ভালোবাসি তাই ২ পর্ব-২৭+২৮

0
541

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২৭
#তানিশা সুলতানা

“আস্তে আস্তে এখানে আমি।
আবিরের ফিসফিস করে বলা কথায় চোখে খুলে তাকায় স্মৃতি। রেলিং ধরে নিচের দিকে ঝুঁকে আছে লোকটা। তৎক্ষনিক চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় স্মৃতির। ধপ করে বসে পড়ায় কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে পায়ে। এরকম মজা করার কনো মানে হয়?
উঠে দাঁড়াতে গেলেও চোখ মুখ কুঁচকে যায় স্মৃতির। সদ্য ব্যাথা পাওয়ায় পা টা টনটন করছে। এমনিতেই ভাঙা পা।
” ইডিয়েট
বিরবির করে দেয়াল ধরে ধরে রুমে চলে যায় স্মৃতি।
আবির মইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে কপাল চাপকে।
“ভেবেছিলাম ভয় পেয়ে কথা বলবে তা না আরও রেগে গেলো। ধুররর
আমি যাই করতে যাই সেটাই গন্ডগোল হয়ে যায়।বিরক্তির নিশ্বাস ছেড়ে মই বেয়ে নেমে যায়।

🥀🥀🥀
সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে হাত দিতেই ম
শিউরে ওঠে তানহা। পাশের জায়গাটা ফাঁকা। কিন্তু কাল রাতেই ঘুমানোর সময় দিব্যি আস্ত একটা মানুষ ঘুমিয়েছিলো তানহার পাশে।
পর মুহুর্তেই মনে পরে। ভোর হওয়ার আগেই তো লোকটার চলে যাওয়ার কথা। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে তানহার। অনেক না পাওয়ার মধ্যে অনেক বড় একটা পাওয়া অভি নামক মানুষটি। এতো এতো অবহেলা অপমান সয্য করেও শেষ বিষয়টা তানহারই হলো।
ভালোবাসার হ্মেএে একটু বেহায়া আত্নমর্যাদাহীণ হতেই হয়। তুমি তোমার আত্নমর্যাদা ধরে রাখলে হয়ত তার সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে কয়েকদিন কিন্তু দিন শেষে বন্ধ ঘরে চিৎকার করে কাঁদবে তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায়।
বুঝলে প্রিয়, ভালোবাসায় আত্নমর্যাদা খাটে না। একটু বেহায়া হলে হ্মতি নেই।

আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে তানহা। বড় বড় হাই তুলে এলোমেলো চুল গুলো হাত খোপা করে নেয়। ঘুম যেনো চোখ থেকে সরছেই না। অবশ্য ঘুম না সরাই কথা।
ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে। মধ্য রাত পর্যন্ত ভাপসা গরম থেকেই যায়। কিন্তু শেষ রাতের দিকে নাতিশীতোষ্ণ। না ঠান্ডা না গরম।
বইয়ের দিকে চোখ পরতেই ঘুম গুলো ছুটে পালায়। পড়তে হবে।
বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে টাইম দেখে নেয় ৬ঃ৩৬ বাজে।
এক লাফে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। চটজলদি ব্রাশ করে মুখটা না মুছেই বিছানায় বই নিয়ে পড়তে বসে।

