ভালোবাসা তারপর পর্ব-০৪

0
185

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৪
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্তদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রোদসী রুমে এসে দেখে পুরো রুম অন্ধকার করে উচ্ছ্বাস বিছানায় চোখের উপর হাত রেখে সুয়ে আছে। ঘুমিয়ে গেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। রোদসী ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে উচ্ছ্বাসকে জরিয়ে ধরে সুয়ে পড়লো। তাতে উচ্ছ্বাস একটু নড়েচড়ে উঠে তাকালো। উচ্ছ্বাস একটু অবাক হলো কারণ তার জানা মতে রোদসী তাকে কখনো নিজ থেকে জারিয়ে তো দূর কাছেও আসে না তবে আজ? হঠাৎ!

উচ্ছ্বাস রোদসীকে আর একটু কাছে টেনে নিলো। আর জিজ্ঞেস করলো, ” তোমার কি মন খারাপ?”

“উহু, না। ঠিক আছি।”

” কেনো জানি মনে হলো তোমার মন খারাপ।”

রোদসী কিছু না বলে আরো শক্ত করে ধরে চুপটি করে সুয়ে থাকে। উচ্ছ্বাস আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

——-

কালকে রাতে বোধহয় অনেক বৃষ্টি হয়েছে। আশেপাশে সব কিছু সজীব সতেজ হয়ে আছে। রোদসী বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলো উচ্ছ্বাস অফিসে গিয়েছে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ পড়ায়। উষা, আর বৃষ্টি কলেজে গেছে। উদয়ও বাসায় নেই। মিসেস রাবেয়া বেগমও ব্যাস্ত কিছু লোক এসেছে। শুনছে কারা যেনো আসবে তাই উচ্ছ্বাস কড়া করে বলে গেছে নিচে নামতে না। রোদসী ঘরে এসে একটা বই নিয়ে বসলো। দুপুরের দিকে মেইড এসে খাবার দিয়ে গেছে এবং বলে গেছে বিকালের রেডি হয়ে তাকে মিসেস বিপাশা বেগম নিচে যেতে বলেছে।

বিকেলে রোদসী সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে সেজেগুজে একটু তৈরি হয়ে নেয় রোদসী। এতে রোদসী বিরক্তবোধ করলও কিছু করার নেই কারণ দাদু বলেছে। এমন রংচং দিয়ে তার সাজতে ভালো লাগে না তবুও এখন রেডি হতে হবে। সে মেইড কে যেতে বলে কাবার্ড থেকে একটা নীল শাড়ি নামিয়ে পড়ে নিলো। রোদসী নিচে নেমে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে দাড়ালো এক পাশেই দাড়ালো,

“এমা দাড়িয়ে কেনো নতুন বউ, আচ্ছা আমাদের পাশেই বসো। লজ্জা পেও না আমরা তোমার শাশুড়ির বান্ধবীও বলতে পারো।”

রোদসীকে বসার জায়গা করে দিলে এক আন্টি। রোদসী তার দেখানো জায়গা মতোই বসলো। সামনে কিছু আন্টিরা বসা আর দাদি বসা। চাচীমনি নেই বোধহয় রান্নাঘরে। আর মিসেস বিপাশা বেগম এটা ওটা বলে গল্প করছে আন্টিদের সাথে এতে দাদিযে খুশি নন তা তার চেহারায় ফুটে উঠেছে। রোদসী মাথা নিচু করে বসে আছে।

এক আন্টি রোদসীকে প্রশ্ন করা শুরু করলো। রোদসীর এসব কিছু কেমন ইন্টারভিউ এর মতো লাগে তবুও চুপ থেকে কথার উত্তর করে।

“বাসায় কে কে আছে তোমার? মানে বাবার বাড়ি?”

“জ্বি সবাই আছে।”

“সবাই বলতে? যৌথ পরিবার?”

“জ্বি।”

“বাবা কি করে?”

“পারিবারিক ব্যাবসা আছে।”

“ওহ কয় ভাইবোন তোমরা?”

“ছোটো একটা বোন আছে।” মাথা নিচু রেখেই সব কথার জবাব দিলো রোদসী।

“এমা কি গো বিপাশা, তোমার ছেলে কি মেয়ে আনলো। যৌথ পরিবারের মেয়ে। যানো তো এরা সংসার করতে পারে না ঠিক মতো? সারাদিন কিন্তু ধান্ধায় থাকে কিভাবে ঝামেলা সৃষ্টি করবে। এই সব মেয়েরা অনেক চালাক হয়। সাবধানে থেকো আর সংসার বেঁধে রেখো।”

বলেই আন্টিরা হাসাহাসি শুরু করলো। রোদসী মনে মনে দুঃখ পেলেও প্রকাশ করলো না।

“সংসার আমি করবো আন্টি, আপনারা না। তাই এই চিন্তা আপনাকে করতে হবে না। আপনারা আপনার সংসার বাড়ি ঘর সব সামলালেই হবে।”

