ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব-২৫

0
542

#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ২৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অয়ন অধরাকে অবাক করে দিয়ে অধরার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় আলমারির সামনে। অধরা থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। অয়ন অধরার দিকে কর্ণপাত করতেই অয়ন দেখতে পেলো অধরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অয়ন নিজের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি এঁকে দিয়ে আলমারির দরজা খুলে ড্রয়ের থেকে অধরার আড়াল করা সব রিপোর্ট গুলো বের করে অধরার সামনে রাখলো। অধরার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— এই রিপোর্ট গুলো কার হতে পারে তা হয়তো তুমি খুব ভালো করেই জানো অধরা‌। অবাক করার বিষয় হলো কি জানো? আমাদের ভালোবাসার মাঝে এতোটাই দূরত্ব তৈরি হয়েছে যে আমরা একে অপরের থেকে সবটা লুকিয়ে যাচ্ছি। কেনো অধরা? আমাদের মাঝে এতোটা দূরত্ব কিসের? আমরা স্বামী-স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আমরা একে অপরের থেকে বেশ দূরে। আমাদের মাঝে সত্যি ভালোবাসা ছিলো নাকি ছিলো না?

অয়নের কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর অধরার কাছে নেই। অধরা নিজের চোখের জল ফেলছে। বাক শক্তি আজ মনে হচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে সে। অয়ন অধরার নিরবতা কিছুতেই সহ্য করতে পারলো না। অয়ন অধরার দিকে একটু এগিয়ে এসে অধরার থুতনি আলতো করে স্পর্শ করে চোখ জোড়া অয়নের বরাবর নিয়ে আসে। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন এক দৃষ্টিতে অধরার দৃষ্টিতে খুঁজে চলেছে অয়নের জন্য তার মনের মধ্যে থাকা ভালোবাসা। অয়ন কোনো কথা না বলে অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অধরা অয়নের বুকের উপর হাত রেখে শার্টটা খামচে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। অয়ন চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে‌। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— অয়ন আমি তোমার থেকে কখনও কিছু লুকাইনি।‌ এই প্রথম আমি তোমার থেকে এই সত্যিটা লুকিয়েছি। আমি চাইনি তুমি এসব শুনে কষ্ট পাও। আমি চেয়েছি তোমাকে অবহেলা করে দূরে সরে যাবো। তুমি আমাকে ভূলে নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিবে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ব্যর্থ। তোমার থেকে দূরে থাকবো ভেবে আরো কাছে চলে আসি‌। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম সবটা আড়াল করে বাকি দিন গুলো তোমার সাথে হেসে খেলে কাটাবো। কাউকে কিছু বুঝতে দিবো না। নিশ্চুপে বিদায় নিয়ে চলে যাবো। কিন্তু তা আর হলো না। তোমার থেকে কিছুই লুকাতে পারিনি আমি। সবটা না চাইতেও জেনে গেছো তুমি।

অধরা কথা বলা থামিয়ে দিলো। বুক ফেটে চিৎকার আসছে তার। প্রিয়জনের থেকে চিরতরে বিদায় নিতে হবে! কথাটা ভাবতেই বুকের ভিতরটা দুমরে উঠছে। “বিধাতা কেনো আমাদের এক হয়ে খুশিতে বাঁচতে দিতে চায় না? আমার ভাগ্যে কি ভালোবাসা নেই”? আপনমনে বলছে অধরা। অয়ন অধরাকে শক্ত করে জাপটে জড়িয়ে আছে। কান্না ভেজা কন্ঠে অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কিছু হবে না তোমার। আমার ভালোবাসার স্মৃতি এতো সহজে মুছে যাবে যা সম্ভব হবে না। আমার জীবন থেকে কোনো মতেই আমি তোমাকে হারাতে দিবো না। সব কিছুর বিনিময়ে হলেও আমার তোমাকে চাই।

অয়নের শান্তনা অধরার মনের মধ্যে কার অস্থিরতা দূর করতে সক্ষম হলো না। অধরা অয়নের বুকের থেকে মাথাটা তুলে অধরা অয়নের চোখ থেকে নোনা জল মুছে দিলো। অধরা অয়নের চোখ মুছে দিয়ে বলতে লাগলো

— অয়ন কান্না করো না। আমার যতটুকু সময় আমি ততদিন তোমার কাছে থাকবো। বিধাতার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তো আমরা কিছু করতে পারবো না।

অয়ন অধরার ঠোঁটের উপর হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— চুপ করো। আমার জীবন থেকে তোমাকে হারিয়ে যাওয়া চলবে না। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। আর না।

অধরাকে জড়িয়ে ধরে অয়ন অধরার কপালে চুমু খায়। মনের মধ্যে অয়নের ভয় কাজ করছে খুব। অধরাকে হারিয়ে ফেললে কি নিয়ে বাঁচবো আমি? অয়নের মাথা কাজ করছে না। কি করে অধরাকে সুস্থ করবে সে?

* রাত শেষ হতে ভোর হলো। অধরা অয়নের বুকে মাথা রেখে পরম আবেশে ঘুমিয়ে আছে। অয়নের ঘুম ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। অতিরিক্ত চিন্তার কারনে চোখ জোড়ায় ঘুম নেই তার। অয়ন অধরার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। অধরা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। অধরা ঘুমো ঘুমো কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই কখন উঠেছো? আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে। এতো চিন্তা করলে তোমার শরীর অসুস্থ হয়ে পরবে তো। আমি কোথাও যাচ্ছি না তোমায় ছেড়ে। তুমি চিন্তা করো না।

অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— আরে পাগলি টা আমার আমি চিন্তা করছি না। আমার ঘুম হয়ে গেছে তাই উঠে পরেছি।

— হুম।

* অয়ন আরো কিছু সময় অধরার সাথে কাটানোর পরে ফ্রেশ হয়ে নিলো। অধরা ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেছে। অয়ন নিচে এসে নাস্তার টেবিলে বসে পরলো। অধরা তার পাশের টেবিলে বসলো। অধরা নিজে খাবার খাচ্ছে না। আসলে চিন্তায় চিন্তায় অধরার খাবার খাওয়ার ইচ্ছে মরে গেছে। অয়ন অধরাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন সূচক কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো

— অধরা খাবার মুখে দিচ্ছো না কেনো?

— আসলে ইচ্ছে করছে না খেতে। প্লিজ জোর করো না আমায়।‌

— না না। জোর কেনো করবো আমি? আমি কি জোর করতে পারি? আমি তোমাকে আদর করে খায়িয়ে দিবো। এখন লক্ষী মেয়ের মতো হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

অয়নের জোরা জরিতে অধরা বাধ্য হলো খাবার খেতে। অয়ন নিজ হাতে পরম যত্নে অধরাকে খাবার খাইয়ে দিলো। এমনিতেই অধরা প্রেগন্যান্ট। এই সময়ে অধরার বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এই সময়ে যদি অনিয়ম চলে তবে তা অধরা ও আমাদের সন্তানের জন্য ক্ষতির কারন হবে। অয়ন অধরাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন প্রথমে যাবে ডক্টরের কাছে। অধরার চিকিৎসার জন্য। যদি কোনো ভাবে অধরার সমস্যাটার সমাধান করা যায়। হসপিটাল থেকে অয়ন অফিসে যাবে। সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আবার বাড়ি চলে আসবে। যদিও অধরা অয়নকে আজ অফিসে যেতে বরন করেছে। কিন্তু অয়ন অধরাকে কোনো মতে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে রেখে এসেছে। আসলে আজ অয়নের যাওয়াটা জরুরী।

* অয়ন বাড়ি থেকে হসপিটালে চলে আসে। অয়নের একজন পরিচিত ডক্টর আছে। অয়ন ডক্টর আসিফের কাছে অধরার সমস্ত রিপোর্ট গুলো দিলো। আসিফ রিপোর্ট গুলো দেখে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অয়ন আপনি যেই রিপোর্ট গুলো দিয়েছেন তা দেখে স্পষ্ট যে অধরার ব্রেন ধিরে ধিরে নিজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। অধরা ধিরে ধিরে নিজের সব কিছু ভূলে যাচ্ছে। বিশেষ করে অধরা নিজের প্রিয়জনদের ভূলে যাচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়া চলমান হলে অধরা একটা সময় হঠাৎ করে……

— প্লিজ ডক্টর! আমার অধরাকে ঠিক করার একটা ব্যবস্থা করে দিন। প্লিজ! ওর কিছু হলে আমার বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে পরবে। প্লিজ! ডক্টর একটা কথা আসলে আমার মনে হচ্ছে অধরা ঠিক আছে। আমি জানি অধরার অসুস্থ কিন্তু ডক্টর অধরা তো আমাকে ইনফ্যাক্ট সবাইকেই মনে রাখতে পারছে। হয়তো এই রিপোর্টটাই ভূল। এমন হয় তো! আমি কিছু ভূল বললাম ডক্টর? আমরা কি আবার অধরার টেস্ট করিয়ে ক্লিয়ার হতে পারিনা?

— অয়ন আপনি হয়তো নিজের মনকে শান্তনা দিতে এসব বলছেন। রিপোর্ট একদম ঠিক আছে। তবে…….

— তবে অধরাকে সুস্থ করার জন্য কি আর কোনো চেষ্টা করবো না আমি? আমরা হাল ছেড়ে দিবো?

— দেখুন অয়ন আপনি ইমোশনাল হয়ে পরছেন। আমরা দেখছি কিছু করা যায় কিনা। তবে আপনাকে একটা কথা বলে রাখি অধরাকে একটু হ্যাপি রাখুন। ওনাকে ভাবতে দিবেন না যে ওনার মস্তিষ্ক সব কিছু হারিয়ে ফেলছে।

— হুম। কিন্তু একটা কথা ডক্টর আপনি যা করার করুন। মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করুন বা যা ইচ্ছে তাই। আমার শুধু মাত্র আমার স্ত্রী কে সুস্থ চাই। আর কিছু না।

* অয়ন ডক্টরের চেম্বার থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ির সামনে চলে আসে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। চোখ জোড়া ছলছল হয়ে গেছে আমার। অধরাকে একবার হারিয়ে ফেলে আবার ফিরে পেয়েছি। এখন কি আবার হারিয়ে ফেলবো? কথাটা ভাবতেই অয়নের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। অয়ন গাড়ির ভিতর উঠে বসলো। গাড়ি স্টার্ট করতেই অয়নের ফোনটা বেজে ওঠে। অয়ন পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পায় অনু কল করেছে। অনুর এইসময় কল করাটা অয়নের মনের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করলো। অধরা ঠিক আছে তো? অয়ন কলটা পিক করতেই অনু…………………..

#চলবে………………………..