ভালোবাসা তারপর পর্ব-২০+২১

0
149

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:২০
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

“চায়ছো কি তুমি?”
ঊষার হাত শক্ত করে ধরে শব্দ জানতে চাইলো। ঊষা ছলছল চোখে বলে,

“আপনাকে!”

“পাগল হয়ে গেছো তুমি ঊষা? কি বলছো? ঠিক আছো তুমি?”

“হ্যাঁ। পাগল হয়ে গেছি। আপনি বোঝেন না? আর কত নিচে নামাবেন আমায়? বলেন তো কি কমতি আছে আমার?”

“কমতির ব্যাপার না”

“তাহলে?”

“তোমাকে অনেক বার বুঝিয়েছি ঊষা আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু। আর তুমি যে পাগলামি করছো তা অহেতুক।”

“আপনার কাছে আমার ভালোবাসা অহেতুক?”

“এইসব কথা বলতেই এখানে এসেছো?”

“ভালোবাসার কথা বলতে মানা নেই। বলতে পারেন এসব বলতেই এখানে এসেছি।”

শব্দ আশেপাশে থাকায়। হসপিটালের বেশিরভাগ মানুষ তাদের দিকে বাঁকাচোখে তাকিয়ে আছে। তাই শব্দ ঊষার হাতটা ছেড়ে দিলো। মেয়েটা রোজ আসে হসপিটালে আর এসেই এমন পাগলামি করে। যেমন ভাই তার তেমন বোন। শব্দ ভেবে পায় না তার জন্য এই মেয়ে এতো পাগল কনো? শব্দ এবার নরমাল হবার চেষ্টা করে বলে,

“বাসায় যাও আর এখানে কোনো সীন ক্রিয়েট করো না সবাই দেখছে। আর আমারও পর পর তিনটি অপারেশন আছে।”

শব্দ এতটুকু বলেই স্থান ত্যাগ করে
আর ঊষা এবারো আগের মতো হতাশ হয়৷ শব্দের জন্য ঠিক এই ছয় থেকে সাত মাস ধরে এমনই পাগলামি করে আসছে। ছেলের মন গলছেই না। এই ছেলে কি দিয়ে তৈরি ঊষার বুঝে আসে না। এবারও হতাশ হয়ে ঊষা হসপিটাল থেকে বের হতেই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খায়। ঊষা নিজেকে সামলে ছেলেটাকে “সরি” বলে। ছেলেটিও কোনো মতে নিজে সামলে বলে,

“আ’ম সরি মিস। আসলে একটু পরেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হবে। তাই তাড়ায় ছিলাম।”

ঊষা এবার ছেলেটির দিকে ঠিক মতো পর্যবেক্ষণ করে দেখে পাশেই ব্যাচে লিখা ড.সাঈফ আকন। ঊষা বুঝলো এই ছেলে তাহলে ডক্টর। ঊষা বলে,

“আসলে আমিও দুঃখিত। আমি অন্যমনষ্ক ছিলাম তাই আপনাকেও খেয়াল করি নি।”

সাঈফ হেসে বলে, আচ্ছা সমস্যা নেই। এবার আমি আসি। বলেই সাঈফ সেখালন থেকে বিদায় নেয়। ঊষাও মাথা নাড়িয়ে হেসে নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে।