একটু পরপর হালিজা আসে। হাতে ধোঁয়া ওঠা গরম চা আর চানাচুর।
তানহার পাশে রাখে।
“তানহা একটা খতা বল তো?
তানহার পাশে বসে তানহার থেকে বইটা নিয়ে বলে হালিজা। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।
” বল
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে তানহা।
“বড় ভাইয়া তোর এতো খেয়াল কেনো রাখে? সকালে দেখলাম তোর রুম থেকে চোরের মতো বের হচ্ছে? কাহিনি কি? আবার আমাকে ডেকে বলে গেছে তোকে চা আর চানাচুর দিতে। বার বার কল করে জিজ্ঞেস করছে দিয়েছি কি না?
হচ্ছে টা কি?
তানহা গালে হাত দিয়ে শুনছিলো হালিকার কথা।
” এই কথা গুলে আর কাকে কাকে বলেছিস?
তানহা কপালে ভাজ ফেলে বলে।
“বেশি কাউকে এখনো বলা হয় নি। শুধু স্মৃতি রাব্বি আবিরদা রাফিদ ভাইয়া মা আর কাকিমার কাছে বলেছি।
হাতে গুনে গুনে বলে হালিজা।
তানহা দাঁত কটমট করে তাকায়।
” আর বাকি আছে কে কে?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা।
“বাবা আর কাকা
” তো তাদেরও বলে আয়।
বিনুনি ধরে টান দিয়ে বলে তানহা।
“ওকে যাচ্ছি
হালিজা উঠতে নিলে তানহা কড়া চোখে তাকায়।
” যা দেখেছিস ভুলে যা। আর সবাইকে গিয়ে বলবি তুই মিথ্যে বলেছিস। বুঝলি?
স্মৃতির হাতটা মুচড়ে দিয়ে বলে তানহা।
“ব্যাথা পাচ্ছি তো
আর্তনাদ করে বলে হালিজা।
তানহা হাতটা ছেড়ে দেয়।
” শোন সবাই যদি তোর বড় ভাইয়াকে এই কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে কিন্তু উনি আবার চলে যাবে। আর কখনো এই বাড়িতে আসবে না।
“আমি এখনি সবাইকে বলে দিচ্ছি আমি মিথ্যে বলেছি। বড় ভাইয়া যেনো না যায়।
কাঁদো কাঁদো ফেস বলে হালিজা।
” গুড গার্ল
হালিজার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে তানহা।

🥀🥀
ডেকোরেশনের লোকজন বাড়ি সাজাচ্ছে। সবাই হাতে হাতে কাজ করছে। তানহা সবেমাত্র এসেছে কোচিং থেকে। কোচিং এ যাওয়ার আগেও অভির দেখা পায় নি। আর এখনো অভির কোনো খোঁজ নেই।
সবাই খাওয়ার কথা বলছে কিন্তু তানহা অভিকে রেখে খাবে কি করে?
তাজ বাইনা ধরেছে তানহার সাথে খাবে। তাই তাকে খাইয়ে দিচ্ছে তানহা। সকালেও খেয়ে যাই নি তানহা। মনে মনে অভিকে শখানেক গালি দিচ্ছে তানহা।
তাকে খাওয়ানো শেষ করে যখনই হাত ধুতে যাবে তখনই অভি আসে।
টাওজার আর হাতা কাটা গেঞ্জি পরে আছে। চুল গুলো ভেজা। টপটপ করে পানি পড়ছে। মুখে আর হাতেও পানি।
“মা খেতে দাও
খানিকটা জোরে বলে তানহার পাশে বসে অভি
তানহা কটমট চোখে এক পলক তাকায় অভির দিকে।
“না খেয়ে গেছিলাম কেনো?
অভি উল্টে তানহার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে
” আমি খাই আর না খাই তাতে আপনার কি?
মুখ বাঁকিয়ে বলে তানহা।
আনিকা বেগম ততখনে খাবার নিয়ে হাজির হয়েছে। অভিও সকালে কিছু না খেয়েই বেরিয়ে গেছিলো।
“তানহা তুইও এখন খেয়ে নে। তাজকে খাওয়ালি তুই তো কিছু খেলি না।
অভির থালায় ভাত দিতে দিতে বলে আনিকা বেগম।
” জামাইয়ের উন্নতি করার ধান্দা করছে। বুঝো না মা?
খাত মাখতে মাখতে বলে অভি।
আনিকা বেগম মিটমিট করে হাসতে হাসতে চলে যায়। অনেক কাজ আছে ওনার।
আপাতত এখানে তানহা আর অভি আছে।
অভি ভাত মেখে তানহার মুখের সামনে ধরে।
“হা করো
তানহা কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নেয়। প্রচন্ড খিধে পেয়েছে।
অভি তানহাকে খাওয়াচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে।
” আমাদের বিয়ের কথা বাড়িতে কবে জানাবেন?
তানহা ভাত চিবতে চিবতে বলে।
“বোনের বিয়ের ঝামেলাটা মিটে যাক।
অভি মুখে ভাত পুরে বলে
” নাহহহ আজকেই বলবেন।
“তর সইছে না বুঝি?
বাঁকা হেসে বলে অভি।
তানহা চুল টেনে দেয় অভির।
” এমনিতেই মাথায় চুল কম আরও টানো। তারপর টাক হয়ে যাবে। তখন তো সবাই বলবে কিউট তানহার বর টাক।
মুচকি হেসে বলে অভি।
“বলুক। আপনি আজকেই বলবেন।
” ঠিক আছে কাল বলবো। তোমার বাবা মাও থাকবে।
“নাহহহ আজকেই বলবেন।
” একটা রাতেরই তো ব্যাপার।
“বলবেন মানে বলবেন। না বললে আমি চলে যাবো বলে দিলাম।
রেগে চলে যায় তানহা।
” আরে পানি তো খেয়ে যাও
কে শোনে কার কথা।

