#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-৪৩
[অন্তিম পর্ব]
সাদ আদিবের হাতটা শক্ত করে ধরলো। এরপর আদিবকে শান্তনা দিয়ে বললো
“আমি নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি কিউটিকে। ওর কষ্ট হলে আমার নিজেরই কষ্ট হবে বেশি। কারণ ও আমার শ্বাস প্রশ্বাস। নিজেকে সামলান ভাইয়া, আমি কখনোই চাইবো না আমার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাক।
আদিব কান্নাজড়িত গলায় সাদের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো
“ভালোবাসার যত্ন নিও..
আশাদের বাড়ি থেকে গাড়ি অনেকটা দূরে চলে এসেছে। নিজ গতিতে গাড়িটা এগিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। এ গাড়িতে শুধু সাদ আর আশাই আছে। বাকিরা অন্য গাড়িতে উঠেছে। সাদ আশার দিকে তাকিয়ে আছে। আশার কান্না থামার যেনো নামই নেই। সাদ মুচকি হাসলো। আশার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো
“কিউটি..
সাদের ডাকে আশা নিশ্চুপ। সাদ আবারও বললো
“ও কিউটি..
এবারেও আশার কোনো জবাব নেই৷ সে কেঁদেই যাচ্ছে। সাদ বললো
“একবার তাকাও আমার দিকে।
আশার কোনো হেলদোল হলোনা এবারেও।
সাদ এবার হেসে বললো
“এবার তো কান্নাটা থামাও কিউটি, এখানে কেউ নেই তোমার কান্না দেখার জন্য। আমাদের বাসায় যাবার পর যখন অনেক মানুষ জড়ো হবে তোমায় দেখার জন্য, তখন নাহয় আবার কেঁদো।
সাদের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো আশা। চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বললো
“আমি মানুষকে দেখানোর জন্য কাঁদছি?
সাদ এবার সশব্দে হেসে বললো
“এইতো মুখ খুলেছে।
“মানে?
“এত সুন্দর করে এতটা সময় ডাকছিলাম, আমার কথার পাত্তাই দিচ্ছিলে না৷ এবার তো ঠিকই উত্তর দিলো।। এজন্যই বোধহয় মানুষ বলে, ভালো কথার দাম নেই।
আশা রেগে গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো।
নিরবে কাঁদছে সে, চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।
সাদ হেসে আশার কাছে এগিয়ে গেলো। দুহাতে জরিয়ে ধরে বললো
“কাঁদলে তোমায় অসাধারণ লাগে মায়াবতী।
আশা হাতের কনুই দিয়ে সাদকে গুতো মারে সেই মুহূর্তে। সাদ সামান্য ব্যাথা পেয়ে বললো
“তখন তো খুব লাফাচ্ছিলে বিয়ের জন্য, তাহলে এখন এভাবে আমায় অত্যাচার কেন করছো?
আশা আবারও তেড়ে এসে বসলো
“আমি বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিলাম? আমি আপনাকে অত্যাচার করছি?
“করছোই তো। নিরীহ গলায় বললো সাদ।
মনের দুঃখে আশা সাদের হাটুর উপরে খুব জোরেশোরে চিমটি কাটলো। সাদ আহ বলে কিছুটা দূরে গিয়ে বসলো। অবাক হয়ে আশার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময়। এরপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে আদিবের ফোনে ভিডিও তে কল করলো।
আদিব যখন কলটা রিসিভ করলো তখন সে কিছু বলার আগে সাদ নিরীহ গলায় বলতে লাগলো
“সম্বন্ধী ভাই, আপনার বোনকে সামলান প্লিজ… ও তো আমায় মার্ডার করবে আজ।
ওপাশ থেকে আদিব মৃদু হেসে বললো
“কেন, কি করছে আমার বোন?
