ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-২৮

0
70

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
পর্ব ,,,,,২৮
মৌমো তিতলী

অন্ধকার ঘরে ইজি চেয়ারে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন সুহাসিনীর বাবা মোতালেব হোসেন। সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনার হিসেবে বিভোর তিনি।
অভিজ্ঞ শিক্ষক মোতালেব হোসেনের সিদ্ধান্তে কোথাও কি কোন ফাঁক থেকে গেল? সাহিত্যকে ফিরিয়ে দেয়া কি ঠিক হলো? তিনি কি আসলেই একটু বেশি কঠোর হয়েছেন? সাহিত্য যে তার মেয়ে সুহাসিনীকে সত্যিকার অর্থেই ভালবাসে সেটা তিনি মনে প্রানে বিশ্বাস করেছেন একথা তো মিথ্যা নয়। তিনি জানেন সাহিত্যের অনুভূতিতে কোন খাদ নেই ,স্বার্থ নেই।
কিন্তু তিনিই বা কি করতেন! নিজের একমাত্র মেয়ের জীবন সুরক্ষার খাতিরে তাকে একটু কঠিন হতেই হতো। তবুও, তবুও ভেতর থেকে যেন কেউ বলছে_ তিনি ভুল করেছেন। কিছুতেই মনে শান্তি পাচ্ছেন না মোতালেব হোসেন। আচ্ছা তার কঠোরতাই বাল্যবন্ধু আহাদ মির্জা কি তাকে ভুল বুঝলেন??
ভাবনার মাঝেই পায়ের কাছে কাউকে অনুভব করে চোখ মেলে তাকালেন মোতালেব হোসেন। সুহাসিনী তার বাবার পা ছুঁয়ে নত মস্তকে বসে আছে দেখে তিনি সোজা হয়ে বসলেন। মেয়ের মাথায় হাত রেখে কোমল স্বরে ডাকলেন,,

:- আম্মা!! কি হয়েছে??

বাবার ডাকে মাথা তুলে তাকালো সুহাসিনী। চোখে অজস্র অশ্রু ঢল। মোতালেব হোসেনের মেয়ের ভেজা চোখ দেখে বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। ব্যাস্ত হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুধালেন,,,

:- কাঁদছো কেনো আম্মা?? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আব্বুকে বলো?

সুহা বাবার আদরমাখা কন্ঠে আরো ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। কিছুক্ষণ পর ভাঙ্গা গলায় বলে,,,

:- তুমি ওনাকে ওভাবে ফিরিয়ে দিলে কেনো আব্বু??

মোতালেব হোসেন মেয়েকে পরখ করতে বললেন,,

:- কেনো ফিরিয়ে দিয়েছি সে কথা তো তখনই পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছিলাম আম্মা। তুমি তো সেখানে উপস্থিত ছিলে! সবটায় তো তোমার জানা। তাহলে আবার এই প্রশ্ন কেনো আম্মা?

সুহা বাবার কথায় মাথা তুলে তাকায়। আলগোছে চোখের পানি মুছে বলে,,

:- আব্বু ছোট বেলা থেকে তুমিই তো সবসময় বলতে, আমাদের জীবনে জন্মের পর সবথেকে বড় বাস্তবতা হলো মৃত্যু!! আর আমাদের সেই মৃত্যু কখন, কিভাবে, কোন পরিস্থিতিতে হবে সেটা মহান আল্লাহ তায়ালা পূর্বনির্ধারিত করে রেখেছেন!!

:- হ্যাঁ আম্মা!! আমি এখনো তাই বলছি। আমাদের জীবনের সবথেকে নির্মম শক্তি হলো মৃত্যু। যা অবধারিত। আল্লাহ যে পরিস্থিতিতেই আমাদের মৃত্যু লিখে রেখেছেন মৃত্যু আমাদের সেখানে টেনে নিয়ে যাবেই।

:- তাই যদি হয় তাহলে তুমি ওনাকে আমার জীবন রক্ষার্থে কেন ফিরিয়ে দিলে আব্বু? আমাকে উনার থেকে দূরে রেখে সুরক্ষিত রাখলেও মৃত্যু থেকে কি আমাকে বাঁচাতে পারবে আব্বু?? উনার শত্রুদের হাতে যদি আমার অপঘাতে মৃত্যু লেখা থাকে, তাহলে তো আমাকে সিন্দুকে সুরক্ষিত রাখলেও মৃত্যু আমাকে সেখানেই টেনে নিয়ে যাবেই আব্বু।

