ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-৭+৮

0
108

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,৭
মৌমো তিতলী

কয়েকদিন হলো সুহা, নিপার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। নিশ্চিন্তে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুই বান্ধবী। আগামী কাল বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। শীতলপুরে প্রতিবছর বিশাল আয়োজনে বৈশাখী মেলা হয়। এবারো মেলা বসেছে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। সুহা আর নিপা ঠিক করেছে কাল মেলায় শাড়ি পরে ঘুরতে যাবে। সেই মতো সবকিছু ঠিক করে রাখলো দুজন।
পরের দিন সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সুহার ফ্রেস হয়ে নিচে আসতেই বিভিন্ন রকমের মজাদার খাবারের ঘ্রাণ নাকে এসে ধাক্কা খায়। প্রতি বছরই এইদিনে তাহিরা বেগম স্বামী সন্তানদের পছন্দের তালিকায় থাকা সব খাবার বানান। সাথে পান্তা ইলিশ তো আছেই। সুহা গুটি গুটি পায়ে কিচেনে মায়ের পিছে এসে দাঁড়ায়। মা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- শুভ নববর্ষ মা!!

তাহিরা বেগম খুন্তি হাতে ঘুরে দাঁড়িয়ে মেয়ের হাসি মুখ দেখে নিজেও হাসে। মাথায় আলগোছে চুমু দিয়ে বলেন,,

:- শুভ নববর্ষ বাচ্চা। সুহান কোথায়? ওঠেনি এখনো?

:-নাহ এখনো ঘুমাচ্ছে। মা আমাকে এক কাপ কফি দাও তো।

:- তুই ডয়িংরুমে গিয়ে বোস আমি দিচ্ছি।

_______

( বিশেষ কারণে সাহিত্যর বন্ধুদের থেকে হৃদয় আর নিরব কে বাদ দেয়া হলো। অরুদ্ধ,তিয়াশ,সিফাত থাকবে শুধু।)

পার্টি অফিসে নিজের চেম্বারে বসে আছে সাহিত্য। সাথে তিন বন্ধু। অরুদ্ধ সাহিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল,,

:- তোর কথা মতো শীতলপুরের মেলায় কিছু শৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ ফোর্স দেয়া হয়েছে। এসব মেলা বা অনুষ্ঠানে এমনিতেও বাইরের ছেলেপেলেরাই বেশি ঝামেলা বাঁধানোর ধান্দায় থাকে। এরিয়ার ছেলেরাও খেয়াল রাখবে বলেছে।

সাহিত্য তখনও চোখ বন্ধ করে চেয়ারে মাথা এলিয়ে বসে আছে।
তিয়াশ কিছু ভেবে বলে,,

:- তোরা খেয়াল করেছিস, আমজাদ তালুকদার কিন্তু অনেক দিন কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনি। একদম ঘাপটি মেরে আছে একরকম। আমার মনে হয় গ্রামের মেলায় কোন না কোন ঝামেলা করার চেষ্টা করবে। জনসাধারণের জীবনে ঝুঁকি থাকতে পারে এসবে।

সিফাত বলে,,

:- যায় বলিস এই আমজাদ তালুকদারের মতো পাকা শয়তান আমি একটাও দেখিনি। শালা*র দেখলেই কেমন খবিশ আর লুইচ্চা লাগে। চরিত্রেরও তো ঠিক নেই । মাঝে মধ্যেই তো নারী ঘটিত ব্যাপারে ভাইরাল হয় শা*লা!!

তিয়াশ আবারো বলে,,
:- একদম ঠিক বলেছিস। ওই আমজাদ বুইড়া ব্যাটা হয়ে গেলো এখনো রাসলিলা করার শখ গেলো না। ওরে কে যে ভোট দিয়ে এমপি বানায়ছিলো গতবার সেটাই ভাবি।

এবার চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে সাহিত্য। ওকে বসতে দেখে অরুদ্ধ সাহিত্যর মুখের দিকে তাকায়। সাহিত্য বলে,,

:- আমজাদ তালুকদারের মতো লোকের অকাদ নেই এই সাহিত্য মির্জার পথে কাঁটা হওয়ার। ওর মতো পঁচা কাটা হয় উপড়ে ফেলে নয়তো পায়ের নিচে কুচাল দেয় এই সোহরাব সাহিত্য মির্জা। তোরা ভাবিস না। মেলায় কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না ওরা।

অরুদ্ধ সাহিত্যর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,,,

:- গুড জব সাহিত্য। এই না হলে শীতলপুরের যোগ্য এমপি।
আমি তো তোর স্যুয়্যাগ দেখে ফিদা হয়ে যাচ্ছি দোস্ত।

সাহিত্য মুখ বেঁকিয়ে বলে,,

:- ছি!!আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো তোর জেন্ডারে কোন সমস্যা আছে এই জন্যই তোর কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। শালা ছেলেদের দেখে ফিদা হোস। একদম আমার দিকে কু*নজর দিবি না। আমি শুধু আমার ফুলকুঁড়ির। একদম বুক’ড।

সাহিত্যর কথা শুনে হতভম্ব অরুদ্ধ। চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় বন্ধুদের দিকে। তিয়াশ,,সিফাত মুখ টিপে হাসছে।
অরুদ্ধ তেড়ে আসে সাহিত্যর দিকে,,,

:- কি বললি তুই? আমার জেন্ডারে সমস্যা আছে? জেন্ডারে তো তোর সমস্যা। শালা তুই সেইজন্য এতদিনেও বলতে পারিসনি সুহা কে। আবার আমাকে বলতে আসিস। আর আমার গার্লফ্রেন্ড নেই তোকে কে বললো?

:- আচ্ছা তাই আছে নাকি? কই আমরা জানতাম না তো!!

অরুদ্ধ আমতা আমতা করে বলে,,
:- হ্যাঁ তো কি হয়েছে। এখন নেই কিন্তু হবে। হতে আর কতক্ষন।

অরুদ্ধর কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে উল্টে পড়ে।

___________

নিপা শাড়ি পরে সুহাদের বাসায় আসে। সুহা ততক্ষণে রেডি হয়ে বসে আছে। দু’জনই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরেছে। চুল গুলো ছেড়ে রেখে গোঁড়ায় বেলি ফুলের গাজরা দিয়ে পেঁচিয়েছে। কানে সাদা লাল পাথরের ঝুমকা,গলায় ছোট্ট লাল জারবেরা ফুলের মতো ডিজাইনের পেটেন্ট, চোখে কাজল,,ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক। সুহার কোমর ছড়ানো কোঁকড়া চুলে সাদা শাড়িতে অপূর্ব দেখাচ্ছে।
নিপাও সেইম সাজে। দু’জনকেই ভারি মিষ্টি দেখাচ্ছে। তাহিরা বেগম দুজনকে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলেন,,,

:-মাশাআল্লাহ। কি সুন্দর দেখাচ্ছে দু’জনকে। বলেই তিনি
দুজনেরই কানের পাশে নজর টিকা লাগিয়ে দেন। বলেন সাবধানে যেতে।
সুহা আর নিপা হেসে ওঠে। তারপর বেরিয়ে আসে মেলার উদ্দেশ্য।
_____

বাহারি সব দোকান বসেছে মেলায়। দু’জন ঠিক করে আগে ঘুরে ঘুরে দেখবেন তারপর কিছু পছন্দ হলে কিনে নিয়ে বাড়ি চলে যাবে। সেই মতো মেলায় দুজন ঘুর ঘুর করে বেড়ায়।
কিন্তু এরই মাঝে ওদের পথ রোধ করে দাঁড়ায় রমিজ।
সাথে কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গরা রয়েছে। সবগুলো কে দেখে মনে হচ্ছে বড়সড় কিছু ঘটানোর মতলবে আছে। মনে মনে আঁতকে ওঠে সুহা আর নিপা। এমনিতেই মেলায় দুজন গার্ডিয়ান ছাড়াই একা এসেছে। এখন এই বখাটে রমিজ। অসহায় লাগে সুহার। কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ না করে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রমিজের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,

