ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-১৫+১৬

0
155

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৫

আদ্রিয়ান ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে। ওর এক বাহুতে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আাছে রোদ। বার বার নাক টানছে। একটু পরপর আদ্রিয়ানের বাহুর দিকের টিশার্টে চোখ মুখ ঘষছে। আদ্রিয়ান ও কিছু বলছে না। অনেকক্ষণ পর ওরা পৌছালো রোদের বাসার সামনে। গেটে দাড়ানো রোদের বাবা। আদ্রিয়ানই গাড়িতে ফোন দিয়ে বলেছে সব। রোদের বাবা মি. রহমান চিন্তিত ভংগিমায় এগিয়ে গেল গাড়ির কাছে। আদ্রিয়ান নিজে নেমে রোদকে কোলে করে নামালো। রোদও আদ্রিয়ানে বুকে মাথা দিয়ে রেখেছে। চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। চোখ মুখ ফুলে গেছে, কেমন নিস্তেজ হয়ে আাছে।মি. রহমান যেন এবার চিন্তায় হ্যার্ট আটেক করবে। এত আদরের মেয়ে তার একদিনে এমন কীভাবে হলো। তারাতাড়ি আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভিতরে গেল। রোদের মায়ের তো মেয়েকে দেখেই কলিজা মোচর দিয়ে উঠল।মা তো মেয়েকে দেখেই কান্না শুরু করেছে। কেমন হয়ে গেল তার মেয়ে। আদ্রিয়ান রোদকে বিছানায় আধশোয়া করে বসিয়ে দিল।রোদের মা সেই থেকে রোদকে বুকে চেপে ধরে বসে আছে। সে আার তার মেয়ে দিবে না। রোদও কান্না করছে। রোদের বাবা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বললো। মি. রহমান আদ্রিয়ানকে নিয়ে লিভিং রুমে গেল। গলার স্বরে গম্ভীরতা এনে বললো,

— তুমি ওয়াদা করেছিলে আমার মেয়ের খেয়াল রাখবে।।।

— বাবা আসলে রোদকে আমি সামলানোর চেষ্টা করেছি। প্রথম দিন তাই এমন হয়েছে। আর হবে না।

— তুমি ওর চেহারা দেখেছো। আমার মেয়েকে কি এভাবে পাঠিয়েছিলাম?? কেমন আধমরা হয়ে গেছে।

— সরি বাবা। আমি আরো খেয়াল রাখব। রাতে যে এমন হবে ভাবতে পারি নি।

— দেখ তোমাকে আমরা আগেও বলেছি রোদ কেমন। ও খুবই নরম স্বভাবের মেয়ে। বেশিক্ষণ রাগ, অভিমান কোনটাই ও করতে পারে না। এমন বিধস্ত রুপ কোন দিনও আমি আমার মেয়ের দেখি নি।

আদ্রিয়ান বুঝতে পারছে রোদের বাবার কথায় স্পষ্ট রাগের আভাস তার মেয়ের এই অবস্থা দেখে। আদ্রিয়ানের নিজের ও খারাপ লাগছে। ভেবেছিলো রোদকে ইজিলি আগলে রাখতে পারবে। কিন্তু রোদ কিছুটা বাচ্চা স্বভাবের তাই এমন হচ্ছে।

আদ্রিয়ান হাটু গেরে মি. রহমানের পায়ের সামনে বসে বললো,

— প্লিজ বাবা আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন। রোদকে ছাড়া আমি আর আমার মেয়ে থাকতে পারবো না। প্লিজ।। আমি আর অভিযোগ করার সুযোগ দিব না।ইনশাআল্লাহ।

