ভালোবাসি তাই পর্ব-২০+২১

0
523

#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-২০

ব্যস্ত শহরের বুকে নেমে আসে আঁধার। ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দেখা যায় কুকুরের ঝাক। কয়েকটা কুকুর আরামে ঘুমোচ্ছে, পাশে দুই একট কুকুর নিশ্বব্দে কিছু খুজে চলেছে। হয়তো রাতের খাবার কিংবা অস্তিত্বের সন্ধান। দূর থেকে ভেসে আসছে হাতে গুনা কয়েকটা গাড়ির মৃদু আওয়াজ। জানলার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে রাস্তার পরিবেশটা স্পষ্ট দেখা যায়। আশা সেই তখন থেকেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে এখানে বসে এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে আছে। একটা সময় আশা সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। খুব ক্লান্ত লাগছে, ঘুমে চোখ বুজে আসছে। কিন্তু ইচ্ছে করছেনা বিছানায় গিয়ে শোবার জন্যে। অসংখ্য বেদনা মনে জমে আছে। একে তো সাদের এভাবে চলে যাওয়া, নিয়াশার এমন নিছক অভিমান, তার উপর রানা নামের এক ভয়াবহ ভাইরাসের আক্রমণ। অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে সে।

একটা লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে জানলা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আশা। ইচ্ছে না করলেও তাকে উঠে দাড়াতে হবে। ঘুমাতে হবে বেশ কয়েক ঘন্টা। তা নাহলে ক্লাসে মন বসাতে পারবেনা, ঘুমে হয়তো ঢুলে পরবে ক্লাস টিচারের সামনেই। পানিশমেন্টকে আবার সে খুব ভয় পায়।

একটা সময় রাতের আঁধার কাটতে শুরু করে। চারিদিক থেকে ফজরের আযানের সেই মধুর ডাক ভেসে আসতে থাকে একের পর এক। ঘুম ভেংগে যায় আশার। কিছুক্ষণ এক ধ্যানে আযানের স্বর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে সে। এভাবে আরো বেশ কয়েক মিনিট চলে যায়। সচরাচর সে নামাজ পড়ে না। পড়লেও বড়জোর দুই ওয়াক্তের নামাজ সে আদায় করে থাকে।। ফজর, যোহর আর এশার নামাজ পড়া হয়না বললেই চলে। তবে আজ কেন যেনো খুব ইচ্ছে করছে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে। কোনো মতেই সে ডাক অবহেলা করে শুয়ে থাকতে মন চাইছেনা। আশা বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে নেয় প্রথমে।। এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে বসে পরে সে।।

ভার্সিটি যাবার সময় হলে খুব তারাহুরো করে নাস্তা সেড়ে নেয় আশা। এরপর বইপত্র গোছগাছ করে সাইড ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরে রুম থেকে৷ তালাটা ভালো করে লাগিয়ে চাবিটা ব্যাগের সাইড পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে নামতে থাকে সিড়ি বেয়ে। এমন সময় পিছন থেকে নীলার ডাকে সে দাঁড়িয়ে পরে। আশা পেছন ফিরে তাকায়। নীলাকে উদ্দেশ্য করে বলে
“কিছু বলবে আমায়?
“আজ আমাদের না বলেই চলে যাচ্ছিস যে।
আশা মুচকি হাসলো। পাশেই নিয়াশা দাঁড়িয়ে ছিল। সে নিয়াশার দিকে তাকিয়ে বললো
“আমি চাই না আমার কারণে কেউ অসুবিধে বোধ করুক।।
নিয়াশা অদ্ভুতভাবে তাকালো আশার দিকে। ঠোঁট দুটো কাপছিলো তার, হয়তো কিছু বলতে চাইছে। আশা আবারও মুচকি হেসে আগের চেয়ে দ্রুত বেগে হাঁটা ধরলো।

