ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-৩+৪

0
129

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,,৩
মৌমো তিতলী

ছয় বন্ধুর আড্ডা জমেছে মির্জা ম্যানশনের বিলাসবহুল এক কামরায়। কামরা টা সাহিত্যর বেডরুম। সারাদিন সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে নাস্তা করে ছয় বন্ধু আড্ডা জমিয়েছে। সিফাত বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে আছে,, পাশেই বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে হৃদয় আর নিরব। অরুদ্ধ তিয়াশ বসে আছে চেয়ারে আর সাহিত্য ডিভানে বসে একমনে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।

ছয় বন্ধুর মধ্যে অরুদ্ধ সব থেকে বেশি ক্লোজ সাহিত্যর। রাত দিনের বেশি সময়টাই সে কাটায় সাহিত্যর সাথে।
সাহিত্য কে ফোনের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে ডিভানে সাহিত্যর পাশে গিয়ে বসে। সামান্য উঁকি দিয়ে দেখে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে অরুদ্ধর। যা ভেবেছিলো তাই!!! সে এখন তার ছোট্ট ফুলের কুঁড়িতে বিভোর। অরুদ্ধ সাহিত্যর কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,,,

:- কবে জানাবি ওকে??

সাহিত্য আনমনে জবাব দেয়,,

:-জানি না।

:-আরে কতো দেরি করবি?? দেখিস সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে করতে না আবার খুব দেরি হয়ে যায়।

সাহিত্য অরুদ্ধের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে।

:-মানে কি বলতে চাইছিস?

:- দেখ সাহিত্য!! এতদিন তুই বলতিস ও এখনো ছোট!! ছোট মানতাম। কিন্তু এখন ও এসএসসি পরীক্ষা দিবে। ১৬ বছর বয়সের মেয়েরা এতটাও ছোট হয় না। অনেক কিছু বুঝতে শেখে। আমাদের বাঙালি ঘরের মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি কিন্তু ম্যাচিউর হয়ে যায়। তাছাড়া তোর বয়সটাও দেখ ২৮ বছর। তোদের বয়সের গ্যাপটাও অনেকটা। আরো কত দেরি করতে চাস??

:- তুই কি ইনডাইরেক্টলি আমাকে বুড়ো বললি??

:- এমা ছি! ছি! কি বললি তুই?? বুড়ো কেন বলবো! তুই বুড়ো হলে তো আমরাও বুড়ো। আমরা সেম ইয়ার না!!!
আসলে আমি বলতে চাইছি তোর ফুলকুঁড়ির থেকে তো অনেকটাই বড়!!

:- হুম। দেখিওর পরীক্ষাটা হয়ে যাক আর তো মাত্র দুইটা মাস। এতগুলো বছর যখন অপেক্ষা করতে পেরেছি, তখন এই দুইটা মাস অনাসায়ে চলে যাবে। আর হিতে বিপরীত হওয়ার কিছু নেই, ওর জন্য আমি দ্বিতীয় কোন অপশন রাখিনি।

অরুদ্ধ সাহিত্যর কাজ চাপড়ে বলে,,

:- এই না হলে আমাদের এমপি সাহেব।

ওদিক থেকে তিয়াস বলে,,,

:- আরে এমপি না রে বল ভ্রমর,, ভ্রমর!!! ফুল এখনো পরিস্ফুটিত হলো না ভ্রমর আগেই তৈরি হয়ে বসে আছে। বলে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো সবগুলো!!

সাহিত্য ডিভান থেকে একটা কুশন তুলে ছুড়ে মারে ওদের দিকে।

:- তোরা গেলি এখান থেকে !!শয়তানের দল সব আমার পিছে লাগছিস। কি মনে করেছিস তোদের গল্প আমি জানিনা?? আমার মুখ খোলাস না বুঝলি!!

নিরব বলে,,,

:- আরে দোস্ত ভাড়াক যাস কেনো?? আমরা তো মজা করছিলাম। তাছাড়া আমরা তো জানি তুই তোর ফুলকুড়িকে কতটা ভালোবাসিস।

এভাবেই হাসি মাস্তিতে চলতে থাকলে 6 বন্ধুর আড্ডা।

************

রাতে খাবার টেবিলে বসে সুহা আর সুহান প্লেট নিয়ে মারামারি করছে। সুন্দর ঝকঝকে ফুল কাটা প্লেটটা ধরে একবার সুহা নিজের দিকে টানছে ,,একবার সুহান নিজের দিকে টানছে। কে বলছে এই প্লেটটা আমি নেব ,,ও বলছে এই প্লেটটা আমি নেব।
এরই মধ্য খাবারের বোল নিয়ে ডাইনিং টেবিলে হাজির হয় সুহার মা তাহিরা বেগম। মাকে দেখেই দু ভাই বোন একদম ভদ্র বাচ্চার মতো সোজা হয়ে বসে থাকে। তার মধ্যেও দুইজন দুইজনকে চোখ গরম করতে ভুলছে না। তাহিরা বেগম এতক্ষণ ঠিকই খেয়াল করছিলো দুই ভাই বোনের ঝগড়া। দুজনের মাঝখান থেকে প্লেটটা তুলে আলাদা জায়গায় রেখে বললেন ,,,,

:-এটা আজকে দুজনের কেউ পাবি না। তোরা খাবার খাবি নাকি প্লেট??