রোদের বাবা একটু হকচকিয়ে গেল।

— আরে আরে উঠ বাবা।

আদ্রিয়ান উঠে সোফায় বসল। চোখে রোদকে হারানোর ভয়। যা স্পষ্ট দেখতে পেলেন মি. রহমান। তার মেয়ের জন্য এরচেয়ে ভালো ছেলে কোথায় পাবেন না তিনি।
উঠে আদ্রিয়ানের পিঠ চাপরে সাহস দিলেন। আদ্রিয়ান ও লটকানো মুখে হালকা হাসল।

___________________

রোদ তখন থেকে মায়ের কোলে মাথা দিয়ে চোখ বুজে আাছে। এখন অনেক ভালো লাগছে রোদের। শান্তি শান্তি লাগছে।মি. রহমান বললো,

— আজ রাত না হয় থেকে যাও। কাল যেও অনেক রাত হয়ে গেছে।

— না বাবা কাল রোদের ক্লাস আাবার আমার ও ল্যাবে কাজ আছে।

রোদের মা এর মধ্যে বললো যে সে তার মেয়েকে কিছু তেই দিবে না। মি. রহামান এতো বুঝালে কাজ হলো না। এর মধ্যে রাদ রুম থেকে বের হলো। কাল আাসত কিন্তু বোনের জন্য রাতেই বের হয়েছে। ১২ টায় বাসায় পৌছেছে। দুই ঘন্টা ঘুমিয়েছে। বাবার কাছ থেকে সব শুনে এখন একটু ঠান্ডা হয়েছে। না হলে তখনই বোনকে বাসায় নিয়ে আাসত। ভাইকে দেখে রোদ উঠে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। রাদ ও পরম যত্নে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। এর মধ্যে রুদ্র চোখ ডলতে ডলতে বের হলো। বোনকে দেখে চিতকার করে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
দুই দিকে দুই ভাই মাঝখানে রোদ। পুরাই স্যান্ডউইচ লাগছে দেখতে।

রাদ বোনকে ছারিয়ে আদ্রিয়ানের কাছে গেল। রুদ্র এখনো রোদকে ছারে নি। রাদ আদ্রিয়ানকে দেখে কিছুক্ষণ কথা বললো। রাদ কিছুটা হুমকির সুরেই বোনকে দেখে রাখতে বললো। আদ্রিয়ান ও মুচকি হেসে মাথা নাড়লো। রাদের আদ্রিয়ানকে পছন্দ হয়েছে। তাই আর কিছু বললো না। বাধ সাধলো রোদের মা। কিছুতেই মেয়ে দিবে না। তার কথা, আমার মেয়ে একদিনে এমন হয়ে গেছে মেয়ে দিব না৷ আদ্রিয়ান অসহায় চোখে মি. রহমান আর রাদের দিকে তাকালো। তারাও মাকে কিছু বুঝাতে পারছে না। আর আদ্রিয়ান লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না কারন তাদের দিক দিয়ে তারা ঠিক।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে রোদ বললো,

— আম্মু আমার মেয়ে সকালে আমাকে না দেখলে কান্না করবে। যেতে হবে এখন আবার আসব তো।

রোদের মা, বাবা, ভাই চরম অবাক। তাদের ছোট রোদ কীভাবে মেয়ের জন্য বলছে।আর আদ্রিয়ান বেচারা শকে আছে। রোদ পারলেই না যাওয়ার কথা বলতে পারতো কিন্তু না ও তো নিজেকে মিষ্টির মা মনে করে। মনে করবে কি মা ই তো।

রোদের মা হেসে বললো,

— বাবাহ, আামার মেয়ে তো মা হয়ে গেছে। আমি তো ভুলেই গিয়েছি।

আদ্রিয়ান রোদের মায়ের হাত ধরে বললো,

— মা আর অভিযোগের সুযোগ দিব না।

রোদের মা হেসে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।

এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ডুকলো আদ্রিয়ানের বাবা মা। জারবার কাছে শুনে আদ্রিয়ানকে ফোন করেছিল ধরে নি তাই আরো ভয় পেয়ে যায়। পরে এখানে আসে। তাদেরকে কেউ এখন এখানে আশা করে নি। তারা রোদকে তারাতাড়ি দেখলো।সবাই তাদের শান্ত হতে বললো। এরপর সব খুলে বললো। বেচারারা এতক্ষণে সস্তি পেল। রোদও ভিষণ লজ্জা পেল। ওর জন্য সবাই কেমন পেরেশান হলো। রোদ বললো,

