ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-১৯

0
434

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৯

৩৯.
ইয়াদ ছাদে বসে আছে।আকাশের দিকে একমনে চেয়ে আছে।অর্ষা!এই মেয়েটাকে সে প্রথম দেখেছিল রাস্তায়।তিন বছর আগে।দিনটা এখনো মনে আছে ইয়াদের।ভুলতে পারবে না সেদিন।রাজশাহী থেকে এসেছিলো দুদিনের জন্য।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলো সেদিন।

চায়ের দোকানে তিন বন্ধু মিলে গল্প করছিলো আর চা খাচ্ছিলো।তখনই সামনের বাড়ি থেকে একটা ছোটখাটো মেয়ে বের হয়।
পরনে তার গোলাপি রঙের গাউন।চুলগুলো ছাড়া।সাথে একটা ছেলেও আছে।দুজন হাসতে হাসতে কথা বলছিলো।ইয়াদ একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে ছিলো সেই হাসির পানে।

রিকশা আসলেই দুজন উঠে চলে যায়।ওইদিনের পর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো ইয়াদের।ইয়াদ আবারও সেই বাড়ির সামনে যায় এক নজর মেয়েটাকে দেখার জন্য।কিন্তু সেদিন আর দেখা মেলে না।পাক্কা দুই ঘন্টা বসে ছিলো এক নজর দেখার জন্য মেয়েটাকে।কিন্তু দেখা মেলেনি।

এরপর জানলো মেয়েটার নাম অর্ষা আহমেদ ইনাজ।নামটা শোনার সাথে সাথে বেশ কয়েকবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে নামটা বিড়বিড় করে আওড়ায়।নাম যেমন সুন্দর দেখতেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর অর্ষা।যেই ইয়াদ দুদিন থেকে সময়মতো চলে যায় এবার সে দুদিনের জায়গায় সাতদিন থাকে।

অর্ষাকে দেখার চতুর্থ দিন বার সে অর্ষাকে দেখে।বেলকনিতে বসে সেদিনের ছেলেটার সাথে মারামারি করছিলো।ইয়াদের বেস্টফ্রেন্ড সহ বন্ধুরা সব অবাক হয়েছিলো।যে ছেলে কোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকায় ও না সে একটা মেয়েকে দেখার জন্য দিনের পর দিন বাড়ির সামনে এসে বসে থাকে শুধু একবার দেখার জন্য।

এরপর প্রায়ই সে রাজশাহী থেকে চলে আসতো অর্ষাকে দেখার জন্য।এই এক বছর সেইভাবে আসার সময় পাইনি ইয়াদ।আর এর মাঝেই তার প্রেয়সী অন্যকারো হয়ে গেলো।ইয়াদ রেলিং এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।ভাগ্যে ছিলো না অর্ষা তার,তাই তো পাইনি তাকে এতো ভালোবাসার পরও।

৪০.

ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা।ইরহাম তখনই এসে হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়।অর্ষা কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব কিছু হয়ে যায়।ইরহাম সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালাতে থাকে।অর্ষা হতভম্ব হয়ে বসে আছে।

—“মিস্টার চৌধুরী আপনি বলবেন কেনো আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছেন?”

—“বউকে আনতে হলে কি পারমিশন লাগে নাকি।বউ তো আমার যখন ইচ্ছে তখন নিয়ে আসতে পারি তাই না মিসেস চৌধুরী”

অর্ষা রাগি রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
—“না পারেন না।আমি চাই না আপনি আমায় এভাবে হুটহাট করে ভার্সিটির সামনে থেকে নিয়ে আসেন সবাই কি ভাবে”

—“আমি আমার বউকে আনি অন্য কাউকে না।কে কি ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

ইরহামের স্বভাবিক উত্তর। অর্ষা বিরক্ত হয়।অর্ষা অধৈর্য হয়ে বলে,,,,

—“আপনি কি আমায় ভালোবাসতে শুরু করেছেন মিস্টার চৌধুরী”

—“নাহ”

