ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৯+১০

0
188

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৯

সেফায় বসা আদ্রিয়ান ও জারবা হাতে কফি। রোদ বেডে হেলান দিয়ে বসা কোলের মিষ্টি কে হালকা খাওয়াচ্ছে। পাশে বসা ইয়াজ। আদ্রিয়ানের ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না। ঐ দিন রাতে রোদ ইয়াজ কে নিয়ে বাসায় গিয়েছিল এরপর থেকে ও ইয়াজকে সহ্য করতে পারে না। কারন নিজের ও জানা নেই। রোদের পাশে কাউকে সহ্য হয় না। তার মধ্যে এই ছেলে পাশে বসে কথা বলছে। জারবা আর আদ্রিয়ানের সাথে ও কথা বলছে। আদ্রিয়ান হু হা ছাড়া কিছু বললো না। জারবা তো জারবা পটর পটর করেই যাচ্ছে।একটু পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ইয়াজ বেড থেকে উঠে রোদের পাশের ড্রয়ার থেকে মেডিসিন নিল।

এই ছেলে এই ভাবে নিচ্ছে এরমানে আগেও এই রুমে এসেছে।আদ্রিয়ানের ভাবনার মাঝেই ইয়াজ পানি নিয়ে রোদের সামনে মেডিসিন ধরে বললো,

–নে হা কর তাড়াতাড়ি।

— তুই খা। আম ফাইন।

— দেখ রোদ হা কর। নাইলে খবর আছে তর।

— খাব না। যা তো।

— তুই কি বাচ্চা। প্লিজ হা কর সোনা।

“সোনা” এই ওয়ার্ড টা শুনার পর কি আর আদ্রিয়ানের মাথা ঠিক থাকে। ধুম করে উঠে রোদের পাশে এসে ইয়াজের হাত থেকে ছো মেরে মেডিসিন নিয়ে রোদের মুখে চেপে ধরে পানি দিয়ে। না পেরে রোদ ও গিলে ফেললো।

ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে রোদ সহ কেউ কিছু বুঝলো না। হুট করে ইয়াজ আর জারবা হুহা করে হেসে উঠল মিষ্টি ও যোগ দিল ঐ দলে। রোদ মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। আদ্রিয়ানের কোন ভাবান্তর নেই।যেন কিছুই হয় নি।

_______________________

খাবার টেবিলে বসা সবাই। যদিও ওরা চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু রোদের মা যেতে দেয়নি। মিষ্টি রোদের রুমে ঘুম। রোদ খাচ্ছে না নারাচারা করছে। ইয়াজ বিরক্ত হয়ে বললো,

— হা কর আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।

— উহু। ভালোলাগছে না খেতে।

— আচ্ছা। পরে খেয়ে নিস।

এরপর ইয়াজ রোদের কানে কিছু বলছে আর রোদ মিটমিট করে হাসছে।

এসবে গা যেন পুরে যাচ্ছে আদ্রিয়ানের। কেন এমন হচ্ছে নিজেও জানে না। শুধুই কি মিষ্টির জন্য?? না কখনোই না আদ্রিয়ান কাউকে নিয়ে ভাববে না।ওর হৃদয়ে শুধু ওর প্রেরসি আছে। মস্তিষ্ক এই কথা বললেও মন বলে তাই, নিজের সাথে আর কত মিথ্যা বলবি। মাথা থেকে সব ঝেরে বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া দিল। জারবা রোদকে জরিয়ে ধরলো। বিদায় নিল রোদের মা থেকে। আদ্রিয়ান ও রোদের মা থেকে বিদায় নিল। রোদের দিকে ফিরেও তাকালো না। ইয়াজ রোদের হাত ধরে রুমে নিয়ে গেল যা দেখে আদ্রিয়ানের চেহারা পাল্টে গেল।

___________________

আদ্রিয়ানের বাসায় হল রুমে বসা ওর মা, বাবা, জারবা। ভাই, ভাবি আপাততো বাসায় নেই। আমেরিকার আছে। ২ দিন পর আাসবে। কিন্তু আদ্রিয়ানে কথায় সবাই যেন হতবাক। জারবার হুট করে চিতকার শুনে আদ্রিয়ান ভ্র কুচকালো আর সবার ধ্যান ভাঙলো। আদ্রিয়ানের মা তো সে কি কান্না। বাবার ও চোখে পানি। ছোট ছেলে এমন কথা বলবে তারা তা স্বপ্নেও ভাবে নি। আদ্রিয়ান সবাই কে পরখ করে নিয়ে গলা ঝেরে বললো,

— এমন রিএকট করার কি আছে??