— সরি। আমার জন্য এমন হলো।

— আরে বোকা মেয়ে আমার বলে কি। তোর জন্যই তো চিন্তা হচ্ছিল।

এরপর সবাই বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো। আদ্রিয়ানের বাবা মা এক গাড়িতে চরে গেল আর ড্রাইভার কে আদ্রিয়ানদের গাড়িতে দিল।
ড্রাইভার ড্রাইভ করছে আর রোদ আদ্রিয়ানের বুকে সুয়ে আর আদ্রিয়ান দুহাতে জড়িয়ে রেখেছে।

বাসায় এসে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত ২ঃ৪৫ বাজে। নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো আদ্রিয়ান। রোদের কপালে একটা চুমু খেল। ব্ল্যাংকেট দিয়ে ঢেকে দিল রোদকে। পাশে নিজেও শুয়ে পরলো। টেনে বুকে নিল রোদকে, এরপর ঘুমিয়ে গেল।

_________________

সকালের সিগ্ধতায় সিক্ত চারিদিক। শীতের আনাগোনা চলছে। কম্বলের নিচে আদ্রিয়ানের বুকে আদুরে বিড়ালের ন্যায় গুটিয়ে আছে রোদ। আদ্রিয়ানের ঘুম ভেঙেছে ৭ঃ১০ এ। এখন বাজে ৭ঃ৩০। রোদের উঠার কোন নাম গন্ধ নেই। কিন্তু আজকে তো উঠতে হবে। মেডিকেল এ যেতে হবে। আদ্রিয়ান দায়িত্ব নিয়েছে তার। তাই হালকা করে ডাকল রোদকে। কিন্তু এতে লাভের লাভ কিছুই হলো না উলটো রোদ আরো বুকের ভিতর ঢুকার চেষ্টা চালাচ্ছে। বেচারী আর ঢুকতে না পেরে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ ঘষে ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমিয়ে গেল।

রোদের কান্ড দেখে শব্দ করে হেসে দিল আদ্রিয়ান। এতে রোদ ঘুমের মধ্যেই নরেচরে উঠল। আদ্রিয়ান আবার ও ডাকল। না রোদ উঠছেই না। অগত্যা নিজে উঠে রোদকে বালিশে শুয়িয়ে দিল। নিজে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। দেখে রোদ এখনো ঘুম। ঘড়ির কাটা তো থেমে নেই। এর মধ্যে মিষ্টি দরজা নক করছে। আদ্রিয়ান দরজা খুলে কোলে তুলে নিল। মিষ্টিকে বিছানার বসিয়ে আাবার ও রোদকে ডাকতে লাগল। কালকে রাতের কথা মিষ্টির কিছু মনে নেই। ও সুন্দর করে রোদের বুকে উঠে শুয়ে পরলো। রোদের তবুও কোন হেল দুল নেই। এবার আদ্রিয়ান হালকা করে ধাক্কা দেয়া শুরু করলো। পালা দিয়ে মিষ্টি ও মাম্মা মাম্মা ডাকা শুরু করলো। বিরক্ত রোদ পিটপিট করে তাকিয়ে মিষ্টি কে বুকে দেখে হেসে ওকেও কম্বলের নিচে ডুকরি দিয়ে বললো,

— বাইরে ঠান্ডা আম্মু ঘুমাও।

মিষ্টি বেচারী বোকা চোখে একবার রোদ আর এলবার আদ্রিয়ানকে দেখতে লাগলো।আদ্রিয়ান এবার ধমকে বললো,