:- এভাবে রাস্তা আটকে দাঁড়ালেন কেন? রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। আমরা যাবো।
সুহার কথা শুনে রমিজ গা জ্বালানো হাসি দেয়। সাঙ্গোপাঙ্গদের উদ্দেশ্য করে বলে,,,

:- আরে তোরা দেখ। পাখি আজ ফুলটুসি সেজেছে। আহা দেখে পরাণ খান জুড়াইয়া গেলো। তা ফুলটুসিরা এভাবে একা একা মেলায় ঘুরলে কি মজা পাওয়া যায়?? আমি থাকতে তোমরা একা একা ঘুরবে সেটা কি আমি মেনে নিতে পারি বলো?? এই চল তো তোরা ফুলটুসি দুটোর নিয়ে আমরা একটু ঘোরাঘুরি খেলি।
সুহার গলা শুকিয়ে আসে। এই মেলায় কত মানুষ!! কেউ একটু ফিরেও দেখছে না তাদের দিকে। দুটো মেয়েকে যে কয়েকজন ছেলে মিলে এভাবে হ্যারেস করছে তাতে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। কেই বা যেচে পড়ে ঝামেলায় জড়াতে চায়!!
নিপা আরো ভয়ে সুহার হাত শক্ত করে ধরে আছে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে চারপাশে। সুহা তবুও একটু সাহস করে প্রতিবাদ করতে আসে,,

:- দেখুন আমরা মেলায় একা ঘুরি কি কাউকে সাথে নিয়ে ঘুরি সেটা আমাদের বেপার। পথ ছাড়ুন আমাদের।

:- ওরে পাখি তেজ দেখাচ্ছে!! তোরা দেখ!! সোনা এতো তেজ দেখাও কেন মামনি!! আমরা তো ঘুরতেই চাইলাম। রুম ডেটে তো যেতে চাইনি। বলেই সুহার দিকে ঝুঁকে বলে

:-অবশ্য তুমি যদি চাও তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই!!

সুহার এবার সত্যিই খুব ঘৃণা হলো। কত জঘন্য হলে একটা ছেলে কোন মেয়েকে এরকম খারাপ কথা বলতে পারে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে রমিজের গালে ঠাস করে চড় মেরে বসে সুহা।
চড় মেরেই আঁতকে ওঠে সুহা। রমিজ যে কত জঘন্য ছেলে তারা তো জানে। এই চড়ের প্রতিশোধ নিতে রমিজ যে কি করবে ভেবেই ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যায় সুহা। এদিকে নিপা রিতিমত কাঁপছে ভয়ে‌। এটা সুহা কি করলো!! এর ফল ভালো হবে না। একদম ভালো হবে না।

রমিজ সুহার চড় খেয়ে যেন আক্রোশে ফুঁসছে। ঘুরে দাঁড়িয়ে জঘন্য একটা গালি দিয়ে বলে,,
:- আমাকে থাপ্পড় মারে মা*। এত বড় সাহস। তোর তেজ এবার বের করবো আমি।সাঙ্গোপাঙ্গদের উদ্দেশ্যে থেকে উঠে বলে,,,
:- এই ওইটা কেও ধর তো। এই টা কে আমি দেখছি। এতো বড় সাহস এই রমিজের গালে চড় দেয়। তোর কি অবস্থা করি তাই দেখ!!

