#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩০
অর্ষা নড়েচড়ে উঠে।ইরহাম মৃদু হাসে।অর্ষার মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়।অর্ষা তখনই চোখ খুলে।চোখ খুলে ইরহামকে নিজের এতো কাছে দেখে ঘাবড়ে ধাক্কা মারে।ইরহাম নিজেকে সামলে নেয়।অর্ষা লাফ দিয়ে উঠে বসে।ইরহামকে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।এই সকালবেলা ইরহামকে নিজের রুমে দেখবে কল্পনাও করেনি অর্ষা।
—“আপনি এখানে কেনো?”
—“আমার বউকে আমি দেখতে এসেছি সমস্যা তোমার?”
অর্ষা চোখ মুখ কুচকে তাকায় ইরহামের দিকে।সোজাসাপ্টা উত্তর এই লোক জীবনেও দেবে না।ঘুরিয়ে পেছিয়ে বলবে।ইরহাম একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।অর্ষা নিজের দিকে তাকায় দ্রুত পাশ থেকে ওড়না নিয়ে জড়িয়ে নেয় শরীরে।ইরহাম বাঁকা হাসে।তার প্রেয়সী বাইরে রণচণ্ডী হলেও তার সামনে লজ্জাবতী।ইরহাম অর্ষাকে আরেকটু জ্বালাতে ওর কাছ ঘেঁষে বসে।
অর্ষা চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পরে।ইরহাম হো হো করে হেসে দেয়।অর্ষা বুঝতে পারে ইরহাম লজ্জা দেওয়ার জন্যই তার সাথে এমন করছে।ইরহামের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ইরহাম হা করে তাকিয়ে থাকে অর্ষার যাওয়ার পানে।
অর্ষা ফ্রেশ হয়ে দরজা সামান্য খুলে উঁকি মারে ইরহাম আছে কিনা তাই দেখার জন্য।ইরহাম নেই ভেবে বের হতেই কেউ হেঁচকা টানে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে অর্ষাকে।অর্ষা ইরহাম একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।ইরহাম অর্ষার কানে কামড় দিয়ে কানে ফিসফিস করে বলে,,,
—“তোমার নেশা আমায় ভয়ংকর ভাবে গ্রাস করে ফেলেছে প্রেয়সী।তোমাকে পাওয়ার কন্য মনটা আকুল হয়ে আছে।”
লজ্জায় অর্ষার গাল লাল হয়ে যায়।চোখ নামিয়ে নেয় ইরহামের থেকে।ইশশ লোকটা এভাবে বলতে পারলো,তাকে লজ্জা দিতে এই লোকটার মুখের ভয়ংকর ভাষাই যথেষ্ট।ইরহাম হাসে অর্ষার অবস্থা দেখে।এরপর টুপ করে অর্ষা লজ্জায় লাল হওয়া গালে কয়েকটা চুমু দেয়।এতে অর্ষার আরো লজ্জা লাগছে।আগে তো তার এতো লজ্জা ছিলো না ইরহাম সামনে আসলে এতো লজ্জা লাগে কেনো তার?
অর্ষা ইরহামের বুকে মুখ লুকায়।ইরহামও প্রেয়সীকে আগলে নেয় নিজের বক্ষে।তার প্রেয়সী যে তার হৃদয়ের গভীরে বসবাস করছে।সে যদি পারতো সময়গুলো থামিয়ে দিতো।সারাজীবন অর্ষাকে নিজের সামনে বসিয়ে নিজের দেখার তৃষ্ণা মেটাতো।
৬৬.
—“ভাইসাহেব আসলে আজকে হুট করে আসা একটা কারণে”
আসিফ আহমেদ বিনয়ের সাথে বলেন,,,
—“জি ভাইসাহেব কি কারণে আসা যদি বলতেন?”
—“আসলে আমরা চাইছি অর্ষা মামনিকে এই শুক্রবারই নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে।বিয়ের তো তিন মাস পার হলো”
আসিফ ও আহিন আহমেদ থমকান।আদরের মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি নিজেদের কাছ থেকে বিদায় দিতে হবে ভাবতেও পারিনি তারা কেউ।কিন্তু এক সময় তো অন্যের বাড়ি পাঠাতেই হবে।হোক সেটা কিছুদিন আগে বা কিছুদিন পর।তার থেকে বড় কথা এখন অর্ষা ইরহামকে ভালোবাসে।সবাই জানে এটা।তাই বিয়েতে না করার প্রয়োজন মনে করছে না।
—“জি ভাই সাহেব আমরা রাজি আছি।আগানী শুক্রবার ১২ জুলাই তাহলে অর্ষা আর ইরহাম বাবার বিয়েটা হচ্ছে”
—“হ্যা হ্যা ভাইসাহেব তাহলে ১২ জুলাই আমরা অর্ষা মামনিকে নিয়ে যাচ্ছি”
সবাই খুশি।গল্প করছে।ইলমা উঠে আরিশাকে খুঁজতে বের হয়।অনেক সময় যাবত পাচ্ছে না সে আরিশাকে।মেয়েটাও তাকে একা ফেলে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে।ইলমা খুঁজতে খুঁজতে একটা রুমের সামনে আসে।আরিশার রুম ভেবে ঢুকে পরে।ঢুকতেই অবাক হয়।অনেক সুন্দর একটা অগোছালো রুম।এতোটা অগোছালো মানুষ হয় বুঝতে পারলো না ইলমা।
রুশানের ছবি দেখে বুঝেছে এটা রুশানের রুম।কিন্তু রুশান নেই রুমে।ইলমা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সব কিছু।একপাশে অর্ষা আর রুশানের ছোটবেলার ছবি।দুজন দুজনের চুল টানছে।যা দেখে ইলমা ফিক করে হেসে দেয়।রুশান বেলকনি থেকে রুমে প্রবেশ করে তখনই।ইলমার হাসি দেখে থমকে যায়।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার প্রিয়তমার হাসি দেখে।
রুশানকে দেখে হাসি বন্ধ হয়ে যায় ইলমার।সেদিনের কথা মনে পরে।তাকে নদীর পাড়ে আসতে বলে সেদিন নিজেই আসেনি রুশান।এতে অনেকটা খারাপ লেগেছিলো ইলমার।কিন্তু কিছুই বলেনি রুশানকে।
—“কেমন আছেন রুশান ভাইয়া?”
রুশান মলিন হেসে বলল,
—“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি তুমি কেমন আছো?”
—“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি সেদিন আসলেন না কেনো রুশান ভাইয়া আমি অনেক সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম”
—“আমি খুবই দুঃখিত ইলমা সেদিনের জন্য।একটা জরুরি কাজ পরায় যেতে পারিনি।তোমাকে অপেক্ষা করানোর জন্য আবারো সরি”
—“সমস্যা নেই ভাইয়া কিন্তু আপনি সেদিন আমায় কেনো ডেকেছিলেন?”
—“এমনিতেই তোমাকে আমার দেওয়া শাড়িটা পরে কয়েকটা ছবি তুলে দেওয়ার জন্য”
ইলমা “ওহ” বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।রুশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও বলতে পারছে না।এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে।ইশ ইলমা যদি আরেকটু বড় হতো তাহলে কি খুব সমস্যা হতো।রুশান বের হয় রুম থেকে।অর্ষার বিয়ে ১২ তারিখ তা শুনেছে সে।খারাপ লাগছে তার ক্রাইম পার্টনার চলে যাবে।কার সাথে রুশান এখন থেকে দুষ্টুমি করবে জ্বালাবে।
৬৭.
বিয়ের আর ৪ দিন বাকি।ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে শপিং করতে বের হবে আজকে।ইরহাম সকাল সকাল রেডি হয়ে অর্ষাদের বাড়ির সামনে চলে আসে।আধা ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও অর্ষার দেখা মিলছে না।ইরহামের মন চাচ্ছে অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে আসতে।ভদ্রতার খাতিরে তাও পারছে না।ইরহাম বুকে হাত গুঁজে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ষা বাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হয়।ইরহামের চোখ আটকে যায়।অর্ষার পরনে বেগুনি রঙের থ্রিপিস।সাথে চুলগুলো ছাড়া,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।আজকে টিপও পরেছে অর্ষা।আর সব সময়ের মতো হাতে তো চুড়ি আছেই।অর্ষার এমন সাধারণ রূপও যেনো ইরহামকে পাগল করে তুলছে।অর্ষা তাড়াতাড়ি করে ইরহামের সামনে এসে জোরপূর্বক হেসে বলে,,,
—“সরি সরি একটু লেট হয়ে গেলো চলুন”
ইরহাম হুম বলে গাড়িতে উঠলো।অর্ষাও গাড়িতে উঠে বসলো।ইরহাম ঘোরের ভেতরেই আছে।অর্ষাও তাকায় তার প্রেমিক পুরুষের পানে।পরনে সাদা শার্ট কালো জিন্স।উফ এতেই মারাত্মক লাগছে।আর বরাবরের মতোই চশমা তো আছেই।ইরহামকে চশমা পরলেই অনেক কিউট লাগে।অর্ষা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহামের দিকে।ইরহাম তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,
—“এভাবে তাকিয়ে থেকো না বউ তোমার এই চাহুনি আমায় বেসামাল করে দেয়”
—“আপনি কি সব সময় এটাই ভাবেন যে কিভাবে আমাকে লজ্জা দেওয়া যায়।”
—“উমম সেইটা না তবে তোমায় লজ্জায় রাঙা হতে দেখতে ভালো লাগে।তাই প্রতি মুহুর্তে তোমাকে লজ্জা দিতে চাই আমি”
অর্ষা বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,,,”অসভ্য লোক”
ইরহাম শুনে ফেলে অর্ষার বিড়বিড় করে বলা বাক্যটাও।ইরহাম সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,,,”তোমারই তো”
অর্ষা আরো লজ্জা পায়।ইরহামকে তার লজ্জা দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু কি করে দেবে সে।এই র্নিলজ্জর তো লজ্জাও নেই।শপিং মলের সামনে এসে দু’জনে নামে।ইরহাম গাড়ি পার্ক করতে যায়।তখনই অর্ষার সাথে দেখা হয় তিশামের।তিশাম অর্ষার কাছে আসতে নিবে তখনই কেউ একজন ফোন করে তাকে।তিশাম ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকে।
ইরহাম এসে অর্ষার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে,,,, “চলো বউজান”
ইরহামের মুখ থেকে বউ ডাকটা শুনলেই অর্ষার মনে হয় বুকের মাঝে কেউ ঢোল পিটাচ্ছে।অর্ষা নিজেও মুচকি হেসে ইরহামের বাহু জড়িয়ে ধরে।এতো সুখ অর্ষার কপালে লেখা ছিলো।ইরহামের মতো মানুষকে সে নিজের জীবনে পেয়েছে।এর থেকে বড় কিছু চাওয়ার নেই তার।
#চলবে…!