— রোদ উঠো নাহলে ঠান্ডা পানিতে চুবাবো তোমাকে আমি।

আদ্রিয়ান বিশ্বাস নেই তাই ভয়ে মাথা থেকে কম্বল সরিয়ে চোখ বের করে তাকালো। আদ্রিয়ান শক্ত চাহনি দেখে কিছু আর বললো না। আদ্রিয়ান ওকে বললো,

— উঠ।

— একটু ঘুমাই।

— না।

— দেখেন কত ঠান্ডা।

— মেডিকেল মিস দেয়া যাবে না।

— শীত করে তো।

আদ্রিয়ান এবার নিজের ঠান্ডা দু হাত রোদের গালে ধরলো। ধরফরিয়ে উঠল রোদ। মিষ্টি তো হেসে কুটিকুটি। রোদ ছোট ছোট চোখ করে মিষ্টি আর আদ্রিয়ান কে দেখে ওয়াসরুমে ডুকল।

#চলবে…….

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৬

ডাইনিং টেবিলে বসে মিষ্টি কে খাওয়াতে ব্যাস্ত রোদ। লেট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিষ্টি কে নিজেই খাওয়াবে যদিও আদ্রিয়ান বলেছিল ও খায়িয়ে দিবে কিন্তু মিষ্টি রোদের কাছে খাবে। রোদও পরম যত্নে মেয়েকে খাওয়াচ্ছে। খাওয়া শেষে অনেক কষ্টে দুধ খাওয়ালো মিষ্টি কে। সবাই দেখছে মিগ্ধ হয়ে ছোট রোদ যে কিনা কাল নিজের মায়ের জন্য কেদে কেটে অস্থির হচ্ছিল সে এখন নিজের মেয়ে নিয়ে বিজি।

আদ্রিয়ান নিজে খাচ্ছে। রোদের মিষ্টি কে খাওয়ানো শেষ হলে আদ্রিয়ান পরটা দিয়ে ডিম ভাজা নিয়ে একটু ছিরে রোদের মুখে তুলে দিল। সবার সামনে কেন জানি রোদের লজ্জা লাগলো যদিও আদ্রিয়ানের হাতে আগে খেয়েছে।
তাই বললো,

— আমি খাচ্ছি তো।

— চুপচাপ হা কর।

বাধ্য মেয়ের মতো হা করলো রোদ। পরটা মুখে দিল আদ্রিয়ান। রোদ ও খেল। আদ্রিয়ান আবার নিজেও ব্রেড দিয়ে ডিম করা স্যান্ডউইচ খাচ্ছে। রোদ অর্ধেকের ও কম খেয়ে বললো,

— উম। আর না। পেট ভরে গেছে।

— মাইর খাবা।অর্ধেক ওতো শেষ করো নি।

— প্লিজ। আর না।

— হা কর।

রোদ মুখ লটকালো। আদ্রিয়ান নিজের কামরে খওয়া স্যান্ডউইচ রোদের মুখে দিল।রোদও খেল৷ আদ্রিয়ান নিজে পরটা ডিম খেল। খাওয়া শেষে রোদের মুখে লাগা ডিম হাতের বৃদ্ধাআংগুল দিয়ে মুছে দিল। পানি খেয়ে রোদ রুমে গেল রেডি হতে। আদ্রিয়ান ও একটু পর দু কাপ কফি নিয়ে রুমে এলো।রোদ ততক্ষণে ব্লাক কালার গাউন পরে হিজাব বেধে নিয়েছে। চোখে চশমা। স্টাইলের জন্য না। ওর চোখে হালকা সমস্যা মেইনলি মাথা ব্যাথা। আদ্রিয়ান রোদের হাতে কফি দিয়ে বললো শেষ করতে। রোদও শেষ করলো। আদ্রিয়ান ও রেডি হয়ে নিল। রোদ লং ডেনিম টা পরে নিল যে ঠান্ডা। এরপর নিকাব বেধে নিল। রোদ যাথাসম্ভব চেষ্টা করে পর্দা করার কিন্ত পুরোপুরি হয় না। আদ্রিয়ান ও এই ব্যাপারটা অনেক পছন্দ। রোদ না পরলে আদ্রিয়ান অবশ্যই জোর করতো। রোদ কাধে ব্যাগ নিয়ে নিচে আসতে নিলে আদ্রিয়ান আটকালো। বললো,