বাসার সামনে যেতেই একটা খালি রিক্সাও পেয়ে গেলো সে, কোনো দরকষাকষি না করে উঠে পরলো রিক্সায়। ভার্সিটি পৌছুলো ভালো ভাবেই। কোনো অসুবিধে হয়নি রাস্তায়। তবে ঝামেলা বাধলো ফেরার পথে। আজও রানা দাঁড়িয়ে আছে পথ আগলে, তবে সে একা নয়, আজ তার সাথে আরো কয়েকজন ছেলেপেলে রয়েছে। সবাইকেই কেমন গুন্ডা গুন্ডা লাগছে। আশার মনের ভেতর এক অজানা আতংক কাজ করা শুরু করে দিয়েছিলো তখন। এদেরকে পাশ কেটে তাকে আসতে হবে। অন্যদিন সাহস করে চলে এলেও আজ যেনো কিছুতেই পা সামনের দিকে এগুচ্ছে না। কিন্তু আসতে তো তাকে হবেই। আশা মাথা নিচু করে ধীরপায়ে এগুতে থাকলো। রানা রহস্যময় হাসি হেসে তাকিয়ে রইলো আশার দিকে। কিন্তু অন্যদিনের মতো আশাকে কিছু বললো না। বরং আশা তাদের কাছাকাছি চলে এলেই সে আশাকে পাশ কাটিয়ে সে তার দলবল নিয়ে হাটা ধরলো উল্টোপথে। ব্যাপারটায় বেশ অবাক বলো আশা। সে থেমে গেলো নিজ যায়গায়। চিন্তা করতে লাগলো আজ হটাৎ এমনটা হবার কারণ কি, ভাবতে লাগলো তার ঠোঁটে লেগে থাকা রহস্যময় হাসিটার মানেটাই বা কি।

______
দেখতে দেখতে আরো ক’টা মাস কেটে গেছে। এর মাঝে বাড়ি থেকেও ঘুরে এসেছে কিছুদিন আগে। মায়ের শরীরটা ইদানিং প্রায়ই খারাপ থাকে, ঠিকমতো খেতে পারেনা, ঘুমাতে পারেনা। মাকে জিজ্ঞাসা করার পর বলেছিলো প্রেশারের চাপের কারণে এমনটা ইচ্ছে। ভাবীর সাথে যদিও দেখা হয়নি, উনি বাবার বাড়িতেই বেশি থাকতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে মাঝে মাঝে আসেন, দশ পনেরো দিন করে থেকে আবারো চলে যান। আশার ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগেনা। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি হচ্ছে নিজের বাড়ি, তাহলে নিজ ঠিকানা ছেড়ে কেউ কেন বাবার বাড়িতে এভাবে পরে থাকে? এতে আত্মসম্মান হানী ছাড়া আর কিছুই হয় না। আশা আদিবকে প্রশ্ন করেছিলো, কেন ভাবী এখানে থাকতে চায় না, আদিব সেদিন নানা কথার ছলে কথার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো অন্যদিকে। সে খেয়াল করেছিলো আজকাল ভাইয়াটাও কেমন যেনো হয়ে গেছে। কেমন গম্ভীর টাইপ, আগের মতো চঞ্চলতার লেশমাত্র যেনো নেই। সারাক্ষণ কি যেনো ভাবে। কারণ জিগ্যেস করেও কোনো উত্তর পায়নি আশা।
সপ্তাহ খানেক বাড়ি থেকে আবার শহরে চলে এসেছিলো সে।

সেদিন ঘরে কোনো আনাজপাতি না থাকায় সে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে বাজারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাসা থেকে বের হবার আগেই ফোনের কল বেজে উঠে হটাৎ। আশা মেইন গেইটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো তার মায়ের ফোন। সে তরিঘরি করে কল রিসিভ করলো।। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো
“মা..
ওপাশ থেকে মৃদু গলায় আওয়াজ এলো
“আমি মা না আশা, আমি মৃদুলা। মুলত মৃদুলা আদিবের বউ এর নাম। আশা হেসে বললো
“ভালো আছো ভাবী?
“আছি মোটামুটি।
আশার মনে হটাৎ কু ডাকলো। প্রায়ই তার ভাবীর সাথে ফোনে কথা হয়ে থাকে। তবে আজ কথা বলার ধরণটা একটু অন্যরকম শোনা যাচ্ছে। সে সামান্য চিন্তিত গলায় বললো
“তোমার কন্ঠটা এমন শোনাচ্ছে, কোনো সমস্যা হয়েছে ভাবী? ভাইয়া কোথায়? মা কেমন আছে, ভালো তো? তুমি বাড়ি এলে কবে?

