#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-৪১
“সেদিন বলেছিলাম আমার এলাকায় পেলে তোকে ছাড়বো না, আজ পেয়েও গেলাম। তুই নিজ থেকেই চলে এসেছিস আমার কাছে। এবার দেখ আমি কি করি।
রানার কথা শুনে সাদ কিছুটা সময় হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এরপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো
“ওহ সত্যি?
রানা অগ্নি চোখে দেখতে লাগলো সাদকে। সাদ আবারও হেসে বললো?
“আচ্ছা, দেখি তাহলে তোর দম কতটুকু।
সাদের কথা শুনে ভীষণভাবে রেগে গেলো রানা। সাপের মত ফুসতে লাগলো সে। এরপর হুংকারে বলে উঠলো
“মরার পাখনা গজাইছে না? আমারে দম দেখাস?
রানা তেড়ে আসলো সাদের দিকে। সাদ একটুও বিচলিত হলো না, বরং সে স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তার পাশের একটা পিলারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। রানা এসে সাদের মুখে গায়ের জোরে ঘুষি দিতে যাবে তখন আকস্মিক সাদ পিলারের সামনে থেকে সরে যায়। যার ফলে রানার হাই ভোল্টেজের ঘুষিটা গিয়ে লাগে পিলারে। সাথে সাথে হাত ফেটে রক্ত বেরিয়ে পরে। হাতের ব্যাথায় ককিয়ে উঠে রানা।
সাদের হাসি পায় ওর এহেন কান্ডে। সে শব্দ করে হাসে।
সাদকে হাসতে দেখে রানা আগের তুলনায় আরো বেশি ক্ষেপে যায়। আবারও সে তেড়ে আসে সাদের দিকে। যে হাতে ব্যাথা পেয়েছে সেটা আর ব্যবহার করেনা সে। বাকি হাতটা দিয়ে সাদকে আক্রমণ করতে থাকে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত একটা আক্রমণও সাদের গায়ে ঠেকে না । এক সময় রানা আবারও আক্রমণের উদ্দেশ্য হাত বাড়িয়ে দিলে সাদ সেই হাত খপ করে ধরে ফেলে।
রানা বেজায় তেজে তাকিয়ে থাকে সাদের দিকে। সাদ মুচকি হেসে ওর হাতের মুঠোয় থাকার রানার হাতটায় অনেক জোরে মোচড় দেয়।। মোচড়ের জোর এতটাই বেশি ছিলো যে রানার ওই হাতটাও মচকে যায়। রানা আর্তনাদ করে উঠে এবার। ওর আর্তনাদ সাদের কানে ঠেকতেই হাতটা প্রচন্ড ঝাকির সাথে ছেড়ে দেয় সে। এক হাত ফেটে রক্ত ঝরছে, বাকি হাত প্রচন্ড খারাপ ভাবে মচকে গেছে। হাতদুটো প্রচন্ড ব্যাথায় নাড়াতেও পারছেনা রানা। মাঝে মাঝে অস্পষ্ট ভাবে আর্তনাদ করছে। সাদ এবার রানার সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর মুখের সামনে বরাবর হয়ে সে বলে
“কি, ব্যাথা লাগছে বেশি? মলম লাগিয়ে দিবো?
রানা রেগে গিয়ে বলে
“তোর সাহস বেড়ে গেছে তাইনা, তোরে তো আমি ছাড়মু না। আমার হাত গেছে তো কি হইছে, পা গুলা এখনো আছে।।
কথাটা বলেই রানা গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে সাদকে লাথি দিতে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে সাদ আবারও বিদ্যুৎ গতিতে সরে পরে সেখান থেকে। সাদের ঠিক পেছনেই ছিলো রানার রাখা বাইকটা। লাথির বেগ এতটাই ছিলো যে বাইকে লাথি লাগা মাত্রই রানা ছিটকে গিয়ে পরে কয়েক হাত দূরে। অন্যদিকে বাইকটাও লাথির চোটে নিচে পরে যায়। কয়েক যায়গায় ভেঙ্গেও গেছে বোধহয়।
প্রথমত হাত গেছিলো, এবার কোমড় আর পা গুলোও ঠিকঠাক নেই। রানা রাস্তায় পরে থেকেই ব্যাথায় গুঙ্গাতে থাকে। সাদ এগিয়ে যায় তার দিকে৷ ওর দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে
“সবার সাথে লাগতে আসিস না। আমি চাইলে তোর পুরো শরীরের হাড়গুলো গুড়ো করে দিতে পারতাম। কিন্তু সেটা আর করলাম না। কথায় আছে, পরের জন্য কুয়ো করলে সে কুয়োতে নিজেকেই পড়তে হয়। তোর সাথেও ঠিক সেটাই হলো। আমাকে আক্রমণ করতে গেছিলি, অথচ তোর আক্রমণে তুই নিজেই আহত হলি।
রানার চোখেমুখে এখনো স্পষ্ট রাগ কিন্তু শরীরের তীব্র যন্ত্রণায় মুখ দিয়ে ব্যাথার আর্তনাদ ছাড়া আর কিছুই আসছেনা।
সাদ এবার সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে থাকে। কিছুটা দুরের একটা রিক্সা দাড়িয়ে আছে৷ সাদ হাতের ইশারায় রিক্সাওয়ালাকে ডাকে।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রিক্সাওয়ালা সেখানে এসে উপস্থিত হয়। সাদ কোনো কথা না বলেই রানাকে পাজাকোলে নিয়ে নেয়। রানা হতভম্ভের মত তাকায় সাদের দিয়ে। চোখদুটো যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। রানার এমন রিয়েকশন দেখে সাদের হাসি পায় খুব। তবে হাসিটাকে কন্ট্রোল করে সে রানাকে রিক্সায় বসিয়ে দেয়।। ওয়ালেট থেকে কিছু টাকা বের করে রিক্সাওয়ালার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রানার দিকে তাকায়। তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে
“ওকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান।
রানা তিক্ত গলায় অস্ফুটে বলে উঠে
“তোরে আমি খুন করমু।
সাদ হাসে, রানার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে
“আগে সুস্থ হো, আজকের মত তখনো নাহয় তোর মনের আশা পুরণ করতে আমিই আসবো তোর কাছে।
রিক্সাওয়ালা যখন প্যাডেল চালাতে যাবে তখন সাদ হাতের ইশারায় ওকে থামতে বলে আবারও রানার কাছে যায়। মুচকি হেসে চাপা গলায় বলে উঠে
“পরশু দিন আমার আর কিউটির বিয়ে। ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে যাবো বরযাত্রী করে। কিন্তু এখন তো আর সেটা সম্ভব না। যাইহোক, বিয়ের খাবারগুলো তোকে পার্সেল করে দিবো, যদি তুই চাস। রানা রাগে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সাদ হাসে আবারও। এরপর রিক্সাওয়ালাকে ইশারা করলে উনি প্যাডেলে ঘুরাতে শুরু করেন।
সেদিন আর বেশি সময় বাইরে থাকে না সাদ। খুব জলদিই বাসায় ফিরে আসে সে। বাসায় এসে সোজা ওয়াশরুম চলে যায়। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসে। সাইমার হাজবেন্ড আর ওর বড় ভাই সাঈমও ছিলো সেখানে। ওরাও খেতে বসে সাদের সাথে। খেতে খেতে এ কথা ও কথা বলে অনেক কথায় হয়ে যায়। সাদ জলদি খাওয়া শেষ করে, একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। খাওয়া শেষ হলে এক মিনিটও সেখানে দাঁড়ায় না সাদ। তারাহুরো করে চলে আসে আশার রুমে। ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মাথার উপরের ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে ধপ করে শুয়ে পরে বিছানায়। খুব ক্লান্ত লাগছে আজ।
