ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-৯+১০

0
101

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,৯
মৌমো তিতলী

ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শেষ করে নিজের অফিস রুমের দিকে যাচ্ছিলো মেহেরাব। রুমে ঢোকার আগেই করিডোর দিয়ে প্রিন্সিপাল কে হেঁটে আসতে দেখে দাঁড়াই মেহেরাব। প্রিন্সিপালের সাথে ক্রীড়া বিভাগের অধ্যাপক রজতাভু বাবুও আছেন। প্রিন্সিপাল স্যার মেহেরাবকে দেখে উচ্ছ্বাসিত ভঙ্গিতে এগিয়ে আসেন। হাসিমুখে বলেন,,

:- ওহ মেহরাব, তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম। ভালো হলো এখানে দেখা হয়ে গেলো ।

মেহরাব সৌজন্য হাসি দিয়ে বললো ,,,

:-জ্বী স্যার!! কি ব্যাপারে? কোন ইম্পর্টেন্ট দরকার আছে নাকি?
প্রিন্সিপাল স্যার বলেন,,

:- মেহেরাব তুমি তো জানো দ্বিতীয় বর্ষের এইচএসসি পরীক্ষা সন্নিকটে। আগামী শুক্রবার তাদের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।হাতে মাত্র ৬ দিন। জানো তো একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলে কত রকমের কত দিক সামলাতে হয়। তাই আমি ভাবছি দায়িত্বটা তোমার ওপরেই দেয়া যাক। রজতাভুর সাথে তুমিও এই দায়িত্বটা নাও। তুমি সাথে থাকলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারবো। তাছাড়া আজ কালকের অনুষ্ঠানের ব্যাপার, এসব তোমরা ইয়াং ম্যানরা ভালো বুঝবে।

মেহরাব হেসে বলে,,

:- সে না হয় করবো !কিন্তু…

প্রিন্সিপাল স্যার বলেন,,

:- আহা কোন কিন্তু নয়!! এই তুমি রাজি হয়ে গেলে, ব্যস আমি চিন্তামুক্ত। তাহলে তুমি রজতাভু স্যারের সাথে কথা বলে নাও। ঠিক করে নাও কখন কি করবে। তাহলে আমি আসি। বলেই প্রস্থান করলেন প্রিন্সিপাল স্যার।

রজতাভু স্যার মেহরাবের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন ,,

:-যাই বলো মেহরাব!! প্রিন্সিপাল স্যার কিন্তু তোমাকে অগাধ বিশ্বাস করেন ।আমরা প্রত্যেকটা টিচারই তোমাকে নিয়ে গর্বিত। টিচাররা কিন্তু সকলেই জানেন তোমার উপরে দায়িত্ব দিয়ে সকলেই নিশ্চিন্ত হতে পারবে।

মেহরাব সৌজন্যে হেসে বলল,,

:- ধন্যবাদ স্যার আমার উপরে এতটা ভরসা করার জন্য।

রজতাভু স্যার বলেন ,,,

:-চলো চলো সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্টদের কিছু নোটিশ তো দিতে হবে!! তারপর দুজনেই সেকেন্ড ইয়ারের ডিপার্টমেন্টের দিকে পা বাড়ায়।

____
সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস চলছে।
তারমধ্যেই রজতাভু স্যার কে রুমে প্রবেশ করতে দেখে স্টুডেন্টরা উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। পেছনেই প্রবেশ করে মেহরাব।
মেহরাবকে দেখে ক্লাসের মেয়েরা নিজেদের ড্রেস সাজগোজ ঠিক করতে শুরু করে। সকলের মুখে লাজুক লাজুক হাসি। কিন্তু মেহরাব সেদিকে বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্টেড বলে মনে হলো না।
তার চোখ বিশেষ কাউকে খুঁজছে। কয়েকটা বেঞ্চ পরেই দেখা মিললো কাঙ্খিত রমণীর। কলেজ ড্রেসে মাথায় উঁচু করে ঝুঁটি বাধা আরশির। ঘর্মাক্ত মুখে ক্লান্তির ছাপ। নাকের বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। ক্লান্তিকর মুখেও বড্ড মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে। মেহরাব ভাবে,,, ইসসস মেয়েটা এত আদুরে কেনো ? দেখলেই ইচ্ছে করে ঠেসে ধরে টপাটপ দুই একটা চুমু খেয়ে নিই। বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে সমস্ত ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর করে দিই। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন, এরপরে এই মেয়েটাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নেবে মেহরাব। একবার মেয়েটাকে নিজের করতে পারলেই এতদিনের জমানো ভালোবাসার বর্ষণে তাকে ভেজাতে একচুলও ছাড় দেবে না মেহরাব। সারাক্ষণ মেয়েটাতে মেতে থাকবে সে। ভেতরে ভেতরে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় মেহরাবের। প্রিয়সীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি বেশিক্ষণ টিকিয়ে রাখতে পারে না মেহরাব। ব্যাপারটা কারো চোখে পড়লে ভালো হবে না।
স্বাভাবিকভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে এক পলকেই প্রিয়সির আদ্যপ্রান্ত অফজার্ভ করে ফেলে। অথচ তার গম্ভীর মুখ দেখে কারো বোঝার উপায় নেই তার মধ্যে কি চলছে। কেউ জানতেও পারলো না ভেতরে ভেতরে তার প্রিয়সী কে নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা একে ফেলেছে সে।

