ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১১+১২

0
126

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১১
মৌমো তিতলী

নানা রঙের ফুল,রঙিন কাগজে সেজেছে কলেজ প্রাঙ্গন। কলেজ মাঠের এক পাশে দুইটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে স্টেজ সাজানো হয়েছে। তার সামনে বড় সামিয়ানা টানিয়ে স্টুডেন্টদের বসার আয়োজন করা হয়েছে। চারদিকে শিক্ষক, দায়িত্ব প্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে নিজেদের দায়িত্বের কাজ গুলো সঠিক ভাবে পালন হলো কিনা তদারকি করছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এলাকার তরুণ এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা আসছে বলে কথা!! কোন আপ্যায়নের আয়োজনে ত্রুটি রাখা চলবে না।
________

মেহরাব অনেকক্ষণ ধরেই বার বার কলেজ গেটের দিকে তাকাচ্ছে। চোখ দুটো কাউকে দেখার অপেক্ষায়। হাত ঘড়ির দিকে একবার তাকায় মেহরাব। ০৯:৫৫ মিনিট। আর ৫ মিনিট পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে আর এই মেয়ের এখনো আসার নাম নেই। সাথের চ্যালা দু’টোকেউ দেখা যাচ্ছে না। আসেইনি এখনো তারা। দুরু দুরু বুক কাঁপে মেহরাবের। শুভ্র প্রেয়সী তার পাঠানো শাড়িটা পরবে তো? আবেশে চোখ বন্ধ করে কল্পনায় আঁকার চেষ্টা করে কালো শাড়িতে প্রেয়সীর অবয়ব। মৃদু হাসি খেলে যায় মুখে। মুহুর্তেই কারো খিলখিল হাসি কানে এসে ধাক্কা খায়!! এই হাসি যে তার বড়ই প্রিয় বড্ড পরিচিত। চোখ খুলেই যেন একটা ধাক্কা খেলো মেহরাব। আরশি শাড়িটা পরেনি। পরেছে একটা নীল রঙের শাড়ি। অবশ্য তাতেও আরশিকে খারাপ লাগছে না! এক টুকরো নীল আকাশ লাগছে তার প্রেয়সীকে। কিন্তু মুখটা ভার হয় মেহরাবের। আরশি কেন তার দেয়া শাড়িটা পরলো না? থমথমে মুখে প্রস্থান করে মেহরাব।

এদিকে মেহরাব সেখান থেকে সরতেই আড়চোখে সেদিকে তাকায় আরশি। চোখে তার রহস্যময় হাসি।
আরশি মনে মনে ভাবে,,,
“আপনি ধরা পড়ে গেছেন স্যার!!
সকালে চিরকুটের হ্যান্ড রাইটিং পরিচিত মনে হলেও প্রথমে সেটা ধরতে পারেনি আরশি। কিন্তু বাসা থেকে বেরোনোর আগেই হুট করে আরশির মেহরাব স্যারের হ্যান্ড রাইটিং এর চিত্র চোখে ভেসে ওঠে !! তাৎক্ষনিক ভাবে ভিষণ চমকে ওঠে সে। যথাসম্ভব মাথা থেকে সন্দেহ টা ধুর করার চেষ্টা করে। কিন্তু কোথাও একটা সন্দেহ দানা বেঁধে থাকে মনে। সেটা সলভ না করে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলো না আরশি। তাই তখনই আবার চিরকুট টা বের করে দ্রুত পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে বই খাতা ঘেঁটে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করে। মেহরাব স্যার কয়েকদিন তার খাতায় অংকে কিছু ভুল থাকায় নিজেই সেগুলো সলভ করেছিলেন। সেখানে অবশ্যই মেহরাব স্যারের হ্যান্ড রাইটিং থাকবে। চিরকূটের সাথে সেটা ম্যাচ করিয়ে দেখলেই তো দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি হয়ে যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ! আরশি সমস্ত বই খাতা ঘেঁটে সেই খাতাটা খুঁজে পেতে সক্ষম হয়। তাড়াতাড়ি করে সেই পেইজ টা খুঁজতে থাকে,, একসময় পেয়েও যায়। তখনই চিরকূট আর খাতার লেখা দুটো একজায়গায় করে দেখে!! ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে আরশি। হাত পা কাঁপতে থাকে মেয়েটার। মনে শুধু একটাই প্রশ্ন!

