#ভালোবাসা_একটা_বাজি(৫)
চারদিকে পিনপতন নীরবতা। আরিয়ান রেগে আছে প্রচুর। মিহি দুটো শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে-
-” ভাইয়া ওদের মারলি কেন?
আরিয়ান চোখ ঘুরিয়ে একবার মিহির দিকে তাকায়। তারপর নিজে সোফায় বসে পড়ে। রাইয়ান, সুহাস, শিহাব আর মিহিকেও ইশারায় বসতে বলে। মিহি গিয়ে মাহিকে সার্ভেন্ট এর কাছে রেখে আসে আর তাকে রুম থেকে বেরুতে নিষেধ করে। মিহি এসে আরিয়ানের পাশে বসে। তাদের সামনে সুহাস, শিহাব আর রাইয়ান। কেউই বুঝতে পারছেনা আরিয়ান কেন এমন করলো। একটু ভয় আর জড়তা নিয়ে মিহি আবারো বলে –
-” ভাইয়া বল ওদের দুজনকে মারলি কেনো?
-” হ্যা বল ওদের মা*রলি অথচ আমায় ছেড়ে দিলি। এটা কেমন কথা? বল আগে কি হয়েছে?
রাইয়ানের কথা শুনে আরিয়ান বলে-
-” কেন চ’র খাওয়ার খুব শখ হয়েছে বুঝি। সামনে আয় তোর কোন শখই অপূর্ণ রাখিনি আমি।
আরিয়ানের এ কথাতেও শান্ত হয়না কেউই। রাইয়ান ও মিহি চেপে ধরে আরিয়ানকে আসল কথা জানার জন্য। আরিয়ান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। সোজা হয়ে বসে সুহাস আর শিহাবের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দেয়। তারপর ধীর গলায় বলে-
-” তোরা তো আমার বন্ধু তাইনা?
তিনজনেই তখন মাথা দোলায়। আরিয়ান তখন রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” আমি নেশা করলে তুই কি করবি রাইয়ান?
রাইয়ান চটপট উত্তর দেয়-
-” থাপ”রিয়ে তোর সব দাঁত খুলে ফেলবো। এমনিতেই তোর এই মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং আমার পছন্দ নয়। তোকে কোন মেয়ের মন ভেঙ্গে পৈশাচিক আনন্দ পেতে যখন দেখি বিশ্বাস কর আমার তখন তোকে গু’লি করে মা’রতে মন চায়। কিন্তু তোদের এই তিন সয়’তানের জন্য কিছু বলিনা। বাট তুই নেশা করবি এটা আমি মানবো না।
আরিয়ান এবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে সামনে তাকায়। শিহাব আর সুহাস মাথা নিচু করে আছে। আরিয়ান এবার বলে-
-” নেশা করেছে এটাও ধর মানলাম বাট একটা এক্সি’ডেন্ট করলো তারপর। লোকটাকে হাসপাতালে না নিয়ে উল্টো গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো। এমন মানুষ কে কি করা উচিত?