মোতালেব হোসেন অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। বিস্ময় ভরা নয়নে গম্ভীর কন্ঠে শুধালেন,,,

:-আম্মা তুমি কি……

:-ভালোবাসি আব্বু! উনি আমাকে ঠিক যতটা ভালবাসে, আমিও উনাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি আব্বু।

মোতালেব হোসেন বিস্ফোরিত নয়নে মেয়ের মুখের দিকে তাকান। তিনি তো বারবার মেয়ের ভেতরের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করেছেন। কই সুহাসিনীকে দেখে তো তেমন মনে হয়নি আগে। তাহলে কি ওনার এতো দিনের অভিজ্ঞ চোখ আর বিচার বিশ্লেষণে কোন ভুল হলো?? হ্যাঁ ভুল হলোই তো!! এই যে মেয়ের অনুভূতি তার কাছে ভুল প্রমাণিত হলো!

তিনি মেয়ের মাথায় স্নেহের সহিত হাত রেখে নরম গলায় জিজ্ঞাসা করলেন,,

:-তাহলে সেটা তুমি তখন তাদের সামনে বললে না কেন আম্মা??

সুহা বাবার হাতে হাত রেখে বললো,,

:- তুমি তো তখন সবার সামনে আমার মতামত জানতে চাওনি আব্বু। তুমি তখন আমার সুরক্ষার চিন্তায় বিভোর ছিলে। তাই আমি যদি তোমার সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে আগবাড়িয়ে কিছু বলতে যেতাম, তাহলে তুমি সেটা বুঝতে চাইতে না আব্বু!! উপরন্তু তোমার সাথে বেয়াদবি করা হতো। তোমার সিদ্ধান্তের অসম্মান করা হতো!!
তুমি তো আমাদের সেই শিক্ষা দাও নি আব্বু। তাই চুপ ছিলাম। তোমার সাথে একান্তে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল তোমাকে পরে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বললে, তুমি ঠিক বুঝবে।

মোতালেব হোসেনের মেয়ের বিচক্ষণতায় গর্বে বুক ফুলে উঠলো। তিনি মেয়েকে উঠিয়ে পাশে বসিয়ে বললেন,,,

:- আমি নিজেও ভেবে দেখলাম আম্মা!! এমপি সাহেবকে কষ্ট দিয়ে ওভাবে ফিরিয়ে দেয়া আমার উচিত হয়নি। একবার আমার সবটা ভালোভাবে ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিলো। এক্ষেত্রে আমার একটু ভুল হয়েছে আম্মা!! ক্ষমা করো তোমার অসহায় পিতাকে।

সুহাসিনী অপ্রস্তুত হয়ে বাবার হাত ধরে বললো,,,

:- এটা কখনো করোনা আব্বু। ওটা তোমার ভুল ছিল না আব্বু। সন্তানের জন্য তোমার চিন্তা করার, সিদ্ধান্ত নেয়ার সব থেকে বেশি অধিকার আছে। আমি সম্মান করি সেই সিদ্ধান্তের। পারলে তুমি আমাকে ক্ষমা করো আব্বু আমি তোমাদেরকে না জানিয়ে এমপি সাহেবকে……..!!
বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে সুহাসিনীর।
মোতালেব হোসেন মেয়েকে একপাশ থেকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,,

:-এখানে তোমার কোন ভুল নেই আম্মা। ভালোবাসা কোন ভুল নয়! যদি সেটা সঠিক মানুষের জন্য হয়। আমার মনে হয় এমপি সাহিত্য মির্জা তোমার জন্য সঠিক মানুষ আম্মা। তুমি তোমার ভালোবাসা অপাত্রে দান করো নি। তোমাদের ভালোবাসা বৃথা যায়নি আম্মা।

সুহা বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।
মোতালেব হোসেন স্বস্নেহে মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে বললেন,,,

:-তুমি কাল একবার ও বাড়িতে যেয়ো । তারা এভাবে চলে গেলো, না জানি ছেলেটা কি অবস্থায় আছে। ছেলেটা খুব কষ্ট পেয়েছে আজ। তুমি একবার গিয়ে সামনে দাঁড়ালে সবটা ঠিক হয়ে যাবে আম্মা।
পরে আমি আর তোমার মা গিয়ে কথা বলে নেবো।
দেখি এখন ওঠো তো!! গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে। কাল সকালে যেও ওবাড়িতে।

