ভালোবাসা একটা বাজি পর্ব-০৩

0
429

#ভালোবাসা_একটা_বাজি(৩)

হালকা‌ বাতাস বইছে। বাতাসে চুলগুলো উড়ছে আরিয়ানের। জায়গাটা নির্জন প্রশান্তিময়। জায়গাটা খুব প্রিয় তার। যখনি মনে খারাপ হয় এখানে এসেই ঘাঁটি দেয় ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু ছোটবেলার সেই খুশিটা আর নেই। আজ বড় হয়ে গেছি। নিজে একাই চলতে পারি। হঠাৎই মনে পড়ে একসপ্তাহ ধরে পাখি দুইটার খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। নিশ্চয়ই অভিমান করেছে। কালকে সকালে হলেই সারপ্রাইজ দিব ওদের।

সকালের মিষ্টি আলোর একফালি এসে পড়লো মিহির ওপর। মিহি তবুও ঘুমে মগ্ন। একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছে সে তার ভাইয়াকে নিয়ে। কিন্তু স্বপ্নের মধ্যেই এলো এক নারী। তারপর তারপর মিহি হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। শরীর আস্তে আস্তে ঘামতে শুরু করেছে। সবসময়ই কেন এমন হয়। ভাইয়াকে দেখতে নিলেই কেনো ঐ মহিলা এসে পড়ে? মিহির হৃদযন্ত্র টা অস্বাভাবিক ভাবে ধর’ফর করছে। পাশে থাকা ছোট মাহির দিকে চোখ পড়ে তার। বুকটা করো ভারী হয়ে আসে। ভাইয়া আমাকে না দেখতে আসুক মাহিকেও দেখতে আসছেনা? ভাইয়া আমাকে ভূলে গেছে। সে তাঁর ভাইয়াকে অনেক মিস করছে। ভাইয়া কতদিন তাঁর কাছে আসেনা। ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। আজ শুক্রবার ছুটির দিন। চাইলে তো আজ আসতেই পারে। তা নয় সারাদিন মিউজিক ক্লাব আর বন্ধুদের নিয়ে পড়ে থাকে। টেবিলের পাশে থেকে মিহি একগ্লাস পানি এক টানে শেষ করলো। বিছানা ছেড়ে উঠে গুটিগুটি পায়ে বেলকনিতে গেল। রেলিংয়ে হাত রেখে সামনে তাকাতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। বাগানে কত রকমের ফুল ফুটেছে। তাঁর উপর হালকা হালকা পানির ফোঁটা সত্যিই অসাধারণ লাগছে মিহির কাছে। মিহি মনোযোগ দিয়ে প্রতিটা ফুল দেখছে। আচ্ছা এই ফুলগুলো এত সুন্দর কেনো। এগুলোকে তো জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

-” কি দেখছিস রে মিহু পাখি?

হঠাৎ পাশ থেকে কোন পুরুষের গলা পেয়ে চমকে উঠলো মিহি। কিন্তু প্রকাশ করলো না। এমন ভাব ধরলো যেনো সে জানতো এখানে উনি আসবেই। মিহি মনযোগ দিয়ে ফুল দেখেই যাচ্ছে। আরিয়ান মিহির গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।

-” আমার মিহু পাখি কি অভিমান জমিয়েছে? ভাইয়ের একটা সরি তে কি তার মন গলবে না? সরি মিহু পাখি অনেক গুলো সরি।

মিহি মুখটা কালো করে আরিয়ানের দিকে তাকায়। পানি টলমল করছে। পলক ফেললেই গড়িয়ে পড়বে। আরিয়ানের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মিহি এমন করছে কেন? মিহি আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে-

-” জানো ভাইয়া আমি তোমাকে কত কত মিস করেছি। অনেকদিন স্বপ্নে দেখেছি। তুমি আমায় একটুও ভালোবাসো না। আমার কথা তোমার মনেই থাকে না। আমি একদিন অনেক দুরে হারিয়ে যাব। তখন কাঁদলেও মিহি কে পাবেনা। তখন মাহিকে দেখে রেখো।

