ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১+২

0
148

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১
মৌমো তিতলী

রাস্তার একধার দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে স্কুলের দিকে হেঁটে যাচ্ছে সুহা আর তার একমাত্র প্রিয় বান্ধবী নিপা। সুহা পথের পাশে পড়ে থাকা একটা বোতলে কিক মেরে পাশের ঝোপের দিকে ফেললো। তারপর কি যেন দেখে হুট করে দাঁড়িয়ে গেলো। নিপা সুহার হঠাৎ গান থামিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে সুহার দিকে তাকিয়ে বলল:-

_কিরে এভাবে দাড়িয়ে পড়লি যে। সামনে এগো!!

সুহা খপ করে নিপার হাত চেপে ধরে তেরছা চোখে কিছু একটা ইশারা করতেই নিপা তার ইশারা অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পেলো কিছুটা সামনেই পথের পাশে একদল ছেলেরা আড্ডা দিচ্ছে। একজন বাইকের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আর বাকিরা কেউ দাঁড়িয়ে,,কেউ নিচে ঘাসের উপর বসে আছে। ছেলে গুলোকে সুহা আর নিপা খুব ভালো করেই চেনে। দাড়িয়ে থাকা ছেলে দুটো একজনের নাম সিফাত আরেকজন হৃদয়। বসে আছে তিনজন নিরব,, অরুদ্ধ,তিয়াশ। বাইকে যে শুয়ে আছে সে সদ্য নির্বাচিত তরুণ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা। সাথের ছেলেগুলো সাহিত্যোর বন্ধু কম ভাই আর চ্যালা বেশি।আর সাহিত্য ওদের প্রানের নেতা,,গুরু,,ওস্তাদ,, বন্ধু ।

গ্রামের সম্মানিত প্রাক্তন চেয়ারম্যান আহাদ মির্জার দুই ছেলে। বড় ছেলে মেহরাব মির্জা,ছোট ছেলে সোহরাব সাহিত্য মির্জা। আহাদ মির্জার পুর্ব পুরুষ থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তবে আহাদ মির্জার বড় ছেলে মেহরাব মির্জা এসব রাজনীতির ধারে কাছেও ঘেঁষে নি। সে তাদের জেলার স্থানীয় সরকারি কলেজে উচ্চতর গনিতের শিক্ষক হিসেবে সম্প্রতি নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেছে। বড় ছেলেকে রাজনীতি তে আগ্রহ না দেখায় আহাদ মির্জা বেশ হতাশ হন। কিন্তু তার হতাশার অন্ধকার দুর করে আলোর দিশা নিয়ে এসেছে তার ছোট ছেলে সোহরাব সাহিত্য মির্জা। তুখড় মেধাবী,বুদ্ধি সম্পন্ন,,প্রখর দুরদর্শীতা চালাক চাঁলবাজ এই সাহিত্য। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে রাজনীতিতে তার জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। তারই ফলস্বরূপ সে এখন তার এরিয়ার এমপি। তা ছাড়া সাহিত্য দেখতে মাশাআল্লাহ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর আকর্ষণীয় চেহারার জন্য সহজে ললনাদের নজরে পড়ে সাহিত্য। তার এটিটিউড,,ব্যাক্তিত্বের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে অসংখ্য নারী। কিন্তু সাহিত্যর মনে গেঁথে আছে এক ছোট্ট ফুলের কুঁড়ি। যাকে সে হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে সযত্নে একটু একটু করে পরিস্ফুটিত করছে। অতি আদরে অতি সন্তর্পণে।

সুহার ইশারাই নিপা সাহিত্যকে দেখেই খুশিতে ডগমগ করতে করতে এগিয়ে যায় তাদের দিকে। এদিকে সুহা হা করে তাকিয়ে আছে নিপার দিকে। নিপাকে এখন তার সিনেমার খলনায়িকা মনে হচ্ছে। কেমন দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। সুহা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। যেখানে সাহিত্য আছে সেখানে এতো কমফোর্টেবলি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সাহিত্য কে দেখলেই কেমন গুটিয়ে যায় সুহা। বিশেষ করে যখন সাহিত্য গম্ভীর গলায় ডাকে কেমন আছিস “সুহাসিনী”তখন অজানা কারণেই সুহার ছোট্ট বুকটা ধ্বক করে ওঠে।

