#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৪
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখে সাঈফ এসেছে। শব্দেরসাঈফের পাশেই বসে আছে। রোদসী নিচে নামতেই সাঈফ কেমন অদ্ভুত চোখে তাকালো। রোদসী কেমন কেমন অনুভব হলো তবুও কিছু না বলে শব্দকে প্রশ্ন করে,
“ডেকেছিলে ভাইয়া? কিছু বলবে?”
“হ্যাঁ বস।”
রোদসী বসলো। শব্দের কথা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে রইলো শব্দের মুখ পানে। তবে শব্দ কিছু না বলে আবারো সাঈফের সাথে কথা বলতে মত্ত হলো। তাই রোদসী বিরক্তিতে মুখ নামিয়ে চুপচাপ বসে ছিলো। কিছুক্ষণ বাদে শব্দ বলে তাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসতে আর সাঈফের জন্য চা, আর শব্দের জন্য কফি বানিয়ে আনতে। রোদসী উঠে চলে গেলো। কিচেনে আগে থেকেই মিলিখালা উপস্থিত ছিলো। রোদসী দাঁড়িয়ে চা, এবং কফি বানাতে লাগলো। মিলিখালা আগে থেকেই নাস্তা তৈরি করে রেখেছিলো তাই তার আর বানাতে হলো না। সব কিছু সাজিয়ে আবারো ড্রইংরুমে এসে শব্দকে কফি আর সাঈফকে চা দিলো। সাঈফ চা নেয়ার সময় কেমন মুচকি হাসলো তা রোদসীর ভাল লাগলো না। তবে ভাইয়ের বন্ধু বলে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। তারপর রোদসী শব্দের পাশেই বসে পড়লো। শব্দ কফি খেতে খেতে রোদসী কে রুমে চলে যেতে বললো রোদসী উঠে রুমে এসে সোজাসুজি বিছানায় সুয়ে পড়লো। আজকাল কেমন একটুতেই হাঁপিয়ে ওঠে রোদসী। মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ডাক্তার দেখাতে হবে। কিন্তু তার জন্য বাড়ির বাহিরে যেতে হবে। যা রোদসী চায় না। এসব ভেবেই রোদসী বড় নিঃশ্বাস টেনে চোখ বোঝে।
——
“ভাইয়া।”
উচ্ছ্বাস দরজার দিকে তাকায় উদয় দাঁড়িয়ে আছে তার ঘরের সামনে। উদয় ঘরে এসে ডিভানে বসে তারপর সাহস করে বলে,
“কি হাল করে রেখেছো নিজের? সে খেয়াল আছে? অফিসেও যাচ্ছো না। ব্যবসা লাটে উঠবে। সবাই তো রোদসীকে খুঁজছে তবুও তুমি পাগলামি কেনো করছো।”
উচ্ছ্বাস উচ্চশব্দে হাসলো। হেসে বলে,
“যে নিজে থেকে হারায় তাকে কি করে খুঁজবো? তাকে পাবি না।”
মুখটা কেমন অসহায় দেখালো। তারপর কেমন কন্ঠে উদয়কে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা আমি কি অনেক খারাপ? আমার দোষ আমি ওকে বেশি ভালোবাসতাম এটাই? এই কারণে ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? বল? কই তোরা তো ছেড়ে গেলি না??”
উদয় ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো তা দেখে উচ্ছ্বাস আবারো হেসে উঠলো। উদয়ের ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগলো। কিছুটা সাহস করে উচ্ছ্বাসকে বলে,
“ভাইয়া তোমার চেইকআপ করানো উচিত!”
“তুই কি বলতে চাইছিস আমি আসলেই মানসিক রোগী? পা গ ল!”
“সেটা বলছি না। তুমি নিজের দিকে খেয়াল করছো না। তাই একবার মেডিকেল চেইকআপ করো। আর অফিসে বসবে। আমি এতো কিছু সামলাতে পারবো না। আমি কিছু জানি না। তুমি এটাই করবে।”
এই বলেই উদয় চলে যায়। আর উচ্ছ্বাস ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। উদয় আর রুহির বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। রুহি রোদসীকে ছাড়া বিয়ে করবে না। যতদিন না রোদসীর খোঁজ পাওয়া যায় ততদিন বিয়েও হবে না। তাই রোদসীকে এখনো সবাই খুজেঁ চলেছে।আদোও রোদসী কোথায় আছে কেউ জানে না। একমাত্র তার জন্য রোদসী পালালো আর এই কারণে ছোটো ভাইয়ের বিয়েটাও আঁটকে আছে। উচ্ছ্বাস হতাশনিঃশ্বাস ত্যাগ করে চোখ বুঝলো। আর ভাবলো আসলেই তার ডাক্তার দেখানো উচিত। সে পা গ ল হয়ে গেছে।
——–
“সাঈফ তোমাকে পছন্দ করে। তোমাকে বিয়ে করতে চায়! আমি বলেছি তোর থেকে মতামত নিয়ে জানাবো।”
“হোয়াট?”
চেঁচিয়ে উঠলো রোদসী। তারপর রাগীকন্ঠে বললো,
“কি যা-তা বলছো এসব ভাইয়া। তুমি উনাকে বলো নি যে আমি বিবাহিত? আর তুমিও এই প্রস্তাব রাখলে কি করে? মাহাদীর সাথে আমার ডিভোর্স পর্যন্ত হয় নি। মাহাদী জানতে পারলে কি হবে জানো তুমি? আর তুমি কি পাগলামি শুরু করেছো? তুমি ঠিক আছো?”
“আমি ঠিকই আছি। আমি চাই তুই নতুন করে জীবন শুরু কর। না হলে মাহাদীর কাছে ফিরে যা।”
“আমি জানি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। আর পালানোর পরে এখন আমাকে পাগলের মতো খুঁজছে। এখন যদি আমি ফিরে যাই মাহাদী আমাকে মেরেই ফেলবে! তুমি কি চাও আমি ফিরে যাই।”
“তাহলে কি করবি? এভাবেই থাকবি? লোক জন কি ভালো বলে?”
“ভাইয়া আমি তোমার বাসায় থাকি খাই। এতে অন্য মানুষের বলাবলি বা কথায় আমার কিছু যায় আসে না। তুমি তোমার কলিগ কে না করে দেবে। আমি এইসব পছন্দ করি না। আর বাড়াবাড়ি করলে আমি এখান থেকেও চলে যাবো!”
“কোথায় যাবি? কোথাও যাবার যায়গা আছে? সেই প্রথম থেকে তো এখানে ঘাপটি মেরে থাকছিস! তুই এখানে থেকে বের হলেই তোর মাহাদী তোকে পেয়ে যাবে। তারপর কি হবে তা আমারও ভাবনার বাহিরে। তুই তো জানুস তোর স্বামী কেমন!”
রোদসীকে ভীত দেখালো ঠিক তবুও রোদসী তার মতামত থেকে নড়লো না। রোদসী এমন অটল সিদ্ধান্তে শব্দও মনে মনে খুশি হলো তবে মুখে কিছু না বলে স্থান ত্যাগ করে।
—–
“আপুর কোনো খোজঁ পেলে উদয়?”
উদয়ের মখ চিন্তিত দেখালো। তারপর উত্তর করলো,
“না খুঁজছি। রোদসী এমন বোকামি করবে তা আমার কল্পনাতেও আসে নি। এভাবে কেউ পালায়? আল্লাহ জানে কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে।”
রুহি উদয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই ছিলো। আসলেই আপু এতো বড় গাধামী কিভাবে করলো?
——–
“ভাইয়া আসবো?”
উদয় দরজার দিকে তাকালো। বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে। এতো রাতে বৃষ্টিকে দেখে উদয় অবাক হলো চোখ ঘুরিয়ে ঘরির দিকে তাকালো বারোটা বাজতে চলেছে। কিঞ্চিৎ চিন্তিত হয়ে আসতে বললো। বৃষ্টিকে কেমন যেনো লাগছিলো মনে হচ্ছিলো কোনো ব্যাপার নিয়ে ভয় পেয়েছে অথবা চিন্তিত। বৃষ্টি ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে উদয়ের কাছে ডিভানে বসে। উদয় অবাকের ওপর অবাক হয়। বৃষ্টির সাথে তার সম্পর্ক ওতভালো নয়। তাহলে হুট করেই এমন ব্যাবহার করছে কেনো উদয় তা মেলাতে পারলো না। তবুও নিজেকে শান্ত করে বৃষ্টি কে শুধায়,
“কি হয়েছে? তোকে এমন লাগছে কেনো?”
ভাইয়া যা বলছি মন দিয়ে শুনো। আর হ্যাঁ উচ্ছ্বাস ভাইকে বলো না। তাহলে ধ্বংস করে ফেলবে
“কি ধ্বংস করবে কি যা তা বলছিস?”
