ভালোবাসি প্রিয়তম পর্ব-১৩

0
1194

#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১৩

🍁🍁🍁

স্তভদ্ধ হয়ে বসে আছে কুয়াশা কয়েক মুহুর্তে কি থেকে কি হয়ে গেলো ওর সাথে। ঘরটাতে পিনপতন নীরবতা কারোর মুখে কোনো কথা নাই। কুয়াশাকে মেঘ আর মেঘা ধরে আছে শান্ত হয়ে বসে আছে কুয়াশা ওর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে দেখে মনে হচ্ছে ওর দেখে প্রাণ নায়। তুষারেরও চুপ করে বসে আছে কি বলবে কি করবে কিছু বুঝতেছে না। কুয়াশার চোখে শুধু কিছুক্ষণ আগের কথা ভাসছে।

#ফ্ল্যাসব্যাক

মেঘা তখন ওখানে বসে কান্না করতে থাকে। ওর জ্ঞান হতে দৌড়ে কলেজের দিকে আসে তখন তুষাররা কলেজ থেকে বের হচ্ছিল। মেঘাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে ওরা থেমে যায়। মেঘা ওদের সামনে এসে বার বার কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সব কথা ওর গলায় আটকে আসছে।

-কি হইছে এমন করে কান্না করছো কেনো (রুকাইয়া)

-ক কু কুয়া শা কে ও রা নি য়ে গেছে। পি প্লিজ ও কে বাঁচান (মেঘা)

মেঘার কথা শুনে ওরা ঘাবড়ে গেলো। তুষারের বুকটা কেঁপে উঠল মেঘার কথা শুনে তুষার ততক্ষণে হন্তদন্ত হয়ে বলল

-নিয়ে গেছে মানে কে নিয়ে গেছে? কোথায় নিয়ে গেছে? (তুষার)

-জা নি না ও দের কে আ মি দে খি নাই ওদের মুখে মাস্ক পড়া ছিলো কুয়াশাকে তুলে নিয়ে গেছে পি প্লিজ কু কুয়াশাকে নি য়ে আসুন (মেঘা)

তুষারের মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে। চোখে বাদ্ধ ভাঙা পানি আসতে চাইছে। অজানা ভয়ে ওর বুকের ভিতরে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো। নিজেকে সামলিয়ে হাসানকে বলল

-হাসান লোকেশন ট্র্যাক কর আমাকে বলবি কোথায় নিয়ে গেছে (তুষার বাইক নিয়ে কুয়াশাকে যে দিয়ে নিয়ে গেছে সেদিকে গেলো)

হাসান তুষারকে বলে দিচ্ছে কোন দিকে যেতে হবে তুষারও সে দিকে যাচ্ছে। মিনিট পাঁচেক পর মেঘ বাহিরে গিয়ে মেঘাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে ব্যস্থ হয়ে যায়। সবটাশুনে ওর হাত-পা কাপতে থাকে।

.

কুয়াশার চোখে পানির ছিটে পড়ায় ও পিটপিট করে তাকায় আলোর ঝলকানিতে আবার চোখ বন্ধ করে খোলে। সামনে রাজের সাথে আরো কয়েকটা ছেলে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। ঘরের চারিপাশ দেখলো টিনের আর ও বিজলির ওপরে শুয়ে আছে ও উঠে বসে। কুয়াশা ভয়ে ভয়ে বলল

-কে? ককি চাই? (কুয়াশা)

-তোমাকে সোনা (ওদের মধ্যে একটা ছেলে কথাটি বলে বিশ্রি হাসি দিলো)

কুয়াশা ঘাবড়ে গিয়ে বলল

-ক ক কি বল ছেন এ সসব? আ মি বা ড়ি যা বো প্লিজ আ আ মাকে যে তে দিন (কুয়াশা)

-আমাদের কাজ হয়ে গেলেই তোমাকে যেতে দিবো সোনা বাবু

-তোরা বাইরে যা আমার কাজ সেরে নি তারপর তোরা যা ইচ্ছে করিস (রাজ)