রুমে এসে তানহা অবাক হয়ে যায়। কারণ বিছানার ওপরে অনেক গুলো ড্রেস শাড়ি কানের দুল আরও অনেক কিছু। এতো কিছু কে রাখলো?
নিশ্চয় হালিজার কাজ। বিয়েতে যা যা কিনেছে সব কিছু তানহাকে দেখানোর জন্য রেখেছে৷ একটু হাসে তানহা। মেয়েটা সত্যিই পাগল।
“কি ম্যাডাম পছন্দ হয়েছে?
খট করে দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে পেছনে তাকায় তানহা। অভি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
” এগুলো আপনি কিনেছেন?
অবাক হয়ে বলে তানহা।
“হুমমম
অভি এগিয়ে আসে। তানহাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসে।
” এতো টাকা কোথায় পেলেন আপনি?
ভ্রু কুচকে বলে তানহা।
অভি পকেট থেকে ছোট স্বর্নের এক জোরা কানের দুল বের করে। খুব ছোট কিন্তু অপূর্ব।
তানহার কানে থাকা রিংটা খুলে নিজেরটা পরিয়ে দিতে থাকে।
“প্রথম মাসের বেতন দিয়ে গড়িয়েছি এটা। জানি অল্প টাকার৷ কিন্তু পুরোটাই ভালোবাসা দিয়ে গড়া। আর পরিশ্রমের টাকার।
তৃপ্তির হাসি হাসে তানহা।
” এখন এতো এতো জামাকাপড় দিয়েছি বলে ভেবোনা প্রতি মাসেই দিতে পারো। এক বছরের মধ্যে আর কিছুই দিতে পারবো না৷ চলবে তো?
তাহা মুচকি হেসে অভির গলা জড়িয়ে ধরে মাথা নারায়।
“তোমার বাবার দামি দামি ড্রেস দিতে পারি নি। তবে একদিন পারবে ইনশাআল্লাহ।
” এই গুলোই আমার কাছে সব থেকে দামী উপহার।
শুধু কি আমার জন্য এনেছেন আন্টি আংকেল আর স্মৃতি আপুর জন্য কিছু অনেন নাই?
“এনেছি। সবার জন্যই এনেছি।

” এই শাড়িটা কাল পড়বে। গায়ে হলুদে।
একটা হলুদ শাড়ি হাতে দিয়ে বলে অভি।
“আচ্ছা
” আর এই শাড়িটা বিয়ের দিন পরবে। কেমন?
“জ্বী জনাব
” আমি এই শাড়ি টার সাথে মেচিং করে একটা পানজাবি কিনেছি। দুজন মিলিয়ে পরবে। দেখবা পানজাবিটা? নিয়ে আসি?
অভি এক ছুঁটে বেরিয়ে যায় পানজাবি আনতে।
তানহা খিলখিল করে হেসে ওঠে।
“লোকটা আসলেই পাগল। আর এই পাগলটাই আমার।একান্তই আমার।
দুই বেলা দুমুঠো আলু সেদ্ধ ভাত খেয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পরবো আমি। আর শুধু উনি হলেই চলবে।

চলবে

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা

প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে যেকোনো মুহুর্তই সুখকর হয়ে ওঠে। আজকে স্মৃতির গায়ে হলুদ। খুব ছোট করে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। হালিজা আর স্মৃতি দুজন মিলে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে স্মৃতিকে। মনে শান্তি আসছে না স্মৃতির। আর কেউ বুঝতে না পারলেও তানহা ঠিক বুঝতে পারছে। কিছু তো একটা হয়েছে স্মৃতির।
“হালিজা যা তো বোন ফুল নিয়ে আয়।
হালিজা চলে যেতেই তানহা দরজা বন্ধ করে দেয়।
” স্মৃতি কি হয়েছে?
স্মৃতির থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা উঁচু করে ধরে বলে তানহা।
হু হু করে কেঁদে ওঠে স্মৃতি। তানহা আগলে নেয় স্মৃতিকে।
“আমি স্বার্থপর নই তানহা। বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে বিয়েতে রাজি হয় নি।
হেঁচকি তুলে বলে স্মৃতি। তানহা বুঝতে পারে স্মৃতি কেনো এসব বলছে। তানহার সাথে আবিরের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাই।
” আমার ভাই তোকে রিফিউজ করেছে। তুই আবিরকে ডিজার্ভ করিস। কিন্তু আবির
তানহা স্মৃতিকে থামিয়ে দেয়।
“তোর ভাইকে আমি বিয়ে করে নিয়েছি। জানিস তো তুই।
তুই ভাবছিস না তোকে বকবে?
রিলাক্স স্মৃতি। মা কিচ্ছু বলবে না। বরং তোকে সরি বলবে। আবির তোকে খুব ভালোবাসে।
মুচকি হেসে বলে তানহা।
স্মৃতি তাচ্ছিল্য হাসে।
” জানিস তানহা আগে আমি আর আবির মিলে প্লান করতাম বিয়েতে কি করবো? কিভাবে সাজবো? আবিরের দিকে কিভাবে তাকাবো? হাসবো কি না? কিন্তু সবটা নষ্ট করে দিয়ে চলে গেছিলো আবির। আমি মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু আবার চলে আসলে।
“ভালোবাসে তাই এসেছে।
” আবার চলে যাবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে। ও আসলে ভেসে আসা মেঘ। যে আসে আবার চলেও যায়।
“স্মৃতি থাম তো তুই। আজ তোর গায়ে হলুদ এটাতে ফোকাস কর। কাল কি হবে এটা ভেবে আজটা নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। আর সবাই জানে তোরা ভালোবেসে বিয়ে করছিস। এখন তুই মুখ গোমড়া করে থাকলে সবাই কি বলবে বল তো? তোর খুশির জন্য সবটা করছে সবাই। আর তুই?
স্মৃতির চোখের পানি মুছে দেয় তানহা।
“আর কাঁদবি না কিন্তু।

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তানহা আর অভি। সবাই স্মৃতির ওপর ফুলের পাঁপড়ি ছড়াচ্ছে আর অভি তানহার মাথায়।
মাঝেমধ্যে তানহা রাগী দৃষ্টিতে তাকায় অভির দিকে। আর দাঁত কেলায়।

” কি বুঝছেন মিসেস মহিউদ্দিন?
এক প্লেট মিষ্টি তমা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলেন আহাম্মদ চৌধুরী।
“যা বোঝার তাই বুঝলাম।
মুখ বাঁকিয়ে বলেন তমা বেগম।
” আপনার মেয়েকে যে আমার ছেলে বিয়ে করেছে জানেন সেটা?
বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বলেন আহাম্মদ চৌধুরী।
তমা বেগম আশ্চর্য হয়ে যায়। কথাটা কত % সত্যি ওনার জানা নেই। কিন্তু এই লোকটার সামনে তো ছোট হওয়া যাবে না। তাই মুখে হাসির রেখা টানে।
“অবশ্যই জানি। আমার মেয়ে সবটা আমাকে বলেন।
ভাব নিয়ে বলে তমা বেগম।
আহাম্মদ চৌধুরী ভেবাচেকা খেয়ে যায়। তানহা তার মাকে বলে দিলো কথাটা। আর অভি বললো না? মনে মনে রেগে যায় অভির প্রতি।
” তো আপনি মেনে নিয়েছেন?
“কেনো নেবো না? সোনার টুকরো ছেলে। আমাকে লিপস্টিক কিনে দিয়েছে অনেকগুলো।
এক গাল হেসে বলেন তমা বেগম।
” এই যে আজকে গাড়ো খয়েরী রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছি না এটা অভি দিয়েছে। ওয়াটার প্রুফ। পানি দিয়ে ঘসলেও চব্বিশ ঘন্টার আগে উঠবে না।
ঠোঁটে থাকা লিপস্টিক দেখিয়ে বলেন তমা বেগম।
আহাম্মদ চৌধুরী গাল ফুলায়।
“এতোখনে বুঝলাম আমার ছেলেটা এই পাগলকে কি করে ঠান্ডা করেছে।
বিরবির করে বলেন আহাম্মদ চৌধুরী।
” কিছু বললেন বিয়াইন সাহেব?
আপনি কিন্তু এখন থেকে আমার বিয়াই লাগেন।
“আসছি
ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ চলে এসেছে।
এই বলে কেটে পরেন আহাম্মদ চৌধুরী।
তমা বেগম খিলখিল করে হাসে।
” এসেছিলো আমাকে কথা শোনাতে।