সুহা। পুরো নাম সুহাসিনী শেখ। বাবা মায়ের দুই মাত্র ছেলেমেয়ের মধ্যে সুহা বড়। তার ছোট একটা ভাই আছে। সুহান। ক্লাস ফাইভে পড়ে। সুহা এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। নিপা ওর সাথেই পড়ে। বাড়িও পাশাপাশি হওয়ায় ছোট থেকেই দুজনার গলায় গলায় ভাব। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ,চিকন নাক,,টলটলে গোলাপী ঠোঁট আর বড় বড় চোখের অধিকারী সুহা। মাথায় কোমর ছাড়ানো কোঁকড়ানো চুল গুলো সব সময় পনিটেল করে বাঁধা থাকে।
সুহার বাবা মোতালেব শেখ গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। গ্রামে তিনি মোতালেব মাস্টার নামেই পরিচিত । সুহার মা গৃহিণী। সুহা তার বাবাকে খুব ভালোবাসে। বাবাও তার দুই সন্তানকে অসম্ভব ভালোবাসেন। সুহা আর ওর ভাই সুহান মাকে একটু ভয় পায় তবে বাবা থাকলে সেই ভয়টুকুও কাজ করে না।

*******
নিপা সাহিত্যদের কাছে গিয়ে হাসিমুখে সালাম দেয়। তারপর হেসে বলে:-

_কেমন আছেন ভাইয়ারা??

সাহিত্য নিপার গলার আওয়াজ পেতেই বাইক থেকে উঠে বসে। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই চোখে পড়ে নিপা কে। তবে তার নজর নিপা কে ছাপিয়ে তার কিছু দুরে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুহার দিকে গিয়ে থামে। শীতল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিপার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো:-

:-ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?

:- আমরাও ভালো আছি ভাইয়া। কিন্তু আপনারা এখানে কি করছেন?? আব্বু বলছিলো আজকে নাকি উপজেলায় আপনার সমাবেশ আছে!!

:-হ্যাঁ তোমার আব্বু ঠিকই বলেছেন। সেখানেই যাবো একটু পর। ড্রাইভারকে গাড়ি আনতে বলেছি। তা তোমার বান্ধবীর কি ওখানে শেকড় গজিয়ে গেছে নাকি?? নাকি ইন্ভিটিশন কার্ড দিয়ে এখানে আসতে বলতে হবে!! কথাটা একটু জোরেই বললো সাহিত্য।

সাহিত্যর তাকে উদ্দেশ্য করে বলা কথাতে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো সুহার। সন্তর্পণে ঢোক গিলে সামনের দিকে এগিয়ে যায় সে।
মাথা নিচু করে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়ায় নিপার পাশে। সাহিত্য পেছনে তাকিয়ে অরুদ্ধকে ইশারা করতেই অরুদ্ধ উঠে এসে নিপাকে বলে:-

_আরে নিপা তোমার সাথে আমার একটু দরকারি কথা ছিলো ,,একটু সামনের দিকে এগিয়ে চলো তো।

নিপা মাথা নাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সুহা নিপার হাত ধরে টেনে ধরতে চাই তার আগেই সাহিত্য সুহার হাত চেপে ধরে।

সাহিত্যর হঠাৎ স্পর্শে কেঁপে ওঠে সুহা। মুহুর্তেই সুহার হাত ছেড়ে সামনে দাঁড়ায় সাহিত্য। গম্ভীর গলায় বলে:-

_মাথা তোল সুহাসিনী!!

অন্তর কাঁপন বাড়লো বুঝি রমনির। কাতর চোখে সাহিত্যর দিকে তাকায় সুহা। মুহুর্তেই যেন আঁটকে যায় মুগ্ধতায় ঘেরা গভীর দু চোখে,যা বর্তমানে তার দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কোনমতে ঢোক গিলে সুহা‌‌।

:-গতকাল স্কুলে যাসনি কেনো?

_এমনি-তেই। ওই.. আসলে..

_কি এমনিতেই আসলে করছিস?? তোতলা তুই? সাফ সাফ বল!!

সুহা হড়বড় করে বলে:-

_পেটে ব্যাথা করছিলো।

মুহুর্তেই সাহিত্যর মুখটা কেমন বিচলিত হয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। গম্ভীর মুখে আবারো জিজ্ঞাসা করলো,,

_কেনো হুট করে পেটে ব্যাথা করছিলো কেনো?? কিছু উল্টোপাল্টা খেয়েছিলি ??