–ওয়েট, জুতা পরে নিই। একসাথে নিচে যাব।

— আমরা তো আলাদা যাব তো আমি যাই।

— কে বলেছে আদালা যাব??( ভ্রু কুচকে)

— কেন আমি তো একাই যাই।

— এখন থেকে যাবে না। আমি দিয়ে আসব টাইম পেলে নিয়ে ও আসব।

— কেন কেন আমি কি বাচ্চা নাকি??

— চুপচাপ চল।

— শুনেন আমি একাই যাব নাহলে ইয়াজকে কল দেই ওর বাইকে করে যাব।

— দিলা তো সকাল বেলা মেজাজ খারাপ করে। ( হাত দুয়ে কপাল স্লাইড করে)

— কি করলাম?

— আই এম ইউর হাজবেন্ড। তো নিজের জামাই থাকতে কেন ‘যে না সে ‘তোমাকে বাইকে নিয়ে নিয়ে যাবে?( দাতে দাত পিষে)

— ইয়াজ ‘যে না সে’ না। হি ইজ মাই বেস্ট বাডি।

— লুক রোদ লেট হচ্ছে। তাড়াতাড়ি চল। কাম

বলে হাত ধরে হাটা দিল।রোদ ও পিছনে গেল। নিচে নেমে মিষ্টিকে আদর করে বিদায় নিল। আদ্রিয়ান ও মিষ্টিকে কোলে তুলে আদর করলো। মিষ্টি মন খারাপ করে আছে, মাম্মা কেন তাকে নিয়ে যাবে না। রোদএর ও এর জন্য মন খারাপ। বের হবে এমন সময় আদ্রিয়ানের মা পানির বোতল রোদের হাতে দিয়ে বললো, “ভুলে যাচ্ছিলো তো “। রোদ মুচকি হেসে বললো,

— সরি, খেয়াল ছিল না।

— সাবধানে যাস। আল্লাহ হাফেজ।

— আল্লাহ হাফেজ।

গাড়িতে বসতেই আদ্রিয়ান গাড়ি স্টাট দিল। রোদ বললো,

— শুনেন। আমি কিন্তু আজই যাচ্ছি আর যাব না আপনার সাথে।

— দেখা যাবে নে।

আদ্রিয়ানের এমন হেয়ালি উত্তর রোদের তেমন ভালো লাগে নি। তাই মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। আদ্রিয়ান ওর ফুলানে মুখ দেখে হালকা হাসল। গাড়ি মেডিকেলের সামনে থামতেই রোদ নেমে গেল। আদ্রিয়ান ও নেমে রোদেকে সাবধানে থাকতে বললো। আদ্রিয়ান গাড়িতে উঠবে এমন সময় দেখলো ইয়াজ কোথাথেকে এসে রোদের হাত ধরে সামনে যাচ্ছে। মুহূর্তেই আদ্রিয়ানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। স্টেয়ারিং এ বারি দিয়ে গাড়ি ঘুরালো।

__________________________

ক্লাস শেষ হয়ে গেলে রোদ ফ্রেন্ডদের সাথে বাইরে কথা বলছিল। এমন সময় ইয়াজ এলো কথা বলতে। দুইজন মিলে একটা ক্যাফেতে গেল। কিছু বলছে না দেখে রোদ বললো,

— কিরে কিছু বলবি?

— হুম।

— বল নাকি কোন মহেন্দ্রক্ষনের অপেক্ষা করছিস???