রজতাভু স্যার মেহরাবকে ইশারা করে কথা বলার জন্য। মেহেরাব গলা ঝেড়ে স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বলে,,

:- dear student’s তোমরা সকলেই জানো আর কয়েকদিন পরেই তোমাদের এইচএসসি বোর্ড এক্সাম শুরু হবে। তার আগে আগামী শুক্রবারে তোমাদের বিদায়ী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বক্তব্য ও অন্যন্য এক্টিভিটিস দ্বারা দিনটি আয়োজন করা হয়েছে। চাইলে তোমরা তোমাদের ট্যালেন্ট রিপ্রেজেন্ট করতে পারো।যেমন নাচ গান আবৃত্তি ইত্যাদি।
তোমরা কে কিসে পার্টিসিপেট করতে চাও সেটার একটা লিস্ট করে আমাকে জানাবে।
তারপর ছেলেদের দিকে তাকিয়ে সামনে থেকে আকাশ নামের একটা ছেলেকে ডেকে বলে,,

:- ছেলেদের নামের তালিকার দায়িত্ব আকাশের থাকবে।
তুমি ছেলেদের মধ্যে কে কিসে নাম দিতে চাই তার একটা লিস্ট করে ছুটির আগে আমার রুমে জমা দিয়ে আসবে।

তারপর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:-মিস আরশি!!

এতক্ষণ আরশি মেহরাব কে দেখছিলো। মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলো। লোকটাকে দেখলেই কেমন একটা অনুভুতি হয়। ঠিক বুঝতে পারে না আরশি।
আচমকা নিজের নাম শুনে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়াই আরশি।

মেহরাব বলে,,

:- মেয়েদের দায়িত্ব থাকলো মিস আরশির। ছুটির আগে অবশ্যই লিস্ট জমা দিবে। দ্যাটস ক্লিয়ার??

সব স্টুডেন্টরা বলে,,

:- জ্বী স্যার!!

আর কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে আসে মেহরাব আর রজতাভু স্যার। বের হওয়ার সময় মেহরাবের ঠোঁটে খুবই সূক্ষ্ম একটা হাসি ফুটে ওঠে। যা কারোরই নজরে পড়লো না।

______

ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছিলো সুহা। তখনই মোতালেব হোসেন বাসায় আসেন। মেয়েকে টিভি দেখতে দেখে এগিয়ে এসে বসেন মেয়ের পাশে। একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু এঁকে বলেন,,

:- আমার আম্মা টা টিভি দেখছে, আমায় আব্বা টা কোথায়?

সুহা বাবার বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে বলে,,

:- সে কি বাড়ি থাকা ছেলে নাকি বাবা? দেখো গিয়ে বন্ধুদের সাথে কোথায় খেলছে। মা একবার বকেছে তবুও শোনেনি।

মোতালেব হোসেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,,

:- আর তোমার মা কোথায়?

:- মা তো নিপাদের বাসায় গেছে। নিপার আম্মুর সঙ্গে গল্প করতে।

মোতালেব হোসেন পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সুহার দিকে এগিয়ে দেয়। বলে,,,

:- এটা তোমার জন্য আম্মা। দেখো পছন্দ হয় কিনা।

সুহা বাবার থেকে উপহার পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বক্সটা খুলে দেখে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন। বাবা বলেছিলো এসএসসি পরীক্ষার পর ফোন কিনে দিবেন।
ফোন পেয়ে সুহা ভিষণ খুশি।

মেয়ের খুশি দেখে শান্তি পান মোতালেব হোসেন। মেয়ের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,,

:- আম্মা ফোন পেয়ে সারাদিন কিন্তু ফোন চালালে হবে না। পড়াশুনায় ঠিকঠাক মনোযোগি থাকতে হবে। নতুন সিম কার্ডও দেয়া আছে।
সুহা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,

