#ভালোবাসা_মন্দবাসা ( শেষপর্ব)
১৪.
-তোমার মেয়ের মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছি না। কোনো রকম উল্টা পাল্টা কিছু করার আগে বিয়ের ব্যাবস্থা করো।
সায়লার কথায় আবরার সাহেব ভুক্ত কুচকে তাকালেন।
-কি সমস্যা বলোতো? কদিন আগেই মেয়ে পড়াশুনা করুক, চাকরী করুক। আর এখন তো মেয়ে অসুস্হ। হঠাৎ কি হলো?
-এত কিছু বলতে পারবো না বাপু। যা ভাল বুঝলাম তাই বললাম।
-শোনো বললেই তো আর বিয়ে দেয়া যায় না। আর তোমার মেয়ের কুকির্তীর কথা পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সবাই জানে। এই অবস্হায় কি করে বিয়ে দেবে? তার চেয়ে ভাল সময় দাও। সুস্হ হোক, পড়াশুনা শেষ করুক। তারপর দেখা যাবে।
সায়লা ভয়ে রিয়াদ সাহেব বিষয়ক কিছু বললেন না। কি না কি করবে শুনলে আল্লাহ জানে?
তিনি রাহার ঘরে এসে উঁকি দিলেন। মেয়ে এখন অনেকটা সুস্হ। চলাফেরা করতে পারে। হাতের প্লাস্টার কদিন পরেই কেটে দেবে।
-কি রে কি খুঁজছিস?
-আমার একটা ডায়েরী ছিল মা? ওই বাসার জিনিসগুলো তো তুমি গুছিয়েছো? দেখেছো কি?
-নাহ দেখি নাই তো। নিশ্চই কোথাও আছে। খুঁজে দেখ।
-পাচ্ছিনা তো মা।
-তাহলে বোধহয় ওই বাড়িতেই আছে। কেন কি এমন ছিল ওই ডায়েরীতে? যে সারা ঘর হুলুস্থুল করে খুঁজতে হবে?
-তেমন কিছু না মা।
-তাহলে আর কি। নতুন করে একটা কিনলেই হবে।
রাহা কিছু না বলে চুপ করে বসে। মেয়ের এই রকম অবস্থা দেখে বুঝতে পারেন নিশ্চই কিছু আছে সেই ডায়েরী তে। সেটা কি?
তবে তিনি চুপ করে বসে থাকেন না। মেয়ের বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগেন। শেষমেষ পেয়েও গেলেন পছন্দসই ছেলে। বায়োডাটা আর ছবি নিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে এগুলেন..
-রাহা দেখতো ছেলেটা কেমন?
-কিসের ছেলে মা?
-কেন তোর বিয়ে দিতে হবে না?
-কি যে বল মা? এখনি কি বিয়ে। ঠিক মত তো নিজের কাজই করতে পারি না। সুস্থ্য তো হতে দাও। আর পড়ালেখা শেষ করতে হবে না?
-তাতে কি? বিয়ের কথা বললেই কি আর বিয়ে হয়? দেখতে তো সমস্যা নেই?
-এখন বিয়ে করবো না মা।
-কেন করবি না? আমাকে যুক্তিযুক্ত একটা কারণ দেখা? তা না হলে তোকে বিয়ে করতে হবে। এখানে না হলেও অন্য কোথাও।
-পরে কথা বলি মা। আমার ভাল লাগছে না।
রোকেয়া বেগম বায়োডাটা টেবিলে রেখে উঠে পড়লেন।
কিন্তু কিছুদিন পর পর একি কথার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলো। রাহাকে কিছুতেই সায়লা রাজি করাতে পারলো না।
রাহার হাতের প্লাস্টার খোলা হয়েছে। এখন ফিজিও থেরাপি দিতে হয়। থেরাপি দিয়ে বাসায় ফিরতেই দেখে বসার ঘরে বেশ কয়েকজন বসে। সে কাউকেই চেনেনা বলে সালাম দিয়ে নিজের ঘরের দিকে যায়।
কিছুক্ষন পর শায়লা এসে দাড়ালো তার ঘরে।
-একটু ঠিকঠাক হয়ে এদিকে এস।
-তোমাকে মানা করেছিলাম মা।
-কেন মানা করেছো? ওই বুড়োটাকে বিয়ে করবে বলে? কি মনে করেছো আমি কিছু বুঝি না? আর কত নাক কাটবে আমাদের? রেডী হয়ে এস। তা না হলে কিন্তু ভাল হবে না। আমি তোমার বাবা কে বলতে বাধ্য হব।
-তাই বল মা। কিন্তু আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না।
-তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? কি করছে বুড়োটা তোর সাথে বলতো? হাসপাতালে বুড়োর আচরণ দেখেই বুঝেছিলাম কোথাও কোনো সমস্যা আছে । এখন তো দেখি আমার মেয়ে তার থেকেও বেশী।
-কি বলছো মা।
-ছিহ্। তোকে আমার মেয়ে বলতে ঘৃণা হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোকে বিয়ে দিয়ে আমি বিদায় করবো।
বলেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
১৫.
অফিস থেক ফিরতে বেশ দেরি হল রিয়াদ সাহেবের। দরজার গাড়ি থেকে নামতেই সবুজ মিয়া ছুটে আসলো।
-রাহা আপা আসছে অনেকক্ষন হলো। রিহান ভাই তার সাথে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বাহির হয়ে গেছে।
-কি বলছো এসব? আমাকে ফোন করোনি কেন?
-আপনার ফোন তো বন্ধ।
তিনি তাড়াতাড়ি উপরে ছুটলেন। এই বয়সে বেশী টেনশন সহ্য হয় না। বুয়া দরজা খুলতেই তিনি বললেন,
-রাহা কোথায়?
-ছাদ বাগানে বইসা আছে। খালি কান্দে। ভাইজান রাগ করছে অনেক।
তিনি ছাদ বাগানের দিকে এগুলেন। তাকে দেখে রাহার কান্না আরো বেড়ে গেল।
-এই মেয়ে, কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?
রাহা কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না। সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলো।
-আরে বাবা চুপ করো আগে। কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
-মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন।
-তো ভালই তো হয়েছে। কান্না কাটির কি হলো এতে?
-আমি বিয়ে করবো না।
-কেন শুনি?
-আপনি জানেন না কেন?
-আমি কি করে জানবো?
-আমার ডায়েরী কোথায়? আপনি কি কিছুই বুঝতে পারেন না?
-শোনো পাগলামি করে কি লাভ আছে? আমরা তো একটা সমাজে বাস করি। সেটাকে তো ইগনোর করা যায় না। আর বাস্তবতা অনেক কঠিন। সেটার সাথে লড়াই করে টিকে থাকা তার থেকেও কঠিন। তুমি ছোট মানুষ। এখনও জীবনের অনেকটা পথ বাকি।
-আমি কিছু জানি না। আমি বাসায় বলে এসেছি আমি আর ফিরবো না। এখন আপনি চলে যেতে বললে আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
-আচ্ছা শোনো, ভেতরে এসে বসো। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেই।
-আপনি হ্যা অথবা না তে জবাব দিন। আপনি আপনার সাথে আমাকে রাখবেন কি না?
-শোনো, বোকা মেয়ে আমার বয়স কত জানো? তোমার বাবার বয়সী আমি।
-হ্যাঁ নাকি না?
-আমার ছেলের বয়সী তুমি।
-হ্যাঁ নাকি না?
-মানুষ কতো কথা বলবে জানো? সহ্য করতে পারবে না।
-হ্যাঁ নাকি না?
-আচ্ছা বিপদে পড়লাম তো।
-হ্যাঁ নাকি না?
-ঝোঁকের মাথায় কিছু করা ঠিক না। বোঝার চেষ্টা করো। এই বয়সে যে আবেগ থাকে তা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। তখন মনে হবে বড় একটা ভুল করে ফেলেছো।
-হ্যাঁ নাকি না?
-পাগলামি করবেই তুমি?
-আচ্ছা তাহলে না ধরে নিলাম। আসি।
-কোথায় যাবে?
-যেদিকে দুচোখ যায়। আপনাকে জ্বালাতন করতে আসবোনা। নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
তিনি রাহার হাতটা ধরে ফেললেন।
-তাহলে আমিও তোমার সাথে আসি। দুজন একসাথে যাওয়াই ভালো।
সমাপ্ত
এমি
(*গল্পটা পুরোটাই অবাস্তব। আমাদের সমাজে খুব কম দেখা যায় এমন ঘটনা। আবার দুই একটা ঘটলেও তারা সমাজের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। সবাইকে সাথে থাকবার জন্য ধন্যবাদ। আপনাদের মূল্যবান মতামত আশা করছি।)