আরিয়ান নিজে খুব অনুতপ্ত হয়। মিহির কান্না তার সহ্য‌ হয়না। এই দুই নারীকে সে নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসে। মিহির কান্না আরিয়ানের বুকে ক্ষতের সৃষ্টি করছে। আরিয়ান মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-

-” আমার লক্ষী বোন, কাঁদেনা। ছিহ লোকে কি বলবে বল? একটা ছোট বাবুর মামুনি হয়েও তুই কাঁদছিস? আচ্ছা বল কি করলে মেহু পাখি একটু হাসবে?

মিহি কান্না থামিয়ে বলে-

-” ভাইয়া তোমার মেহু পাখির এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি নিয়ে আসো না প্লিজ।

-” ফ্রিজের গুলো কি শেষ করে ফেলেছিস?

মিহি ঠোঁট উল্টে চোখ ছোট ছোট করে বলে-

-” হ্যা ওগুলো তিনদিন আগে শেষ হয়েছে।

আরিয়ান অবাক হয় প্রচুর। কি বলে এই মেয়ে।

-” তুই দাঁড়া তোকে আজ আমি বেলকনি থেকে ফেলৈ দেবো। আমি ফ্রিজ ভরে রেখেছিলাম আইসক্রিম আর তুই তা চারদিনেই শেষ করেছিস।

মিহি আরিয়ানের থেকে সরে বলে-

-” বকছো কেন ভাইয়া?

-” না তোকে তো তুলে এই খান থেকে নাচে ফেলা উচিত।

মিহি রেলিং ধরে নাচে তাকায়। তারপর সয়তানি হাসি দিয়ে বলে –

-” এই একতলথেকে নিচে পড়লে নেহাত আমার হাত পাই ভাঙবে‌ তাতে তো ভালোই হবে। আমার হাত পা ভাঙলে সারাদিন তুমি আমার সেবা করবে। আর মাহির ডায়পার ও চেইঞ্জ করবে। হাহা হা

আরিয়ান তীক্ষ্ণ নজর দিয়ে সব কথাগুলো শুনলো। কিন্তু শেষের কথাটায় নিজেও হেসে দিলো।

-” বাহ মেহু তোর মাথায় তো সয়’তানি বুদ্ধি ভালোই আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে গাঁধী গাঁধী বিহেভ করিস। মেহু রুমে চল।

মিহি এসে খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে। আরিয়ান আচমকা মিহির পায়ের উপরে মাথা রাখে। মিহি চমকে গেলেও আরিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। ভাইয়ার হয়তো মন খারাপ। আরিয়ান শান্ত গলায় বলে-

-‘ আমি কি করবো মেহু?

ভাইয়ের এমন কথায় মিহি চমকায় ভীষণ ভাবে। ভাইয়া তো কখনোই এমন কথা বলতো না। আজ কি হলো।

-” কি হয়েছে ভাই

-” মেহু আমার কি একজনের জন্য সবাইকে ঘৃণা করা উচিত? আর আমি কেনো নারীদের সহ্যই করতে পারিনা। আমি তো কোন মেয়েকেই বিশ্বাস করতে পারিনা। আমার তো ওদের মন ভেঙ্গে দিতেই ভালো লাগে। কিন্তু কেন জানি অনুতাপ হচ্ছে। আমি তো এমন ছিলাম না কখনোই। আমার চোখে হাজারো স্বপ্ন ছিল। তোদের নিয়ে একসাথে বাঁচার বুকভরা আশা ছিলো। কিন্তু উনি আমাদের গুড়িয়ে দিয়েছে। আমার সব স্বপ্ন আশা উনি নষ্ট করে দিয়েছে। আমি বাঁচতে চাই আমার স্বপ্ন নিয়ে। তোদের নিয়ে।

মিহি ভাইয়ের প্রতিটা কথা মন দিয়ে শোনে। তারপর বলে-

-” দেখো ভাইয়া সবাই কি একরকম। তাহলে আমিও তো মেয়ে। আমায় কি বিশ্বাস করোনা? ভালোবাসো না? সবাই কিন্তু একরকম হয়না। আর ঐ মহিলা যা করেছে তা কি সবাই করবে? উনি তো নিজের স্বার্থের লোভে এমন করেছে। কিন্তু তোমাকে আমি আগেও বারবার বলেছি রিলেশন করলে একটাই করো। তাকে ভালোবাসো আঁকড়ে ধরো। কিন্তু তুমি তোমার ঐ সয়’তান বন্ধুগুলোর সাথে বাজি ধরে এইসব করো। কি লাভ পাও ভাইয়া। কোন একসময় দেখবে কারো মায়ায় ভীষণভাবে আটকে যাবে। তখন ঐ মেয়েগুলোর অভিশাপ লাগবে। অযথাই কারো মন ভাঙা ভালো কাজ নয়। ওরা তো আর তোমার ক্ষতি করেনি ভাইয়া। তাই বলছি কি যে বিয়ে করে নাও। হিহি তারপর একটা ভাবি পাব আমি। আর তোমার স্বপ্নগুলোতে ফোকাস দাও। ইনশাআল্লাহ আমার ভাই পারবে।

দুজনের কথোপোকথনের বিচ্ছেদ ঘটায় ছোট মাহি। ঘুম থেকে উঠে পাশে আম্মুকে না দেখে সে কেঁদে দেয়। আরিয়ান ছোট মাহিকে কোলে। নেয় থেমে যায় তার কান্না। পিটপিট করে তাকায় মাহি। আধো আধো কন্ঠে ডেকে ওঠে-

-” মামমামা

আরিয়ান হেসে দেয়। মিহিকে বলে –

-” কিরে মেহুপাখি। মাহিপাখি দেখছি ডাকতে পারে। বললি না তো।

-” তুমি তো আমাদের খোঁজই নাওনি।

আরিয়ানের ফোনটা বেজে ওঠে। মাহিকে মিহির কাছে দিয়ে ফোন রিসিভ করে। ওপাশের কথা মাহি শোনেনি। আরিয়ান বলে-

-” আচ্ছা স্যার আমি আসছি।

আরিয়ান কলটা কেটে মিহির দিকে তাকায়।‌ মিহি মন খারাপ করে বলে-

-” চলে যাবা ভাইয়া?

-” হ্যা রে বোন। যেতে ইচ্ছে করছেনা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ পড়ে গেছে। আমি সময় পেলে বিকেলে আসবো। না হয় কালকে। তুই রাগ করিস না।

আরিয়ান মাহি কে দুটো চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কল করেছে তার প্রডিউসর মানে আরাফার বাবা। আরিয়ানের মোটেও ইচ্ছে নেই ঐ অহংকারী মেয়ের সামনে যাওয়ার। কিন্তু ভাগ্য সেখানেই টেনে নেয় বারবার। গন্তব্যে আসতে সময় লাগেনি। বাইক ছুটিয়ে তারাতাড়ি চলে এসেছে। দরজায় কলিং বেল দিলো আরিয়ান। আরাফা টিভি দেখছিলো। ড্রয়িংরুমে সে একা তাই অগত্যা নিজেরই গিয়ে দরজা খুলতে হলো। আরিয়ান কে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এই ছেলে এতো ছ্যাছ”ড়া কেন? বাসায় এসে গেছে। একে তো পি”টিয়ে উগান্ডা পাঠানো উচিত। আরিয়ান আরাফার পাশ কাটায়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। আরাফাত সাহস দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ছেলের এতো সাহস এলো কই থেকে। আমার বাড়িতে আমি সামনে থাকা স্বত্ত্বেও না বলে ঢুকে পড়লো। দাঁড়া আজ তোকে আমি উচিত শিক্ষা দিব।

#চলবে

#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)