সাহিত্যর এই প্রশ্নে তাড়াতাড়ি দু পাশে মাথা নাড়ায় সুহা। কিন্তু মুহূর্তে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল সুহার। এখন সে কি
বলবে যে কেন তার পেটে ব্যাথা করছিলো!! তার থেকে হ্যাঁ বলে দিতেই পারতো তাহলে আর জেরা করতো না। মনে মনে নিজেকে চাটা মারে সুহা। এদিকে সাহিত্য মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে উত্তরেল আশায়।
কিন্তু সুহার লজ্জা রাঙ্গা মুখে নিচু তাকাতে দেখেই হুট করে কিছু মনে পড়তেই অপ্রস্তুত হয়ে যায় সাহিত্য। সাথে সাথে কথা ঘুরিয়ে বলে:-

:-পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন??
হাফ ছেড়ে বাঁচে সুহা। মাথা নাড়িয়ে জানায় ভালো। স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও সুহার হাত পা তিরতির করে কাঁপতে থাকে। সাহিত্যর সামনে সে কোনদিনই নির্ভয়ে দাঁড়াতে পারে না ‌। সুহার কাঁপাকাঁপি ঠিকই ঠাহর করতে পারে সাহিত্য। ধমক দিয়ে বলে:-

_ এভাবে দাড়িয়ে কাঁপছিস কেনো? আমি কি তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছি?

সাহিত্যর কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় সুহা। কি বললো এমপি সাহেব!!

চলবে,,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,২
মৌমো তিতলী

উপজেলায় বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দলের লোকজন চারদিকে নজর রাখছে। বিপক্ষ দলের লোকজন কোন ঝামেলা না করে সেদিকে তাদের নজর। এরই মধ্যে লোকজনে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে সমাবেশের জায়গাটা।তাদের প্রানের নেতা তরুন এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার মুল্যবান বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তারা।
এদিকে সাহিত্যর কোন হদিস নেই। সাথে তার পঞ্চ পান্ডব কেউ দেখা যাচ্ছে না। সবগুলো সাহিত্যর লেজ ধরা। আহাদ মির্জা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। ছোট ছেলেটা রাজনীতি তে পাকা হলেও অত্যান্ত ঘাড়ত্যাড়া। কাউকে পরোয়া করা যেন তার ধাতে নেই। সদ্য এমপি হয়েছে এখন তো একটু সিনসিয়ারিটি দেখাবে তা না, কোথায় গিয়ে আঁটকে বসে আছে। মনে মনে একটু বিরক্ত হন তিনি।
পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে ফোন লাগান তিনি,,,,

********

সাহিত্য দাঁড়িয়ে সুহার সাথে কথা বলছিলো এমন সময় সিফাত এসে ডাকে:-

_ভাই আঙ্কেল বার বার ফোন দিচ্ছে। ওদিকে সমাবেশের আয়োজন কমপ্লিট। এখনি না বেরোলে দেরি হয়ে যাবে।

সিফাতের কথা শেষ না হতেই সেখানে গাড়ি এসে হর্ন দেয়।
সাহিত্য পেছনে তাকিয়ে বন্ধুদের ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলে। তারপর সামনে দাঁড়ানো সুহার দিকে তাকায়!!

:-যা ! তোকে যেন স্কুলে কোন ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি। ভাবছিস আমি নেই বলে দেখতে পাবো না? আমার নজর হামেশা তোর ওপর থাকবে। মনে থাকে যেন!!

সুহা মনে মনে ভেংচি কাটে সাহিত্য কে। আহা!! কারো সাথে কথা বলবি না!! আমার নজর থাকবে!! আসছে দারোয়ান!! তবে মুখ ফুটে সেটা বলতে পারলো না। মুখে আমতা আমতা করে বলল:-

:-আপনার কি আর কোন কাজ নেই এমপি সাহেব?? আমার দিকে নজর রাখবেন কেনো আপনি?

সাহিত্য বাঁকা হেসে সুহার দিকে আরেকটু ঝুঁকে দাঁড়ায়। বলে:-

_বাহ!! মুখে দেখছি তোর খই ফুটছে। আমার কোন কাজ আছে কিনা তোকে ভাবতে হবে না। যেটা বলেছি সেটা মাথায় রাখলেই হবে। নয়তো তোর মাথার ওই নুডলসের মতো চুলগুলো আছে না!!! দেখবি সেগুলো হাওয়া হয়ে গেছে। তারপর টাকলা হয়ে ঘুরবি! বেশ হবে না??