মৃদুলা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো
“তোমার ভাইয়ের ব্যবসাটা ভালো যাচ্ছেনা ইদানিং। কিছুদিন আগে প্রচুর লোকসান হয়েছে। হাতে টাকাও ছিলোনা, তাই ব্যাংক লোন নিয়েছিলো। সেই লোনের টাকা দিয়ে দোকানে মাল তুলেছে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়, আবারও সেই লোকসান। ব্যাবসায়ে প্রচুর পরিমাণে লস হয়ে গেছে। এদিকে লোনের টাকাটাও দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
আশার মাথায় বাজ পরলো হটাৎ। এতটা করুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার ভাইটা, অথচ এইসবের কিছুই সে জানেনা!!
আশা সামান্য ভীতসন্ত্রস্ত গলায় বললো
“আমাকে তো ভাইয়া কিছু বললো না!
“কিভাবে বলবে, তুমি ওর আদরের বোন কিনা। সে বোনকে কষ্ট দিতে নারাজ। এসব শুনে তুমি চিন্তায় পরে যদি লেখাপড়ার ক্ষতি করো, সেইজন্য সে বলেনি।
আশা কয়েক সেকেন্ড দম নিয়ে বললো
“মা কোথায়?
“উনিও অসুস্থ। গতকাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলো। টেস্ট করতে হয়েছে অনেকগুলো। তাও মোটা অংকের ফী দিয়ে। হার্টে প্রব্লেম হয়েছে উনার, লিভারে পানি জমে গেছে। লিভার ৮০% ড্যামেজ হয়ে পরেছে। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে কোন দিন কি হয়ে যায় বলা যায় না, তবে মাটির উপর যতদিন আছে, তাকে মেডিসিন নিয়ে থাকতে হবে। তোমার ভাইয়ের মন তো তুলার চেয়েও নরম, তাই এক গাদা ঔষধ নিয়েই বাসায় ফিরেছে।

আশার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা হটাৎ করেই মাটিতে পরে গেলো। চোখদুটো ভিজে গেছে সাথে সাথেই। বাড়িতে এত কিছু হয়ে গেছে, অথচ সে তার কিছুই জানেনা। আর মায়ের ব্যাপারে এটা কি শুনলো সে? সে কি কোনো বাজে স্বপ্নে আছে এই মুহূর্তে? এটা কোনো দুঃস্বপ্ন হলেও ভালো হত, কিন্তু এটা যে কোনো স্বপ্ন নয়.!
আশা ভেজা গলায় বললো
“কি বলছো ভাবী। এতকিছু হয়ে গেছে, আর আমাকে কেউ কিচ্ছুটি বললে না! মা কোথায়? প্লিজ মায়ের কাছে দাও।
মৃদুলা সামান্য রুক্ষ গলায় বললো
“উনি বাড়িতে নেই।
আশা বিস্ময় নিয়ে বললো
“বাড়িতে নেই মানে, কোথায় গেছে?
“তোমার ভাই আজ আবারও উনাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছে। ফোনটা নিতে হয়তো ভুলে গেছিলো, তাই সেটা বাড়িতেই রয়ে গেছে। আমি যে ফোন করে তোমায় এইসব কথা বলেছি, সেগুলো যেনো তোমার মা কিংবা ভাই, কেউ কিচ্ছু না জানে, যদি জানে আমি তোমাকে এইসব বলেছি, তাহলে আমার উপর খুব রাগ করবে তোমার ভাই।
আশা কোনো উত্তর দিলোনা কথার। ওপাশ থেকে টুট টুট করে কলটা কেটে গেলো।

হটাৎ আশার মাথা ঘুরতে লাগলো। এতগুলো দুঃসংবাদ হয়তো সে আশা করেনি। আশা কোনো রুপ সিড়ির রেলিং ধরে উপরে উঠে এলো। সারা শরীর ঘেমে চপচপে অবস্থা। কোনমতে ঘরের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে মাথার উপরের ফ্যানটা ছেড়ে সে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে নীলা। সে ছুটে আসে আশার রুমে। আশার এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে তার। সে আশার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করে
“কিরে, এমন করছিস কেন? কি হইছে তোর?
আশা নির্বাক। চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝরছে তার। নীলা আবারও তাড়া দিয়ে বলে
“কাঁদছিস কেন? তোর কি শরীর খারাপ করেছে? কিছুক্ষণ আগেও তো দেখলাম ভালো। অসুস্থ থাকলে বল আমায়।

আশা উঠে বসে। এরপর কাতর চোখে তাকায় নীলার দিকে। নীলা উৎকন্ঠা নিয়ে বলে
“বল, বল আমায় কি হইছে তোর?
হটাৎ আশা ঢেকুর তুলে কাঁদতে থাকে। নীলা অবাক হয়। সে আবারও প্রশ্ন করে,
“শুধুই কাঁদবি, নাকি কিছু বলবিও?
আশা নীলাকে জড়িয়ে ধরে তৎক্ষনাৎ। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পুরো ঘটনাটা খুলে বলে নীলাকে। নীলার মুখের অবয়ব হটাৎ পালটে যায়। বড্ড চিন্তিত দেখায় তাকেও। সে আশাকে শান্তনা দিয়ে বলে
“তোর ভাবীর কথাবার্তায় বুঝা গেলো সে তোদেরকে বেশি একটা ভালো চোখে দেখে না।
আশা হতাশ গলায় বললো
“হয়তো।
“তাদের ফ্যামিলি কি বেশ ধনী নাকি?
“এতটা না হলেও আমাদের চাইতে বেশি। কিন্তু এইসব কেন জিজ্ঞাসা করতেছো?
নীলা শান্ত গলায় বললো
“এক কাজ কর, তোর ভাইকে ফোন করে সবটা জিজ্ঞাসা কর, তাহলেই জানতে পারবি কি হলো না হলো।
“কিন্তু ভাবী যে বললো ভাইয়াকে কিছু না জানানোর জন্য।
“তুই স্বাভাবিকভাবেই কথা বলবি, এমনভাবে বলবি যেনো মনে হয় তুই কিছুই জানিস না। ভাবীর কথা উল্লেখ না করলেই তো হলো।