সুহান দাঁত কেলিয়ে বলে,,

:- একদম ঠিক হয়েছে!! আমিও পাবো না তুইও পাবি না।

সুহা সুহানকে ভেংচি কেটে বলে,,

:- সেম টু ইউ।

তাহিরা বেগম দুজনের মাথায় আস্তে করে চাটি মেরে বলেন,,

:- হয়েছে এবার ভদ্র ছেলে মেয়ের মত খেয়ে নাও।

সুহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:-আম্মু বাবা এখনো আসছে না কেন?

তাহেরা মেয়ের প্লেটে তরকারি বেড়ে দিতে দিতে বলেন,,

:- তোর বাবাকে তোর আহাদ চাচা তার বাড়িতে ডেকেছেন। কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে নাকি। সেখানে গেছেন তোর বাবা। চলে আসবে। তাছাড়া সাহিত্য ছেলেটা এত বড় একটা দায়িত্ব পেলো,, এমপি হয়েছে। কংগ্রাচুলেশন জানানোরও তো একটা ব্যাপার আছে। হাজার হলেও তোর আহাদ চাচা আর তোর বাবা ছোটবেলার ভালো বন্ধু। সাহিত্য আর মেহরাব ছেলে দুটোও কত ভদ্র ভেবে দেখ। কত নাম ওদের পাড়ায়। সাহিত্য আর মেহরাবের মত ছেলে সহজে পাওয়া যায় বলতো।
মায়ের কথা শুনেই সুহার মনে পড়ে সাহিত্যর কথা। লোকটা সেই সকালে হুমকি দিয়ে চলে গেলো। আর দেখা নেই। শুনেছিল আজ নাকি সমাবেশ ছিলো উপজেলায়। খাবার প্লেটে হাত থেমে থাকে সুহার।
নাক কুঁচকে থাকে। রাজনীতি জিনিসটা একেবারেই পছন্দ নয় তার। একবার এক রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় মারামারি করতে দেখেছিলো সুহা। এরপর থেকেই রাজনীতি তার ভালো লাগেনা। অথচ সাহিত্য একজন এমপি। তবুও ওকে দেখে সুহার একটুও অপছন্দ হয় না। একটু বেশিই ভয় পাই কিন্তু একেবারেই বিরক্তি আসে না সাহিত্যের সামনে গেলে।

আচ্ছা সাহিত্য এত বড় একজন নেতা হয়ে সুহার মত পুঁচকে একটা মেয়ের উপরে এত খবরদারি কেন করে? কই সুহার তো তাতে খারাপ লাগে না । আবার সাহিত্য যা বলে না চাইতেও সুহা সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।কেন?? কিসের জন্য??উত্তর নেই সুহার কাছে। সুহা কোনমতে খেয়ে উপরে চলে যায় নিজের ঘরে। পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। এত কিছু না ভেবে মন দিয়ে পড়তে হবে।

*****”

ব্যালকনিতে চাঁদের আলোয় ইজি চেয়ারে টানটান হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে সাহিত্য। চোখের তারায় ভাসছে মিষ্টি, ছোট্ট একটা হাসি মুখ। অন্তরে সুখ অনুভুতি হয় সাহিত্যর। ওই একটা মায়াময় মুখ তার জীবনে সুখের লেহের বয়ে আনতে সক্ষম। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি খেলে যায়। তার মতো একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ একজন দায়িত্বশীল এমপি কিনা এক টিনেজার মেয়ের জন্য দিওয়ানা। ভাবতেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সাহিত্য। ফুলকুড়ি…. তার ছোট্ট ফুলের কুঁড়ি। মেয়েটা সামনে আসলেই সে যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। অনুভূতিরা ছটফটিয়ে বেরিয়ে আসতে চাই। ইচ্ছে করে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। বুকের মাঝে ঢুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। তার গোলাপী ঠোঁট জোড়া নেড়ে নেড়ে কথা বলতে দেখলে বুকটা পিপাসায় খাঁ খাঁ করে ওঠে। নেশাক্ত করে দেয় তাকে। নিষিদ্ধ খেয়ালেরা উঁকি ঝুঁকি দেই মনের মধ্যে। তবুও বিন্দু মাত্র বুঝতে পারে না তার বোকা ফুলের কুঁড়িটা।
অন্তরে জ্বালাপোড়া হয় সাহিত্যর। দিন দিন এই দুরত্ব আর সহ্য হয়না তরুন এমপি সাহেবের। নাহ!! এবার কিছু একটা করতেই হবে। তার ফুলকুঁড়িকে যে তার চায়। একান্ত ব্যক্তিগত করে চায়,,তার বুকের মাঝে,,মনের আঙ্গিনায়,,তার ঘরে তার বিছানায় তার সমস্ত অস্তিত্বে চায় তাকে। সেখানে কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না সাহিত্য। কারোর না।