“তেলের মধ্যে পানি পরলে যেমন ছ্যাত করে উঠে, আমার কথা শুনেও আপনার বোন ঠিক সেভাবেই জ্বলে উঠছে।
“আমার বোনটাকে তুমি কি বলেছো? কিছু না বললে তো আমার বোন এমন করার কথা না।
“আমি কিছু করিনি, বলিভ মি।
এতক্ষণ সাদের বলা কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলো আশা, এবার ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো। রাগী গলায় বললো
“আমার নামে বিচার দেওয়া হচ্ছে?
সাদ মাথা দুদিকে নাড়িয়ে জানান দিলো, সে বিচার দিচ্ছে না।
আশা ফোনের দিকে তাকালো। ওর ভাইটা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশার আবারও কান্না পেলো। ভেজা গলায় বললো
“আমি মোটেও উনার সাথে এমন কিছু করিনি ভাইয়া। বরং উনিই আমাকে বিরক্ত করে আমার কান্নায় বাধা দিচ্ছিলো।
ওপাশ থেকে হাসলো আদিব। এরপর পরম আদুরে গলায় বললো
“আমার আশামনি এমন কিছু করতেই পারে না। কিন্তু আমার আশামনি আমায় কষ্ট দিচ্ছে খুব।
আশা আবেশে বললো
“ভাইয়া..
“হুম কষ্ট দিচ্ছিসই তো। এখনো কাঁদছিস, আমি অনুভব করতে পারছি তোর কান্না। সে কান্নার পানিতে আমি ডুবে যাচ্ছি, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার।
আশা ডুকরে কেঁদে উঠলো। কান্না বিজড়িত কন্ঠে বললো
“আমার জন্য তোর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?
“হুম, বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার। কান্নাটা থামা বোন, আমি সহ্য করতে পারছি না আর।
আশা নিজের চোখ মুছে নিলো। এরপর জোরপূর্বক হাসি টেনে বললো
“এবার ভালো লাগছে ভাইয়া?
“খুব। আমি চাই আমার বোনটা এভাবেই হাসিখুশি থাকুক সবসময়। যদি কখনো কান্না করিস, ধরে নিস সেই কান্নার সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে তোর এই ভাইটা।
“এমন কথা মুখেও এনো না ভাইয়া। আমার কষ্ট হয় খুব।
“তাহলে কথা দে আর কাঁদবি না।
আশা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললো
“কথা দিলাম ভাইয়া।
আদিব হাসলো। বললো
“আশামনি..
“কিহ?
“আজ থেকে সাদ তোর বর। ও শুধু তোর হাজবেন্ডই না, তোর অভিবাবকও। সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হলো তুই ওর অর্ধাঙ্গিনী, ওর স্ত্রী। আর আমার আবদার, তুই শুধু ওর স্ত্রী হয়েই থাকবি না, তোকে সাদের উত্তম স্ত্রী হয়ে উঠতে হবে।
আশা একধ্যানে তাকিয়ে রইলো আদিবের দিকে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর আদিব প্রশ্ন করলো
“উত্তম স্ত্রী কি জানিস আশামনি?
আশা ক্ষীণ গলায় বললো
“না।
আদিব হাসলো। এরপর বললো
“উত্তম স্ত্রী হলো তারা, যারা স্বামীকে যথাযথ সম্মান করে। কারণ, পরষ্পরের প্রতি যথাযথ সম্মানই দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভের উপায়। (কুরআন ও হাদীসের আলোকে)
আশা নিশ্চুপ। সে আদিবের বলা কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনছে। আদিব ক্ষীণ হেসে আবারও বললো
“স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কতটা গাঢ় তার প্রমাণ কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করেন-‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)
তাছাড়া যে স্ত্রী ইসলামি শরিয়তের হুকুম-আহকাম মেনে চলে, স্বামীর আনুগত্য করে, তার খেদমত করে এবং নিজের সতীত্ব রক্ষা করে হাদিসে পাকে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
আদিব আরো কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তার কোনো নামাজ কবুল হয় না, কোনো নেক আমল ওপরে উঠানো হয় না; যতক্ষণ স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হবে।’ (ইবনে হিব্বান)
আশা অবাক হয়ে বললো
“তুই এতকিছু জানিস ভাইয়া?