আশা কয়েক মিনিট কি যেনো চিন্তা করলো। এরপর ফোনটা হাতে নিয়ে ভাইয়ের নাম্বারে কল করলো। রিং এর পর রিং বেজেই যাচ্ছে। কল রিসিভ হচ্ছেনা। আশা আবারও কল করলো। এবারেও কিচ্ছুটি হলোনা। সে আবারও কাঁদতে লাগলো। নীলা ওকে শান্তনা দিয়ে বললো
“আরে বোকা, আবারও কাঁদছিস কেন। নিশ্চয়ই তোর ভাই ব্যস্ত আছে। নয়তো ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। আন্টির চেকাপ চলছে বোধহয় ।
আশা নিরাশ চোখে তাকালো নীলার দিকে। নীলা চোখের ইশারায় ওকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিলো। আশা চোখ ফিরিয়ে নিলো দরজার বাইরে। তৎক্ষনাৎ সে চমকে গেলো। দেয়ালের ওপারে এতক্ষন চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো নিয়াশা, বোধহয় ওদের কথা শুনছিলো চুপিসারে। আশার সেদিকে দৃষ্টি যেতেই সে হুরমুর করে চলে গেলো সেখান থেকে। আশার মানসিকতা এমনিতেই অনেক খারাপ ছিলো, তারমধ্যে নিয়াশার এমন ভাবে ঘাপটি মেরে কথা শোনা ওকে আরও ব্যথিত করলো।

সেদিন সারাদিনে আরো বেশ কয়েকবার আদিবকে কল করলো আশা। কিন্তু ওপাশ থেকে একবারও রেসপন্স করলোনা। আশার ভেতরের চিন্তা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেছিলো তাতে। সারাটা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যের আগ মুহুর্তে হটাৎ আশার ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। সেই মুহূর্তে শুয়ে ছিলো আশা। কল এসেছে বুঝতেই ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে। তারাতাড়ি করে ফোনটা হাতে নিলো ভাই ফোন করেছে সেই আশায়। কিন্তু নাম্বারটা দেখার পর আশার ভেতরে মোচড় দিলো। এটা ভাইয়ার নাম্বার নয়, আননোন একটা নাম্বার। এটা কার হতে পারে? রানার? কিন্তু সে তো অন্য একটা নাম্বার দিয়ে কল করে। এ কতটা মাসে রানা তাকে এতবার কল করেছে যে তার নাম্বারটা একরকম মুখস্থ হয়ে গেছে।। এটা সম্পুর্ণই একটা নতুন নাম্বার। আশা কলটা রিসিভ করবে কি করবেনা ভাবতেই ভাবতেই কল কেটে গেলো। আশা হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে। তৎক্ষনাৎ আবারও সেই নাম্বারটা থেকে কল এলো। আশা ফোনটা রিসিভ করলো এবার। কানে ঠেকিয়ে ধীরকন্ঠে প্রশ্ন করলো
“কে বলছেন?
ওপাশ থেকে ভেসে আসলো সেই তীক্ষ্ণ আওয়াজ….
“লেডি, বাড়িতে কি খুব প্রব্লেম চলছে? আহা, তোমার জন্য আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে গো।
আশা বুঝতে পারলো এটা রানা। অবাক হলো বেশ, বাড়ির সমস্যার কথা সে কিভাবে জানলো। এইসব তো উনার জানার কথা না। আশা রানাকে না চেনার ভান করে বললো
“কে, কে বলছেন আপনি? আর কিসের সমস্যার কথা বলছেন?
ওপাশ থেকে আবারও সেই কুৎসিত হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো। রানা হাসতে হাসতে বললো
“এতো এতো প্রব্লেমের ভীড়ে আমাকে ভুলে গেলে লেডি! তবে আমি যে তোমায় ভুলছি না, সহজে ভুলছিনা। ভুলবো কি করে, সুযোগের আশায় ছিলাম যে। এইবার একটা সুযোগ তো পেয়ে গেলাম। এবার এটাকে কিভাবে কাজে লাগাই শুধু দেখে যাও।

চলবে…..

#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-২১

“এতো এতো প্রব্লেমের ভীড়ে আমাকে ভুলে গেলে লেডি! তবে আমি যে তোমায় ভুলছি না, সহজে ভুলছিনা। ভুলবো কি করে, সুযোগের আশায় ছিলাম যে। এইবার একটা সুযোগ তো পেয়ে গেলাম। এবার এটাকে কিভাবে কাজে লাগাই শুধু দেখে যাও।
রানার কথায় আঁতকে উঠলো আশা। এটা কি বলছে সে? সুযোগ কাজে লাগাবে মানে?
আশা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
“কিক, কি করবেন আপনি?
“আগেই যদি বলে দেই, তাহলে মজাটা থাকলো কোথায়। নতুন নাগর পেয়ে দুজন মিলে ভার্সিটির সকলের সামনে আমায় হেনস্তা করেছিলি তাইনা! ডানা গজিয়ে গেছিলো তোর। এবার ডানা কি করে ভাঙ্গি শুধু দেখে যা।
আশার মাথার উপর দিয়ে গেলো সব কথা। সে আতংকিত গলায় বললো
“আমি আপনার কি এমন ক্ষতি করেছি? কেন এমন করছেন আমার সাথে? আর আমার বাড়ির ব্যাপারেই বা এতসব জানলেন কি করে?
রানা হাসতে হাসতে বললো
“আগেই বলেছি, আমি রানা। আমি সব জানি।

আশা আর কিছু বলতে পারলোনা। এর আগেই কল কেটে দিলো রানা। প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় মাথা ব্যাথা করছে আশার। বাড়ির জন্য টেনশন হচ্ছে খুব। মা এখন কি অবস্থায় আছে কে জানে। ভাইয়ার মনের উপর দিয়ে না জানি এখন কি সব যাচ্ছে। আশার মাথায় এখন আর কুলোচ্ছেনা। রানার বলা অসহ্য কথাগুলো ভেতরে ভেতরে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। কিছুটা সময় এভাবেই কেটে গেলো। খানিক বাদে আবারও ফোনে কল এলো। এবার ফোনটা হাতে নিতেও ইচ্ছে করলোনা আশার। ভাবলো রানা হয়তো আবারও কল করেছে। এভাবে বার কয়েকবার কল বাজতেই থাকলো। এক পর্যায়ে প্রচন্ড বিরক্তির সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করলো আশা। কানে ঠেকিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“আবার কেন কল করছেন? সমস্যা কি আপনার?
“আশামনি, কি বলছিস তুই?
আশা চমকে উঠলো। সে ফোনটা কান থেকে সরিয়ে চোখের সামনে নিয়ে আসলো। নাম্বারটায় চোখ যেতেই বুঝলো এটা রানা নয়, ওর ভাই।

সে আবারও ফোন কানে ঠেকিয়ে বললো
“ভাইয়া, কি হয়েছিলো তোর? বার বার কল করেছিলাম, ধরিস নি কেন?
আদিব সামান্য হেসে বললো
“একটু ব্যস্ততার মাঝে ছিলাম রে। কেমন আছিস?
“ভালো। তুই কেমন আছিস ভাইয়া?
“হ্যাঁ, আছি ভালোই।
আদিবের মুখে এমন খাপছাড়া উত্তর শুনে বুকে হালকা ব্যাথা অনুভব করলো আশা। তার ভাইটা কখনো এভাবে কথা বলেনা।
সে সামান্য কাতর গলায় বললো
“তুই ভালো নেই ভাইয়া তাইনা?
আদিব সামান্য হেসে বললো
“পাগলী বোন আমার, কি বলিস তুই। আমি আবার ভালো না থাকতে পারি কখনো?
“মা কোথায়?
“বাড়িতেই আছে।
“কি করছে?
“শুয়ে আছে।
“মা কি অসুস্থ?
“তেমন না, তবে সামান্য অসুস্থ।
আশার কাদঁতে ইচ্ছে করলো খুব। ও কষ্ট পাবে ভেবে ওরা কেউ ওর কাছে কিছু বলছেওনা পর্যন্ত। আদিব প্রশ্ন করলো
“কি করছিলি?
“বসে আছি।
“খেয়েছিস রাতে?
“নাহ খাবো।
“খাওয়া নিয়ে অনিয়ম করিস না, ঠিক সময়মত খেয়ে নিস। তা নাহলে শরীর খারাপ করবে।
আশা মাথা নাড়ালো। এরপর কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বললো
“তোর ব্যবসার খবর কি?
আদিব ভ্রু বাকালো আশার কথায়। সচরাচর সে ব্যবসায়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করে না। আজ হটাৎ প্রশ্ন করায় ব্যাপারটা কেমন যেনো একটু লাগলো। সে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো
“ব্যবসা তো ভালোই যাচ্ছে। হটাৎ ব্যবসার কথা জিজ্ঞেস করছিস যে।
আশা নিজেকে শক্ত রেখে বললো
“নাহ, এমনিতেই জানতে চাইলাম। মায়ের কাছে দিবি ফোনটা? একটু কথা বলবো।
আদিব হেসে বললো
“কেন নয়। অবশ্যই দিবো। তবে তার আগে বল, তোর কিছু লাগবে? লাগলে বলিস, আমি টাকা পাঠিয়ে দেবো। মাসের শেষ, বোধহয় তোর হাতে টাকা পয়সা নেই।
আশা মুচকি হেসে বললো
“আমার কিছু লাগবেনা ভাইয়া।
“ওহ!

