#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১২
🍁🍁🍁
সেদিনের পর আজ দু’দিন হয়ে গেছে। পাখির মা তার পরের দিনই চলে গেছিলো। অনেক আটকানোর পরও তিনি থাকেন নি চলে গেছিলেন।
ক্লাসে কুয়াশা, মেঘা, অনু, রাহুল, ঈশান বসে গল্প করছে। স্যাররা মিটিং করছে কোনো একটা বিষয় নিয়ে তাই আর ক্লাস হচ্ছে না সেখানে কিছু সিনিয়র রাও আছে। অনেকে কৌতূহল হয়ে সে দিকে ঘুর ঘুর করছে। আবার কেউ কেউ ওদের মতো আড্ডা দিচ্ছে, প্রেম করছে, কেউ পড়ছে, কেউ গান গাইছে।
-দূর এ সিংগেল জীবন আর ভালো লাগে না (ঈশান)
-আহারে বেচারা (অনু)
-এভাবে দুক্কু প্রকাশ না করে তো একটা গফ জুটাই দিতে পারিস (ঈশান)
-ক্যান আমাকে কি তোর ঘটক মনে হচ্ছে (অনু)
-আমার জন্য না হয় একটু ঘটকগিরি করলি (ঈশান)
-ঠেকা পড়ে নি আমার হুহ (অনু)
-ওরে ওরে দোস্ত (ঈশান)
ঈশান রাহুলকে ধাক্কা দিয়ে বলল। রাহুল বিরক্তি নিয়ে বলল
-আমারে আবার এর মধ্যে টানছিস কেনো (রাহুল)
-দোস্ত তোর না একটা বোন আছে (ঈশান)
ঈশান লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল।ঈশানের কথা শুনে রাহুলের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-নজর ঠিক কর শালা আমার বোন মানে তোও বোন (রাহুল)
-সবাইরে যদি বোন ভাবি তাইলে বউ বানামু কা রে (ঈশান)
ওদের কথা শুনে কুয়াশা এতক্ষণ হাসছিলো কিন্তু ঈশানের শেষের কথারা শুনে বলল
-কেন উমা আছে তো (কুয়াশা)
উমা নাম টা শুনে ঈশানের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। আর ওরা তিনজন একসাথে বলল
-উমা? উমা কে?
-ঈশান বাবু তুমি বলবা নাকি আমি বলবো (কুয়াশা)
কথাটি বলে কুয়াশা বাঁকা হাসলো। ঈশান কুয়াশা দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল
-আ আমি ককি বলবো? আর উমা কে হ্যাঁ? আর আমি কোনো উমা টুমাকে চিনি না! (ঈশান)
-আমি কখন বলাম তুই উমাকে চিনিস? হাহ কথায় আছে না ” ঠাকুর ঘরে কে রে? -আমি তো কলা খাই নি!” ব্যাপারটা ঠিক তেমন তাই না? (কুয়াশা)
ঈশান চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাছে। মেঘা, অনু, রাহুল বেচারারা কিছু বুঝতে পারছে না শুধু বোকার মতো চেয়ে রইলো ওদের মুখ পানে। ঈশান কিছু বলছে না দেখে কুয়াশা বলল
-তুই বলবি নাকি আমি বলবো (কুয়াশা)
ঈশান জ্বী দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
-আব তুই কি বলবি (ঈশান)
-আমি যা জানি সেটা বলবো (কুয়াশা)
-তুতুতুই কি জানিস (ঈশান)
কুয়াশা ঈশানের মতো করে বলল
-এএএএএই যে উওওওওমা তোর কি হয় (কুয়াশা)
ঈশান কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে রইলো
-তোরা কি বলছিস একটু ক্লিয়ারলি বলতো দূর ছাতার মাথা কিছু বুঝতেছি না উমা টুমা কি? (মেঘা)
-উমা আমাদের ভাবী হয়। ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট (কুয়াশা)
-ভাবী? (অনু)
-তুই মিঙ্গেল আর আমরা জানি না (রাহুল)
উৎতেজোয়ায় বেশ জোরে কথাটা বলে ফেললো।ঈশান কাঁদো কাঁদো মুখে বলল ।
-বিশ্বাস কর দোস্ত আমি. আহহহ…(ঈশান)
ঈশানকে কিছু বলতে না দিয়ে ওরা ওকে মারতে লাগলো।
-তুই মিঙ্গেল আর আমাদের ট্রিট দিলি না, বিয়ে তে দাওয়াত দিলি না, আমাদের আগে বললি না, আমরা তোর কেউ না
এমন কথা বলছে আর ওরা তিনজন মিলে মারছে আর কুয়াশা হাসছে বসে বসে। ক্লাসে যারা আছে তারা তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। কুয়াশা অবস্থা বেগতিক দেখে ওদের থামালো। থামিয়ে বলল
-আরে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে বাসা থেকে এখনো বিয়ে হয় নাই (কুয়াশা)
-তুই কেমনে জানলি (অনু)
-আগে ও কিছু বলুক আমাদের ভাবির নামে তারপর টপ সিক্রেট বোম ফাটাবো (কুয়াশা)
ঈশান ব্যাথায় জামা টেনেটুনে চুল ঠিক করে বসে বিরক্তি নিয়ে বলল
-ঔ মেয়েরে নিয়ে কি বলবো হ্যাঁ শালা একটা ডাইনি ওরে আমি বোন ভাবতাম আর ওই মহিলা আমারে ফাঁসাইয়া ওর হবু বাবাই নিছে (ঈশান)
-মানে কেমনে কি ভালো কইরা ক নাই লে একটা মারও নিচে পড়ে না (রাহুল)
-আরে না না কইতাছি আসলে উমা আমার ফুফাতো বোন ও আমাদের বাড়ি যখন আসতো ইনফেক্ট এখনো যখন আমাদের বাড়ি আসে ভাইরে ভাই কি দুঃখের কথা কি আর কমু ও আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে। (নেকাকান্না করে বলল ঈশান)
চারজন ওর মুখের কাছে গিয়ে বলল
-কি করে?