মাত্রই বাসায় এসেছিলো উচ্ছ্বাস এসেই রোদসীকে এমন সং সেজে বসে থাকতে দেখে মেজাজ খারাপ হলো। ওকে এতো বার বলার পরও নিচে নেমেছে আবার এতো কথা শুনাচ্ছে একটু মাথা তুলেও দেখছে না। এই মেয়ে এমন কেনো। ভেবে পায় না উচ্ছ্বাস। তিতিবিরক্ত হয়ে উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকে এগিয়ে যায়।

রোদসী উচ্ছ্বাস কে দেখে বড় বড় চোখে তাকালো। ও মাঝে মাঝে ভেবে পায় না এই ছেলে এমন ভুতের মতো কিভাবে সময় মতো হাজির হয়।রোদসী মনে মনে ভয় পায়। উচ্ছ্বাসের এতো বার বলা স্বতেও সে নিচে নেমে এসেছে সাথে এদের এতো বকবকানি শুনেছে। এমনিতেই সে সংসার ভেঙে ফেলবে শুনে অনেক মনে কষ্ট পায় রোদসী এর মধ্যে আবার উচ্ছ্বাস এখানে এসে পড়েছে। কি থেকে কি করে বসে এই ছেলে তার ঠিক নেই।

উচ্ছ্বাসের কথা শেষ হবার সাথে সাথেই সবাই একে ওরদিকেই তাকিয়ে থাকে। মিসেস বিপাশা সাফাই গাওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠে,

“মাহাদী বাবা আসলে ওরা রোদসীকে দেখতে এসেছিলো। কথার মধ্যে ভুলে বলে ফেলেছে ওদের হয়ে আমি রোদসীকে আর তোমাকে সরি বলছি। কিছু মনে করো না।”

“রোদসী তুমিও কিছু মনে করো না। আসলে বোঝোইতো সবার বয়স হয়েছে। কোথায় কি বলা লাগে আগে ভেবে বলতে হয় সেটা ভুলে গেছে।”

এগুলো বলে সে হাসার চেষ্টা করে।উচ্ছ্বাস কোনো কিছুর জবাব না দিয়ে রোদসীকে কোলে তুলে নেয় এবং যেতে যেতে বলে,

“আমার বউ কোনো খেলার পুতুল না যে এভাবে বসিয়ে রাখতে হবে আপনাদের সামনে আর হ্যাঁ আমার সংসার বা পরিবার নিয়ে ভাবার জন্য আমি আছি আপনাদের ভাবতে হবে না। আর মাহাদী নামে আপনাকে কতবার বলবো আমাকে ডাকবেন না।”

দাদিও উচ্ছ্বাসের সাথে সাথে উঠে তার ঘরে চলে যায়। দিনদিন তার এইসব কাহিনী ভালো লাগে না। মিসেস বিপাশা বেগম কে না করার পরেও না মেনে রোদসীকে জোর করে নিচে নামানের জন্য জোর করে। এইসব কাহিনী বাড়িতে কেমন দিন দিন বেড়েই চলেছে। কবে এসব থেকে মুক্তি মিলবে খোদাই ভালো জানে এসব ভাবে ভাবতেই মিসেস রাবেয়া বেগম হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নিজের ঘরে চলে যায়।

মিসেস বিপাশা বেগম উচ্ছ্বাসের কথায় বান্ধবীদের সামনে অপমানবোধ করে তবে কিছু বলে না। সে হাসার চেষ্টা করে। সে তার বন্ধুবীদের দিকে তাকিয়ে নিজের সাফাই গাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,

“আসলে হয়েছে কি, উচ্ছ্বাস একটু রাগীতো। আর রোদসীকে সে এভাবে কারো সামনে আসতে দিতে চায় না। তোমরা কিছু মনে করো না। খেয়ে যেও আমি একটু আমার ঘর থেকে আসি।” মিসেস বিপাশা বেগম মহিলাদের উদ্দেশ্য এই৷ কথা বলে উঠে দাড়ায়।

এরিমধ্যে এক আন্টি বলে উঠে, “থাক বিপাশা এতো শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। বুঝেছি। আসলে পর তো পরই হয়। সতিনের ছেলে কি আর আপন হতে পারে।।”

অন্যএকজন আন্টি বলে উঠে, “ঠিক বলেছেন ভাবি। পরেরটা পরই হয়। কখনো আপন হয় না। তা যাইহোক আমাদের কি আমরাও চলে যাই খাবে না ভাবি অন্য এক সময় আসবো।” এসব বলে আন্টিরা চলে গেলো।

বিপাশা বেগমের এতবড় অপমানে চোখমুখ লাল হয়ে এলো। এতোক্ষণ অনেক কষ্ট করে নিজেকে কন্ট্রোল করেছে। তার কাছে এগুলো সহ্যের বাহিরে তবে এই বাড়িতে যেমন ঢুকেছে বুদ্ধি করে সেভাবেই কোনো ভুল পদক্ষেপে এই বাড়ি ছাড়া হতে সে রাজী নয়।