:- ওক্কে বাবা!! বলেই দৌড়ে নিজের রুমে আসে সুহা।

রুমে এসে আরাম করে বিছানায় বসে। তারপর বাসার ওয়াইফাই কানেক্ট করে আগে ফেসবুক ইন্সটল করে। নিজের নামে একটা আইডি খোলে। আইডি খোলার পর সবার আগে সাহিত্যের নামটাই মনে পড়ে সুহার। ঝটপট সাহিত্যের নাম সার্চ করে সে। হ্যাঁ!! সবার ওপরেই নাম টা জ্বলজ্বল করছে “সোহরাব সাহিত্য মির্জা”
এলাকার এমপি বলে কথা! এসব পাবলিক ফিগারদের নাম খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
সুহা আগে পিছে না ভেবে আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয়। তারপর সাহিত্যের আইডিতে ঢোকে। কিছু ছবি সেভ করে নেই। তারপর আইডিটা ভালো মতো ঘেঁটে ঘেঁটে দেখে। কিন্তু সাহিত্যের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেখে মুখ থমথমে হয়ে যায় সুহার। সেখানে জ্বলজ্বল করছে লেখা টা “committed”

এমপি সাহেবের তারমানে গার্লফ্রেন্ড আছে!! কে সে? হঠাৎই নতুন ফোন পাওয়ার আনন্দে যেন ভাটা পড়লো সুহার। বুকের ভেতরে কেমন একটা চিনচিনে ব্যথা করছে। চোখ ফেটে জল আসতে চাইছে। গলা আটকে আসে কান্নায়। ফোনটা বিছানায় অদুরে ছুঁড়ে ফেলে বালিস আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ওঠে সুহা।

_________

সারাদিন পার্টি অফিসের কাজ, কয়েক জায়গায় রাস্তা উন্নয়নের কাজ দেখাশোনা করে এসে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছে সাহিত্য । ওয়াশরুম থেকে গোসল করে মাত্রই বের হলো। খালি গায়ে একটা টাওয়েল পেঁচিয়ে চুলে ঝাড়া দিয়ে পানি ঝরাতে থাকে। এমন সময় ফোনে টুং করে একটা নোটিফিকেশন আসে। বিছানার ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়েই চোখ ছোট ছোট হয় সাহিত্যের। “সুহাসিনী সুহা” নামের আইডি থেকে রেকুয়েস্ট এসেছে। প্রোফাইলে পুকুর পাড়ে পদ্মফুল হাতে বসে থাকা একটা মেয়ের ছবি। মুখের সামনে একরাশ কোঁকড়া চুলে মুখটা ঢাকা। একপলকেই চিনতে পারে সাহিত্য। এটা তার ফুলকুঁড়ি। মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর ভাবে!!কিন্তু কার ফোন থেকে সুহাসিনী আইডি খুলেছে!!

সাহিত্য সাথে সাথে মেসেজ পাঠাই…

_কার ফোনে আইডি খুলেছিস?

সুহাসিনী বালিশে মুখ গুজে ফুপাচ্ছিলো। এমন সময় মেসেজের শব্দ শুনে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সাহিত্য মেসেজ করেছে। সুহার আরো বেশি কান্না আসে। মেসেজের উত্তর দেয় না সে।

এদিকে সাহিত্য দেখে সুহা মেসেজটা সিন করেছে কিন্তু অ্যানসার করছে না। সাহিত্যর রাগ হয়। আবারো মেসেজ পাঠায়….

_সিন করে উত্তর দিচ্ছিস না কেনো ? ফোন নাম্বার দে!

সুহা এবারও সিন করে রেখে দেয়। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে সাহিত্যের ।আবারো মেসেজ পাঠায়,,

_ আর একবার যদি মেসেজ পাঠানো লাগে সুহা, তাহলে তোর অবস্থার জন্য তুই নিজেই দায়ী থাকবি।ফোন নাম্বার দে।

সাহিত্যের মুখে সুহা নাম শুনে বুঝতে পারে সাহিত্য ভীষণ রেগে আছে। সাহিত্য প্রচন্ড রেগে থাকলেই সাধারণত সুহা কে সুহাসিনী না ডেকে সুহা বলে ডাকে। ঢোক গেলে সুহা। আর কিছু না বলে ফোন নাম্বার সেন্ড করে দেয়।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফোন বেজে ওঠে। সুহা ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকে। এদিকে সাহিত্য বলে,,,

:- কার ফোন থেকে আইডি খুলেছিস?

গলাটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সুহা। আমতা আমতা করে বলে ,,,

:-আমার ফোন! বাবা আজকেই কিনে দিয়েছে।

সুহার গলা শুনেই কপাল কুঁচকে আসে সাহিত্যর। মুহূর্তেই উদ্বিগ্ন হয় ছেলেটা,,,

:- তোর গলাটা এমন সন আছে কেন সুহাসিনী? কি হয়েছে তোর ?তুই কি কাঁদছিস?

সাহিত্যের প্রশ্ন শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা সুহা। কান্না গুলো আরো ছুটে বেরিয়ে আসে। মুহূর্তেই আরো ফুপিয়ে ওঠে সুহা।

বিচলিত হয় সাহিত্যর প্রেমিক হৃদয়। কি হলো তার পদ্ম ফুলের!! অস্থির হয় বুকের ভেতরটা।

:- কাঁদছিস কেন আদর? কি হয়েছে আমাকে বলবি তো! না বললে বুঝবো কি করে? আমাকে বল সুহাসিনী!!

সুহা তখনও নাক টেনে কাঁদতে থাকে। সাহিত্য এবার ধমকে ওঠে,,,
:-কান্না থামা সুহা !!এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবি না। কারণ বলতে পারবি না যখন কাঁদবি না একদম!
সারা দিনের দৌড়ঝাপে ক্লান্ত হয়ে বাসায় এসেছি। তুই কিন্তু আমাকে রাগাচ্ছিস সুহা।

এবার সুহার বেশ অভিমান হয়। ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলে,,,

:- হ্যাঁ সারাদিন কাজ করেছেন না ছাই!! নিশ্চয়ই নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

সুহার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে সাহিত্য,,,

:-হোয়াট??? গার্লফ্রেন্ড মানে?? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি? এসব কি বলছিস তুই সুহাসিনী?

সুহা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,

:-কেন আপনি অস্বীকার করছেন আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই?

:-তুই কোন প্রমাণে বলছিস আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?

:-কেন ফেসবুকে তো আপনি দিয়ে রেখেছেন, আপনি কারো সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ!! গার্লফ্রেন্ড না থাকলে কাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আপনি??

এবার আসল ঘটনা বুঝতে পারে সাহিত্য। তার মানে সুহা ভালো মতোই তার আইডি ঘটেছে। নিঃশব্দ হাসিতে ফেটে পড়ে সাহিত্য। তার পদ্মফুল !!তার বোকা ফুলকুঁড়ি। মেয়েটা এত সরল কি করে হতে পারে ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস “কমিটেড” দেখেই কেঁদে কেটে কেটে এক সার করছে। অথচ নিজেই জানে না এই অনুভূতির নাম। তবে সাহিত্যের মনে ভীষণ সুখ সুখ লাগে। তার বোকারানী তার সুহাসিনী নিজের অজান্তেই সাহিত্যর ভালোবাসার রাজ্যে গা ভাসিয়েছে। তবে সুহাসিনীকে একটু জ্বালাতে বলে,,,

:-ও আচ্ছা এই ব্যাপার!! কিন্তু সে না হয় বুঝলাম আমার গার্লফ্রেন্ড আছে, কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ড আছে জেনে তুই কেঁদে কেটে সাগর বানাচ্ছিস কেন??

এ পর্যায়ে থতমত খাই সুহা!! তাইতো এমপি সাহেবের গার্লফ্রেন্ড আছে, তাতে সুহাসিনী কেন কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে!!তার কেন কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে। যেন সুহার মন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সাহিত্যের কোন গার্লফ্রেন্ড আছে।

:- কিরে চুপ করে আছিস কেন? বল?

সুহা কিছু না বলে খট করে ফোন কেটে দিল। এদিকে সাহিত্য টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ঠোঁটে বিস্তৃত তৃপ্তির হাসি। অস্ফুট স্বরে বলে আমার জান, আমার আদর,তোর কাছেই আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ!!

চলবে,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১০
মৌমো তিতলী

শীতলপুরের আনাচে কানাচে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পূর্ব পাড়ার মাছ ব্যাবসায়ী মালেকের ছেলে রমিজ কে কেউ গুলি করার পর কুঁপিয়ে হত্যা করেছে। শহরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত খালের পাড়ে রমিজের লাশ পাওয়া গেছে আজ সকালে।গ্রামের আনাচে কানাচে ভেসে বেড়াচ্ছে রমিজদ্দিনের খুনের খবর।
সকাল থেকে স্থানীয় টিভি নিউজ চ্যানেল গুলোতে খবরের হেড লাইন হিসেবে একটাই প্রচারিত হচ্ছে। রমিজের খুনের ঘটনা।