এদিক সেদিক না ভেবে ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় মুহুর্তের মধ্যেই।
পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে, মরিচ বাতি দিয়ে লাইটিং করা হচ্ছে সম্পুর্ন বাড়িটা। বাড়ির সামনে বিশাল আকারের এক গেট বাধা হচ্ছে। ডেকোরেশনের লোকেরা খুব সাবলীলভাবেই কাজটা করছে, গেইটের সাইজ যেমন বিশাল তেমন গেইটের ডিজাইনের সৌন্দর্য টা অনেক বেশি। আদিব নিজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সবকিছু। কিছুটা সময় পর আদিব ফিরে আসে বাড়ির ভেতরে। বিয়ে উপলক্ষে বেড়াতে আসা মেয়ে মহিলারা এক যায়গায় জটলা বেধে বসেছে। গ্রামের মহিলারাও রয়েছে সেখানে। অনেক ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে সেই যায়গায়, কথাবার্তা গুলোই অধিকাংশই বিবাহকে কেন্দ্র করে। কথাবার্তার মাঝে গ্রামের মহিলারা হাসি আনন্দে মেতে উঠছে, মাঝে মাঝে নিজেদের মত করে গীত গাইছে।। বেড়াতে আসা মানু্ষগুলো প্রচন্ড খুশি মনেই সেগুলো উপভোগ করছে। আশা বারান্দার এক প্রান্তে একটা চেয়ার টেনে সব কিছু দেখে যাচ্ছে এক মনে।
মহিলাগুলোর কান্ড দেখে মাঝে মাঝে হাসিও পাচ্ছে। আবার পরক্ষণে মন খারাপও হচ্ছে, এ বাড়িটা ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে তাই।
আশা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। একটা উত্তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় সে। রুমের ভেতর গিয়ে ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকে। এভাবে কিছুটা সময় পার হয়ে যায়। আশা এবার বালিশটা টেনে নিয়ে তাতে শোবার জন্য প্রস্তুতি নেয়, এমন সময় দরজায় টুকা পরে৷ আশা মৃদু গলায় বলে
“দরজা খোলাই আছে।
কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই দরজা ঠেলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে আদিব। আদিবকে দেখা মাত্র আশা স্বাভাবিক হয়ে বসে, শান্ত গলায় বলে
“কিছু বলবি ভাইয়া?
আদিব এসে বোনের পাশে বসে। কয়েক মুহূর্ত নিরবে বসে থাকার পর এক সময় বোনের মাথায় হাত বুলায়। ধীর কন্ঠে বলে
“একা একা এখানে কেন বসে আছিস আশামনি, বাইরে সবাই কত আনন্দ করছে৷
আশা মুচকি হাসে। আদিবের এক হাত জরিয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখে। শান্ত গলায় বলে
“ওখানেই ছিলাম এতক্ষণ। এই মাত্রই এসেছি রুমে।
“ওহ! তুই কি ক্লান্ত? বিশ্রাম নিচ্ছিলি?
আশা হেসে বললো
“তেমন ক্লান্ত না, ওই এমনিতেই শুতে যাচ্ছিলাম। কেন কিছু করতে হবে?
আদিব কয়েক সেকেন্ড বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আশার নজর ভাইয়ের দিকে। কিছুটা সময় নিরবে কাটানোর পর এক পর্যায়ে আশা নিরবতা ভেঙ্গে বলে…
“ভাইয়া!
“হুহ?
“কিছু বলছিস না যে!
আদিব কিছুটা সময়ের জন্য অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো। বোনের ডাকে হুশ আসে তার। সে কন্ঠে তারাহুরো এনে বলে
“তারাতাড়ি রেড়ি হয়ে নে।
অবাক হয় আশা, রেডি হবে মানে! কোথায় যাবে সে? আশার মনে উৎপত্তি হওয়া প্রশ্নের উত্তর পেতে আদিবকে প্রশ্ন করে
“কোথায় যাবো আমরা?
আদিব হেসে বললো
“আগামীকাল না তোর গায়ে হলুদ, হলুদের কাপড় আনতে হবে না?
আশা মৃদু হেসে বললো
“তার জন্য আমাকে কেন যেতে হবে? তুই গিয়ে নিয়ে আয়।
আদিব আশার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো
“বিয়ে তো বার বার হবে না, একবারই হবে। আমি চাই আমার বোনের বিয়ের সবটাই যেনো তার পছন্দসই হোক।
আশা আর কোনো কথা বাড়ায় না। ভাইয়ের কথা মেনে নিয়ে সে রেডি হয়ে যায় ঝটপট।
বেশ কিছুটা সময় নিয়ে কেনাকাটা করে আশা। আদিব আশার সাথে সাথেই থাকছে। মাঝেমধ্যে এটা ওটা হাতে নিয়ে চেক করে দেখছে। আশার হলুদের যাবতীয় জিনিস কেনাকাটা হয়ে গেলে আদিব আশার দিকে তাকিয়ে বললো
“এবার আরেকটা হলুদের শাড়ি দেখ আশা।
আশা হেসে বললো
“ভাবির জন্য?
আদিব মাথা নাড়ায়৷ আশা মুচকি হেসে আরেকটা শাড়ি দেখার জন্য পা বাড়ায়। মৃদুলার হলুদের শাড়ি কেনা হয়ে গেলে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনে বাড়ির পথে রওনা দেয় ওরা। পথে আশা আদিবকে প্রশ্ন করে
“আমাদের সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনলি, তুই কিছু কিনবি না ভাইয়া?
“আমার দোকানে কি কিছুর ঘাটতি আছে নাকি। আমি আমার জন্য দোকান থেকেই নিয়ে নিবো।।
“ওহ।
রাতের খাওয়া দাওয়া সেড়ে নিজের রুমে এসে বসে থাকে আশা। এমন সময় দিলারা এসে প্রবেশ করে রুমে। মাকে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে বসে সে। হাসিমুখে বলে
“কিছু বলবে মা?
দিলারা হাসিমুখে মেয়ের পাশে এসে বসেন। মেয়েকে পরম স্নেহে টেনে নেন নিজের দিকে। দিলারার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে আশা। দিলারা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
“আর মাত্র কালকের দিনটা, এরপরই তুই হয়ে যাবি অন্য বাড়ির বউ। এ বাড়িটাকে, এ বাড়ির মানুষগুলোকে পর করে চলে যাবি নিজের গন্তব্যে। কথাটা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন উনি। আশা তরিঘরি করে উঠে বসে। মায়ের চোখের পানি দেখে তার নিজেরও কান্না পায়। কিন্তু এখন যদি সেও কান্না করে তাহলে মায়ের কান্নার বেগ বেড়ে যাবে। তাই নিজেকে ধাতস্থ করে সে মায়ের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দেয়। ভেজা গলায় বলে
“কাঁদছো কেন মা৷ তুমি কান্না করলে আমারও কান্না পায়।।
দিলারা নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। ভারী গলায় বলে
“ও বাসায় তুই আগেও থেকে এসেছিস৷ তাই ওখানকার মানু্ষগুলোকে তুই ভালো করেই চিনিস৷ হয়তো তোদের মধ্যকার সম্পর্কটাও ভালো। তা নাহলে বিয়েটা এত তারাতাড়ি আর এতটা নির্বিঘ্নে হয়ে যেত না। সাদের মায়ের সাথে যতটুকু সময় কাটিয়েছি তাতে স্পষ্ট উনি অত্যন্তই ভালো মানুষ, আর তোকেও খুব স্নেহ করেন তিনি।
আশা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। দিলারা খানিক চুপ থেকে বলে
“উনারা যে বিশ্বাসে তোকে বউ করে নিয়ে যাচ্ছে, তোর প্রতি যে ভালোবাসার টানে সাদের এক কথায় তোকে তার ছেলের বউ করতে রাজি হয়েছে, আমার আবদার… তুই সেই বিশ্বাসটা ধরে রাখিস মা। উনার বিশ্বাসে কখনো আঘাত করিস না। শুধুমাত্র তোর জন্য এত ভালো একটা ভবিষ্যৎ ফেলে রেখে চলে এসেছে সাদ, ওর ওই স্যাক্রিফাইসের মর্যাদা রাখিস। ভুলেও এমন কিছু করিস না, যেটা করলে তোর শশুড় বাড়ির লোকের কাছে শুধু তোর না, আমার আর আদিবেরও সম্মানহানি হয়।।
আশার চোখে পানি। সে শক্ত করে জরিয়ে ধরে মাকে। কান্নাজড়িত গলায় বলে
“তোমাদের সম্মানহানি হবে এমন কাজ আমি বেঁচে থাকতে করবো না মা।
পরের দিন সারাদিন সবার ব্যস্ততার মাঝেই দিন কাটে। বিকেলের পরপরই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যস্ত হয় সবাই। আশাকে হলুদের সাজের জন্য মৃদুলার সাথে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পার্লারে। এদিকটার সাজানো গোছানো আদিবসহ বাকিরা করে নিচ্ছে। সন্ধ্যের পরপর আশা ফিরে এলে হলুদের জন্য তৈরি হয় সবাই। যদিও সন্ধ্যের আগেই মেয়ে বউরা সুন্দর করে সেজে লাইন ধরে মেহেদি গাছ থেকে মেহেদি পাতা তুলে নিয়ে এসে হলুদ আর মেহেদি.. পাটায় বেটে নিয়েছে, আর সবটাই সুন্দর করে ভিডিও করা হয়েছে।
এক এক করে হলুদের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়। সর্বপ্রথম দিলারা আর আদিব এসে বোনকে হলুদ ছুইয়ে মিষ্টি মুখ করায়। এরপর আদিবের সাথে মৃদুলা এসে যোগ দেয়। এদের হলুদ ছোঁয়ানো হয়ে এলে বাকিরা এক এক করে হলুদের সমস্ত ফর্মালিটি কমপ্লিট করে। এসব করতে করতে রাত প্রায় এগারোটা ছুই ছুই।
হলুদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। মেয়েরা নাচানাচি করছে, হৈ-হুল্লোড় করছে। মৃদুলা যখন হলুদের সমস্ত কিছু গোছানোর জন্য এগিয়ে আসে তখন পেছন থেকে আদিব বলে উঠে
“এক্ষুনি ওসব নিয়ে যেও না মৃদু। এখনো একজন বাকি আছে, সে আশামনিকে হলুদ ছুঁইয়ে দিবে।।
মৃদুলা অবাক হয়ে বলে
“আর কেউ তো বাকি নেই। সবাই তো আশাকে হলুদ ছুইয়ে দিয়েছে।।
আদিব হেসে বললো
“আছে একজন।
সে পেছনের দিকে তাকায়। চোখের ইশারায় আসতে বলে।
এমন সময় একজন প্রবেশ করে সেখানে।। মাথায় কালো একটা ক্যাপ, চোখে কালো গ্লাস….
গায়ে কালো জিন্সের শার্ট…। সেই সাথে মুখ জুরে খুবই সুন্দর দেখতে কালো রঙ এর একটা মাস্ক পরা।
আশা এক নজরে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। মানুষটাকে তার চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু স্পষ্টভাবে চিনতে পারছেনা। মুখে কালো গ্লাস আর মাস্ক থাকার কারণে সেই সাথে মাথায় ক্যাপ থাকার কারণেও চেহারাটা স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছেনা। আশার মনে প্রশ্ন উদয় হয়,
“কে হতে পারে এই মানুষটা?
চলবে…..