ভালোবাসি তাই পর্ব-৩৯+৪০

0
484

#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-৩৯

সকালের নাস্তা খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে গেলো লুৎফুন্নাহার। সাদও তৈরি, কিছুক্ষণের মধ্যেই রওনা করবে ওরা। আদিব ওদের আশেপাশেই আছে, সেই ওদেরকে এগিয়ে দিয়ে আসবে। মৃদুলা লুৎফুন্নাহারের সব ধরনের তদারকি করছেন, যাবার পর যেনো বলতে না পারে, এ বাড়িতে তার খাতির যত্ন ঠিকঠাক ভাবে হয়নি। দিলারা লুৎফুন্নাহারের সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে।
এবার বেরিয়ে পরার পালা। লুৎফুন্নাহার আদিবকে ইশারা করে বললো
“এবার চলো বাবা, বেরিয়ে পরি।
“হুম চলুন।।
লুৎফুন্নাহার সাদের দিকে তাকালো। সে অন্যমনস্ক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি সাদের দিকে এগিয়ে ক্ষীণ গলায় বললেন
“আমাদের এবার বেরিয়ে পরা উচিৎ সাদ।
সাদ লুৎফুন্নাহারের দিকে তাকালো। এরপর মলিন মুখে বললো
“একটু অপেক্ষা করো মা, আমি আসছি।।
লুৎফুন্নাহার কোনো কথা বাড়ালেন না, কারণ উনি ভালো করেই যানেন, ছেলে কোথায় যাচ্ছে, কার কাছে যাচ্ছে।

সাদ এক দৌড়ে চলে এলো সেই পুকুড় পাড়টায়। এদিক ওদিক তাকালো সে, আশেপাশে আশাকে দেখা যাচ্ছেনা। সে দুই একবার কিউটি বলে ডাকলো, কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলোনা। এক সময় পুকুড়ের কিনারা ঘেঁষে এসে সে দাড়ালো। নিচের দিকে তাকাতেই অবাক হলো সে। একদম শেষের সিড়িটা, যেটা পানির সমান সমান হয়ে আছে, আশা সেখানটায় পাথরের ন্যায় বসে আছে। সাদ মলিন কন্ঠে ডেকে বললো
“কিউটি….
আশা নির্বাক, না কোনো কথা বলছে আর না কোনো নড়াচড়া করছে। সাদ এক সিড়ি দুই সিড়ি করে নিচে নেমে এলো। আশার পাশ ঘেঁষে বসে তাকালো তার দিকে। কয়েক মুহূর্ত পর মলিন গলায় বললো
“আমি চলে যাচ্ছি কিউটি।
“জানি। সামনের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো আশা।
সাদ বললো
“সেই কখন মায়ের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে চলে এলে, একবার আমার সাথে একটা কথা পর্যন্ত বললেনা। অভিমান করেছো আমার উপর?

আশা মলিন চোখে এবার সাদের দিকে তাকালো। ওর চোখের কোনায় পানি, চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। খুব কেঁদেছে বোঝায় যাচ্ছে। সাদ নিজ হাতে ওর চোখদুটো মুছে দিয়ে কোমল গলায় বললো
“এভাবে কাঁদলে আমি কিভাবে যাবো কিউটি?
“আমি কাঁদছিনা তো, আপনি চলে যান।।
সাদ মুচকি হেসে আশাকে এক হাতে জরিয়ে ধরতে নিলে আশা খানিক দূরে গিয়ে বসলো। সাদ প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে আশার কাছে পুনরায় গেলো। আবেশি গলায় বললো
“আজ কি বার মনে আছে কিউটি?
আশা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো সাদের দিকে। সাদ মুচকি হেসে বললো
“আজ সোমবার। আর মাত্র তিনটে দিন, এরপরই আমি আবারও আসবো। দুদিনের জন্য বেড়াতে নয়.. সারাজীবনের জন্য তোমায় নিয়ে যেতে। আর তোমাকে নিয়ে যেতে হলে আমার কিছুটা প্রস্তুতির প্রয়োজন, তুমি যদি আমাকে হাসিমুখে বিদায় না দাও, আমি ঠিকঠাক ভাবে সবকিছু সম্পন্ন করতে পারবো না। তুমি কি চাও না, আমি নিখুঁত ভাবে তোমার সামনে এসে হাজির হই?