আদিব হেসে বললো
“আমি চেষ্টা করছি আমার স্ত্রী কে উত্তম স্ত্রী তে পরিণত করতে, তাই এইসব জানার তীব্র চেষ্টা করছি।।
আশা হাসলো। আদিব বললো
“প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘স্বামীর সঙ্গে তোমার আচরণ কেমন তা ভেবে দেখ। কারণ স্বামীই তোমার জান্নাত কিংবা জাহান্নাম।’ (মুসনাদে আহমদ)
কথাটা বলে আদিব বললো, “তাহলে ভেবে দেখ, স্বামী একটা মেয়ের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই আমার আশামনি যেনো তার স্বামীর সাথে এমন কোনো আচরণ না করে, যে আচরণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।
আশা হাসলো এবার। সে আদিবের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললো
“আমি অবশ্যই নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলবো ভাইয়া।
“আমিও চেষ্টা করছি, মৃদুলাকে সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টায় আছি। আমি চাই আমার আশামনিও সাদের উত্তম স্ত্রী হয়ে উঠুক। এতদিন যা করেছিস সেটা ভুলে যা আশামনি। আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নতুন জীবনটা নতুন করে পাড়ি দে।।
আশা হাসলো। খানিক বাদে আদিব বললো
“এখন রাখি আশামনি।
আশা মাথা নাড়িয়ে বললো
“আচ্ছা ভাইয়া।
ফোন রাখার পর আশা নিশ্বব্দে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। গাড়ি বাতাসের বেগে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে, বাতাসের শনশন শব্দ কানে এসে ঠেকছে। সাদ ক্ষীণ হয়ে আশার দিকে এগিয়ে এসে বসলো
“এখন ভালো লাগছে কিউটি?
আশা সাদের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বললো
“আমার মন ভালো করার জন্য আপনি ভাইয়াকে কল করেছিলেন, বিচার দেবার জন্য নয় তাইতো?
সাদ মুচকি হেসে বললো
“আমি জানতাম, এই মুহূর্তে তোমাকে তোমার ভাইয়াই সামলাতে পারবে। তোমার ভাইয়া যে তোমার মন ভালো হবার ঔষধ।
আশা একবার বাইরে তাকালো। সবকিছু কেমন করে যেনো পিছনে চলে যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে তারা পেছন দিকে দৌড়াচ্ছে।। আশা সাদের দিকে আবারও তাকালো। নিশ্বব্দে হেসে ওর হাতের মুঠোয় নিজের হাত রাখলো। মায়াভরা গলায় বললো
“আমি আপনার তথাকথিত কিংবা নামমাত্র স্ত্রী নয়, আপনার উত্তম স্ত্রী হয়ে থাকতে চাই। আপনি কি আমায় সাহায্য করবেন?
সাদ কিছুটা সময় নিরব চোখে তাকিয়ে রইলো আশার চোখের দিকে। এ চোখের গভীরে যেনো সে হারিয়ে যাচ্ছে। আশা ওকে সামান্য নাড়া দিয়ে বললো
“কি হলো, বলছেন না যে কিছু!
সাদ হাসলো। আশাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেলো। এরপর হাসিমুখে বললো
“তাহলে আজ থেকেই হয়ে যাক।
আশা হেসে সাদের কাধে মাথা রাখলো। সাদ একহাতে আশাকে জরিয়ে ধরে অন্যহাতে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো
____
অসংখ্য মানুষের ভীড়ে খাটের এক কোনায় গুটিশুটি মেরে বসে আছে নব বধু। চারিদিকে অপরিচিত মানুষের ভীড়ে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে ঘোমটার নিচ থেকে আঁড়চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, সাদের দেখা পায় কিনা সেই আশায়। কিন্তু বউ নিয়ে বাড়ি ফেরার পর ওকে রুমে নিয়ে এসে খাটে বসিয়ে সাদ সেই যে বেরিয়েছে, এই পর্যন্ত এসে একবারের জন্যও দেখা করেনি। আশার বুক চিরে কান্না আসছে। কিছুটা সময় পর লুৎফুন্নাহার এসে আশার পাশে বসলো। আশার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে বললো
“খিদে পেয়েছে মা?
