#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১৪
🍁🍁🍁
সেদিনের পর থেকে কুয়াশা কেমন যেনো হয়ে গেছে। সারাদিন রুমের দরজা বন্ধ করে থাকে। আগের মতো হাসে না খেলে না ফাজলামি করে না ঠিক মতো খাই না। কুশান, পাখি এগুলো খেয়াল করে অনেক বার ওদের জিজ্ঞেসা করেছে কিছু হইছে কি না কিন্তু বার বার ওরা কথাটা এরিয়ে গিয়েছে।
-দেখ আমার মন কিন্তু মানছে না কুয়াশার কিছু হইছে তুমি কিছু কর প্লিজ কুয়াশাকে এভাবে মানায় না আমার আগের কুয়াশাকে ফিরিয়ে দাও (পাখি)
কুশান সন্ধ্যায় লেপটপে কাজ করছিলো তখন পাখি কথা গুলো বলতে বলতে কেঁদে দিলো। কুশান একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল
-আমি জানি না কি হইছে আমারও কুয়াশা শুকনো মুখ, আগের মতো স্বাভাবিক দৃষ্টি দেই না ও ওর দৃষ্টিতে থাকে ভয় (কুশান)
-ও ও ওর সা থে খা রা প কিছু হইনি তো (পাখি)
পাখির কথা শুনে কুশানের বুকটা ধক করে উঠলো
-ককি বলছো তুতুমি এমন কিছুই হইনি (কুশান)
-আমার মন বলছে,মেঘ, মেঘা ওরা জানে কুয়াশার কি হইছে কিন্তু লুকাছে (পাখি)
-হ্যাঁ আমারও তাই মনে হয় মেঘ বাসায় আসলে মেঘ আর মেঘাকে রুমে আসতে বলো কুয়াশা যেনো না জানে (কুশান)
-আচ্ছা (পাখি)
.
-সত্যি করে বল তো কি হইছে কুয়াশার তোদের আজ কাল কেমন অচেনা লাগছে তোদেরকে এমন ভালো লাগছে না (কুশান)
মেঘ আর মেঘা রুমে আসতেই কুশান কথাটা শুনলো। মেঘ আমতা আমতা করে বলল
-কি সব বলছো ভাইয়া কাজের চাপ বেশি তাই আর কি (মেঘ)
-একদম মিথ্যা বলবি না সত্যি টা শুনতে চাইছি আমি। কি হইছে সেটা বল সবসময় উদাসীন থাকিস কেনো তোরা কোনো প্রবলেম হলে বল আমাকে আমি স্লভ করবো (কুশান)
-আমার মন বলছে তোরা কিছু লুকাছিস বল না কি লুকাছিস (পাখি)
পাখির কাতর কন্ঠে বলল। মেঘা ওদের এমন প্রশ্নে বেশ অনেকটাই ঘাবড়ে গেছে কিছু বলছে না। মেঘ একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
-আমরা কি লুকাবো আমরা কিছু লুকাছি না (মেঘ)
-আমি সত্যিটা শুনতে চাইছি মেঘ আমাকে রাগাস না (কুশান)
মেঘ জানে শান্ত মানুষ রেগে গেলে তার মাথার ঠিক থাকে না কুশানও ঠিক তেমনই। মেঘ কুশানের হাত মুঠি করে ধরে কপালে ঠেকিয়ে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
-ভাইয়া আমি এখন যেটা বলবো সেটা সম্পূর্ণ শুনবি তার আগে কোনো কথা বলবি না আমি জানি এটাতে তুই কষ্ট পাবি কিন্তু এটাতে আমাদের কোনো হাত নেই আমরা পরিস্থিতির শিকার প্লিজ ভাইয়া ক্ষমা করে দিস (মেঘ)
মেঘের কথা শুনে কুশান আর পাখির মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কুশান নিজেকে সামলিয়ে বলল
-কি কথা বল (কুশান)
-ভাইয়া কুয়াশা….(কলেজের ফাস্টদিন থেকে সব ঘটনা বলল মেঘ)
সব কথা শুনে কুশান আর পাখি পিচলেস হয়ে গেছে কি থেকে কি হয়ে গেছে। কুশান আর পাখির চোখে পানি চিকচিক করছে মেয়েটার ওপর দিয়ে কত কি গিয়েছে আর ওদের কে কিছু বুঝতে দিলো না সেটা ভেবে।
-ভাইয়া আমি ছেলেটার খোঁজ নিয়ে যতদূর জেনেছি ভালো। আমার সাথেই একই কলেজে পড়ে ফ্যামিলির কথা জানি না আমি খোঁজ লাগিয়েছি (মেঘ)
