ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-১৫+১৬

0
119

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,১৫
মৌমো তিতলী

সকাল থেকে প্রেস মিডিয়ার লোকেরা ভিড় করেছে মির্জা ম্যানশনের সামনে। বড় লোহার গেটে জনা পঞ্চাশেক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে মিডিয়ার লোকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কিছু সাধারণ জনগণ আন্দলন করছে। শ্লোগান ভেসে আসছে ” এমপি সোহরাব হাই হাই” এমপি সোহরাবের বিচার চাই”
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে। আহাদ মির্জা হিমসিম খাচ্ছে তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে।
অভিযোগ উঠেছে এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার নামে। তিনি এমপি পদের সুযোগ নিয়েছেন। শহরে নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে তিনি সরকারি বাজেট থেকে অর্থ আত্মসাত করেছেন। কম বাজেটে কমদামি নরমাল কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্লাইওভারে।
আহাদ মির্জা জানেন এসকল অভিযোগ মিথ্যা। গভীর কোনো ষড়যন্ত্র চলছে সেটা বুঝতে পারলেও এখন পরিস্থিতি সামলাতে সাহিত্য কে প্রয়োজন। প্রেসের লোকেরা এক একজন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন আহাদ মির্জার দিকে। সদুত্তরের অপেক্ষায় আছেন তারা।

একজন রিপোর্টার এগিয়ে এসে প্রশ্ন করেন,,

:- মিঃ আহাদ মির্জা আপনি তো সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজনীতিতে আপনাকে সৎ নেতা হিসেবেই মানুষ জানে। আপনার ছোট ছেলে এখন এমপি। তিনি সরকারি বাজেট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, কথাটা কি সত্যি??এমনকি শোনা যাচ্ছে তিনি আগেও এমনটা করেছেন। নাকি আপনাদের সৎ নেতা হওয়া সম্পুর্ন লোক দেখানো?? এমনটা কি আপনারা শুরু থেকেই করে আসছেন?

আহাদ মির্জা একটু তেজে ওঠেন। ঝাঁজালো কন্ঠে বলেন,,

:- আপনারা প্রমাণ ছাড়া আবোল তাবোল কথা ছড়াবেন না। সাহিত্য মির্জা নতুন এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আগে থেকেই এসবে জড়িত থাকার কথাটা যে অসম্ভব সেটা বোঝার মতো ঘিলু নেই আপনাদের মাথায়? গোবর ভরা মাথা নিয়ে রিপোর্টার গিরি করতে এসেছেন? আমি বিগত ১০ বছর ধরে শীতলপুরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। কখনো কেউ দেখেছে আমাকে অনৈতিক কোন কাজ করতে? নাকি কোন অভিযোগ কখনো উঠেছে!!
এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা তরুণ মানুষ। গ্রামের মানুষ তাকে পছন্দ করলেও, তার বয়স হিসেবে দায়িত্বটা অনেক বড় । অনেক শত্রু আছে তার এই বয়সে এতটা সফলতা দেখে সহ্য করতে পারেন না। তাকে টেনে নিচে নামানোর জন্য অনেক রকম চেষ্টা তারা করবেন।

আরেকজন রিপোর্টার বলেন,,

:- কিন্তু আমাদের সামনে ফ্লাইওভারের নরমাল সব কাঁচামাল তুলে ধরা হয়েছে প্রমাণ হিসেবে। সেগুলো থাকাটাই কি তরুণ এমপির বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নয়? এগুলো তো এমনি এমনি আসেনি। এগুলো ব্যবহারের ফলে তো যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার কাছে কি সাধারণ জনগণের জীবনের কোন মূল্য নেই? তিনি তার আসনকে নিজ স্বার্থে কেন ব্যবহার করবেন? আমরা স্বয়ং এমপি সাহেবের কাছ থেকে এর উত্তর চায়?
আহাদ মির্জা হাত উঁচু করে সকলকে থামানোর চেষ্টা করেন।গলা চড়িয়ে বলেন,,

:- দেখুন আপনারা শান্ত হোন। অভিযোগ যখন উঠেছে তখন তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ তিনি মিডিয়ার সামনে তুলে ধরবেন। তার থেকেই আপনারা উত্তর পাবেন।

রিপোর্টারদের ভেতর থেকে আরো একজন এগিয়ে এসে বলেন,,,

:- কিন্তু এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা এখনো বাইরে আসছেন না কেনো ??তিনি কি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে বাইরে আসছেন না? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি মিথ্যা হয় তাহলে তিনি সামনে এসে তার প্রমাণ দিচ্ছেন না কেন??
____

সাহিত্য লিভিং রুমেই দাঁড়িয়ে থাকার ফলে সব অভিযোগ তার কানে আসছে। সাহিত্য দরজার দিকে এগিয়ে গেলে আবারো তার মা আয়েশা সিদ্দিকা ছেলের বাহু টেনে ধরেন।

:- এখন তুমি বাইরে যাবে না সাহিত্য। লোকজন ক্ষেপে আছে। যদি ভিড়ের মধ্য কেউ কোন ক্ষতি করে দেয়??