সুহা সকালে ঘুম থেকে উঠার আগেই নিপা এসে সুহাকে ঢেকে তুলে এই খবরটা দিয়েছে। সুহা আর নিপা তো বুঝতেই পারছে না রমিজ কে খুন কে করলো। গত পরশু মেলায় ওদেরকে ডিসটার্ব করার পর যে এমপি সাহেবের বন্ধুরা ওকে মারধর করলো তারপর আর রমিজেকে আর কোথাও দেখা যায়নি। আর আজ রমিজের লাশ পড়ে আছে খালের পাড়ে । সুহার বেশ খটকা লাগে বেপার টাই। কিন্তু ঠিক জোরালো ভাবে বিশ্বাস করতে পারলো না। ক্ষণিকের জন্য মাথায় আসা সন্দেহ নিমিষেই দূর করলো মাথা থেকে। তা রমিজ কম তো পাপ করেনি। ওকে সুযোগ পেলে মেরে ফেলার লোকের অভাব নেই। কিন্তু তবুও একটা বিষয়ে খটকা থেকেই যায় তা হলো পুলিশের মধ্যে রমিজের খুনি কে ধরার কোন তাড়া বোঝা যাচ্ছে না। তাদের দেখে মনে হচ্ছে কেস টা যেন গুরুত্বপূর্ণই মনে করছেন না তারা। সকালে পুলিশ এসে পরিস্থিতি দেখে কয়েকজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এই যেমন কে আগে দেখেছীলো, কতক্ষণ আগে দেখেছিলো, আসেপাশে সন্দেহজনক কিছু দেখেছিলো কিনা। এরকম দুই একটা প্রশ্ন করে লাশ উঠিয়ে নিয়ে চলে গেছে। খুনি কে সেটা জানার কোন আগ্রহই যেন তাদের ভিতরে নেই। এই একটা বিষয় কেমন যেন লাগলো সুহার কাছে। অবশ্য গ্রামের কারোরই এটা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই বরঞ্চ সবাই যেন মনে মনে একটু খুশি হয়েছে রমিজ নামের জঞ্জাল দূর হওয়াতে। গ্রামের প্রায় সব যুবতী মেয়েরাই একরকম আতঙ্কে থাকতো এই রমিজের জন্য। তার কুকীর্তির কথা গ্রামের সকলেরই জানা। বেশ কয়েকদিন যেতেই রমিজের খুনের চাঞ্চল্যতা কমে আসে। আর দুদিন পর একেবারেই পরিস্থিতি ঠান্ডা। সকলে একরকম ভুলেই গেল রমিজ নামের কোন বখাটে ছেলে গ্রামে ছিলো। আর তার খুন হয়েছে।

_______

আগামী কাল শুক্রবার। আরশিদের কলেজে তাদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। মিরা আর লাবন্য আরশি কে ফোন করে জানায় তারা শাড়ি পরবে। আরশিও রাজি হয়। আরশি শাড়ি পরতে পারে। মায়ের অনেক সুন্দর সুন্দর শাড়ি আছে সেখান থেকেই একটা পরবে বলে ঠিক করে। মিরা নাচে নাম দিয়েছে। আরশি আর লাবন্য গানে। আরশির অবশ্য ইচ্ছে ছিলো না কোন পারফর্ম করার। কিন্তু মিরা আর লাবন্যর জোর করাতে নাম দিয়েছে। এমনিতেই আরশি গানটা খুব ভালো গায়। গ্রুপে ভিডিও কলে মিরা আর লাবন্যর সাথে কথা বলে ঠিক করে তিন জনই শাড়ি পরবে। শাড়ির রং হবে নীল।
কথা বলে আরশি মায়ের কাছে ছোটে শাড়ি সিলেক্ট করতে।
আলমারি ঘেঁটে তিনটে নীল শাড়ি পায়। কিন্তু কোনটা ভালো লাগবে এটা নিয়ে কনফিউজড আরশি। মা কে টেনে আনে কোনটা পরবে সিলেক্ট করে দিতে। মেয়ের কান্ডে হাসে আরশির মা। তিনি একটা সোনালী পাড়ের নীল শাড়ি আরশির হাতে দেন। বলে এটাই পরিস। এটাই ভালো লাগবে। আরশিও খুশি মনে শাড়িটা নিজের রুমে এনে রাখে।
_____