-বিয়ে যেহেতু ওদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়েছে তাই এ বিয়ের কোনো মানে হয় না (কুশান)
-মানে এসব কি উল্টো পাল্টা বকছো তুমি মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার (পাখি)
-এখানে খারাপ কি বললাম আমি (কুশান)
-জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এগুলো আল্লাহর হুকুমে হয় এর মধ্যে তুমি এসব কি বলছো ছেলেটাকে দেখো শুনো ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বল (পাখি)
-ছেলেটা যদি আমার খারাপ হয়, বোনকে কষ্ট দেই না না… (কুশান)
-ভাইয়া ছেলেটা খারাপ না ছেলেটা ভালো আমি খোঁজ নিয়েছি (মেঘ)
-ছেলেটার নম্বর আছে তোদের কাছে (পাখি)
-হ্যাঁ আছে সেদিন আসার সময় নিয়ে ছিলাম (মেঘ)
-মানে তুমি ঔ ছেলের নম্বর নিয়ে কি করবা (কুশান)
-আচ্ছা তুই ছেলেটাকে ফোন দিয়ে কাল আমাদের বাড়িতে আসতে বল (পাখি)
-কি বলছো এসব (কুশান)
-তোরা যা আমি তোদের ভাইয়ার সাথে কথা বলবো (পাখি)
মেঘ আর মেঘা চলে গেলো।
-শোনো মাথা ঠান্ডা করো আমার কথা শুনো দেখো তুমি যেটা ভাবছো সেটা নাও হতে পারে ছেলেটা তো ভালোও হতে পারে আর মেঘ তো খবর নিয়েছেই। বিয়ে টা তো হয়ে গেছে এখন আমাদের কিছু করার নাই ইসলামি শরিয়তের বিয়ে হয়েছে ওদের একটু মাথা ঠান্ডা করে বোঝার চেষ্টা করো। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ছেলেটা কাল আসলে তার সাথে কথা বলে দেখো ভালো কি খারাপ তারপর ডিসিশন নিও কি করবা। কুয়াশার দিকটাও তো দেখতে হবে কতটা কষ্ট পাচ্ছে ও কতটা ভালোবাসে ও আমাদেরকে (পাখি)
কুশান মন দিয়ে পাখির কথা গুলো শুনলো তারপর কিছু একটা ভেবে উঠে গেলো। পাখিও একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কুশানের পিছনে পিছনে গেলো। কুশান গিয়ে কুয়াশা দরজা ধাক্কা দেই। কুয়াশা ডুলুডুলু পায়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে কুশানকে দেখে ভয়,অপরাধ বোধ, হচ্ছে ওর। মাথা নিচু করে বলল
-কিকিছু বলবে ভাইয়া? (কুয়াশা)
-হ্যাঁ ভিতরে চল (কুশান)
কুশানের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে আরো ভয় হতে লাগলো কুয়াশার। কুশান কুয়াশার বেডে গিয়ে বসে কুয়াশাও কুশানের পাশে বসে।
-আমি কি তোর কেউ না? (কুশান)
কুশান গম্ভীর কণ্ঠে অভিমান নিয়ে বলল কথাটা। কুয়াশা থমকালো কথাটা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।
-এসব কি বলছো ভাইয়া তুমি? তুমি জানো না তোমাকে আমি কত ভালোবাসি (কথাটা বলে জড়িয়ে ধরলো কুয়াশা কুশানকে)
কুশানের গম্ভীর কণ্ঠে অভিমান নিয়ে কথা কুয়াশা স্পষ্ট বোঝতে পারছে তার ভাইকে ও চিনে। ভাইয়ের গম্ভীর কণ্ঠে, রাগী চোখে তাকিয়ে কথা বললে কুয়াশা কেঁদে দেই। প্রিয়জন দের থেকে একটু কিছু পাওয়া সেটা সুখ,দুঃখ হক বা অন্য কিছু অনেক বড় হয় সেটা।
-তাহলে আমার কাছ থেকে লুকালি কেন ভাইয়া কি এতোই খারাপ? ভাইয়ার সাথে কি একটুও কিছু সেয়ার করা যায় না? (কুশান)
কুয়াশা ছলছল চোখে তাকালো কুশানের দিকে কুয়াশার আর বুঝতে বাকি রইলো না তার ভাই জেনে গেছে আর তার কাছ থেকে লুকানোয় কষ্ট পেয়েছে।
-ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নি প্লিজ কষ্ট পেওনা তাহলে আমারও কষ্ট হয় (কুয়াশা)
-এই পাগলী কাঁদছিস কেনো আমি আছি তো সব ঠিক করে দিবো এখানে তো তোর কোনো দোষ নাই তাহলে কাঁদছিস কেনো (কুশান)
-ভাইয়া তুমি কষ্ট পাইছো। (কুয়াশা)
-না কান্না থামা কি অবস্থা করেছিস দেখেছিস তুই পেত্নী লাগছে তোকে (কুশান)
পাখি কুশানকে কুয়াশার রুমে আসতে দেখে খাবার আনতে গেছিলো কুয়াশার জন্য রুমে ডুকতে ডুকতে বলল
-থাক কান্না কাটি অনেক হইছে এখন এসব বাদ দিয়ে খেয়ে নাও (পাখি)
-সরি ভাবিপু (কুয়াশা)
-এই এভাবে মাথা নিচু করে আছিস কেনো কোনো ভুল হইনি তোর (পাখি)
কুয়াশা কিছু বললো না কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো চোখ দিয়ে। পাখি ভাত মাখিয়ে একলকমা কুয়শার মুখের সামনে ধরলো। কুয়াশা পাখির দিকে তাকাতেই পাখি খেতে ইশারা করলো। কুয়াশাও ছোট বাচ্চাদের মতো করে খেতে লাগলো। খাওয়া শেষে কুশান কুয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
☆☆☆
সেদিনের পর তুষার কলেজে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু মন বসাতে পারেনি কোনো কাজেই। কাজ করতে গেলেই কুয়াশার মুখটা বার বার ভেসে উঠছে, বার বার কুয়াশার কথাগুলো কানে বাজছে। তুষার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে। তখনই সাদাফ, হাসান, রিদ আসলো।
-কি রে ব্যাটা বউয়ের দুঃখের দেবদাস হয়ে গেলি নাকি (রিদ)
তুষার রিদের দিকে রাগি চোখে তাকালো রিদ ও বুঝতে পাওলো কি বলে ফেলেছে।
-তোরা এখন এখানে কেনো (তুষার)
-ভাবলাম অনেকদিন হলো রাতে চারজন মিলে আড্ডা দেওয়া হয় না তাই আসলাম (সাদাফ)
-ওহ (তুষার ছোট করে উত্তর দিলো)
-মন খারাপ তোর (হাসান)
-আরে না (তুষার)
-কুয়াশাকে ভালোবাসিস? (রিদ)
রিদের প্রশ্নে তুষার থমকে গেলো,নিশ্বাস আটকে গেলো ওর বুকে ধুকপুক করছে ওর। নিজেকে সামলিয়ে কৃত্রিম রাগ নিয়ে বলল
-কি যাতা বলছিস তুই (তুষার)
-রিদ তো ঠিকই বলছে ভুল কি বলল ও এবার এন্সার দে (হাসান)
তুষার কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না ওর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।
-কি হলো বল? (সাদাফ)
-চুপ করে আছিস কেনো বল?(রিদ)
-জানি না জানি না আমি ওকে না দেখলে কেমন খালি খালি লাগছে বুকে শুন্যতা অনুভব হয়, ওসামনে থাকলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, ওর চোখে পানি দেখলে আমার কষ্ট হয় আবার এক মুগ্ধতা ছেয়ে যায় ওর মুখটাই, ওর বাচ্চামো মুখটা নিঃপাপ লাগে ওর বাচ্চাদের মতো কথা বলা খিলখিল করে হাসা সব সব কিছু যেনো খুব ভালো লাগে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় (তুষার)
বলতে বলতে তুষার কুয়াশার মধ্যে যেনো ডুবে গেলো। ওদের তিনজনের মুখে বিজয়ের হাসি ফুটলো। তুষারের কাঁধে চাপড় মারলো আর বলল
-মামা তুই তো ফেঁসে গেছিস (রিদ)
ওদের কথায় তুষারের ধেন ভাঙলো কি বলে ফেলেছে ওর নিজের অজান্তেই।
-মানে (তুষার)
-তুই ভালোবেসে ফেলেছিস কুয়াশাকে (সাদাফ)
