ভালোবাসি প্রিয়তম পর্ব-১০

0
1314

#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১০

🍁🍁🍁

কুয়াশা আবার আগের মতো লাইফ রিড করছে।সকালে উঠে রেডি হয়ে কলেজে যাওয়া, কলেজে মন দিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া,কলেজে থেকে ফিরে সবার সবার সাথে দুষ্টমি করা।তুষারের ফেন্ডদের সাথে ও কথা বললে তুষারের সাথে কথা বলে না। সবকিছুই নিয়মমাফিক ভালো ভাবেই চলছে। শুধু এখন আর আগের মতো তুষারের দিকে মাঝেমধ্যে তাকিয়ে থাকলেও এখন তুষারকে ফুল দমে ইগনোর করে। তুষারেও খারাপ লাগে সেদিন ওভাবে কথাগুলো বলে নিজের মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে ওর কুয়াসার সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজেছে অনেক কিন্তু পাই নি।মুলত কুয়াশায় সুযোগ দেই নি। সেদিনের পর আর রাজকে কলেজে দেখা যায় নি।রিমা আগের মতোই তুষারের সাথে ছেঁড়ার মতো এটে থাকে।

আজ কুয়াশারা কেউ কলেজে যায় নি। আজ কুয়াশার বাবা-মা, চাচা-চাচির মৃত্যুবার্ষীকি তাই ওরা বৃদ্ধাশ্রমে,আশ্রমে বাচ্চাদের নিজে হাতে খাওয়াবে। এইদিনটাতে ওদের যার যতোই কাজ থাকুক না কেনো সব ফেলে বাবা-মায়ের কবরের পাশে থাকার চেষ্টা করে। আর ওরা যে যখন সময় পাই তখন ওরা এখানে আসে। কিন্তু এই দিনটাতে ওরা একসাথে আসে।

কুয়াশা একা কবরের পাশে বসে আছে। আর নানা কথা বলে কান্না করছে।

.

-আজ মেঘা, কুয়াশা ওরা তো কলেজে আসলো না(রিদ)

কলেজে ব্রেকটাইমে বসেছিলো ওরা সবাই তখন রিদ সবার উদ্দেশে বলল কথাটা

-হ্যাঁ ওদের আবার শরীর খারাপ হলো নাকি (তন্নি)

-হতেও পারে (মুন)

-দাঁড়া ওদের ফোন নম্বর নিয়েছিলাম সেদিন ফোন দিয়ে দেখি (রিদ)

-গুড আইডিয়া লাউডস্পিকারে দে (রুকাইয়া)

-তোরা কি কোথাও দেখছিস সিনিয়রা জুনিয়রদের নিয়ে তোদের মতো এমন নাচানাচি করছে(তুষার জুস খেতে খেতে বলল)

-একদম ঠিক বলছো তুষার। তোমরা একটু বেশি বেশি করছো ঐ মেয়েকে নিয়ে (রিমা)

-বুঝলাম না এতো সমস্যাই যখন হচ্ছে তাহলে এখানে বসে আসো কেনো বলতো তোমরা দুজন চলে গেলেই পারো আমরা তো তোমাদেরকে আটকে রাখি নি (রুকাইয়া)

-এই তোরা থাম কথা বলবি না চুপ যা (সাদাফ)

-রাইট তোরা চুপ করলে আমিও ফোনটা দিতে পারি(রিদ)

রিমা একটা মুখ ভেঙ্গছি দিয়ে বসে রইলো। তুষারও আর কিছু বললো না চুপচাপ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে লাগলো। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলেও ও জানতে চাই কুয়াশার কেনো আসলো না? কি হইছে ওর এসব ওর মনে বার বার হানা দিচ্ছে প্রশ্নপাখিরা!! ও যতই কুয়াশাকে নিয়ে ভাবতে চাই না ততই কুয়াশার কথা ওর মনে পড়ে।

রিদ মেঘার কাছে ফোন ৩-৪ বার কিন্তু মেঘা ফোন ধরলো না মেঘার ফোন সাইলেন্ট করা।

-ফোন ধরে না তো (রিদ)

-কার কাছে ফোন দিসিলি? (হাসান)

-মেঘা (রিদ)