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে বাড়ির সামনে ফুল-ফলের বাগান টায় একটু হাঁটাহাঁটি করা অভ্যেস আরশির। আজও সেটাই করতে আসে সে। এখন প্রায় সকাল ৭টার কাছাকাছি। ৮ টায় রেডি হয়ে মিরা আর লাবন্য আসবে আরশিদের বাড়ি। তারপর ৯টার দিকে বের হবে। ১০ টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। সব প্ল্যান করে রেখেছে তারা। এমন সময় একজন অপরিচিত লোককে গেটের সামনে দারোয়ানের সাথে কথা বলতে দেখে সেদিকে এগিয়ে যায় আরশি।
আরশিদের বাড়ি যশোরে শহরের ভেতরে।শীতলপুর যশোরের শহরেরই শহরতলী একটা গ্রাম। (যদিও আমাদের যশোরে শীতলপুর নামে কোন গ্রাম আছে কিনা আমি কইতারিনা। তবে নামটা আগেই দিয়ে ফেলেছি বলে লাগিয়ে দিলাম আর কি 😁)

আরশি এগিয়ে গিয়ে দেখে লোকটা একজন কুরিয়ার সার্ভিসের লোক। তিনি ভেতরে আসার জন্য অনুমতি চাইছে কিন্তু দারোয়ান চাচা ঢুকতে না দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
আরশি এগিয়ে গিয়ে দারোয়ানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করে,,

:- কি হয়েছে শরীফ চাচা? কে এই লোকটা?

দারোয়ান আরশিকে বলে,,,

:- কইতাছে কুরিয়ারের লোক আম্মা। আপনের নামে নাকি ফারসেল আছে।

আরশি বুঝতে পারে তার নামে কোন পার্সেল এসেছে। কিন্তু সে তো কিছু অর্ডার করেনি। কুরিয়ার সার্ভিসের লোকটা আর এগিয়ে এসে বলে,,

:- ম্যাম আপনার নাম আরশি রহমান?

:- জ্বী!! কিন্তু…

:-ম্যাম আপনার নামেই পার্সেল এটা। আরশির দিকে একটা খাতার মতো কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,

:-প্লিজ ম্যাম আপনি পার্সেলটা একসেপ্ট করুন আর এখানে একটা সিগনেচার করে দিন ।আমার অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। আরো কয়েক জায়গায় ডেলিভারি দিতে হবে।

আর সে বুঝতে পারে লোকটা তাড়াই আছে।সে তাড়াতাড়ি সিগনেচার করে বক্সটা হাতে নেয়। বক্সটা বেশি হালকা ও নয় আবার ভারী ও নয়। কি আছে কে জানে!!
লোকটা চলে যাচ্ছে দেখে আরশি আবার ডেকে জিজ্ঞাসা করে ,,,

:-এক্সকিউজ মি!! পে…

আরশির কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটা জবাব দেয়,,

:- পে হয়ে গেছে ম্যাম। বলেই লোকটা বাইক নিয়ে চলে যায়।

আরশি বক্সটা হাতে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে।বুঝতে পারছে না কে তার নামে পার্সেলটা পাঠাতে পারে। আর ভেতরে আছেই বা কি!!

আরশি সাবধানে কেচি দিয়ে কেটে বক্সটা খোলে। বক্সটা খুলতেই আরশির মুখ হাঁ হয়ে যায়। ভেতরে খুব সুন্দর একটা কালো রংয়ের কাতান শাড়ি। সাথে কিছু জুয়েলারি আর বেলি ফুলের একটা গাজরাও আছে। গাজরাটা একদম টাটকা। দেখে মনে হচ্ছে সকালেই তৈরি করা।বিষ্ময়ে আরশি বাকরুদ্ধ ।এরকম একটা পার্সেল তার জন্য কে পাঠাতে পারে। শাড়িটা নেড়েচেড়ে দেখে আসি খুবই সুন্দর শাড়িটা। শাড়িটার একটা ভাঁজ খুলতেই ভেতর থেকে একটা চিরকুট বিছানার উপরে পড়ে। আরশি চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে দেখে, সেখানে লেখা,,

“আমার শুভ্র প্রেয়সী! তোমার শুভ্র কোমল শরীরে কালো রংটা বড্ডম মোহনীয়! তাই তোমার জন্য এই ছোট্ট উপহার!! আজকের অনুষ্ঠানে শাড়িটা পরে এসো। তোমার অপেক্ষায় থাকবে তোমার প্রেমে মাতোয়ারা এক শুভ্র প্রেমিক”

চিরকুট টা পড়ে বিষ্ময়ে আবিভূত আরশি। কে সেই প্রেমিক যে আরশির প্রেমে মাতোয়ারা? শাড়িটা আবারো নেড়েচেড়ে দেখে। একটু মনে করার চেষ্টা করে এমন কাউকে মনে পড়ে কিনা, যে আরশির দিকে কোনরকম প্রেমময় দৃষ্টি ছুড়েছে কিনা। নাহ!! আপাতত কাউকেই মনে পড়ছে না। তাহলে কে পাঠাতে পারে এটা? আর এই হ্যান্ড রাইটিং! বড্ড চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না এরকম হ্যান্ডরাইটিং সে কোথায় দেখেছে।