বাবার কথা সম্মতি জানিয়ে সুহা চোখ-মুখ মুছে গুটিগুটি পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ।
সুহা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই, দরজার পাশ থেকে বেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তাহিরা বেগম। এতক্ষণ বাবা মেয়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন তিনি। ডিস্টার্ব হবেন বলে আর ভেতরে আসেনি।
তিনি এসে স্বামীর কাঁধে হাত রাখলেন। মোতালেব হোসেন স্ত্রীর হাতের উপর হাত রেখে বললেন,,,

:- আমাদের ছোট্ট মেয়েটা কবে এতো বড় হয়ে গেল সুহার আম্মা?? মেয়ে আমাকে বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়ে গেলো ।উচিত ,অনুচিত এর পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়ে গেলো।
তাহিরা বেগম স্বামীর পাশে বসে স্বামীর বুকে মাথা রেখে বললেন ,,,,

:-এত চিন্তা করো না!! সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

মোতালেব হোসেনও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কে ভাবতে লাগলেন।

________________

পরদিন সকালে,,,

মির্জা ম্যানসনের লিভিং রুমে সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছেন। আহাদ মির্জা,অরুদ্ধ, সিফাত আর আজ তিয়াশও অসুস্থ শরীরের তোয়াক্কা না করে হাজির হয়েছে মির্জা ম্যানশনে। বন্ধুর এমন পরিস্থিতি শুনে সে কিছুতেই বাড়িতে বসে থাকে পারেনি। আরশি সবাইকে চা দিলো। গতকাল থেকে কেউই কিছু মুখে দেয়নি।
আয়েশা সিদ্দিকা গতকাল সাহিত্য ঘরের দরজা দেয়ার পর থেকে কেঁদেই চলেছেন। সাহিত্যও গতকাল থেকে রুমের দরজা খোলেনি। আহাদ মির্জা সহ অরুদ্ধ,তিয়াশ, সিফাত, আরশি এমনকি মায়ের ডাকেও কোন সাড়া দেয় নি সাহিত্য। এতেই সকলের চিন্তার সীমা ছাড়িয়েছে। ঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে কি করছে সাহিত্য! কি অবস্থায় আছে সেটা নিয়েই চিন্তিত সকলে।

_____

সকাল ৮ টা বাজে। মির্জা ম্যানসনের গেটের সামনে এসে রিকশা থেকে নামলো সুহা। ভাড়া মিটিয়ে তাকালো গেটের দিকে। বুকটা ভিষণ ঢিপঢিপ করছে তার। সাহিত্য কি খুব বেশি রেগে থাকবে তার ওপর? সে কি বেশি কষ্ট দিয়েছে তার এমপি সাহেব কে? নানান চিন্তা ভাবনা নিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যায় সুহাসিনী। দারোয়ান চাচা আবদুল হামিদ সুহাকে দেখে হাসি মুখে গেট খুলে দেয়। তিনি বাড়ির পুরনো দারোয়ান হলেও, বাড়ির ভেতরের খবর কিছুই তার অবগত নয়। সুহাকে এবাড়িতে কয়েকবার আসতে দেখেছে বিধায় তাকে চিনতে পেরে ঢুকতে বাঁধা দেননি। সুহা ভেতরে এসে দারোয়ান চাচা কে সালাম দিয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করে,,,,

:- এমপি সাহেব কি সকালে বেরিয়ে গেছেন চাচা??

বৃদ্ধ দারোয়ান আব্দুল হামিদ সুহার কথায় হেসে বলেন,,

:- না আম্মা। ছোট স্যার কাইল বিকেলে বাইতো আইছিলো। আর তো বাইর হয়নাই। তুমি যাও। তাকে বাইতই পাবা!

দারোয়ান চাচার কথায় ভয় যেন বাড়ে সুহার। বুকের ওপর হাত রেখে আশ্বস্ত করে নিজেকে। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সদর দরজার দিকে।

______

অরুদ্ধ গিয়ে আরো কয়েকবার দরজায় টোকা দিয়ে ডাকে সাহিত্য কে। ফলাফল শূন্য। কোন সাড়া নেই। শরীরে ব্যাথা নিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠে আসে তিয়াশ। বারকয়েক সাহিত্যের নাম ধরে ডাকে। তবুও সাহিত্য দরজা খোলে না দেখে জোরে লাথি দেয় দরজায়। মুহুর্তে পায়ে ব্যাথা পেয়ে কুঁকড়ে ওঠে তিয়াশ। রাগে দুঃখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,

:- হালায় কদ্দিন এমনে রাজনীতি লাঠে উঠাইয়া মাইয়া মাইনষের মতো দরজা বন্ধ কইরা বইসা থাকবি?
ঘরতে বাইর হ কইলাম। না হইলে ক্যামনে সমস্যার সমাধান হইবো? দেবদাস হইছিস নাকি ব্যাটা?? দজ্জা খোল কইতাছি সাহিত্য!!

সাহিত্যের অবস্থা দেখে সুহার ওপর রাগ হয় অরুদ্ধের। সেবার তো সাহিত্যের খারাপ সময়ে ওই মেয়ে নিজেই ছুটে এসেছিলো সাহিত্যের খোঁজে। কতদিন,কতো মুহূর্ত এক সাথে কাটিয়েছে একে অপরের সাথে। ছেলেটা নিজের ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত বিসর্জন দিতে বসেছে ওই একটা মেয়ের জন্য। আর যখন তার সাহিত্যের পাশে সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিলো তখনই মেয়েটার এমন নির্লিপ্ত অনুভূতিহীন ভূমিকা যেন মেনে নিতে পারছে না অরুদ্ধ। কলিজার ভাইসম বন্ধুর এই অবনতির জন্য মনে মনে সুহাকে দায়ী করে অরুদ্ধ।

তখনই নিচ থেকে কলিং বেলের আওয়াজ ভেসে আসে। একবার,,দুবার,, তিনবার বাজে কলিং বেল। আরশি হাতের কাজ ফেলে রেখে দরজার দিকে যেতে যেতে জোরালো কন্ঠে বলে,,,

:- আসছি!!!

লিভিং রুমের সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। এই সময়ে আবার কে এলো এটাই তাদের চোখে প্রশ্ন।

আরশি গিয়ে দরজা খুলতেই সুহাকে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আরশি। আয়েশা সিদ্দিকা আরশিকে এমন নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে এগিয়ে আসেন দরজার দিকে। কে এলো? বলে দরজার সম্মুখে সুহাকে বিদ্ধস্ত অবস্থায় শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকেন। আরশি দরজা ছেড়ে একপাশ হয়ে দাঁড়ালে গুটি গুটি পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে সুহা।
ততক্ষণে অরুদ্ধ আর তিয়াশও নিচে নেমে এসেছে। সকলের এমন শান্ত আর অবাক করা চাহনিতে আরো মিইয়ে যায় মেয়েটা। অপরাধবোধে গলা আটকে আসে সুহার।
মির্জা ম্যানসনের লিভিং রুমে অবস্থিত সকলের দৃষ্টি সুহার ওপর নিবদ্ধ। সুহার চোখদুটো ছলছল করছে। মুখটা শুকিয়ে এতো টুকু হয়ে গেছে। মনের মাঝে অনুশোচনা আর ভয় দলা পাকিয়ে আছে। সবাই কি তাকে দায়ী ভাবছে?? এই ভয়ে জড়সড় মেয়েটা। আসেপাশে তাকিয়ে কাঙ্খিত মানুষ টাকে খোঁজার চেষ্টা করে সুহা। কোথাও দেখতে পায়না সেই কাঙ্খিত মুখটা। যেটা দেখার তৃষ্ণায় ছটফট করেছে গতকাল সারাটা রাত। এখানে আসার উত্তেজনায় ঘুম হয়নি একফোঁটাও।

হঠাৎই আয়েশা সিদ্দিকা ডুকরে কেঁদে উঠে জড়িয়ে ধরে সুহাকে। কান্না জড়ানো কন্ঠে বলেন,,,

:- তুই এসেছিস মা? আমি জানতাম তুই আসবি। আমার ছেলেটা যে কাল দুপুর থেকে না খেয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। তুই তাড়াতাড়ি যা সুহা। একবার গিয়ে ডাক। দেখবি তোর ডাকে আমার ছেলেটা ঠিক দরজা খুলবে। দুনিয়ার সবার ডাক উপেক্ষা করলেও তার ফুলের ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা যে নেই আমার ছেলেটার। তুই এখনই যা। জানিনা আমার ছেলেটা কি অবস্থায় আছে।