আশা কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ থাকার পর বললো
“আপনি এমনিতেও আমার কাছে নিখুঁত আছেন।
সাদ হেসে বললো
“আচ্ছা, কিন্তু আমাকে যেতে তো হবে বলো। না গেলে বর সেজে আসবো কি করে?
আশা তাকিয়ে রইলো সাদের দিকে। এরপর আশার দুকাধে হাত রেখে ওকে দাঁড় করালো৷ হাসিমুখে বললো
“আমি চাই আমার কিউটি রাজিরাণীর বেশে আমার জন্য অপেক্ষা করুক। আমি এসে আমার রাজরাণীটাকে সারাজীবনের জন্য মনের রাণী করে ঘরে ফিরবো।
আশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবার।
সাদ মলিন হেসে আশাকে জরিয়ে ধরলো। জড়ানো গলায় বললো
“এই তিনটে দিন তোমায় খুব মিস করবো কিউটি।
আশা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলোনা এবার। শব্দ করে কেঁদে উঠলো। সাদ আশাকে কোমল গলায় বললো
“আমাকে হাসিমুখে বিদায় দিবেনা কিউটি?
আশা এবার নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। হাতের উল্টোপিঠে চোখদুটো মুছে নিয়ে সাদের দিকে তাকালো। এরপর হাসিমুখে বললো
“আমি আপনার অপেক্ষায় থাকলাম।
সাদ হেসে বললো
” মাত্র তিন দিন।
আশা এবার আর কোনো উত্তর দিলো না। সাদ আশার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো

“তোমার জন্য কি রঙ এর শাড়ি আনবো কিউটি?
আশা জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বললো
“আপনি যেটা পছন্দ করবেন সেটাই।

আরো কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে সাদ বললো
“মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে কিউটি, আমায় এবার বিদায় দাও…
আশা অশ্রুসিক্ত নয়নে সাদের দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় বললো
“ইচ্ছে করছেনা,
“তবুও …
আশা মুচকি হেসে বললো
“এই মুহূর্ত থেকে আমি আপনার ফিরে আসার প্রহর গুনতে শুরু করলাম।।
সাদ আশার কপালে আলতো করে চুমু খেলো। নরম গলায় বললো
“নিজের খেয়াল রেখো কিউটি।
আশা এবারেও কোনো উত্তর দিলোনা।।শুধু নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো।।
সাদ উল্টোদিকে ফিরে বাম হাতের তালুতে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে নিলো খুবই সতর্কতার সাথে, কিউটি দেখলে আরো ভেংগে পরবে যে।

___
বাসায় পৌছুতে পৌছুতে বিকেল পেরিয়ে গেছে। অতিরিক্ত জ্যাম থাকার কারণে দুপুরে পৌছুনোর কথা থাকলেও সেটা হয়ে উঠেনি। বাসায় যাবার পর খুবই ব্যাস্ত হয়ে পরেন লুৎফুন্নাহার। এই তিনদিনে বিভিন্ন যায়গায় আমন্ত্রণ, কেনাকাটা.. সবকিছুর আয়োজন তাকে করতে হবে। তিনি একের পর এক কল করে যাচ্ছেন নানান যায়গায়।
বাসায় এসে সর্বপ্রথম আশার সাথে ফোনে আলাপ সেড়ে নেয় সাদ। এরপর বিশ্রামের জন্য লম্বা একটা ঘুমে পাড়ি জমায় সে। যখন ঘুম ভাংলো প্রায় সাড়ে সাতটা আটটার কাছাকাছি। সাদ ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরোয়। এমন সময় দেখতে পায় নিয়াশা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। সাদ হেসে নিয়াশার দিকে এগিয়ে যায়। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে
“হাই বিউটি।।
নিয়াশা হ্যান্ডশেক করে না। সে মুচকি হেসে বলে
“কেমন আছেন?
“ভালো। তুমি কেমন আছো?
“ভালো আছি।।
কয়েক সেকেন্ড নিরবতা। এর পর নিরবতা ভেঙ্গে নিয়াশা প্রশ্ন করে
“আশার কি খবর? ভালো আছে ও?
“খুব ভালো আছে।
“কবে বাসায় ফিরে আসবে কিছু বলেছে?
সাদ হেসে বললো
“ও বরাবরের মতো শুক্রবারে চলে আসবে এখানে।

নিয়াশার কপালে ভাজ পরলো। সে বিস্ময়ে বললো
“বরাবরের মতো মানে?
সাদ হাসলো। এরপর খুশির আমেজ নিয়ে বললো
“যদিও মা তোমায় বলবে। তাও বন্ধু হিসেবে আমি তোমায় আগেই বলে রাখছি, আমার আর কিউটির বিয়ে শুক্রবারে।
“বিয়ে!!
“হুম বিয়ে।
নিয়াশা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদের দিকে। সাদ হেসে বললো
“জানো বিউটি, সেদিন যখন আমি ভার্সিটির সবার সামনে বলেছিলাম আমি ওর বয়ফ্রেন্ড, সেদিন আমি মিথ্যে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো নি। কিন্তু কিছুদিনের ব্যবধানে এই মিথ্যেটা সত্যি হয়ে গেলো। আমি ভালোবেসে ফেললাম তাকে, ভীষণ রকমের। এখন এমন একটা পরিস্থিতি এসে দাড়িয়েছে সামনে যে তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারছিনা, তাকে ছাড়া আমি চলতে পারছি না । এক যায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে আছি। তাই ডিসাইড করলাম, যাকে ভালোবাসি তাকে কেন শুধু শুধু দূরে রাখবো। তাই বিয়ের বন্ধনে আবন্ধ হয়ে তাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিচ্ছি।।