— ওই, আই এম সিরিয়াস।

— হে তো বল না রে ভাই।

— তোর ননদ আছে না।

— হুম জারবা। ( কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো)

— হু হু ওই জারবা। আচ্ছা ওর কি কোন বিএফ আছে??

— আমি কি জানি। কেন বল তো???( ভ্রু কুচকে)

— না মানে বইন আই থিং আই এম ফলিং ইন লাভ ইউথ হার।

— ইউ থিংক???

— না সত্যিই পছন্দ করি। ওই দিন ওদের বাসায় আবার তোদের বাসায় ওতো কথা হলো।

— কিন্তু ওতো ছোট।মাত্র ইন্টারে পরে।

— তো কি। আমি নিজে বড় করে নিব। তুই ওর নাম্বারটা দে না।

— পারবো না যদিও আদ্রিয়ান ভাইয়া শুনে বকে।

— ভাইয়া!!!!!

— আরে চুপ কর তুই গেলাম আমি।

বলে রোদ উঠতে যাবে ওমনি ইয়াজ ওর হাত আটকে ধরলো। বিরক্ত হয়ে রোদ ছাড়াতে গেল।তাই ইয়াজ আরেকটু চাপ দিয়ে ধরতেই তুলতুলে নরম হাতে পুরুষের হাতের ছাপ পরে গেল। রোদ উফ করতেই ইয়াজ হাত ছেড়ে দিল।কপাল খারাপ ছিল বিধায় তখন আদ্রিয়ান ওই ক্যাফেতে উপস্থিত হয় আর ওদের দুই জনকে একসাথে দেখে ফেলে। সামনে এগুতেই রোদ ভয়ে ইয়াজের পেছনে লুকায়। আদ্রিয়ান চোখ গরম করে তাকিয়ে ছিল। রোদের ওকে ভয় পেয়ে ইয়াজের পিছনে লুকালে ওর রাগ যেন এবার আকাশচুম্বী। রোদের সামনে যেয়ে বললে,

— চল বাসায়। লেট হচ্ছে।

ইয়াজ কিছু বলবে এর আগেই রোদকে নিয়ে চলে গেল আদ্রিয়ান। ইয়াজ পুরাই বোকা বনে গেল। কি হলো বেচারা কিছুই বুঝতে পারলো না।

৩ঃ২০ এ বাসায় পৌছালো আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে। সারা রাস্তা একটা কথাও বলে নি শুধু রাগে ফুসেছে। তা দেখেই রোদ ভয়ে শেষ। কিন্তু ওর কি দোষ এটা নিজেও জানে না। বাসায় এসে রোদকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে ডুকে দরজা অফ দিয়েছে। রোদের এবার জান বের হয়ে যাবে।
আদ্রিয়ান বললো,

— ওই ছেলের সাথে তোমার এতো কি?

— কোন ছেলে?

— দেখ মেজাজ খারাপ করবা না।

রোদ বেচারী বুঝলো না ওনার তো মেজাজ খারাপ হয়ে ই আছে রোদ আর কি খারাপ করবে।
রোদ কিছু বলছে না দেখে আদ্রিয়ান ই বললো,

— ঐ ইয়াজের সাথে তোমার কি? পরতে যাও নাকি আড্ডা দিতে যাও। ওর সাথে এত কিসের কথা।

— ও আমার ফ্রেন্ড।

— জাস্ট সাট আপ। কিসের এতো ফ্রেন্ড।

বলতে বলতেই চোখ গেল রোদের হাতের দিকে। চার আংগুলের ছাপ পরে লাল হয়ে আছে। ফর্সা হাতে ফুটে আছে সে ছাপ। তিরতির করে বেরে গেল লুকিয়ে রাখা রাগ। থাবা মেরে ওই হাত দাত কটমটিয়ে বললো,

— এই দাগ কিসের?