— না বাবা। তেমন কিছু না। তুই বুঝবি না। ( বাবা)

— কালকের মধ্যে ই সব ঠিক চাই।( আদ্রিয়ান)

— একদিনে কিভাবে সম্ভব?? (মা)

— আহা। আমাকে দেখতে দাও।( বাবা)

— ভাইয়া, ভাবি তো দুই দিন পরই আাসছে। ওয়েট করা যায় না???(জারবা)

–না। (সোজাসাপটা উত্তর আদ্রিয়ানের)

কেউ কার কিছু বললো না। সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরলো। যতো যা ই হোক কোন কমতি রাখা যাবে না। ছেলেকে প্রশ্নও করা যাবে না। কারণ একটাই যদি প্রশ্ন করলে হিতের বীপরিত হয়? এসব ভাবতে ভাবতে আদ্রিয়ানের বাবা মা কাজে লেগে পরল। সব সার্ভেন্টরাও বিজি হয়ে পরল। জারবা তো ফোন দিল আগে বড় ভাই আরিয়ানকে। ঐ খানে ভাই ভাবী তো রিতি মতো ঘাম ছুটে গেছে। আরিয়ান হলো ডাক্তার। আমেরিকার ঐ কাজে ই গিয়েছে ৩ মাস হলো। এর মধ্যে ই যে ভাই তার এমন কিছু করবে তা সে ভাবতেই পারে নি। আগামীকাল এর জন্য টিকিট এর ট্রায় করলো বাট পেল না। ভাই তার কেন এতো অধৈর্য হয়ে গেল তারা কেউ বুঝলো না। আরিয়ানের বউ সাবা তো কান্না করে দিল। তার ছেলে আলিফ বললো,

— আম্মু। কান্না করছো কেন।

— কিছু না বাবা।

বলে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো।

আরিয়ান ও কান্না থামালো না। মাঝে মধ্যে কান্না করা দরকার মন ভালো হয়। বউকে জড়িয়ে কপালে উষ্ণ পরশ দিল।
উত্তরে সাবা মুচকি হাসি দিল।

________________

সকাল হতেই পুরোদমে কাজ চলছে আদ্রিয়ানদের বাড়িতে। কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। আদো কি সব ঠিক হবে? হুট করে ই বা কেমনে কি? তবুও থামলো না তারা। পুরোদমে কাজে লাগে গেল।মনের মধ্যে তবুও চিন্তা রয়েই যাচ্ছে।

এদিকে আদ্রিয়ান বারান্দা থেকে ঘরে ডুকলো। চোখ জ্বলছে। লাল বর্ন ধারন করেছে। আচ্ছা সে কি ঠিক করছে?সার্থপর হয়ে যাচ্ছে না তো? সব ঠিক হবে তো? “মিষ্টি” ওর জন্য কি এটা ভালো হবে? না কি আরো খারাপ হবে??
না, আর ভাবতে পারছে না আদ্রিয়ান। সারারাত এসব ভেবেছে।
উঠে সাওয়ার নিল আদ্রিয়ান।
বের হতেই মিষ্টি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

–বাবাই, মাম্মা যাব।
শুনে যেন আদ্রিয়ানের কলিজাটা মোচর দিয়ে উঠল। তার আজকের সিদ্ধান্ত কি ঠিক হচ্ছ?

