ভালোবাসা তারপর পর্ব-০৭

0
166

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৭
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

সকালে রোদসী রুহির সাথে গল্প করছিলো। তখন উচ্ছ্বাস রোদসীকে বললো রেডি হতে তারা বের হবে। রোদসী একটু অবাকই হলো। কারণ উচ্ছ্বাস রোদসীকে নিয়ে বাহিরে বের হয় না। রোদসী কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উচ্ছ্বাস বলে,

“নো মোর টক। গো ফাস্ট যা বলছি তা করো।”

রোদসী একটা শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে উচ্ছ্বাসের সাথে গেলো।

—–

রুহি যখন নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখন আবার উদয়ের সাথে দেখা হয়। উদয়কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় রুহি উদয়কে ভেঙচি কাটলো তা উদয় আবার রুহিকে ডাক দিলো,

“এই মেয়ে।”

“রুহি। মাই নেইম ইজ রুহি। নাম মনে থাকে না? রুহি ডাকবেন।”

“মনে রাখার মতোও না। সে যাইহোক আমার কি। আগে বলো ভেঙচি কাটলে কেনো?”

“আমার মুখ আমি যা ইচ্ছে করবো তাতে আপনার কি? আপনার সমস্যা কোথায়? শুধু শুধু ঝগড়া করতে চান কেনো কাজ নেই আপনার?”

“ডিড ইউ মিন আমি ঝগড়ুটে?”

“অবশ্যই।”

এটা বলেই রুহি আবার ভেঙচি জায়গা ত্যাগ করে রুমে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

আর উদয় বলে,

“দুই বোনই এক সব সময় ঝগড়ায় ওস্তাদ।”

এই বলে হতাশ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সেও তার রুমির দিকে চলে যায়।

——

“নামো।”

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“ভার্সিটি”

“কার ভার্সিটি?”

“তোমার।”

“মানে?”

“তোমাকে আবার এডমিশন করাবো।”

“সত্যি!”

উচ্ছ্বাস মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বোঝালো। এতো রোদসী খুশি হলো। সে ভাবে নি এত তারাতারি উচ্ছ্বাস তাকে এডমিশন নেয়াবে।

উচ্ছ্বাস রোদসীকে সে ভার্সিটি থেকে তার স্টাডি কমপ্লিট করেছে সেটাতেই রোদসীকে এডমিশন করায়। উচ্ছ্বাস রোদসীকে নিয়ে ডিপার্টমেন্টের হেড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং সব ধরনের সমস্যা তাকে জানাতে বলে দেয়। স্যারও হাসি মুখে তাদের বিদায় জানায়।

——–

ওরা যখন বাসায় ফেরে তখন সবাই ড্রইরুমে বসে ছিলো। রুহি আর ঊষা ভীতু মুখে এক কোনায় দাড়িয়ে ছিলো। আর বৃষ্টি দিদুনের পাশে বসে কান্না করছিলো। রোদসীর চোখে মুখে কৌতূহল জাগে। হঠাৎ বাসায় এমন থমথমে পরিবেশ তার সাথে বৃষ্টি তো কান্নাকাটি করার মেয়ে না তাহলে কি হলো সে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকালো। উচ্ছ্বাস রুমের দিকে চলে যাচ্ছিলো তখনই উচ্ছ্বাসের বাবা রাশেদ সাহেব তাকে দাড়াঁতে বলে এবং তাকে বলে,

“তোমার বোন প্রেম করছে।”

উচ্ছ্বাস এবার দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে তাকায়। ওর তাকানো দেখে সবাই ভয় পেলো। বৃষ্টিরও জান যায় যায় অবস্থা। উচ্ছ্বাস সবার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করছে।

“আপনাকে এই খবর দিলো কে?”

“শুনেছি। কলেজে ঠিক মতো যাচ্ছে না। ড্রাইভার বললোও মাঝ রাস্তা থেকে মাঝে মাঝে নেমে যায়। অন্য মানুষ ও দেখেছে। জিজ্ঞেস করো ছেলে কে? কোন রাস্তার ছেলের সাথে এসব করে বেড়াচ্ছে!?”

উচ্ছ্বাস রাশেদ সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টির দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিলো, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বৃষ্টি কে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“উনি যা বলছে সত্যি?”

ওর কথার ধরণ থেকে রোদসী, ঊষা, রুহি ভয় পেলো, বৃষ্টি আরো জোড়ে কান্না করে দিলো।

“কি হলো জবাব দে?”

বৃষ্টি মাথা ঝাঁকিয়ে “হ্যাঁ” বললো।

উচ্ছ্বাস এবার বৃষ্টির পাশে এসে বসে। বৃষ্টি চোখ তুলে তাকায় উচ্ছ্বাসের দিকে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। উচ্ছ্বাস বৃষ্টির মাথা হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,

“ছেলেটা কে?”

বৃষ্টি এবার একটু সাহস পেলো। বাকিরা হাফ ছাড়লো। শুধু রাশেদ সাহিব চেচিয়ে উঠলেন। পাশেই বিপাশা বেগম মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলেন। এখন কোনো কথা মানে আগুনে ঘি ঢালা। তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে হয়েছে। তার পিছনে মালিহা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন। আরিফ সাহেব ব্যবসায়িক কাজে শহরের বাহিরে ছিলেন। রাশেদ সাহেব রাগান্বিত হয়ে বললেন,

“তুমি ওকে আহ্লাদ করছো মাহাদী? তুমি কি বুঝতে পারছো কি হচ্ছে? ও একটা ছেলের সাথে প্রেম করছে। কে না কে? কেমন কিছুই জানি না। আর তুমি শাসন না করে আপোষ করছো?”

উচ্ছ্বাস তার বাবার দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না। সে আবার বৃষ্টিকে ছেলের পরিচয় জিজ্ঞেস করলো।

বৃষ্টি কোনো মতো করে বলে,

“তোমরা সবাই ওকে চেনো।”

সবাই অবাক হয়। উচ্ছ্বাস আবার জিজ্ঞেস করলো,

“কে? আমাদের পরিচিত?”

বৃষ্টি আবারো মাথা ঝাকায়। এবার উচ্ছ্বাস সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বৃষ্টির দিকে তাকায় এবং বলে,

“তুই কি কোনো কারনে ভয় পাচ্ছিস? নাম বল কেউ কিছু বলবে না।”

বৃষ্টি এবার বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে বলে,

“আবিদ।”

উচ্ছ্বাস এবার সবার দিকে তাকালো। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে আবার বৃষ্টিকে জিজ্ঞেস করলো,

“আমাদের অফিসে যে জব করে? ওই ছেলেটা?”

বৃষ্টি নািচের দিকে তাকিয়ে শুধু মাথা ঝাকায়।

উচ্ছ্বাস বৃষ্টির পাশ থেকে উঠে বাবার দিকে তাকিয়ে তারপর বৃষ্টিকে বলে,

“আবিদকে বল ৩০ মিনিটের মধ্যে বাসায় আসতে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

এই বলে তার রুমের দিকে চলে গেলো, তার পিছনে রোদসীও চলো গেলো। বাকিরা সবাই হাফ ছাড়লো, সবাই ভয় পেয়েছিলো যে উচ্ছ্বাস রাগারাগি না করে বসে। উচ্ছ্বাস যেমন শান্ত আবার তেমন রগচটাও। কখন কি করে ফেলে ঠিক নেই।

—–

৩০ মিনিট লাগে নি। তার আগেই আবিদ এসে পরেছে। ভালোবাসার টান আছে তাহলে। এই ব্যাপারটা দেখে সবাই একটু সন্তুষ্ট হলো। কিন্তু এদিকে আবিদের প্রান যায় যায় অবস্থা। বৃষ্টি এখনো চুপচাপ আগের জায়গায়ই পড়ে আছে। তার মাথায় ঢুকছে না। কি থেকে কি হচ্ছে আর সামনেই বা কি হবে।

এদিকে রুহি আর ঊষা মিটিমিটি হাসছে। ওদের এমন হাসতে দেখে উদয় বিরক্ত বোধ করে। সে ভাবে, এরা কি পা গ ল এমন সিরিয়াস একটা সময়ে এমন পা গ লে র মতো কে হাসে? তার বোন তো পা গ ল ই সাথে এগুলোরও নতুন আমদানি হয়েছে। এসব ভেবে বিরক্তিতে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।

রুহিও উদয়কে খেয়াল করেছে। সেও মনে মনে উদয়কে বলে, ব্যাটা ব জ্জা ত যেভাবে তাকিয়েছে যেমন মানুষ খুন করেছি। হুহ তাতে আমার কি আমি হাসবোই। দাত কেলিয়ে হাসবো। জোরে হাসবো। লাগলে শাকচুন্নির মতো হাসবে তাতে উদন না অস্ত ওর কি। এগুলো ভেবেই সে উদয় কে মুখ ভেঙিয়ে ঊষার সাথে হাসাহাসিতো যোগ করলো।

—–

উচ্ছ্বাসও কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়লো। এসে আবিদের সামনেই বসলো। আবিদের তো প্রাণ পাখি উড়ে যায়। সে কখনোই বৃষ্টির সাথে প্রেম করতে রাজি হতো না। সে জানে রাশেদ সাহেব এবং উচ্ছ্বাস কেমন। তাই সে বৃষ্টিকে পছন্দ করলেও কখনো প্রকাশ করে নি। তবে দিনদিন বৃষ্টির পাগলামি বাড়তে থাকে। এবং সব সময় তাকে বিরক্ত করতে থাকতো। ভালোবাসায় জোড় কি আর চলে শেষে আবিদও হার মেনে নেয় এবং শুরু হয় তাদের প্রণয়। তবে তখন এসব কথা তাদের মাথায়ও আসে নি। যে জানাজানি হলে কিভাবে মোকাবিলা করবে। বা কি হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই উচ্ছ্বাস মুখ খোলে এবং আবিদকে জিজ্ঞেস করে,

” কতদিনের সম্পর্ক?”

আবিদ একটু নড়েচড়ে বসে বৃষ্টির দিকে তাকায় তার পর বাকি সবাইকে দেখে চোখ নামিয়ে বলে,

“স্যার ৬ মাস।”

“আবিদ আমি এখানে তোমার স্যার হয়ে নয়। তোমার প্রেমিকার ভাই হিসেবে কথা বলছি।”

উচ্ছ্বাসের কথায় আবিদ একটু না অনেকটা ঘাবড়ে যায়। তবুও সেটা কাউকে বুঝতে না দিয়ে আবার বলে,

“জ্বি স্যার। না স্যার সরি স্যার। ভাইয়া।”

ওর এতগুলো কনফিউজড ভাবে কথা বলার ধরন দেখে ঊষা আর রুহি খিলখিল করে হেসে দেয়। সবাই ওদের দিকে তাকাতেই ওরা চুপ হয়ে যায়। বেচারা আবিদও একটু লজ্জাবোধ করলো।

“তারপর বলো। আমার বোনের সাথে প্রেম করলে কেন? টাকার জন্য?”

এটা বলেই উচ্ছ্বাস গা ছাড়া ভাব নিয়ে বসে। বৃষ্টি বা রোদসী এমনটা আশা করেনি। এমন প্রশ্ন করায় পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেলো। আবিদও এমন আশা করে নি। উচ্ছ্বাস তাকে এটা বলতে পারলো?

কিছুক্ষণ মুখ নিচু করে বসে ছিলো আবিদ। তারপর সরাসরি উচ্ছ্বাসের চোখের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,

“আমি আপনার বোন বৃষ্টিকে ভালোবাসি। এটাই বড় সত্যি। টাকার ব্যাপারটা কই থেকে আসলো?”

“প্রমান করো?”

এবারো আবিদ হকচকালো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

“কিভাবে?”

“বিয়ে করে।”

এটা বলেই উচ্ছ্বাস সোজা হয়ে বসলো।

সবাই অনেক অবাক হলো। রোদসীর তো কথাই বন্ধ হয়ে গেলো এমন লাগছে। তার কাছে মনে হচ্ছে তাদের বিয়ের দিনের মতো এখনও উচ্ছ্বাস তোরজোড় করে বিয়ের ব্যবস্থা করছে। এসব ভাবতেই তার মন খারাপ হয়ে এলো। তবুও সে চুপচাপ সব কিছু দেখতে লাগলো।

এদিকে আবিদও কোনো ভয় না পেয়ে বলে,

“আমি রাজী।”

উচ্ছ্বাস মনে মনে খুশি হলো। অবশ্য আবিদের ওপর তার ভরসা আছে। আবিদ উচ্ছ্বাসের ভার্সিটির জুনিয়র ছিলো এবং অফিসেও তার পারসোনালিটি একদম ক্লিয়ার।

উচ্ছ্বাস বলে,

“তাহলে তোমার বাবা মা কে বলো যা যা করার করে নিতে আজকেই বিয়ে।”

এটা বলেই সে উঠে চলে গেলো। রোদসীও আবার তার পিছন পিছন চলে গেলো। বৃষ্টির মনে হচ্ছে সে পাগল হয়ে গেছে নাহলো বাসার সবাই পাগল হয়ে গেছে। তবুও সে কিছু বলে না। সে একটা অন্যায় করেছে তাতে শাস্তি পেতেই হবে। কিন্তু বেচারা আবিদের কি দোষ। বৃষ্টিইতো আবদির কাছে বার বার প্রেম নিবেদন করতো।

———-

“আচ্ছা আপনি এতো অদ্ভুত কেনো?”

উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকালো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,

“কেনো কি করেছি আমি?”

“এই যে হুট করেই বৃষ্টির বিয়ে দিতে চাচ্ছেন? ও তো ছোট। এইচ. এস. সি পরীক্ষার আর কিছুদিন বাকি আর এখনই বিয়ে দিতে চাচ্ছেন? তাও ছেলেটার ব্যাপারে কোনো খবর না নিয়েই? ধরলাম ও আপনার ইমপ্লাই। তবু খোঁজ নিবেন না?”

এত গুলো কথা একসাথে বলে রোদসী থামলো। উচ্ছ্বাস রোদসীর কথায় মুচকি হাসলো তারপর বললো,

“আমি ওকে অনেক আগে থেকেই চিনি। আর ওরা যে রিলেশনশীপে ছিলো তা আমি জানতাম। আমি ভেবেছি ওর পরীক্ষা শেষ হলে কথাটা উঠাবো। তবে আগেই যেহেতু সামনে আসলো তাহলে সমস্যা কোথায় আবিদ ভালো ছেলে। পারসোনালি আমি ওকে চিনি আমার ভার্সিটির জুনিয়র। সাথে সব সময় ক্লিয়ার থাকে অফিস হোক কিংবা বাহিরে। এমন একটা ছেলেকে হাত ছাড়া করি কি করে? আর বিয়ে বলতে আকদ করে রাখবো পরে না হয় বাকি অনুষ্ঠান করা যাবে। তা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না বিবিজান।”

এটা বলেই উচ্ছ্বাস রোদসীকে কাছে টেনে জরিয়ে ধরে। রোদসীও তা অনুভব করে।

চলবে……..

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।