রোদ মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে। যদি জানে ইয়াজের হাতের ছাপ তাহলে রোদ আজ শেষ।

— বল কে ধরেছে তোকে? কার হাতের ছোয়া তোর হাতে? চুপ কেন বল? তোকে আমি জোরে ধরি না ব্যাথা পাবি তাই আর তুই কি না আরেক জনের হাতের স্পর্শ নিজের হাতে নিয়ে ঘুরিস!!!!

আদ্রিয়ানের মুখে তুই সমোদ্ধোন আর এমন ধমকি শুনে কেদে দিল রোদ। ওর কান্না দেখে আদ্রিয়ান রাগে দেয়ালে জোরে তিনটা ঘুষি দিল যদি এতে একটু রাগ কমে নাহলে রোদকেই মেরে বসবে। হাত দিয়ে র*ক্ত পরা শুরু করেছে। ভয়ে রোদ চিৎকার দিয়ে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।আদ্রিয়ান ছাড়াতে চাইলেও ছাড়লো না। রোদ ওকে জড়িয়ে ধরেই সব কথা বললো তখন কেন ইয়াজ ওর হাত ধরেছিল আর কেন ক্যাফেতে গিয়েছিল। সব শুনে শান্ত হলো আদ্রিয়ান। রোদ তখনও অশান্ত। যদিও মেডিকেলের স্টুডেন্ট তবুও কন জানি আদ্রিয়ানের হাতের র*ক্ত ওর সহ্য হলো না। কেদে কেটে অস্থির। আদ্রিয়ান বেচারা নিজের হাত ভুলে রোদকে থামাতে ব্যাস্ত।

রোদ শান্ত হলে নিজে আদ্রিয়ানের হাত ব্যান্ডেজ করে দিল।একটু পর পর ফু দেয় যেন নিজেই ব্যাথা পাচ্ছে।আদ্রিয়ানের কেন জানি মনে হয় মেয়েটাকে ওর দরকার। না একটু বেশিই দরকার। এমন পাগলিকে ওর রাতের শান্তির ঘুমের জন্য দরকার। কতরাত পর আদ্রিয়ান রোদকে বুকে নিয়ে শান্তিতে দু রাত ধরে ঘুমায়। ঘরে ঢুকে কারো হাসি হাসি মুখ দেখতে হলেও ওর এই মেয়েকে দরকার। ওর ভাবনার মাঝেই রোদ নাক টেনে টেনে বললো,

— সরি। আমার জন্য এমন হলো।

— আমিও সরি সোনা। রাগ উঠতে কন্ট্রোল হয় না।

আদ্রিয়ানের আদর আদর কথা শুনে রোদ গলে গেল। তাই ত্যারামি করে বললো,

— কথা নাই আপনার সাথে। আমাকে বকেছেন।

কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গোসলে ঢুকে গেল।আদ্রিয়ান বিছানায় বসে তৃপ্তির হাসি হাসল। তার পুচকো বউটার রাগ হয়েছে তাকেই তো রাগ ভাংগাতে হবে। এসব ভাবতেই দরজায় নক করলো কেউ। দরজা খুলেই জড়িয়ে ধরলো সামনের ব্যাক্তিকে। সেও জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ানের সামনে আরিয়ান আর সাবা দাড়ানো। কাল ভোরে ফিরেছে। ওদের ডাকে নি। মায়ের কাছে শুনেছে রোদের কাল রাতের কাহিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওদের দেখা পায় নি। আরিয়ান আর সাবা রুমে ডুকে বললে,

— রোদ কই?

— সাওয়ারে গিয়েছে।

আরিয়ান আর সাবা প্রায় ৩ বছর পর আদ্রিয়ানের এমন প্রাণোচ্ছল কথা শুনলো। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো। রোদকে দেখার বাসনা আরো বেরে গেল। আরিয়ান বললো,

— আচ্ছা রেস্ট নে সন্ধায় কথা হবে।

–চ্যাম্প কই?

— মিষ্টির সাথে।

— অহ আচ্ছা।

ওরা চলে যাওয়ার ১০ মিনিট পর রোদ বের হলো। আদ্রিয়ানকে কিছু বললো না। আদ্রিয়ান ও সাওয়ারে গেল। বের হয়ে দেখে রোদ বারান্দায় চুল ঝারছে। মেয়েটার চুল অনেক সুন্দর।কিন্তু ও সামলাতে পারে নি।আদ্রিয়ান নিজে ওর পেছনে যেয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে দিল। রোদ ও কিছু বললো না। দুইজন নিচে নেমে এলো। এখনো লাঞ্চ করা হয় নি। ওরা নামতেই আদ্রিয়ানের মা খারাব বেরে দিল। রোদ বললো,

— আন্টি মিষ্টি কোথায়?

— ওতো আলিফের সাথে খেলছিল। এখন ঘুম।

— খেয়েছে? আর আলিফ কে?

— হুম সাবা খায়িয়ে দিয়েছে?

— সাবা আবার কে?

আদ্রিয়ান বললো,

— তা তোমার পরে জানলেও চলবে। এখন খাও।

আদ্রিয়ানের মা চলে গেলে আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকালো। এখন ও ওর সাথে কথা বলছে না। আদ্রিয়ান বললো,

— কি হলো খাও।

— আপনার হাতে তো ব্যাথা কিভাবে খাবেন?

— খাব না।

— কেন কেন?

— কিভাবে খাব? কেউতো আর খায়িয়ে দিবে না।( ইচ্ছা করেই বললো)

— আমি খায়িয়ে দেই? (ইতস্তত হয়ে)

— তোমার ইচ্ছা।

রোদ নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে আদ্রিয়ানের মুখে তুলে দিল। অনেক বছর পর তৃপ্তি সহ খেল আদ্রিয়ান। রোদকেও খেয়ে নিতে বললো। রোদ নিজেও একটু খেল। আদ্রিয়ান ওকে জোড় করে আরো দুই লোকমা খাওয়াতে পারলো। এরবেশি রোদ খেতে পারলো না। আদ্রিয়ানকে খায়িয়ে মুখ মুছে দিল। নিজেই প্লেট গুছিয়ে রাখলো।যদিও আদ্রিয়ান বলেছে কাজের লোক করবে কিন্তু রোদ নিজেই করলো।

দুজন উপরে রুমে এলো। রোদ আদ্রিয়ানের দিকে একটা পেইন কিলার এগিয়ে দিল সাথে পানি।আদ্রিয়ান জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,

— হাতে পরে ব্যাথা হবে। খেয়ে নিন।

— একটু ব্যাথায় কিছু হবে না।

— ডাক্তার আপনি না আমি?

— কেউ না।

জিব্বায় কামর দিল রোদ আসলেই কেউ ডাক্তার না। তবুও জোড় দিয়ে বললো,

— তো কি, হবো একদিন।

— তখন খাব।

— প্লিজ হা করেন।

— এতো করে বলছো দাও তাহলে।

খাওয়া হলে আদ্রিয়ান শুয়ে পরলো। রোদ পাশে বসে ছিল। ওকে বললো,

— কাল তো ভালোমতো ঘুমাও নি রাতে। এখন ঘুমাও।

রোদ ওর পাশে শুয়ে পরলো। এপাশ ওপাশ করছে করছে দেখে বললো,

— বুকে ঘুমাবে?

রোদ কিছু না বলে মাথাটা আদ্রিয়ানের বুকে দিল। রোদ আদ্রিয়ানের বা পাশে ছিল আদ্রিয়ান ওকে দুহাতে ধরে পলটি দিয়ে নিজের ডান পাশে এনে বুকে জড়িয়ে নিল। রোদ ও কিছু বললো না। আদ্রিয়ানের বুকে আরামে ঘুমিয়ে গেল।আদ্রিয়ান ও ঘুমিয়ে গেল।

#চলবে…..