-না না এটা কখনোই পসিবল না আমি কখনো কাউকে ভালোবাসবো না ভালোবাসলে সবাই ছেড়ে চলে যায় (তুষার)
-কে বলল ছেড়ে চলে যায় ভালোবাসা একটা ভালো দিক আছে সবাই ছেড়ে যায় না যারা ছেড়ে যায় তারা কখনোই ভালোবাসেনি। ভালোবাসা মানুষকে নতুন ভাবে বাঁচতে শেখায় ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতি যা সবার প্রতি আসে না। (সাদাফ)
-তার চেয়ে বড় কথা, তুই কুয়াশাকে ভালোবেসে ফেলেছিস ভালোবাসা মানুষের সব কিছুই ভালো লাগে (রিদ)
-একদমই তাই নিজের ফিলিংস গুলো বুঝতে শেখ তুষার এভাবে অবুজ হয়ে থাকিস না হারিয়ে গেলে কিন্তু পাবি না। আগলে রাখ (হাসান)
তুষার ওদের কথাগুলো শুনে নিজের ধরণাগুলো মিলাতে লাগলো। কিছু একটা ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। তখনি তুষারের ফোনে ফোন আসলো।তুষার ফোন নিয়ে দেখলো আননোনম্বর রিসিভ করে হ্যালো বলল
-কেমন আছো (মেঘ)
-ভালো আপনি কে (তুষার)
-মেঘ এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে আমাকে (মেঘ)
-ওহ তুমি আসলে আমি জানতাম না এটা তোমার নম্বর (তুষার)
-হ্যাঁ বুঝতে পারছি। একটা কথা বলার ছিলো (মেঘ)
-হ্যাঁ বলো (তুষার)
-তুমি কি কাল ফ্রি আছো? (মেঘ)
-হ্যাঁ কেনো (তুষার)
-আমাদের বাসায় আসো তাহলে ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে (মেঘ)
-এ্যাঁ (তুষার)
-ভয় পেলে নাকি (মেঘ)
-আব না ওনি কিছু বলেন নি (তুষার)
-না কি বলবে। তুমি কি তাহলে আসছো কাল (মেঘ)
-আব হ্যাঁ (তুষার)
-আচ্ছা তাহলে এসএমএসে এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি (মেঘ)
-আচ্ছা (তুষার)
-রাখি কাল দেখা হচ্ছে (মেঘ)
-হ্যাঁ (তুষার)
ফোন কেটে দিয়ে অবাক+খুশি হলো কুয়াশাকে দেখতে পাবে ভেবে।
-কিরে কে ফোন দিছিলো (রিদ)
-মেঘ (তুষার)
-কি বললো (হাসান)
-কাল ওদের বাসায় যেতে বলছে (তুষার)
কিহহহহহ!! খুশিতে ওরা চিল্লিয়ে উঠলো।
-এভাবে চিৎকার করছিস কেনো (তুষার)
-মেনে নিয়েছে মনে হয় ওদের বাড়ি থেকে (সাদাফ)
-জানি না কাল গেলে বুঝতে পারবো (তুষার)
#চলবে
#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#বোনাস_পার্ট
🍁🍁🍁
তুষার আর তুষারের ফেন্ডরা বসে আছে কুয়াশাদের ড্রাইংরুমে। কাউকে এখনো দেখেনি ওরা শুধু মেড বলেছে বসতে। ওরা বসে বাসার ভিতরে স্কেন করতে ব্যাস্ত তখন উপর থেকে কাচ ভাঙার শব্দ হলো ওরা একে ওপরের দিকে তাকাতাকি করতে লাগলো একটা মেড ছুটে ওপরে গেলো। কুশান তখন বাসায় ডুকলো এতোক্ষণ কুশান বাড়ির পিছনের গার্ডেনে ছিলো আজ তুষার আসবে বলে অফিসে যায় নি।ওদের সাথে কথা বলে অফিসে যাবে বলে। ওদেরকে দেখে ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো ওরাও কুশানকে দেখে দাড়িয়ে গিয়ে সালাম দিলো। কুশান মিষ্টি হেসে সালামের জবাব দিলো।
-আরে দাড়ালে কেনো বসো তোমরা (কুশান)
ওরা কুশানের কথায় বসে পড়লো কুশানও সিংগেল সোফায় বসে বলল
-চা নাকি কফি খাবে তোমরা (কুশান)
সবাই কুশানের ব্যবহারে অবাক। কুশান এতো শান্ত আর সুন্দর ভাবে কথা বলায়। মুন ফিসফিস করে তন্নিকে বলল