—–

আবিদ আর বৃষ্টি এসেছে বিয়ের শপিং করতে সাথে রুহি এবং উদয়ও এসেছে। ঊষাকেও জোড় করে ধরে নিয়ে আসে বৃষ্টি এতে ঊষা যাহাপরানই বিরক্ত ঊষা। সে আছে তার চিন্তায় আর এদিকে এরা আছে নিজেদের বিয়ের খুশিতে। সবাই সেই কখন থেকে বিয়ের জন্য শাড়ি লেহেঙ্গা দেখেই চলছে এতে ঊষার বিরক্তির শেষ নেই। ঊষা বিরক্ত নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই তার চোখে পড়ে একটা সবুজ শাড়ির ওপর। চোখটা মনে হচ্ছে সরছেই না। ঊষাও মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় উঠে এসে শাড়ি দেখে। তারপর কি যেনো মনে কটে শাড়িটা নিয়ে ট্রায়াল রুমে যায়। শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছিলো। আচ্ছা তাকে শব্দ বারবার কেনো রিজেক্ট করে দেয়? সে কি সুন্দর না? তারপর কি মনে করে চুলটা খুলে দেয়। টিপ থাকলে ভালোই হতো। কিছুক্ষণ নিজেকে অবলোকন করে বাহিরে বের হয়ে আশে। বাহিরে আসতেই ঊষার চোখ ছানাবড়া। সে বিষ্ময়কর চোখ নিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে তার বিশ্বাস হচ্ছে না উচ্ছ্বাস এসেছে সাথে আবার শব্দ ও? আচ্ছা সে কি দিন দুপুরে তারা দেখছে। ঊষা সামনে চোখ রেখেই হেটে আসতে থাকে। শব্দও কি নিয়ে যেনো কথা বলছে হঠাৎ তার চোখ যায় সামনের দিকে এক রমনী সবুজ রংয়ের শাড়ি পড়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। শব্দের কথা বন্ধ হয়ে যায়। সবুজ রংটা তার পছন্দ না হলেও এই রংটা মনে হচ্ছে শুধু মাত্র এই মেয়ের জন্যই তৈরি। শব্দের মনে হলো তারও ঊষার মতো মনের মধ্যে ধরাস ধরাস রোগ হয়ে যাচ্ছে। হৃয়দটা বোধহয় এবার চিঁড়ে বেড়িয়েই আসবে। শব্দ কে কথা বন্ধ করতে দেখে সবাই অবাক হয়ে শব্দ যে দিকে তাকানো সেদিকে তাকায়। ঊষা এগিয়ে এসে সামনে দাড়িয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইচ্ছেকৃতভাবে কাশি দেয়। এতে শব্দ চোখ নামিয়ে অন্য দিকে তাকায়। ঊষা তা দেখে হেসে সবাইকে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগছে? সবাই জানায় তাকে মানিয়েছে। কিন্তু শব্দ কোনো কথা বললো না তাই ঊষার অনেক খারাপ লাগলো তবুও তা প্রকাশ করলো না। ঊষা তখনও আগ্রহী দৃষ্টি নিবন্ধন করে রেখেছিলো শব্দের দিকে কিন্তু শব্দ তার আশায় পানি ফেলে অন্যদিকে চলে যায় আর ঊষা এবারও হতাশ হয়। কি করলে যে এই ছেলের মন গলবে কে জানে!

——

তাদের শপিং করতে করতে রাত হয়ে যায় তাই বাকিরা সবাই প্লান করে বাহিরে খাবে কিন্তু শব্দ মানতে নারাজ তার একটাই কথা তার বোন অপেক্ষা করছে। শেষে উচ্ছ্বাস মুখ খোলে,

“তুই আমাদের সাথে ডিনার করে যা। আর তোর বোনের জন্য নিয়ে যা। যতটুকু শুনছি তোর বোন প্রেগন্যান্ট। রাইট?”

সবাই এক কথা বললে শব্দ আর কোনো কথা পেলো না অগত্যা রাজি হলো। আর রোদসীকে কল দিয়ে বললো সে বাহিরে খাবে আর আশার সময় নিয়ে আসবে। রোদসীও মেনে নিলো।

খাবার সময় শব্দ বসেছিলো উচ্ছ্বাসের পাশে তবে ঊষা বসে শব্দর ঠিক বিপরীত পাশে শব্দের মুখোমুখি। ঊষাকে দেখে মনে হচ্ছে খাবার খাচ্ছে কম চোখ দিয়ে শব্দকে গিলছে বেশি। শব্দ হঠাৎ করে এমন লুক দেখে কেশে উঠে। সবাই অবাক হয় আর ঊষা তারতারি মুখের সামনে পানি ধরে। অগত্যা সেই পানি খেতে হলো। তারপর ঊষা বেহায়ার মতো তাকিয়েই আছে। এতে শব্দের অস্বস্থি হয়। শব্দ চোখ রাঙিয়ে তাকালে ঊষা চোখ টিপ দেয়। এতে শব্দ আরো অবাক হয়। একরত্তির মেয়ে দেখো তার বেহায়াপানা। বড় ভাইয়ের বন্ধুকে লাইন মারছে। শব্দ আর কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দেয়। আর ঊষা মিটিমিটি হাসে। এগুলো সব এতোক্ষণ বৃষ্টি দেখছিলো। বেচারি এখনো বোকা বোকা চোখে শব্দ আর ঊষাকে দেখে যাচ্ছে। সে সবার মুখ দেখে আবিদের দিকে তাকালো। আবিদ জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেন?

সবাই বৃষ্টির দিকে তাকালে। বৃষ্টি থতমত মুখ নিয়ে জবাব করে,

“এই তো খাচ্ছি।”

তারপর তারা টুকিটাকি কথা বলে খাওয়া শেষ করে সেখানে থেকে বেড়িয়ে পড়লো।

——

শব্দের বাসায় ফিরতে আজকে ভালোই দেরি হয়েছে। নিজের কাছে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাসায় ঢোকে। বাসায় আসার পর দেখে রোদসী এখনো সোফার বসে আছে কাছে যেয়ে বোঝে রোদসী ওখানেই ঘুমিয়ে গেছে ব্যাপারটা শব্দের পছন্দ হলো না। এই সময় এভাবে এখানে ঘুমানো না ভালো নয়। যদি পড়ে যায়? শব্দ রোদসীকে আলতো গলায় ডাকলো,

“তাবাসসুম। এই তাবাসসুম?”

রোদসী নড়েচড়ে উঠলো। আসতে আসতে পেটে হাতদিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কে ডাকছে। চোখ খুলে দেখলো শব্দ তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদসী অল্প নড়ে উঠে বসলো। তারপর হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“এসেছো কখন?”

“মাত্র। তুই এখানে ঘুমাচ্ছিস কেনো?”

“আরে বোঝোই তো এই সময় ঘুম হয় না। তাই এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিভাবে যে চোখ লেগে আসলো বুঝতে পারি নি। আমাকে একটু ধরো আমার ঘরে যাবো।”

“খেয়েছিস?”

রোদসী মাথা নাড়িয়ে বোঝালো “হ্যাঁ। খেয়েছে।”

শব্দ রোদসী ধরে নিজের ঘরে যেতে সাহায্য করছে মাত্রই আটমাসে পড়লো। মেয়েটা এখনই ভালোমতো নড়াচড়া করতে পারে না। রোদসীকে ঘরে দিয়ে এসে। যা খাবার এনেছিলো সব ফ্রীজে রেখে নিজের রুমে এসে একেবারে গোসল করে এসে বারান্দায় দাঁড়ায়। শুধু একটা ট্রাউজার পরে উন্মুক্ত শরীর বারান্দায় দাড়িয়ে আছে শব্দ এই ঠান্ডা বাতাসটা ভালো লাগছে শব্দের কাছে। হঠাৎ করেই শব্দের সেই সবুজ শাড়ি পড়া রমনীর কথা মনে পড়লো। কই এতো দিন তো মনে পড়েনি? হঠাৎ করেই এমন হচ্ছে কেনো? শব্দ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করে। হচ্ছে না! চোখ বন্ধ করলে আবারো সেই সবুজ শাড়ি পড়া রমনীকেই দেখছে। শব্দ চোখ খোলে বিধ্বস্ত মন নিয়ে আশেপাশে চায়। তারপর রুমে যেয়ে সিগারেট আনে। সাধারণ সিগারেট খাওয়া হয় না। তবে থাকে যখন এমন বিধ্বস্ত লাগে তখনই খায়। সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া উড়ায় নিকশ কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে। শব্দের কাছে ঘুরে ফিরে একটা প্রশ্নই আসে তার এমন বিচ্ছিন্ন লাগে কেনো? আচ্ছা তার একটা পরিবার থাকলে কি হতো? আর তার ছোটো বোন? এতো দিনে বোধহয় তাকেও বিয়ে দিতো তারপর? এমন মামা হবার খবর পেতো! আসলে জীবন কখনোই একই নিয়মে চলে না। শব্দ কখনোই ভাবিনি। হঠাৎ করেই এমন সুন্দর পরিবারটা নিঃশেষ হয়ে যাবে। সিগারেট শেষ হলে আবারো ধরায়। আজকে রাতে আর শব্দের চোখে ঘুম ধরা দেয় না। সারারাত বারান্দায় সিগারেট খেয়েই কাটিয়ে দেয়। ফজরের আজান কানে আসলে আবারো গোসল করে নামাজ পড়ে ঘুৃমানো চেষ্টা করে। এবারো ফল শূন্য। সবদিক থেকে কেমন একা একা লাগছে। উঠে বসে তারপর বাহিরে তাকিয়ে দেখে এখনো ভোরের আলো ফুটেনি। সময় নিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থেকে রেডি হয়ে হাটতে বাহিরে চলে যায়।

চলবে।

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:২১
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

দেখতে দেখতে বিয়ের সময় ও এসে পড়েছে। বিয়েতে যাতে কোনো কমতি না থাকে এসব দায়িত্ব উচ্ছ্বাস নিয়েছে। যেহেতু উচ্ছ্বাসের ট্রিটমেন্ট চলছে তাই সে এখন পুরোপুরি সুস্থ না হলেও মোটামটো সুস্থ বলা যায়।

কথা ছিলো আবিদ আর বৃষ্টির বিয়ের অনুষ্ঠান করে তুলে দেয়া হবে আর উদয় ও রুহির আকদ হবে। কিন্তু দিন দিন বিপাশা বেগমের অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না দেখে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রুহি এবং উদয়ের বিয়ে একেবারে অনুষ্ঠান করে রুহিকে উঠিয়ে আনবে। বিপাশা বেগমের অবস্থা চিন্তা করে কেউ আর দ্বিমত পোষণ করে না।

