#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৮
৩৭.
ভার্সিটিতে সবাই গোল হয়ে বসে আছে।নাইম অস্থির হয়ে হাত মোচড়ামুচড়ি করছে।উশাকে ওর বাবা মা জোর করছে বিয়ে করার জন্য।উশা চুপচাপ বসে আছে।নাইম স’হ্য করতে না পেরে নীরবতা ভেঙে বলে,,,
—“আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না উশা”
উশার চোখে পানি।নাইমের দিকে তাকাতেই নাইমের বুকটা ধক করে উঠলো।প্রেয়সীর চোখের পানি কেই বা সহ্য করতে পারে।
—“উশা চল আজকেই আমরা বিয়ে করে নেই দেখবি বিয়ে করলে সবাই মেনে নিবে প্লিজ উশা”
নাইমের কন্ঠে অসহায়ত্বের চাপ।উশা চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পরে।দু’হাত দিয়ে মুছে নেয়।অর্ষা নাইম উশার দিকে তাকিয়ে হাসে।দুজন যে দুজনকে বড্ড ভালোবাসে তা বুঝতে পারছে অর্ষা।অর্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,
—“তোদের এই শোকসভা ভালো লাগছে না চল চল উশার বিয়ের জন্য পার্টি দেই”
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।রুশান রেগে যায়।সিরিয়াস মুহুর্তে কেউ ফাজলামি করে।রুশান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,
—“তোর কি কমনসেন্সের অভাব অর্ষা এখানে একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি আর তুই ফাজলামি করছিস”
অর্ষা বিরক্ত হয়।নাক মুখ কুচকে তাকায় সবার দিকে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে উশার কাছে গিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে বলে,,,
—“ভালোবাসিস নাইমকে”
উশা মাথা নাড়ায়।অর্ষা নাইমের দিকে তাকায়।ছেলেটার চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।
—“আজকে এই মুহুর্তে তোদের বিয়ে দেবো আমি”
—“কি বলছিস তুই অর্ষা আব্বু আম্মু মানবে না”
—“উশা নাইম রিজেক্ট করার মতো ছেলে না।ভালোবাসে তোকে,পড়ালেখায় ভালো,ফ্যামিলি ভালো তো সমস্যাটা কোথায়?”
—“আমরা সমবয়সী অর্ষা এটাই সমস্যা”
অর্ষা উশার কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,,
—“এটা কোনো সমস্যা না উশা।সব কিছুর উপরে তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস।এর উপরে কোনো সত্যি নেই”
নাইম উশার কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলে,,,
—“তুই আমাকে ভালোবাসলে আজকেই বিয়ে করবি উশা”
উশা চুপ করে আছে।কি বলবে ও,একদিকে ভালোবাসা আরেকদিকে পরিবার।নাইম এবার রেগে যায়।উশার কাঁধ ঝাকিয়ে বলে,,,,
—“কি সমস্যা তোর বলছিস না কেনো?তার মানে তুই আমায় ভালোবাসিস না ওকে ফাইন।আর কখনো ভালোবাসার কথা বলবো না তোকে”
নাইম উশাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে ফুঁসছে।মেজাজ খারাপ হচ্ছে ভীষণ নাইমের।উশা কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,
—“আমি তোকে ভালোবাসি নাইম কিন্তু বিয়ে!বিয়ে জিনিসটা সহজ না তোর আব্বু আম্মু মেনে না নিলে কি করবি”
—“আমাকে ভরসা করতে পারিস।আম্মু জানে শুধু বাবাকে বলতে হবে।এন্ড আই আম সিয়র তারা তাদের একমাত্র ছেলের জন্য তোকে মেনে নিবে।এবার বল বিয়ে করবি”
উশা কান্না থামিয়ে মাথা নেড়ে হুম বলে।সবাই খুশি হয়।সব কটা মিলে কাজী অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।মুহিব আর অর্না গিয়েছে বিয়ের টুকিটাকি জিনিস কিনতে।কাজী অফিসের সামনে আসতেই ইরহামকে দেখে সবাই চমকে ওঠে।ইরহাম গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষাদের দেখে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে অর্ষার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসি দেয়।
