মিষ্টি কে দেখতে আসবেই।কিন্তু ওতো জানে না রোজ ওদের লুকিয়ে লুকিয়ে আদ্রিয়ান দেখে।নিজের মেয়েকে দেখে যেন শান্তি পায়। রোদের সাথে যতক্ষণ পর্যন্ত থাকে ততক্ষণ ফুরফুরে বাচ্চদের মতো খেলে, খায়, আদুরে কথা বলে।অথচ একমাস আগেও মেয়েটা চুপচাপ ছিল, কথা কম বলত,সবার মতো মা চাইত।এখন ও আদ্রিয়ানের কাছে বায়না করে মাম্মা কেন সবার মাম্মার মতো সারাদিন তার কাছে থাকে না। প্রতি দিন বিকেলে রোদের কোলে ঘুমায় কিন্তু ঘুম ভাঙলে কেন রুমে বা আদ্রিয়ানের বুকে থাকে।আদ্রিয়ান ও এটা ওটা বলে বুঝ দেয়।আজও একই ভাবে মিষ্টি রোদের কোলে ঘুমিয়ে গেল।
_____________________
আজও রোদ এসেছে। গায়ে মেডিকেলের এপ্রোন,চোখ মুখে একরাস ক্লান্তি,পিঠে ব্যগ।দৌড়ে আসছে।আজ বিকেলে ক্লাস ছিল তাই আসতে লেট হলো।মিষ্টিও দৌড়ে মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পরল।
সরি সোনা। মাম্মার ক্লাস ছিল তাই লেট হয়ে গেল।
ইস্ট ওকে মাম্মা।
রোদ হাসল। মেয়েটা ওকে কখনো কোন অভিযোগ করে না।রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলে সামনে এগুতেই
থেমে গেল।মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। আবার না চইতেও একটু ভয় পেল।সামনে আদ্রিয়ান দারানো।
রোদ কিছু না বলে বেঞ্চে বসে মিষ্টিকে নুডুলস খাওয়াতে ব্যাস্ত।আড় চোখে আদ্রিয়ানকেও দেখে নিল কয়েকবার।
আদ্রিয়ান চুপচাপ এসে বসল বেঞ্চে। মিষ্টি খাচ্ছে আর কথা বলছে।এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে।রোদ ও জবাব দিচ্ছে।
খাওয়া শেষ হতে মুখ মুছে দিল।কিছুক্ষণ খেললো।
অনেকক্ষণ আদ্রিয়ান রোদকে দেখছে কিন্তু বলতে পারছে না।অবশেষে বলেই ফেললো,
কেমন আছ?
…………
জবাব না পেয়ে আবার বললো,
টায়াড্???
……..
এবারও জবার না পেয়ে ধমকে উঠল,,
কি হলো? কথা বলছো না কেন বেয়াদব????
ভয়ে রোদ কেপে উঠল। কাপাকাপা গলায় বললো্
আলহামদুলিল্লাহ। ভালো।
সরি…ঐ দিনের জন্য। ( আদ্রিয়ান)
জ্বি। আজ আমি যাই। একটু কাজ আছে।(রোদ)
মিষ্টি দৌড়ে এসে বললো,,,
মাম্মা আজ বাসায় চলো না। প্লিজ।।।।।
এমন আদুরে আবদার কওভাবে ফেলবে রোদ।।।।
#চলবে……
#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৬
রোদ অনেক কষ্ট করে মিষ্টি কে বোঝায়।বিনিময়ে আরো কিছুক্ষণ থাকবে।আদ্রিয়ান এতোক্ষণ ধরে সব দেখছে। রোদকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সারাদিন পর এখন অনেক ক্লান্ত কিন্ত তবুও দিব্বি মিষ্টি কে নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান এবার বললো,
সামনে একটা ক্যাফে আছে। চল যাই।
— একটু পর চলে যাব। আপনি যান। আমি মিষ্টর সাথে আছি।
কোন মতে রোদ একথা বললো। সাথে সাথে ধমক খেল।
— তোমাকে অফার করি নি। অরডার করছি।লেটস গো…( ধমকে)
রোদ তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। মানে চলুন যাচ্ছি।
রোদ যদিও একটা প্রতিবাদি মেয়ে কিন্তু কেন যানো আদ্রিয়ানকে কিছু ই বলতে পারে না।বাধ্য মেয়ের মতো হেটে যাচ্ছ।
___________________
আদ্রিয়ান আর রোদ ক্যাফেতে বসে আর মিষ্টি সবসময়ের মতো রোদের কোল ঘেঁষে বসে আছে।
আদ্রিয়ান দুটি কফি অর্ডার করল। সাথে রোদেকে আরও কিছু অর্ডার করতে বললো কিন্তু রোদ না করে দেয় আর বলে একটা চকলেট মিল্কশেক দিতে উইথ লেস চকলেট। আদ্রিয়ান জানে এটা মিষ্টির জন্য। রোদ মিষ্টিকে মিল্ক শেক খায়িয়ে দিল। এরপর দুজন কফির মগে চুমুক দিল। আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করল,
কেমন???
–জ্বি, ভালো।
–মেডিকেল থেকে ডিরেক্ট এসেছো?