-এবার কুয়াশার কাছে দে (হাসান)

-যদি না ধরে আমি তো কুয়াশাকে কখনো ফোন দি নাই (রিদ)

-আচ্ছা দিয়ে দেখ কি হয় (রুকাইয়া)

মেঘ কুয়াশা কাছে ফোন দিলো। কুয়াশা তখন শান্ত হয়ে বসে চোখের পানি ফেলছিলো। ফোনের শব্দে ওর ধেন ভাঙ্গলো। নম্বরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ফোন কেটে গেলো। দ্বিতীয় বার ফোন দিতেই ফোন ধরলো ওপাশ থেকে কিছু বলার আগে কুয়াশা ভাঙা গলায় ‘হ্যালো’ বলল। ফোনের ওপাশে থাকা সবাই অবাক হলো। কি হলো আবার এ মেয়ের এভাবে কাঁদছে কেনো? রিমা বিরবির করে বলল

-ঢং যতো সব (রিমা)

কেউ শুনতে না পেলেও তুষার পাশে বসে থাকাই ঠিকি শুনতে পেলো। রিমার এমন কথায় তুষারের রাগ হলেও চুপচাপ হজম করলো। কয়েক সেকেন্ড পর নিজেই অবাক হয় ওকেনো এতো রাগ হচ্ছে কুয়াশাকে রিমা এসব বলায়? এবার ওর নিজেও ওপরেই রাগ হচ্ছে।

রিদ কিছু বলতে নিবে তার আগে ওপাশ থেকে কুশ বলল

-পিপি তুমি কান্না কলছো কেনো? (কুশ)

রুকাইয়া ওদের কথা বলতে ইশারায় বারণ করলো ওরাও আর কোনো কথা বললো না। কুয়াশা ওপর পাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ফোন না দেখেই পাশে রেখে বলল

-কিছু হইনি সোনা (কুয়াশা)

-তোমলা সবাই কাঁদছো কেনো আমাল খুব কতো (কষ্ট) হচে (কুশ)

কুয়াশা কুশকে কোলে নিয়ে বসে কুশও কুয়াশার কোলে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে বলল

-তোমাল মুকে ভ্যাঁ লেগে আছে (কুশ)

কুশ মুছতে গেলে কুয়াশা বলল

-মুছো না সোনা বাবাই এটা তোমার দাদুমনির থেকে নিয়েছি (কুয়াশা)

-দাদুমনি? (কুয়াশা)

-হুম (কুয়াশা)

-কিন্তু মাম্মা পাপা যে বলে দাদুমনি, দাদুলা তালা হয়ে গেছে তাহলে কি ওলা আবাল ফিলে এসেছে (কুশ)

-এই যে দেখছো ওরা সবাই এখানে শুয়ে আছে (কুয়াশা)

-কিন্তু কই ওলা আমি তো দেখতে পাচি না (কুশ)

-এই যে মাটির তলায় এটাকে কবর বলে এটাতে আছে (কুয়াশা)

-ওটাতে ওদেল কষ্ট হচ্ছে তো ওদেলকে ওখান থেকে নিয়ে আসো (কুশ)

-নিয়ে আসা যাবে না তো সোনা (কুয়াশা)

কুয়াশা প্রতিটা কথা ভাঙা গলায় শান্ত হয়ে বসে বলল। কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়া বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিরাতে কুয়াশা তার বাবা-মায়ের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ভেবে কখনো হাসে আবার কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। কুশান এসে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে বলল

-বাবুইপাখি তুই কাঁদছিস কেনো? (কুশান)

-ভাইয়া মাম্মা পাপা কেনো চলে গেলো আমার খুব কষ্ট হয়। কেনো চলে গেলো মাম্মা পাপা কেনো? মাম্মা, পাপা, মামনি, বাবাইকে এনে দাও প্লিজ। আমি খুব মিস করি ওদের (কুয়াশা)

-বাবুইপাখি দেখ এমন ভাবে কান্না করতে নাই প্রতিরাতে তুই কাঁদিস কি ভেবেছিস আমি জানি না আমি জানি তো আমার পরিটা কাঁদে (কুশান)

-মিস করি তো (কুয়াশা)

-আমি আছি তো,তোর ভাবিপু আছে, মেঘ, মেঘা,কুশ,শান সবাই আছে দেখ আমরা সবাই আছি কেনো এভাবে কাঁদিস তোরা আমি কি নিয়ে বাচ্চবো বলতো (কুশান)

-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া (কুয়াশা)

-কান্না থাকা শরীর খারাপ করবে তো (কুশান)

-ভাইয়া!! (মেঘ)

কুশান কুয়াশাকে ছেড়ে পিছনে ফিরে দেখলো মেঘ দাড়িয়ে আছে। মেঘের চোখজোড়া রক্তি হয়ে আছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকক্ষন কান্না করছে।

-তুই ও (কুশান)

মেঘ কুশানকে জড়িয়ে ধরে বলল

-ভাইয়া তুই আর ভাবিপু না থাকলে আমাদের কি হতো বলতো (মেঘ)

-ওফ কান্না থামা তো তোরা আমার ছেলে দুইটাকেও শিখাছিস (কুশান)

ওরা কান্নার মাঝেও হেসে দিলো। তখন মেঘা এসে বলল

-বাহ বাহ আমাকে কেউ ভালোবাসে না থাকবো না এখানে চলে যাবো হুহ (মেঘা)

মেঘ মেঘার কান টেনে ধরে বলল

-সবসময় হিংসা করিস কেন (মেঘ)

-আহ (মেঘা)

-কি হচ্ছেটা কি ছাড় ওকে আমার বোনকে মারার এতো বড় সাহস দিলো কে? (কুশান)

কুশান মেঘা মেঘের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ওকেও জড়িয়ে নিয়ে বলল। মেঘাও নালিস করলো মেঘের নামে। মুহুর্তের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

পাখি আর শান এসে দেখলো ওরা সবাই এখানে। ও ও এসে বলল

-আমাদের ভুলে গেলা থাক চল শান আমরা চলে যায় (পাখি)

-না আমি ওতানে (ওখানে) যাবো (শান)

ওদের কান্ড দেখে হাসতে লাগলো সবাই।পাখি রেগে বলল

-তুই ও তোর বাপের মতো ছেচড়া (পাখি)

শান কিছু বুঝতে না পেরে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে কুশের পাশে গিয়ে দাড়ায়। কুশান এসে পাখিকে জড়িয়ে ধরে বলল

-আমার বউটার আদর লাগবে (কুশান)

-কি হচ্ছে টা কি এখানে সবাই আছে (পাখি)

কুশান পাখিকে ছেড়ে দিয়ে বলল – গাইস তোমরা কি কিছু দেখছো

ওরাদের চোখে হাত দেওয়া ছিলো। ওদের দেখে কুশ আর শানও চোখে হাত দিয়ে ছিলো। কুশান শুনতেই ওরা মাথা নাড়িয়ে বলল ‘না’।

-ভাইয়া আমরা কিছু দেখি নি তোরা চালিয়ে যা (মেঘ)

পাখি সবার সামনে লজ্জা পেলো।

– মেঘের বাচ্চা আমি তোর বড় ভাই হই সম্মান দিয়ে কথা বল (কুশান)

-যা বাবাহ আমি তোকে কখন অসম্মান করলাম আর তোর কবে সম্মান ছিলো আমার মনে পড়ছে না (মেঘা)

-আমি কিন্তু আর চোখ বন্ধ করে রাখতে পারছি না হাত ব্যাথা করছে তোমাদের কাজ শেষ (কুয়াশা)

-আমারও (মেঘা)

-কত বড় ফাজিল তোরা চল (কুশান)

পাখি তো পারেলে মাটিতে ডুকে পরতো। চল বললার সাথে সাথে পাখি দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসলো।

রিদ সাবধানে ফোনটা কেটে দিলো। ওরা এতোক্ষণ ফোনেই ছিলো সব শুনছে ওরা ওদের সবার চোখেই পানি আর মুখে হাসি এমনকি তুষার রিমার চোখেও। তুষারে এবার অপরাধ বোধটা যেনো বেড়ে গেলো। যারা নাই তাদেরকে নিয়ে ও কি কথাই না বলল!!

#চলবে
#tasnim_tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবে ]