#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অধরা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো একজন নার্স তার হাত ধরে আছে। অধরা তার দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই নার্স অধরাকে বলল
— ম্যাম স্যার আপনাকে ডাকছেন। কিছু কথা বলার জন্য।
অধরা একটু শান্ত হয়ে নার্সের কথা মতো রিহানের চেম্বারে গিয়ে বসে রইল। অধরার মনের অবস্থা এমনিতেই ভালো নেই। এতো বড় একটা লড়াই তাকে লড়তে হবে। যার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই। অধরা তার অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করছে। কি হবে তার সন্তানের ভবিষ্যৎ? সে কি তার সন্তানকে বুকে আগলে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে? অধরা আপন মনে কথা গুলো চিন্তা করতে থাকে। এতোটাই চিন্তায় মগ্ন অধরা যে কখন রিহান চেম্বারে এসেছে। সে দিকে তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। রিহান চেম্বারে এসে অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— হ্যালো ম্যাম! আমি আপনাকে বলছি। শুনছেন?
অধরা রিহানের আচমকা কথা বলাতে বেশ অবাক হয়ে যায়। অধরা মৃদু কেঁপে উঠলো। অধরা রিহানের উপস্থিতি দেখে মৃদু হেসে রিহানকে বলল
— সরি আসলে আমি একটুও খেয়াল করিনি যে আপনি এসেছেন।
— আরে ঠিক আছে সমস্যা নেই। আচ্ছা একটা কথা জানতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে। যদি কিছু মনে না করেন তো আমি একটা কথা জানতে চাইবো আপনার কাছে।
রিহানের কথা শুনে অধরা বাঁকা হাসি দিলো। অধরা রিহানকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল
— আমার আবার মন আছে নাকি? যা ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পারেন। সমস্যা নেই।
রিহান একটু ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। “অধরা সব সময় এতোটা গভীর কথা কেনো বলে? তার আসল কারন কি”? রিহান একটু চুপ থেকে বলতে লাগলো অধরাকে
— আপনার স্বামী কি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে?
— না।
— তা হলে সে কি মারা গেছে?
রিহানের কথাটা অধরার কানে পৌচ্ছোতেই অধরা বসা থেকে দুম করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। রিহানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। রাগে পুরে যাচ্ছে অধরার গা। রিহান অয়নকে মৃত কেনো বলল তা ভেবে। অধরা রাগে গজগজ করতে করতে রিহানকে বলল
— শার্ট আপ মিস্টার রিহান চৌধুরী। আপনার সাহস হয় কি করে অয়নকে মৃত বলার? আল্লাহ ওকে আমার আয়ু দিক। আমার স্বামী সুস্থ আছে, ভালো আছেন, আর না উনি আমাকে ত্যাগ করেছেন। আমি নিজে ওকে মুক্তি দিয়ে এসেছি। সে আমার কাছে আমার স্বামী। সে যেমনি হোক আমার কাছে সে মূল্যবান। আপনার সাহস দেখে আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারছি না। আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলার কে আপনি? একটা অপরিচিত লোক হয়ে কেনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে প্রশ্ন করছেন? নিজেকে সংযত করুন মিস্টার রিহান। তা না হলে আপনার এই ব্যবহারের জন্য আপনাকে ভুগতে হবে।
অধরা ভিশন রেগে গিয়ে রিহানের চেম্বার থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। রিহান পিছন থেকে অধরাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে সরি বললেও কোনো লাভ হয়নি। অধরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। রিহান থ মেরে দাড়িয়ে থাকে। সে বুঝতে পারছে না অধরা হঠাৎ করেই এতোটা রেগে গেলো কেনো?অধরা চলে যেতেই রিহান মন খারাপ করে বসে পরলো।
* অয়নের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ইরা। অয়ন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ইরা অয়নের মাথায় নিজের হাত ছোঁয়াতেই ইরার ফোনটা বেজে উঠলো। ইরা ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা বিশেষ জনের নাম্বার ভেসে আছে তার ফোনে। ইরা ফোনটা সাইলেন্ট করতেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মেডিসিনের প্রভাব কাটতেই অয়ন চোখ মেলে দেখে ইরার হাত তার কপাল ছুঁয়ে আছে। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে ইরার হাত নিজের কপাল থেকে বেশ দ্রুত সরিয়ে দেয়। ইরা একটু অবাক হয়ে যায় অয়নের ব্যবহারে। অয়ন বেডে শুয়ে ছিলো। অল্প করে উঠে পিছনের দেয়ালের সাথে হেল দিয়ে বসে অয়ন ইরাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে বলল
— তুমি এখানে কেনো?
— আমি থাকবো না তো কে থাকবে? অয়ন আমি ছাড়া আর কেউ জানে না তুমি থানার বাহিরে আছো।
— হুম তা ঠিক। তবে চলে যেতে পারতে তো।
— এতোটা সার্থপর আমি না অয়ন। যে মানুষটা আমাকে সব সময় সকল বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তার বিপদে আমি পাশে থাকবো না তা কি করে হয়?
— হুম।
ইরার কথা শেষ হতেই অয়ন মৃদু হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। হঠাৎ করে কেউ একজন এসে পিছন থেকে ইরার চুলের মুঠি টেনে ধরে ইরাকে বসা থেকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। ইরা চুল ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো
— প্লিজ! ছেড়ে দাও আমায়। প্লিজ! আমার লাগছে।
ইরার কথার বিপরীতে কেউ একজন ভিশন কর্কশ গলায় বিড়বির করে বলে উঠলো
— এখানে অয়নের সাথে বসে নোংরামি করতে লজ্জা করে না তোর? এতোটা নির্লজ্জ বেহায়া কেনো তুই?
— প্লিজ আমার চুল গুলো ছাড়ো আমার কষ্ট হচ্ছে প্লিজ!
— তাই? ছেড়ে দিবো আগে বল আমার বাড়ি গিয়ে আমার বাবা মা কে থ্রেট করে এসেছিস কেনো? তোর মতো বাজারের মেয়েকে কত জন বিছানায় ডেকে নিজের শরীরের ক্ষুদা মিটিয়েছে তার হিসেব নেই। আর বলিস তোর পেটের বাচ্চাটা আমার? কার না কার পাপ তুই আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছিস? বল কেনো এসব করেছিস তুই?
ইরা ইরফানের কথা গুলো শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ইরফান তাকে রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করলো! কথাটা ইরার কানে না বুকে এসে সজোরে আঘাত করলো। ইরার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। অয়ন বিছানা থেকে বেশ কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালো। ইরফানের সামনে অয়ন দাড়াতেই ইরফান ইরার চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে অয়নের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অয়ন রক্ত বর্ণ চোখ নিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরফান অয়নকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিতে দিতে বলল
— প্লে বয়ের উঠে আসতে এতোক্ষন সময় লাগলো কেনো? আহহহহহ ইরার গায়ে হাত তুলতেই জনাবের চোখ জোড়া লালা হয়ে গেছে। কেনো রে কি সম্পর্ক তোদের দুজনের? অধরা তোকে এই জন্যই ছেড়ে দিয়েছে কারন তোর চরিত্রের………
ইরফানের পুরো কথা বলার সুযোগ অয়ন তাকে দিলো না। সজোরে কসিয়ে দুটো থাপ্পড় মারে ইরফানের গালে।
— ঠাসসসসসসস, ঠাসসসসসসস…! অধরা আমাকে ছেড়েছে সেটা বড় কথা না। আসল কথা হলো এই মেয়েটার চরিত্র নিয়ে কথা বলার সাহস হয় কি করে তোর? ইরার সাথে আমার সম্পর্ক কি জানিস? আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। এটা আজকের না। অধরার সাথে বিয়ের ও অনেক আগে থেকে। আর আমার সামনে ওকে নিয়ে বাজে কথা বললে আমার জ্বলবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
ইরফান গালে হাত দিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তাই নাকি? একটা রাস্তার পতিতা মেয়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়। তার চরিত্র কেমন হবে তা আমার জানা আছে। ফার্দার আমার বাড়ির আশেপাশে যেনো তোকে না দেখি ইরা। কথাটা মাথায় রাখবি।
কথাটা বলেই ইরফান হনহন করে বেরিয়ে যেতে চায়। অয়ন ইরফানের হাত জোড়া দুম করে চেপে ধরে ফেলে। ইরফান থেমে যায়। অয়ন ইরার দিকে তাকিয়ে রাগে ফিসফিসিয়ে বলছে
— একে ভালোবাসতে তুমি। ইরা একে! যার আবদার পূরণ করতে নিজেকে ওর কাছে বিলিয়ে দিয়েছো। যার মন রাখতে নিজেকে রাস্তার মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিয়েছো সেই ইরফান সত্যি সত্যি তোমাকে রাস্তায় নামিয়ে ফেলেছে। আজ তার কাছে তুমি একটা নষ্টা পতিতা মাত্র।
অয়নের কথা শেষ হতেই ইরফান নিজের হাত অয়ন হাত থেকে হেঁচকা টানে ছাড়িয়ে নেয়। অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে ইরফান অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— ইরাকে আমার বাড়ি পাঠানো তবে তোর প্লান। ওকে পরে দেখবো আগে তোর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
* ইরফান অয়নের কলার ধরে একদম দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তাকে। ইরা নিশ্চুপ হয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবতেই লজ্জা লাগছে এই ইরফান তার ভালোবাসার মানুষ। ইরা দৌড়ে পিছন থেকে ইরফানের শার্ট ধরে টানতে লাগলো চিৎকার করে। কিন্তু ইরফান অয়নকে ছাড়ছে না। অয়ন এমনিতেই অসুস্থ তাই ইরফানের সাথে খুব একটা হাতা হাতি করতে পারছে না। ইরা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেতো একটা স্টান্ট মাটিতে পরে আছে। ইরা স্টান্টা হাতে তুলে নিলো। ইরফান অয়নকে এক ধাক্কায় ফ্লোরে ফেলে দিতেই ইরা ইরফানের মাথায় সজোরে আঘাত করে। একটা আঘাতে ইরফান মাটিতে লুটিয়ে পরে। অয়ন ইরার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইরা রাগে গজগজ করতে করতে নিজের চোখ দিয়ে পানি ফেলছে আর চিৎকার করে বলছে
— ভূল করেছি তোর মতো একটা জানোয়ার কে ভালোবেসে। ভেবেছিলাম তুই একটা মানুষ। আমি ভূল ছিলাম। আর জীবনেও তোকে নিজের মুখ দেখাবো না। আমার সরল ভালোবাসা নিয়ে প্রতারনার ফল একদিন পাবি তাই।
* ইরফান মাথা চেপে ধরে আছে। রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে ইরফানের মাথা থেকে। অয়ন ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতেই ইরা স্টান্টা ফেলে দিয়ে দৌড়ে……………………….
#চলবে……………………