— হু
–বিকেলে ক্লাস ছিল??
–হু
–বাসায় সবাই ভালো??
— হু
— বয়ফ্রেন্ড আছে??
–হু
আদ্রিয়ান রেগে ধমকে বললো,,,
–কী??????
–না,,, মানে হ্যাঁ মানে বয়ফ্রেন্ড নেই।
–গুড।
–জ্বি…. মানে গুড কেন???
— থাকলেও ব্যাপার না। আই ক্যান হেন্ডেল দ্যাট।
— মানে??
–তোমার এতো বুঝতে হবে না।
— আমার কফি শেষ। বাসায় ফিরে যেতে হবে। লেট হচ্ছে। আম্মু টেনশন করবে।
— হাম। চলো দিয়ে আসি।
— না না ভাইয়া আমি যেতে পারব।
আদ্রিয়ানের রাগি চোখ দেখে আর কিছু বললো না রোদ। চুপচাপ এসে গাড়িতে বসল। কোলে মিষ্টি। আদ্রিয়ান ড্রাইভ করছে। রোদ গাড়িতে মাথা এলিয়ে দিয়েছে। বড্ড ক্লান্ত সে। আদ্রিয়ান আড় চোখে দেখলো। এসির ঠাণ্ডাটা একটু কমিয়ে দিল।
মেয়েটাকে দেখলেই আদ্রিয়ানের সব কেমন যানো উলটপালট মনে হয়। কিন্তু আদ্রিয়ান তো এমন হতে দিবে না। কিছুতেই না। ওতো শুধু এক নারীতে আসক্ত। ভালোবাসলেই তো আর সবসময় একসাথে থাকা যায় না। এই যে আদ্রিয়ানের প্রেরশি তার কাছে নেই, এই যে বুক টা খালি লাগে, কয় বছর যাবত রাতে ঠিক মতো ঘুম আসে না, কেউ ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দেয় না,,, তো কি হয়েছে আদ্রিয়ান তো ওর স্মৃতি নিয়ে দিব্বি বেচে আছে। এই যে ওর মেয়ে ওইতো আদ্রিয়ানের সব। ওর জন্য ইতো বেঁচে থাকতে হয়। আচ্ছা এটা কি আদো বেচে থাকা। মন আর হৃদয় কে তো সেই ৩ বছর আগেই কবর দিয়েছে। এখন এখানে আর কারো জায়গা নেই।
_________________
আদ্রিয়ান বাসায় আসলে ওর বাবা বলেন যাতে তার সাথে দেখা করতে যায়। আদ্রিয়ান ও মাথা নাড়িয়ে উপরে রুমে যায়। মিষ্টি ঘুম। ও চেঞ্জ করে বাবার রুমে যায়। ওনারা প্রায় ১৫ দিন বাসায় ছিল না। মা বাবা সিলেট ছিল কোন এক কাজে। আদ্রিয়ান এই বিষয়ে তেমন জানে না আসলে জানতে চায় না। এক সময়ের সবার খোঁজ খবর রাখার আদ্রিয়ান কি আদোও তেমন আছে? না নেই। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। কাজ, অফিস, মিষ্টি শেষ আদ্রিয়ানের জীবন। এতেই সীমাবদ্ধ। নক করে বাবার রুমে ঢকল। মা বাবা পাশাপাশি বসে। আদ্রিয়ানকে দেখে বাবা বসতে বললো। আদ্রিয়ান ও বসে পরলো।
— কি বলবে বাবা?
— আমার এক ফ্রেন্ডের মেয়ে আমেরিকা থেকে পড়াশোনা শেষ করে…..
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে গেল।রুর কন্ঠে বললো,,,
— ইউ নো আমি এসবে ইনটেস্টড না। তাহলে কেন বারবার বলো একই কথা।
ওর বাবা কিছু বলার আগেই সামনে রাখা শোপিছ টা ছুরে ফেলে ভাংগা কাচ হাতে চেপে ধরলো। হাত থেকে রক্তে ফ্লোর ভেসে যাচ্ছ। আদ্রিয়ানের মা চিতকার করে ওর হাত ধরলো আর জারবাকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে আসতে বললো। আদ্রিয়ানের হাত সরাতে চাইলেও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না। হত ব্যনডেজ করে নিয়ে আদ্রিয়ান হনহনিয়ে রুমে চলে গেল। ওর বাবা দীর্ঘ শাস ছাড়লো। ছেলেটা এমন ছিল না। সবই ভাগ্য।
________________
এদিকে রোদ বসে আছে। পড়া আরো কিছু বকি। তাই কফি খাচ্ছে আর পড়ছে।হুট করে ঘরে একটা
পোটলা আসলো রুমে মানি আমার শয়তান ছোট ভাই। ওকে আমি আদর করে পোটলা ডাকি। রুমে এসেই ঘুরঘুর করছে। কিছু তো জনাবের চাই তা আমি ভালোভাবেই জানি। তাই বললাম,,,,
–ব্যাগের ২য় পকেটে পার্সে টাকা আছে। বেশি নিবি না।
— থাংকু আপি। লাভ ইউ।
— হইসে যা এখন। পড়ছি আমি।
#চলবে…….