— ও বাবাই, মাম্মা যাব তো।( কাঁদো কাঁদো গলায়)

মুচকি হেসে জড়িয়ে নিল। কিছু বললো না।

— যাও। ফুপির কাছে। বাবাই একটু পর আসছি।

#চলবে….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১০

সকাল থেকে রোদ বিরস মুখে বসে আছে। ঘরের মেঝেতে বসে বিছনায় মাথা দিয়ে আছে। দৃষ্টি ঘূর্ণয়মান ফেন এর দিকে। চোখের পানি সব শুকিয়ে গেছে তো আবার নতুন করে গড়িয়ে পরছে। ঘড়ের মধ্যে কাচের শোপিচ সহ কুশন, চাদর সব এলোমেলো। কিন্তু এদিকে রোদের কোন খেয়াল নেই। এলোমেলো তো তার জীবন হয়ে যাচ্ছে। রাত অবদি সব ঠিক ছিল তো কি হয়ে গেল।চেনা চেহারা ও অচেনা লাগছে।

কাল রাতে যখন বাবা রোদকে বললো যে তাকে দেখতে আসবে তখন ভেবেছে হয়তো ও অসুস্থ তাই কেউ আসবে। তাই কিছু বলে নি। পরে জানতে পারলো তার বিয়ের কথা বলা হচ্ছে। মাথা যেন থম মেরে গেল। মাকে জিজ্ঞেস করল, ফলাফল একই। এটাই নাকি বিয়ের সময়। বাবার সাথে রোদ তেমন ফ্রী না। তাও সাহস করে বাবাকে না করেছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। গম্ভীর কণ্ঠে আর চাহনিতে থমকে গেল রোদ। ফিরে এলো রুমে। কান্না করেও লাভ হয় নি।

অনেকক্ষণ পর মা রুমে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,

— কি হয়েছে মা??? শুধু তো দেখবে। দেখলেই কি বিয়ে হয়???

— আমি জানি না,,, কিছু জানিনা। কারো সামনে যাব না আমি।

— রোদ এমন করিস না। আজ না হয় কাল তো বিয়ে দিতেই হবে??? নাকি??

— তো এখন কেন? মাত্র মেডিকেল লাইফ শুরু হলো। তার আগেই কেন শেষ করে দিতে চাইছো।

— ছেলে তো পরাবে।

— মা!!! কেন বুঝেও না বুঝার মতো করছো।
ছোট থেকে যেভাবে বলেছো ঐ ভাবে ছিলাম। নাও আই ওয়ান্ট টু লিভ মাই লাইফ।

— দেখ রোদ, তোর বাবাকে তুই চিনিস।

আর কিছু বলার আগেই চিতকার করে রোদ বললো,

— কি পেয়েছো আমাকে। কেন এমন করছো।

মেয়ের কন্ঠ পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো বাবা।
জিজ্ঞেস করল,

— রোদ এমন রিএক্ট করার কিছুই হয় নি।

রোদ যেন তেতে উঠল। বাবাকে ভয় পাওয়া মেয়ে মুহূর্তে যেন সব ভুলে গেল। বললো,

— সত্যি করে বলো তো,ঐ তোমার বিজনেসে কোন লস হয় নি তো?? আর আমাকে বিয়ে দিয়ে ওই লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে না তে??? আমাকে….

আর কিছু বলার আগেই সজোরে থাপ্পড় পরলো রোদের গালে। হ্যাঁ মা ই মেরেছে। টনটন করছে তার তার। দূর্বল শরীর যেন আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। এখন ই হেলে পরবে। বাবা মা কিছু না বলে রুম ত্যাগ করে। রোদ তখন সব রাগ ফার্নিচারে ঝারে।

চিন্তায় ডুব দেয়,

আচ্ছা কেমন হবে সেই লোক? মিষ্টির কি হবে? ওকে কি দেখবো না আর? নিশ্চিত আমকে সার্থপর ভাববে? ইয়াক টাও তো নেই। চট্টগ্রামে গেছে। কার কাছে সাহায্য চাইব??? আদ্রিয়ান!!!! নামটি ব্রেনে আসতেই চমকালো রোদ। মিষ্টির সাথে শেষবার কথা বলার জন্য কল দিল আদ্রিয়ানকে।

— হালো।রোদ বলো। (আদ্রিয়ান)

–নিঃস্বাস ছাড়া কিছুই শুনা গেল না।

— হালে।।।।

— ভাইয়া!!! ( গলা ধরে আসছে)

এই কাতরতা ভরা কন্ঠে ভাইয়া ডাকটা শুনে কেমন যেন লাগলো। তবুও বললো,

— হু বলে?