সাহিত্যর হুমকি শুনে ভয়ে ঢোক গিলে সুহা। বজ্জাত এমপির দারা সব সম্ভব। তাড়াতাড়ি করে মাথা নাড়িয়ে বলে সে কারো সাথে কথা বলবে না।

আবারো সাহিত্য বাঁকা হেসে সুহার গাল টেনে বলে,,,

:- দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল!! যাহ তোর স্কুলের দেরি হচ্ছে।

সুহারও টনক নড়ে। এই ব্যাটা সামনে এসে কথা বলতে শুরু করলে সুহারও যেন সময় জ্ঞান থাকে না। এমনিতেই তো তাকে দেখেই হাঁটু কাঁপে!!! আবার আবার এতোটা সময় কেমনে চলে যায় বোঝে না। ততক্ষণে নিপা কাছে এসে সুহার হাত ধরে। তারপর দুজনে দ্রুত পা চালায় স্কুলের পথে। সুহার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধপ করে গাড়িতে উঠে বসে সাহিত্য। এখান থেকে সোজা পার্টি অফিস তারপর রেডি হয়ে সমাবেশে যাবে সে।

******

হাই ভোল্টেজ মেজাজ নিয়ে মাথা চেয়ারে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন বিপক্ষ দলের নেতা আমজাদ তালুকদার। নির্বাচনে হেরে এমনিতেও তার মন মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। এর মধ্যে ওই পুঁচকে ছোকরা নেতা হয়েছে বলে শহরের সবাই হৈ হৈ করছে যেটা তার সহ্য হচ্ছে না। হাঁটুর বয়সী ছেলে সে কিনা রাজনীতি তে হারিয়ে দিলো আমজাদ তালুকদারের মতো পাকা হাত কে। হিংসা আর আত্ম অহংকারে ভেতরে ভেতরে ফেটে পড়ে আমজাদ তালুকদার। এমন সময় একজন হন্তদন্ত হয়ে চেম্বারে ঢুকে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে!!

:- বস ওদিকে সব রেডি। আপনি বললেই আজ ওদের আনন্দের সমাবেশ শোক সমাবেশে পরিণত হবে।
আমরা কিভাবে সমাবেশে ঢুকবো সেটাও প্ল্যান করে ফেলেছি। এখন আপনি অনুমতি দিলেই হবে!!

আমজাদ তালুকদার চোখ খুলে তাকালো শফিকুলের দিকে। তার ডান হাত এই শফিক। জাতে হারামি হলেও তার নেতার নেমকহারামি করে না। আমজাদ তালুকদারের খুবই বিশ্বস্ত লোক শফিক। একরকম পেটের খবর পর্যন্ত তার জানা‌। শফিকের কথা শুনে আমজাদ তালুকদার শয়তানী হাসি দিয়ে বলে….

:- তাহলে আর দেরি কিসের!!! শুভ কাজে দেরি করতে নেই। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,,দু দিনের ছোকরা এসেছে এমপি হয়ে সমাজ সেবা করতে। ওর মতো ছোকরার কাছে এই আমজাদ তালুকদার হারবে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। সদ্য এমপি হয়ে আকাশে উড়ছে তো!! এবার মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাবে। শফিকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই শফিক মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায়।

________

সমাবেশে লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে। দলের ছেলেরা বেশ বড়সড় একটা প্যান্ডেল বানিয়েছে। সাথে মঞ্চ সাজিয়েছে হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে। প্যান্ডেলে তিল পরিমাণ জায়গা খালি নেই। এতো এতো লোকজন এসেছে তরুণ এমপির বক্তব্য শুনতে। মঞ্চের এক পাশে দাঁড়িয়ে সিফাত,, হৃদয়,,নিরব,, অরুদ্ধ,, তিয়াশ চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। এতো বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে সেখানে বিপক্ষ দলের ছেলেরা কোন না কোন ঝামেলা করবেই। এমনি ভাবনা তাদের। নিজেদের থেকে এই সাধারণ জনগণের চিন্তা বেশি। মে কোন ভাবেই তিদেরকে সেফ রাখতে হবে। সাহিত্যর এমপি আসন দখল করার পর এটাই তার প্রথম সমাবেশ। আর শুরুতেই ঝামেলা হোক তারা চায়না। এতে জনগনের মনে বিরুপ ধারণা তৈরি হবে যা সাহিত্যর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে। তাই সবদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে তারা। দলের সেচ্ছাসেবি বাহিনী সমাবেশের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আভাস পেলেই তাদেরকে ইনফর্ম করতে বলা হয়েছে।

এদিকে শফিক তার দলবল নিয়ে সাধারণ জনগণের বেশে সমাবেশে ঢুকে বসে আছে। প্ল্যান অনুযায়ী দলের ছেলেদের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দিয়েছে। সঠিক সময়ে ওদের ফোনে সঙ্কেত দেয়া হবে। তখনই তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরর রুপ দিবে। এটা ভেবেই শফিকের ঠোঁটে শয়তানী হাসি ফুটে ওঠে। আরো একবার চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেয় সে কেউ আবার সন্দেহ করলো কিনা!!!