অর্ষা বিরক্ত হয় এই সময়ে এইখানে ইরহামকে দেখে।ইরহামকে সে তিন চারদিন যাবত ইগনোর করছে।ইগনোর করার কারণ সেদিন তাকে হুট করে জড়িয়ে ধরা আর ইরহামের অদ্ভুত ব্যবহার যা অর্ষা মেনে নিতে পারছে না।রুশান ইরহামকে দেখে মুখ কালো করে ফেলে।সেদিনের পর রুশান সব ক্লাসই করেছে ইরহামের।
ইরহাম পকেটে হাত গুঁজে হিরোর মতো করে অর্ষার সামনে আসে।রুশানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“তোমরা ভেতরে যাও আমি অর্ষাকে নিয়ে আসছি”
উশা,নাইম,রুশান একবার অর্ষার দিকে তাকিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।ওরা যেতেই ইরহাম অর্ষার দিকে ঝুঁকে ওর মুখ বরাবর মুখ নিয়ে বলে,,,
—“মিসেস চৌধুরী আপনি কেনো আমাকে এই তিনদিন ইগনোর করেছেন তা যদি কষ্ট করে বলতেন”
—“ইচ্ছে হয়েছে করেছি”
অর্ষার একরোখা জবাব।ইরহামের এতে রাগ হলো না বরং ও হাসলো।অর্ষা ইরহামকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়।ইরহাম অর্ষার হাত ধরে ফেলে।অর্ষা হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“স্যার হাতটা ছাড়ুন ভেতরে যাবো আমি।”
—“কারণটা না বলা পর্যন্ত ভেতরে যেতে পারবে না”
—“বললাম তো ইচ্ছা করেছিলো তাই।আপনি এখানে কেনো বলুন তো”
—“আমার শালার বিয়ে তো আমি আসবো তাই না মিসেস চৌধুরী”
ইরহামের সাদামাঠা উত্তর।অর্ষা হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে হাত।সে যে নিহানার ব্যাপারটা নিয়ে এখনো রেগে আছে।কিন্তু কেনো রেগে আছে জানে না অর্ষা।কিন্তু রাগ লাগছে ইরহামের উপর।বউ থাকতেও কেনো অন্য মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করবে।
ইরহাম অর্ষার মুখের উপর পরে থাকা ছোটছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল,,,,,
—“কি হলো মিসেস চৌধুরী কোথায় হারালে তুমি?”
অর্ষা ঘোর কাটে।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।লোকটার কদিনের ব্যবহার মানতে পারছে না অর্ষা।ইরহাম মৃদু হেসে অর্ষার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে কাজী অফিসের ভেতরে ঢুকে যায়।অর্ষা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে ইরহামকে।এ সে কোন ইরহামকে দেখছে।
উশা আর নাইমের বিয়েটা ভালোভাবে হয়ে যায়।সবাই মিলে রওনা হয়েছে নাইমদের বাসার উদ্দেশ্যে।নাইম উশা বাইকে গিয়েছে।রুশান একা গিয়েছে।ইরহাম অর্ষাকে টেনে গাড়িতে বসিয়েছে।অর্ষা রেগে বলে,,,
—“মিস্টার চৌধুরী সমস্যা টা কি আপনার বলুন তো”
ইরহাম মুচকি হেসে অর্ষার দিকে ঝুঁকে বলল,,,,
—“আমার সমস্যা টা হলো আমার বউ”
ইরহাম কথাটা বলেই সরে আসলো।অর্ষা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ইরহামের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ইরহাম অর্ষাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,
—“হা করে তাকিয়ে থেকো না মিসেস চৌধুরী প্রেমে পরে যাবে তো”
ইরহামের কথায় অর্ষা মুখ ভেংচি দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।ইরহাম মৃদু হেসে মনে মনে বলে,,,,
—❝তোমার প্রেমে পুরোপুরি ডুবে গিয়েছি প্রেয়সী❞
৩৮.
অর্ষা ইরহাম নাইমদের বাড়ির সামনে আসতেই দেখে ওরা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষা গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে,,,
—“কিরে তোরা বাইরে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
—“তোর বান্ধবী তো ভয়ে যেতেই চাইছে না অর্ষা”
অর্ষা উশার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।উশা বোকা বোকা হাসি দিলো।অর্ষা উশাকে নিয়ে জোর করে বাড়িতে ঢুকলো।বাড়িতে তখন নাইমের বাবা জাফর সাহেব আর নাইমের মা নুরি বেগম বসে গল্প করছিলেন।সবাইকে বাড়িতে একসাথে দেখে বেশ খুশি হন দুজন।সবাইকে আগে থেকেই চেনে নুরি বেগম।অর্ষা আর উশাকে ভালোবাসেন তিনি অনেক।
—“আরে অর্ষা উশা মা যে কেমন আছো অর্নাও যে ভালো আছো মা”
অর্ষা আলতো হেসে জবাব দেয়,,,,
—“জি আন্টি ফাটাফাটি আছি আমি”
উশা ভয়ে অর্ষার হাত চেপে ধরে।অর্নাও হেসে কথা বলে।নুরি বেগম সবাইকে বসতে বলে।ইরহাম সবার পেছনে বাড়িতে প্রবেশ।ইরহামকে দেখে জাফর সাহেব আর নুরি বেগম দাঁড়িয়ে যায়।তারা খুব ভালো করেই চিনে ইরহামকে এটাও জানে ইরহামের সাথে অর্ষার বিয়ের কথাটা।
—“আসসালামু আলাইকুম স্যার আপনি হঠাৎ”
ইরহাম হেসে জবাব দেয়,,,,”ওয়ালাইকুম আসসালাম আন্টি আপনি আমাকে ইরহাম বলেই ডাকতে পারেন।”
জাফর সাহেব সবাইকে দেখে বলেন,,,
—“তা সবাই হঠাৎ এখানে যে এমনিতেও তো বলে কাউকে আনা যায় না আজকে যে অর্ষা মামনি জামাই বাবাকে নিয়ে”
অর্ষা লজ্জায় পরে যায়।ইরহাম সবাইকে শান্ত হয়ে বসতে বলে।এরপর বলে,,,
—“আন্টি আসলে নাইম আর উশা একে অপরকে ভালোবাসে”
—“হ্যা বাবা আমরা জানি সেই বিষয়ে”
—“জি আন্টি কিন্তু কিছুদিন ধরে উশার বাবা মা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।আপনার পাগল ছেলে জানতে পেরে আজকেই উশাকে বিয়ে করছে”
জাফর সাহেবের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়।নুরি বেগম বেশ খুশি হয়েছেন তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উশাকে তার আগে থেকেই ভীষন পছন্দ।জাফর সাহেবের মুখের ভঙ্গি দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়।তবে ইরহাম স্বাভাবিক।জাফর সাহেব সবাইকে ভয়ে পেতে দেখে হু হা করে হেসে ওঠেন।সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।উশা তো ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।
—“ওরে বলদ ছেলে আমার এই কথাটা বলতে ইরহাম বাবাকে নিয়ে এসেছে।নাইম তুই তোর বাবাকে চিনিস না”
নাইম এসে জড়িয়ে ধরে ওর বাবাকে।ওর বিশ্বাস ছিলো মেনে নিবে।উশা হাফ ছেড়ে বাঁচে।ইরহাম হাসে।জাফর সাহেব উশার বাবাকে ডাকে।তারা প্রথমে অমত দিলেও পরে মেনে নেয় উশা নাইমকে।সব মিলিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে যায়।অর্ষা জেদ করে এবার রুশানের সাথেই এসেছে।
#চলবে