আশা ভদ্রতার সহিত মৃদু গলায় বললো
“না আন্টি।
লুৎফুন্নাহার হাসলেন। বললেন
“এখন থেকে আর আন্টি ডাকা চলবে না, আমাকে মা ডাকবে বলে দিলাম।
আশা মাথা নাড়ালো। লুৎফুন্নাহার মৃদু হেসে সাইমাকে ডাকলেন। সাইমা এলে তিনি বললেন
“ওর জন্য কিছু খাবার নিয়ে আয় সাইমা।
সাইমা খাবার নিয়ে এলে লুৎফুন্নাহার বেশ যত্ন সহকারে নিজ হাতে আশাকে খাইয়ে দিলো। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো ওর নিজের মা ওকে খাইয়ে দিচ্ছে। আশা লুৎফুন্নাহারের দিকে তাকালেন। লুৎফুন্নাহার ওর তাকানোর ধরণ দেখে বললেন..
“কিছু বলবে আশা?
আশা নিচের দিকে মুখ করে মৃদু গলায় বললো
“আমি আপনার ছেলের বউ নয়, মেয়ে হয়ে থাকতে চাই মা।
লুৎফুন্নাহার তৃপ্তির হাসি হেসে বললো
“আলহামদুলিল্লাহ, আজ থেকে আমার দুটো মেয়ে।
আশা হাসলো নিরবে।
রাত প্রায় এগারোটা..
আশাকে নিয়ে বসানো হয়ে সাদের রুমে। রুমটা বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে বিভিন্ন ধরণের ফুলের ছড়াছড়ি। ফুল শুধু বিছানাতেই বন্দি নয়, প্রতিটি দেয়ালের সাথে কস্টেপ দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোলাপ, হাসনাহেনা আর নাম না জানা বিভিন্ন ফুলের সুগন্ধে মো মো করছে চারিদিকটা।
সাঈমের বউ আশাকে বসিয়ে দিয়ে হেসে বললো
“এবার থাকো তাহলে, সাদ কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।
আশা লজ্জায় মাথা নিচু করলো। বুঝতে পেরে সাঈমের বউ বললো
“আমার সামনে লজ্জা পাবার কোনো দরকার নেই, এমন দিন আমারও এসেছিলো।।
আশা হাসলো। সাঈমের বউ বললো
“আজ কিন্তু পুরো বাসা ফাঁকা, আমরা সবাই চলে যাচ্ছি আমাদের বাসায়। গেস্টরাও আমাদের বাসা আর সাইমার বাসায় মিলিয়ে থাকবে। আশা করছি তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।
আশা অবাক হয়ে বললো
“সবাই চলে যাচ্ছেন মানে?
“চিন্তার কোনো কারণ নেই। সকালেই আবার সবাই চলে আসবো।
“মা ও চলে যাবে?
“হ্যাঁ।
আশা আর কোনো কথা বাড়ালো না।
সাঈমের বউ চলে গেলে আরো প্রায় আধঘন্টার মতো কেটে গেলো। অতঃপর বুকে ঝড় তুলে রুমে প্রবেশ করলো সাদ। এতক্ষণে সবাই চলে গেছে ও বাসায়। সাদ দরজাটা লাগিয়ে ধীর পায়ে আশার পাশে এসে দাড়ালো। ওকে দেখে আশা বিছানা ছেড়ে নেমে পা ধরে সালাম করার জন্য বসতে যাবে তার আগেই সাদ ওকে ধরে ফেললো। মুচকি হেসে টেনে নিলো নিজের কাছে। দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললো
“ওসবের কোনো দরকার নেই কিউটি৷
আশা কোনো কথা বললো না। সাদ আশাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে গিয়ে বসলো। আশা ক্ষীণ গলায় বললো
“কোথায় গিয়েছিলেন? অনেক্ষণ দেখছি না আপনাকে।
সাদ হেসে বললো
“মিস করছিলে?
আশা লজ্জায় হেসে মাথা নাড়িয়ে বললো
“খুব।
সাদ আবারও হাসলো। এরপর আশার দিকে কিছুটা সময় গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আশা হেসে বললো
“কি দেখছেন?
“আমার বউকে দেখছি।
বউ কথাটা শুনে অজানা আনন্দে মনটা ভরে গেলো আশার। সাদ বললো
“আমাকে স্বামী হিসেবে পেয়ে তুমি খুশি তো কিউটি? আমার বিরুদ্ধে তোমার কোনো অভিযোগ নেই তো?
আশা অবাক হয়ে তাকালো সাদের দিকে। বিস্ময়ে বললো
“হঠাৎ এমন কথা কেন বলছেন?
“জানতে চাইছি।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি, এর চেয়ে খুশির আর কিবা হতে পারে? আর ভালোবাসার মানুষের প্রতি কি করে আমার কোনো অভিযোগ থাকতে পারে!!
সাদ হাসলো। আশার কপালে চুমু খেয়ে বললো
“ভালোবাসি কিউটি, বড্ড বেশি ভালোবাসি।
আশা হাসলো। লজ্জা সংকোচে বললো
“আমিও।
এক পর্যায়ে সাদ আশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, মনে হলো আশার কাছ থেকে কিছু চাইছে সে। আশা অবাক হয়ে বললো
“কি?
“লকেট টা, যেটা আমার হাতে পরবে বলে বাইনা করেছিলে।।
আশা হেসে সেটা বের করে সাদের হাতে দিলো। সাদ আশাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পেছন ফিরিয়ে বসালো। আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে পরিয়ে দিলো আশার গলায়। ওর স্পর্শে শিহরিত হলো আশা, তবুও নিজেকে সামলে নেওয়ার তীব্র চেষ্টায় সে অনড়।
চেইনটা পরানো হলে আশাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বসালো সাদ। মৃদু গলায় বললো
“তোমাকে অনেক কিউট লাগছে কিউটি।
আশা হাসলো। সাদ এখনো তাকিয়ে আছে আশার দিকে। আশা এবার বললো
“কোথায় গিয়েছিলেন বললেন না যে..
সাদ হেসে বললো
“তোমার জন্য গিফট আনতে। যদিও তোমার জন্য আমি আগেই গিফট এনে রেখেছিলাম, কিন্তু আজ আসার পথে ভাবলাম, আজকের দিনে এ গিফট টা তোমার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই এ রাতের উপহার হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত গিফট টাই নিয়ে এসেছি।
আশা ক্ষীণ কন্ঠে বললো
“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা আপনি। আর কোনো দামী গিফটের আমার প্রয়োজন নেই।
সাদ ভ্রু বাকিয়ে বললো
“সত্যিই দরকার নেই?
আশা হেসে বললো
“কি গিফট এনেছেন, দিবেন না আমায়?
সাদ হাসলো। সে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ওয়ারড্রবের কাছে গেলো। সেখান থেকে গিফট পেপারে মোড়ানো একটা বড় বক্স নিয়ে এসে রাখলো আশার সামনে। আশা অবাক হয়ে সাদের দিকে তাকিয়ে বললো
“এটায় কি আছে?