-দোস্ত আমি তো ভাবছিলাম মুভির মতো তুষারকে পিটাইবো কিন্তু এই হ্যান্সাম তো তেমন কিছুই করলো না (মনু)
তন্নিও ফিসফিস করে বলল
-এরা সব ভাইবোন গুলা এতো কিউট কেন আমি তো ক্রাস খাইতে খাইতে কবে জানি মারা যায় (তন্নি)
-চা দিন ভাইয়া বাঙালি মানুষ তো চা ই ঠিক আছে (রিদ)
কুশান হেসে মেডকে ডেকে চা নাস্তা দিতে বলল।
-তোমারা……. (কুশান)
কুশান কিছু বলতে যাবে তার আগে পাখির চিৎকার ভেসে আসলো
-তোরা দুইটা ফাইজলামি পাইছোস ঘরের জিনিসপত্র ভাঙছিস কেনো? হাত ভেঙে রেখে দিবো দুইটারে বিয়াদ্দপ সবসময় এতো জেদ ভালো না এতোটুকু বয়সে তোমরা জেদ দেখাছো চাচার মতো হচ্ছো তাই না আর একটা জিনিস ভাঙছে তো তোদের দুইটার সাথে তোদের চাচারও বাসা থেকে বের করে দিবো বিয়াদ্দপ (পাখি)
কুশ আর শান বেডের ওপরে দাড়িয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে নিঃশব্দে কান্না করছে।
-যা বাবা ভাবিপু এর মধ্যে আমাকে টানছো কেনো আমি আবার কি করলাম (মেঘ)
-তোর কাছ থেকেই তো শিখছে (পাখি)
মেঘ আর কিছু বললো না এখন কিছু বলেই পর কপালে শনি, রবি, সোম সব আছে ওর সেটা জানা।
-আর তোরা দুইটা ওদের দুইটারে আটকাইতে পারলি না (পাখি)
কুয়াশা সকাল থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যবহার করছে। কুয়াশা ফাইজলামি করে বলল
-লাইভ হচ্ছিল তাই ওটাতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় জনগন ক্ষেপে যেতো (কুয়াশা)
-সব ক’টা বাদর (পাখি)
-ভাবিপু বাদ দাও তো ক’টাই ভাঙছে কিনলে হয়ে যাবে (মেঘ)
-টাকার ফুটানি মারছিস আবার (পাখি)
-আরে দূর বাবা আমি তো জাস্ট বললাম কখন ফুটানি মারলাম (মেঘ)
-বললি কেনো এই ঝাড়ুটা কই রে দে তো (পাখি)
মেঘের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। পাখি ওদেরকে কোনো কিছু নিয়ে অহংকার করতে বারণ করে আর এটা ও সহ্য করতে পারে না।
মেঘা পাখির কাছে ঝাড়ু এগিয়ে দিলো। মেঘ ‘মেঘার বাচ্চা’ বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা দিলো। পাখি বকতে বকতে কাচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করতে লাগলো মেড পরিষ্কার করতে চাইলে দিলো না নিজে ভালো করে এক জায়গায় বার বার পরিষ্কার করতে লাগলো। যেনো কারোর পায়ে কাচের টুকরো না লাগে।
মেড নিচে আসতে কুশান প্রশ্ন করলো
-ওপরে কি হইছে (কুশান)
-আসলে স্যার কুশ আর শান সপিস ভাঙছে কয়েকটা তাই আসলে মেডাম রেগে গিয়ে ওদেরকে পানিশমেন্ট দিচ্ছে (মেড)
-কারোর লাগেনি তো (কুশান)
-না স্যার (মেড)
-আচ্ছা যাও (কুশান)
এর মধ্যে খাবার চলে আসলো।
-না-ও খাও (কুশান)
ওরা কিছু না কিছু খেতে লাগলো। তখন কুশান বলল
-তুষার আমি তোমাকে কিসের জন্য ডাকছি তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো (কুশান)
-জী ভাইয়া (তুষার)
-তো তোমার কি মত (কুশান)
তুষার কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তুষারকে কোনা কথা না বেলতে দেখে কুশান আবার বলল