মায়ের কাজে প্রচন্ড বিরক্ত সাহিত্য। সে হাত-ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বলে,,

:- আহ মা!! কি শুরু করলে বলোতো। আমি এই মুহূর্তে তোমার আচলের নিচে বসে থাকবো বিপদ হওয়ার ভয়ে?? আমার ক্যারিয়ারে কালির ছেটানোর আরো সুযোগ করে দেবো? দেখছো না?কি সব মিথ্যা অভিযোগ আসছে আমার নামে। এসব ষড়যন্ত্র। তার যথেষ্ট প্রমাণ আমাকে বের করতে হবে। রাজনীতিতে এরকম পরিস্থিতিতে পড়া স্বাভাবিক। সবকিছু আমাকেই সামলাতে হবে।

সাহিত্য আয়শা সিদ্দিকা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা কে স্বয়ং উপস্থিত হতে দেখে মিডিয়ার লোকেরা নড়েচড়ে দাঁড়ায়। সামনের রিপোর্টাররা হুড়মুড় করে এগিয়ে আসে সাহিত্যর দিকে। একেক জন একেক প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে। সাহিত্য কিছুক্ষণ পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে একজন রিপোর্টারের হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে সকলের সামনে দাঁড়ায়।
স্পিকার অন করে সকলকে শান্ত হতে আহ্বান জানায়,,
সবাই চুপ হলে, নিজের বক্তব্য তুলে ধরে সাহিত্য।

:- আপনারা জানেন আমার নামে অভিযোগ উঠেছে আমি আমার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছি। অভিযোগটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাজনীতি তে সকল এমপি, মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা নেতা, নেত্রীরা এক একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হয়। জনগণের স্বার্থে কাজ করেন। মানছি কিছু অসৎ নেতা নেত্রীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে আসন দখল করতে চান। নিজেদের মতলব হাসিলের উদ্দেশ্যে নিয়ে চলেন কিন্তু এখানে না জেনে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।

একজন রিপোর্টার এগিয়ে এসে কিছু বলতে নিলে সাহিত্য তাকে থামিয়ে দেয়। বলে,,,

:- আমি জানি আপনাদের মনে অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। আমি শুধুমাত্র দুইদিন সময় চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের থেকে। আমি আমার বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা অভিযোগের সকল প্রমাণ পেশ করবো। কথা দিচ্ছি !!আগামী দুই দিন পর এখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবো আমি। এখন আপনারা আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে সাহিত্য।

__________

মোতালেব হোসেন, তাহিরা বেগম,সুহাসিনী সকলেই টিভির সামনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন। টিভিতে এতক্ষণ নিউজ চলছিলো। নিউজ শেষ হতেই টিভি অফ করে মোতালেব হোসেন সহধর্মিণীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,

:- সাহিত্য কে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে সুহার আম্মা। ছেলেটা কোন অসৎ কাজে লিপ্ত থাকতেই পারে না। আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা মিথ্যা হতে পারে না। সাহিত্য কে আমি চিনি ছোট থেকেই। সে কখনো আহাদের আদর্শ খর্ব করতে পারে না।

তাহিরা বেগম স্বামীর কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করেন।

:- ঠিকই বলেছো তুমি ‌। সাহিত্য তো বললো দুদিনের মধ্যে প্রমাণ দিবে। দেখো ছেলেটা ঠিক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবে।

এতকিছুর মধ্যে সুহা একদম কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের সামনে ভাসছে এতক্ষণ টিভির পর্দায় দেখা সাহিত্যের থমথমে মুখশ্রী। বুকের ভেতর মোচড় দেয় সুহার। তার বিশ্বাস!! তার এমপি সাহেব কখনো কোন খারাপ কাজ করতে পারে না। কখনো না। মনটা ছকফটিয়ে ওঠে রমনীর। এই মুহূর্তে সাহিত্যর কাছে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছে তার। একবার তাকে বলার ইচ্ছে,,”আমি আপনাকে বিশ্বাস করি এমপি সাহেব”

সুহা দ্রুত নিজের রুমে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে নির্দ্বিধায় কল করে সাহিত্যের ফোনে। ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে আসে “আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে”
বারংবার কল লাগায় সুহা। প্রত্যেকবারই বন্ধ আসে। মনটা দ্বিগুন হারে ছটফটায়। মাথায় হিজাব চড়িয়ে পার্সটা হাতে নিয়ে বাবা মায়ের অগোচরে বাসা থেকে বের হয় সুহা।

কলোনি ছেড়ে বড় রাস্তায় আসে সুহা। নিপা কে ফোন করে সবটা জানায়। নিপা সবটা শুনে জানতে চাই,,

:- তুই জানিস সাহিত্য ভাইয়া এখন কোথায় আছে? এতকিছু ঘটেছে এতক্ষণে বাড়িতে নিশ্চয় বসে থাকবেন না তিনি।

টনক নড়ে সুহার। তাই তো!! সে তো কোন কিছু না ভেবেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। এখন কোথায় পাবে সাহিত্য কে?? মলিন হয় মুখ। পরমুহূর্তেই একটা পরিচিত মুখ দেখে চোখদুটো চকচক করে ওঠে। নিপা কে বলে,,

:- এখন জানিনা তিনি কোথায় আছেন। কিন্তু জানার উপায় পেয়ে গেছি। পরে ফোন করবো তোকে। তড়িঘড়ি ফোনটা রেখে কিছুটা দৌড়ে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে ডেকে ওঠে পরিচিতর।
_________
গতরাতে অপারেশন হয়েছে অরুদ্ধের মায়ের। ভোরের দিকে জ্ঞান ফিরেছে। অবস্থা এখন বিপদমুক্ত। অরুদ্ধ বোন অরুনিমা রয়েছে মায়ের সাথে। বন্ধুর বিপদের কথা সকালেই জানতে পেরেছে অরুদ্ধ। জানতে পেরেই এতটুকু সময় অপচয় করেনি ছেলেটা। হসপিটালের দায়িত্ব মিটিয়ে বোনকে মায়ের কাছে রেখে ছুটছে সাহিত্যের কাছে।

হুট করে পেছন থেকে ডাক শুনে ঘুরে তাকালো সে। সুহাকে দৌড়ে আসতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,

:- একি সুহাসিনী!! তুমি এখানে কেন?