একটু আগে থেকেই বিয়ের সব প্রোগ্রাম শুরু হয়। প্রথমে মেহেদী এবং তারসাথে সংগীত। তারপর হলুদ হবে। বিয়ের পর রিশেপশন। উচ্ছ্বাস চায় না তার ছোটো ভাই বোনের বিয়েতে কোনো কমতি থাকুক। একসাথে যেহেতু দুটো বিয়ে তাই তারা একটা বড় রিসোর্ট ভাড়া করে সেটাই সব অনুষ্ঠান করবে। সব আত্নীয় স্বজন প্রায় এসেই পড়েছে। একটু পর মেহেদীর অনুষ্ঠান শুরু হবে। সেই কখন থেকে রুহি আর বৃষ্টি কে সাজানো হচ্ছে। এদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। তাই মালিহা বেগম ঊষাকে পাঠায় যেনো তারাতারি দুই বউকে নিয়ে আসে। বউ দের সাথে বিয়ে বাড়ির মেয়েরা তো আছেই। এদিক ওদিক ছেলে দেখছে। ঊষার বন্ধুবীরা তো কতক্ষণ ওটা নিয়ে টানাটানি করে তো কতক্ষণ অন্য ছেলে। এটা নিয়ে এদের হাসাহাসির শেষ নেই। এর মধ্যে সেখানে উচ্ছ্বাস এসে উপস্থিত হলে সবাই চুপ করে উচ্ছ্বাস কে দেখেই চলেছে। উচ্ছ্বাস এসে ঊষাকে জিজ্ঞেস করে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা? তাহলে যেনো বউদের নিয়ে আশা হয়। ঊষা সব ঠিক আছে জানিয়ে রুহি আর বৃষ্টি কে আনার জন্য সবাই তার সাথে যেতে বলে। এদিকে উচ্ছ্বাস কথা শেষ করে চলে যেতেই মেয়েদের মধ্যে গুঞ্জন উঠে কে উচ্ছ্বাসকে দেখে ফিদা হয়েছে তো কার কোন জিনিস ভালো লেগেছে। এসবে ঊষা বিরক্ত হয়ে উঠে আসে। বাচ্চারা এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়ি করছে। ঊষার সামনে এসে এক পিচ্চি দৌড়ে এসে ধাক্কা লাগে। ঊষা শাড়ি পড়াতে নিজেকে সামলাতে না পেড়ে নিজেও বাচ্চার সাথে উল্টে পড়ে। ঠিক তখনই সেখানে এক লোক এসে দাঁড়ায়। ঊষা জুতো জোড়া দেখে উপরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে শব্দ এসে দাড়িয়েতার দিকে তাকিয়ে আছে। শব্দ বাচ্চাকে উঠেয়ে আশেপাশে তাকলো কেউ না থাকায় সে নিজের হাত বাড়িয়ে বললো উঠতে। ঊষা কাপা হাত বাড়িয়ে দিলো শব্দের পানে। শব্দ ঊষার হাতটা শক্ত করে উঠে উঠালো। উঠে দাড়িয়ে বুঝলো পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। ভালোই পায়ের গোড়ালি টনটন করে ব্যাথা করছে। শব্দের দিকে টলমল চোখে তাকুয়ে বললো,

“পায়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছি। মনে হয় না হাটতে পারবো।”

শব্দ ঊষার দিকে তাকালো মনে হচ্ছে শুধু একটা টোকা দিলেই কান্না গড়িয়ে পড়বে ঊষার চোখ দিয়ে। শব্দ নিচে তাকিয়ে দেখে ভালোই উঁচু জুতো পড়েছিলো যার দরুণ হঠাৎ পড়ায় ঊষা ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। শব্দ আশেপাশে না তাকিয়ে নিচে বসে ঊষার পা থেকে জুতো খোলে। ফর্সা পা হওয়াতে বোঝা যাচ্ছে ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। জায়গাটা পুরোই লালচে দাগ পড়ে গেছে। জুতো খুলে শব্দ এবার আশে পাশে তাকায়। এক মেয়ে হেটে আসছিলো। শব্দ তাকে ডেকে বলে,

“যদি আপনার কোনো সমস্যা না হয় ঊষাকে একটু সাহায্য করুন। ওকে একটু ধরে ওর রুমে রেখে আসবেন?”

মেয়েটা শব্দের দিকে তাকিয়ে ঊষার দিকে তাকালো। ঊষা এখনো শব্দের দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবেনি এভাবে শব্দের সামনে পড়বে। ওইদিনের পর থেকে শব্দ কল বা তার সামনে যায় নি। আর আজকেই পড়তে হলো তাও শব্দের সামনে। মেয়েটি দুজনকে ভালো মতো দেখে জানায় সে পাড়বে। পরে ঊষাকে ধরে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যায়। আর শব্দ ঊষার জুতো নিয়ে তাদের পিছনে যেতে লাগলো। রুমে আসার পর মেয়েটিকে একটা মলম আর একটা ঠান্ডা পানি এনে দিতে বলে। মেয়েটিও যেয়ে পানি আর ফাস্ট এইড বক্স এনে দিয়ে চলে যায়। শব্দ যত্নশীল হাসে পায়ের ক্ষতস্থানে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে মলম দিয়ে বলে একটু রেস্ট করে যেনো নিচে নামে। ঊষাও ভদ্র মেয়ে মতো মাথা নাড়িয়ে জানায়, আচ্ছা। শব্দ সব বুঝিয়ে দিয়ে বের হতে যাবে তখন আবারো কিছু মনে হবার ভঙ্গিতে বলে,

“তোমার কোনো ফ্রেন্ডকে ডেকে নেও। যদি প্রয়োজন পড়ে। পায়ে প্রেশার দিও না। ব্যাথা কমলে নিচে নেমো আর উঁচু জুতো পড়ার দরকার নেই। সে জিনিস আরামদয়ক থেকে রিস্ক বেশি থাকে তা এভয়েড করাই ভালো।”

শব্দ এটুকু বলেই চলে যায়। আর ঊষা স্তব্ধ মুখে শব্দের যাওয়া দেখছে। এ কোন ড. মুনীব শব্দকে দেখছে? যে কিনা তার ফিলিংসের পাত্তা দেয় না। কান্নাকাটি করলেও ফিরে তাকায় না সে কিনা এতো কেয়ার করলো। ভাবতেই কেমন খুশি খুশি লাগলো। ঊষা ধপ করে সুয়ে একা একা মিটি মিটি হাসতে লাগলো। আচ্ছা এতো সুখ সুখ লাগছে কেন? সে কি আবারো বেহায়াপনা করেছে? নাহ! এখানে ঊষা কিছু করে নি। শব্দই তো সব করলো। এতো যত্নশীল। তারপর এভাবেই কিছু ক্ষন সুয়ে থেয়ে ফোন উঠিয়ে ঊষা তার ফ্রেন্ডদের কল দিয়ে বলে ওদের মধ্যে একজন যেনো তারকাছে আশে সে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। আর বাকিরা যেয়ে যেনো রুহি আর বৃষ্টি কে স্টেজে নিয়ে যায়।

————

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে অনেক আগে। ঊষা,বৃষ্টির বান্ধবীরা এদিক ওদিক ছেলে দেখছিলো আর হাসাহাসি করছিলো এর মধ্যে লিমা নামে একটা মেয়ে বলে উঠে,

“যাই বলিস না কেন। উচ্ছ্বাস ভাইয়ের মতো হ্যান্ডসাম আমি দেখি নাই। ভাবী যে কি গা*ধামি করে চলে গেলো আমি বুঝি না।”

এর মধ্যে আরেক জন বলে উঠে,

“আরে তোরা উচ্ছ্বাস ভাইকে নিয়ে পড়ে আছিস? জানিস তার একটা বন্ধু এসেছে। ভাই আমিতো তাকে দেখে সেখানেই ফিট খাওয়ার যোগার।”

ওর কথার ভঙ্গি দেখে সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এরি মধ্যে ঊষা এসে হাজির হয়। ওকে দেখেই ওই মেয়েটি বলে,

“আরে ঊষা শোন না? ওই দেখ তোর ভাইয়ের পাশে দাড়ানো গ্রে স্যুট পড়া লোকটা তোর ভাইয়ের বন্ধু রাইট?”

ঊষা পিছনের দিকে ফিরে তাকালো। ঊচ্ছ্বাসের সাথে শব্দ দাঁড়িয়ে আছে। ঊষা এবার মেয়েদের দিকে ফিরে তাকিয়ে জানতে চাইলো,

“হ্যাঁ। ভাইয়ার বন্ধু। কেনো?”

এই কথা শুনে ওদের খুশি দেখে কে। আরেক মেয়ে বলে,

“এই নাম কি রে? সিংগেল? কি করে? জানিস কিছু?”

ঊষার মুখ শক্ত করে বলে,

“শোন যার তার দিকে নজর দিস ভালো কথা। তাই বলে এর দিকে আবার নজর দিস না। এ তোদের ভবিষ্যৎ দুলাভাই। ভালো করে দেখে নে।”

ঊষার কথা শুনে সবার মুখ ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। ওদের রিয়েক্ট দেখে ঊষা হেসে উঠলো। তা দেখে আরেক বান্ধবী বলে,

“মামা, ছেলেটা আমাদের হেব্বি লেগেছিলো। কিন্তু এদিকে যে তুই লাইন মারছিস তা কে জানতো। তোর পছন্দর আমাদের ভালো লেগেছে। তাই থাক, তোর জন্য না হয় আমরা ছাড়ই দিলাম।”

তারপর সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি বলিস তোরা?”

সবাই মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। ঊষাও ওদের সাথে আড্ডায় যোগ হয়।

সবাই বসে মেহেদী দিচ্ছিলো। বর কনে রা বসে আস্তে আস্তে কথা বলছে আর কি নিয়ে হাসছে। তা নিয়ে মজা করতে কোনো ছাড় দেয় নি উষা, রুহির বান্ধবী আর বৃষ্টির বান্ধবীরা। এদিকে উদয় আর আবিদের বন্ধু রাও কম যায় না। দুই পক্ষেই সমান সমান। রুহি আর বৃষ্টি হাতে মেহেদী দেয়া শেষে ঊষা দেখে ওরা ওদের বরের নাম লিখেছে হাতে। আর আবিদ আর উদয়ের হাতেও জোর ওদের বউদের নাম লিখে দেয়া হয়। ঊষা এসব দেখে কি জেনো মনে করে নিজেও যেয়ে মেহেদী আর্টিস্টের কাছে বসে। তারপর বলে মাঝে শব্দের নাম লিখে দিতে। যেহেতু ও সবার শেষে দিয়েছে। তাই বাকিদের এদিকে মনোযোগ ছিলো না। এভাবেই মেহেদীর পর্ব শেষ হয়।

————-

পরের দিন রাতে হলুদের জন্য বর বউ কে এনে পাশাপাশি বসানো হয়। একে একে সবাইকে হলুদ দেয়া শেষ হলে সবাই নাচানাচি। হই হুল্লোড়ে যোগ দেয়। হলুদ দিয়েই বড়রা নিজেদের মতো ছোটোদের স্পেস দিয়ে চলে যায়। ঊষা ওদের হলুদ দিয়ে হাতে একটু হলুদ নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকায়। দূরে এক পাশে বসা হালকা হলুদ রংয়ের পাঞ্জাবি পড়া শব্দের উপর চোখ আটকায় ঊষার। ঊষা ধীরে ধীরে হেটে এসে শব্দের সামনে দাড়ায়। শব্দ ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে ঊষার পানে তাকায়। ঊষা আশে পাশে তাকিয়ে শব্দের দিকে একটু ঝুকে আসে। কিন্তু শব্দ বুঝতে পারে না ঊষা হঠাৎ এমন করছে কেনো। সে ওভাবেই ঊষার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ঊষা আস্তে হাতটা উঠিয়ে এনে হাতের হলুদ গুলো শব্দের গাল লাগিয়ে দিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে। যতক্ষণে শব্দ ব্যাপারটা বুঝে আসে ততক্ষণে ঊষা দৌড়ে পালায়। ঊষা দৌড়ে রিসোর্টের নির্জন পাশে এসে দাড়ায়। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে এই পাশে কেউ নেই। ঊষা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাটতে যাবে তখনই কেউ তার হাত ধরে টান দিলো। চিৎকার করার আগেই মুখে হাত রাখে এতে ঊষা আরো ঘাবড়ে যায়। ছোটাছুটির চেষ্টা করলে যে তাকে ধরে রেখেছে তার ধরার ধরণ আর
শক্ত এবং ঘনিষ্ঠ হয়। এতে ঊষা আরো ভয় পায়। ভয়ে ঊষার চোখ থেকে পানি বেড়িয়ে আসে। আস্তে করে একটা কন্ঠ কানে আসলো ঊষার।

“স্টপ।”

ঊষা একদম চুপ হয়ে বিষ্মফরিত চোখে লোকটার পানে চায়। আবছা আলোতে সেই মুখ ঊষার কাছে ফুটে ওঠে যা উষার কাছে অকল্পনীয়। তার মনে হয় সে ঘোরে আছে। লোকটার চোখ আজ অন্য কথা বলছে। যা কখনোই ঊষা দেখেনি। লোকটা আরো একটু দুরত্ব কমিয়ে আনে। ঊষা এখনো স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ কোমরের দিকে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে ঊষা। লোকটার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে তার হাতেও এখনো হলুদ দখল করে আছে। ঊষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই উষ্ঠে আঙুল রেখে চুপ থাকতে বলে লোকটা। ঊষা এখনো দেখছে। এ যেনো নতুন কাউকে আবিষ্কার করছে ঊষা। লোকটা নিজের হলুদ দেয়া গাল এগিয়ে এনে ঊষার গালে ঘষা দেয়। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ঊষার আচড় লাগে তাই হাতটা পাঞ্জাবির বুকের দিকটা খামচে ধরে ঊষার মুখ থেকে একটা নাম বের হয়ে আসে।

“শব্দ।”