— মিষ্টি?? ( আর কিছু বলতে পারলো না)
আদ্রিয়ান বুঝতে পারে মেয়েটা কান্না করেছে। কিন্তু কিছু বলে না।

— ওতো খেলছে বাইরে। আসলে কল করবো নে।

— হু।

বলেই ফোন রাখল। কিন্তু আদ্রিয়ান কানে লাগিয়ে রেখেছে। কাটে নি। রোদের গুমোট কান্নায় যেন কলিজা কেপে উঠছে।কিন্তু আদ্রিয়ান তো মায়া বাড়াবে না। তাই মিথ্যা বলেছে যে মিষ্টি রুমে নেই।

_________________

লাল সারি পরে সোফায় বসে আছে রোদ। মুখে কোন প্রসাধনী নেই। শুষ্ক ঠোট। চোখমুখ দেখেই যে কারো ই খারাপ লাগবে। কিভাবে কান্না করেছে বুঝাই যাচ্ছে।ছোট বাচ্চা ও বুঝবে যে রোদ রাজি না।কারো দিকে চোখ তুলে দেখে নি। সকাল থেকে না খাওয়া তাই যেন বসতেও পারছে না। কারো সাথে কোন কথা বলে নি। সামনে বর পক্ষ বসা। ছেলের মা বাবা রোদকে অনেক আদর করলে। সাথ দাড়িয়ে চাচাতো দুই বোন। ইশা ও তিশা। ইশা বড় তিশা ছোট। চাচাতো ভাই ও সামনে দাড়িয়ে। চাচি, চাচা, বাবা, মা সবাই বসে আছে।

ছেলে পক্ষ যেন ঠিক করে রেখেছে যে আজই নিয়ে যাবে। মানে মানা যায় এসব। বাবা, চাচা, মা, চাচাতো ভাই ইশান তো পুরাই না করে দিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ছেলের বাবা,

— মা৷ তুমি কি রাজি। আজ যদি তোমাকে আমার মেয়ে করে নিয়ে যাই?

রাগে, দুঃখে, অভিমানে বলে দিলাম,

— হ্যাঁ।

সবাই চমকে গেল। কেউ কিছু বললো না। স্বাভাবিক ছিল একজন। সে হলে বর।

কাজি ও আনা হলো। ধ্যান ভাঙলো রোদের যখন শুনলো কাজির মুখে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির নাম। বুক কেপে উাঠল। এতক্ষণের নিচু করে রাখা মাথা তুলে সামনে তাকাল।থমকে গেল সব। চোখের পানিতে জেন ভেসে গেল সব।

সামনে স্বয়ন আদ্রিয়ান বসা। চোখ রোদের দিকে। কোন ভাব নেই। ডুবে গেল রোদ ঐ চোখে। কাজি আবার তারা দিতেই পরপর তিনবার “কবুল” বলে উঠল রোদ। মাথা নিচু করে আাবার বসে রইল।
আদ্রিয়ান ও ৩বার কবুল বললো। সবাইকে খেতে দেওয়া হলো। রোদের মা রুমে এলে প্লেটে করে খাবার নিয়ে। সারাদিন মেয়েটা না খাওয়া।

— হা কর মা। আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।

— উত্তরে রোদ একবর তকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল।তাচ্ছিল্য পূর্ন হাসি দিল।

মায়ের বুকটা যেন আর্তনাদ করে উঠল। হাজার চেষ্টা করেও কেউ খাওয়াতে পারল না।

বিদায়ের সময় কাউকে কিছু বললো না রোদ। চুপচাপ গাড়িতে উঠে পরলো। রোদের মা শব্দ করে কেদে উঠল। আদ্রিয়ান জড়িয়ে ধরে আাস্বাস দিল। বাবা ও নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলো। কাদলো সবাই কিন্তু শান্ত রোদ। গাড়ি ছুটলো আপন গতিতে। আদ্রিয়ান থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসে চোখের জ্বল ফেলছে রোদ। আদ্রিয়ান ও চুপ।ভাবছে, ভুল করে ফেললাম না তো????.

#চলবে..….