********

কলেজের উচ্চতর গনিতের ক্লাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা। তার মধ্যে অন্যতম আরশি,,মিরা,, লাবণ্য। তিন বান্ধবীর গলায় গলায় ভাব। তিনজন সব সময় একসাথেই দেখা যায়। আরশি পড়াশোনায় মেধাবী। মিরা প্রেম করতে ওস্তাদ আর লাবণ্য বাঁচাল। আরশি মেধাবী সাথে প্রচুর পরিমাণে দুষ্টু। পুরো কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্র ছাত্রীরাও ওদের তিনজন কে ভালো ভাবে চেনে। তিনজন তিন ক্যারেক্টারের জন্যই মূলত পরিচিত কলেজে।
তুমুল আড্ডা চলছে এমন সময় ক্লাসে প্রবেশ করে মেহরাব মির্জা।এদের উচ্চতর গনিতের ক্লাসটা সেই নেয়। ক্লাসে ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। কিন্তু আরশি পেছন দিকে ফিরে বসে গল্পে এতোই মশগুল ছিলো যে টেরই পায়নি কখন স্যার ক্লাসে ঢুকেছে।
মেহরাব পুরো ক্লাসরুমে নজর বুলিয়ে আরশির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা মুখ আমশি করে বসে আছে। মেহরাব স্যার হিসেবে খুবই কড়া,, গম্ভীর আর রাগী বলেই স্টুডেন্টরা তাকে বেশ ভয় পায়। আবার তরুণ সুদর্শন এই ম্যাথ টিচারের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ছাত্রীদেরও অভাব নেই কলেজে। তবে সবটাই মেহরাবের অগোচরে। কখনো ভুল করেও যদি এগুলো মেহরাবের কানে যায় তাহলে ব্যাসসসস।

মেহরাব হাতের কলম দিয়ে আরশির মাথায় হালকা করে বাড়ি দেয়। গল্পের মধ্যে ডিসটার্ব ফিল করাই আরশি ‘আবে কে রে খোঁচা মারছিস” বলে পেছনে তাকিয়েই ভুত দেখার মত শিউরে উঠলো। ঝট করে দাঁড়িয়ে গেলো সে। মেহরাব গম্ভীর মুখে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। এতটুকুও পলক না ফেলে আরশির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশি একটু অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো মেহরাব,,,

:- ক্লাস কি গল্প করার জায়গা?? আর গল্প করলেও আসেপাশে নজর রাখা কি উচিত না?? এখন যে একটা ক্লাস টাইম শুরু হয় সেটা খেয়াল থাকে না?? শুধু পড়াশোনায় মেধাবী হলেই চলে না। কলেজের ডিসিপ্লিনও মেনটেইন করতে হয়।

মেহরাবের করা কটাক্ষে আরশির দুচোখ ভরে ওঠে। একটু নাড়া পড়লেই টুপ করে ঝরে পড়বে অশ্রু। দাঁতে দাঁত চেপে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সে।
মেহরাবের কলেজের ডিসিপ্লিন নিয়ে খোঁটা দেয়ার অবশ্য কারণ আছে। কলেজে আসা পর্যন্ত আরশির যত সব উল্টোপাল্টা নিয়ম ভাঙ্গা কাজগুলো মেহরাবের সামনেই পড়ে। কখনো ক্লাস বাঙ্ক করা, কখনো ড্রিংকের ক্যান ,কখনো চিপসের খোসা যেখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেলা এগুলো সব মেহরাবের সামনেই পড়ে যায়। পরীক্ষার খাতায় প্লাসমার্ক উঠলেও এইসব উশৃংখল কাজগুলোর জন্য মেহরাব আরশিকে সুযোগ পেলেই কথা শোনায়। আরশির বাকিদের কথায় এতটা খারাপ লাগে না যতটা খারাপ মেহরাবের করা কটাক্ষে লাগে। কিন্তু মেহরাব এটা কখনোই বোঝেনা।

আর্শিকে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরো রেগে যায় মেহরাব। ধমক দিয়ে বলে ওঠে,,,

:- Keep your head up you stupid girl,,!!

মেহরাবের ধমকে কেঁপে ওঠে আরশি।ঝট করে মাথা তুলে মেহরাবের চোখে চোখ রেখে ধরা গলায় বলে,,,

:- সরি স্যার। I didn’t realize you came to the class!!

মেহরাবের চোখ আটকে রয় আরশির লাল হয়ে যাওয়া টলটলে জলে পরিপূর্ণ আঁখিতে। নাক লাল হয়ে উঠেছে কান্না চেপে রাখতে গিয়ে। মেহরাব সন্তর্পণে ঢোক গিলে হাতে মুঠোয় থাকা কলমটা শক্ত করে চেপে ধরে। মুখটা যথাযথ গম্ভীর রেখে বলে।

:- Remember that if you make a NextTime mistake, you will be punished!! বসো।

বলেই ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে গিয়ে অংক করাতে থাকে। এক ঘন্টা ক্লাসে কয়েকবার আড় চোখে আরশির দিকে তাকায় মেহরাব। তারপর কোন বাধা ছাড়াই ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে যায়।

চলবে,,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,,৪
মৌমো তিতলী

ক্লাস থেকে বেরিয়ে মেহরাব অফিস রুমে তার নিজের কামরায় গিয়ে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। টেবিলে মাথা রেখে দুহাত দিয়ে চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ। মনটা দিন দিন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে। যতই নিজেকে কঠিন রাখার চেষ্টা করছে ততই মন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তার দুষ্টু চঞ্চল প্রেয়সীর সামনে গেলে।
উফফফ মেয়েটাকে হাজার বকে শাসন করেও তার দুষ্টুমি করা থেকে বিরত রাখতে পারছে না। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না মেহরাব।
মেহরাব ভাবে সেদিনের কথা যেদিন সে মন হারিয়েছিলো এক দুষ্টু পরীর চঞ্চলতায়,, খিলখিল হাসিতে। ঘন পাপড়ির আবডালে ঘেরা টলটলে দুই নয়নে।

তিন বছর আগের কথা। মেহরাব তখন সদ্য এই কলেজে চাকরিতে জয়েন করেছে। মেহরাবের সব থেকে কাছের বন্ধু আরুশের বিয়ে ঠিক হয় সে সময়। আরুশ মেহরাব কে বিয়ের আগের দিনেই বগল দাবা করে বাড়িতে নিয়ে যায়। বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে আরো অনেক বন্ধু বান্ধব একসাথে হয়েছিল। সবাই মিলে আনন্দ হাসিতে বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে ইনজয় করতে ব্যস্ত। সেদিন সন্ধ্যায় ছিলো আরুশের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। ছাদে সবাই ব্যস্ত আরুশকে হলুদ লাগাতে।মেহরাব নিচ থেকে ছাদের দিকে যাচ্ছিলো এমন সময় কারো খিল খিল হাসির শব্দে পা আটকে যায় মেহরাবের।
পাশের কোন একটা রুম থেকে আসছে মন মাতানো এই হাসির শব্দ। বুকটা কেমন ধুকপুক করে ওঠে যুবকের। মেহরাব বুকে হাত চেপে এগিয়ে যায় রুমের সামনে। যেখান থেকে হাসির আওয়াজ আসছিলো। তার মত আঠাশ বছরের যুবকের হৃদপিণ্ড থামিয়ে দেয়া হাসির উৎস দেখতে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না মেহরাব। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে পর্দা হালকা সরিয়ে রুমের ভেতরে উঁকি দেয় সে। ওই তাকানোটাই যেন ছিল মেহরাবের সর্বনাশের শুরু। দৃষ্টি থমকে যায় মেহরাবের। টুকটুকে লাল গাউনে আবৃত এক চঞ্চল পরীর হাসি তীর তার হৃদয় ভেদ করে বেরিয়ে যায়। মেয়েটা ছাড়াও আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে উপস্থিত আছে সেখানে। সবাই মিলে কিছু একটা নিয়ে গল্প করছে আর তাতেই মেয়েটা হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। অপলক দৃষ্টিতে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মেহরাব। বুকে হাত রাখার ফলে খেয়াল হয় তার হার্টবিট বেড়ে গেছে প্রচন্ড। ঢোক গিলে সে। দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে মেহরাব। এভাবে কোন মেয়েদের রুমে উকি দেয়া উচিত নয়। মনকে দমিয়ে নিজেকে কিছুক্ষণ ধাতস্থ করে ছাদের দিকে পা বাড়ালো সে। বিয়ের দিন কনের বাড়িতে কনেপক্ষের কিছু মেয়েরা আরুশের জুতা লুকিয়ে টাকা চাইলে গত সন্ধ্যায় দেখা সেই মেয়েটা দাড়িয়ে আরুশকে বলে টাকা দিয়ে ওই জুতা ফেরত নেয়ার কোন দরকার নেই ভাইয়া।
বলেই ব্যাগ থেকে এক জোড়া নতুন জুতা বের করে দেয়। কনেপক্ষের হতভম্ব হয়ে যাওয়া দেখে আবারো মেয়েটা তার সর্বনাশী হাসি হাসতে থাকে। যেনো ওদেরকে উল্টে বোকা বানাতে পেরে সে ভীষণ খুশি।
হাসতে হাসতেই মেয়েটা বলে,,

:- আমি আগেই জানতাম এখানে এমন কিছুই হবে। এইজন্যে ভাইয়ার জন্য একটা এক্সট্রা জুতা রেখে দিয়েছিলাম ব্যাগে। এখন ওই জুতাটা বরং তোমরাই রেখে দাও। মেয়েটার দুষ্টুমি দেখে বর পক্ষের সবাই হাসতে থাকে।

মেহেরাব মেয়েটার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে ভীষণ খুশি হয়। সেদিনই জানতে পারে মেয়েটা আরশের একমাত্র ছোট বোন আরশি।
মেহরাব এর আগে আরুশদের বাড়িতে কখনোই যাইনি। তাই ওর বোনকে সে চিনতো না। বিয়েতে সে আরশিকে দেখলেও আরশি সেভাবে মেহরাবকে খেয়াল করে না। এই কারণেই কলেজে আরশি কে প্রথম দেখে মেহরাব মনে মনে ভীষণ খুশি হলেও, আরশি মেহরাবকে দেখেও চিনতে পারেনা। সে মেহেরাবকে রাগচটা গম্ভীর একগুয়ে ম্যাথ টিচার হিসেবেই চেনে।
মেহরাব ও কখনো নিজের অনুভূতি আরশির সামনে প্রকাশ করে না। তাছাড়া আরশির চঞ্চলতা যে তার খারাপ লাগে এমনটাও নয়, ওই চঞ্চলতার প্রেমেই তো পড়েছিল মেহরাব। কিন্তু মেয়েটা প্রচন্ড দুষ্টু! সব সময় উল্টোপাল্টা কাজ করতে ওস্তাদ । পড়াশুনায় অত্যন্ত ভালো বলেই সেভাবে কোন স্যার বকাঝকা করেন না।
কিন্তু মেহরাবের মতোই ওই চঞ্চলতায় অনেকেরই নজর পড়ে। অনেকেই মুগ্ধ চোখে আরশির দিকে তাকাই। আর সেটাই সহ্য হয় না মেহরাবের। আরশির দিকে কেউ মুগ্ধ চোখে তাকালে মেহরাবের অন্তরটা জ্বলে । জেলাসিতে ফেটে পড়ে বুকের ভেতর। সেই সমস্ত রাগ আরশির উপর দিয়েই ঝাড়ে সে। কি দরকার সব সময় এমন চঞ্চলগিরি দেখানোর। যখনই আরশি কোন উল্টোপাল্টা কাজ করে কোন না কোন ভাবে সেটা মেহরাবের সামনেই পড়ে আর মেহেরাবও সুযোগ পায় মেয়েটাকে ঝাড়ার।

এ বারই এইচএসসি পরীক্ষা দিবে আরশি। পরীক্ষাটা হয়ে গেলেই তার দুষ্টু প্রেয়সীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের করে নিবে বলেই সিদ্ধান্ত নেয় মেহরাব। এভাবে আর নিজের অনুভূতিকে বেশিদিন লুকাতে পারবে না সে। দিন দিন যেভাবে ডাকাতের মত তার মন, প্রাণ, আত্মা, মস্তিষ্ক সবকিছু গ্রাস করে নিচ্ছে এই মেয়ে, তাতে করে দুদিন পর আর নিজেকে সামলানো যাবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার দুষ্টু পরীকে নিজের সাথে বেঁধে ফেলতে হবে।

এমন সময় আবারও খিলখিল হাসির শব্দে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় মেহরাব। দেখতে পায় তার দুষ্টু প্রেয়সীকে। লাবণ্য আর মিরা কিছু একটা নিয়ে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে আর এই মেয়েটা খিলখিল করে হাসছে। এত হাসি তার কোথা থেকে আসে বুঝতে পারে না মেহরাব। একটু আগেই বকাঝকা করে আসলো বলে নিজের কাছেই খারাপ লাগছিলো ।তার দুষ্টু রানির ছল ছলে দু চোখের জল তার অন্তরে জ্বালা দিচ্ছিলো।
আর সেই দেখো সব ভুলে এখন খিলখিল করছে। মেহেরাব তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখতে পাই মেয়েটা কিছু একটাতে হোঁচট খেয়ে পড়েছে। আঁতকে ওঠে মেহরাব। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে ছুটে যায় সেদিকে।

এদিকে মিরা আর লাবন্যর জোকস শুনে হাসতে হাসতে এগোচ্ছিলো আরশি। মেহরাব স্যারের বকা খেয়ে মন খারাপ করে বসেছিল মেয়েটা। তাই তাকে হাসানোর চেষ্টা করছে দুই বান্ধবী। আরশি তাদের জোকস শুনে হাসতে এতোই ব্যাস্ত যে সামনে একটা ইটের ভাঙ্গা টুকরো পরে আছে সেদিকে খেয়াল করে না। ফলে তাতে পা বেঁধে হোঁচট খেয়ে পড়ে। পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে চোখমুখ খিঁচে বসে পড়ে মেয়েটা। আঙ্গুলের ডগায় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে আরশি।

:- কি হচ্ছে এখানে??

হঠাৎ গম্ভীর আওয়াজে প্রশ্ন টা শুনে পেছনে তাকাই আরশি মিরা এবং লাবণ্য। দেখে মেহেরাব দু হাত প্যান্টের পকেটে গুজে কঠিন মুখে গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতি সন্তর্পনে ঢোক গিলে আরশি। মনে মনে ভাবে

_এই হুকোমুখো টা আবার এখানে কি করছে?? এখনই আবার একরাশ বকাঝকা করবেন। এছাড়া তো আর কোন কাজই পান না তিনি। মেহরাবের আড়ালে ভেংচি কাটে আরশি। এদিকে আঙ্গুলের ব্যথায় কাতর, ওদিকে মেহরাবের বকার ভয়ে সিটিয়ে আছে মেয়েটা।

মেহেরাব কে প্রশ্নবোধক মুখে উত্তরের আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাবণ্য আমতা আমতা করে বলে ,,,,

:-স্যার আসলে তেমন কিছু না। ওই আরশিৎহোঁচট খেয়ে পায়ে একটু ব্যথা পেয়েছে।

মেহরাব আরশির পায়ের দিকে তাকালো। রক্ত দেখেই বুকের মাঝে ধ্বক করে ওঠে। দ্রুত হাঁটু গেড়ে বসে আরশির সামনে। পা টেনে দেখতে যাবে তখনই আরশি দ্রুত পা টেনে নেয় নিজের দিকে!!

মেহরাব ভ্রু কুঁচকে রাগী চোখে তাকায় আরশির দিকে।
আরশি ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বলে,,,

:- সামান্য কেটেছে স্যার। কিছু হবে না। আপনি প্লিজ পায়ে হাত দিবেন না।

মেহরাবের কুঁচকানো ভ্রু সোজা হয়। তবে রাগ কমে না। আরশির মুখের দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,

:- স্টুপিড!! বলেই একপ্রকার থাবা দিয়ে আরশির পা টেনে নেয় নিজের দিকে। কাটা জায়গায় আঙ্গুল বুলিয়ে দেয় আস্তে করে। বেশ অনেকখানি কেটেছে মনে হচ্ছে।
হাত লাগাতেই আহ! করে ওঠে আরশি। সাথে সাথে চোয়াল শক্ত হয় মেহরাবের। ধমক দিয়ে বলে,,,

:- সামান্য কেটেছে তাহলে এরকম রিয়্যাক্ট করছো কেনো?? হাঁটার সময় চোখ কোথায় রেখে হাটো? সারাক্ষণ শুধু দুষ্টুমি আর যত উল্টো পাল্টা কাজ।
দুহাতে জড়িয়ে আরশিকে টেনে তোলে মেহরাব। জিজ্ঞাসা করে,,,

:- হাঁটতে পারবে??

মাথা নাড়ায় আরশি। অর্থাৎ পারবে। মেহরাব লাবন্য আর মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- তোমরা কেউ একজন ওর ব্যাগ টা নাও। আর একজন ওকে ধরো এন্ড ফলো মি!!
আরশি চোখ বড় বড় করে তাকায় মেহরাবের দিকে। মেহরাব সেটা গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অফিস রুমের দিকে পা বাড়ায়। মিরা আরশির ব্যাগ নেয় আর লাবন্য ওকে ধরে আস্তে আস্তে মেহরাবকে অনুসরণ করে।
রুমে আসলে মেহরাব চেয়ার এগিয়ে দেয়। লাবন্য কে ইশারা করে সেখানে বসাতে। আরশি বসতেই মেহরাব ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আরশির সামনে আরেকটা চেয়ার টেনে বসে। তুলাই স্যাভলন লাগিয়ে আস্তে করে কাটা জায়গাটা পরিস্কার করতে থাকে। ব্যাথা, জ্বালায় আরশি উঃ করে উঠলে মেহরাব এক পলক আরশির মুখের দিকে তাকিয়ে আবার কাটা জায়গায় তুলা লাগিয়ে ফুঁ দিতে থাকে।যেন তার সমস্ত ধ্যান জ্ঞান এখন আরশির পায়ের দিকে।
আরশি আজ অবাকের পর আবাক হয়। মেহরাবের এই সামান্য যত্ন ,কেয়ারে যেন আরশির ছোট্ট মনে শীতল বাতাস বইছে। অন্যরকম এক অনুভূতি যেন নাড়া দিয়ে যায় মনে। আকস্মিক হাত পা কাঁপতে থাকে আরশির। মেহরাবের স্পর্শে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। ঢোক গিলে আরশি।
এদিকে মেহরাব আরশির কাঁপাকাঁপি অনুভব করে মনে মনে হাসে।

_________

দুপুর ২ টা বাজে। সুহা স্কুল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় আসে। আজকে নিপা আসেনি। তাই একাই হাঁটতে থাকে বাড়ির পথে। কিছুদুর গিয়েই তার সামনে পড়ে গ্রামের বাজে বখাটে ছেলে রমিজের। ছেলেটা প্রচন্ড বদমাইশ। গ্রামের মেয়েদের কে উত্যাক্ত করা তার অন্যতম প্রধান কাজ।তা ছাড়াও তার নামে কয়েকটা ধর্ষনের, মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদেরকে ভুলিয়ে ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করার মামলা আছে,, গ্রামের উঠতি বয়সের মেয়েরা থেকে শুরু করে যুবতী সবাই এই রমিজ ছেলেটাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। বেশ কয়েক দিন ধরেই সুহার পিছনে লেগেছে ছেলেটা। এতো দিন নিপা সাথে থাকে কিন্তু আজ সুহা একা। সুহা সামনে এগোতে মনে মনে একটু ভয় পায়। রমিজ সুহার দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসে। সুহা রমিজের দিকে না তাকিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারে রমিজ তার পেছনে আসছে। অন্তর কেঁপে ওঠে সুহার। মনে পড়ে সাহিত্য বলেছিলো স্কুলে যাওয়া আসার সময় কোন সমস্যা হলে তাকে জানাতে। সুহা জানে সে যদি বলতো কোন ছেলে তাকে বিরক্ত করে তাহলে তার হাত পা আস্ত রাখতো না সাহিত্য। খামাখা মারামারি হবে বলে পাকনামি করে সুহা কথাটা জানাইনি সাহিত্য কে। জীবনে প্রথম সাহিত্য কে কিছু না জানানোর জন্য আফসোস হচ্ছে সুহার। সামনেই রাস্তা টা নির্জন। এদিকে রমিজ তার পেছন পেছন আসছে। সুহা ভাবে সে দৌড় দিবে। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে দৌড় লাগাতেই যাবে তখনই শা শা করে কয়েকটা গাড়ি যায় রাস্তা দিয়ে। সুহা তাকিয়ে বুঝতে পারে এগুলো এমপি সাহেবের গাড়ি। দু পাশে সাদা গাড়িতে গার্ড আর মাঝের ডার্ক কালারের গাড়িটা সাহিত্যর। সুহা তাকিয়ে থাকে সেদিকে। মনটা ভীষণ করে চাই সাহিত্য তাকে দেখুক। যাকে ভয় পেয়ে সামনে যেতে চাই না তাকেই আজ খুব করে চাইছে সুহা। দেখতে দেখতে গাড়িগুলো বেশ দূরে চলে যায়। কেনো যেনো সুহার চোখে অশ্রু এসে ভিড় করে। মনে মনে অভিমান হয়,,কেনো এমপি সাহেব তাকে দেখলো না। সে তো পথের পাশেই দাড়িয়ে। কিন্তু তার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করে গাড়িগুলো কিছু দুর যেতেই দাঁড়িয়ে যায়।
সুহার যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে আসে। সুহা একরকম দৌড়ে সাহিত্যর গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এদিকে সাহিত্যর মনে হলো সে সুহাকে দেখলো রাস্তায়। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সুহার স্কুল ছুটির সময় এখন। কিন্তু মেয়েটা সুহা হলে একা কেন?? নিপা কে তো সাথে থাকার কথা। ভাবতেই ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে সাহিত্য। গাড়ির দরজা খুলতেই সুহাকে একরকম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে তার। মেয়েটা এমনিতেই তো কাছে ডাকলে আসতেই চাইনা। আর আজ নিজে থেকে শুধু গাড়ি দেখে চিনেই ছুটে আসলো বেপার টা খুব একটা স্বাভাবিক লাগলো না এমপি সাহেবের চতুর মস্তিষ্কে। দু হাতে সুহা কে কাছে টেনে আনে সাহিত্য। দু হাতের তালুতে সুহার মুখটা তুলে জিজ্ঞাসা করে,,,

:- কি হয়েছে সুহাসিনী?? এভাবে দৌড়ে আসলি কেন? আর নিপা কই?? তুই একা কেন?

সুহার ভয় তখনও কাটেনি। কোনমতে কাঁপা গলায় বলে,,

:-নিপা আজকে আসেনি।

সুহার ভয় পাওয়া গলা চিনতে অসুবিধে হয় না সাহিত্যর। কিন্তু এই ভয় পাওয়াটা তার উপস্থিতির কারণে নয়। এই যে প্রথম এতটা আদরে মেয়েটাকে ছুঁয়েছে, সেদিকে মেয়েটার কোন ধ্যান নেই। তার ধ্যান সম্পূর্ণ অন্যদিকে। তার ভয় সম্পূর্ণ অন্য কিছুকে ঘিরে। আর এই ব্যাপারটাই সাহিত্যকে চিন্তিত করে তোলে। সুহা ঘাড় ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকায়। সুহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সাহিত্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে যে ছেলেটা এতক্ষন সুহার পেছনে আসছিল সে ফিরে চলে যাচ্ছে। মুহূর্তেই কিছু আঁচ করে নেয় সাহিত্যর তিক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। রাগে চোয়াল শক্ত হয় সাহিত্যর। তার ধারণা যদি সত্যি হয় তাহলে ছেলেটার সাথে সাথে তার ভিতু সুহাসিনীরও খবর করে ছাড়বে সে। একা একা পাকনামি করে বীর মহিলা সাজার শাস্তি তো সুহা রানীকে পেতেই হবে।
আপাতত কিছু বলে না সাহিত্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাউকে একটা মেসেজ দেয় তারপর সুহার হাত টেনে গাড়িতে বসিয়ে পাশে বসে পড়ে। সুহার হাতে পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে হাতের রুমাল দিয়ে সুহার কপালের ঘাম মুছে দেয় সাহিত্য। সুহার অনেকটা কাছাকাছি বসে আছে সে। কপালে পুরুষালী হাতের স্পর্শ পেয়ে এতক্ষণে সুহার ধ্যান ফেরে। মুহুর্তেই ভয় ছেড়ে লজ্জা ঘিরে ধরে তাকে। ছলকে ছলকে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে মুখে। সাহিত্যর থেকে একটু দূরে সরে বসতে নিলেই সাহিত্য সুপার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আটকে নেয়। শিউরে ওঠে সুহার সমস্ত শরীর। পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে। কোন মতে সাহিত্যর দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখে সাহিত্য কেমন যেন নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন সে এই ধরণীতেই নেই। সুহা শক্ত হয়ে শ্বাস আটকে বসে আছে। আজ এমপি সাহেব কে কেমন অন্যরকম লাগছে তার। এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো তার দিকে? পিটপিট করে তাকালো সে সাহিত্যর মুখের দিকে।
এদিকে সাহিত্যর কোন হুস নেই। সে তার ফুলকুড়ির নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। সুহার ঘর্মাক্ত মুখের লজ্জা রাঙ্গা রুপে মাত হয়ে আছে। সুহার কম্পিত দুটি ঠোঁটের দিকে নজর পড়তেই একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে তার প্রেমিক হৃদয়। গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে যায় সাহিত্যর। তার মন মস্তিষ্ক জুড়ে সুহার অধরসূধা পান করার তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ে। নিভু নিভু হয়ে আসে চোখ। প্রচন্ড গতিতে ধকধক করতে থাকে বুকের বাঁ পাশের ছোট্ট মাংসের অস্তিত্বটা। সাহিত্য সুহার কোমর জড়িয়ে আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে। এক হাতে কোমর জড়িয়ে আরেক হাতে গাল চেপে ধরে আলতো করে।

এদিকে সুহার অবস্থা নাজুক। এমপি সাহেবকে কেমন অচেনা লাগছে আজকে। তার ব্যাবহার কিছুই মাথায় ঢুকছে না সুহার। অন্যরকম অনুভূতিতে ছেয়ে আছে মন। সাহিত্যর এতো নিবিড় স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে তার ছোট্ট দেহটা। সাহিত্যর ঠোঁট সুহার ঠোঁট ছুঁই ছুঁই। আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে যায় সুহার। মনে গেঁথে রয় কিছু প্রশ্ন!! কি করতে চাইছে এমপি সাহেব? এমপি সাহেব কি তাকে চুমু খাবে? কিন্তু কেন? একসাথে এতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। কিন্তু মুহূর্তেই সুহা ঠোঁটে নয় বরং কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে ঝট করে চোখ খুলে তাকায়। দেখে সাহিত্যর চোখ জুড়ে দুষ্টু হাসি। কেমন লজ্জায় কুঁকড়ে যায় মেয়েটা। দ্রুত সাহিত্যর থেকে সরে গিয়ে জানালা ঘেসে বসে। সাহিত্য তখনও মিটমিট করে হাসছে।

চলবে,,,