রাইয়ান সরু চোখে শিহাব আর সুহাসের দিকে তাকায় তাদের প্রান ভয়েই শেষ। রাইয়ানের বুঝতে বাকি থাকেনা কি হয়েছে। মিহিও এতক্ষনে সব বুঝে গেছে। শিহাব বলে-
-“দোস্ত কসম আর জীবনেও খাবনা।
সুহাস ও তাল মিলিয়ে বলে-
-” হ্যা কসম। আর কালকে হুঁশ ছিলো না। তাই লোকটাকে রেখেই চলে গেছি।
আরিয়ান রাগে চিল্লিয়ে বলে-
-” হ্যা হ্যা তোমরা কেন হুশে থাকবা। লোকটা তার স্ত্রীকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওখানে নেমেই গাড়ি খুঁজছিলো। তোমাদের গাড়ি থামাতে বলছিলো কিন্তু তোমরা ওনাকে মে’রেই দিতে যাচ্ছিলে। আসলেই গ্রেট। তোদের আমি গাড়ি ঘুরাতে দেখি। ঐ লোকটার ওয়াইফ চিৎকার করছিলো তখন। কিন্তু যায়গাটায় এত ঘনবসতি নেই। কেউ আসেনি। তোমাদের গাড়ি ঘুরাতে দেখে আমি গাড়ির নাম্বারটা পড়ি। কিন্তু যখন দেখি তোমরা তখন আমার সত্যিই তোমাদের দুজনকে খু’ন করতে ইচ্ছে হয়েছিলো। কি করে পারলে এমন গর্হিত কাজ করতে? আমি যদি ওখানে গিয়ে ওনাদের হাসপাতালে না নিতাম তাহলে হয়তো সব শেষই হয়ে যেতো। ভাগ্য ভালো মারাত্মক আঘাত লাগেনি। নাহলে তোদের নামে আমি নিজেই কেইস ঠুকে দিতাম। কিন্তু এক্সিডেন্ট হওয়া লোকটার সাথে বাবার চেহারার অনেক মিল ছিলো। তোদের নিজের বন্ধু ভাবতেও লজ্জা লাগছে।
শিহাব আর সুহাস নিচু করেই আছে তাদের মাথা। কিছু বলার নেই তাদের। কালকে খুব বড় অন্যায় হয়ে গেছে। রাইয়ান আগুন চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। ভাবতেও পারছেনা এমন কাজ ওর বন্ধুরা করেছে। মিহি বলে-
-” দেখ ভাই যা ভাগ্যে ছিলো হয়েছে। ওদের আচ্ছা মতো ধোলাই করে দিস তাহলে আর এমন কাজ করবেনা। এখন ঠান্ডা হ প্লিজ।
আরিয়ান কিছু না বলে সবার সামনে থেকে গটগট করে চলে যায়। মিহি দৌড়ে গেলেও পারেনা আটকাতে। আরিয়ান বাইকে করে চলে যায়। পেছনে তিনজন ও বেড়িয়ে আসে। মিহি ওদের উদ্দেশ্য করে বলে-
-” ভাইয়া আপনাদের ক্ষমা করবে কি না জানিনা। তবে আপনারা খুবই জঘন্য একটা কাজ করেছেন।
সবাই নির্বাক হয়ে বেরিয়ে আসে। মুখে কথা বলার মতো কিছুই নেই।
।
পরেরদিন আরিয়ান ভার্সিটিতে যায়। সুহাস আর শিহাব কে এরিয়ে শুধু রাইয়ানের সাথেই টুকটাক কথা বলে। আর কিছু মেয়ে ফুসুরফুসুর করছে এদের কি হয়েছে? প্রতিদিন চারজন একসাথে থাকলেও আজকে আলাদা কেন? আরিয়ান ক্লাসে চলে যায়। আরাফার পাশে সিট খালি ছিলো। আরিয়ান সেইদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই আরাফার পাশে একটা ছেলে বসে পড়ে। ছেলেটাকে দেখে আরিয়ানের মেজাজ গরম হয়ে যায়। ছেলেটা আরিয়ানের দিকে চেয়ে বাঁকা হাসে। আরিয়ান রাগে গজগজ করতে করতে অন্য সিটে গিয়ে বসে। যাকে সহ্য হয়না তার মুখটাই আজ দেখতে হলো। আরিয়ান দেখলো আরাফা হেসে হেসে তার পাশের অনিক নামক ছেলেটার সাথে কথা বলছে। আরিয়ানের প্রচুর রাগ হয়। মেয়েটা ঐদিন কত বড় বড় কথা বলল। আর আজকে বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও আরেকটা ছেলের সাথে দাঁত কেলিয়ে কথা বলছে। ঢং যতসব। আরিয়ান একটা ক্লাস করেই বের হয়ে আসে ভালো লাগছেনা কিছুই ভেতরটা অস্থির অস্থির লাগছে। কোন ঝড় আসার আগাম বার্তায় মনটা বারবার কু গাইছে। আরিয়ানের পিঠে এসে কেউ হাত রাখে। পিছন ঘুরে অনিক কে দেখেই ছিটকে সরে যায় সে। অনিক আবারো হাসে। হেসে হেসেই বলে-
-” আগে এভাবে হাত রাখলে কত খুশিই না হতি। আর এখন ছিটেক সরে যাচ্ছিস?
আরিয়ান রেগে বলে-
-” কোন বেইমান বা বিশ্বাস ঘাতকের ছোঁয়ায় আমার খুশি হওয়া মানায় না।
-” এখন তো তুই বিশ্বাস ঘাতকতা করছিস। কতো মেয়ের মন নিয়ে খেলছিস। নিজেই তাদের সাথে বেইমানি করছিস। তার বেলা?
-” আমার এই পরিবর্তনের পিছনে তোর একটা বিরাট অবদান আছে। সেটা ভুলে যাবি না।
আরিয়ান অনিককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায়। অনিক সেদিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। হঠাৎই পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে-
-” এই ছেলে হাসলে তো তোমায় সেই কিউট লাগে।
অনিক হাসি থামিয়ে সেই মেয়েটার দিকে তাকায়। দেখতে শুনতে ভালই। তবে ছ্যাছড়া লাগছে তার। পাশ কাটিয়ে অনিক চলে যেতে নিলেই আনিকা মানে আরিয়ানের কয়দিন আগের ব্রেকাপ করা এক্স অনিকের রাস্তা আটকে ধরে। অনিকের গালদুটো টেনে আনিকা বলে-
-” হাউ সুইট। তুমি অনেক কিউট। তোমার নাম কি?
অনিকের প্রচুর রাগ লাগছে। একটা মেয়ে এমন ছ্যাছড়ামি করতে পারে জানা ছিলো না। মেয়েটাকে এখন পদ্মানদীতে চুবাতে মন চাইছে তার। অনিক রেগে বলে-
-” কোন ধরনের অসভ্যতা এটা? বলা নেই কওয়া নেই এসেই গাল টানাটানি এখন আবার পথ আটকানো। কোন ম্যানার নেই আপনার? পথ ছাড়ুন।
আনিকা পথ না ছেড়ে আবারো বলে-
-” বলো তোমার নাম কি?
অনিকের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি টাইপ। এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো সে। আনিকা কে ভুলভাল বুঝিয়ে অনিক ক্যান্টিনের দিকে যায়। আরাফা একা একা বসে আছে। অনিক যায় তার সাথে ভাব জমাতে। এদিকে আরিয়ান আর রাইয়ান কথা বলছে।
-” যাই হোক লাস্ট বাজি ওকে। এরপর আর করবো না। আসলে ঐ আরাফার অহংকার চূর্ণ করবো। এতো দেমাগ আসে কই থেকে। আমাকে কথা শুনানো আর আজ অনিকের গায়ে পড়ে পড়ে কথা বলছে। এই মেয়েগুলো সব এমনই।
রাইয়ান আরিয়ানের কথায় বিরক্ত হয়ে বলে-
-” দেখ তুই আর ফ্লার্টিং করবি না এটা শুনে খুশি হয়েছি। কিন্তু আরাফাকে কি ছেড়ে দেয়া যায়না?
-” তোর এত দরদ কেন?
-” আরে না এমনেই।
-” আমি কখনোই হারিনি আর না হারবো।
আরিয়ান বাইকে চলে যায়। আজ মাহিকে দেখতে যাবে। বাচ্চাটা বাবা ডাক শিখে গেছে। কিন্তু বাবাকেই কাছে পাচ্ছে না। আরিয়ান গিয়ে নিজের কাছের এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢোকে বাড়িতে। আবার দরজাটা লাগিয়ে দেয়। আরিয়ান এদিক ওদিক মিহিকে খুঁজছে।
-” কি রে ভাই চোরের মত করছিস কেন তুই?
আরিয়ান হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ধরা পড়ে গেলো। মিহি হেসে বলে-
-” তুই যে এসেছিস আমি ওপাশের বেলকনি থেকে দেখেছি।
আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিংবেল বেজে ওঠে। মিহি নামতে নামতে বলে-
-” দেখতো ভাইয়া কে এসেছে?
আরিয়ান দরজা খোলে গিয়ে কিন্তু সামনে দাঁড়ানো মানুষ দেখে থমকে যায়। সামনের মানুষও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরিয়ানের দিকে।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)