——

উচ্ছ্বাস রুমে এসে রোদসীকে বিছানা বসিয়ে কাবার্ড থেকে টি-শার্ট আর টাউজার নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। কিছুক্ষন পর সে বাহিরে এসে দেখে রোদসী ঠিক একই ভঙ্গিতে বিছানায় বসে আছে। উচ্ছ্বাস বারান্দায় চলে যায়। রোদসী উঠে ফ্রেশ হবার জন্য ওয়াসরুমে চলে যায়।

বের হয়ে দেখে উচ্ছ্বাস এখনো ঘরে আসে নি। রোদসী আয়নার সামনে যেয়ে নিজেকে দেখে তারপর ভাবে আসলেই সে সংসার ভাঙবে? আদোও সে পড়বে? এতো গুলোমকথা বলে গেলো মহিলা গুলো। তার অনেক কান্না পাচ্ছিলো এরি মধ্যে পিছনে থেকে একটা শক্তপোক্ত পুরুষালী হাতের বিচরণ চলে কোমরের দিকটায় এতে রোদসীর ধ্যান ভাঙে। উচ্ছ্বাস জিজ্ঞেস করে সে কি ভাবছিলো, রোদসী আয়নায় তার পাশে থাকা সুপুরুষের দিকে তাকিয়ে দেখে। এক দেখাতেই উচ্ছ্বাস কে পছন্দ করবে সবাই। উচ্ছ্বাস নিজেকে এমন ভাবেই গড়েছে তবে তাদের শুরু পরিচয় এতো তিক্ত কেনে হলো ভেবে পায় না রোদসী। আচ্ছা সব শুরুটা কেনো সুন্দর হয় না?

“এইরোদু কথা বলছো না কেনো? কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি। তুমি জানো না কথার জবাব না দিলে আমার রাগ লাগে তবুও তুমি মাঝে মাঝে চুপ থাকো আমি কিছু বলি না। কথার জবাব দেও না। কিছু বলি না বলে এই নায় যে কখনোই কিছু বলবো না। যা জিজ্ঞেস করেছি জবাব দেও।”

“আসলে ওই বাসার সবার কথা মনে পড়ছে। রুহির জন্য মন কেমন করছে। আমাকে একটু ওই বাসায় নিয়ে যাবেন?”

“বলেছি তো যাবো। তার আগে বলো নিচে গিয়েছিলে কেনো? বলেছিলাম না ঘর থেকে কোথাও যেতে না।”

হাতের বাধন আরো শক্ত করে উচ্ছ্বাস। ব্যাথা পায় রোদসী। নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তবুও এমন শক্তপোক্ত পুরুষের কাছে সে ছোট্ট একটা ন র ম শরীর মাত্র। কিছুক্ষণ চেষ্টা পর রোদসী ছাড়া পায়, উচ্ছ্বাস ছেড়ে দেয়। উচ্ছ্বাসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে তা দেখে রোদসী ভয় পায়। উচ্ছ্বাস এসে রোদসীর গাল টিপে ধরে বলে,

“তোমাকে কতবার বোঝাবো। বাংলা বোঝো না? বলিনি আমি না আসা পর্যন্ত নিচে নামবে না। ওরা এতোক্ষণ এতোকিছু শোনালো ভালো লাগলো। এন্সার মি! ডেম ইট”

হাতের সামনে যা ফুলদানি পেয়ে তা আয়নায় ছুরে মারলো উচ্ছ্বাস আর ওটা লেগে আয়নাটা ঝনঝন শব্দ করে ভেঙে গেলো। রোদসী একটু জড়সড়ভাবে দারালো তার এই উচ্ছ্বাস কে ভয় লাগে। রোদসীর মুখটা ভয়ে ছোটো হয়ে আসে। এরিমধ্যে বাহির থেকে দড়জায় অনবরত করাঘাত পড়তে থাকে সাথে অনেক জনের ডাকাডাকি। সবাই দরজা খুলতে বলছে। উচ্ছ্বাস একটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বিছানায় বসে পড়ে তারপর তাদের শুনিয়ে জোড়ালো গলায় বলে,

“আমাদের ম্যাটার আমরা বুঝে নেবো। তোমরা চলে যাও। কিছু হয় নি।”

চলে গেলো কিনা যায়নি তা বোঝা গেলো না। উচ্ছ্বাস রোদসীকে কাছে ডাকলো। রোদসী ভয় ভয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় উচ্ছ্বাসের দিকে। উচ্ছ্বাস তার পাশ দেখিয়ে বলে, পাশে বসতে। রোদসী চুপ করে উচ্ছ্বাসের পাশে বসে। উচ্ছ্বাস মাথা ঠান্ডা করে রোদসীর গালের দুপাশে হাত রেখে কাছে টেনে জিজ্ঞেস করে,

চলবে,,

ভুল ত্রুটির ক্ষমা মার্জনীয়।