ভালোবাসা একটা বাজি পর্ব-০৯

0
333

#ভালোবাসা_একটা_বাজি(৯)

আরাফা ক্লাস করছে আর ফাঁকে ফাঁকে আরিয়ানের দিকে তাকাচ্ছে। আজব আছ ছেলেটা তার দিকে তাকাচ্ছেই না। আরাফা নখ কামড়ানো শুরু করে। কি হলো এই ছেলের? পাশ থেকে অনিক বলে-

-” হেই আরাফা কি ভাবছো?

আরাফা হকচকিয়ে যায়। নিজেকে শান্ত করে হেসে উত্তর দেয়-

-” কিছুনা কি ভাববো আর?

-” আচ্ছা আমার সাথে ঘুরতে যাবে ভার্সিটি শেষে?

আরাফা কিছুক্ষন সময় নিয়ে ভাবে। ফাঁকে একবার আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরাফা আরো অবাক হয়ে যায়। আরিয়ান চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়। আরাফার যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু সকালবেলা অনিক লিফ্ট দিলো তাই নাও করতে পারছেনা‌। দ্বিধান্বিত হয়ে আরাফা বলল-

-” আচ্ছা ঠিক আছে। তবে বেশিক্ষন ঘুরবোনা।

অনিক তাতেই রাজি হয়। মুখে বিজয়ীর হাসি। আরিয়ান নিজেকে সামলে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যায়। অনেকক্ষন ধরে আরিয়ান ঘোরাঘুরি করছে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে। হঠাৎই পাশ থেকে এসে কেউ ধাক্কা খায়। আরিয়ান চমকে তাকিয়ে দেখে আরাফা। আরাফা পড়ে যাচ্ছিলো, দু চোখ বন্ধ করে চিৎকার দেয়। কিন্তু কেউ তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আরাফা ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়। আরিয়ান কে দেখেই মাথা গরম হয়ে যায়। ইয়া আল্লাহ এর চেয়ে আমাকে নিচেই ফেলতে এই রাক্ষসের কোলে না ফেলে। আরাফা বিরবির করে কথাটা বললেও আরিয়ান শুনে ফেলে। এমনিতেই রেগে ছিলো, রাগ আরো বেড়ে গেল। আরাফাকে আচমকা ছেড়ে দিলো। ধপাস করে নিচে পড়লো আরাফা‌। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো।

-“‌ আম্মুউউউ। আপনি কি হ্যাঁ? মিনিমাম কমন সেন্স নাই? এইভাবে কেউ ফেলে দেয়?

আরিয়ান রাগে নাক ফুলিয়ে বলে-

-” তোমার নাকি আমার কোলে পড়ার চেয়ে নিচে পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য লাগে। তাই ফেলে দিয়েছি।

আরাফা কিছু বলার আগেই অনিক দুর থেকে তাকে ডাক দেয়। অনিককে দেখেই আরিয়ান আরাফাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়। আকস্মিক কান্ডে আরাফা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। ভার্সিটির সবারই চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। আরাফা নিজেও বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে গেছে। অনিক এই দৃশ্য দেখে দ্রুত এগিয়ে আসছে। আরিয়ান আবারো তার সাথে টেক্কা দিতে চাইছে। এর ফল মোটেও ভালো হবেনা। অনিক কে আসতে দেখে আরিয়ান ন্যাকা সুরে বলে-

-” বেবিটা তুমি কি ব্যাথা পেয়েছো? আই এম সো সরি। আমি তোমাকে ইচ্ছা করে ফেলিনি।

আরিয়ানের ন্যাকামি দেখে রাগে আরাফার পিত্তি জ্বলে ওঠে। রাগে কিছু বলবে তার আগে আরিয়ান কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-

-” যা বলছি তাল মিলাও। নাইলে এবার ফেলে দিলে কোমড় ভেঙে সোজা ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগবে। এমনিতেই প্রথমবার পড়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছে। এবার ফেললে কোমড় ভেঙেই যাবে। আরাফা জানে আরিয়ানের তাকে ফেলে দিতে একটুও বাঁধবে না। কাঁদো কাঁদো হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে। অনিক এসে বলে-

-” আরাফা কি হলো ঘুরতে যাবেনা? আর এই আরিয়ান তুই ওকে নামা।

আরিয়ান তখন হেসে বলে-

-” আরে ও আমার সাথে যাবে এখন তোর সাথে না। যা এখান থেকে।

অনিক রেগে বলে-

-” আমি আরাফার কাছে জিজ্ঞেস করছি তোকে বলিনি। আরাফা আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।

আরিয়ান আরাফার কোমড়ে চাপ দেয়। আরাফা ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে। আস্তে করে বলে-

-” অনিক তুমি যাও আমি আরিয়ানের সাথেই যাবো।

-” কিন্তু আরাফা।

আরিয়ান অনিককে থামিয়ে বলে-

-” কোন কিন্তু নয়। বায় এন্ড সি ইউ লেটার।

আরিয়ান আরাফাকে কোলে নিয়ে হাঁটা দেয়। অনিক রাগে ফুঁসছে। বাকিরা সবাই ড্রামা দেখলো এতক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আরাফা নাক ফুলিয়ে আছে। আরিয়ান তাকে নিয়ে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়। দরজা লক করে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। আরাফা রাগে তেতে উঠে বলে-

-” কি চাই হ্যা? এভাবে জোড় করে গাড়িতে উঠিয়েছেন কেন?

আরিয়ান আরাফার কথাকে পাত্তা না দিয়ে তার দিকে এগোতে থাকে। আরাফা মনে মনে বলে- একবার টাচ করে আমি চিৎকার করি কেমনে দেখিস। কিছুক্ষণ পড় আরিয়ান সরে যায়। আরাফা চোখ খুলে দেখে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়েছে।

-” ওহ সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়েছেন? এটা কি আমি করতে পারতাম না। ভয় পেয়ে গেছিলাম।

আরিয়ান সরু চোখে তাকিয়ে বলে-

-” নিজের যেমন মেন্টালিটি তেমন চিন্তা ভাবনা তোমার। তুমি কি ভাবছিলে আমি তোমাকে কিস করবো?

আরাফা জানালার দিকে ঘুরে যায়। আসলে সে মনে মনে এটাই ভেবেছিলো। আরিয়ান সাড়া না পেয়ে উচ্চ শব্দে হেসে বলে-

-” লিসেন আই এম আরিয়ান তাজওয়ার। কোন মেয়েকে কিস করিনি। প্রেম অনেকগুলো করলেও আমি দুরত্ব রেখে চলেছি।

আরিয়ান ড্রাইভ করা শুরু করে। এর মধ্যেই ফোন মহাশয় কর্কশ কন্ঠে বেজে ওঠে। আরিয়ান তখন বলে –

-” প্লিজ ফোনটা রিসিভ করে আমার কানে ধরবে?

আরাফা বিনা বাক্যব্যয়ে ফোনটা আরিয়ানের কানে ধরে। সে এই বদ ছেলের সাথে কিছুতেই কথা বলবেনা। আরিয়ান হাসিমুখে সালাম দিলেও ক্রমে তার মুখটা কালো হয়ে আসে। আবারো বিপদ আসছে। আরিয়ান ঢোক গিলে বলে-

-” ইয়েস ইয়েস আমি আসছি। ও নেগেটিভ ব্লাড আমার আছে। চিন্তা করবেন না। আরাফা ফোনটা সরাও।

আরাফা ফোনটা জায়গামতো রাখে। গলা খাঁকারি দিয়ে প্রশ্ন করে-

-” কে ছিলো?

আরিয়ান আরাফার উৎসুক দৃষ্টির দিকে তাকায়। বড্ড মায়া হয়। শান্ত কন্ঠে বলে-

-” গেলেই দেখতে পাবে।

আরাফার মনটা বড্ড কু গাইছে। কোমড়ে আর পায়ে ভীষণ ব্যাথা করছে। গাড়ি এসে থামে হাসপাতালের সামনে। আরিয়ান দ্রুত নেমে আরাফাকে নামতে তাড়া দেয়। আরাফা ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে বলে-

-” আপনি কি আমায় হাঁটার যোগ্য রেখেছেন? আমার পায়ে আর কোমড়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছি।

আরিয়ান কিছু না বলে চট করেই কোলে তুলে নেয়। আরাফা আবারো চোখ গোল গোল করে তাকায়-

-” প্লিজ নামিয়ে দিন। সবাই খারাপ ভাবছে।

-” থামবা!‌ বেশি পকপক করলে এখান থেকেও ফেলে দিবো।

আরাফা ভয়ে চুপ করে যায়। আরিয়ান তাকে বসিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে ছোটে। আরাফা একা বসে বসে বোরিং ফিল করছে। ফোন বের করে ফেসবুকে লগইন করে। প্রায় অনেকক্ষন পর আরিয়ান আরাফার কাছে আসে। আরিয়ানের হাতে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ দেয়া। আরাফা ভ্রু কুঁচকে বলে –

-” কোন মহৎ কাজ করলেন?

-” তোমার বাবাকে ব্লাড দিয়েছি।

কথাটা ঝাঁ ঝাঁ করে ওঠে আরাফার কানে। আরিয়ানের শান্ত কন্ঠের কথাটা তার মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে আঘাত করে। আরাফা চেঁচিয়ে বলে-

-” কি বললেন? আবার বলুন কি হয়েছে বাবার?

আরিয়ান আরাফাকে দু হাতে ধরে বলে-

-” শান্ত হও প্লিজ। আংকেলের কিছু হবেনা। সকালে তার সাথে আমার কথা হয়েছিল, তাই ডায়েল লিষ্টে আমার নাম্বার ছিলো। সে গাড়ি নিয়ে বেরোনোর সময় রাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছে। র’ক্তক্ষরন হওয়ায় আমি ব্লাড দিয়েছি। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। আল্লাহকে ডাকো।

আরাফার হাত পা অবশ হয়ে আসছে। মায়ের পর বাবাকে হারাতে পারবেনা। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। আরিয়ান জোড়ে একবার ডাকে আরাফা বলে। কিন্তু তার আগেই আরাফা ঢলে পড়ে। আরিয়ান আরাফাকে শক্ত করে ধরে। সে বুঝতে পারে মেয়েটা তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে। আচ্ছা ওর মা কে তো কখনো দেখলোনা? ওর হয়তো একটা বোন আছে । বোনটা হয়তো জানেনা তার বাবার এই অবস্থা। স্মৃতিরা কত বিষাক্ত হয়। আরিয়ানের বুকের মধ্যে তোলপাড় চলছে। আগে তো এমন হয়নি‌। বহু রিলেশনশিপ এ জড়িয়েছি কোন মেয়ের জন্য এমন হয়নি। আরাফাকে অন্যের সাথে দেখলেই লাগে লাগে। ধুরর কি সব ভাবছি। ওকে পটাতে পারলেই হলো‌। এই লাস্ট বাজি জিতবো তো আমিই‌। আর ভেঙেও দেব তোমার অহংকার‌। শেষ বাজি ভালোবাসা একটা বাজি। কত সুন্দর তাইনা‌‌। আরিয়ান অচেতন আরাফার মুখের দিকে তাকায়। বড্ড মায়াবী লাগছে।

#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)