ইরহামের সাবলীল উত্তর।গাড়ি চালাতে চালাতে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে কথাটা বলল।অর্ষার খারাপ লাগে ইরহামের সোজাসাপ্টা উত্তরে।বুকে চিনচিন ব্যাথা করে।কিছু না ভেবে নাহ বলে দিলো।একটুও খারাপ লাগলো না।অর্ষা ইরহামের সাথে কথা বলবে না পন করলো।জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।ইরহাম নিজের প্রেয়সীর হাবভাব দেখে হাসলো।

সে তো অর্ষাকে অলরেডি ভালোবাসে তাহলে ভালোবাসতে শুরু করার কি আছে।ইরহাম বেশ কিছুক্ষণ পরে একটা লেকের সামনে গাড়ি থামালো।ইরহাম নিঃশব্দে হেসে গাড়ি থেকে বের হলো।গেট খুলে অর্ষাকে কোলে তুলে নিলো।অর্ষা হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে।ইরহাম শক্ত করে ধরে।

ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে লেকের এক কোনায় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসায়।এরপর নিজে অর্ষার পাশে বসে।অর্ষা কথা না বলে নিশ্চুপ হয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে থাকে।দুপুর টাইম হওয়ায় বেশি কেউ নেই।দুই একটা কাপল ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।ইরহাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ষার পানে।প্রেয়সীকে দেখার তৃষ্ণা মনে হয় এ জীবনে কাটানো সম্ভব নয়।

৩০মিনিট যাবত বসে আছে।অর্ষা এবার অধৈর্য হয়ে যায়।বিরক্তিতে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করে।ইরহাম অর্ষাকে দেখার ঘোরে ছিলো অর্ষা উঠে যেতেই ঘোর ভাঙে।অর্ষা হাঁটতে থাকে।ইরহাম দৌড়ে এসে অর্ষার সামনে দাঁড়ায়।অর্ষার মেজাজ তো সেই লেভেলের খারাপ হয়ে যায়।

—“সমস্যাটা কি আপনার বলুন তো আধা ঘন্টা যাবত বসিয়ে রেখেছেন এখানে”

—“আমার সমস্যাটা তুৃমি”

—“আমি কি করে আপনার সমস্যা হই বলুন তো”

ইরহাম হাসে।অর্ষার দিকে নিচু হয়ে কিছুটা ঝুঁকে।অর্ষা দু কদম পিছনে যায়।ইরহাম তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে।অর্ষা আরো একবার ইরহামের উপর ক্রাশ নামক বাশ খায়।লোকটা এতো সুন্দর কিভাবে অর্ষা তা ভেবে পায় না।তার বর তবুও ভালোবাসতে কোথাও বাঁধা লাগে।ইরহাম কাউকে ভালোবাসে কথাটা মনে করতেই অর্ষার ছোট হৃদয় পুরে ছাড়খার হয়ে যায়।

—“তুমিই আমার সমস্যা দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।তোমার ওই মাতাল করা চোখ আমায় ভীষণ ভাবে মাতাল করে তুলছে।এর কারণ কি বলতে পারো”

অর্ষা হা করে তাকিয়ে আছে।কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছে।ইরহাম হেসে অর্ষার কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।অর্ষা কেঁপে উঠলো।চোখ বুঝে ফেললো।অর্ষা চোখ খুলে তাকায় ইরহাম তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যে দৃষ্টির গভীরতা বোঝার মতো ক্ষমতা অর্ষার নেই।

অর্ষা আপনমনে বিড়বিড় করে বলে,,,

—“আপনার এমন উদ্ভট কাজ আমার মাথায় ঢুকে না কিন্তু আমি যে দিনদিন আপনার উপর ভীষণ ভাবে দুর্বল হয়ে পরছি ইরহাম।”

ইরহাম কোথা থেকে একটা ফুল এনে অর্ষার কানে গুঁজে দেয়।অর্ষা অবাক হয়ে ইরহামকে দেখতে থাকে।ইরহাম অর্ষার গাল টেনে বলে,,,

—“এই ফুলটার মতো তুমিও আমার কাছে স্নিগ্ধ প্রেয়সী”

কথাটা বলেই ইরহাম হাঁটা ধরে।অর্ষা ও ইরহামের পিছু পিছু আসতে আসতে বলে,,,

—“এটা কি ছিলো মিস্টার চৌধুরী”

—“সামনে এর থেকেও ভয়ংকর কিছু হবে তোমার সাথে”

ইরহাম বাঁকা হেসে কথাটা বলে।অর্ষার মাথার চার হাত উপর দিয়ে ইরহামের কার্যকলাপ যাচ্ছে।মানুষটা এমন অদ্ভুত কেনো বুঝে উঠতে পারছে না অর্ষা।অন্যকাউকে ভালোবাসলে তার সাথে এমন করছে কেনো?সে তো নিজেকে এটার জন্যই গুটিয়ে রেখেছে ইরহামের কাছ থেকে।নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে চায় না।

ভালোবাসা না হয়তো ভালোলাগা।এটা যে ইরহামের কাজো ভালোবাসায় রূপান্তর হচ্ছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে অর্ষা।ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে ফুলের দোকানে আসে।সেখান থেকে ৫ টা গোলাপ কিনে নেয়।অর্ষা ভাবে হয়তো তাকে দিবে কিন্তু ইরহাম দেয় না।

অর্ষার মন খারাপ হয়।ফুলগুলো তাকে দিয়ে পছন্দ করালো আবার তাকে দিলো না।অর্ষা বেহায়ার মতো প্রশ্ন করে বসলো,,,

—“ফুলগুলো কাকে দিবেন মিস্টার চৌধুরী”

ইরহাম মুচকি হেসে বলে,,,”দেবো আমার ভালোবাসার একজনকে”

অর্ষা ছোট করে ওহ বলে।অর্ষার মুখটা শুকিয়ে যায়।ইরহাম অর্ষার আড়ালে হাসে।বাড়ি পৌছে দিয়ে চলে যায় ইরহাম।তখনও ফুলগুলো দেয়নি সে অর্ষাকে।অর্ষা ভেবেছিলো বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার সময় হয়তো দেবে কিন্তু দিলো না।

বাড়িতে ঢুকতেই রুশানকে দেখতে পেলো অর্ষা।আজকে ভার্সিটিতে নাইম উশা আসেনি।মুহিবও অসুস্থ থাকায় আসতে পারেনি।অথৈয়ের কি জেনো হয়েছে তাই আসেনি।রুশান আর সেই গিয়েছিলো।মূলত যাওয়া ইরহামের জন্য আজকে ইরহামের ক্লাস ছিলো।

রুশানকে দেখেই অর্ষার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।এমনিতেও ইরহাম মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে আর এই রুশান তাকে তখন ভার্সিটিতে একা রেখে চলে এসেছে।এখন শান্তিতে বসে টিভি দেখছে আর হাসাহাসি করছে।রুহান আর আরিশা স্কুলে গিয়েছে।বাড়িতে বড়রা আর রুশান।অর্ষা রুশানের কাছে গিয়েই ধুপধাপ করে কয়েকটা কিল থাপ্পড় মেরে দিলো।

আচমকা আক্রমণে রুশান চমকে উঠলো।ভাবতেও পারেনি অর্ষা তাকে এভাবে হুট করে আক্রমন করবে।ক্লাস শেষে তাকে ইরহাম মেসেজ করে বলেছে একা চলে আসতে।

—“তুই আমাকে রেখে কেনো আসলি হ্যা”

অর্ষা চিল্লিয়ে বলে কথাটা।রুশান থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।এমন ব্যবহার করছে কেনো বুঝতে না পারলেও অর্ষা যে ভীষণ রেগে আছে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে রুশান।রুশান অর্ষাকে শান্ত করতে চায়।অর্ষা চিল্লিয়ে বলে,,,

—“সর এই খান থেকে তোর মতো বেস্টফ্রেন্ড লাগবে না আমার”

অর্ষা রাগে ফোসফাস করতে করতে উপরে চলে যায়।রুশান বেচারা না বুঝে হা করে তাকিয়ে থাকে অর্ষার যাওয়ার পানে।অর্ষার হুট করে রাগ করা রুশানের মাথার উপর দিয়ে গেলো।

#চলবে