_how is this possible!! মেহরাব স্যার!! 😳
আরশির অতীতের সেই সব ঘটনা এক এক করে মনে পড়তে থাকে,, যেখানে আরশির প্রতি মেহরাবের এক্সট্রা কেয়ার ছিলো,,আরশির জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া, আরশি কোন উল্টোপাল্টা কাজ করলে বকাঝকা করা, কিন্তু তবুও তার চোখে আরশির জন্য অপরিসীম একটা মুগ্ধতা থাকতো। তারপর সেদিন আরশির আঙ্গুল কেটেছিলো,, মেহরাব স্যার যেন একটু বেশিই অস্থির হচ্ছিলেন। এগুলো এতো দিন আরশি সেভাবে নজরে না রাখলেও আজ যেন সবটা স্পষ্ট হয়ে সামনে ভেসে উঠছে। অজানা এক উত্তেজনা, অনুভূতিতে শরীর শিরশির করতে থাকে আরশির। মেহরাব স্যার তার মানে আমাকে! ভাবতে পারে না আরশি!! লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে তার শুভ্র সুন্দর মুখশ্রী। তখনই আরশি মনে মনে ঠিক করে,,
এতো দিন আমার আড়ালে থেকেছেন তো স্যার!! এবার বুঝবেন মজা! আমিও জেনে বুঝে আপনাকে ধরা দেবো না। থাকুন আপনি আড়ালে।

সবটা ভেবে ঠোঁট প্রসারিত হয় আরশির। এতক্ষণ ধরে মিরা আর লাবন্য আরশিকে দেখছে!! তারা যে কি বলছে আরশি যেন শুনতেই পায়নি। এবার লাবণ্য আরশিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,,

:- এই ছেড়ি! কই হারালি তুই? এভাবে একা একা ভেবলার মতো হাসছিস কেনো??

লাবণ্যর প্রশ্নে থতমত খায় আরশি। আসলেই সে হাসছিলো এতক্ষণ! ইসস কি ভাবলো লাবণ্য আর মিরা!!
আমতা আমতা করে বলল,,,

:- আসলে দেখ কলেজটা কি সুন্দর লাগছে!! এতো সুন্দর সাজানো হয়েছে দেখেই তো হাসছি!

:- হ্যাঁ তো এরকম ভাবে হাসছিস যেন কলেজের সাজানো নয় নিজের প্রেমিকের কথা ভেবে হাসছিস!!

:- কি যে বলিস!! চল চল সামনে গিয়ে বসি। নয়তো আর জায়গা পাবো না! বলেই মিরা আর লাবন্য কে নিয়ে এগিয়ে যায়।

_______

কিছুক্ষণের মধ্যেই কলেজ প্রাঙ্গন ছাত্র ছাত্রীদের গুঞ্জনে মুখরিত হয়। সবাই যার যার জায়গা দখল করে বসে পড়ে।এমন সময় পর পর ছয়টা গাড়ি এসে প্রবেশ করে কলেজের ভেতরে। কলেজের প্রিন্সিপাল আরো সব দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গরা এগিয়ে যান এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা কে স্বাগতম জানাতে। ফুলের “বুকে” দিয়ে তাকে স্বাগতম জানানো হয়। সবাই নিজ নিজ আসন গ্রহণ করে। মাঝখানে সিংহাসনের মত চেয়ারটাই আসন গ্রহণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তরুণ এমপি সাহিত্য মির্জা।
আসন গ্রহণ করার আগেই সুহা আর নিপা কে মেহরাবের দায়িত্বে দিয়ে আসে। সামনের দর্শক সারিতে বসবে আরশির সাথে।
মেহরাবও সুহা আর নিপা কে নিয়ে করিডোর দিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়।তারপর একটা সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রকে ডেকে আরশিকে ডেকে পাঠায়। মেহরাব হাসি মুখে সুহার সাথে কুশল বিনিময় করে।

:- কেমন আছো সুহাসিনী?

:- এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?

:- আমিও অনেক ভালো আছি বনু। আজকে একজন স্পেশাল মানুষের সাথে দেখা করাবো তোমাকে।

উচ্ছ্বাসিত হয় সুহাসিনী। মেহরাবের হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টা করে বলে,,

:- ওই হই!! ভাইয়া তো ব্লাস করছেন!! সামথিং সামথিং তাইনা??

সুহার দুষ্টুমি ভরা কথায় লাজুক হাসে মেহরাব। মেহরাব সুহার থেকে অনেকটা বড় হলেও, মেহরাবের সাথে সুহার বন্ডিংটা বেশ ভালো। ওদের দুজনার মাঝে বন্ডিং দেখে অনেকেই আপন ভাইবোন বলে ভুল করবে। মেহরাব সুহা আর নিপা কে অপেক্ষা করতে বলে সেখানে। এগিয়ে আসে আরশিকে নিতে।
_______
এদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং গীতা থেকে পাঠ করে।
এক এক করে বিভিন্ন শিক্ষক,, অতিথিরা নিজেদের বক্তব্য রাখছেন।আরশি অনেক্ষণ ধরে এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জাকে দেখছে!! এমপি সাহেবের চেহারার সাথে মেহরাব স্যারের চেহারার এতো মিল কেনো? দুজনেরই সার্নেইম মির্জা। তারমানে স্যার আর এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা কি একে অপরের ভাই? হতেই পারে। কিন্তু স্যারের মুখে আগে তো কখনো শুনিনি এলাকার সদ্য নির্বাচিত এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা স্যারের ভাই।
এমনই নানা কথা ভাবছিলো আরশি। এমন সময় একজন ছেলে এসে জানাই তাকে মেহরাব স্যার ডেকেছেন!