-তুষার আমি সরাসরি বলছি তুমি কি এ বিয়েটা মেনে নিয়েছো নাকি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো দেখো আমি আমার ফ্যামেলির প্রতিটা মানুষকে খুব ভালোবাসি তেমনি আমার বোন দেরও ওদের এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার কথা আমি কখনো মাথাতে ও আনে নি। আমি সময় নিয়ে আমার বোনদের জন্য বেষ্ট লাইফ পাটনার এনে দিতে চেয়েছি। কিন্তু এর মধ্যে তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো তো তোমার কি মত বলো (কুশান)
-না ভাইয়া আমার লাইফে এমন কেউ নাই (তুষার)
-তো তুমি কি এ বিয়েটা মানছো (কুশান)
-জী (তুষারের এমন কথায় ওর ফেন্ডদের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম)
-ভালোবাসো কুয়াশাকে? (কুশান)
তুষার কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলো। তা দেখে কুশান বুঝতে পেরে ওর মুখেও হাসি ফুটলো।
-তোমার বাবা-মাকে জানিয়েছো? (কুশান)
তুষার কাটকাট জবাব দিলো
-না (তুষার)
-তাহলে আমি জানাবো কি? (কুশান)
তুষার কিছু বললো না। দেখে কুশান হাসলো
-বাবা-মায়ের ওপর রাগ করে থাকা ভালো না বুঝলে সব ঠিক না করে তুমি উল্টো রাগ করে বসে আছো আজব ছেলে তো তুমি, ছোটবেলার বুদ্ধি খেয়ে ফেলছো (কুশান)
কুশানের কথা শুনে তুষার চমকালো। কুশান মুচকি হেসে বলল
-চাপ নিও না মাথায় আমি তোমার বাবাকে চিনি তোমাকেও ছোট থাকতে দেখছি তাই বললাম (কুশান)
-কি ভাবে? (তুষার)
-তোমার বাবা আর আমার বাবা কলেজ লাইফের ফেন্ড সেভাবেই (কুশান)
-ওহ (তুষার)
কাল রাতেই তুষারের সব ইনফরমেশন কালেক্ট করছে মেঘ। কুশান সেগুলা দেখে খুশিই হইছিলো তুষারে বাবা যেহেতু ভালো মানুষ তুষারও ভালো হবে ভেবে নিয়েছিল। আর সেটা সামনাসামনি কথা বলে একে বারে ক্লিয়ার হয়ে গেলো কুশানের।
তখন কুশ আর শান গুটিগুটি পায়ে শিড়ি ধরে নিচে নামছে আর কান্না করছে সে কান্নায় কোনো শব্দ নাই। সবার দৃষ্টি সে দিকে গেলো ওরা নিচে নেমে এতো মানুষ দেখে ঘাবড়ে গেলো। আস্তে আস্তে কুশানের কাছে গেলো কুশান ওদের দুজনকে কোলে নিলো ওরা দুজন কান্না বন্ধ করে সবার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
-এই বাবু এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমাকে আজ সুন্দর লাগছে বুঝি (রিদ)
রিদের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসলো। এর মধ্যে কুয়াশা আর মেঘা ও নিচে নেমে এলো। তুষার আর তুষারের ফেন্ড দের দেখে কুয়াশা অসস্তি লাগতে লাগলো। কুয়াশা জানতো না ওরা আসবে সেটা।
-আরে তোমরা দু’জন কেমন আছো? (রুকাইয়া)
-ভালো আপনারা কেমন আছেন আপু (মেঘা)
-হ্যাঁ আমরাও ভালো আছি কলেজে আসছো না যে? (মুন)
-হ্যাঁ যাবো কিছুদিন পর (মেঘা)
-কুয়াশা তোমার কি শরীর খারাপ (তন্নি)
-আব না আপু (কুয়াশা)
-আচ্ছা তাহলে তোমরা কথা বলো আমাকে যেতে হবে (কুশান)
-আচ্ছা ভাইয়া একটা রিকুয়েষ্ট ছিলো (রুকাইয়া)
-হ্যাঁ বলো (কুশান)
-কলেজে আর কইদিন পর পিকনিক যদি ওরাও যদি যেত (রুকাইয়া)
-সরি বোন রাখতে পারলাম না (কুশান)
-ইট’স ওকে ভাইয়া (রুকাইয়া)
-তোমারা দুপুরের খাবার খেয়ে যেও না করবে না (কুশান)
কুশান আর কিছু না বলে কুশ আর শানকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
#চলবে
#tasnim_tamanna