সুহা দৌড়ে অরুদ্ধের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাঁটুতে হাত দিয়ে নিচু হয়ে হাঁপাতে থাকে। নিজেকে কিছুক্ষণ ধাতস্থ করে বলে,,

:-এমপি সাহেব কোথায় আছে অরুদ্ধ ভাইয়া? আমাকে তার কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ।

অরুদ্ধ সুহার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,,

:- তুমি যাবে সাহিত্যের কাছে?

সুহা উপরনিচ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। মিনমিন করে বলে,,,

:- আমি জানি ওনার মেন্টাল কন্ডিশন এখন ভালো নেই। মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে এমপি সাহেবের ওপর।আপনি প্লিজ আমাকে ওনার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ওনাকে দেখতে চাই।

বন্ধু প্রিয়তমার বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস দেখে অরুদ্ধের মনে কিছুটা স্বস্তি মিলে। রাজী হয় অরুদ্ধ। সুহাকে নিয়ে রওনা হয় সাহিত্যের কাছে। সে জানে সাহিত্য এখন কোথায় আছে।
******

শহর থেকে কিছুটা দূরে সাহিত্যেদের বাগানবাড়ি অবস্থিত। আপাতত সেখানেই অবস্থান করছে সে। সাথে তিয়াশ। সিফাত কে পাঠিয়েছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে। গোপনীয়তা রেখে সকল প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি।
জানালার পর্দা উড়ছে বাতাসের ঝাপটায়। সাহিত্য একমনে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। সে জানে তার বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা অভিযোগের ষড়যন্ত্রটা কার হতে পারে।তার দৃঢ় বিশ্বাস এসব নিচ কাজ একজনের দ্বারাই সম্ভব। আমজাদ তালুকদার। আগুন নিয়ে খেলছে লোকটা। প্রমাণ বের করার সকল কার্যক্রম সে আগেই শুরু করে দিয়েছে সাহিত্য। বয়স কম হলেও রাজনীতি তে পাকা হাত তার। এসব প্যাচে ফেলে তাকে টলানো সহজ নয়।

হুট করেই মনে প্রিয়তমার খেয়াল আসে। কি করছে এখন তার ফুল কুঁড়ি। সেও নিশ্চয়ই সবকিছু শুনেছে। সুহা কি ভুল বুঝবে তার এমপি সাহেব কে। মন বলে ওঠে,,

_না না!! এটা হতে পারে না। তার আদর তাকে কিছুতেই ভুল বুঝতে পারে না। দুনিয়ার সকল মানুষের অবিশ্বাস সহ্য করতে পারলেও তার ফুলকুঁড়ির অবিশ্বাস কিছুতেই সহ্য করতে পারবেনা সাহিত্য । তার প্রেম তার শক্তি। তার মনের হত্যাকারীই তার বাঁচার প্রেরনা। এই কঠিন মানুষটারও তার কঠিনত্ব তার সমস্ত ব্যক্তিত্ব ওই একজন মেয়ের পায়ের কাছে নগণ্য হয়ে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে।

আসলে পৃথিবীতে এমন কিছু কিছু সম্পর্ক আছে, ভালোবাসা আছে যেখানে মুখে ভালোবাসি বলার প্রয়োজন পড়ে না। একে অপরের মন জানে তারা একই ডোরে আবদ্ধ। একই অনুভূতিতে ছেয়ে থাকে তাদের মন। মুখ না বললেও মনে জানে তারা একে অপরের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। সাহিত্য আর সুহাসিনীর ব্যাপারটাও ঠিক সেরকম। সাহিত্য তার অনুভূতি মুখে প্রকাশ না করলেও সে অসম্ভব ভালোবাসে তার একমাত্র প্রাণনাশিনীকে। আবার এটাও তার মনের বিশ্বাস তার পদ্মফুলও তাকে ভালোবাসে, তাকে বোঝে।
এই বিশ্বাসে কখনো আঘাত আসলে এই কঠিন মানুষটাও ভেতর থেকে ভেঙেচুরে মুখ থুবড়ে পড়বে।
_______

বাগান বাড়ির সামনেই ট্যাক্সি এসে থামে। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় সুহা। সামনে অবস্থানরত একতলা বিশিষ্ট চমৎকার একটি বাড়ি। চারদিকে অতি মনোরম পরিবেশ। সেদিকে অপলক চেয়ে রয় সুহাসিনী। মন বলে,, এখানেই বুঝি আছেন তার কল্পপুরুষটা? সে জানেনা কোন অবস্থায় আছে মানুষটা। একবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে না পারলে তাকে একটাবার স্বচক্ষে না দেখলে অন্তর জ্বালা দুর হবে না।