দারুন চমকায় মেয়েটা। হঠাৎ আমাকে কেন ডেকেছেন!! স্যারের দেয়া শাড়িটা পরিনি বলে কি রেগে গিয়ে আমাকে শাস্তি দিবেন? অদ্ভুত ভাবনা দেখে নিজেই বিরক্ত হয় আরশি!!

_ধুর ধুর কি সব ভাবছি আমি। স্যারের এখনি যদি সামনে আসার ছিলো তাহলে কি এতো দিনে আড়ালে থাকতেন? নিশ্চয়ই কোন দরকারি কাজে ডেকেছে তাকে!

আরশি প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে পেছনের দিকে আসে।
মেহরাব স্যার কোথায় আছে যেটা খুঁজতে থাকে। করিডরের শেষ মাথায় আসতেই কেউ একজন তাকে হ্যাঁচকা টানে একটা রুমে টেনে আনে।মুহুর্তেই ঘটা ঘটনাটা বুঝতেই কেঁপে ওঠে আরশি। কে তাকে টেনে আনলো দেখার জন্য পেছনে তাকাতেই দেখে মেহরাব দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত বেঁধে তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মেহরাব কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় আরশি। মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে গেছিলো মেয়েটা। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় মেহরাবের সামনে,, বলে,,

:- স্যার ডেকেছিলেন আমায়? এভাবে টেনে আনলেন যে! আমি তো আসছিলামই।

মেহরাবের কোন নড়নচড়ন নেই। সে একভাবে তাকিয়ে আছে তার প্রেয়সীর দিকে। তখন তার দেয়া শাড়িটা না পরায় রাগ হলেও এখন সেই রাগের ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। ঠিকই তো করেছে মেয়েটা। কেনো পরতো সে শাড়িটা? মেহরাব তো চিরকুটে তার নাম লেখেনি। আরশি তো জানেই না কে দিয়েছে শাড়িটা। তাহলে কার না কার দেয়া শাড়ি না জেনে তার প্রেয়সী পরতেই বা যাবে কেনো??
রাগের বদলে এখন শান্তি লাগছে মেহরাবের। তবে নীল শাড়িতেও তার প্রেয়সীকে অপূর্ব দেখাচ্ছে। ইচ্ছে করছে বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলতে। একটু ছুঁয়ে দেখতে ভেতরটা ছটফট করছে মেহরাবের। আচ্ছা একটু ছুঁয়ে দেখলে কি তার অপরুপা রাগ করবে? ঘোর লেগে যায় মেহরাবের। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যার্থ আজ সে। কে বলেছিলো তার প্রেয়সীকে এতো মোহময় হতে!!

এদিকে মেহরাবের এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঢোক গিলে আরশি। মেহরাব স্যার কে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে না?? সাদা পাঞ্জাবি, কালো প্যান্ট হাতে ব্রাউন কালারের একটা ঘড়ি। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কপালে। চোখে গোল ফ্রেমের সাদা চশমার ভেতর দিয়ে মন মাতানো বিলাই চোখ দুটো তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে,,

আরশি এদিক ওদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আবারো অস্ফুট স্বরে ঠেকে ওঠে,,

:- স্যার,, আপনি…

কথাটা আর সম্পূর্ন করা হয় না মেয়েটার। তার আগেই কোমরে আলতো স্পর্শে কেঁপে উঠলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কপালটা গিয়ে ধাক্কা লাগে মেহরাবের শক্তপক্ত বুকে। শিউরে ওঠে আরশি। লাইফে প্রথম কোন পুরুষ এভাবে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরাই শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। বিষ্ময় নিয়ে মেহরাবের মুখের দিকে তাকিয়ে তার নেশাক্ত দৃষ্টিতে থমকে যায় আরশি। কিছু বলতে চেয়েও গলা দিয়ে শব্দ বের হয়না।লজ্জায় মুখ নীচু করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মেহরাবের শুভ্র প্রেয়সী।
মেহরাব এক হাতে আরশির কোমর জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে আলতো করে গালে হাত রাখে। মুখটা সামান্য উঁচু করে তুলে বলে,,

:- আরশি!! তাকাও আমার দিকে!

মেহরাবের গাঢ় কন্ঠে আরো মিইয়ে যায় মেয়েটা। আরশির বিষ্ময় এখনো কাটেনি। মেহরাব যে এতো তাড়াতাড়ি ধরা দিবে ভাবতে পারেনি সে‌। পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায় মেহরাবের দিকে।

:- আমি জানি আরশি তুমি এতক্ষণে বুঝে গেছো সকালের উপহার সাথে চিরকুট টা আমিই দিয়েছিলাম। ইউ নো হোয়াট!! তোমার প্রত্যেকটা একটিভিটিস আমার চেনা আছে। আমার হ্যান্ড রাইটিং চিনতে যে তোমার খুব বেশি সময় লাগবে না সেটা আমি জানতাম। লুকানোর ইচ্ছে থাকলে নিজে চিরকুট টা লিখে পাঠাতাম না। আর না তোমার ধরার ক্ষমতা হতো!! তিন বছর তো আড়ালেই থেকেছি। আড়াল থেকেই আগলে রেখেছি, ভালোবেসেছি। তুমি বুঝতেও পারোনি। আর আড়ালে থাকতে চাইনি তাই সামনে এসে দাড়িয়েছি। ভালোবাসি আমি তোমাকে,,আজ নয়,আরো তিন বছর আগে থেকেই। ভিষণ ভালোবাসি আরশি!! আমার শুভ্র প্রেয়সী,,I love you so much ….

আরশি স্তব্ধ হয়ে গেছে ‌। মেহরাব স্যার তাকে তিন বছর ধরে ভালোবাসে আর সে কখনো বুঝতেই পারলো না!!বুকের ভেতর ধকধক করে আরশির। শরীর কাঁপতে থাকে! এটা খুশিতে নাকি বিষ্ময়ে বুঝতে পারে না আরশি। তবে কিছু একটা বলার চেষ্টায় মুখ খুলতে চাইছে,,,
বিচলিত হয়ে মেহরাব আরশিকে আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে ,,,আরশির কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধীরস্বরে বলে,,,,
:- প্লিজ আরশি!! আমাকে ফিরিয়ে দিও না। তোমার প্রত্যাখান আমি সহ্য করতে পারবো না। খুব বেশিই যে ভালোবাসি তোমায়!!

আরশি তাকায় মেহরাবের দিকে। কি বলছে মেহরাব!! সে তাকে ফিরিয়ে দিবে?? সে নিজেই তো মেহরাবের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আছে!! তবে এতো তাড়াতাড়ি মেহরাবের সামনে এসে ভালোবাসার ইজহার করাতে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেছিলো!!কি বলবে বুঝতে না পেরে ফস করে বলে বসে,,,

:- স্যার খুলে যাচ্ছে!!

আরশির কথায় হতভম্ব হয়ে মেহরাব। ক্যাবলার মতো তাকিয়ে বলে,

:- এ্যাঁ!!

:- এ্যাঁ নয় হ্যাঁ স্যার!! আমার পেছনে শাড়ির পিন খুলে যাচ্ছে!!
কিছুক্ষণ সময় লাগে মেহরাবের আরশির কথা টা ব্রেইনে সেট হতে!! মানে কিসের মধ্যে কি!! নিজেকে সামলে নিয়ে আরশিকে ধরে সোজা করে দাড় করায় মেহরাব। পেছনের দিকে নিতেই দেখতে পায় ব্লাউজের সাথে আটকানো শাড়িটার সাথে সেই সিপটিপিনের মুখটা খুলে গেছে। মেহরাব আরশির পিঠে হাত না ছুঁয়ে আলগোছে পিনটা লাগিয়ে দেয়। তারপর আরশিকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে।
রাশির লজ্জা রাঙ্গা মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

:- শাড়িতে একদম বউ বউ লাগছে তোমাকে। আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,,

:-মেহরাব মির্জার বউ। মেহরাবের শুভ্র প্রেয়সী।

মেহরাবের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ে আরশির কানে,গলায়। থরথর করে কেঁপে ওঠে মেয়েটা। হুট করেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেহরাব কে। আরশির জড়িয়ে ধরাতে প্রথমে ভড়কে গেলেও মুহুর্তে নিজের সামলে নিয়ে আরশিকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অন্তরে প্রশান্তি হয়। ঠোঁটে তাঁর তৃপ্তির হাসি।

কিছুক্ষণ পর আরশিকে নিজের থেকে আলাদা করে দু হাত ধরে বলে,,

:- আমার সাথে চলো। একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো তোমাকে। তুমি হয়তো জানো না এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা আমার আপন ছোট ভাই। আর…

মেহরাবের কথা শেষ না হতেই আরশি বলে ওঠে,,

:- জানতাম না কিন্তু এমপি সাহিত্য মির্জা কে দেখেই মনে হয়েছিলো আপনার আপন কেউ হবে। আপনার সাথে তার চেহারার অনেক মিল আছে।

মেহরাব আরশির কপালে আঙ্গুল দিয়ে হালকা টোকা মেরে বললো,,

:- বাহ!! ইন্টেলিজেন্ট!!

আরশি লাজুক হাসে। মেহরাব বলে,,

:- ভাইয়ের সাথে একজন এসেছে। চলো তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ওর নাম সুহাসিনী। ভাইয়ের ফুলকুঁড়ি।

কপাল কুঁচকে তাকায় আরশি! কথাটা ঠিক বুঝতে পারে না সে। মেহরাব আরশির দিকে তাকিয়ে বলে,,

:- বুঝলে না তো!! সুহাসিনী কে ভাই ভালোবাসে। ভাই সুহাকে আড়ালে ফুলকুঁড়ি বলে ডাকে।ভিষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। ও কিন্তু তোমার কথাও জানে। দেখো খুব মিশে যাবে তোমার সাথে। তবে ভাই যে ওকে ভালোবাসে সেটা এখনো সুহাকে বলেনি। আরশি হাসে মেহরাবের কথায়। দু’জন এগিয়ে যায় সুহাসিনী আর নিপার দিকে।

করিডরের শুরুর দিকে কমনরুমে এসে দেখা হয় সুহাদের সাথে। আরশিকে মেহরাবের সাথে দেখেই মিষ্টি হাসে সুহা। মেহরাব আরশির সাথে দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেয়।আর বলে অনুষ্ঠানে সুহা আর নিপা কে নিজের কাছে রাখতে। সবটা বুঝিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠানের দিকে চলে আসে মেহরাব। আরশি,সুহা,নিপা কিছুক্ষণেই একে অপরের সাথে আলাপ সেরে ফেলে। বেশ মিশেও যায় তারা। আরশি বুঝতে পারে এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার ফুলকুড়ি আসলেই খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। তারপর তিনজনে প্যান্ডেলের ভিতরে গিয়ে নিজ আসনে বসে পড়ে। সেখানে মেহরাব আগেই দুটো চেয়ার বাড়তি দিয়ে দিয়েছে নিপা আর সুহার জন্য।

চলবে,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১২
মৌমো তিতলী

নৃত্য,গান, আবৃত্তি, চিত্র নাট্য শেষে বিদায় সংবর্ধনা জানিয়ে কলেজের বিদায় অনুষ্ঠান শেষ হলো। আরশি একটি রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেছিলো। মেহরাব মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলো প্রিয়তমার শ্রুতিমধুর কন্ঠে সেই গান।
অনুষ্ঠান শেষে ছাত্র-ছাত্রী, অতিথিবৃন্দ সবাই যে যার গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে। আরশি সুহা আর নিপা কে নিয়ে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসে বাইরে। মিরা আর লাবন্যর সাথেও পরিচয় হয়েছে সুহার। তবে ওরা শুধু জানে সুহা মেহরাব স্যারের রিলেটিভ।
কিছুক্ষণ পরেই সাহিত্যে, অরুদ্ধ, তিয়াশ, সিফাত আসে। সাহিত্য তাকায় তার ভীতু হরিণীর দিকে। গোল গোল চোখ সাহিত্য চারদিকে অবলোকন করছে তার আদরের পদ্মফুল। হঠাতই সাহিত্য কিছু একটা খেয়াল করে চোয়াল শক্ত হয়।
আসেপাশে তাকিয়ে দেখে কিছু ছেলেরা তাকিয়ে আছে তার একান্ত রমনি টির দিকে। সাহিত্য এসে সুহার পাশে দাঁড়ায়। সুহার দিকে হালকা ঝুঁকে আস্তে করে বলে,,

:-ওড়না ঠিক কর!!

সাহিত্যের এমন কথায় চমকে ওঠে সুহা। দ্রুত নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে বুকের একপাশ থেকে ওড়না টা হালকা সরে গেছে।যদিও মাথায় হিজাব আছে তবুও ওড়না টা সরে গিয়ে একটু বেশুমার দেখাচ্ছে।অপ্রস্তুত হয় সুহা। দ্রুত ওড়না টা ঠিক করে। ভিষণ লজ্জাও পায়। ইসসস কি ভাবলো এমপি সাহেব। 🙈

অরুদ্ধ তাকিয়ে আছে নিপার দিকে। আজকাল সময় অসময়ে মেয়েটা হানা দিচ্ছে ঘুমে,জাগরণে, স্বয়নে স্বপনে ব্রেইনের ভেতরে। অরুদ্ধ বুঝতে পারে এমপি বন্ধুর বাতাস তার গায়েও লাগতে চলেছে। শুধু নিজের অনুভূতি সম্পর্কে নিশ্চিত হলেই এই মেয়েটাকে সে ছাড় দিবে না।

কিছুক্ষণ পরেই মেহরাব কে আসতে দেখা যায়। আরশি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়। মেহরাবের সামনে আসলেই তখনকার কথা মনে পড়ছে আর লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েটা। দুহাতে ওড়না ধরে মুচড়া মুচড়ি করছে আর নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে মেয়েটা।

মেহরাব এসে সাহিত্যকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

:- ভাই তোরা তাহলে এগো। আরশি কে ইশারা করে বলে ,,

:-আমি ওদেরকে ড্রপ করে আসি।

মুহুর্তেই আরশি হড়বড় করে বলে,,,

:- স্যার তার কোন দরকার নেই। আপনাকে শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না। আমরা রিকশা নিয়ে নেবো।

মেহরাব রাগান্বিত চোখে তাকায় আরশির দিকে। তা দেখে আরশি ঢোক গেলে।

:- সন্ধ্যা হতে চললো সেটা চোখে দেখেছো? এভাবে এখন তিনটা মেয়ে রিকশায় বাসায় যাবে? আচ্ছা!! দু’জন একটায় গেলে, আরেকজন? একা যাবে?

:- স্যার আসলে…

আরশির কথা শেষ না হতেই লাবণ্য আরশির হাত চেপে ধরে,,

:- আহ আরশি!! স্যার তো ঠিকই বলেছেন। সন্ধ্যা হচ্ছে, আমাদের একা যাওয়া ঠিক হবে না।

আরশি কিছু না বলে চুপ করে থাকে। বুঝতে পারে আসলেই এখন রিকশায় বাসায় যাওয়া টা বোকামি। শুধুমাত্র মেহরাবের সামনে থাকতে লজ্জা লাগছিলো বলেই কাটাতে চেয়েছিলো।অগত্যা সে রাজি হয়ে যায়।

সাহিত্য অরুদ্ধ, তিয়াশ, সিফাত কে আলাদা গাড়িতে দিয়ে সুহা কে নিয়ে নিজের পার্সোনাল গাড়িতে ওঠে। সুহা যাওয়ার আগে আরশিকে জড়িয়ে ধরে। বলে,,

:- আবার দেখা হবে আপু। আমার খুব ভালো লেগেছে এখানে এসে। তোমাকে আর তোমার বান্ধবীদের কেউ ভালো লেগেছে। তারপর মেহরাব আর আরশির থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে সাহিত্যের পাশে। ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দেয়।

_____________

গাড়ি চলছে আপন মনে। সুহা জানালার কাঁচ নামিয়ে রেখেছে। সারাদিন অসম্ভব গরম পড়েছে। গাড়িতে এসি থাকা শর্তেও বন্ধ করে রেখেছে সাহিত্য। সুহার যে এসির বাতাস সহ্য হয়না। সন্ধ্যা নেমেছে দেখে সাহিত্য সুহাকে হিজাব খুলতে বলে। সেই সকালে থেকে মেয়েটা মাথায় হিজাব জড়িয়ে আছে। খুললে ফ্রেস বাতাসে একটু ভালো লাগবে।

সুহাও সাহিত্যের কথামত হিজাব খুলে রাখে। সাথে চুলগুলোও খুলে দেয়। যাতে মাথার ভেতরে বাতাস লাগে।
এদিকে জানালা দিয়ে বাতাসের ঝাপটা এসে সুহার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে। কিছু চুল গিয়ে পড়ছে সাহিত্যের মুখের ওপর। কিন্তু সাহিত্যের কোন হেলদোল নেই। সে চোখ বন্ধ করে সুহার চুলের নাম না জানা শ্যাম্পুর মন মাতানো সুবাসে মাতোয়ারা হয়ে আছে‌। কিছুক্ষণ পর আর চুল উড়ে আসছে না দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে সাহিত্যের। চোখ খুলে দেখে চুলে হাত খোপা করে বেঁধে ফেলেছে সুহা। বেশ বিরক্ত হয় সাহিত্য। এমনিতেই মেয়েটাকে নিজের কাছে রাখতে না পেরে হৃদয় শুকিয়ে শুষ্ক মরুভূমির মতো অবস্থা,,,যা একটু চুলের সুবাসে প্রেয়সীকে অনুভব করছিলো সেটাও সহ্য হলো না তার অবুঝ নাদান প্রেয়সীর।
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে আচমকাই সুহার হাত টেনে নিয়ে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে দেয় সুহা কে। দু হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে চেপে ধরে। থরথর করে কেঁপে ওঠে সুহা। আচমকা এমন করায় নিজের ব্যালেন্স রাখতে গিয়ে দুহাতে সাহিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে।
বড় বড় চোখে তাকায় সাহিত্যর দিকে। সাহিত্য টান দিয়ে সুহার চুল গুলো খুলে ফেলে। তারপর সুহাকে আরো কাছে টেনে উল্টো করে বসিয়ে দেয় নিজের কোলের ওপর। সুহার পিঠ গিয়ে ঠেকে সাহিত্যের বুকে। মুহুর্তেই সাহিত্য সুহার চুলে নাক ডুবিয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয়। সাহিত্যের নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে‌। কারো চুলের সুবাস এতো নেশাক্ত হয়!! নাকি শুধু তার পদ্মফুলের চুলেই এমন মন মাতানো সুবাস!
সুহানের আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,

:- তুই কি চুলে শ্যাম্পুর বদলে অ্যালকোহল মাখিস?

এমনিতেই সাহিত্যর করা কাজে মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে আছে। অদ্ভুত অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে সুহা। কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলার কারণে শরীরে শিহরণ দেয় সুহার। মনে হাজার প্রশ্ন! এমপি সাহেবের হলো কি আজ!! এমন আজব বিহ্যাব করছে!! তার ওপর এমন উদ্ভট প্রশ্নে ভোটকে যায় মেয়েটা.,

জড়ানো কন্ঠে কোনোরকম অস্ফুট স্বরে বলে,,,

:- কি বলছেন আপনি….

:- এই যে তোর চুলের সুবাসে আমার কেমন নেশা ধরে যাচ্ছে!! অ্যালকোহল ছাড়া কি কিছুতে নেশা হয়??

মুখ দিয়ে শব্দ বের হয় না সুহার। সাহিত্যের এমন খাপছাড়া কথায় লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে আছে মেয়েটা। সামনে ড্রাইভারের দিকে আড় চোখে তাকাই সুহা। ড্রাইভারের এদিকে কি হচ্ছে তাতে কোন হেলদোল নেই। সে এক মনে ড্রাইভ করতে ব্যস্ত। তাকে দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ায় সে ছাড়া কোন মানুষ নেই। এমনকি পেছনে কি হচ্ছে তার কোন শব্দও তার কানে পৌঁছাচ্ছে না।

সুহা বিড়বিড় করে বলে,,,

:-নির্লজ্জ এমপি সাহেব করছেটা কি!!

বিড়বিড় করে বললেও কথাটা ভালো ভাবেই শুনতে পায় সাহিত্য। ঠোঁটে ফুটে ওঠে হাসি। আবারো সুহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,

:- তুই যতটা ভাবছিস, আমি তার থেকেও বেশি নির্লজ্জ। শুধু তোর বেলায়!!

থরথর করে কাঁপছে মেয়েটা। সাহিত্যের এতো কাছে আসা,এতোটা নিবিড়ভাবে ছোঁয়া সহ্য হচ্ছে না তার। কেমন অদ্ভুত শিহরণ ছড়িয়ে আছে সমস্ত অস্তিত্বে। কিন্তু সুহার একটুও খারাপ লাগছে না। কেনো?? এতো কাছে অবস্থানরত মানুষ টা তার এমপি সাহেব বলে!!
তাকে সে একটু একটু করে অনুভব করতে শিখেছে বলে!! যাকে একটু একটু করে হৃদয়ে লালন করতে শিখেছে বলে!! তাকে ভেবে তার প্রথম প্রেমের আগমন ঘটেছে বলে!! ভালোবাসা কি,, অনুভূতি কি বুঝতে গিয়ে মন শুধু তাকেই কল্পনা করেছে বলে!
আজ এখানে তার এমপি সাহেব না হয়ে যদি অন্য কেউ হতো!! তাহলেও কি সুহার এমন ভালো লাগতো?
ছিঃ ভাবতেই গা গুলিয়ে ওঠে সুহার। সাহিত্যের ঘাড়ের কাছে খামচে ধরে কাঁধের ওপর রাখা হাত দুটো দিয়ে।
নোখ দেবে যায় সেথায়। হালকা ব্যাথা অনুভব হতেই মুখ কুঁচকে যায় সাহিত্যের। তবুও কোন রিয়্যাক্ট করে না। চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি ছড়িয়ে বলে,,,

:- কিরে সুহাসীনি!! গাড়িতে আমার মতো অবলা একা একটা পুরুষকে পেয়ে তুই বিনা টিকিটে তোর রাক্ষসীর মতো নখ দিয়ে আমার শরীরে স্ক্র্যাচ করে দিলি??
তুই জানিস আমি এখনও পিওর ভার্জিন একটা ছেলে!!আর তুই কিনা নখ বসিয়ে আমার সেই পিওর ভার্জিনিটির প্রমাণ লোপাট করছিস??

সাহিত্যের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে হতভম্ব সুহা। সে নখ বসিয়ে এমপি সাহেবের ভার্জিনিটির প্রমাণ লোপাট করছে?? এ আবার কেমন কথা 🙄
সাহিত্য সুহার হতভম্ব চেহারার দিকে তাকিয়ে নিজের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে লাগলো। সুহা এবার হুড়মুড় করে সাহিত্যের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বসে!! আড়চোখে এমপি সাহেবের কান্ডকারখানা দেখছে!

পাঞ্জাবির বোতাম খুলে সেটা কাঁধের ওপর থেকে কিছুটা নিচে নামায়। সুহার নখে তার শিল্পকলা ভালোই দেখিয়েছে মনে হচ্ছে। নখ বসে গিয়ে মাংস ভেদ করে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে গেছে,,,তা দেখে সাহিত্য আবার বলে,,

:- তোর বিশ্বাস না হলে নিজেই দেখ!! এখনো বলবি আমার কাঁধের ভারজিনিটি আর অবশিষ্ট আছে!!

সাহিত্যের এমন কথায় সুহার আক্কেল গুড়ুম হওয়ার অবস্থা। সুহা অতি বিস্ময় নিয়ে বলে,,

:- কাঁধের আবার ভার্জিনিটি হয়??

সাহিত্য চোখ কপালে তুলে বলে,,,

:- সে কি!! তুই জানিস না?? অবশ্যই হয়, আলবাত হয়! তুই জানিস কাঁধে এরকম স্ক্র্যাচ কখন হয়??

সুহার মুখ লজ্জায় রক্তিম হয়।কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয় যেন সুহার। নাক মুখ কুঁচকে অন্য দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,,

:- অসভ্য পুরুষ মানুষ!!

সাহিত্য সুহাকে আরো একটু লজ্জা দিতেই যেন আবার বলে ওঠে,,,

:- আমাকে অসভ্য পুরুষ বলছিস? তারপরে তুই জানিস? বাহ!! অনেক বড় হয়ে গেছিস তো !আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না আমাকে। বেশ ভালই হয়েছে!!