অরুদ্ধ, তিয়াশ, সিফাত,আরশি এমনকি আহাদ মির্জা নিজেও যেন আশার আলো দেখতে পান। সকলেই আশা করে আছেন এবার সুহার ডাকে নিশ্চয়ই দরজা খুলবে সাহিত্য। আরশি সুহার হাত ধরে উপরে নিয়ে আসে। সাহিত্যের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে সুহার। চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ে কপোল বেয়ে। এ বাড়ির সকলে তাকে কতটা ভরসা করছে‌ অথচ কাল যখন তার এবাড়ির সকলের হয়ে কথা বলার প্রয়োজন ছিলো, তখনই বাবার সম্মান রক্ষার্থে চুপ ছিলো মেয়েটা।

সুহা কাঁপা কাঁপা হাতে সাহিত্যের রুমের দরজায় করাঘাত করে। গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না সুহার। শব্দ করে ডাকতে ভয় লাগছে তার। তবুও চুপ থাকলে চলবে না। তাকে যে ডাকতেই হবে মানুষ টাকে। চোখে যে দারুন তৃষ্ণা। মেটাতে হলেও তাকে ডাকতে হবে। হালকা আওয়াজ করে ডাকে সুহা,,,,

:- এমপি সাহেব শুনতে পাচ্ছেন?? দরজা খুলুন। দেখুন আমি এসেছি। আপনার পদ্মফুল এসেছি এমপি সাহেব।

বিগত ১৬ ঘন্টা পর সাহিত্যের ঘর থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ শোনা গেলো। আয়েশা সিদ্দিকা দম আটকে দাঁড়িয়ে আছেন। ছেলেটার অস্তিত্ব অনুভব করে যেনো সকলের জানে পানি ফিরে এসেছে। সকলের মুখে আশার আলোয় উজ্জ্বল হয়।
সুহা এবার একটু জোরে শব্দ করে দরজায়। গলায়ও জোর আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করে সুহা।

:- এমপি সাহেব প্লিজ দরজা খুলুন… দেখুন আমি…..

সুহার মুখের কথা শেষ হয় না। আচমকা সবার সম্মুখে সটান দরজা খুলে যায়। দরজার হাতল ধরে অবাক দৃষ্টিতে সুহার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাহিত্য। হাতে মুখে শুকনো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ,,চোখে মুখে উদাস ভঙ্গি। দুটো লাল রক্ত জবার মতো চোখে পুরোটা রাত যে নির্ঘুম কেটেছে তার সাক্ষী দিচ্ছে যেন।
প্রিয়তম প্রেমিক পুরুষকে এক রাতের ব্যবধানে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে অন্তর কেঁদে ওঠে সুহার। ওড়নার কিনারা দিয়া মুখ চেপে কেঁদে দেয় সুহা। দু কপোল বেয়ে অবাধে অশ্রুধারা বয়ে যায়।

সাহিত্য যেমনই হুট করে দরজা খুলেছিলো তেমনই আচমকা খপ করে সুহার হাত টেনে নিয়ে সকলের মুখের ওপর ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তবে এবার সাহিত্য কে ছেড়ে সুহার চিন্তায় মুখ শুকিয়ে যায় সকালের। সুহাসিনী যেন নিজে থেকে বাঘের গুহায় ঢুকেছে, এমনই মনোভাব নিয়ে সকলেই সাহিত্যের রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।

***********
সাহিত্য সুহাসিনীকে ঘরে ঢুকিয়েই দরজা বন্ধ করে দেয়।
সাহিত্যর এলোমেলো টানে শুহার পা গিয়ে পড়েছে কয়েকটা কাঁচের উপর। মুহূর্তে দাঁতের দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে সুহা। পায়ে কয়েকটা কাঁচ ঢুকে যায় অবলিলায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে পায়ের তলা থেকে। সেদিকে খেয়াল থাকে না সুহার।নিজের পায়ের ব্যথা ভুলে পুরো রুমে চোখ বুলায় সুহা।রুমের ভেতরের অবস্থা দেখে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে যায় সুহা। পুরো ঘরে কাঁচের ছড়াছড়ি।

সাহিত্য হুট করে ছুটে গিয়ে সুহাসিনীকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
এতোটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে সুহার দম বন্ধ হবার উপক্রম হলো। অনুভব করে সাহিত্যের শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। কাঁদছে কি তার এমপি সাহেব?? সুহা দুহাতে আঁকড়ে ধরে সাহিত্যকে। সাহিত্য সুহাকে ছেড়ে দুহাতে সুহার মুখটা তুলে ধরে সারা মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয়। আবারো জড়িয়ে ধরে বক্ষ পিঞ্জরে। সুহাও চুপটি করে মিশে থাকে প্রিয়তমের বুকের সাথে লেপ্টে। সাহিত্যের হার্টবিট অসম্ভব গতিতে বিট করছে। তার প্রত্যেকটা অশান্ত ধক ধক শব্দ সুহার কান ভেদ করে অন্তর পর্যন্ত পৌঁছায়।

আচমকা সাহিত্য সুহাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এমন অপ্রত্যাশিত আকস্মিক ধাক্কায় নিজের ব্যালেন্স রাখতে হিমসিম খায় সুহা। পেছনের সোফায় বেজে পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। হঠাৎ সাহিত্যের এমন বিরুপ আচরণে খেই হারায় সুহা। ফাটা ফাটা চোখে সাহিত্যের দিকে তাকিয়েই আঁতকে ওঠে সুহা। সাহিত্য রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে সুহার দিকে। রাগে যেনো থরথর করে কাঁপছে সাহিত্য। কপালের রগ ভাসমান,,এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর লাগছে সাহিত্যকে। সুহা এগিয়ে গিয়ে সাহিত্য কে ছুঁতে গেলেই সুহার হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দেয় সাহিত্য। অসম্ভব রাগে গজগজ করতে করতে বলে,,,

:- কেন এসেছিস এখানে? কোন সাহসে পা রেখেছিস এই ঘরে??

সাহিত্যের এমন আচরণ নতুন সুহার কাছে ‌।ভয় পেলেও মানুষ টাকে সামলানো জন্য আবারো এগিয়ে যায় সুহাসিনী,,

:- খবরদার সুহা। ছুঁবি না আমাকে। কেন এসেছিস এই বাড়ি? দয়া দেখাতে এসেছিস?

সুহা সাহিত্যের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,

:- আপনি প্লিজ শান্ত হোন! আগে আমার কথাটা একবার শুনুন!

সুহার কথায় যেন আরো রেগে যায় সাহিত্য। হাতের কাছে একটা ফ্লাওয়ার ভাস পেয়ে সেটাই তুলে সুহার পায়ের কাছে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে। ভয় পেয়ে লাফিয়ে ওঠে সুহা। সেখান থেকে সরতে নিলেই আরো একটা কাঁচের উপর গিয়ে পা পড়ে। খচ করে বেশ অনেকখানি কাঁচ ঢুকে যায় সুহার পায়ে। চোখ মুখ খিঁচে সোফার কভার আঁকড়ে ধরে সুহা। বাম পায়ের ওপর ভর দিয়ে ডান পা উঁচু করে, বাম হাতে টেনে বের করে কাঁচের টুকরো টা। গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে। এত রক্ত দেখে মাথাটা যেন ঘুরে ওঠা সুহার। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সাহিত্যর দিকে তাকিয়ে দেখে সে পেছন দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো রাগে শরীর কাঁপছে তার।
এদিকে যে সুহা রক্তাক্ত হয়ে গেছে সেটা চোখে পড়ে না সাহিত্যর। পায়ের ব্যথার থেকে বেশি অন্তর ব্যথায় কুঁকড়ে যায় মেয়েটা। যেই মানুষটা কিনা এতো দিনে সুহার সামান্যতম কষ্ট সহ্য করতে পারতো না। সবকিছু ওলটপালট করে দিতো।সেই লোকটা অবলীলায় আজ সুবহার এতটা আঘাত অগ্রাহ্য করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। এই মানুষটাকে যেন চিনতেই পারছে না সুহা। তবুও কষ্ট চেপে রেখে বলে,,,

:- আপনি একবার আমার কথাটা তো শুনুন। তারপর আমাকে যা বলার বলবেন। দয়া করে আগে আমার কথাটা শুনুন।

সাহিত্য দ্রুত সুহার দিকে এগিয়ে এসে দু হাতে শক্ত করে সুহার দু বাহু খামচে ধরে। তিব্র ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে সুহা। সাহিত্যের নখ যেন দেবে যায় সুহার নরম তুলতুলে শরীর ভেদ করে।
বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে ওঠে সাহিত্যে,,,

:- কি শুনবো হ্যাঁ?? কি শুনবো তোর কথা?? এখন কথা বলতে এসেছিস? কাল কোথায় গিয়েছিলো তোর চোপা? কাল যখন আমার মা তোর বাপের পায়ের কাছে আঁচল পেতে তোকে ভিক্ষে চেয়েছিলো, কোথায় ছিলো তোর কথা?? কাল যখন আমি আকুল হয়ে তোর কাছে আমার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি ভিক্ষা চাইলাম, কোথায় ছিলো তোর কথা?? তুই জানতিস না? এই বল, তুই জানতিস না, তোকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোকে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা তোর অজানা ছিলো??কেনো চুপ করে ছিলি?কোথায় ছিল তোর কথা??
আজ এসেছিস আমার সাথে কথা বলতে?? প্রয়োজন নেই তোর কিছু বলার।তোর মতো বেইমানের কোন কথা এই সোহরাব সাহিত্য মির্জা আর শুনতে চাই না। শুনেছিস তুই?? এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাবি এই বাড়ি থেকে। এই বাড়িতে কোন বেইমানের জায়গা নেই। আর না জায়গা আছে এই সাহিত্য মির্জার জীবনে। তোর মুখও এই সাহিত্য মির্জা আর দেখতে চায়না।
বলেই দরজার দিকে একরকম ছুড়ে ফেলে সুহাকে। আচমকা ধাক্কা সামলাতে না পেরে মুখটা গিয়ে দরজার নবের সাথে ধাক্কা খায়। মুহুর্তেই ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসে। জিহ্বায় রক্তের নোনতা স্বাদ অনুভূত হয় সুহার।

সুহা নিজের শারীরিক চিন্তা, ব্যথা ভুলে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে সাহিত্যর দিকে। কি বললো সাহিত্য তাকে??

_সে বেইমান? সাহিত্যের জীবনে তার আর কোন জায়গা নেই?? তার মুখ আর দেখতে চায় না সাহিত্য??

শরীর অবশ হয়ে আসে সুহার। সাহিত্য তো তাকে কথা বলার কোন সুযোগই দিলো না। তার করা মাত্র ছোট্ট একটা ভুলের শাস্তি হিসেবে এতো বড় কঠিন সাজা শুনিয়ে দিলো তাকে? এই তাকে এতো ভালবাসে তার এমপি সাহেব?? এই কি তার এমপি সাহেব?? নাহ!! এটা তার এমপি সাহেব কিছুতেই হতে পারে না। তার এমপি সাহেব তো কখনো এতটা কঠোর মানুষ ছিলেন না।
অতি শোকে যেন পাথর বনেছে সুহাসিনী। কাঁদতেও ভুলে গেছে মেয়েটা। সাহিত্যর মুখের দিকে কিছুক্ষণ নিরবে তাকিয়ে থেকে এলোমেলো পায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। সুহা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই, সবাই হুরমুড় করে ঢোকে সাহিত্যর ঘরে।
আয়েশা সিদ্দিকা গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। অরুদ্ধ আর সিফাত সাহিত্যের ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাঁচগুলো সরিয়ে পরিষ্কার করতে থাকে। কখন না আবার কার পায়ে বিঁধে যায়। সকলে সাহিত্যর ঘরে ঢুকে সাহিত্যকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যে কারো চোখেই পড়লো না রক্তাক্ত একটা মেয়ে হৃদয়ে কি দারুন যন্ত্রণা,কতটা অসহনীয় ব্যথা বুকে পুঁজি করে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো।

অরুদ্ধ সোফার কাছের কাঁচগুলো তুলতে গিয়ে সেখানে এতটা পরিমাণ তাজা রক্ত দেখে কপাল কুঁচকে যায়।
সাহিত্যের কাছে গিয়ে হাত ,পা ,শরীর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে কোথায় আঘাত পেয়েছে সাহিত্য। গতকালের কেটে যাওয়া ছোটখাটো কিছু ক্ষত ছাড়া চোখে পড়লো না তার। যেখানে রক্তও শুকিয়ে গেছে। তাহলে এতখানি তাজা রক্ত কোথা থেকে এলো। অরুদ্ধের কাজের আগামাথা না বুঝে বিরক্ত হয় সাহিত্য। অরুদ্ধের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,,

:- এভাবে আমাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কি দেখছিস??

অরুদ্ধ চিন্তিত স্বরে বলে,,

:- রিসেন্ট শরীরের কোথায় বড় আঘাত পেয়েছিস তুই?? কোথায় কেটেছে দেখি তোর??

