ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব-২৭

0
625

#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ২৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অধরার বাবা অয়নকে কেবিনে দেখতে পেয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে‌ ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— এই ছেলে তোমার এখানে কি? বাবা মেয়ের কথার মাঝে কোনো বাহিরের ছেলে এলাউড না।

কর্কশ কন্ঠে বলা অধরার বাবার কথাটা অয়নের কানে পৌচ্ছানোর আগে অধরার বুকে এসে বিধলো। অধরা তার বাবার দিকে বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অধরা বুঝতে পারছে না তার বাবা এমন কেনো করছে অয়নের সাথে। অয়ন অধরার বাবা কথা শুনেও কিছুই বলল না। বরং মেরুদন্ড বিহীন মানুষের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল সে। অধরার বাবা অয়নকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরো রেগে যায়। উনি পুনরায় অয়নকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষিপ্ত কন্ঠে কিছু বলতে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে অধরা চিৎকার করে বলে উঠলো।

— স্টপ ইট বাবা। তুমি এসব কি বলছো অয়নকে? বাবা আমি ওর স্ত্রী। এখানে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার অয়নের আছে। আমি জানি না কেনো অয়নকে তোমরা সহ্য করতে পারো না। তবে একটা কথা বাবা আমি চাইনি এই সময় তোমাদেরকে এসব বলতে কারন আমি এখন মৃত্যুশয্যায়। জানি না আমার জন্য সামনের মিনিটে কি অপেক্ষা করছে। ক্ষমা করে দিও আমায়। আমি তোমাদের মেয়ে। আমার বাবা মা তোমরা। তোমাদের ভিশন ভালোবাসি তা সত্যি তবে বাবা আমার স্বামীর অপমান আমি সহ্য করবো না। প্রয়োজন পরলে তোমাদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতেও আমি দুবার ভাববো না। দয়া করে এখন তোমরা আসতে পারো। আমি মরে গেলে আমার লাশ শেষ বারের মতো দেখতে চলে এসো। এর আগে‌ আমাকে আর দেখতে আসার কোনো প্রকার প্রয়োজন নেই।

* অধরার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এই চোখের জল দুটো জিনিস প্রকাশ করছে। প্রথমত তার স্বামীর অপমান আর দ্বিতীয়ত তার বাবার সাথে এমন ব্যবহার। তবে যেখানে নিজের স্বামীর সম্মান নেই। সেখানে এমন ব্যবহার করা স্বাভাবিক। অধরার কথা শেষ হতেই অধরার বাবা মা কেবিন থেকে বেরিয়ে চলে যায়। অয়ন সেই দূরে দরজার কাছে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা অভিমানী সূরে বলে উঠলো

— এই ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তোমার না পা ব্যথা করছে! এখানে এসে বসো। আমার ভালো লাগছে না। অস্থি হচ্ছে।

অয়ন অধরার পাশে গিয়ে বসলো। অধরা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। অয়ন মৃদু কন্ঠে অধরাকে বলল

— অধরা বাবা মা এর সাথে এমন ভাবে কথা বলা কি ঠিক হলো? ওনারা তা বলেছে তা তো ঠিক। আমি তোমার কেয়ার করি নাই। সব সময় তোমায় কষ্ট দিয়েছি‌। আজ তোমার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।

— অয়ন চুপ করবে প্লিজ? আমি তোমাকে কখনই দোষ দেই না। আর আমার সব কিছু ঐ বিধাতা দিয়েছে। তোমার কোনো ভূল কি করে‌ থাকতে পারে? নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করো। অয়ন আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ এই সময়টা একটু খুশিতে থাকতে দাও আমায় প্লিজ।

— হুম।

* সারা দিন কেটে গেলো অথচ ডক্টরা কোনো আশা অয়নকে দিতে পারলো না। অধরাকে কিছু সময় বাদে বাদে মেডিসিন দেয়া হলেও অধরার অবস্থা মোটেও সুখকর নয়। অয়ন বুঝতে পারছে না কি করা উচিত? কি করলে অধরা‌ ঠিক হয়ে‌ যাবে? বিচলিত হয়ে অয়ন বার বার ডক্টরের চেম্বারে ছুটে চলেছে।

— উফফফফ! নার্স প্লিজ অয়নকে ডেকে দিন আমার মাথায় প্রচন্ড ব্যথা করছে। প্লিজ! একটু তাড়াতাড়ি করুন।

অধরা মাথাটা শক্ত করে চেপে কান্না ভেজা কন্ঠে নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটা। নার্স বেশ দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে দৌড়ে চলে আসে ডক্টরের‌‌ কেবিনে। ডক্টরের কেবিনে আসতেই নার্স দেখতে পেলো অয়ন কেবিন থেকে মুখটা মলিন করে বেরিয়ে আসছে। নার্স একটু হাঁপাতে হাঁপাতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বললো

— স্যার আপনার মিসেসের অবস্থা ভালো নয়। আপনাকে ডাকছেন উনি।

নার্সের কথাটা শুনে অয়নকের বুকটা দুমরে মুচড়ে উঠলো। অয়নের হাতে থাকা মেডিসিনের ব্যাগটা মাটিতে পরে যায়। অয়নের চোখে জল এসে গেল। এই বুঝি সময় চলে এসেছে প্রিয়জনকে কেরে নিতে। অয়ন ডক্টরের চেম্বার থেকে দৌড়ে ছুটে চলে আসে অধরার কেবিনে।‌ অধরা মাথা ব্যথায় পাগলের মতো করছে। অয়ন অধরাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।

— অধরা প্লিজ একটু শান্ত হয়ে যাও। প্লিজ! ডক্টর আসছে। তুমি ঠিক হয়ে যাবে। প্লিজ অধরা।

— অয়ন আমার মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না। প্লিজ অয়ন আমাকে বাঁচিয়ে নাও। প্লিজ!

অয়ন কোনো উত্তর দেয়ার মতো অবস্থায় রইলো না। চিৎকার করে বিধাতার কাছে শুধু এটুকুই আবদার করছে অয়ন। “দয়া করে আমার অধরাকে সুস্থ করে দাও। ওকে ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। প্লিজ”! বিধাতার কাছে চাওয়া ছাড়া অয়নের আর করারই বা কি আছে? অধরা মাথার যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। ডক্টর এসে অধরাকে ইনজেকশন দিয়ে দিলো। ইনজেকশন দিতেই অধরা চোখ বন্ধ করে অয়নের বুকে লুটিয়ে পড়ে। অয়ন অধরাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ডক্টর অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— মিস্টার অয়ন আমরা এই ভয়টাই পেয়েছি। অধরাকে এখনি অপারেশন করাতে হবে। যদি পরিস্থিতি ঠিক থাকে তবে অধরার ঠিক হয়ে যেতে পারে।

— ডক্টর প্লিজ! আপনি এখনি অপারেশনে্য ব্যবস্থা‌ করুন। যে করেই হোক অধরাকে ফিরিয়ে দিন। প্লিজ!

— আমরা আমাদের চেষ্টা করবো বাকিটা বিধাতার হাতে। কিন্তু কথাটা কষ্টকর হলেও সত্যি যে অপারেশনে অধরার সুস্থ হবার চান্স খুবই কম।

* অয়ন কথাটা শুনতেই মনের মধ্যে যে টুকু আশা ছিলো মনে হচ্ছে তাও নিভে গেলো। অয়ন চুপ করে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। ডক্টর অয়নকে আর কিছু না বলে অধরাকে অপারেশন কেবিনে নিয়ে যায়। অয়ন একটা টুলের উপর ধপাস করে বসে পরে। এক মুহুর্তের জন্য অয়ন নিজের অতিতের পাতায় চলে যায়। অপূর্ব সুন্দরী দেখতে অধরাকে প্রথম দেখাতেই অসম্ভব ভালো লেগে যায়। প্রেম করার সময় তেমন একটা ছিলো না। তাই বিয়ে করে নিলাম।‌ বিয়ের পর প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিলো। হঠাৎ করে ভুলবোঝাবুঝি আমাদের সুন্দরতম ভালোবাসায় তিক্ততা এনে দিলো। তিক্ততার মাত্রা এতোটাই ছিলো যে আমাদের দুজনের মাঝে অবহেলা, দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। ভাবিনি কখনও অধরাকা হারাতে হবে। তবে তাই হলো। অধরা আমায় ছেড়ে চলে যায়। তখন মনকে বোঝাতে পেরেছি একটা কথা অধরা ফিরবে। অভিমান সমাপ্ত করে। কিন্তু আজকে বিধায় আর সেই দিনটার বিদায় অনেকটা তফাৎ আছে। ঐ দিন ছিলো ক্ষনস্থায়ী বিদায়। তবে আজ হতে চলেছে……! অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চোখের জল চোখ থেকে সরছে না। অয়ন অপারেশন কেবিনের দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো নার্স বের হচ্ছে। অয়ন বসা থেকে উঠে দৌড়ে চলে যায় নার্সের দিকে।

— নার্স অধরা এখন কেমন আছে? ওর অবস্থা কি একটু পরিবর্তন হয়েছে? প্লিজ আমার থেকে কোনো কিছু লুকাবেন না প্লিজ।

— অপারেশন চলছে। একটু শান্ত হয়ে যান। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

নার্স তার অব্যক্ত কথা বলে চলে যায়। অয়ন মুখটা মলিন করে আবার নিজের চেয়ারে বসে পরে। অয়ন আজ বিধ্বস্ত সৈনিক। যে নিয়তির কাছে হারতে বসেছে। অয়ন নিজের চক্ষু জুগল দু হাতে চেপে ধরে শব্দ কান্না কান্না করে দিলো। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে অয়ন বলতে লাগলো “অধরা আমি তোমাকে বাঁচাতে পারবো তো? তোমার বলা কথাটার মানে আমি রাখতে পারবো তো? আল্লাহ আমাকে সেই শক্তি দিবে তো? তোমার ইচ্ছে পূরণ করতে! তোমাকে সেফ করতে”?

* দৈর্ঘ্য অপেক্ষার পর অয়নের জন্য ডক্টর একটা সংবাদ নিয়ে এলো। অয়ন অপারেশন কেবিনের দরজা পানে তাকিয়ে থাকতেই দেখতে পায় ডক্টর অপারেশন কেবিন থেকে বেরিয়ে আসছে। অয়ন দৌড়ে তার কাছে হাস্যজ্বল চেহারা নিয়ে ছুটে যেতেই ডক্টর অয়নকে নিরাশ করে দেয়। ডক্টর অয়ন……………………

#চলবে……………..