হুট করেই পাশের দেয়াল ঘড়িতে চোখ পড়তেই চমকে ওঠে আরশি‌। এএমা আটটা তো প্রায় বেজে গেলো! এখনই তো মিরা আর লাবণ্য চলে আসবে। তার তো এখনো কিছুই গোছানো করা হয়নি।
আপাতত আরশি সবকিছু বক্সের ভেতরে গুছিয়ে আলমারির এক কোনায় রেখে দেয়। কে না কে দিয়েছে!! সেটা না জেনে আর কিছুতেই শাড়িটা পরবে না।

আরশি বান্ধবীদের সাথে প্ল্যান মোতাবেক নীল শাড়িটাই পরে।সাজগোজ শেষ করতে করতেই মিরা আর লাবণ্য চলে আসে। মিরাকে দেখে মনে হচ্ছে মুখে কয়েক স্তরের মেকআপ লেপ্টেছে। অবশ্য মীরার ফর্সা মুখে খুব একটা বেমানান লাগছে না। তাছাড়া কলেজে তার প্রেমিকের অভাব নেই। সুন্দর তো দেখাতে হবে। লাবণ্য ঠিকঠাক সেজেছে তবে আরশি একেবারেই সাদামাটা। নীল শাড়ি, চুলে বেনী, এক হাতে এক গোছা নীল রংয়ের কাচের চুড়ি,আরেক হাতে একটা স্বর্ণের ব্রেসলেট।গলায় একটা চিকন স্বর্ণের হার তাতে ছোট্ট একটা সাদা পাথরের পেটেন্ট।ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, চোখে কাজল। ব্যাসস!! কোন মেকাপের প্রলেপ নেই তার মুখে। সেজেগুজে তিন বান্ধবী বেরিয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।

_________
বড় ভাই মেহরাব মির্জার কলেজ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ইনভিটেশন এসেছে এমপি সৌরভ সাহিত্য মির্জা নামে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, সেখানেই যেতে হবে। সাহিত্য নিজের রুমে রেডি হচ্ছে এমন সময় মেহেরাব আসে ছোট ভাইয়ের ঘরে। সাহিত্যকে তৈরি হতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,,,

:- কিরে সাহিত্য! কটার দিকে বেরোবি?

:-এইতো ভাইয়া ,,অনুষ্ঠান শুরু হলে আমাকে কল করো তুমি ।তখনই বেরোবো। তাছাড়া অরুদ্ধ,তিয়াশ আর সিফাত ও আসবে।

:- আচ্ছা। আমি জানিই বেরোবো। বলেও বের হয় না মেহরাব!!

সাহিত্য বুঝতে পারে বড় ভাই কিছু বলতে চাই। সাহিত্য মেহরাবের দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- কিছু বলবে ভাইয়া??

মেহরাব আমতা আমতা করে বলে,,

:- আসলে বলতে চাইছিলাম ,,তোর ফুলকুঁড়ির কি অবস্থা?? কোন সমস্যা নাকি সবকিছু ঠিকঠাক!!
সাহিত্য ভুরু কুঁচকে বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করে বড় ভাইয়ের মতলব।হঠাৎ করে সুহার কথা জিজ্ঞাসা করছে কেন?? কৌতুহল চেপে বলে,,

:- ভালোই!! শুধু তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছে না এটাই সমস্যা।

ছোট ভাইয়ের কথা শুনে হেসে ফেলে মেহরাব। তারপর সাহিত্যর দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- আজকে নিয়ে যাবি ওকে??

সাহিত্য মেহরাবের দিকে ভালোভাবে তাকায়। বড় ভাইয়ের মতলব ঠিক বুঝতে পারছে না।

:- কেন ওকে কেন নিয়ে যাবো??

:- আরে বলছিলাম যে নিয়ে চল না, ওকে আরশির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। তাছাড়া তুই ওকে নিয়ে সময় কাটাতে পারবি। আমি কিছু একটা ভেবেছি বুঝলি আরশি পর্যন্ত নিজের মনের কথাটা পৌঁছানোর একমাত্র সেতুর হতে পারে সুহা।
বড় ভাইয়ের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসে সোহরাব।
বিড় বিড় করে বলে,,
যার নিজেরই আমার মনের কথা বোঝার মত বোধশক্তি নেই সে আবার তোমার লাইন ক্লিয়ার করবে!! হাউ ফানি!!