সাহিত্য অবাক হয়ে বলে,,,

:-কি উল্টোপাল্টা বকছিস তুই আমার কোথাও কাটেনি। কোথাও আঘাত পাইনি আমি।

অরুদ্ধের কপালে চিন্তার রেখা গাঢ় হয়। আনমনে বলে,,

:- তোর কোথাও কাটেনি। আঘাত পাসনি। তাহলে এতটা রক্ত এখানে কোথা থেকে এলো??

অরুদ্ধের কথায় সাহিত্যের নজর যায় সোফার কাছে ছড়িয়ে থাকা রক্তের দিকে। বেশ অনেক টা তাজা রক্ত ছড়িয়ে আছে সেখানে।
মুহূর্তই টনক নড়ে সাহিত্য। এখানেই তো তার পদ্মফুল দাঁড়িয়েছিলো। সে যে রাগের বশে ধাক্কা দিল মেয়েটাকে। মাথা ঘুরে ওঠে সাহিত্যর।বুকটা কেঁপে ওঠে অজানা ভয়ে।মুহুর্তেই হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে রক্তের সামনে। দুহাতের তালুতে রক্ত মাখিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরে। এই দুহাত ভরা তাজা রক্ত যেন চিৎকার করে বলছে,,এই রক্ত তার পদ্ম ফুলের। তার ভালোবাসার মানুষটির শরীর থেকে বেরিয়েছে। তার দেয়া ধাক্কার ফলস্বরূপ ভূতলে পতিত হয়েছে এই লাল তরল পদার্থ।

ডুকরে কেঁদে ওঠে সাহিত্য। এটা সে কি করে বসলো রাগের বসে! মেয়েটা যে তার সাথে কথা বলতে এসেছিলো!! আর সে কিনা তার পদ্মফুলকে আঘাত করে রক্তাক্ত করলো ? মেয়েটাকে এতো এতো কড়া বিষাক্ত কথা শুনিয়ে কষ্ট দিলো। রক্তাক্ত অবস্থায় কোথায় গেলো মেয়েটা? চিন্তায় বিভোর হলো সাহিত্য।

ঘর ভর্তি সবাই রক্তশূন্য মুখে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুহূর্তে ঘটা ঘটনা সকলেরই মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আর কিছু ভাবতে পারেনা সাহিত্য। এই মুহূর্তে সুহাসিনীর চিন্তায় বাকি সবকিছু ভুলে বসে সে। তার পদ্মফুলের খোঁজে এক ছুটে বেরিয়ে আসে মির্জা মেনশন থেকে। অরুদ্ধ আর সিফাতও সাহিত্যর পেছনে দৌড়ে আসে। সদর দরজা পেরিয়ে বাইরে আসতেই ছোট ছোট রক্তাক্ত পায়ের ছাপ চোখে পড়ে সাহিত্যর। মুহূর্তে বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যায় তার। চোখের জলে বাঁধ ভাঙ্গে। বুকে অসহনীয় ব্যথায় গলা ধরে আসে ছেলেটার। এক ছুটে বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে মেয়েটাকে। এতোটুকু সময়ের মধ্যে এই রক্তাক্ত পা নিয়ে কোথায় গেল মেয়েটা!! এই মুহূর্তে মেয়েটাকে পরম আদরে বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়ার তৃষ্ণায় বুকটা খা খা করে ওঠে সাহিত্যের।
কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েই এমন কিছু চোখে পড়ে,,,যা দেখে পায়ের নিচের মাটি সরে যায় সাহিত্যের।

তার রক্তাক্ত আদরের মুখ চেপে ধরে গাড়িতে টেনে তুললো কেউ। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে মেয়েটা। কিন্তু লাভ হলো না। মুহুর্তেই সাহিত্যের চোখের সামনে তার আহত প্রাণভোমরা কে তুলে নিয়ে চলে গেলো একটা কালো রঙের গাড়ি। সাহিত্য লোকটাকে দেখেই চিনতে পারে লোকটা আমজাদ তালুকদারের পালতু কুত্তা শফিক।

সাহিত্যের মুখ থেকে অস্ফুট অথচ ধারালো স্বরে বেরিয়ে এলো,,,

“আমজাদ তালুকদার”আমার আদর, আমার হৃদয়হরণী পদ্মফুলের যদি তোর দ্বারা এতোটুকুও ক্ষতি হয়, তাহলে আজই হবে তোর জীবনের শেষ দিন।

চলবে,,,,,