-জড়িয়ে ধরে, চুমু খাই, আমার শার্ট নিয়ে টানা টানি করে ভাইরে ভাই আমারে একটু শান্তি তে থাকতে দেই না। আমার আর ওকে এভাবে একদিন জড়িয়ে ধরতে দেখে নেই দাদু তখন থেকে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে থুক্কু কাবিন করানো আছে ওর আঠারো বছর হলে অনুষ্ঠান করে আনবে (ঈশান)
-এতো কিছু ঘটে গেছে আর আমাদের বলিস নাই আবার ঘরে বউ রাইখা পরকিয়া করতে চাস ধর শালা রে ধর (অনু)
-আর মারিস না বইন এমনিতেই গা ব্যাথা করে দিছিস (ঈশান)
-আচ্ছা মারবো না কিন্তু আমাদের ট্রিট চাই সাথে ভাবীর সাথে মিট করতে চাই (মেঘা)
মেঘার সাথে তাল মিলিয়ে ওরা তিনজন ও বলল।
-আচ্ছা ও রে নিয়ে বের হবো। তার আগে কুয়াশা তুই কেমনে জানলি সেটা ক (ঈশান)
-আরে আমি তোর কাছে কিছুদিন আগে ফোন দিসিলাম তখন উমা ফোন ধরে আমাকে জেরা করতে থাকে আমি কে, ঈশানের সাথে কি সম্পর্ক, ঈশানের সাথে কি কথা, ভাভাগো ভাভা পুরাই সিআইডি (কুয়াশা)
-শালা ঐ একখান বাঁচাল মহিলা তারপর বল (ঈশান)
-সবকিছু শুনে বলল আমার কাছে ও পড়ে ফোন দিবে। যেনো আমি ফোনটা ধরি। ও ফোন দিয়ে তোর সম্পর্কে শোনে তুই ঠিক মতো খাস কিনা, ঠিক মতো পড়া শোনা করছিস কিনা, কোনো মেয়ের দিকে তাকাস কি না এসব মেয়েটা সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে এভাবে অবহেলা করিস না হারিয়ে গেলে ফিরে পাবি না তখন আফসোস করবি। আমি জানি তুই ও ওকে ভালোবাসিস কিন্তু প্রকাশ করতে চাস না (কুয়াশা)
ঈশান শুধু মুচকি হাসলো। ওরা চারজন হইহই করে উঠলো। ওরা আরো কিছুক্ষণ গল্প করে। বাড়ি যাবার জন্য নিচে আসলো। তুষারের ফেন্ডরা দাড়ি কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে ওরা ওদিকে গেলো।
-কি করছেন আলোচনা করছেন আপু আপনারা (মেঘা)
-আরে তোমরা এতোক্ষণ পর আসলে, আমরা পিকনিক নিয়ে কথা বলছিলাম তোমরা যাবে তো অনেক মজা হবে (রুকাইয়া)
ওদের মুখটা চুপসে গেলো। কারণ পাখি,কুশান জার্নি করতে দিবে না। সে এক্সিডেনের পর ওদের জার্নি করতে দেই না বেশি।
-পিকনিক? (কুয়াশা)
-হুম (তন্নি)
-কোথায় নিয়ে যাবে পিকনিকে? (ঈশান)
-জানি না তুষার আর রিদ আসুক ওরা ওখানেই ছিলো মিটিং শেষ ওরা আসলে জানা জাবে (সাদাফ)
-ওহ আচ্ছা (মেঘা)
-তোমাদের ভাইও আসছে ভিতরে আছে (হাসান)
-মেঘ ভাইয়া (রাহুল)
-হ্যাঁ (হাসান)
-ওহ তাহলে তোরা ভাইয়ার সাথে বাসায় যাস আমি যায় একটা কাজ আছে (ঈশান)
ঈশানের সাথে অনু,রাহুলও চলে গেলো।
.☆.
-মেঘ তোমরা যাচ্ছো না আমি জানি কেনো যাবে না তাও বললাম বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে (হেডস্যার)
-জী স্যার ভাইয়া, ভাবিপু যেতে দিবে না ওতো দূরের জার্নিতে (মেঘ)
-আমি জানি তোমাদের ব্যাপাটা তাও বললাম যদি যাও ভালো হতো (হেডস্যার)
-জী স্যার (মেঘ)
-তুষার, রিদ তোমরা লিস করে নাও কে কে যাবে কাল থেকে কাজ শুরু করে দাও (হেডস্যার)
-জী স্যার (রিদ)
-আচ্ছা আমরা যায় স্যার (তুষার)
-হ্যাঁ যাও (হেডস্যার)
ওরা চলে গেলো। মেঘ আর হেডস্যার আরো কথা বলতে লাগলো।
☆☆☆
কুয়াশা আর মেঘা ওরা মেঘার জন্য ওয়েট করতে করতে কলেজের বাইরে চলে আসলো গাড়ির কাছে। কুয়াশা এদিক ওদিক হাটছিলো তখন কোথা থেকে একটা কালো গাড়ি এসে কুয়াশার মুখ চেপে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলো। মেঘা চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না কিছু দূর গাড়ি পিছনে ছুটলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না চলে গেলো গাড়ি চোখের বাইরে আর খুজে পেলো না। ঘটনাটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো মেঘা হতভম্ব হয়ে গেলো। কেমন রিয়াক্ট করা উচিত সেটাই বুঝতে পারছে না।
#চলবে
#tasnim_tamanna
[আসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবে ]