#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:৩১(অন্তিম_পর্ব)
#তামান্না_শাহরিন_শশী
কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।
অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মৃত্যু এক অনিবার্য সত্যি যার থেকে আমরা কখনো পিছু হটতে পারি না। সকল প্রানীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। তেমনই এক সত্য যে মানুষকে ঠকায় তাকে খোদা তায়ালা শাস্তি দেন। বিপাশা বেগম এমনই এক নিকৃষ্ট কাজ করেছে। ঊর্মিলা তাকে সব সময় নিজের কাছের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে ভাবতো। আর সে তার ঘর ভাঙ্গলো। আমাদের এই জিনিসটা মাথায় রাখতেই হবে আমরা যখন যা দেখি তা সত্যি নাও হতে পারে। আর সবাই বন্ধু বলে হাত বাড়িয়ে দিলে সেটা বন্ধু নাও হতে পারে। বিপাশাই তার প্রতীক। মানুষ কে হিংসা, অহংকার কতটা ভয়ংকর করে তুলতে পারে তার উদাহরণ বিপাশা বেগম নিজে। যদি বিপাশা বেগম এত বড় বিশ্বাসঘতকতা না করতো তাহলো বোধহয় ঊর্মিলা বেঁচে থাকতো। আর উচ্ছ্বাস পেতো সুন্দর একটা জীবন।
বিপাশা বেগম আর পৃথিবীতে নেই। আসলেই মৃত্যু কখন আসবে কেউই জানে না। রোদসী ভেবেছিলো দাদুর কাছ থেকে এসে বিপাশা বেগমের সাথে দেখা করবে কিন্তু সেটা আর হলো না সে আগেই চলে গেছে পরপারে। সবাইকে খবর দেয়া হলো। সবাই এসেছে, শেষ দেখা দেখতে। বৃষ্টি এসেই অনেক কান্না কাটি করছে। তাকে আবিদও কোনো মতে সামলাতে পারছে না। ঊষা আর রুহি কোরআন শরিফ পড়তে বসে গেছে। রোদসী সবাইকে দেখতে পেলেও উচ্ছ্বাসকে দেখতে পায় না। লোকটা সকালে বের হয়েছিলো কোনো কাজে তার তো ফেরার কথা সে এখনো আসেনি। রোদসী আশেপাশে দেখে রিন্তীহাকে মালিহা বেগমের হাতে দিয়ে তাদের রুমের দিকে যায়। রুমের দরজা খুলতেই চোখে পড়ে উচ্ছ্বাস বিছানায় থম মেরে বসে আছে। রোদসী তার কারণ বুঝতে না পেরে ধীর পায়ে উচ্ছ্বাসের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তবুও উচ্ছ্বাস ওভাবেই থমকে বসেই আছে। রোদসী কিছুক্ষণ উচ্ছ্বাসকে দেখে তার পাশে বসে কাঁধে হাত রাখে এবং কাঁপা স্বরে উচ্ছ্বাস কে জিজ্ঞেস করে,
-“কি হয়েছে আপনার?”
উচ্ছ্বাস রোদসীর মুখের দিকে তাকালো। রোদসী উচ্ছ্বাস মুখটা দেখে আঁতকে উঠলো। তার বুঝে আসছে না উচ্ছ্বাসের কি হয়েছে। তাকে এমন লাগছে কেমন। উচ্ছ্বাস কোনো কথা না বলে রোদসীকে জড়িয়ে ধরে। রোদসী বুঝলো হয়তো নিঃশব্দে কাঁদছে তবুও সে কোনো কথা বললো না। উচ্ছ্বাস’ই কিছুক্ষণ পর মুখ খুললো,
-“আমি কি থেকে কি শুরু করবো আমি জানি না। কিন্তু এতোটুকুই জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি। এবার যদি হারিয়ে যাও তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো। আমি জানি আমি অসুস্থ। আর এ’ও সত্যি যে তোমাকে আমি ভাগ বা কারো সাথে শেয়ার করতে পারবো না। কখনোই পারবো না, পারবো না।”
এভাবেই কিছুসময় বিড়বিড় করলো। রোদসী উচ্ছ্বাসের হঠাৎ এমন বলা কথা গুলোর মানে বুঝলো না তবুও রোদসী উচ্ছ্বাসকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমিও আপনাকে ভালোবাসি। অভিমানে দূরে চলে গেছিলাম। কিন্তু প্রমিজ করলাম এবার আর কখনো আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।
হঠাৎ করে উচ্ছ্বাস আবারো বলে উঠে,
-“আম্মুকে অনেক মিস করছি রোদসী।”
রোদসীর বুকটা যেনো ধ্বক করে উঠলো। উচ্ছ্বাস কি সব কথা শুনেছে? তাহলে এতো শান্ত? ঝড়ের পূর্বের পরিবেশ এমন শান্ত থাকে। রোদসীর মাথা ঘুরছে তবুও কিছুটা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,
-“আপনি সব….
-“শুনেছি। জানো এর আগে নিজের অভিশপ্ত লাগতো। মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করতাম আমার জন্য মা মারা গিয়েছে। এর জন্য আমি নিজেকে ঘৃণা করতাম। তারপর জীবনে তুমি এলে তোমাকেই ভালোবাসলাম কিন্তু মনে মনে নিজেকে ঘৃণা করেই যেতাম। তোমাকে যাতে না হারিয়ে ফেলি ভয় পেতাম। সবসময় নিজের কাছে রাখতে চাইতাম। সব ওই কারণে’ই, আর আজকে জানলাম আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার নিজেরই জন্মদাতা পিতা আর তার পাপকর্ম দায়ী। একজন তো মরে গেলো। নিজের বাবাকে কি করে শাস্তি দেব? কি করে বলবো তার জন্য আমার শৈশব কৈশোর সব, সবকিছু নষ্টের মূলে দায়ী সে। তার জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ পাই নি। না পেয়েছি সুন্দর একটা পরিবার। আমি কি একটা সুন্দর ভালোবাসাময় পরিবার ডিজার্ভ করি না?”
এতগুলো কথা বলে থামলো উচ্ছ্বাস। রোদসী জানে না এখানে তার কি বলে উচ্ছ্বাসকে শান্তনা দেয়া উচিত বা বলা উচিত। তবুও সে কিছুটা সাহস নিয়ে বলে,
-“বাবা, বাবা-ই হয়। আর আমরা শাস্তি দেয়ার কেউ না। খোদা সব খবরই রাখেন। এসব নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। যা হবার হয়ে গেছে। আপনি সুন্দর পরিবার পান নি। তাই বলে কি আমরা? আমাদের মেয়ে এরা সুন্দর পরিবেশ, পরিবার ডিজার্ভ করে না? আপনি আমার কাছে প্রমিজ করুন আপনি নিজে যা কখনো পান নি, যা নিয়ে আফসোস হতো। তা আমাদের বাাচ্চাদের কখনো বুঝতে দেবেন না। আদরে রাখবেন। বলুন ওদের বেস্ট পাপা হবেন। বলুন?”
উচ্ছ্বাস আর কিছু বললো না শুধু রোদসীর মুখটা সামনে কাছে এনে পা*গ*লের মতো চুমু খেতে খেতে বললো,”আমি প্রমিজ করছি সোনা। আমি ওদের বেস্ট পাপা হবো।”
রোদসীও উচ্ছ্বাসের পাগলামিকে প্রশ্রয় দিলো। থাক একটা দিন উচ্ছ্বাসের মতো। তার মধ্যে যে ঝড়ের তান্ডব চলছে তা বাহিরে বোঝা না গেলেও রোদসী ঠিকই বুঝতে পারছে। সে নিজেও নিজের কাছে প্রমিজ করলো লোকটাকে সে আর কখনো কষ্ট দেবে না।
——–
বিপাশা বেগমের জানাজার কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি জানতে পেরেছে সে প্রেগনেন্ট। নিজের নাতি বা নাতনীর খবর শুনতে পারলো না বিপাশা বেগম। আহা কি ভাগ্য! বৃষ্টি অনেক কান্না কাটি করছিলো। পাগলামী করছিলো তাই ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে বর্ষারও অবস্থা ও নাজুক। বিপাশা বেগমের বাড়ি থেকে লোক এসেছিলো। সব কিছু সামলাাতে হয়েছে রোদসী, রুহি আর ঊষাকে। এদিকে রোদসী সেলাইয়ে টান লাগায় সেও প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই সে রুমে চলে এসেছে। বিপাশা বেগমকে কবর দিয়ে আসার পর উচ্ছ্বাস যখন রোদসীকে ঘরে সুয়ে থাকতে দেখে সে কিছুটা বিচলিত ভঙ্গিতে এসে জিজ্ঞেস করে রোদসীর কি হয়েছে। রোদসী জানায় তেমন কিছু না। একটু সেলাইয়ে টান লেগেছে যার জন্য ব্যাথা করছে। উচ্ছ্বাস আবারো বিচলিত হয়ে বলে মেডিসিন নিয়েছো? রোদসী আর কিছু বলার আগেই দরজায় করাঘাত পড়ে, রোদসী প্রশ্নাত্মক চাহনি নিয়ে উচ্ছ্বাস কে জিজ্ঞেস করে কে? উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকে তাকিয়ে আবারো দরজার দিকে এগিয়ে যায় তারপর দরজা খুলতেই রাশেদ সাহেবের চেহারা দৃশ্যমান হয়। উচ্ছ্বাস টানটান হয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কেনো এসেছেন?”
রাশেদ সাহেব কিছু বলতে পারলেন না। একজন পিতার কাছে সন্তানের চোখে ঘৃণা দেখার থেকে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না। তবুও নিজেকে সামলে বলে,
-“আমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।”
উচ্ছ্বাসের কেনো জানি এই লোকটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলো না তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
-“পাপীদের ক্ষমা করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার খোদাই এই ফয়সালা করবে আপনি ক্ষমা পাবেন কিনা। আমার মায়ের রুহ জানে কতটা কষ্ট দিয়েছেন আপনি। আমি আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো না। আর পারলে আমার রুহ আমাকে ক্ষমা করবে না। আপনি আর আমার চোখের সামনে আসবেন না। আর যদি না পারেন এবং বেশি সমস্যা হয় তাহলে আমি নিজেই এই বাসা থেকে চলে যাবো”
রাশেদ সাহেব কিছু বলতে পারলেন না। আসলেই তার অন্যায়ের ক্ষমা হয় না। ছেলেটাকে সে ঠকিয়েই গেছে। পাপ তাকে অন্ধ করে দিয়েছে। যে জিনিস সাধনা ছাড়া মানুষ পাায় আসলেই সেই জিনিসের মূল্য অতি কম। ঊর্মিলা পাওয়ার জন্য তার ওতো পরিশ্রম করতে হয় নি তাই বোধহয় সে ঊর্মিলার মূল্য বোঝে নি। রাশেদ সাহেব চলে যেতেই উচ্ছ্বাস দরজা বন্ধ করে রোদসী কাছে ফিরে এসে রোদসীর পাশে বসে। রোদসী এতক্ষণ সবই শুনছিলো তবুও বাবা ছেলের মধ্যে না যাওয়াই ভালো মনে করে সে কোনো কথা বলে নি। কিন্তু রাশেদ সাহেব চলে যাবার পরই রোদসী মুখ খোলে,
-“এভাবে না বললেও পারতেন। সে আপনার বাবা হয়। কষ্ট পেয়েছে।”
-“আর যে কষ্ট আমাকে দিয়েছে? মা’কে দিয়েছে?”
রোদসী তার জবাব দিতে পারলো না। উচ্ছ্বাসও রোদসীর জবাব আশা না করে রোদসীর বুকে আশ্রয় নেয়। রোদদসীর বুকে মাথা রেখে মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে যানা মালিহা বেগমের কাছে রিন্তীহা তাই আর কথা না বাড়িয়ে ওভাবেই চুপটি করে সুয়ে থাকে আর রোদসী উচ্ছ্বাস মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
——-
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সেদিনের পর কেটে গেছে অনেক গুলো দিন। তিনটি বছরে বদলে গেছে অনেক কিছু। রাশেদ সাহেব সেদিন রাতেই ফ্লাইট ধরে বাহিরে চলে গেছেন। দাদুর শরীর আগের থেকে একটু অসুস্থ।
বৃষ্টি আর আবিদের কোলে এসেছে তাদের ছেলে আহনাফ উজাইর। ছেলেটা সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে। এই তো সেদিন বাচ্চা এলো দুনিয়ায় সে কি আনন্দ বয়ে আনলো বৃষ্টি আর আবিদের জীবনে। অবশ্য উজাইর হবার সময় বৃষ্টির বয়স অপরিপক্ক ছিলো বলে অনেক সমস্যাও পোহাতে হয়েছে তাদের কে। আর অপারেশন করাতে নিয়ে যাবার পর সেদিন আবিদের যে কি কান্না কাটি। বৃষ্টি জন্য চুন্ত করবে কি সবাই আবিদ কে সামলাতেই হিমশিম খায়। পরে যখন অপারেশন সাকসেসফুলি করে বৃষ্টি কে কেবিনে সিফট করা হয়। আবিদের এমন কথা শুনে বৃষ্টি সহ সবাই হাসিতে গড়াগাড়ি খেয়েছে। সেদিন বেচারাকে লজ্জাও পোহাতে হয়েছে বেশ ভালোই।
—-
বদল এসেছে রুহি আর উদয়ের জীবনেও। সারাদিন পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেও ভালোবাসা কমেনি বোধহয় বেড়েছে। রুহি এখন ন’মাসের প্রেগন্যান্ট। বেচারী লড়তেচড়তে পারে না। চঞ্চল মানুষ চুপচাপ থাকলে বাসা খালি খালি লাগে। এর এমন শান্ত রূপ দেখে উদয়ও মজা নিতে ভুলে না। সেদিন হসপিটালে যেয়ে আল্ট্রাসাউন্ড করে বুঝতে পারে তাদের মেয়ে আসবে। কি নাম রাখবে সে নিয়েও এক চোট ঝগড়া হয়েছে। শেষে রুহি উদয়কে রাগ রাগ গলায় বলে,
-“শুনন অস্ত, মেয়ে আমার, পেট’ও আমার ধরেছি’ও আমি, তাই নাম আমিই রাখবো।”
উদয়ও কম যায় না। সেও রাগ রাগ গলায় বলে,
-“বললেই হলো? দিয়েছি তো আমি।
ব্যাস হয়ে গেলো। এই নিয়ে প্রতিদিন তাদের ঝগড়ার শেষ নেই।
—–
এত এত বদলের মধ্যে সব থেকে সুন্দর বদল এসেছে ঊষা মেহেজাবিন আর ড.মুনীব শব্দের জীবনে। আজকে সেই শুভ দিন। আজকে তাদের সম্পর্কের নতুন নাম দেয়া হবে। এই সম্পর্কটার প্রস্তাব শব্দ নিজেই উচ্ছ্বাসের কাছে রাখে। প্রথমে উচ্ছ্বাস একটু গড়িমসি করলেও রোদসীর বোঝানোতে সে সব মেনে নেয়। এই তো লাল একটা বেনারসী পড়িয়ে উষাকে বসানো হয়েছে শব্দের বিপরীত পাশে। হুজুর কবুল বলতেই শব্দ সময় নিয়ে রোদসী আর উচ্ছ্বাসের মুখের দিকে তাকায়। রোদসী চোখের পলক ফেলো আস্বস্ত করতেই শব্দ কবুল বলে। এই সময়টায় সবার মনে হচ্ছিলো দম আটকে ছিলো। শব্দ কবুল বলতেই আসে ঊষার পালা। সবাই এমন আরো সংকীর্ণ হয়। রোদসী যেয়ে ঊষার পাশে বসে ঊষার মাথা হাত রাখে। ঊষার মাথা হাত রাখতেই ঊষা উপরে তাকিয়ে দেখে রোদসী পাশে উচ্ছ্বাসও তার মাথা হাত রেখেছে। সেখান থেকে চোখ সরিয়ে মা-বাবার দিকে তাকায়। এদের ছেড়ে এই একটা শব্দ উচ্চারণ করলেই সে অন্য একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাবে। মাথা থাকবে অনেক গুলো দায়িত্ব। বাবা মায়ের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারতো। এই দিন টা কেন প্রতিটা মেয়ের জীবনে আসে? আর কেনোই বা মা বাবার থেকে একটা অজানা গন্তব্যে পা বাড়াতে হয়। চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। এসব ভাবতে ঊষার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সব শেষে চোখ রাখে উদয়ের উপর। উদয় হাসি মুখে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশেই রুহি বসে আছে। মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে। তার পাশেই আবিদ আর বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে। পাশেই দাদু বসে আছে। দাদুর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। সব শেষে চোখ রাখে তার পাশে রিন্তীহা আর উজাইর তার পাশেই বসে আছে। ঊষা চোখ বন্ধ করে একটা ঢোক গিলে বড় একটা শ্বাস টানে। তারপর তার আগাম ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বলে, কবুল।
আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে ঊষা এবং শব্দের বিয়ে হয়। তাদের পাশাপাশি রেখেই ঊষার বান্ধবীরা আয়না এনে শব্দের হাতে ধরিয়ে দেয়। আয়নাতে একটা লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া লাল হয়ে যাওয়া বউকে সে দেখছে। এই মেয়েটা এখন তার বউ। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটা কে। শব্দ যতবার মেয়েটাকে দেখে মুগ্ধ হয়। ঊষার বান্ধবীরা এবার শব্দের এমন আয়নায় একধ্যানে তাকিয়ে থাকা লক্ষ্য করে হাসাহাসি শুরু করে দেয়। বেচারী ঊষা তো লজ্জায় মরি মরি। ঊষা এখন পাড়লে পাতাল ফুড়ে ঢুকে যেতে। এই বজ্জাত গুলো পেয়েছে তাই লজ্জা দিতো এক পাও পিছচ্ছে না। ঊষারও সময় আসবে তখন দেখাবে ঊষা মেহেজাবিন কি জিনিস।
এর মধ্যে কানে আসলো ঊষার বান্ধবীরা শব্দ কে বলছে,
-“বলেন তো দুলাভাই আয়নায় কাকে দেখেন?”
-“আমার জীবনের প্রতিটা ভোর, প্রতিটা দিন, প্রতিটা সময়।” (ঊষা অর্থ ভোর)
শব্দ এমন জবাবে সবাই হাসাহাসি, শিষ বাজিয়ে হইহই করে উঠলো। আর বেচারী ঊষার মনে হচ্ছে এবার সে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে। সে আর চোখ উঠিয়ে আয়নায় চোখ রাখতে পারলো না।
——
উচ্ছ্বাস রোদসীকে খুঁজতে খুঁজতে রুমে এসে দেখে পুরো রুমই অন্ধকার শুধু ড্রেসিং টেবিলের ওখানে একটা মোম জ্বলছে। আর ওখানেই রোদসী বসে কি যেনো করছে। উচ্ছ্বাস ধীর পায়ে এদিয়ে আসতেই রোদসী এসে হুট করেই উচ্ছ্বাসকে জড়িয়ে ধরে হুট করে ধরায় সামলাতে না পেরে একপা পিছিয়ে যায় উচ্ছ্বাস তবুও সামলে নিয়ে রোদসীকে সেও জড়িয়ে ধরতেই রোদসীর কন্ঠ ভেসে আসে।
-“গেট রেডি টু বি অ্যা ফাদার ফর এন্যাদার ওয়ান, গেট রেডি টু এনজয় দ্যা বেস্ট টাইম ওফ ফাদারহুড এন্ড ইট’স ফর লাইফটাইম, গেট রেডি টু ফিল দ্য বিউটি অব প্রেগ্ন্যান্সি।”
এটা বলেই উচ্ছ্বাসের হাতের কিছু একটা গুজে দিলো রোদসী। উচ্ছ্বাস রোদসীর কথা শুনে স্তব্ধ। সে তার নিজের মধ্যে নেই। কোনো মতে হাতটা উঁচিয়ে ধরতেই একটা প্রেগন্যান্সি কিট বেড়িয়ে আসে। আর তাত লাল দুটি দাগ স্পষ্ট। উচ্ছ্বাসের চোখ ছলছল করে উঠে। উচ্ছ্বাস রোদসীর দিকে তাকালে। রোদসী মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাতেই উচ্ছ্বাস রোদসী সারা মুখে চুমু একে দিয়ে। আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রোদসীও চুপ করে থাকে। কিছুক্ষণ পর কাঁধে কাছে গরম কিছুর অস্তিত্ব পেলে, উচ্ছ্বাস ফোঁপাচ্ছে। রোদসী অবাক হয়ে উচ্ছ্বাসকে জিজ্ঞেস করে,
-“আপনি কাঁদছেন? খুশি হন নি?
-“আমি বাবা আবারো বাবা হচ্ছি এর থেকে বড় খুশির খবর আর কি হতে পারে? আমি উর্জার সময়টাতে ছিলাম না বাবা হবার অনুভূতিটা ইনজয় করতে পারি নি। এবারের সময় এক একটা মুহূর্ত আমি মিস করতে পারবো না। আমার কত খুশি লাগছে তা আমি বোঝাতে পারবো না। উর্জার পর আরো একটা ছোট্ট প্রাণ আমাদের কাছে আসবে। থাকবে। ছোটো ছোটো তুলতুলে শরীর, হাত পা সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে মাতিয়ে রাখবে। আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি আবারো বাবা হবো।”
-“আগের বারেরটা রাগ,জেদ,ভয়, অভিমান এর সময় এসেছে। এবারের টা ভালোবাসায়। আমাদের জীবনটা পূর্ণ করতে আসছে। এটাই সত্যি।”
এটা বলেই রোদসী উচ্ছ্বাস কে জড়িয়ে ধরে। উচ্ছ্বাস ও রোদসীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যাতে রোদসী আর পালাতে না পারে।
“#সমাপ্ত”
the end of the beautiful journey ♡