অরুদ্ধ ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে সুহার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সুহার দৃষ্টি অনুসরণ করে স্মিত হাসে অরুদ্ধ। সুহাসিনীর মনে তার বন্ধুর জন্য অনুভূতি আছে বুঝতে পেরে অন্তরের প্রশান্তি অনুভব করে সে। এতদিনে বন্ধুর অপেক্ষা বুঝি শেষ হলো । সুহাকে এখানে দেখে নিশ্চয়ই সাহিত্য ভীষণ চমকে যাবে। অরুদ্ধ সুহাকে ইশারা করে ভেতরে আসতে।

বাগান বাড়ির মেনডোর দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে তিয়াশের। অরুদ্ধ কে আসতে দেখে এগিয়ে আসে তিয়াশ। পরক্ষণেই পেছনে সুহাকে দেখে একরকম থমকে দাঁড়ায়। অরুদ্ধ কে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করে,,,

:- এইরে,,,, সাহিত্যের ক্ষতের মলম রে কোইত্তে ধইরা আনলি?

অরুদ্ধও ফিসফিস করে জবাব দেয়,,

:- আমি ধরে আনিনি।সে নিজেই এসেছে সাহিত্যের খোঁজে। বলেই মুখ টিপে হাসে অরুদ্ধ।

তিয়াশের মুখটা চকচক করে ওঠে। অতি উৎসাহী হয়ে চিৎকার করতে গেলে তার মুখ চেপে ধরে অরুদ্ধ।

:- আরে আরে করছিস টা কি বেয়াক্কেল। সাহিত্য কে সারপ্রাইজ দিতে হবে না?

তিয়াশ নিজের সামলে নিয়ে বলে,,,
:- এদ্দিনে একখান কামের কাম করছোস মামা!!

তিয়াশ আর অরুদ্ধের ফিসফিসানি দেখে এতক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো সুহা। তিয়াশ এগিয়ে এসে বলে,,,

:- কি সুহা রানি!! কেমন আছো?

সুহা সৌজন্য হেসে জবাব দেয়,,

:-
ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন??

:- ভালো তো আছি বোন। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো থাকতে দিচ্ছে কই!!

তিয়াশের কথায় আবারো মনটা ছকফটিয়ে ওঠে সুহার। তবুও শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,,

:-এমপি সাহেব কোথায়?

তিয়াশ হাতের ইশারায় সাহিত্যের রুম দেখিয়ে দেয়। সুহা গুটি গুটি পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়।

অরুদ্ধ,তিয়াশ আর সেদিকে মাথা ঘামায় না। ওদেরকে একা ছেড়ে বর্তমান করনীয় নিয়ে আলোচনায় মনোনিবেশ করে‌

সাহিত্যের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে সুহা। কেনো যেনো আজকে আর ভয় কাজ করছে না মনে। বরং তার ‌মন বলছে তাকে দেখলে তার এমপি সাহেবের মন খারাপ কিছুটা হলেও দুর হবে। ঠকঠক শব্দ তুলে দরজায় কড়া নাড়ে সুহা।
ভেতর থেকে সাহিত্য ভাবে তিয়াশ এসেছে। সে যথারীতি গম্ভীর গলায় বলে,,,

:- আমাকে একা থাকতে দে তিয়াশ। এখন ডিস্টার্ব করিস না।

প্রিয়তমের গম্ভীর স্বরে অন্তর কাঁপে রমনীর। তবুও দমে না এমপি সাহেবের পদ্মফুল। হাত দিয়ে দরজায় হালকা চাপ দিতেই খুলে যায় সেটা। অর্থাৎ দরজা খোলাই ছিলো শুরু চাপানো ছিলো সেটা।
ধীর পায়ে ঢুকে সুহা। শব্দহীন বিড়াল পায়ে সাহিত্যের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। কাঁপা হাতে সাহিত্যের কাঁধে হাত রাখলো ভিতু সুহাসিনী। মনে বিশ্বাস আঁকড়ে এ পর্যন্ত আসলেও ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে সুহা ।এমপি সাহেব যদি তাকে দেখে রেগে যায়!!

কাঁধে নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে সাহিত্যের। ঘাড় ঘুরিয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে অন্তরে তুফান বয়!! সে কি অতি টেনশনে স্বপ্ন দেখছে?? নাকি সে তার প্রাণ ভোমরার প্রেমে দিন দিন এতই পাগল হচ্ছে যে এখন দিনের বেলায় জেগে থেকেই হ্যাল্যুসিনেশন হচ্ছে।

সম্পূর্ণ ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাই সাহিত্য। সুহাসিনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পরপর পলক ঝাপটাই অশান্ত প্রেমিক। যেন বিশ্বাস হতে চায় না, যে সুহাসিনী তার ধারে কাছে আসতে চায় না, সে শহর ছেড়ে এতটা দূরে তার বাগান বাড়িতে, তার রুমে, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বাস করতে কিছুটা হোঁচট খাই সুহার এমপি সাহেব।
ঘোরের মাঝেই হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখতে চায় সুহার অবয়বকে। সুহার গালে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে সাহিত্যে।
এদিকে সাহিত্যর কাজ মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সুহার। এমন করছে কেন এমপি সাহেব? সুহা নিজের মুখে রাখা সাহিত্যের হাত আঁকড়ে ধরে। কাঁপা গলায় অস্ফুট স্বর বেরোয়,,

:- এমপি সাহেব!!