তবে মেহরাবের কথা মন্দ লাগেনা। নিয়ে তো যেতেই পারে তার ফুলকুঁড়িকে। তাছাড়া সুহাওতো এরপরে কলেজে ভর্তি হবে। একটু দেখে আসলো না হয়!! এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। এটা ভেবেই ফোনটা তুলে সুহাকে ফোন লাগায়।

দুবার রিং বাজতেই ফোন তোলে সুহা।

ওদিক থেকে সুহা হ্যালো বলতেই সাহিত্য বলে,,,

:- আন্টি কোথায় সুহাসিনী??

অবাক হয় সুহা ।এমপি সাহেব সকাল-সকাল তাকে ফোন করে তার মাকে খুঁজছে কেনো??

:- মা তো বাসায়ই আছে!! কিচেনে হয়তো!! কেনো?

:- কেন তোকে জানতে হবে না। আন্টিকে গিয়ে ফোন টা দে।

ঠোঁট উল্টে সুহা ভেংচি কাটে !!তারপর সোজা গিয়ে মাকে ফোনটা দিয়ে বলে,,

:- নাও তোমাদের আদরের সাহিত্য। কথা বলবে।

তাহিরা বেগমের মেয়ের কথা শুনে মুখে হাসি ফোটে। তরকারিতে নাড়া দিয়ে হাত মুছতে মুছতে এসে সুহার কাছ থেকে ফোনটা নেয়। কানে ধরে বলে,,

:- হ্যালো সাহিত্য!! কেমন আছো বাবা??

:- জি ভালো আছি আন্টি! আপনার সঙ্গে একটু দরকার ছিলো ।

:-হ্যাঁ বলো !!

ওপাশ থেকে কি কথা হচ্ছে শুনতে পাইনা সুহা। কিছুক্ষণ পরে তার মা বলে,,

:- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে!!বুঝতে পেরেছি। ও রেডি হয়ে থাকবে। আমি বলে দিচ্ছি। আচ্ছা ভালো থেকো।

এই বলে ফোনটা রেখে দেয়। তারপর সুহাকে তাড়া দিয়ে বলে,,,

:- এক্ষুনি যা রেডি হয়ে নে, বেরোতে হবে তোকে।

সুহা মায়ের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারে না। মা কে জিজ্ঞেস করে কেনো রেডি হয়ে কোথায় যাবে??

:-মেহরাবের কলেজে অনুষ্ঠান আছে! সাহিত্য সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত। তোকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছে। তাছাড়া তুইও তো ওই কলেজে ভর্তি হবি, সাহিত্যর সঙ্গে গিয়ে একটু দেখে এলি‌! ভালোই হবে ।পরীক্ষার পর তো সেভাবে বাসা থেকে বের হোস না। একটু ঘুরে আয় ভালো লাগবে। রেডি হয়ে থাক! সাহিত্য এসে নিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানের কথা শুনে মনের লাড্ডু ফোটে সুহার। এইসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে খুব ভালই লাগে তার।তাছাড়া এমপি সাহেব নিজে তাকে নিতে আসছে!! ভাবতেই মন খুশি খুশি হয়, পেটের ভেতর হাজার রঙের প্রজাপতি উড়াউড়ি করে।
ভাবে নিপাকেও সাথে করে নিবে। নিজের রুমে গিয়েই নিপাকে ফোন করে সবটা জানিয়ে রেডি হয়ে আসতে বলে। নিজেও ঝটপট রেডি হয়ে নেয়। আলমারি থেকে একটা সাদা রংয়ের চুড়িদার বের করে ঝটপট সেটা পড়ে নেয়। তারপর একটু সাজগোজ করে, মাথায় কালো রঙের ওড়না দিয়ে হিজাব বাঁধে।

কিছুক্ষণ পর নিপা ও রেডি হয়ে চলে আসে। তারপর দুজনে অপেক্ষা করে সাহিত্যর জন্য।

আরো কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে গাড়ির হর্ন শুনে বুঝতে পারে এমপি সাহেব চলে এসেছে। মাকে বলে নিপাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে সুহা।

_____

গাড়িতে বসেই সুহার জন্য অপেক্ষা করছে সাহিত্য। কিছুক্ষণ পরেই গেট থেকে সুহাকে বেরোতে দেখে সেদিকে তাকিয়ে থমকে যায় সাহিত্য।
সাদা রঙে তার ফুলকুঁড়িকে একটু বেশি মানায়। কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটাকে। দেখলেই বুকের ভেতরে কেমন করে ওঠে তার।
ইসস কবে যে মেয়েটা একটু বড় হবে। তাকে বুঝতে শিখবে। দিন দিন যে তার ভালবাসার অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে এলাকার দায়িত্বশীল এমপি মানুষ টা!!!

চলবে,,,