আরো কয়েক সেকেন্ড দুইজনই চুপ। এরপর হটাৎ মৃদুলার বারণ করার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে আশা বললো
“ভাবী কি করছে ভাইয়া?
আদিব কিঞ্চিৎ ভ্রু বাকালো। মৃদুলা এখানে এসেছে সে কথা তো সে আশাকে বলেনি। তাহলে সে জানলোই বা কি করে? আশার কথা বলার ধরণও আজ অন্যরকম ঠেকছে। হটাৎ ব্যবসার বিষয়ে প্রশ্ন করছে। তাহলে কি মৃদুলা ওকে কিছু বলে দিয়েছে? কথাগুলো বড্ড ভাবাচ্ছে আদিবকে।। আদিবকে চুপ করে থাকতে দেখ আশা বললো
“কথা বলছিস না কেন ভাইয়া?
আদিব চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বললো
“কিচ্ছু করছেনা। মায়ের কাছে ফোন নিয়ে যাচ্ছি, তুই মায়ের সাথে কথা বল।
আশা অবাক হলো, কিন্তু আর কোনো কথা বাড়ালো না।। বাধ্য মেয়ের মতো মায়ের সাথে বললো অনেক্ষণ যাবৎ। তবে অন্যদিন মায়ের সাথে কথা বলার সময় যতটা খুশি খুশি ভাব থাকে, আজ তেমনটা নেই। ভেতরটায় আজ প্রচন্ড ঝড় বইছে যে।

সেদিন রাতে ভালো করে ঘুমও হয়নি আশার। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সে। শেষ রাতের দিকে ঘুম হয়েছিলো কিছুটা। তাই সকালে আর ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। যখন ঘুম ভেঙ্গেছে তখন প্রায় দশটার কাছাকাছি। সময় দেখে আশার চোখ কপালে গিয়ে ঠেকলো। হুরমুর করে সে বিছানা ছেড়ে নামলো তারাতাড়ি। আজ আর ভার্সিটি যাওয়া হলোনা ওর। ভাবতেই খারাপ লাগছে, কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। আশার পেটে প্রচন্ড খিদে থাকার কারণে সে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। হোটেল থেকে কিছু কিনে এনে খাবে তাই। এখন রান্না করতে অনেক সময় লাগবে, তাই হোটেলের পথেই পা বাড়ালো আশা। কিন্তু বাধ সাধলো নিয়াশা। ওর সামনে পথ আগলে দাঁড়ালো সে। আশা সামান্য অবাক হলো, ভ্রু বাকিয়ে বললো
“তুমি!!
“কোথায় যাচ্ছিস?
আশা নিচের দিকে তাকালো। এরপর সামনের দিকে চোখ সরিয়ে মৃদু গলায় বললো
“হোটেলে যাচ্ছি, নাস্তা আনতে।
“আমার সাথে আয়।।
আশা হটাৎ অবাক হলো নিয়াশার কথায়। যে মেয়েটা কিছুটা মাস যাবৎ তাকে সহ্যই করতে পারেন, সে কিনা আজ নিজ থেকে ওকে ডাকছে? ব্যাপারটা বেশ ভাবাচ্ছে আশাকে। আশা বিস্ময় নিয়ে বললো
“কোথায় যাবো?
“আমার রুমে।
“কেন?
“আসতে বললাম, আয়।
আশা আর কোনো কথা বাড়ালো না। সে নিয়াশার পিছু পিছু এগিয়ে গেলো ওর রুমে। রুমে গিয়ে দেখলো রুম খালি। সে নিয়াশাকে প্রশ্ন করলো
“নীলা কোথায়?
“ভার্সিটি গেছে।
“তুমি যাও নি কেন?
“ইচ্ছে করেনি তাই।

আশা আর কথা বাড়ালো না। সে চুপচাপ বসে রইলো। এর মধ্যে নিয়াশা এসে বসলো আশার সামনে। ওর হাতে এক প্লেট ভাত আর সামান্য তরকারি। আশা অবাক হলো। সে বললো
“এগুলো কেন?
নিয়াশা খানিক তেজ নিয়ে কাজ
“এগুলো খাওয়ার জিনিস। খেয়ে নে, বিষ মিশাই নি।
আশা অবাক হয়ে বললো
“বিষের কথা কেন বলছো, আমি কি সেসব বলেছি নাকি।
“তাহলে খেয়ে নে।
আশা খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে নিয়াশার দিকে তাকালো। শান্ত গলায় বলল
“আমার উপর তো তুমি বেশ রেগেছিলে, তাহলে আজ হটাৎ আমাকে খাবার দিচ্ছো যে!
“এতো কৈফিয়ত কেন দিবো রে, খেতে দিয়েছি চুপ করে খা। বেশি কথা বাড়াইস না।
আশা অবাক হলো খুব, তাও সে চুপচাপ খেতে লাগলো।

একটা সময় খাওয়া শেষ হলে আশা নিয়াশার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো। নিয়াশার নজর তখন অন্যদিকে। আশা তাকে নরম গলায় প্রশ্ন করলো
“এখনো রেগে আছো আমার উপর?
“জানিনা। গম্ভীরমুখে উত্তর দিলো নিয়াশা। আশা মুচকি হেসে বললো
“আমার সকালের আহারের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার জন্য তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ।
নিয়াশা কোনো প্রতিউত্তর করলোনা এবারেও। সে বসে রইলো একভাবেই।
আশা চলে গেলে নিয়াশা একটু নড়েচড়ে বসলো। হারিয়ে গেলো গতরাতে…
গতকাল রাতে ওয়াশরুমে যাবার জন্য বেরিয়েছিলো নিয়াশা। ঠিক সময় সাদের মা তাকে হাতের ইশারায় ডেকে তার কাছে যেতে বলেছিলো।
নিয়াশা একটু অবাক হয়। এই ভদ্রমহিলা জীবনেও তাকে কোনো কারণে ডাকেনি, তাহলে আজ হটাৎ ডাকার কারণটা কি!! নিয়াশা মনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে গিয়েছিলো উনার কাছে। সাদের মা ভদ্রতার সাথে তাকে চেয়ারে বসতে বলে নিজে উঠে দাঁড়ালেন। নিয়াশা অদ্ভুতভাবে উনার দিকে তাকিয়ে থেকে চেয়ারে বসলো। লুৎফুন্নাহার চলে গেলো ভেতর রুমে। কয়েক মিনিট বাদে তিনি ফিরে এলেন নিয়াশার সামনে। উনার হাতে একটা পুরোনো ফটো অ্যালবাম। উনি নিয়াশার সামনাসামনি বসে অ্যালবাম টা উল্টিয়ে দেখতে লাগলেন। কয়েক সেকেন্ড এমন ভাবে দেখার পর এক সময় খুঁজে খুঁজে একটা ছবি বের করলেন। সেটা নিয়াশার সামনে ধরে বললেন
“এই ছবির লোকটাকে তুমি চিনো?
নিয়াশা অবাক হলো উনার কথায়। সে ভালো করে ছবিটা দেখে বললো
“উনি বোধহয় আমাদের আংকেল।
লুৎফুন্নাহার মুচকি হেসে বললেন
“একদম ঠিক…
এরপর তিনি আরেকটা ছবি বের করলেন। সেটাও নিয়াশার সামনে ধরে বললেন
“দেখো তো, চিনতে পারো কিনা।
নিয়াশা এবারেও ভালো করে দেখলো ছবিটা৷ একটা কোলের বাচ্চার ছবি৷ এটা কি উনার ছেলের সন্তান? নাকি মেয়ের সন্তান? ভাবতে লাগলো নিয়াশা। কয়েক সেকেন্ড ভেবে সে বললো
“আপনার নাতনী বোধহয়।
লুৎফুন্নাহারের মুখ হটাৎ কালো হয়ে গেলো। সে সামান্য বিষাদ গলায় বললো
“ওকে কি মেয়ের মতো দেখা যায়?
নিয়াশা মাথা নিচু করে বললো
“বুঝা যাচ্ছে না।
“ও আমার ছোট ছেলে, সাদাত।

নিয়াশা চমকিত হলো। সে আবারও ছবিটার দিকে তাকালো। লুৎফুন্নাহার এবার বলতে লাগলেন তাই অতীত জীবনের কথা, অবেলায় স্বামীকে হারানোর কথা। তিনটে বাচ্চাকে অনেক কষ্টে মানুষ করার কথা। নিয়াশা অদ্ভুতভাবে শুনছিলো কথাগুলো। এক পর্যায়ে সে প্রশ্ন করলো
“আমাকে কেন এইসব বলছেন আপনি?
লুৎফুন্নাহার বললেন
“বলছি কারণ, যে ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছি এতো কষ্টে, সে ছেলে বোধহয় তোমার প্রতি আকৃষ্ট, আর বোধহয় তুমিও…
নিয়াশা অবাক হলো এবার। সে প্রশ্ন করলো
“এটা আপনাকে কে বলছে, সাদ?
“নাহ, আশা বলেছিলো। সে আমাকে এও বলেছিলো তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে, এছাড়াও তোমার ব্যাপারে আরো অনেক প্রশংসাও করেছিলো। তোমাদের সম্পর্কটা যেনো আমি মেনে নেই সেইজন্য রিকুয়েষ্টও করেছে আমাকে।
“সত্যিই আশা এইসব বলেছে? সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করলো নিয়াশা।

লুৎফুন্নাহার মুচকি হেসে বললেন
“আমি নিশ্চয়ই তোমার সাথে মিথ্যা বলবো না।
নিয়াশা এবার কিছুটা নিরব হয়ে গেলো। এরপর আবারও প্রশ্ন করলো
“আপনি হটাৎ আমাকে ডেকে এইসব বলছেন আজ, নিশ্চয়ই আপনার মনে কিছু চলছে। কি চলছে জানতে পারি?
লুৎফুন্নাহার মৃদু হেসে বললো
“সর্বপ্রথম বলি, তোমার প্রশ্ন করার ধরণগুলো পালটে ফেলো।
নিয়াশা কিছু বললোনা। লুৎফুন্নাহার বললেন,
“প্রথমে বাকিদের মতো আমিও ভেবেছিলাম আমার ছেলের সাথে তোমার কিছু একটা চলছে, আর সেই কারণে আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমার ব্যাপারে৷ সে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে সে তোমায় ভালোবাসেনা।
“আপনি কি এইসব বলার জন্য আমায় ডেকেছেন?
“নাহ, ডেকেছি অন্য একটা কথা বলার জন্য।
“কি কথা?
লুৎফুন্নাহার কয়েক সেকেন্ড দম নিয়ে বললেন
“যেই মেয়েটা তোমার ব্যাপারে মিথ্যা প্রশংসা করলো যেনো আমি তোমাকে মেনে নেই, সেই মেয়েটার সাথে তুমি যা করছো তা কি ঠিক?
নিয়াশা চমকে উঠলো হটাৎ। সে বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো
“মানে?
“গত কয়েক মাস থেকেই খেয়াল করছি ওর সাথে খুব বাজে ব্যাবহার করছো তুমি, সাদের কাছ থেকে শুনলাম ওকে ভুল বুঝে তুমি যাচ্ছেতাই বলে অপমান করছো। এটা কি ঠিক হচ্ছে? যত যাইহোক, তুমি একজন শিক্ষিতা মেয়ে। ভালো মন্দ বুঝার বয়স তোমার হয়েছে। সত্য মিথ্যা, বাস্তব অবাস্তব বুঝার জন্য সৎ দৃষ্টির বড্ড প্রয়োজন। তোমার কি সত্যিই সেটা আছে?

নিয়াশা মাথা নিচু করলো এবার। সে মুহূর্তে কোনো কথা আসছিলো না তার মুখ থেকে। লুৎফুন্নাহার হেসে বললেন
“আশা করছি সেই দিক সম্পর্কে তুমি ঠিক এই সময়ের পর থেকে সজাগ হবে।

নিয়াশা ফিরে এলো বাস্তবে, বিছানার এক প্রান্তে গুটিশুটি মেরে বসে আছে সে। কথাগুলো সারাটা রাত তার মাথায় কিলবিল করেছে। চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু পানি, ওর ছোট্র মস্তিস্কে এই মুহূর্তে শুধু একটা কথায় ঘোরপাক খাচ্ছে, “বিনা কারণে বড্ড বেশি অন্যায় করে ফেলেছি ওর সাথে। আদৌ কি এর কোনো ক্ষমা আছে?

চলবে….