লজ্জায় সুহা সাহিত্যর সব কথা ভালোমতো না শুনেই নাক মুখ কুঁচকে চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে শুয়ে থাকে। আর কোন কথাই বলবে না এই অসভ্য এমপি সাহেবের সাথে।

সুহার মুখের দিকে তাকিয়ে গা দুলিয়ে হাসে সাহিত্য।

___________

চারিদিকে চমৎকার সব ঝাড়বাতি, মরিচ বাতি ,সাদা ফিনফিনে পর্দা দিয়ে মনোরম ভাবে সাজানো হচ্ছে মির্জা মেনশন। দুদিন পরেই মির্জা ম্যানসনের বড় ছেলে মেহরাব মির্জার 31 তম জন্মদিন।
বাড়িতেই বড় সন্তান মেহরাব মির্জার বার্থডে উপলক্ষে বিশাল এক গ্র্যান্ড পার্টির আয়োজন করেছেন আহাদ মির্জা। বড় বড় এমপি, মন্ত্রী ,শিল্পপতিদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে মীর্জা মেনশনে। মেহরাব ঠিক করেছে নিজের বার্থডে পার্টির অনুষ্ঠানেই আরশিকে বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। আরশির বাবা-মা আর বন্ধু আরুশকেউ ইনভিটেশন কার্ড পাঠানো হয়েছে। তারাও আসবে। এই সুযোগে বাবা মায়ের সাথে আরশির বাবা-মায়েরও কথা বলিয়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় মেহরাব। অবশ্য বুদ্ধিটা সাহিত্যই দিয়েছে। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে, আর দেরি করা ঠিক হবে না। বিয়েটা পরে হলেও চলবে, অন্তত এনগেজমেন্টটা এখন করিয়ে রাখায় যায়। মেহরাবের শুভ্র প্রেয়সী তার নামে বাগদত্তা হয়ে থাকুক তাতেও শান্তি।

___________

তালুকদার বাড়ি
_____________

ড্রয়িং রুমের বড় হলরুম একজন লোককে নির্মমভাবে চাবুক মারা হচ্ছে। তার সামনেই চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আমজাদ তালুকদার। তার সামনেই চাবুকের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হওয়া লোকটা বারংবার চিৎকার করে বলছে,,

:- আমাকে এবারের মত মাফ করে দিন স্যার !!আমি কয়েক মাসের মধ্যেই আপনার টাকা শোধ করে দেবো। আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না। মাত্র কয়েকটা মাস সময় দিন। স্যার বাড়িতে আমার বউ আছে ছোট বাচ্চা আছে। আমি না থাকলে তাদের দেখার কেউ থাকবে না। আমাকে আর কয়েকটা মাস সময় দিন।

কিন্তু তার আহাজারি যেন আমজাদ তালুকদারের কানে ঢুকছেনা। নির্দয় লোকটা রোবটের মত বসে আছে। চাবুকের সপাং সপাং শব্দ তার দেয়ালের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিত হচ্ছে।

ঠিক সেই মুহূর্তেই বাইরে থেকে হন্তদন্ত প্রবেশ করে শফিক।
আমজাদ তালুকদারের কাছে এসেই দাঁত বের করে হেসে বলে ,,,,

:-একটা জব্বর খবর নিয়ে আইছি স্যার!!

চোখ চকচক করে ওঠে আমজাদ তালুকদারের।

:- কি খবর উগলে ফেল!!

:- স্যার আগামী দুদিন পর মির্জা বাড়িতে পার্টি আছে। মির্জা বাড়ির বড় ছেলে মেহরাব মির্জার জন্মদিনের পার্টি রেখেছেন আহাদ মির্জা। অনেক বড় বড় লোকজন আসবেন শুনেছি। স্যার এই সুযোগে আমরা…..

শফিকের কথা শেষ হয়না তার আগেই আমজাদ তালুকদার বলেন,,,

:- বাহ গুড নিউজ! এরকম একটা আনন্দময় পার্টিতে আমরা অংশগ্রহণ করব না সেটা কি হয় শফিক?? আমাদের কিছু লোককে পাঠিয়ে দে পার্টি এনজয় করে আসুক!!
তবে হ্যাঁ!! এখনই কিছু ঘটানোর দরকার নেই। ইনফরমেশন কালেক্ট করতে বল। তারপর গুটি সাজাবো। মির্জা বাড়ির প্রত্যেকের কাদের কাদের সাথে সম্পর্ক আছে, কারা তাদের দুর্বলতা সবকিছুর ডিটেইলস আমার চাই। ওই সাহিত্য মির্জা কে ভাঙতে হলে তার দুর্বলতাটাকেই আমার কাজে লাগাতে হবে। আর তোদের কাজ হবে ওর দুর্বলতাকে খুঁজে বের করা।

:-জি স্যার! যেমন আপনি বলবেন।
বলেই আমজাদ তালুকদার হুকুম নিয়ে তার পালতু কুত্তা শফিক বেরিয়ে আসে তালুকদার বাড়ি থেকে।

To be continue,,,,,,