____ মঞ্চে এক এক করে গ্রামের সম্মানিত ব্যক্তিরা তাদের মুল্যবান বক্তব্য রাখছেন। চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা চেয়ারম্যান,, পার্শ্ববর্তী এলাকায় এমপি,,পরে আহাদ মির্জা তার বক্তব্য রাখেন। এবার সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সদ্য নির্বাচিত তরুণ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার মুল্যবান বক্তব্য শোনার জন্য। এমন সময় মঞ্চে প্রবেশ করে সাহিত্য। তার পেছনে যথাযথ তার পঞ্চ পান্ডব। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা জিম করা পেটানো শরীরে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা জড়িয়েছে সাহিত্য। ওপরে নীল রঙের কোট। মাথায় চুল ব্যাক ব্রাশ করা ,, কিছু চুল এসে কপালে পড়ে আছে। হাতে কালো বেল্টের ব্র্যান্ডের ঘড়ি। পায়ে কালো লোফার স্যু। সমাবেশের সকলে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তাদের তরুণ সুদর্শন সুপুরুষ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার দিকে। সামনে উপস্থিত জনগণের মধ্যে থেকে দলের কিছু ছেলেরা উঠে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে সিটি বাঁজাতে থাকে।

মঞ্চের ডায়াসে দাঁড়িয়ে সবাইকে বিনয়ী ভঙ্গিতে সালাম দেয় সাহিত্য। মুহূর্তে সালামের জবাবে মুখরিত হয় সমাবেশের জায়গাটা। সাহিত্য একে একে তার বক্তব্য রাখছে।
তার এক একটা করা প্রতিজ্ঞাতে জনগণ তাদের উল্লাস প্রকাশ করছে।

এদিকে এতো লোকজনের মধ্যে শফিক পারছে না মাথা তুলে তার লোকেদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে। দাড়িয়ে পড়লেই তার দিকে নজর যাবে অনেকের। ছদ্মবেশে আসলেও শফিককে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করলেই ধরা পড়ার চান্স বেশি। আমজাদ তালুকদারের ডান হাত সে। তাকে সবাই ভালো করে চেনে। শফিক সন্তর্পণে ফোন বের করে সবাইকে এক এক করে ইনফর্ম করে। ঘড়ির কাঁটা এক এক করে ঘুরতে থাকে। পাঁচ মিনিট,,দশ মিনিট পেরিয়ে যায় তবুও তাদের প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হতে না দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে শফিকের। কি হলো বেপারটা বুঝে উঠতে পারে না। মনে মনে সবকটা কে জঘন্য গালি দেয় শফিক।
সবগুলো কি ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে নাকি!! গর্ধবের দল সব। করছে কি সবগুলো। অধৈর্য হয়ে পড়ে শফিক।
এদিকে সমাবেশ শেষের দিকে। আর ওদিকে তাদের প্ল্যান অনুযায়ী কিছুই ঘটতে না দেখে ঘাবড়ে যায় শফিক। তাহলে কি তারা আগেই ধরা পড়ে গেছে!! সাহিত্যর নজরে আছে সে আর তার লোকেরা!! ভাবতেই কপালে ঘাম দেখা দিল শফিকের। সে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সেখান থেকে কেটে পড়তে চেষ্টা করে। শফিকের দিকে শুরু থেকেই নজর রেখেছে অরুদ্ধ। আর সিফাত,হৃদয়,নিরব, তিয়াশ বাকিদের কাম আগেই তামাম করে দিয়েছে। শফিককে পালাতে চেষ্টা করতে দেখেই অরুদ্ধ এগিয়ে যেতে চায়,, কিন্তু সাহিত্যর বাধা পেয়ে দাড়িয়ে যায়!! মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে সাহিত্যর দিকে তাকাতেই সাহিত্য বলে…

:- যেতে দে ওকে।

:-যেতে দেবো মানে কি সাহিত্য!! ওদের কতবড় সাহস আমাদের সমাবেশ নষ্ট করতে আসে। ওকে তো উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটাবো আমি!! আমার হাত ছেড়ে দে সাহিত্য।

:- মাথা গরম করিস না। ওকে যেতে দে। আমজাদ তালুকদারের কাছে খবর তো দিক!!! ওর বেবস্থা পরে করলেও চলবে। আগে জনগনকে এখান থেকে সেফলি বের কর।

সাহিত্যর কথায় অরুদ্ধ থামে। তারপর আস্তে আস্তে সমাবেশ শেষে সবাইকে বের করে। এদিকে সবটা গোছগাছ করে বাকিটা দলের ছেলেদের দায়িত্বে দিয়ে সাহিত্য আর তার পঞ্চ পান্ডব হাজির হয় সাহিত্যদর মির্জা ম্যানশনে।

চলবে,,,