সুহার ডাক শুনে বাস্তবে ফেরে সাহিত্য। অতি ঝটকায় দু পা পিছিয়ে যায়!! তারপর হুট করেই এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুহাকে । এতোটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেন বুকের মাঝে ঢুকিয়ে ফেলতে চাইছে। হাঁসফাঁস করে সুহা।

নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে সাহিত্যেকে ছাড়িয়ে নিতে চায়। কিন্তু তার মতো একরত্তি সুহাসিনীর গায়ের সবটুকু জোর দিয়েও সাহিত্যের মতো জিম করা পেটানো শরীর কে সরাতে সক্ষম হয়না। কিছুক্ষণ পর নিজেই সুহাসিনীকে নিজের থেকে আলাদা করে সাহিত্য।
অতি আদরে সুহার দু গালে হাত রেখে নরম সুরে জিজ্ঞাসা করে,,,

:-কার সাথে এসেছিস ফুল?

সুহা মিন মিন করে জবাব দেয়,,,

:-অরুদ্ধ ভাইয়ের সাথে।পরপর জবাব দেয়,,

:-আপনার ফোন বন্ধ কেনো ?আমি সেই সকাল থেকে ফোন দিচ্ছিলাম ।আপনাকে পাইনি।
টিভিতে কি সব নিউজ দেখাচ্ছে আপনাকে নিয়ে।
আমি…..

শেষ হয় না সুহার কথা। তার আগে সাহিত্য জিজ্ঞাসা করে,,,,

:-তুই এগুলো বিশ্বাস করিস ফুল??

সুহা তৎক্ষণাৎ ছটফটিয়ে জবাব দেয়,,

:- নাহ। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি এমপি সাহেব। জানি এগুলো মিথ্যা। আপনাকে কেউ ফাঁসাচ্ছে।

সহার কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় সাহিত্য। সুহাকে কাছে টেনে কপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখে কিছুক্ষণ ।পরপর নিজ অধর দ্বারা সুহার কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়।
অতঃপর আবারো নিবিড়ভাবে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে তার আদর,,তার প্রাণ প্রদিপ সুহাসিনীকে।

চলবে,,,,,

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব,,,,১৬
মৌমো তিতলী

কলেজে নিজের কেবিনে বসে আছে মেহরাব। ভাইয়ের বেপার টা বেশ পেরেশান করছে তাকে। তবে তার বিশ্বাস আছে তার বিচক্ষণ সহদর বিষয়টা সামলে নিতে পারবে।
আজ কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এডমিট কার্ড দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষার্থীরা এসেছে তাদের এডমিট কার্ড নিতে। কেবিন থেকেই তাদের সরগোল শোনা যাচ্ছে। মেহরাব দুহাত মাথায় ঠেকিয়ে টেবিলের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। এমন সময় কেবিনের দরজায় টোকা পড়লো। মেহরাবের ধ্যান ভাঙ্গে,, জিজ্ঞাসা করে কে? জবাব আসে না। আবারো হালকা শব্দে কড়া নড়ে। মেহরাব উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আরশির অবয়ব চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়। মেহরাব দরজার বাইরে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আরশির হাত টেনে নিয়ে দরজাটা চাপিয়ে দেয়। বক্ষ পিঞ্জরে আগলে নেয় প্রেয়সীকে। লজ্জায় গুটিয়ে যায় আরশি। সে সকালে নিউজটা দেখে এসেছিলো মেহরাবের সাথে দেখা করতে। সে জানে সাহিত্য এমন কাজ করতে পারে না। নিশ্চয় ভাইয়ের জন্য চিন্তিত মেহরাব।
তবে এখন ভারি লজ্জা পাচ্ছে আরশি। যদিও দুই পরিবার রাজি হয়েছে তাদের বিয়ের জন্য তবুও মেহরাবের কাছে আসলে অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে থাকে মেয়েটা।
আরশি নড়েচড়ে উঠলে তাকে ছাড়ে মেহরাব। তবে নিজের থেকে আলাদা করে না। কোমর জড়িয়ে রাখে নিজের সাথে। কপালে চুমু এঁকে দেয় অতি আদরে। লজ্জায় রক্তিম হয় প্রেয়সীর মুখশ্রী। পাশের চেয়ারে বসিয়ে দেয় আরশিকে। নিজে হাঁটু মুড়ে বসে তার সামনে। আরশির দুহাত নিজের দু হাতে আলতো করে চেপে ধরে বলে,,,

:- এডমিট কার্ড নিয়েছো??

আরশি লজ্জায় কথা বলতে পারে না। উপরনিচে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝায়। মেহরাব সেটা দেখে হাসে, আবারো জিজ্ঞাসা করে,,,

:- মিরা লাবণ্য আসেনি?

:- এসেছে। ওরা বাইরে আছে। আমি ওদের আড়ালে এসেছি।
মেহরাব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় তার সরল প্রেয়সীর দিকে।
আরশি আবারো প্রশ্ন করে,,
:- স্যার আপনি কি চিন্তিত সাহিত্য ভাইয়ার বেপার টা নিয়ে?

মেহরাব হালকা হেসে বলে,,,

:- চিন্তিত তবে অল্প একটু। কারণ আমি ভাইকে আমি চিনি। ও ঠিক বিষয়টাকে সামলে নেবে।

আরশি মুচকি হাসে। মেহরাব বিভোর হয়ে দেখে সেই হাসি‌।

_________

লিভিং রুমে বসে আছে আহাদ মির্জা। পাশের সোফায় শাহেদ খান। যতই হোক তারা কিছুদিন পর একটা আত্মীয়তার সম্পর্কে বাঁধা পড়তে চলেছেন। এখন বন্ধু প্লাস হবু বেয়াইয়ের বিপদে পাশে থাকা তাদের কর্তব্য। আহাদ মির্জা মনে মনে শান্তি পান এটা ভেবে যে অন্তত তার আপন লোকেরা কেউ তাদেরকে ভুল বোঝেনি।

শাহেদ খান কিছুক্ষণ থেকে নানা রকম শান্তনা দিয়ে চলে গেলেন।
*********
কাল থেকে কারো খাওয়া হয়নি। সবাই একরকম টেনশনের মধ্যে দিন পার করছে। আয়েশা সিদ্দিকা গতকাল সাহিত্য বাড়ি ছাড়ার পর থেকে বিছানায় পড়েছেন। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন তিনি।

শেফালী বেগম সকলের জন্য টুকটাক রান্না করে বেরিয়ে আসেন লিভিং রুমে। ভাইয়ের কাছে গিয়ে ডাকেন,,

:- ভাইয়া কাল থেকে চিন্তা করে না খেয়ে আছো। চলো কিছু একটা মুখে দিবে।

:- আমাকে এখন খেতে বলিস না শেফালী,,আমি ঠিক আছি। তোর ভাবিকে কিছু খাইয়ে দে পারলে। এমনিতেও প্রেশার ফ্রেশার বাড়িয়ে বিছানা নিয়েছে। এরপর না খেয়ে থাকলে আবার তাকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়াতে হবে।

শেফালী বেগম আর ভাইকে জোর করলেন না। খাবার প্লেটে বেড়ে নিয়ে চললেন আয়েশা সিদ্দিকার ঘরে।

*********

আমজাদ তালুকদারের মুখে ক্রুড় হাসি। সামনেই টিভি চলছে। পাশেই দাড়িয়ে আছে শফিক। বসের মুখে হাসি দেখে সে ভিষণ গর্বিত। শেষ পর্যন্ত একটা কাজের কাজ করতে পেরেছে। তাইতো বস খুশি হয়েছে। শফিক আনন্দে বিগলিত হয়ে বলে,,,

:- বস দেখলেন কেমন প্যাচে ফেলেছি ওই ছোকরা এমপি কে। এবার দেখবেন জনগণেই চুরির দায়ে ওই ছোকরা কে টেনে হিচড়ে গদি থেকে নামাবে।

নাক কুঁচকায় আমজাদ তালুকদার। শফিকের দিকে তাকিয়ে বলেন,,,

:- এখনই এতো খুশি হওয়ার কি আছে। কাজটা ভালো করছোস ঠিক আছে। কিন্তু এতে জোরালো কিছু হবে বলে মনে হয় না। এটা শুধু মাত্র ওই ছোকরা এমপির রাজনীতি ক্যারিয়ারে একটা ছোট্ট বাধা মাত্র। এটা সে ওপর মহলকে টাকা খাইয়েও পার করতে পারবে। ( কিছু মানুষ আছে যারা মানুষ কে নিজের চরিত্রে বিচার করে,, আমজাদ তালুকদার সেই লেভেলের লোক। সে মনে করে সবাই তার মতো অনৈতিক কাজ করে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে পারে)

শফিক মনে মনে বেশ ক্ষুন্ন হয়। এতো মাথা খাটিয়ে একটা কাজ করলো আর বস তাকে উল্টো কথা শোনাচ্ছে।
আমজাদ তালুকদার আবার বলেন,,

:- কাজটা তুই করলি কি করে শফিক?

শফিকের মুখে হাসি চওড়া হয়।

:- বস ওদের ফ্লাইওভারের কাজ যারা করছে তার মধ্যে কয়েকজন কে টাকা দিয়ে দলে টেনেছিলাম। লিটন,মন্টু,খলিল,সিরাজ এগো দিয়া আসল কাঁচামাল সরিয়ে নকল কমদামি রড,সিমেন্ট ওদের কাঁচামালের সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলাম। আর ওদের কে শিখিয়ে দিয়েছিলাম সাংবাদিকদের বলতে যে এগুলোই ব্যবহার করছেন এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জা।

:- বাহ!! তোর তো দেখি ভালোই বুদ্ধি। এমপি সোহরাব সাহিত্য মির্জার সর্বনাশ তো আমি করবোই। কিন্তু তার কাজে মাঝে মধ্যে এরকম ঝুট ঝামেলা বাধানোই যায়। তাতে ওর ধৈর্য হারাবে। বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন।

তারা নিজেদের ছোটখাটো কাজে সফল হয়ে আনন্দে এতোই মাতোয়ারা ছিলো যে জানতেই পারলো না তাদের অগোচরে কেউ তাদের সমস্ত কু কির্তির গল্প তার ফোনের ক্যামেরায় বন্দী করে সন্তর্পণে কেটে পড়লো।

*********

সুহা বাসায় এসেই গোসল করে ঘুমিয়েছিলো। উঠলো যখন সন্ধ্যা। দুপুরে বাসায় আসলে তাহিরা বেগম জানতে চাইলে বলে নিপা কে নিয়ে একটু শপিং মলে গিয়েছিলো। আসার সময় বুদ্ধি করে আগেই কিছু কেনাকাটা করে নিয়েছিলো সুহা। মাকে যেন সহজে বোঝাতে পারে। তাহিরা বেগম আর কিছু বলেননি মেয়েকে। আসলে কোনরকম সন্দেহই তো তিনি করেননি। কারন সুহা আর নিপা মাঝে মধ্যেই বেরোই এমন। কিন্তু তাকে বলে যায়নি বলে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

সুহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় চিরুনি করে নেয়। হুট করেই মনে পড়ে তখন সাহিত্যের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা। রক্তিম হয় মুখ।

তখন,, সাহিত্য সুহাকে দেখে সত্যিই খুব খুশি হয়েছিলো। কতক্ষন ওভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়েছিলো ভাবতেই শরীরে অনুভূতির ঠান্ডা স্রোত বয় সুহার।
পরে সাহিত্যের ফোন আসলে সুহাকে বলে, তাকে এখনই বেরোতে হবে। অরুদ্ধের সাথেই আবার সুহাকে পাঠিয়ে দেয় ‌ অরুদ্ধ কে তার মায়ের কাছেই থাকতে বলে। হাতে একটা দিন। এর মধ্যে তাকে প্রমাণ পেশ করতে হবে। অল্প সময় প্রিয়তমাকে কাছে পেয়ে নতুন উদ্যমে শক্তির সঞ্চার হয় তরুণ সুদর্শনের। যাওয়ার আগে প্রেয়সীর কপালে ভালোবাসার পরশ দিতে ভোলে না।

সুহা ভিষণ খুশি সাথে চিন্তিত। তার এমপি সাহেব পারবে তো নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে! কোন ক্ষতি হবে না তো তার!! অজু করে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেয় সুহা। মোনাজাতে প্রিয়তমের জন্য প্রার্থনা করতে করে মহান রবের দরবারে।

______

সাহিত্যেদের সেই পুরনো গোডাউন। সেটাকে তারা নাম দিয়েছে অপরাধীদের আজাবঘর। সেখানেই চারজনকে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। চারজন নিঃসন্দেহে লিটন ,মন্টু ,সিরাজ আর খলিল। সাহিত্যর কথা অনুযায়ী তিয়াশ আর সিফাত ধরে এনেছে চারজনকে।

কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত হয় সাহিত্য। সাহিত্যকে দেখেই চারজনের হালুয়া টাইট হওয়ার অবস্থা।
তিয়াশ গিয়ে লিটনের মাজা সোজা লাথি বসিয়ে বলে,,,

:- শালা নেমকহারাম !!পয়সা দিয়া তোদেরকে কামে দিছি, আর তোরা হারাম খাইয়া নেমকহারামি করিস!!
বল কুলাঙ্গারের বাচ্চা !!আমগো মালামাল কই লুকাইছস? এখনই কইয়া ফালা নয়তো তোর কইলজা টায়না বাইর কইরা ফালামু!!

লাথির চোটে মুখ দিয়ে গোগো করতে থাকে লিটন।
সাহিত্য এগিয়ে গিয়ে ওদের চারজনের সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,,,

:-দেখ ভালই ভালই মুখ খোল তাইলে তোদেরকে ছেড়ে দেবো। আমি জানি তোরা পেটের দায়ে টাকার লোভে কাজটা করতে বাধ্য হয়েছিস!!
সব স্বীকারোক্তি দিয়ে বল, আমাদের মালামাল কোথায় রেখেছিস? তাহলে তোদেরকে আইনের হাতে তুলে দেবো না। আমি জানি তোদের পরিবার আছে,বউ বাচ্চা আছে। তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্যই তোরা কাজটা করতে বাধ্য হয়েছিস। যদিও আমি তোদের যথেষ্ট পারিশ্রমিক দিতাম।কিন্তু তোরা নেমকহারামি করলি।তবুও এটা তোদের জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে লুফে নিতে পারিস। নয়তো একটাও প্রাণে বাঁচতে পিরবি না। এই সোহরাব সাহিত্য মির্জার সাথে দু’নম্বরী করে কেউ বাঁচতে পারে না। এখান থেকে মেরে তোদের গুম করে দিলে তোদের একটা রক্তের ছিটে পর্যন্ত কেউ পাবে না।

মন্টু, সিরাজ ,খলিল হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।গড়গড় করে সব সত্যি বলে দেয় ,,,

_শফিকের কথামতো তারা এ কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। শফিক অনেকগুলো টাকা দিয়েছিলো তাদেরকে। বলেছিল তারা তার কথামতো কাজ না করলে তাদের পরিবারের ক্ষতি করে দেবে। তাই তারা তাদের কথামতো কাজগুলো করতে বাধ্য হয়েছে। এই সমস্ত কাঁচামাল তারা শীতলপুরের পেছনে বড় আম বাগানের ভেতরে আমজাদ তালুকদারের খামার বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে।
সাহিত্য সকল স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে ওদেরকে ছেড়ে দেয়। আর বলে দেয়, ভবিষ্যতে কখনো টাকার কাছে ঈমান যেন বিক্রি না করে। বেইমান হয়ে বেঁচে থাকার থেকে ঈমান নিয়ে মরে যাওয়া ভালো। তারাও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে লিটনকে উঠিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যাই।

_________

পরের দিন সাহিত্য তার লোকজন দিয়ে কাঁচামাল গুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসে।প্রেস মিডিয়ার লোক ডেকে সমস্ত তথ্য ,ভিডিও চিত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।এমনকি যেসব জনগণ সাহিত্যর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলো তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তরুণ এমপির নিকট। তারা নিজেদের কাজে লজ্জিত। তারা দুঃখিত হয়ে বলে,,
_ সত্যিটা না জেনেই তাদের সাহিত্যকে অপরাধী করা উচিত হয়নি। প্রেস মিডিয়ার লোকেরাও এমপি সাহিত্য মির্জার কাছে ক্ষমা চাই। পুলিশ গিয়ে শফিককে আটক করে। আমজাদ তালুকদার সশরীরে সক্রিয়ভাবে এই কাজে জড়িত না থাকায় তাকে আটক করতে পারে না। তাছাড়া আমজাদ তালুকদার নিজের স্বপক্ষে উকিলও ঠিক করে রেখেছিলেন। আড়ালে শফিককেও তিনি আশ্বস্ত করেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে ছাড়িয়ে আনবেন।

__________

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে যায়। পুরো মির্জা পরিবার এসেছে খান বাড়িতে। আরশি আর মেহরাবের এনগেজমেন্ট নিয়ে আলোচনা করতে। আরশিকে তার মা রত্না খান একটা বেবি পিন্ক কালারের শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। শাড়িটাতে মেয়েটাকে অপ্সরীর মত লাগছে। খোলা চুলে মাথায় মোর্জিত ভাবে শাড়ির আঁচল টেনে দিয়েছে। মুখে তেমন কোন আর্টিফিশিয়াল সাজগোজ নেই। তাতেও কি চমৎকার লাগছে মেয়েটাকে। বুক ধরফর করে মেহরাবের। মেয়েটাকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দ বয়ে যায় শিরায় শিরায়।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার প্রেয়সীর দিকে। আরুশ ব্যাপারটা খেয়াল করে মেহরাবের পায়ে পাড়া দেয়। খুকখুক করে কেশে ওঠে মেহরাব। আরুশকে ইশারা করে মেহরাব। আরুশ গিয়ে মেহরাবের কানে ফিসফিস করে বলে,,,

:-তোর লজ্জা করে না?বড় ভাইকে তার বোনের সাথে আলাদা করে দেখা করিয়ে দিতে বলছিস!!

মেহরাব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,, না আমার লজ্জা নেই। আমি ভীষণ নির্লজ্জ ,শুধু তোর বোনের বেলায়।

মেহরাবের কথা শুনে বিড়বিড় করে আরুশ।
_আমি তো ভুলেই গেছিলাম এটা মেহরাব মির্জা। এই ঘুজি এন্টিবায়োটিকের দ্বারা সব সম্ভব।

আরুশের বদৌলতে আরশি আর মেহরাবকে আলাদা করে কথা বলতে পাঠানো হয়। আরশি মেহরাব কে নিয়ে ছাদে আসে।
ছাদে আসতেই মেহরাব হেঁচকা টানে কাছে নিয়ে আসে‌ আরশিকে। আরশি গিয়ে পড়ে মেহরাবের বুকে। এতক্ষণে মেহরাব নিজেকে সামলে রেখেছিলো। প্রেয়সীর এই নতুন রূপে টাল মাতাল অবস্থা প্রেমিকের। ভেতরে ঘূর্ণিঝড় বয়।
এদিকে আরশির অবস্থা করুণ। লজ্জা সাথে ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার অনুভূতি মিলেমিশে একাকার অবস্থা। মেহরাবের বুকের কাছে শার্ট আঁকড়ে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয় আরশি। মেহরাব আরশির কোমর জড়িয়ে ধরে চুমু এঁকে দেয় কপালে। নাকে নাক ঘষে বলে,,,

:- আই লাভ ইউ আরশি !!আই লাভ ইউ সো মাচ!!

লজ্জায় চোখ নিচে নেয় আরশি। ঠোঁটে তার পরিতৃপ্ত লজ্জা রাঙ্গা হাসি।

পরপরই মেহরাব আরশির অধরে অধর মিলিয়ে দেয়। এতদিনের তৃষ্ণা মেটাতে থাকে প্রেয়সীকে বক্ষে জড়িয়ে ধরে।তার অধরসূধা পান করতে থাকে অস্থির হয়ে। প্রিয়সীকে এভাবে কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল আরশির উন্মত্ত প্রেমিক।

আরশি থরথর করে কাঁপতে থাকে। মেহরাবের ছোঁয়ায় নিস্তেজ হয় মেয়েটা। দম আটকে আসে।দাড়িয়ে থাকার শক্তি যেন হারাচ্ছে মেয়েটা। পড়তে নিলেই সামলে নেয় তার অধরে চুম্বনরত প্রণয়পুরুষ তার হবু স্বামী।
অনেকক্ষণ পর দু প্রেমিক যুগলের অধর আলগা হয়। কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে শ্বাস নিতে থাকে দুজনেই। আরশির অস্থিরতা টের পেল যেন মেহরাব। আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

:- এভাবে শ্বাস নেয় না জান!!

আরশি লজ্জা রাঙ্গা মুখ লুকাতে মেহরাবের বুকেই আশ্রয় খোঁজে,,,

কিছুক্ষণ পর নিজেদেরকে সামলে নিচে আসে আরশি মেহরাব। দু পরিবার আলোচনা শেষে তাদের এংগেজমেন্টের দিন ধার্য করে আগামী শুক্রবারে। হাতে মাত্র তিন দিন।

চলবে,,,,