বলেই সুহার হাত ধরতে যায় রমিজ। কিন্তু তার আগেই নাকে একটা শক্তপক্ত হাতের ঘুসি খেয়ে উল্টে পড়ে মাটিতে। চমকে ওঠে সুহা। তাকিয়ে দেখতে পায় কালো কাপড়ে আবৃত সাহিত্য কে। মাথায় ক্যাপ আর মুখেও মাস্ক থাকার কারণে কেউ সহজে চিনতে পারবে না। শুধু চোখ দুটোই দেখা যাচ্ছে। আর সেই চোখে যেন আগুনের ফুলকি ঝরে পড়ছে!! সাহিত্যর রাগান্বিত রূপ দেখে আতকে ওঠে সুহা। আশেপাশের কেউই সাহিত্যকে চিনতে পারিনি।কিন্তু এই রুপ সুহা আগেও দেখেছে তাই চিনতে অসুবিধা হয় না। সাহিত্যকে দেখে সুহার যেন শরীরে প্রাণ ফিরে আসে। তবে মনে মনে ভয় ও পায় । এবার সাহিত্য যে কি করবে সেই ভয়ে গুটিয়ে যায় সুহা।

ততক্ষণে রমিজের সাঙ্গপাঙ্গরা সব হাত ধুয়ে কেটে পড়েছে।রমিজ মাটি থেকে উঠে জঘন্য সব গালি দিয়ে তেড়ে আসে সাহিত্যর দিকে। কিন্তু সাহিত্যকে ছোঁয়ার আগেই সিফাত আর তিয়াশ এসে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে রোমিজকে।
সাহিত্য দুজনকে ইশারা করতেই দুজন বুঝতে পারে এখন তাদেরকে কি করতে হবে। রমিজ কে তুলে নিয়ে চলে যায় সিফাত আর তিয়াশ।

সাহিত্য তাকায় তার ভীতু হরিণীর দিকে। চোখ জুড়িয়ে আসে সাহিত্যর। লাল সাদা শাড়িতে একদম ফুটন্ত পদ্ম ফুলের মত লাগছে তার ফুলকুঁড়িকে। কিন্তু কিছু একটা মনে হতেই মুহূর্তে চোখে মুগ্ধতার জায়গায় একরাশ রাগের আভা দেখা দেয়। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে শিউরে ওঠে সুহা।
সাহিত্যের তেড়ে আসে সুহার দিকে।

:- একা একা বীর মহিলা সেজে মেলায় এসেছিস কেন?? এসেছিস যখন আমাকে ইনফর্ম করিস নি কেন ??কোন সাহসে এসেছিস বল? এভাবে সেজেগুজে কাকে দেখাতে এসেছিস?

একরাশ প্রশ্ন ঝরে পড়ে সুহার উপর। এমনিতেই এতক্ষন ভয়ে কাঁটা হয়েছিলো। আরো সাহিত্যর তর্জন গর্জন শুনে আঁখি দুটো ভরে আসে অশ্রুতে। কিছু না বলে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সুহা। চোখ থেকে যেন এখনই ঝড়ে পড়বে অশ্রু।
সেদিকে খেয়াল করে কিছুটা নরম হয় সাহিত্য। আর যাই করুক সে কিছুতেই কঠোর হতে পারে না তার পদ্ম ফুলের কাছে ।
মনে মনে ধন্যবাদ জানাই পাড়ার এক ছোট ভাইকে। আসলে সুহাকে হ্যারেজমেন্ট হতে দেখে সেই সাহিত্যকে ইনফর্ম করেছিলো। সাহিত্য কয়েকজন ছেলেপেলেদের সুহাকে চিনিয়ে দিয়ে ওর দিকে নজর রাখতে বলেছিলো। সেদিন রমিজের ইনফরমেশন পাওয়ার পরেই তার সন্দেহ হয়েছিল, কখনো সুযোগ পেলেই এই ছেলে তার ফুলকুঁড়িকে বিরক্ত করতে পারে। এই জন্যেই এই পদক্ষেপ সাহিত্যর। ছেলেটা ইনফর্ম করেছিল বলেই তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছে সাহিত্য। একটু দেরি হলে কি হতো ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে সাহিত্যর।সুহার দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে সুহার মুখটা তুলে আলতো করে চোখ মুছে দেয়। তারপর পরম আদরে জড়িয়ে নেয় বুকের সাথে। সাহিত্যের এভাবে জড়িয়ে ধরাতে শরীরে ঝংকার দিয়ে ওঠে সুহার। অনুভূতিতে ছেয়ে যায় তার ছোট্ট কেমন দেহ খানা।

এদিকে অরুদ্ধ এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে আছে নিপার দিকে। এই মেয়ের এমন রুপ তো আগে কখনো দেখেনি। নিপা কে দেখতে কি আগে থেকেই এতো সুন্দর নাকি এখনই অরুদ্ধের কাছে সুন্দর মনে হচ্ছে।

অরুদ্ধ কে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয় নিপা।

চলবে,,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,৮
মৌমো তিতলী

নিপা অরুদ্ধকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভাবে এর আবার কি হলো!! এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো আমার দিকে!

এদিকে সুহা একটু শান্ত হলে সাহিত্য বলে,,,

:- চল আমার সাথে।

:- কোথায়?

সুহা প্রশ্ন করে সাহিত্যের দিকে তাকাতেই দেখে সাহিত্য মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। আর কিছু না বলে ঢোক গিলে সাহিত্য কে অনুসরণ করে।

নিপাও সুহা কে অনুসরণ করতে দেখে অরুদ্ধ নিপার হাত টেনে ধরে। অরুদ্ধের স্পর্শে তার দিকে তাকাতেই অরুদ্ধ বলে ওঠে,,,

:- তুমি আবার ওদিকে কোথায় যাচ্ছো!

:- কেন সুহার সাথে…

:- তুমি আমার সাথে এসো। ওদেরকে ওদের মতো‌ থাকতে দাও। তারপর বিড়বিড় করে বলে,কাবাব মে হাড্ডি হতে গেলে সাহিত্য আবার পরে আমাকে মশলার মতো পিষবে।
_________

সাহিত্যে সুহা কে নিয়ে একটা চুড়ির দোকানে আসে। বাহারি রঙের চুড়ি সজ্জিত দোকানে। দোকানে থাকা অল্প বয়সের একটা ছেলে সাহিত্য কে দেখে বলে,,

:- কি রঙের চুড়ি নিবেন স্যার!! সব রঙের চুড়ি আছে এখানে।

সাহিত্য হাত দিয়ে কিছু কাঁচের চুড়ি নেড়েচেড়ে দেখে। তারপর কয়েক মুঠো লাল রঙের চুড়ি দেখিয়ে ওগুলো দিতে বলে।

দোকানি সেগুলো বের করে সাহিত্যের হাতে দেয়। এদিকে সুহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাহিত্যের কান্ড দেখছে। সাহিত্য চুড়ি গুলো নিয়ে সুহার সামনে দাঁড়ায়। তারপর সুহার হাত টেনে নিয়ে সেগুলো খুব আলতো করে যত্নের সাথে পরাতে থাকে।
সুহা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সাহিত্যের দিকে। এমপি সাহেব তার জন্য চুড়ি কিনলো,,আবার সেগুলো এতো যত্ন করে পরিয়েও দিচ্ছে! ভালোলাগার অনুভূতিতে ছেয়ে যায় সুহার মন। সাহিত্য একমনে সুহার হাতে চুড়ি পরাতে ব্যাস্ত। পরানো হয়ে গেলে হাত দুটো উঁচু করে নেড়েচেড়ে দেখে সাহিত্য। চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে মনে উথাল পাতাল ঝড় বয়ে যায় তার প্রেমিক হৃদয়। সুহার হাত দুটোতে আলতো করে চুমু খায় সাহিত্য। কেঁপে ওঠে সুহা। সাহিত্যের হুটহাট স্পর্শে বেকাবু হয় তার ছোট্ট মনটা। লজ্জায় মুখ রক্তিম হয় তার। প্রেয়সীর লজ্জা রাঙ্গা মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে দুনিয়ার সব থেকে সুখি মনে হয় সাহিত্যের। আরো কিছু কেনাকাটা করে সুহা আর নিপা কে বাসায় পৌছে দেয় সাহিত্য। তারপর সাহিত্য আর অরুদ্ধ চলে যায় তাদের গন্তব্যে।