-ওকে বস (বলে চলে গেলো ছেলে গুলো)

কুয়াশার ভয়ে চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে বার বার আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে। রাজকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ওর বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো তাহলেকি ওর গায়ে ধর্ষিতার টেগ লেগে যাবে সবাই ওর দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে দেখবে।

– না না কাছে আসবে না প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, প্লিজ আমাকে যেতে দিন, আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি আপনি এমন করছেন কেনো (কুয়াশা কান্না করতে করতে বলল)

-তোর জন্য তুষারের কাছে সেদিন রাস্তায় সবার সামনে মার খেয়েছি তোর জন্য আমি আমার বাবা-মায়ের কাছে কথা শুনেছি এরপরও তোকে কেমন করে ছেড়ে দি বল? আমার মান সম্মানের নাড়া দিয়েছিস তুই! তোক কি করে মান সম্মান নিয়ে থাকতে দি বল? আমি তো মহান না। তাই তোকে জাগিয়েছি তোর সর্বনাশ তোকে দেখাবো বলে (রাজ)

রাজ এগিয়ে আসতে লাগলো কুয়াশা পিছাতে পিছাতে দেওয়ালের সাথে লেগে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল

-আমি আপনার বোনের মতো প্লিজ এমন করবেন না প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে আমি বাড়ি যাবো প্লিজ (কুয়াশা)

রাজ কুয়াশার কাঁধের জামা টান দিলো কুয়াশা ভয়ে জোরে কান্না করে দিলো। তখনি দরজা জোরে খুলে গেলো। রাজ কুয়াশা সে দিকে তাকালো তুষার রক্তবর্ণ চক্ষু নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কুয়াশা যেনো আশার আলো ফিরে পেলো ছুটে গিয়ে তুষারকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো তুষারও কুয়াশাকে জড়িয়ে নিলো।

-তুই? তুই আবারও এখানে? এই তোরা কে কেথায় আছিস একে ধর (রাজ)

কিন্তু কারোর কোনো শব্দ নেই। তখন হাসান ভিতরে ডুকলো।

-তোদের এখানে ডুকতে দিলো কে? এই তোরা কই? (রাজ)

-তোর চেলারা পালিয়েছে (হাসান)

এবার রাজের মনে ভয় জমলো। এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো পালানোর পথ খুজতে লাগলো কারোর কিছু বোঝার আগে রাজ বাইরে দিকে দৌড় দিলো হাসানও ওর পিছনে গেলো।

-এই তুতুমি কাঁদছ কেনো? কিছু হইনি তো আমি আছি তো তোমার কিছু হতে দেবো না (তুষার)

কুয়াশা তুষারে “আমি আছি তো তোমার কিছু হতে দেবো না” কথাটা শুনে ভরসা পেলো। তাও তুষারকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো। তখনি রুমে কয়েক জন ডুকলো ওদেরকে এমন অবস্থায় দেখে খারাপ ভাবলো ভাবারি কথা কুয়াশার কাঁধের কাছে জামা ছিঁড়া আর ওনারা বয়স্ক আগেদের দিনের মানুষ।

-বলছিলাম না এখানে ফস্টিনস্টি চলতাছে আমার কথা তো কেউ বিশ্বাস করতেছিলেন না দেখেন এবার নিজের চোখেই দেখেন

কুয়াশা আর তুষার ওদের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো। কিছু বুঝতে না পেড়ে তুষার বলল

-কি বলছেন আপনারা (তুষার)

-বুঝো না এহন, এহন তো বুঝবা,না, না বুঝার ভান ধরবা, বলবা আমরা ভুল বুঝতাছি এমন কত দেখলাম এর লেইগাইতো তোমরা আকাম-কুকাম কইরা পার পেয়ে যাও

-এসব কি বলছেন আপনারা ভুল বুঝছেন (তুষার)

-আমরা কোনো ভুল বুঝতাছি না এই কাজি ডাকো আকাম কুকাম করবে বিয়ে করবে না তা হতে দিবো না

কুয়াশা ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে তুষার ওদের বুঝানোর অনেক ট্রাই করলো অনেক ধমক দিলো কিন্তু কাজ হলো না ওদের বিয়েটা জোর করে দিয়ে দিলো।

হাসান রাজের পিছনে নেওয়ার সময় হাসানের ফোনে রুকাইয়া ফোন দিয়ে জায়গার নাম শুনে ওরাও আসে হাসানও ওদের সঙ্গে আসে। ওরা এসে এতো লোক দেখে হতভম্ব হয়ে যায় ওদের কাছে খারাপ কথা শুনে মেঘ রেগে গিয়ে বলল

-জাস্ট সাট আপ! আপনা কি মানুষ? আগে কোথায় ছিলেন যখন একটা মেয়েকে তুলে আনছিলো। তুষার কুয়াশাকে বাচিয়েছে কোনো ক্ষতি করেনি। আর আপনারা প্রথম থেকে কিছু না শুনে একটু দেখে বিচার করে নিলেন না জেনে না শুনে এতো বড় একটা ডিসিশন নিয়ে নিলেন ফাইজলামি পাইছেন (মেঘ)

সবার মুখটা চুপসে গেলো।

-ক্ষমা কইরেন ভাই আগেও অনেকে এমন করছে তাই আমরাও ভাবছি….

-ক্ষমা করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে আপনা ওদের পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন? বিয়ে দিয়ে মহান কাজ করছে এখন ওদের কি হবে বিয়ে কি ছেলে খেলা হয়ে গেছে এখন (মেঘ)

ওরা আর কিছু বলার সাহস পেলো না আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলো। তখন থেকে কুয়াশা চুপচাপ বসে আছে আর চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে।ওর মনে শুধু একটা কথায় আসছে “ভাইয়া ভাবিপু আমাকে ভুল বুঝবে না তো কষ্ট পাবে না তো আমাকে দূরে ঠেলে দিবে না তো ” এমন নানানভাবনা ওরমনে উঁকি দিচ্ছে। নিরবতা ভেঙে রুকাইয়া বলল

-মেঘ আব আমার মনে হয় ফ্যামেলিতে জানানো উচিত এতোবড় সত্যিটা লুকানো উচিত নয় (রুকাইয়া)

-হ্যাঁ আমিও সেটা ভাবছি (মেঘ)

ওদের কথায় কুয়াশার ভাবনায় ছেদ পড়লো।

– না না আমি ভাইয়া ভাবিপুকে কষ্ট দিতে পারবো না ওরা আমাকে ভুল বুঝবে এই দুটো মানুষকে আমি কখনোই কষ্ট দিতে পারবো না মরে গেলোও না কখনো তুমি বলবে না ভাইয়াকে ভাইয়ার আশা তুমি একথা বলে ভেঙে দিবে না আর কিসের বিয়ে হ্যাঁ আমি এ বিয়ে মানি না (কুয়াশা কথাটা বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো)

তুষার স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে “আমি এ বিয়ে মানি না” কথাটা শুনে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।

-তুই পাগলামি করছিস কেনো ওরা ভুল বুঝবে না তুই এসব কেনো ভাবছিস (মেঘ)

-না না তুমি বলবে না সেদিন দেখনি আন্টিকে মাথা উঁচু করে কথা বলছিলো এসব কেউ জানলে ভাইয়ার মাথা নিচু হয়ে যাবে আমি কখনোই সেটা হতে দিবো না তুমি বলবে না ভাইয়াকে কেউ বলবে না (কুয়াশা)

-তুই…আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না তুই ঠান্ডা হ চল বাসায় চল (মেঘ)

#চলবে
#tasnim_tamanna

[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন]