#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
( সারপ্রাইজ পর্ব) ৩
আজ ১৫ রোজা। রোদের বাসা থেকে রোজার ডালা পাঠানো হয়েছে। বিগত ৩ বছর ধরে দেখতে দেখতে এখন আদ্রিয়ানের বাড়ীর লোকজনের অভ্যস্ত হওয়ার কথা থাকলেও তারা চকমে ঢমকে যান এখনও। এর অবশ্য কারণ ও আছে। প্রতিবার রোদের পরিবার নিজেদের রেকর্ড ভাঙ্গে। এইবার ৩ ভ্যান ভর্তি ইফতারি পাঠানো হয়েছে সাথে ফলমূল আর মিষ্টি আইটেম আলাদা। পুরান ঢাকার লোকজন ইফতার নিয়ে বেশ রুচিশীলতার প্রমাণ দিয়ে থাকে। পুরো বাংলাদেশের জনগণ জানে চকবাজারের বিখ্যাত ইফতার সম্পর্কে। ঐ সব ইফতার সহ এই বার যোগ দিয়েছে আরো ভিন্ন ভিন্ন আইটেম। এসব কিছু আত্মীয়, প্রতিবেশীদের বিলাতে বিলাতেই হাঁপিয়ে উঠলো আদ্রিয়ানের মা আর সাবা। এবারও মোটামুটি সুস্থ সবল একটা খাসি পাঠানো হয়েছে। এটা নাকি তাদের ঐতিহ্য যে ডালার সাথে মেয়ের শশুড় বাড়ী খাসি হাঁটিয়ে পাঠাতে হয়। মিষ্টি, আদ্র, আলিফ আর আরিয়ানা ঐটা দেখতেই ব্যাস্ত। তাদের লিডার হিসেবে জারবা নিজেকে বিনা উস্কানিতে নিয়োগ করেছে। আদ্র তো গোল গোল চোখ করে বারবার বলছে,
— ভাওও ভাওও
ওর কেন যেন মনে হচ্ছে এটা ভাও। মিষ্টি ভাইয়ের আঙুলটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,
— ভাই বলো খাসি। খা..সি।
আদ্রও বোনের শিখানো কথা অনুসরণ করে উচ্চারন করে বললো,
— কা…আআআ…তি
সবাই হেসে উঠলো ওর কথা শুনে। জারবা ওকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে ভিতরে নিয়ে এলো সবাইকে। ওদের একমাত্র লক্ষ্য এখন মিশন খাসি পালা।
টেবিলে সব সাজানো শেষ। সবাই নিচে নেমে এসেছে। আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— বাচ্চারা কোথায়?
রোদ জুসের জগটা টেবিলে রেখে উত্তর দিলো,
— জারবার সাথে বাড়ির পেছনে গিয়েছে।
— এই সময়ে?
আরিয়ান দাঁড়িয়ে বললো,
— দাঁড়া নিয়ে আসি।
বলতেই জারবা বিচ্ছু বাহিনী নিয়ে বাড়ীতে ঢুকলো। ওমনিই ওর মা ধমকে উঠলো,
— এই সময়ে ওদের নিয়ে বাইরে কি তোর? কতবার বলেছি ওদের নিয়ে এই সময়ে বের হতে না।
জারবা কিছু বলার আগেই আদ্র আওয়াজ করলো,
— দাদ্দাহ ভাও।
আদ্রিয়ানের মা হাতের গ্লাসটা রেখে তাড়াতাড়ি নাতীকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বললো,
— আমার দাদাভাই আবার ডাকো তো দাদীকে।
আদ্র আবারও ঠোঁট নেড়ে বললো,
— দাদ্দাহ ভাও ভাও।
আদ্রিয়ানের মা জারবার দিকে তাকিয়ে বললো,
— এই কিসের কথা বলে আদ্র?
— কিসের আবার খাসির।
আরিয়ানাও বললো,
— দিদা খাসি পালব।
আদ্রিয়ানের মা জারবার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
— তুই ওদের উস্কে দিয়েছিস?
জারবা সরে টেবিলে বসে বললো,
— তোমার নাতী- নাতনিরা পালবে। আমার কি দোষ?
আরিয়ান ওর মাথায় একটা গাট্টি মে’রে বললো,
— তুই যে ওদের অঘোষিত লিডার তা সবাই জানে।
আদ্রিয়ান ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে টেবিলে বসলো। বাকিরাও সবাই একে একে বসলো। আদ্র টেবিল থেকে একটা খেজুর হাতে মুঠ করে নিয়ে নিজের ছোট্ট চার পাঁচটা দাঁত দিয়ে কামড় দেয়ার চেষ্টা করছে। আজান দিতেই সবাই খেজুর হাতে নিলো খেতে। মিষ্টি রোজা না রাখলেও রোদ আগে মেয়ের মুখে খেজুর তুলে দিলো। আদ্র বুঝে গিয়েছে এই খেজুর ও খেতে পারবে না তাই মুঠ করা হাতটা বাবার মুখের সামনে দিলো। আদ্রিয়ান ছেলের হাতের খেজুরটাই মুখ খুলে খেয়ে নিলো পরপর হাত দিয়ে ছোট্ট টুকরো নরম করে ছেলের মুখে দিলো। আদ্র মুখ নাড়তে লাগলো এমন করে যেন সে অনেক কিছু খাচ্ছে। পাশে আরিয়ানের হাতে তরমুজ দেখে গেল ওর মাথা খারাপ হয়ে। মূলত লাল রং টা ওকে আকর্ষণ করেছে। হাত বাড়িয়ে ডাকতে লাগলো,
— তাআআত্তু।
আরিয়ান হেসে এক পিস ওর হাতে দিতেই দাঁত দিয়ে কামড় দিতে লাগলো। খেতে তো পারলোই না উল্টো জামা নষ্ট করে ফেললো। আদ্রিয়ান ওকে বা হাত দিয়ে ধরে ডান হাত দিয়ে খেতে লাগলো। রোদ ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমার কাছে দিন। ঠিক মতো করে খান।
— সমস্যা নেই। তুমি খাও।
বলে ডিম চপের ভিতর থেকে সাদা অংশ একটু ছেলের মুখে দিলো আদ্রিয়ান। আদ্র চুপচাপ খেতে লাগলো। রোদও মিষ্টিকে খাওয়াতে লাগলো। টেবিলে আলোচনা হলো কাল বের হবে শপিং এ। একদিনে সব শপিং সম্ভব নয় তাই আগে বাচ্চাদের এরপর বড়দের শপিং করা হবে। শশুড় বাড়ী ও শপিং পাঠাতে হবে। আজ রাতে আরিয়ানরা বের হবে শপিং এ। সাথে ওর মা ও যাবে।
_______________
রুমে রোদ আদ্রকে চেঞ্জ করাতে লাগলো। আদ্রও আওয়াজ করে ডাকতে লাগলো,
— আমম্মা আমমা।
রোদও ওকে নকল করে ডাকতে লাগলো,
— আমম্মা আমমা।
আদ্র যেন খুশি হয়ে গেল। খুশি হয়ে দিলো ধুম করে রোদের চেহারায় মারলো। রোদ মুখ কুচকে তাকিয়ে বললো,
— তুই আমার ছেলেতো? মাকে কেউ মারে?
আদ্র ঠোঁট উল্টে হাত বাড়িয়ে ডাকলো,
— আমমা।
রোদ কি আর করবে কোলে তুলে নিলো। মিষ্টি রুমে ডুকেই মায়ের কাছে ঘেঁষে বসলো। রোদ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— কি হয়েছে মা?
— ভাইয়ের সাথে খেলবো।
বলে আদ্রর আঙুল ধরতেই আদ্র গাল নেড়ে আওয়াজ করলো,
— আপাপ্পা আপ্পা।
মিষ্টি খুশি হয়ে ভাইয়ের আঙুলে চুমু খেয়ে ওকে নিয়ে গেল আলিফ আর আরিয়ানার কাছে। রোদ বই খুলে হেলান দিয়ে বসলো। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে রোদের দিকে তাকিয়ে ডাকলো,
— রোদ?
বইতে মুখ গুজেই রোদ উত্তর দিলো,
— হুম।
— বিজি?
— বলুন।
— না থাক পড়ো।
বলে বিছানায় রোদের হাঁটুতে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। রোদ আস্তে করে বইটা পাশে রেখে হাত বাড়িতে দিলো আদ্রিয়ানের চুলের ভাজে। আস্তে আস্তে টেনে দিলো। আদ্রিয়ান আরাম পেয়ে একটু ” উমম” আওয়াজ করে আবারও চোখ বুজে রইলো। রোদ দেখলো আদ্রিয়ানকে। ক্লান্ত হয় না এই লোক। এতসব কাজ করে আবার বাসায় এসেও শান্তি নেই। বাচ্চাদের নিয়ে থাকবে, রোদকে নিয়ে চিন্তা করবে। রোদ যদি ঔষধ বের করে না দেয় তাহলে সে ঔষধ ও খাবে না অথচ রোদের কোন মেডিসিন থাকলে মুখে তুলে খাওয়াবে। ভাবতেই রোদ চুমু খেল আদ্রিয়ানের কপালে।
এশারের আজান দিতেই রোদ আস্তে করে ডাকলো,
— নামাজে যাবেন না?
আদ্রিয়ান রোদের পেটে মুখ গুজে দিয়ে অস্পষ্ট আওয়াজ করে বললো,
— হুমমম।
— উঠুন। আমি কফি নিয়ে আসি। নাহলে আবার মাথা ব্যাথা করবে।
— এভাবেই থাকি না।
— বেশি খারাপ লাগছে?
আদ্রিয়ান কিছু বললো না। একটু পর আস্তে করে উঠলো। রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— বাচ্চারা কোথায়?
— খেলছে আপিপুর রুমে।
— হু।
বলে আদ্রিয়ান গেল ওযু করতে। রোদ ঝটপট করে কফি নিয়ে এলো। টেবিলে রেখে বসতেই গুটি গুটি পায়ে আদ্র ঢুলতে ঢুলতে দৌড়ে এলো। এই বুঝি পড়ে যাবে যাবে ভাব। রোদ তারাতাড়ি বললো,
— মা আস্তে আসো।
আদ্র কি আর শুনে? মায়ের পায়ের কাছে এসে কোলে হাত রেখে ডাকলো,
— আমম্মা
রোদ হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিতেই মায়ের বুকে নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখলো আদ্র। আবার একটু করে চোখ খুলে মাকে দেখলো। রোদ হেসে নিজের ওরনা দিয়ে ছেলের মাথা ঢেকে দিলো। আদ্রিয়ান বের হতেই রোদ বললো,
— কফি টেবিলে।
আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো। এখন আর নিজেদের প্রায়োজন ব্যাক্ত করতে হয় না। নিজেই বুঝে যায় ভালোবাসার মানুষের কখন কি প্রয়োজন।
একটু পরই আরিয়ানা রুমে ডুকে ডাকলো,
— চাচিম্মু।
আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
— কি হয়েছে আম্মু?
— আদ্র কোথায়?
আদ্রিয়ান ছেলের দিকে তাকালো যে আপাতত মায়ের বুকে ঘাপটি মেরে মুখ লুকিয়ে আছে। কোন ভাবে যদি আরিয়ানা ওকে পায় তাহলেই গলা ফাটিয়ে কাঁদবে এই ছেলে। আদ্রিয়ান আরিয়ানার গালে চুমু খেয়ে বললো,
— ও মনে হচ্ছে বাইরে আম্মু।
আরিয়ানা বিশ্বাস করে চলে গেল। রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
— শুধু শুধু মিথ্যা বললেন। পুরো বাড়ী ঘুরবে এখন আরিয়ানা।
আদ্রিয়ান কফিতে এক চুমুক দিয়ে বললো,
— মিথ্যা না বললে তুমি এখন শান্তিতে বসতে পারতা?
বলেই আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে রোদের ওরনা সরিয়ে দিলো ওমনি আদ্র একটু মুখ উঁচু করে বাবাকে দেখলো আবারও মায়ের বুকে মুখ গুজে রইলো। আদ্রিয়ান ডেকে উঠলো,
— বাবা আসবে?
আদ্র মুখ তুলে বললো,
— আবাব্বা বাবব্বাহ।
বলে হাত বাড়িয়ে দিলো মানে কোলে নাও। আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।
______________
রাতের দিকে আদ্রর শরীর কিছুটা গরম হয়ে গেল। রোদ মিষ্টিকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে খেয়াল করলো মিষ্টিরও শরীর গরম হয়ে আছে। জ্বর জ্বর ভাব আছে। দুষ্ট চঞ্চল আদ্রও একটু নেতিয়ে আছে। রোদের বুকটা মোচড়ে উঠলো। আদ্রিয়ান এখনও আসে নি। ঘুমন্ত মিষ্টির জ্বর যেন হুট করেই বেড়ে গেলো। বাসায় ও কেউ নেই। জারবা ও তো শেষ মেষ শপিং এ গেল। শশুড়কে ডেকেই বা কি হবে?
রোদ তারাতাড়ি আদ্রিয়ানকে কল করে বাসায় আসতে বললো। পরপর রোদ পানি এনে মিষ্টির মাথায় পানি দিতে লাগলো। ঘুমের ঘোরেই কিছুটা কেপে যাচ্ছে মিষ্টি। এমন সময় আদ্রও দুর্বল আওয়াজ করে কেঁদে উঠলো। রোদ তারাতাড়ি ওকে বুকে জড়িয়ে নিলো। মায়ের বুকে মুখ গুজে অল্প স্বরে কেঁদে যাচ্ছে আদ্র। রোদ যেন পাগল হয়ে যাচ্ছে। এই ছেলে-মেয়ের মধ্যেই ওর প্রাণটা থাকে।
আদ্রিয়ান হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো,
— কি হয়েছে?
বলে সামনে তাকাতেই আঁতকে উঠলো। রোদ আদ্রকে বুকে নিয়ে মিষ্টির মাথায় পানি দিচ্ছে। আদ্রিয়ানকে দেখেই বললো,
— আদ্রকে একটু নিন। ওর ও শরীর গরম হয়ে আছে।
কথা গুলো যেন গলায় আটকে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান তারাতাড়ি ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। আদ্র কেঁপে কেঁপে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান দেখলো ছেলের ও জ্বর জ্বর ভাব। রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে নিয়ে গোসল করিয়ে দিলো। চুল মুছে মেডিসিন খায়িয়ে শুয়িয়ে দেয়ার আধ ঘন্টা পরই ঘেমে উঠলো মিষ্টি। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো রোদ আদ্রিয়ান। মিষ্টিকে মুছিয়ে আবার ঘুম পাড়াতে লাগলো রোদ। আদ্রর শরীর ততক্ষণে আরো গরম হয়ে উঠলো। বাবার বুকেই জ্বরে কাঁদতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওকে বুকে নিয়েই ঘামতে লাগলো। এর আগেও জ্বর এসেছিলো আদ্রর যা ছিলো ভাইরাস জ্বর। ডক্টর বলেছে ওর ছয় বছর বয়স পর্যন্ত এই জ্বর হুট হাট আসবে তাই মেডিসিন যেন উপস্থিত রাখে সবসময়। মুহূর্তেই নেতিয়ে গেল আদ্র। সবসময়ের চঞ্চল প্রাণটা একদম শান্ত হয়ে গেল। আদ্রিয়ান ব্যাস্ত হয়ে ডাকতে লাগলো,
— রোদ? এই রোদ? আদ্রকে দেখতো। ও চুপ করে গিয়েছে তো।
রোদ হুরতার করে উঠে এলো। ছেলের দিকে তাকাতেই বুক ধক করে উঠলো। তারাতাড়ি আদ্রিয়ানের কাছ থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে বললো,
— ড্রয়ার থেকে ওর মেডিসিন দিন আর ফ্রিজে ডুস রাখা আছে নিয়ে আসুন।
আদ্রিয়ান ঝটপট তাই করলো। ডুস দিতেই আদ্র কান্না জুড়ে দিলো। আদ্রিয়ান নিজেই ছটফট করছে। বারবার বলছে,
— হসপিটাল চলো রোদ। ওর শরীর বেশি খারাপ।
পরপরই আবার ছেলেকে ডাকতে লাগলো,
— আব্বা? এই বাবা? এই যে আমি তাকাও। এই বাবা তাকাও৷ বাবার কাছে আসবে না আমার জান?
রোদ নিজেকে সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে তার মধ্যে আদ্রিয়ান উত্তেজিত হচ্ছে যা সমস্যা করতে পারে। তাই কোন মতে নিজেকে সামলে বললো,
— ডুস তো দিয়েছি। আধ ঘন্টা অপেক্ষা করতে দিন।
বলে ছেলের ছোট্ট আঙুল গুলোকে চুমু খেল রোদ সাথে সাথেই গাল গড়িয়ে অঝোরে পানি পরতে লাগলো। কিছুক্ষন পরই আদ্রও ঘেমে উঠলো। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আটকে রাখা শ্বাস ফেললো রোদ আদ্রিয়ান। ছেলেকে চেঞ্জ করিয়ে শুয়িয়ে ডাকলো রোদ,
— মা তাকাও। এই যে আমি। আমার বাবা খাবে না?
দুর্বল আদ্র অল্প আওয়াজে ডাকলো,
— আমম্মা।
এতক্ষণের আটকে রাখা কান্না জুড়ে দিলো রোদ। আদ্রিয়ান ওকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। বিগত ২ ঘন্টা কিভাবে পার করেছে শুধু ওরা জানে। ছেলেকে বুকে নিয়ে ফিডিং করালো রোদ।
__________
শশুড় বাড়ী থেকে প্রতিবারই ঈদে আদ্রিয়ানের পুরো পরিবারের জন্য শপিং দেয়া হয় সাথে আদ্রিয়ান, রোদ, সাবা আর বাচ্চাদের জন্য আলাদা টাকাও দেয়া হয়। সাবা নিজের বাবা মাকে তেমন একটা পায় না। এ নিয়ে আফসোস নেই। রোদের মা, বাবা নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করে ওকে। আদ্রিয়ান ও শশুড় বাড়ীতে শপিং পাঠালো। বউ বাচ্চা নিয়ে শপিং করলো। একদিন শশুড় বাড়ী ইফতারও করেছে। তাদের ও দাওয়াত করা হয়েছিলো। এভাবেই কেটে গেল পবিত্র রমজান মাস।
___________
আজ ঈদ। সাদা পয়জামা, পাঞ্জাবি পরেছে আদ্রিয়ান। আদ্রও বাবার মতো সেম ডিজাইনের পড়েছে। মিষ্টি ও সাদা ফ্রোক পরেছে। রোদ একটা সাদা জামদানী কাপড়ের গাউন পরেছে। ব্যাস্ত পায়ে রুমে ডুকলো রোদ। এক বাটি ফিরনি আদ্রিয়ানের হাতে দিয়ে বললো,
— খেয়ে যান।
আদ্রিয়ান রোদের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— ঈদ মোবারক সোনা।
— ঈদ মোবারক।
মিষ্টি ও এসে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ঈদ মোবারক।
আদ্রও বাবার কোলে আওয়াজ করলো,
— ইত মমমোত।
ছেলে মেয়েকে চুমু খেল আদ্রিয়ান রোদ।
ঈদের নামাজের আগে মিষ্টি মুখ করা সুন্নত। আদ্রিয়ান আগে রোদকে এক চামচ পরপর মিষ্টি আর আদ্রকেও একটু খায়িয়ে এরপর নিজে খেয়ে মসজিদে গেল। বাসায় এসে সবাইকে সালামি দিলো। বিকেলে রওনা হলো শাশুড় বাড়ী। মজার ব্যাপার হলো ঐ বাড়ী যাওয়া মানেই পকেট খালি। একগাদা শালা শালী আছে ওর কিন্তু খালি পকেট দুই ডাবল ভরে দেয় আবার শশুড় বাড়ীর লোকেরা।
_____________
কেটে গেল ২ বছর। রোদ এখন ডক্টর রোদ। ইন্টারনিং শেষ ওর। আদ্র এখন সারে তিন বছরের। সার্জারি শেষ করে বাইরে এলো রোদ। ওমনিই ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো। আদ্রিয়ানের কোলে আদ্র আর হাত ধরে আছে মিষ্টি। রোদ এগিয়ে এসে মেয়ের কপালে চুমু খেল পরপরই ছেলের কপালেও খেল৷ আদ্রিয়ান রোদের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— অনেক টায়ার্ড?
— দুটো সার্জারি ছিলো।
এরমধ্যেই আদ্র মুখ ফুলিয়ে বললো,
— আম্মু কোলে।
রোদ হাত বাড়িতে কোলে তুলে নিয়ে। আদ্রিয়ান ওকে বললো,
— চলো। সবাই বাসা থেকে রওনা দিয়েছে।
— হুম।
আজ জারবাকে ওর শশুর বাড়ী থেকে আনতে যাবে। ইয়াজ ডক্টর গত বছর হলেও কিছু সমস্যার কারণে বিয়ে পিছিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডাকলো,
— ডক্টর রুদ্রিতা।
রোদ ফিরে তাকালো। একটু হেসে বললো,
— জ্বি স্যার।
— বেবিটা কিউট। কোন পেসেন্টের?
রোদ হেসে বললো,
— আমার ছেলে।
পরপরই ইশারা করে বললো,
— ওটা বড় মেয়ে আর হাসবেন্ড।
বিস্ফোরিত চোখ করে তাকালো সিনিয়র ডক্টর রাফাত। মনে মনে সে রোদকে পছন্দ করতো কখনো বলা হয় নি তাই এভাবে ছ্যাঁকা খাবে বেচারা ভাবতে পারে নি। এই রোদের নাকি দুই দুটো বাচ্চা। রোদ বিদায় নিয়ে পা বাড়ালো আদ্রিয়ানের হাত ধরে। পেছন থেকে একটু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে ডক্টর রাফাত আওরালো,
— ভালো থাকুন ডক্টর রুদ্রিতা। সুন্দর হোক আপনার জীবন। ভালোবাসাগুলো ধরা দিক ভিন্ন সকল রুপে আপনার আঙ্গিনায়।
[ একদম অফিশিয়ালি শেষ হলো “ভালোবাসার ভিন্ন রুপ”। এর আর কোন পর্ব আসবে না। এই তিনটা সারপ্রাইজ দেয়ার কারণ হলো গল্পটা ঝটপট শেষ করে দিয়েছিলাম। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতদিন পাশে থাকার জন্য। আশা করি নতুন গল্পেও এমন পাশে পাব আপনাদের। ধন্যবাদ ]