______
ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত এক গোডাউনে এক আবছা আলো অন্ধকার ঘরে চেয়ারের সাথে হাত পা সাথে চোখও বেঁধে রাখা হয়েছে রমিজ কে। হাত, পা ,মুখের কালসিটে দাগ দেখে মনে হচ্ছে ভালোই খাতিরদারি করা হয়েছে তাকে।
রমিজ এখনো বুঝতে পারছে না কারা তাকে এভাবে ধরে এনেছে। মেলায় সুহা দেরকে উত্যাক্ত করাতে কার এতো সমস্যা হলো বুঝতে পারছে না সে। আজ পর্যন্ত কতশত মেয়েদের সর্বনাশ করেছে কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি সে। শত অপরাধ করেও ব্যাবসায়ী বাপের টাকায় সবার মুখ বন্ধ করেছে। আজ পর্যন্ত তার গায়ে হাত তোলার মতো সাহস করেনি কেউ। অথচ আজ ওই সামান্য মেয়েকে ছক করতেই এমন অবস্থা হবে ভাবেনি সে। নাকি কোন পুরনো পাপের হিসাব তুলছে কেউ সেটাও বুঝতে পারছে না। কোথায় তুলে এনেছে এরা সেটাও জানে না। ফোন টাও কেড়ে নিয়েছে। রাগে গরগর করছে রমিজ। এতো মার খেয়েও তেজ কমেনি তার। দুর্বল গলায়ও হিসহিসিয়ে বলে,,,

:- শালা কোন কুত্তার* আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছিস। একবার চোখ খুলে দে। তোদের মুখগুলো একবার দেখি। একবার ছাড়া পায় এখান থেকে,তোদের সবগুলো কে নরকে পাঠানোর বেবস্থা করবো শা*লা..

রমিজ নিজের মতো রাগে ফেটে পড়ছে আর এদিকে সিফাত আর তিয়াশ সামনেই একটা কাঠের তক্তার ওপর বসে বসে বাদাম খাচ্ছে। রমিজের কথা যেন তাদের কানেই ঢোকেনি। রমিজের ঠিক পেছনেই জাঁদরেল সোন্ডা মার্কা বডির ছয়জন সিনা টানটান করে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণ এরাই সিফাত আর তিয়াশের কথা মতো রমিজের খাতিরদারি করেছে। এখন পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আছে,,

এদিকে দেখতে দেখতে তিয়াশের বাদাম শেষ। সিফাত নিতে গিয়ে দেখে ডাব্বা খালি। সিফাত বাদামের ডাব্বা উঁচু করে নেড়েচেড়ে দেখে আর একটাও অবশিষ্ট নেই। ডাব্বাখানা ঠক্ করে রেখে তিয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- তুই একটা বাদাম বেশি খেলি কেন? বলেছিলাম না লাস্টের বাদামের ভেতর দুইটা দানা থাকলে একটা তোর একটা আমার।
:- কই বেশি খেয়েছি? লাস্ট বাদামে একটাই দানা ছিলো!!

:- তাহলে ওই একটায় মাঝখান থেকে ভাগ করে না দিয়ে তুই একা খেলি কেন?