শব্দ এবার ঊষার মুখের দিকে তাকালো। ঊষা ততক্ষণে শব্দ বক্ষস্থলে জায়গা করে নিয়েছে। শব্দ তা দেখে নিঃশব্দে হাসে। ঊষাকে আরো গভীর করে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে চোখ রাখে। এদিকে ঊষার অবস্থা নাজেহাল। একসাথে হঠাৎ করেই অপ্রতাশিত কিছু পাওয়ায় সে স্তব্ধ হয়ে আছে। যদি এটা কল্পনা হয় তাহলে সে এখান থেকে কখনোই বের হতে চায় না। ঊষা শব্দকে আরো গভীর ভাবে আলিঙ্গন করলো মনে হয় যদি সে পারতো তাহলে সে শব্দের বুকের মধ্যে চলে যেত এবং সেটাই ঊষার কাছে প্রধান কাজ হতো। শব্দ কিছুক্ষণ সময় দেয় ঊষাকে স্বাভাবিক হতে। ঊষা স্বাভাবিক হয় ঠিকি কিছু বুক থেকে মাথা উঠায় না। ওভাবেই মুখ লুকিয়ে থাকে। শব্দ ঊষার মাথার চুলে হাত ডোবায় তারপর মুখ খোলে,

“নিজেকে এতো এতো সামলে লাভ কি হলো? সেই তো এই পিচ্চি মেয়েটার কাছে হার মানতেই হলো।”

ঊষা শব্দের মুখের পানে চাইলো। ঊষা কিছু বলার আগেই শব্দ আবারো বলতে শুরু করলো,

“এই যে আমি শব্দ। যার জন্য এত পাগলামি করলে, পেলেও। তার এই ছন্নছাড়া, অনিশ্চিত জীবনে কেনো নিজে থেকে জড়াতে চাইলে? আমার কেউ নেই। সব দিকে থেকেই একা। একটা শ্রদ্ধীয় পেশা আর আমার পরিচয় ছাড়া আমার কাছে কিছু নেই আর না আছে একটা পরিবার তাও কেনো জড়ালে আমার সাথে?”

উষা বুকে মাথা রেখে জবাব করে,

“আমার কিছু লাগবে না। আপনি থাকলেই হবে। আমার আপনাকে লাগবে। অন্য কিছু লাগবে না। বিশ্বাস করুন আমার এতো খুশি লাগছে। ঠিক ছোটো বেলায় বায়না করলে সাথে সাথে পেয়ে গেলে যেমন খুশি হতো। আজকেও ঠিক তেমন খুশি হচ্ছে। আমি আপনাকে বোঝাতে পারবো না।”

শব্দ ঊষার এমন বাচ্চামি কথা শুনে হাসে। এ মেয়ের মন মানষিকতা নিত্যন্তই বাচ্চামি দিয়ে ভরা নাহলে কেউ এসব জানার পরও তাকে এভাবে আকড়ে ধরতে চায়। শব্দ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে সময়টা উপভোগ করে। কে জানে এই সময় দ্বিতীয়বার আসে কিনা।

————

আজকে বিয়ে। সবার মনে যেমন আনন্দের ছটা দেখা যাচ্ছে ঠিক তেমনি একটা বিষাদের ছোয়া লাগে আছে। আদরের মেয়েরা আজ অন্য ঘরে যাবে। সংসার হবে তার হবে ছোটো একটা পরিবার। এটাই আমাদের সমাজের এটা প্রচলিত ধারা। মেয়ে মানুষ হলে একদিন না একদিন নিজের বাড়ি ছেড়ে যেতেই হবে। কি নিদারুন ব্যাথা তবুও সুখীর জন্য মুখে হাসি ফুটিয়ে বিদায় দিতে হবে।

যেহেতু আবিদ আর বৃষ্টির আগে থেকে আকদ করানো ছিলো তাই তাদের বিয়ের কাজটা প্রথমে শেষ করা হয়। তার কিছুসময় পরই উদয় আর রুহিকে এনে রাখা হলো। সামনের সাদা পর্দার সাথে দেখা যাচ্ছে ফুলের পর্দা। কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন। সবাই চুপচাপ পরিবেশে কাজীর কথা শুনে যাচ্ছিলো। কাজী দোয়া পাঠ করে কথা শেষ করে উদয়কে কবুল বলতে বলে। উদয় একটুও দেরি না করে কবুল বলায় আশেপাশে হাসির রোল পড়ে যায়। তারপর আসে রুহির পালা। কাজী রুহিকে কবুল বলতে বললে রুহি তখনও চুপ করে বসে থাকে। তার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। রেদোয়ান এসে রুহির কাঁধে হাত রাখে রুহি মুখ তুলে রেদোয়ানের দিকে তাকায়। চোখ গুলো কেমন রক্তবর্ণ ধারণ করছে রুহির। রেদোয়ান মাথা নাড়িয়ে কান্না করতে বারণ করে কবুল বলতে বলে। রুহি কান্না করে দেয়। কান্নারত অবস্থায় অস্পষ্ট ভাবে কবুল বলে। রুহির কবুল বলাতে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এভাবেই বিয়ের পর্ব শেষ হয়।

দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলো ঊষা। কখন শব্দ এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে সে খেয়ালও ঊষার মাঝে নেই। সে এসব ভাবতেই ব্যাস্ত। আচ্ছা তাকে রুহির জায়গায় ভাবলে এমন কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে এমন লাগছে কেনো? সে তো বাবা মা ছাড়া থাকতে পারবে না। তাহলে ওরও এমন কষ্ট হবে? কান্না হবে। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। শব্দ ওকে কাঁদতে দেখে অবাক হয়। শব্দ ঊষাকে ডাকে। ঊষা শব্দকে দেখা চোখ মুছে জিজ্ঞেস করে সে কখন এসেছে। সে জানায় অনেকক্ষণ। ঊষা কিছু না বলে হাটা দিলো। শব্দ এবারো অবাক হয়। এই মেয়ের আবার কি হলো। এই তো এতদিন তার আগে পিছে চক্কর কাটতো। আজকে আবার হলো কি। ঊষা যেয়ে দূরে একপাশের চেয়ারে বসলো। কিছুক্ষণ পরেই সেখানে শব্দ উপস্থিত হয়ে তার পাশেই বসে। বিয়েটা যেহেতু রাতে হয়েছে তাই এই পাশে কেউ নেই সবাই নতুন বর বউ দেখায় ব্যস্ত। শব্দ ঊষার হাত ধরে কাছে এনে চুমু খেলো। ঊষা শব্দের পানে চায়। শব্দ জানতে চায় তার কি হয়েছে। ঊষা এবার মুখ খোলে,

“নিজেকে রুহি আপু বা বৃষ্টির জায়গায় ভাবলেই কেমন কলিজাটা ফেটে যায়। ওরা বাবা মা ছাড়া কিভাবে থাকবে। আমার ভাবতেই দমবন্ধ হয়ে আসছে।”

শব্দ হাসলো। তাপর ঊষার হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এটা এই জগতের নিয়ম। মেয়ে মানুষ হয়েছে বিয়ে তো দিতেই হবে। তোমার এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে যে ওরা ওদের বাবা মা ছাড়া থাকবে কি করে? কিন্তু ওরা এক মা বাবা থেকে আরেক মা বাবার কাছে যাবে। কিন্তু তুমি? আমার তো কেউ নেই।”

ঊষা শব্দের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎ করেই কি হলো ঊষা বুঝতে পারলো না। সে চুপ হয়ে শব্দের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার শব্দ ঊষার দিকে চাইলো। তাকিয়ে দেখে ঊষা তারদিকেই চেয়ে আছে। তা দেখে হাসলো। তারপর আবারো নিচে ঊষার হাত দেখতে দেখতেই হঠাৎ করেই থামকে গেলো। ঊষার হাতটা সামনে এনে ধরে তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা “S H O B D O”। শব্দ অবাক চোখে ঊষার পানে চাইলো। সে কখনো ভাবতেই পারেনি ঊষা এমন পাগলামি করবে। সে তেমন ভাবেই জিজ্ঞেস করে,

“কবে লিখেছো?”

“মেহেদীর অনুষ্ঠানে।”

“কেউ দেখে নি?”

“সবার শেষে দিয়েছিলাম তাই কেউ দেখেনি। দেখেছেন রং কত গাঢ় এসেছে? আমি শুনেছি যার হাতের রং যত গাঢ় হবে তার বর তাকে তত বেশি ভালোবাসবে।”

ঊষার এমন বাচ্চামি কথা শুনে শব্দ হেসে উঠলো।

——-

দেখতে দেখতে বিদায়ের সময় হয়ে এলো। দুই বউই কান্না করছে। দুজনকে সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বৃষ্টি উচ্ছ্বাস জড়িয়ে ধরে কান্না করে বার বার বলছে সে জাবে না। তাই উচ্ছ্বাস আবিদকে বলে ওকে কোলে তুলে গাড়িতো তোলো। এদিকে রুহিরও একই অবস্থা তাই উচ্ছ্বাসের ওমনন কথায় উদয়ও রুহিকে কোলে তুলে। রুহি কান্না করতে করতে জ্ঞান হারায়। তাতে মনে হচ্ছে বিষাদের ওপর বিষদ ছোঁয়া। সবাইকে গাড়ি করে বিদায় দিতেই বাকিরা বিদায় নেয়। শব্দ আর ঊষা এতোক্ষণ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে এগুলো দেখছিলো। সবাই যেতে শুরু করতে ঊষা শব্দকে জিজ্ঞেস করে,

“আবার কবে দেখা হবে?”

“ঊষার প্রশ্নে হাসে শব্দ তারপর জবাব দেয় রিসিপশনে।”

——-

চলবে।