“খুলেই দেখো।
আশা গিফট পেপারটা খুবই সতর্কতার সাথে ছাড়াতে লাগলো যেনো ছিড়ে না যায়।। সাদ বসে আছে সামনেই। ঠোঁটের কোনে হাসি।
পেপার ছাড়ানো হয়ে গেলে বক্সটা খুললো আশা। প্রচন্ড চমকিত হলো সে। খুশিতে সাদের দিকে তাকালো। বললো
“এত ভালো গিফট এ জীবনে আমি পাই নি, আর কখনো পাবোও না বোধহয়।
“তোমার পছন্দ হয়েছে কিউটি?
আশা বক্স থেকে জায়নামাজ আর তসবিহ টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো ভালো করে। অনেক সুন্দর কারুকাজ করা …
তবে কুরআন শরীফে হাত দেয় নি সে। অযু করা ছিলো না বিধায়।। আশার চোখেমুখে তৃপ্তির হাসি। সাদ হেসে বললো
“আমি ধন্য, তোমায় খুশি করাতে পেয়ে।
বিনিময়ে আশাও হাসলো। বললো
“আমিও ধন্য, আপনাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
সাদ এবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো
“আজ আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে, পূর্ণ চাঁদ..
আমার সাথে চাঁদের আলো গায়ে মাখিয়ে জোছনা বিলাশ করবে কিউটি?
আশা হেসে সাদের হাতে নিজের হাত রাখলো।
সাদ আশাকে নিয়ে পাড়ি দিলো ছাদের দিকে।
অসংখ্য তারার ভীড়ে উঁকি দিয়ে আছে রুপালি চাঁদটা। আশা একভাবে তাকিয়ে আছে সে চাঁদের দিকে, ক্ষণে ক্ষণে বাতাস বইছে। শরীর মন নাড়া নাড়া দিয়ে উঠছে তাতে। সাদ তাকিয়ে আছে আশার মুখ পানে। আশার নজর সেদিকে আসতেই লজ্জা পেলো সে। ক্ষীণ কন্ঠে বললো
“আপনি চাঁদ বিলাশ করতে এসেছেন।
“আমার চাঁদ তো তুমিই কিউটি।
আশা হাসলো। সাদ আশাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো। আশা আবেশে চোখ বুঝলো তখন। খানিক বাদে সাদ আশাকে জড়িয়ে রেখেই বললো
“আজ আদিব ভাইয়ার কথাগুলো আমি মনোযোগ সহকারে শুনেছি, উনার কথাগুলো আমাকে প্রচন্ড ভাবে নাড়া দিয়েছে। কথাগুলো আমাকে আজ অনেক বড় সিদ্ধন্ত নিতেও সাহায্য করেছে।
“কি সিদ্ধান্ত? চাঁদের দিকে চোখ রেখেই বললো আশা।
সাদ আশাকে নিজের দিকে ফেরালো। আলতো হাতে দুবাহু চেপে ধরে বললো
“আমি তোমাকে নিয়ে জান্নাতে যেতে চাই কিউটি, তুমি কি আমার এ আশাটা পুরণ করবে?
আশা বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো সাদের দিকে। সাদ প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে । আশা এক পর্যায়ে হাসলো। সাদকে দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“এ তো আমার পরম সৌভাগ্য। আপনার মত স্বামী পেয়ে নিজেকে আজ প্রচন্ড রকমের ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।
সাদ হেসে আবারও আশার কপালে চুমু খেয়ে ওকে চাঁদের দিকে মুখ করিয়ে দাঁড় করালো। আপন মনে বলতে লাগলো….
____”এ ধরণীর ছোট্র পরিসরে, আমি তোমাকে চাই।
জীবনের শেষ প্রান্তেও, আমি তোমাকে চাই।
চাই না হারাতে ক্ষীণ মুহুর্তেও,
চাই শেষ নিশ্বাস ছাড়ারও বেলায়।
ওপাড়েও আমি তোমাকে চাই,
আমি যে বড্ড
ভালোবাসি তাই…..”
___________{সমাপ্ত}__________
[কেমন হলো জানাতে ভুলবেন না।]