সামনের দুজনের সামান্য বাদাম নিয়ে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করতে দেখে বাকরুদ্ধ রমিজ। চোখ বন্ধ থাকলেও কানে তো শুনতে পারছে। এতক্ষণ সে যে কথাগুলো বলে হুমকি ধামকি দিলো তার কিছুই যেন আছর পড়েনি এদের মধ্যে। অথচ বাদাম নিয়ে ঝগড়া করছে। সামান্য বাদামের মূল্যও দিচ্ছে না এরা তার কথায়। কারা এরা? এরকম হেঁয়ালি করছে দেখে আরো ক্ষেপে যাচ্ছে রমিজ!! জঘন্য সব গালি দিতে থাকে সে।

এদিকে রমিজের গালাগালিতে ঝগড়াই ডিসটার্ব হয় তিয়াশ আর সিফাতের। বিরক্ত হয়ে তিয়াশ বডিবিল্ডার টাইপের একজন কে বলে,,,

:- এই কেউ এই ব্যাটার মুখটা বন্ধ কর তো। ভেড়ার মতো ম্যা ম্যা করছে তখন থেকে।

লোকটা সাথে সাথে একটা কাপড় দিয়ে রমিজের মুখটাও বেঁধে দিলো। রমিজ ছাড়া পেতে মুখ দিয়ে উমম উমমম শব্দ করছে। হাত পা মুচড়া মুচড়ি করে রমিজ। কিন্তু কোন লাভ হয়না। অগত্যা স্থির হয়ে যায়। মনের মাঝে মৃত্যু ভয় হানা দিতে থাকে তার। কারা এরা? কি চায় এরা? এতক্ষণে এটা সে বুঝতে পেরেছে যারা এখানে উপস্থিত এরা মুল হোতা নয়। এদের ওপরেও কেউ একজন আছে যে যার নির্দেশে এরা তার এই হাল করেছে। কে সে?? তখনকার মেলায় দেখা কালো কাপড়ে আবৃত লোকটা নয়তো?? হলেও কে সে?? কেন তাকে তুলে এনে বেঁধে রেখে মারছে!!

রমিজের ভাবনার মাঝেই দরজার দিক থেকে ঝনঝন শব্দ আসে। কেউ একজন এসেছে। তার ভারি পায়ের আওয়াজে কান সজাগ হয় রমিজের।

এদিকে তিয়াশ, সিফাত সাহিত্য আর অরুদ্ধ কে আস্তে দেখে নিজেদের বাদামওয়ালা ঝগড়ার ইতি টানতে বাধ্য হয়। সাহিত্য কে দেখে তিয়াশ বলে,,,

:- এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো ?? বেটা সেই কখন থেকে গলা ফাটাচ্ছে, কে তাকে ধরে এনেছে? কেন ধরে রেখেছে?
বলি এবার তোর চাঁদ মুখখানা ওকে দেখিয়ে দে!! ওর কলিজাটা ঠান্ডা হোক!!

অরুদ্ধ দাঁত কেলিয়ে বলে,,,

:- ওর কলিজা ঠান্ডা হওয়ার আগেই না আবার ওর কলিজার টেনে বের করে আনে সেটাই দেখার বিষয়!!

এদিকে রমিজের হাত-পা কাঁপতে থাকে। নিশ্চয়ই এদের বস এসেছে। যার কথাই তাকে তুলে আনা হয়েছে। কে হতে পারে সে? এসব ভেবে আর এদের কথোপকথন শুনে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেয় রমিজের।

সাহিত্যের ইশারা পেয়ে একজন গিয়ে রমিজের মুখ আর চোখের বাধন খুলে দেয়। পিটপিট করে তাকায় রমিজ। ভালোভাবে চোখ খুলেই দেখতে পায় মেলায় দেখা সেই কালো কাপড়ে আবৃত লোকটা রক্ত চক্ষু নিয়ে তার সামনেই বসে আছে। তার হাতে একটা গান।
ভয়ে ঢুক গিলে রমিজ। কোন মতে কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করে,,,

:- কে তুই ??আমাকে কেন এখানে বেঁধে রেখেছিস ?সাহস থাকে তো মুখ দেখা নয়….

রমিজের কথা সম্পূর্ণ হতে পারে না ,তার আগেই শক্ত হাতের চড় খেয়ে মাথা ঘুরে ওঠে রমিজের। চড়ের দাপটে চক্ষু বন্ধ হয় তার।

নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই আতঙ্কে চক্ষু বড় বড় হয় রমিজের। মুখ থেকে অসফুট স্বরে ভেসে আসে,,,

:- সোহরাব মির্জা….. এমপি সোহরাব মির্জা,,

অরুদ্ধ রমিজের আতঙ্ক ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,,,

:-কেয়া হে রে?? এমপি সাহেবের চাঁদমুখ খানা দেখে বুঝি পছন্দ হয়নি!! এই যে শুনলাম কখন থেকে গলা ফাটাচ্ছিস,কে তোকে তুলে এনেছে সে যেন তোর সামনে আসে।দেখ এবার!! কলিজা,, কিডনি,লিভার,ফেবড়া সব দিয়ে মনপ্রাণ ঢেলে দেখ!!

রমিজ অতি সন্তর্পনে ঢোক গিলে বলে,,,

:- আমাকে কেন ধরে রেখেছেন এখানে? কি করেছি আমি?

সাহিত্য রমিজের প্রশ্ন শুনে রাগে হিসহিসিয়ে বলে,,

:- এখনো বুঝতে পারিসনি কেনো তোকে তুলে এনে জামাই আদর করা হচ্ছে?? তোর কলিজা কত বড়? তোর সাহস হয় কি করে, আমার ফুল কুড়ির দিকে হাত বাড়ানোর??
যেই হাত দিয়ে তুই ওকে স্পর্শ করার চেষ্টা করছিস সেই হাত আমি ভেঙে গুড়িয়ে দেবো ।যে চোখ দিয়ে তুই ওকে কুনজর দিয়েছিস, সেই চোখ আমি উপড়ে নেবো। যেই জিব্বা দিয়ে তুই ওকে কটু কথা বলেছিস, সেই জিব্বা আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো‌ বাস্টা*

সাহিত্যর এক একটা হুমকিতে কলিজা কেঁপে ওঠে রমিজের।
আবারো মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বের হয়,,

:-সুহাসি,,,

নামটা সম্পূর্ণ করতে পারে না রমিজ!! তার আগেই আবারো সাহিত্যের দানবীয় হাতের চড় খেয়ে মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে তার।

:- ডোন্ড ডেয়ার ইউ!! আমার পদ্ম ফুলের নাম তোর মতো নোংরা মুখে উচ্চারণ করার সাহস করবি না। তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো আমি।
খুব শখ না,,, মেয়েদের কে উত্যাক্ত করার। মেয়েদেরকে তোর খেলনা মনে হয়? মেয়েদের তোর ভোগের বস্তু মনে হয়? মেয়েদেরকে ব্যবহার করে তাদের ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা তোর কাছে খেলা মনে হয়?? তোদের মতো সমাজের কিট দের বেঁচে থাকার যোগ্যতা নেই। তোদের জায়গা এই পৃথিবীতে নয়। এমনিতেই তোর পাপের লিস্ট কম নয়,, তার ওপর আবার আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়ে সেই পাপের ঘড়া তুই পূর্ণ করে ফেলেছিস।তোর মৃত্যু নিশ্চিত।

বলেই হাতের গান দিয়ে রমিজের কপাল বরাবর শুট করে দেয় সাহিত্য।তারপর তার লোকেদের নির্দেশ দেয় ,,,

:- এর হাত কেটে,চোখ উপড়ে, জিভ কেটে খালের পাড়ে ফেলে দিয়ে আসবে। আর এখানে যেন কোন চিহ্ন না থাকে।

তারপর সাহিত্য,অরুদ্ধ,তিয়াশ,সিফাত সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।

চলবে,,,