তানহা আর অভি আজ ম্যাচিং করে পরেছে। একদম মনে হচ্ছে সরষে হ্মেত। তানহা একদম পাত্তা দিচ্ছে না অভিকে। সারাক্ষণ স্মৃতি আর হালিজার সাথে সেটে আছে।
“অভি
অভি বিরক্ত হয়ে এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো ডাকে পেছনে ঘুরে তাকায় অভি।
মোহনা দাঁড়িয়ে আছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। শুকিয়ে গেছে অনেকটা। একটা হলুদ শাড়ি পরেছে। আগের মতো সাজুগুজু করে নি।
” কিছু বলবে?
“সরি
আবার তোমার জীবনে ফিরতে চাই না। তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাই সরি বলছি। কালকে বিদেশ চলে যাচ্ছি। এখানে থাকা আর সম্ভব না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার। আমার জীবনে ঠিক কি ছিলে আগে বুঝতে পারি নি।
সত্যি একটা কথা কি জানো অভি। আমাকে তোমার মতো আর কেউ ভালোবাসে নি। আমার বাবা মাও না। আর সেই তুমিটাকেই আমি ঠকিয়েছি।
পারলে হ্মমা করে দিও।
আজকে এখানে আসার কারণটাই ছিলো তোমাকে সরি বলা।
আসছি
এক টানা কথা গুলো বলে চলে যায় মোহনা। আজকে মেয়েটা চোখে মুখে কোনো হ্মোপ রাগ জেদ ছিলো না। ছিলো শুধু আর্তনাদ হাহাকার।
অভি মুচকি হাসে।
” এই মেয়েটাকে ধন্যবাদ। আমার জীবন থেকে চলে না গেলে তানহার মতো কাউকে পেতাম না।

তানহা খেয়াল করেছে অভিকে মোহনার সাথে কথা বলতে। কোমরে হাত দিয়ে অভির সামনে এসে দাঁড়ায় তানহা।
“কি বেপার বলেন তো? আপনিও শুকিয়ে গেছেন আপনার প্রাক্তনও শুকিয়ে গেছে। কানেকশনটা কি?
অভি তানহাকে রেলিঙের দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁঠে থুতনি ঠেকায়।
” কানেকশনটা হলো। ও আমার জন্য পুরে পুরে শুকিয়ে গেছে। আর আমি আরেকজনের সাথে কথা বলতে না পারায় শুকিয়ে গেছি।
তানহা মুখ বাঁ কায়।
“বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন আর পড়ালেখা করতে হবে কেনো? জোর করে না পাঠিয়ে দিলেই পারতেন।
” বিয়ে হয়ে মানে এটা নয় জীবনটা থেমে গেছে। আমি তোমাকে সুযোগ দিয়েছি পড়ালেখা করার। তোমার উচিৎ এটার সদ্য বেবহার করা। শিক্ষিত মানুষের অনেক গুন। পড়ালেখা করতে হবে তোমাকে।নিজের পা য়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের বেবিদের মানুষ করতে হবে। বুঝলেন ম্যম
“হুমম বুঝলাম
এবার চলুন বোনকে হলুদ ছোঁয়াবেন।

তানহা আর অভি মিলে হলুদ ছোঁয়ায় স্মৃতিকে।

সবার নজর কারে একটা মেয়ে। ছয়ফিট লম্বা হবে। বোরকা পরেছে। পায়ের খানিকটা বেরিয়ে গেছে। পা দুটো ছেলেদের মতো। আবার কথা বলছে মেয়েদের মতো।
তমা বেগম এটা সেটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। মুখটা কিছুতেই খুলতে চাইছে না মেয়েটা।
” বিরিয়ানি রান্না করেছে। খাবে? আলু দিয়েছে। ইসস কি যে মজা হয়েছে।
আবির বিরক্ত হয়ে কথার উওর দিয়ে যাচ্ছে। কতোখন আর ভয়েস চেঞ্জ করে কথা বলবে?
“তুমি বসো আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি।
বলে চলে যায় তমা বেগম। এই ফাঁকে উঠে চলে যায় আবির। সাংঘাতিক মহিলা।
স্মৃতির পাশে গিয়ে বসে।
হালিজা জিজ্ঞেস করতেই বলে ছেলের বাড়ির লোক।
স্মৃতি বেশ বুঝতে পারছে এই লোকটা আবিরই। কিন্তু এ এখানে কি করছে? সবাই বুঝতে পারলে কি বলবে?

চলবে