উদয়ের মাথায় ঢুকছিলো না বৃষ্টি কিসের ব্যপারে বলছে। এবার বৃষ্টি একটু নড়েচড়ে বসে বলে,
“ভাবীকে মা পালাতে সাহায্য করেছে।”
উদয় চমকে বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে আবারো বলতে শুরু করে,
“আমি মাত্রই মা কে কারো সাথে কথা বলতে শুনেছি। তিনি কাকে যেনো বলছিলো, মেয়েটাকে ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করলাম। নাম হলো পালিয়েছে। তবে লাভ কি হলো তোদের কাছে তো যায় নি। কি জানি কোথায় গেলো। আমার ভীষণ ভয় করছে। উচ্ছ্বাস বা বাড়ির কেউ এ ব্যাপারে জানলে আমাকে অস্ত রাখবে না। মেয়েটা যে কই গেলো। আদোও বেঁচে আছে কিনা তাও জানি না।”
উদয়ের মুখ শক্ত হয়ে উঠলো। ঘরের মধ্যেই কাল সাপ পুষেছে। উদয় দাঁড়িয়ে যায় তা দেখে বৃষ্টিও তাড়াহুড়ো করে দাঁড়ায় এবং বলে ভাইয়া মথা ঠান্ডা করো। ভুল করে কোনো স্টেপ করে ফেল্লেই আমাদেরই ক্ষতি। উনি যা করছে তার ফাঁদে তাকেই ফালাতে হবে। আর ভাইকে জানানো জাবে না। আর শোনো ভাইয়াকে ডাক্তার দেখানোর ব্যাবস্থা করো।
উদয়ও ব্যাপারটা বুঝলো বৃষ্টি মন্দ বলে নি। যা করতে হবে মাথা ঠান্ডা করে করতে হবে। রোদসী কোথায় আছে তা খুঁজতে হবে। আর ভাইকেও ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করতে হবে।
——-
“ভাইয়া কোথায় যাচ্ছো?”
“ডাক্তারের কাছে।”
উদয় অবাক হয়ে তাকালো। ঊষা কেবন পানি মুখে দিয়েছিলো ভাবে বলে। ছিটকে বেরিয়ে পড়বো বৃষ্টির ওপর। বৃষ্টি রিয়াকশনও ছিলো ভুত দেখার মতো। উচ্ছ্বাস সবার রিয়েকশন দেখে বিরক্তবোধ করলো। সে ডাক্তার দেখাবে এতে এমন রিয়াকশন দিয়ের কি আছে?
উদয় ভাইয়ে ভালো করে দেখে। বোনদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি যা শুনেছি। তোরাও তাই শুনেছিস?”
বৃষ্টি আর ঊষা বোকার মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। ওদের এমন কর্মকান্ড দেখে উচ্ছ্বাস ওখানে থেকে বেড়িয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়।
—-
দরজা লাগানোর শব্দ শুনে মিসেস বিপাশা চমকে তাকায়। উদয়কে দরজা লাগাতে দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠে,
কি হয়েছে কি? তুই আমার রুমে কি করছিস? আর দরজা লাগালি কেনো?
হয়েছে তো অনেক কিছুই। তার আগে বলো তুমি কি চাও?
এটা বলেই পুরো রুমে চোখ বহলিয়ে বিছানায় আধসোয়া হয়ে বসে উদয়। তা দেখে রেগে উঠে মিসেস বিপাশা বেগম।
হচ্ছে কি উদয়। হঠাৎ করে এসেছো ভালো কথা। এইসব কি কান্ড? আর কি চাই বলতে কি বলতে চাইছিস?
সেটা তো তুমিই যানো। দেখো আমি ঠান্ডা ভাবে ব্যাপারটা মিটাতে চাচ্ছি তবে এটা ভাইয়ার কানে গেলে কি কি ভয়ংকর কান্ড হবে তা আমার থেকে তুমি ভালো জানো।
কাধ উঠিয়ে কথা বলে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে উঠে বসলো উদয়। মিসেস বিপাশা বেগম ভিতরে ভিতরে চমকে উঠে। উদয় কিসের ব্যাপারে বলছে? সব জেনে গেছে? কিন্তু জানলো কি করে? এসব ভাবতে ভাবতেই মিসেস বিপাশা বেগম ঘেমে একাকার। উদয় তা দেখে হাসলো। তারপর মিসেস বিপাশা বেগমের সামনে এসে বলে,
ভালোয় ভালোয় বলো রোদসী কোথায়? আর ওকে পালাতে সাহায্য করেছো কেন? কি কারণে?
আমি জানি না ওই মেয়ে কোথায়। সত্যি বলছি।
আবারো জিজ্ঞেস করছি ভালোয় ভালোয় বলো রোদসী কোথায়? ভাইয়া আসলে কিন্তু আমার মতো ভালো মানুষির ব্যবহার করে জিজ্ঞেস করবে না!
আমি সত্যি বলছি ও কোথায় জানি না।
বলেই মিসেস বিপাশা বেগম কান্না করে দিলেন।
তাহলে ওকে পালাতে সাহায্য করেছো কেন? কারণ কি? আর কোথায় পাঠাতে চেয়েছিলে? বলো কোথায়?
আমি ও সাহায্য করিনি। পথের কাটা সরিয়েছি শুধু মাত্র। আমি তো চেয়েছিলাম প তি তা লয় পাঠাতে সেখান থেকে ও আর আসতে পারতো না কিন্তু ভাগ্যবশত রোদসী ওখানে ও যায়ই নি।
এই কথা শুনে উদয়ের মাথায় রক্ত উঠে যায়। রক্তচোখ নিয়ে বিপাশা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
কেনো চাচী? ও কি ক্ষতি করেছে? ও বুঝিছি! ও তোমার সতিনের ছেলে আর ছেলের বউ এর জন্য? নাকি সম্পতির জন্য? তার জন্য এমন কাজ করবে? রোদসীর জায়গায় একবার বৃষ্টিকে ভাবো তো?
বিপাশা বেগম চমকে তাকালো উদয়ের দিকে। তা দেখে উদয় হাসলো।
কি এখন ভাবতে বুক কেপে উঠছে? নিজের মেয়ের কথা শুনে এমন লাগছে? রোদসীও তো কারো মেয়ে! আচ্ছা চাচী, মানুষ খারাপ হতে পারে কিন্তু মায়েরা তো খারাপ হয় না। তাহলে তুমি এমন করলে কেন? ঠিক আছে ও তোমার দেয়া ঠিকানার ওখানে যায় নি? তাহলে এখন কোথায় রোদসী? আদোও ঠিক আছে কিনা তার কি গ্যারান্টি আছে বা ও ভালো কোথাও আছে?
উদয় ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয়। তা দেখে বিপাশা বেগম শব্দ করে কান্না করে দিয়ে বলে,
বাবা আমাকে মাফ করে দে। আমি সত্যি এমনটা করতে চাইনি। সম্পতির লোভে কি থেকে কি করে ফেলেছি বুঝতে পারিনি।
ক্ষমা করবো তোমাকে? আর লোভ এগুলো করে কি পেলে? সবাই যখন জানবে সবার ঘৃণা নিয়ে বাচঁতে পারবে তো। আর বৃষ্টি? ওর চোখে চোখ রাখতে পারবে তো?
মিসেস বিপাশা বেগম কেমন যেনো করে উঠলেন। মুখটা পাংশুটে বর্ণ দেখালো। ঘামতে লাগলেন। উদয় তার মুখ দেখে থামলো। কিন্তু বিপাশা বেগম আর কিছুই দেখতে পেলেন না! তারপর… সব অন্ধকার।
——
ডাক্তার, চাচীর কি অবস্থা?
ড.মুনীব শব্দ মাত্রই অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হতে উদয় শব্দকে উদ্দশ্য করে প্রশ্নটি করলো। শব্দ আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
আমরা আমাদের চেষ্টা করেছি। উনি কিছু দিন যাবত অনেক চিন্তায় ছিলেন। তাই ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেছিলো। সাথে স্ট্রোক করেছে। এখন সময় বলে দেবে কি হবে। আমাদের হাতে কিছুই নেই। এক্সকিউজ মি.. বলেই শব্দ স্থান ত্যাগ করলো।
দূরে বৃষ্টি দাড়িয়ে সব শুনছিলো ঊষাও তারএক পাশে বসে ছিলো। শব্দের কথা শুনে বৃষ্টির কান্না বেগ বেড়ে যায়। ঊষা বৃষ্টিকে ধরে বসে ভাইয়ের মুখলর দিকে তাকালো। উদয়ের মুখেও চিন্তার ভাজ।
চলবে…..
#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৫
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সময়ের সাথে সাথে মিসেস বিপাশা বেগমের অবস্থা আরো বেগতিক হতে লাগলো। এতে সবাই চিন্তিত হয়ে উঠেছে। তবে উচ্ছ্বাসও মাঝে মাঝে হসপিটালে এসে সবকিছু দেখে যাচ্ছে। বাকিসব কার্যক্রমের ভার পড়েছে উদয়ের ওপর। রাশেদ সাহেব হসপিটালে এসে বিপাশা বেগমের এই অবস্থার কারণ জিজ্ঞেস করলে উদয় জানায়,
” চাচীর কাছে গিয়েছিলাম কিছু কথা ছিলো কিন্তু সব কথা বলতে পারিনি তারপর হঠাৎ ই কেমন যেন দেখালো উনাকে হঠাৎ করেই শরীরের বিবর্ণ হয়ে উঠলো তারপর জ্ঞান হারায়। আমি সবাইকে ডাকার পর হসপিটালে নিয়ে আসি।”
রাশেদ সাহেব শুনলেন শুধু কিছু বললেন না৷ তাই উদয়ও আর কিছু বলে নি। রোদসীকে নিয়ে যে কথা হয়েছে তা সবার থেকেই চাপিয়ে গেছে উদয়। সে চায় না এই ব্যপারটা আরো জল ঘোলাটে হোক। সমস্যার এমনিই অন্ত নেই। এই ব্যাপারে উচ্ছ্বাস জানলে কোনো না কোনো কান্ড ঘটবেই তাই উদয় চায় আপতত এই টপিক অফ রাখতে।
——
“ড. আসবো?”
শব্দ চোখ তুলে তাকায়। দরজায় উচ্ছ্বাস দাড়িয়ে আছে। শব্দ সামান্য হেসে মাথা নাড়িয়ে জবাব করে ভিতরে আসুন।
উচ্ছ্বাস এসে সামনে চেয়ারে বসে শব্দের দিকে তাকায়। তারপর কিছু সময় নিয়ে প্রশ্ন করে,
“পেসেন্ট কেমন দেখলেন? কি অবস্থা?”
“আমি আগেই বলেছি। আমাদের হাতে কিছু নেই। তারপর বলেন আপনার কি অবস্থা?”
এটা বলেই শব্দ হেসে উঠে সাথে উচ্ছ্বাসও হেসে উঠে জবাব দেয়,
“ভালো প্রফেশনালের মতো ব্যবহার শিখেছিস দেখছি। ফরমালিটিস তাই না, ভালোই। তা বল এই নাটকে কেনো?”
“নাটক না বন্ধু কলেজের পর ওভাবে আর দেখা হলো কোথায়? তুই ব্যাস্ত ভার্সিটি আর আমি মেডিক্যাল। তা বল তোর কি খবর? দিন কাল কেমন যায়?”
“এই তো আছি। ডাক্তার দেখাচ্ছি আবারো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।”
“আ্যনক্সাজায়েটি, এংগার ইস্যু?”
“হ্যা, আবারো বেড়েছে।”
উচ্ছ্বাসের মুখটা পাংশুটে দেখালো তা দেখে শব্দ উঠে বসে জিজ্ঞেস করে,
“তুই কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছিস? কি হয়েছে খুলে বলতো।”
উচ্ছ্বাস কিয়ৎক্ষনণ সময় নিলো। তারপর জবাব দিলো
“হু। আমি বিয়ে করেছি।”
“গ্রেট। কনগ্রেচুলেশন।”
“বাট, আমার এই সমস্যার কারণে বউ আমাকে ভয় পেতো।”
“পেতো বলতে? এখন পায় না?”
“পাবে কি করে? সে তো পালিয়েছে।”
“মানে কি?”
“ও আমাকে অনেক ভয় পেতো। আর আমি তো জানিস কেমন? রাগ উঠলে কনট্রোল করতে পারি না। তারওপরে ইনসিকিউরড ফিল হতো। তাই ওকে কোথাও যেতে দিতাম না। কারো সাথে মিশতে দিতাম না। তাই ও নিজেও আমার থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। আর একদিন দুম করেই হঠাৎ পালিয়ে গেলো। কোথায় গেলো খুঁজেই পেলাম না। খুঁজছি এখনো! আর ভাবলাম ডাক্তারও দেখাই।”
“আচ্ছা বুঝলাম ডাক্তার কি বললো?”
“মেডিসিন চলবে। অনিয়ম করা যাবে না।”
“তাই কর তাহলে। তুই একটু কেবিনে বস। আমি বিপাশা আন্টির রুম থেকে ঘুড়ে আসি।”
উচ্ছ্বাস কোনো জবাব না দিয়ে শুধু মাথা নাড়লো। শব্দ চলে গেলো আর উচ্ছ্বাস ভাবতে লাগলো। পৃথিবী আসলেই গোল। শব্দের সাথে উচ্ছ্বাসের হোস্টেল লাইফ শুরু। কলেজ পর্যন্ত একসাথেই ছিলো। তারপর দুইজন দুইদিকে উচ্ছ্বাস ভার্সিটি আর শব্দ মেডিক্যাল। তারপর থেকেই যে যার মতো ব্যাস্ততায় ভালো যোগাযোগ ছিলো না। গতকাল হঠাৎ ই শব্দের সাথে উচ্ছ্বাসের দেখা হয়। দুজনেই অবাক হয়। আহা! জীবনটা কত অদ্ভুত। আচ্ছা এমন করে যদি একদিন হঠাৎ রোদসীর সাথে দেখা হয় কেমন হবে? রোদসী কি আবারো চলে যাবে? এসব ভেবে উচ্ছ্বাস দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে।
—–
“ডা. পেসেন্টের কি অবস্থা? উন্নতি হচ্ছে? নাকি!”
শব্দ একটা মিষ্টি নারীকণ্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকায় শব্দ। একটা উনিশ বছর বয়সী মেয়ে উত্তরের আশা উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে শব্দের মুখের দিকে। শব্দ আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো বৃষ্টি একটা চেয়ারে বসে আছে সাথে একটি ছেলে। বৃষ্টির বর হয়তো। শুনেছে উচ্ছ্বাসের সৎ বোনের বিয়ে হয়েছে। শব্দ চোখ ফিরিয়ে আবারো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কে আপনি? কার আপডেট জানতে চাইছেন?”
প্রচন্ড কাঠকাঠ শোনালো জবাবটা৷ মেয়েটিও এমন আশা করে নি তবে সে শুনেছে যে ডাক্তারদের ব্যবহার কেমন রুড রুড হয় ক্যাটক্যাটে হয়। এখন দেখেও নিলো। তবুও মেয়েটি নিজেকে সামলে শব্দের চোখে চোখ রেখে বলে,
“আমি ঊষা। আর যার কেবিন থেকে চেকআপ করে বের হলেন। আমি উনার কথা জিজ্ঞেস করলাম সে আমার চাচী হয়।”
“ওহহো এবার চিনেছি। তুমি তাহলে উচ্ছ্বাসের কাজিন। এম আই রাইট৷ মি.. হোটএবার। উনার কোনো উন্নতি দেখছি না। এবার সরো আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”
ঊষা যাহাপারণই অবাক হয়ে তাকালো শব্দের দিকে তাকে কিভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে লোকটা। এ নাকি দায়িত্বশীল ডক্টর। ঊষা মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে শব্দকে যাবার জায়গা করে দেয়। শব্দ প্রস্থান করে আর ঊষা তার অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে তা দেখতে থাকে। শব্দ চলে গেলে চোখে ঘুড়িরে অদূরে বেঞ্চে বসে থাকা বৃষ্টির দিকে তাকায়। একদিনেই মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। ঊষা হেঁটে বৃষ্টির কাছে যে দাঁড়ালো। বৃষ্টিও মুখ তুলে ঊষার দিকে তাকালো। কেমন নির্জীব ঠেকলো চাহনীটা। ঊষার বুক মুচরে উঠলো। ঊষা বৃষ্টির পাশে বসলো। বৃষ্টি এতোক্ষণে জিজ্ঞেস করলো,
“ডাক্তার কি বললো?”
শব্দোর কথা শুনে ঊষা মুখ বকালো। এতো বদ ঠিক মতো আপডেটই জানালো না। বৃষ্টি ঊষাকে ধাক্কা দিয়ে আবারো একই কথা জিজ্ঞেস করলো,
“কি বলছিনা কেন আপু?”
“অবস্থা আগের মতোই! উন্নতি হচ্ছে না।”
উত্তরে এমন কিছুই আসবে জানতো তবুও মুখে অন্ধকার নামলো বৃষ্টির তা দেখে খারাপ লাগলো ঊষার। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির হাতের উপর রাখলো ভরসা দেয়ার চেষ্টা করলো। হতাশানিঃশ্বাস ত্যাগ করে ভাবলো। ভাবী যাবার পর থেকেই একটা না একটা সমস্যা লেগেই রয়েছে। কে জানো কোথায় আছে। ভালো আছল না মন্দ। এসব ভাবতে ভাবতেই মুখ ভরে নিশ্বাস টেনে নিলো। তাকে শান্ত থাকতে হবে। বৃষ্টিকে সামলানোর জন্য এখন সে ছাড়া কেউ নেই তাই তাকে শান্ত থাকতেই হবে।
——-
রোদসী ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলো। সন্ধ্যায় ইদানীং মেজাজ খিঁচিয়ে থাকে। অল্পতেই অনেক ক্লান্ত লাগে। ঘুম আসে, কিছু খেতে ইচ্ছে হয় না। আর জোর করে খেয়েই কেমন বমি বমি পায়। কি এক মুসিবতে পড়লো রোদসী। একবার ভেবেছিলো শব্দকে বলবে কিন্তু শব্দ চিন্তা করবে বিধায় বলা হয় নি। এমনই সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। রোদসী আশেপাশে মিলি খালাকে ডাকাডাকি করার পরেও কোনো সাড়া পায় না। এদিকে যে ডোরবেল বাজাচ্ছে তারও বোধহয় ধৈর্য অনেক কম। একটু দেড়িও সে মানতে নারাজ। এতে রোদসীর মেজাজ আরো খিঁচিয়ে উঠে। নিজেই কষ্ট করে ওঠে বিরবির করে বকতে বকতে দারজা খুলে একটা কিছু বলতে যাবে। দড়জার ওপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটা কে দেখে থেমে যায় রোদসী। মুখ থেকে ছিটকে বের হলো,
“আপনি?”
——–
দিন যায় দিন আসে কিভাবে কিভাবে কেটে গেলো অনেক গুলো দিন। রোদসী পালানোর পর রোদসী এবং উচ্ছ্বাসদের বাড়ির কারোই শসন্তিতে ঘুম উবে গেছে। সবার একটাই চিন্তা রোদসী কোথায়? আদোও বেচেঁ আছে তো? থাকলেও কোথায় আছে। উচ্ছ্বাসও পাগল প্রায় তবুও এখন নিয়মিত সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে কাউন্সিলিং করছে। বদলেছে রুহি আর উদয়ের সম্পর্কোও তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তাতের সম্পর্কের শুরুটা বেশি খারাপও যায়নি। রুহির পা ভাঙার পর হঠাৎ উদয় বাড়ির সামনে আসলে তা রুহি চাচার নজরবন্ধী হয় তারপর সরাসরি রুহির বাবার থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং রুহি জানায় তারা একে ওপরে ভালোবাসে এতে রুহির বাবাও দ্বিমত পোষণ না করে রুহিকে বলে তাদেরকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। রুহি যখন উদয়কে এ বিষয় জানায় তখন ব্যপারটা এমন হলো যে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। পরে তারা কথাবার্তা ঠিক করে প্রস্তাব রাখে আগে আকদ করবে তারপর বৃষ্টির সাথে অনুষ্ঠান করা হবে। কিন্তু বেঁকে বসে রুহি সে জানায় যতদিন না রোদসী খুঁজে পাওয়া যাবে সে বিয়ের পিড়িতে বসবে না।ব্যাস সবার চিন্তা এখন থেকে আরো জোড়ালো হলো সাথে সবার ঘুমও কার্পুরেট ন্যায় উবে যায়। তার ওপরে মারার ঘা হয়ে উদয় জানতে পারে রোদসী নিজে থেকে পালায় নি তাকে ফুসলিয়েছে বিপাশা বেগম। কিন্তু রোদসী কোথায় আছে কেউ জানে না। এর ওপরে হঠাৎ মৃতদশা বিপাশা বেগমের এহেন অসুস্থতায় সবার মাথা থেকে রোদসীর ব্যাপারটা বেড়িয়েই গেছে। এখন সবার দোয়া আগে বিপাশা বেগম সুস্থ হয়ে উঠুক তারপর নাহয় আবারো রোদসীকে খোঁজার দায়িত্বে সবাই নেমে পড়বে।
চলবে……
ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।