নিয়াশা একধ্যানে কথা গুলো শুনলো। কিছুটা সময় পর সে গভীর ভাবে হেসে বললো
“কংগ্রাচুলেশন..
“থ্যাংক ইউ বিউটি।
নিয়াশা উত্তর দিলো না। আবারও কিছুটা সময় নিরব থাকার পর নিয়াশা বললো
“কানাডা থেকে একেবারে চলে এসেছেন?
“হুম।
“কেন?
“ভালোবাসি তাই।
“চাইলে তো আপনার ভালোবাসাটাকে সেখানেও নিয়ে যেতে পারতেন।
“তাতে সে তার ভালোবাসার বাকি মানুষগুলো থেকে যে অনেক দূরে সরে যেত!
নিয়াশা হেসে বললো
“আপনাদের নতুন জীবন সুখের হোক।
“তুমি আমার সাথে যাবে তো কিউটি?
“কোথায়?
“বরযাত্রী।

নিয়াশা মৃদু হেসে বললো
“কেনো নয়। অবশ্যই যাবো।।
সাদ মুচকি হেসে তৎক্ষনাৎ সে স্থান ত্যাগ করলো।

পরের দিন সকালের নাস্তা শেষ হবার আগেই সাদের বড় ভাই বউ বাচ্চা সমেত চলে এলো বাসায়। সাদ হেসে ওদের সাথে কুশল বিনিময় করে। খাওয়াটা কোনো মতে সেড়ে ভাইয়ের মেয়েটাকে কোলে নিতে যায়। মেয়েটা সবেমাত্র গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে শিখেছে। সাদ মেয়েটাকে কোলে নেয়, মিষ্টি মেয়েটা একভাবে তাকিয়ে থাকে তার চাচ্চুর দিকে। সাদ বার বার চাচ্চু চাচ্চু বলে ডাকছে.. তবে মেয়েটা দেখেই চলেছে তাকে। কথা বলতে শিখেনি এখনো। সাদের বড় ভাই সাইম বললো
“কানাডা থেকে সবকিছু গুটিয়ে চলে এলি, আমাদের একবার জানানোর প্রয়োজনও মনে করলি না। এসেও আমাদের সাথে দেখা না করে প্রেমিকাকে দেখতে ছুটে গেলি। আমরা কি এতটাই পর হয়ে গেলাম।।
সাদ হেসে বললো
“এইত দেখা হলো।
“হুম হয়েছে, কিন্তু তুই আমাদের থেকেও তোর প্রেমিকাকে বেশি গুরুত্ব দিলি।
“সেটা তো তুমিও দিয়েছিলে ভাইয়া। আমি অন্তত মাকে জানিয়েই এসেছি।
সাদের বড় ভাইয়ের মুখটা হঠাৎ চুপসে গেলো। সাদের মুখে এমন উত্তর শুনবে সে আশা করেনি হয়তো।
সাঈমের বউ অর্থাৎ সাদের ভাবী এসে এদের কথোপকথনে বাধ সেধে বললো
“অনেক তর্কাতর্কি হয়ছে, এবার আমিও একটু কথা বলি আমার দেবরের সাথে। সাঈম চুপচাপ সেখান থেকে উঠে দূরে গিয়ে বসলো।

সাঈমের বউ দুষ্টুমি হেসে বললো
“আমার জা কেমন? আমরা কি দেখেছি তাকে?
“তুমি কি এই বাসায় গত এক বছরের মধ্যে এসেছো ভাবী?
“এ কথা কেন বলছো?
“বলো না।
“এসেছিলাম একবার।
সাদ আশা যে রুমে থাকতো সে রুমের দিকে আঙ্গুল তাক করে বললো
“এ রুমে যে একটা মেয়ে থাকতো তাকে দেখেছো?
“দেখেছি বোধহয়, মনে নেই।
“মনে না থাকলে আর কি করার। সেই আমার বউ হবে, আর তোমার জা।।
সাঈমের বউ অবাক হয়ে বললো
“কি বলো, মা তো আমাদের বলেনি যাকে তুমি বিয়ে করছো সে এখানেই থাকতো!!
“কি জানি। মনে নেই হয়তো।

লুৎফুন্নাহার তার বুয়ার সাথে মিলে ঘর পরিষ্কার করছিলো। সাদ উনাকে লক্ষ্য করে বললো
“আপু কখন আসবে মা?
লুৎফুন্নাহার কাজ করার ফাঁকে উত্তর দিলো
“তোর দুলাভাই অফিস থেকে ফিরবে দুপুর নাগাদ। সে ফিরলেই ওরা চলে আসবে এখানে।
“ওহ।

দুপুরের পরপরই লুৎফুন্নাহারের মেয়ে অর্থাৎ সাইমা তার মেয়ে আর হাজবেন্ডকে নিয়ে হাজির হলো এ বাসায়। তখন সাদ ওর ভাইয়ের ছোট্র মেয়েটাকে নিয়ে খেলা করছিলো, এ জন্য লুৎফুন্নাহার বেশ কয়েকবার তার সাথে রাগও দেখিয়েছে। ভাইজিকে আদর করবে ভালো কথা, কিন্তু বিয়েটা তো ওরই। আর সে বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে কাজকর্ম সব মায়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে কি সুন্দর খেলা করছে। সাদ মায়ের কথা শুনে মাঝে মাঝে হাসছিলো। সাদ যখন ওর ভাইয়ের মেয়ের সাথে খেলায় ব্যস্ত ছিলো ঠিক তখন আলতো হাতে পেছন দিক থেকে এসে গলায় জরিয়ে ধরলো আরেকটা ফুটফুটে মেয়ে। সাদ বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো
“আমাকে কে ধরেছে?
“মামা আমি ধরেছি। আধো আধো গলায় বললো মেয়েটা।
সাদ হাত বাড়িয়ে মেয়েটিকে টেনে নিলো নিজের কোলে। মিষ্টি স্বরে বললো
“আমার মামাটা কেমন আছে।
মেয়েটি সাদের গালে চুমু খেয়ে বললো
“ভালো আছে।

বিকেলে লুৎফুন্নাহার সাদসমেত বাকি সবাইকে নিয়ে বসলো কেনাকাটার জন্য আলাপ করায়। বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় সাইমা বাধ সেধে বললো
“আমরা কিন্তু খুব রেগে আছি মা।
লুৎফুন্নাহার ভ্রু বাকিয়ে বললো
“কেন?
“তোমার ছেলে তো বড় হয়ে গেছে, তাই এত বড় ডিসিশন নেওয়ার আগে আমাদের কিচ্ছুটি জানায় নি। কিন্তু তুমি তো জানাতে পারতে মা। ওখানে গিয়ে দুইদিন থেকে এলে, বিয়ে ঠিক করে এলে.. কিন্তু আমরা জানতেই পারলাম না।। একা একা সব করে চলে এলে।
লুৎফুন্নাহার মৃদু হেসে বললেন
“যদিও একা যায় নি, তোর মামা আর চাচাকে সাথে করে নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু সাঈম আর জামাই বাবাজিকে আমার জানানো উচিত ছিলো।
“হুম। নাক ফুলিয়ে বললো সাইমা।
লুৎফুন্নাহার আবারও হেসে বললেন
“আমি মেনে নিচ্ছি এদিক থেকে আমার ভুল হয়ে গেছে। তাই আবারও জিজ্ঞসা করছি, এ বিয়েতে কি তোমাদের কোনো আপত্তি আছে?
সাইমা একবার সাদের দিকে তাকালো। সাদ সেটা খেয়াল করে ওকে ভেংচি কাটলো। ওর এমন অদ্ভুত কান্ডে সাইমা হেসে বললো
“আমার ভাই যদি সুখে থাকে, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
সাদের মুখে প্রসস্থ হাসি ফুটে উঠলো এবার।
লুৎফুন্নাহার বললেন
“ঠিক আছে। তাহলে এক্ষুনি বেরিয়ে পরো তোমরা সবাই মিলে।
“কোথায় যাবো? এতক্ষনে সাঈম প্রশ্ন করলো। সাদ আর সাইমাও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে।
লুৎফুন্নাহার বললেন
“বিয়ের শপিং করা লাগবে না?
সাদ হাসলো মায়ের কথা শুনে। এরপর লুৎফুন্নাহার সাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
“আশাকে ফোন করে জেনে নিও, ওর পছন্দ অপছন্দের কথা।
সাদ মায়ের কথায় মাথা নাড়ালো।

চলবে….

#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-৪০

শপিং করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১০ টা ছুই ছুই।। বাসায় ফিরে দেখলো কিছু অতিথি এর মধ্যে চলে এসেছে, বাকিরা কাল পরশু মিলিয়ে আসবে। প্রচন্ড ক্লান্ত হওয়ায় সাদ বিশ্রাম নেবার জন্য নিজের রুমের দিকে যেতেই লুৎফুন্নাহার বাধ সেধে বললো
“আজ ও ঘরে তোমার যায়গা হবেনা সাদ।
সাদ ভ্রু বাকিয়ে বললো
“আমার রুমে আমার যায়গা হবে না?
“হুম। ধীরস্থির গলায় বললো লুৎফুন্নাহার।
সাদ খানিক বিস্ময়ে বললো
“কেন?
লুৎফুন্নাহার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন
“আজ কিছু গেস্ট এসেছে। তোমার বোন, দুলাভাই আছেন। যায়গার সংকট তো জানোই তুমি। যদিও সাঈমকে বলেছি রাতে ওদের বাসাতে গিয়েই যেনো থাকে। রাত থেকে সকালে চলে আসবে ওরা, কিন্তু মেয়ের জামাইকে তো আর চলে যেতে বলতে পারিনা।
সাদ খানিক দম নিয়ে বললো
“হুম, সবই বুঝলাম। কিন্তু আমি থাকবো কোথায়? যেহেতু আমি এ বিয়ের বর, তাই আমার স্পেশাল যায়গার প্রয়োজন, যেখানে সেখানে তো আমি থাকতে পারি না বলো। দুষ্টুমি করে বললো সাদ।

লুৎফুন্নাহার মৃদু হেসে বললেন
“তোমার হবু বউ এর রুমটা তো খালিই আছে।
এ কথাটা সাদের মাথাতে ছিলোই না। তার চোখেমুখে আলো চিকচিক করতে লাগলো হঠাৎ। সামান্য মন খারাপ হলো এটা ভেবে যে কিউটির রুমের কথা তার মাথাতেই ছিলো না, মনে থাকলে গতকাল বাসায় ফেরার পরও সে ও রুমেই থাকতো। লুৎফুন্নাহার ছেলের মুখের দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে পরক্ষণে বললেন
“ও রুমে বিছান আছে, ফ্যান আছে, থাকার মতো সুন্দর একটা পরিবেশ আছে। আশা করছি তোমার ওখানে কোনো সমস্যা হবেনা। আমি বুয়াকে বলে দিচ্ছি রুমটা ঝেড়ে দিয়ে আসতে।
লুৎফুন্নাহার চেয়ারে বসা ছিলেন। উনি সেখান থেকে উঠে বুয়ার কাছে যাবার জন্য পা বাড়িয়েও থেমে গেলেন। সাদের দিকে তাকিয়ে বললেন
“যদিও আমি নিশ্চিত ওখানে তোমার কোনো সমস্যা হবেনা, এরপরও বলছি.. তুমি থাকতে পারবে তো ও ঘরে?
সাদ হেসে বললো
“একশ বার পারবো। কিন্তু…
সাদের চোখেমুখে খানিক চিন্তার রেখা। লুৎফুন্নাহার প্রশ্ন করলেন
“কিন্তু কি?
“ও রুমে তো তালা দেওয়া, চাবি তো আমার কাছে নেই।
লুৎফুন্নাহার সশব্দে হেসে বললেন
“আমার জানামতে, তুমি তালা ভাঙ্গায় পিএইচডি করা।
সাদ দাঁত বের করে হাসলো মায়ের কথায়। যদিও কিউটির রুমে ঢুকার জন্য তালা ভাঙ্গার প্ল্যান তার মাথাতে আগেই এসেছিলো, তবুও ইন্ডিরেক্টলি মায়ের কাছ থেকে অনুমতি টা নিয়ে নিলো। বিয়ের আগে মায়ের কাছে সে কোনো বকাঝকা শুনতে চায় না।

ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে সাদ। বেশ শান্তি লাগছে এবার। যদিও এতদিন রুমটা বন্ধ থাকায় প্রথম দিকে কিছুটা ভ্যাপসা গন্ধ লাগছিলো, এদিকে রুমে দেয়ার মতো কোনো স্প্রে সেই মুহূর্তে তার কাছে ছিলো না। তাই নিজের বডি স্প্রে টা দিয়ে সারা রুমে ভালো করে স্প্রে করে নিয়েছে সাদ। এবার পুরো রুম থেকে শুধু সুঘ্রাণই পাচ্ছে। রুমের লাইট টা জ্বালিয়েই রেখেছিলো সে। তাই পুরো রুমটা সে শুয়ে থেকেই চোখ বুলাতে লাগলো।। কিউটি ব্যবহৃত জিনিসগুলো দেখে মনে হলো ওগুলো কোনো জিনিস নয়, স্বয়ং কিউটিই তার কাছে আছে। সাদ হাসলো, আশার রুমে থাকার কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য মনে মনে মাকে অসংখ্য বার ধন্যবাদ জানালো সে।

ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো রাত বারটা ছুইছুই। সেই সকালে আশার সাথে কথা বলেছিলো সে। এর মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি। আশার ফোন নাম্বারটা বের করে কল দিতে যেয়েও দিলো না, ভাবলো ঘুমিয়ে আছে বোধহয়.. ঘুমের ক্ষতি হবে। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে মানাতেও পারছিলো না। ওর গলার আওয়াজ না শুনে ঘুম আসবেনা এটা নিশ্চিত।।
সাদ নিজের মনের সাথে অনেক্ষণ যুদ্ধ করে এক সময় কল করে বসলো। মাত্র দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করলো আশা। নরম গলায় বললো
“আজ সারাদিন খুব অপেক্ষা করিয়েছেন আমায়। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটলো।
সাদ অবাক হয়ে বললো
“তুমি না ঘুমিয়ে আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলে?
“আপনার কন্ঠস্বর না শুনলে ঘুম আসবে আমার?
সাদ হেসে বললো
“স্যরি কিউটি, খুব ব্যস্ত ছিলাম আজ। কিন্তু তুমিও তো একবার কল করোনি।
আশা কিছুটা আমতাআমতা করে বললো
“আমার ফোনে ব্যালেন্স ছিলো না।
“ওহ।।
কিছু সময় পর সাদ বললো
“রাতে খেয়েছো?
“হুম। আপনি খেয়েছেন?
“খেয়েছি।
“ঘুমাবেন কখন?
আশার প্রশ্ন শুনে মুখে হাসি ফুটলো সাদের। সে ধীর গলায় বললো
“এখন আমি কোথায় শুয়ে আছি জানো?
“আমি কি করে জানবো?
“তোমার রুমে আছি, তোমার বিছানায়, তোমার বালিশে মাথা দিয়ে আছি।
আচ্ছা কিউটি, শেষবার এই রুমে তো তুমিই ছিলে তাইনা? আমি কিন্তু তোমার গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি, মনে হচ্ছে আমার ঠিক পাশেই তুমি আছো।
সাদের কথা শুনে লাজুক হাসি হাসলো আশা। মৃদু গলায় বললো
“আমিও কিন্তু আপনার গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি।
“সত্যি?
“হুম।
“কিউটি..
“কি?
“তুমি যেখানে শুয়ে আছো ঠিক সে যায়গায় বালিশ বরাবর বিছানাটা একটু তুলে দেখো একটা জিনিস আছে।
আশা অবাক হয়ে বললো
“কি আছে ওখানে?
“দেখোই না।
আশা বালিশ টা সরিয়ে বিছানাটা সামান্য উঠিয়ে দেখলো একটা ছোট্র প্যাকেট রাখা। সে প্যাকেট টা হাতে নিয়ে সাদকে বললো-
“একটা প্যাকেট পেয়েছি।
“এবার ওটা খুলো।
“কি আছে এতে?
“খুলেই দেখো না।
আশা বিস্ময় নিয়ে প্যাকেট টা খুলতে লাগলো। প্যাকেট খুলা হয়ে গেলে সে একটা সুন্দর কারুকাজ করা ভারী একটা সোনার চেইন দেখতে পেলো, তাতে লাভ শেইপের একটা লকেটও আছে। লকেটের ঠিক মাঝ বরাবর একটা চকচকে ডায়মন্ড বসানো। আশা অবাক হলো৷ সে সাদকে বললো
“এটা কার?
“আমার কিউটির।
আশা নিশ্চুপ। সাদ মৃদু হেসে বললো
“কিউটি।
“কি?
“লকেটটা খুলো।
আশা সাদের কথামত লকেটটা খুললো।। ওটা খুলা মাত্রই মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। লকেটটার ভিতরে দুপাশে ছোট্র দুইটা ছবি, একটা সাদের হাসিমুখের, আরেকটা ওর নিজের.. যেটা ওদিন সাদের ফোনের ওয়ালপেপারে ছিলো। আশা বেশ কিছুক্ষণ লকেটটায় হাত বুলালো। ওপাশ থেকে সাদ বললো
“পছন্দ হয়েছে কিউটি?
আশা খুশিমনে বললো
“খুব। কিন্তু এটা তো খুব দামি। এরকম কারুকাজ তো আমাদের এখানকার কোনো স্বর্ণকার পারবেনা। আর আপনি এলেনই তো সেদিন, এরমধ্যে এত তারাতাড়ি এটা কিভাবে গড়িয়েছেন?
সাদ হেসে বললো
“এটা আমি কানাডা থেকে নিয়ে এসেছি, তোমার জন্য। আমার ভালোবাসা গ্রহণ করার জন্য এবং আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবার জন্য আমার তরফ থেকে এটা ছোট্র একটা গিফট।
আশা অবাক হলো। পরক্ষণে মুখ ভার করে বললো
“তাহলে নিজের হাতে পরিয়ে দিয়ে গেলেন না কেন?
সাদ মুচকি হেসে বললো
“বড্ড ভুল হয়ে গেছে।
আশা অভিমানী হয়ে বসে রইলো। সাদ বললো
“কিউটি..
“কি হলো!
“ওটা পরে নাও, আমি ভিডিও কল দিচ্ছি। তোমায় দেখবো।
আশা অভিমানী গলায় বললো
“মোটেও না, আমি কেন নিজ হাতে পরতে যাবো। যদি এটা আমার নিজের কেনা হত তবে ঠিকই পরতাম। কিন্তু এটা আমার ভালোবাসার প্রথম উপহার, আমি এটা নিজ হাতে পরতে পারবো না।
সাদ অভিমানী কন্ঠস্বর বুঝতে পেরে বলল..
“তাহলে নিজের কাছে রেখে দাও, যেদিন আমি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো, সেদিনই নাহয় আমি নিজ হাতে পরিয়ে দেবো।
আশা নিশ্বব্দে হেসে বললো
“আচ্ছ।।
আরো কিছুটা সময় কথা বলার পর সাদ বললো
“এবার ঘুমিয়ে পরো কিউটি, অনেক রাত হয়েছে।
“আপনি ঘুমাবেন না?
“হুম।
আশা কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ রইলো। এরপর বললো
“একটা কথা বলবো?
“বলো..
“আমি যে আপনাকে আপনি করে বলি, আপনার খারাপ লাগে না?
“খারাপ লাগবে কেন?
“অনেকেই তো চায় না, ভালোবাসার মানুষ তাকে আপনি বলে ডাকুক।।
সাদ হাসলো। এরপর আবেশে বললো
“আমার কাছে ভালোবাসাটা মুখ্য। আপনি ডাকে যদি গভীর ভালোবাসা থাকে, তাহলে আমি তাতেই খুশি। তবে আমিও চাই, আমার কিউটি আমায় তুমি করে ডাকুক, কিন্তু আমি কখনোই তোমাকে এটার জন্য জোর করবোনা কিউটি। যেদিন তুমি কম্ফোর্ট ফীল করে আমায় তুমি বলতে পারবে সেদিনই নাহয় ডেকো।
আশা আবেশে চোখ বুজলো। নরম গলায় বললো
“আপনি সত্যিই অনেক ভালো। আমার অস্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে কপাল গুণে আপনার মত মানুষকে আমি স্বামী হিসেবে পাচ্ছি।
সাদ হাসলো আশার কথায়৷

______
খুব সকালে ঘুম ভাংলো আশার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো বিছানায়। কয়েক মিনিট পর্যন্ত হাত পা টানা দিতে লাগলো সে। এরপর ধীরপায়ে নেমে আসলো বিছানা ছেড়ে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলো উঠোনের এক কিনারায় কিছু মেয়ে আর মহিলারা দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে। হাতে ব্রাশ, মুখ তৈলাক্ত আর ফোলা ফোলা কিছুটা। দেখে বুঝাই যাচ্ছে এরাও সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। এরা আশাদের বাড়ির গেস্ট, বিয়ের জন্য এসেছে গতকাল। আজও আসবে অনেকেই। এখনো অনেক আত্মীয় স্বজন আসা বাকি।
আশাকে দেখে এদের মধ্যে এক জন হাসিমুখে বলে উঠলো
“কি বিয়ের কণে, ঘুম ভাংলো?
আশা মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। বাকিরা তাকিয়ে আছে আশার দিকে। ব্যাপারটা আশার কাছে বেশ অস্বস্তিকর মনে হলো। সে সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে চলে গেলো রুমে। ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে হাঁটা ধরলো সেই পুকুরটার দিকে।।

চারিদিকে পাখির কিচির মিচির শব্দ, মৃদু হাওয়া বইছে, এদিক ওদিক থেকে মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে ভোরের পরিবেশটা খুবই মনোমুগ্ধকর। আশার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে এলো। সে পুকুরের কিনারা ঘেঁষে একটা সিড়িতে বসে আপনমনে দাঁত ব্রাশ করায় মন দিলো। এভাবে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে গেলো। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘার ঘুরিয়ে দেখলো আশা। আদিব হাসিমুখে বসে আছে বোনের পাশে। আশা অবাক হয়ে বললো
“তুই কখন এলি এখানে?
“মাত্রই।
“ওহ।
“এখানে একা একা বসে আছিস যে?
“ভালো লাগছে। দেখ ভাইয়া আবহাওয়া টা কত সুন্দর।
আদিব চারপাশটায় তাকালো। এরপর হেসে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো
“সত্যিই অনেক সুন্দর। একদম আমার বোনের মতো।
আশা অবাক হয়ে তাকালো আদিবের দিকে। আদিবের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখে বুকে মোচড় দিলো তার। খুব কান্না পেলো, আর মাত্র দুটো দিন, এরপর সে চলে যাবে এ বাড়ি থেকে। এ বাড়ির মেয়ে থেকে হয়ে যাবে এ বাড়ির মেহমান। আশা হঠাৎ আদিবকে জরিয়ে ধরলো, কান্না আসছে খুব, কিন্তু সেটা খুব কষ্টে চেপে রাখলো আশা। আদিব বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
“আশামনি, কষ্ট হচ্ছে তোর?
আশা ভেজা গলায় বললো
“খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া।

আদিবের বুকেও চাপা কষ্ট। তবে চাপা কষ্টটাকে চাপা দিয়েই রাখলো। বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো
“ভেঙ্গে পরিস না আশামনি, নিজেকে শক্ত কর। আজ নাহয় কাল এটাতো হবারই ছিলো। মেয়েদের পরিণতিই যে এটা। নিজের বাড়ি ছেড়ে পরের বাড়িতে যেতে হবে, অচেনা অজানা মানুষদের আপন করে নিতে হবে। যেমনটা মৃদুলা এসেছে এখানে। তবে তোর তো কোনো অসুবিধা হবেনা ওখানে দেখিস, সবাই তোর পরিচিত। ওখানে তোর বান্ধবীরাও আছে। আর সাদের কথা কিইবা বলব, তোর কষ্ট হবে এমন কিছুই করবে না সে।
আশা চাপা গলায় বললো
“তোকে খুব মিস করবো রে ভাইয়া।
আদিব নিজেকে শক্ত করে বোনকে একহাতে জরিয়ে ধরে বললো
“আমি প্রতিদিনই তোকে কল করবো, অনেক সময় ধরে কথা বলবো.. প্রতি সপ্তাহে ওখানে গিয়ে তোকে দেখে আসবো। আর তোর যখন বাড়ির জন্য খুব কষ্ট হবে, সাদকে বলবি, সে নিশ্চয়ই তোকে নিয়ে আসবে।
আশা আর কিছু বললো না। সে আগের মতই জরিয়ে ধরে রাখলো ভাইকে। আদিবও নির্বাক। ভেতরে ভেতরে সেও ভেঙ্গে পরছে প্রচন্ডভাবে। চোখ ফেঁটে পানি বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু ছেলেদের যে কান্না করতে নেই।

বাসায় অনেক কাজকর্ম করে শেষে খুব ক্লান্ত হলো সাদ। সারাদিন ধরে এটা ওটা করেই যাচ্ছে। এক সময় করুণ গলায় বোনকে বললো
“তোদের একটুও দয়ামায়া নেই আপু।
সাইমা হেসে বললো
“কেন? আমরা আবার কি করলাম?
“কাল বাদে পরশু আমার বিয়ে। আর তোরা আমাকে গাধার মত খাটিয়ে ছাড়ছিস। এত কাজ করে আমি কালো আর বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কিউটিকে আর ওর ভাবীকে বলে এসেছি আমি রাজপুত্র সেজে যাবো ওখানে। কিন্তু এত কাজ করে ওখানে গেলে ওরা আমাকে রাজপুত্র নয়, রাজকামলা ভাববে।
সাইমা সশব্দে হাসলো। বললো
“আহারে, আমার ভাইটা। আচ্ছা যা, আজ থেকে তোর পুরোদমে ছুটি।
সাদ দাঁত কপাটি বের করে হেসে বললো
“এতদিন পর তোকে আমার বোন বোন লাগছে।

সাদ ফ্রেশ হয়ে একটু হাঁটাহাঁটির জন্য বেরিয়ে গেলো রাস্তায়। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই সে কানাডায় থেকেছে তাই এখানে তার তেমন কোনো বন্ধুবান্ধব নেই। সাদ একাই হেঁটে চলেছে সামনে। একটা সময় হাঁটতে হাঁটতে আশার ভার্সিটির কাছাকাছি চলে এলো সাদ। সে ভার্সিটির দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময়। এরপর মুচকি হেসে ভাবলো
“এটাই আমার কিউটির ভার্সিটি। আমার কিউটির অস্তিত্ব এখানে জরিয়ে আছে।
সাদ সামনের দিকে তাকালো। মুহূর্তে কপালে ভাজ পরলো তার। রাস্তার মাঝখানে বাইক দাঁড় করিয়ে তাতে হেলান দিয়ে বসে আছে রানা। হাতের আঙ্গুলে চাবিটা নিয়ে সেটা মনের সুখে ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
সাদ ভ্রু বাকিয়ে বিরক্তিকর গলায় বললো
“তুই?
রানা বাকা হাসলো। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সাদের পা থেকে মাথা অব্দি দেখলো কিছুটা সময়। সাদ আরো বেশি বিরক্তবোধ করলো তাতে। সে তিক্ত গলায় বললো
“এভাবে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
রানা কুৎসিত ভাবে হাসলো। এরপর কর্কশ গলায় বললো
“সেদিন বলেছিলাম আমার এলাকায় পেলে তোকে ছাড়বো না, আজ পেয়েও গেলাম। তুই নিজ থেকেই চলে এসেছিস আমার কাছে। এবার দেখ আমি কি করি।

চলবে….