ভালোবাসি প্রিয়তম পর্ব-১৬

0
1185

#তাসনিম_তামান্না
#ভালোবাসি_প্রিয়তম
#পর্ব_১৬

🍁🍁🍁

রাতের খাবার খেয়ে কালকে ট্যুরের জন্য ব্যাগ প্যাক করছে। কিন্তু ওর ট্যুরে যেতে মন চাইছে না কুয়াশাকে দেখতে পাবে না দু’দিন এখন ট্যুর ক্যানসালও করতে পারবে না সব সিনিয়রদের ওপরে দায়িত্ব। তুষার ব্যাগ প্যাক করে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন ওর দরজায় কেউ নক করলো তুষার কিছুটা অবাক হলো এখন কে নক করছে? কেউ তো কোনোদিন ও এমন সময় নক করে না। তুষার প্রশ্ন করলো বলল

-কে? (তুষার)

-আমি দরজা খোল (তুহিন)

তুষার আরও অবাক হলো এতো রাতে তার বাবা ওর রুমের ডাকছে কেনো?কিছু হলো না তো? ভেবে তড়িৎ গতিতে দরজা খুলে তুহিনকে হাসি মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। যতই রাগ থাকুক বাবাতো ভালো না বেসে থাকা যায়। তুষার মুখে যতই যাই বলুক না কেনো বাবাকে ও মনে মনে ঠিকি ভালোবাসে। তুষার মুখে কৃত্রিম বিরক্ত + রাগ নিয়ে বলল

-কি চাই (তুষার)

তুহিন তুষারকে ঠেলে রুমে ডুকে গেলো বেডে বসে রুমটার চোখ বুলালো। তুষার আরো অবাক হলো ওর বাবার কাজে। তুষার নিজেকে সামলিয়ে বলল

-কি হচ্ছে টা কি আমার রুমে (তুষার)

তুহিন রুম দেখতে দেখতে বিরক্তি নিয়ে বলল

-একদম কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করবি না আমার মেয়েকে বিয়ে করছি ও আমার বাড়ি আসার আগে আমি ওর ঘর সাজিয়ে দিবো (তুহিন)

তুষারের এবার রাগ হলো তুহিনের কথা শুনে মনে হচ্ছে তাদের অন্য পাঁচটা বাবা ছেলের মতো সম্পর্ক রাগ নিয়ে বলল

-আপনার এসব আদিক্ষেতার দরকার নাই (তুষার)

তুহিন তুষারের কথায় কষ্ট পেলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না।

-তোকে আগে থেকে একটা কথা বলে রাখি কুয়াশা মা কে যদি তুই কষ্ট দিস বা কোনো ভাবে আঘাত করিস তাহলে আমি নিজে থেকে তোকে পুলিশে দিবো ছেলে বলে পাড় পাবি না আর আমি আদিক্ষেতা করবো কি করবো না সেটা আমার ব্যাপার তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না ট্যুর থেকে এসে অফিসে বসবি এটা তোর কাছে শুনছি না ইট’স মাই ওয়াডার আর তোকে কুয়াশায় ঠিক করবে আমার কিছু করা লাগবে না (তুহিন কথাটা বলে চলে গেলো)

তুষার তুহিনের কথাগুলো শুনে বোকা বনে গেলো তুহিনের যাওয়ার দিকে আবুলের মতো তাকিয়ে রইলো। তুহিন যেতেই তুষার নিজে নিজেই বলল

-যে আমাকে দেখে ভয় পাই সে কি না আমাকে ঠিক করবে কেমনে কি (তুষার)

তুষার আর কিছু না ভেবে কুয়াশার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
.

দুইটা লোক কুয়াশার দুপাশে কুয়াশার হাত ধরে রাখছে মেঘ,মেঘা,পাখি,কুশান ওদেরকে বেঁধে রাখছে গাছের সাথে ওরা কুয়াশাকে ছেড়ে দিতে বলছে। অনেক আকুতি মিনতি করলো কুয়াশাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না একটা লোক এসে কুয়াশার মাথায় রড দিয়ে জোরে বারি মারলো সাথে সাথে লোক দুটো হাত ছেড়ে দিলো। কুয়াশা মাথা চেপে ধরে আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে নিলো রক্তে সারা ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে।

-কুয়াশা (তুষার চিৎকার করে উঠলো)

তুষারের ভয়ে হাত কাপছে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে কাঁপা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। মাথা চেপে কিছুক্ষন বসে রইলো।

-এটা কি দেখলাম না না এটা জাস্ট স্বপ্ন (তুষার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ২.৪৮ বাজে নিজেকে শান্ত করে শুয়ে পড়লো)

আরো কিছুক্ষণ ওভাবে শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসছে না তুষারের চোখ বন্ধ করলেই শুধু কুয়াশার রক্ত মাখা মুখ ভেসে ওঠছে। তুষার আর কোনো কিছু না ভেবে বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

★★★

কুয়াশা প্রতিদিনের মতোই আজও শান্তির ঘুম দিচ্ছে ঘুমের মধ্যে ওর কেমন হতে লাগলো ফট করে চোখ খুলে ওর পাশে ওরই হাত ধরে বসে আছে তুষার। কুয়াশা ঘুম কর্পূরের মতো উরে গেলো। লাফিয়ে উঠে বসলো তুষার কুয়াশা দিকে তাকালো কুয়াশা আরও ভয় পেয়ে যায় তুষারের চোখ জোরা রক্তিম হয়ে আছে মনে হচ্ছে কান্না করেছে। কুয়াশা কাঁপা গলায় বলল

-আ আপনার এ এখানে কে নো (কুয়াশা)

তুষার কুয়াশার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরলো। কুয়াশা অবাক হলো কুয়াশার শরীর কাপনি দিয়ে উঠলো। তুষারকে যে সরিয়ে দিবে সে শক্তিটাও পাচ্ছে না। কুয়াশার কাঁধে গরম তরল কিছু অনুভব করলো আরও অবাক হয়ে কাঁপা হাত তুষারের পিঠে রাখলো।

ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর ভয় সবার মনেই থাকে। ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখার জন্য ওপর মানুষটি তার জন্য হাসি মুখে মরতেও রাজি যদি সে ভালোবাসা সত্যি হয়।

-আপনার কি হয়েছে (কুয়াশা)

তুষার এবারও কুয়াশা কথার এন্সার দিলো না আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে নিলো। কুয়াশা আবার বলল

-আ আপনি কান্না ক করছেন (কুয়াশা)

তুষার এন্সার দিচ্ছে না দেখে কুয়াশা রেগে গিয়ে বলল

-আরে দূর মিয়া কথা কন না কেন রাতের বেলা একটা মেয়ের রুমে আসতে লজ্জা করে না (কুয়াশা)

-আমার বউয়ের কাছে আসছি তাতে তোমার কি একদম চুপ করে থাকো (তুষার)

কুয়াশা বোকা বনে গেলো। কিছু না বুঝে বললো

-আপনার বউয়ের কাছে আসছেন তাহলে তার কাছে যান এখানে কি করছেন (কুয়াশা)

তুষার এবার মুখ তুলে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল

-তুমি কি আমাকে আর একটা বিয়ে করতে বলছো (তুষার)

-মানে আপনি আর একটা বিয়ে করবেন (কুয়াশা অবাক মুখে বলল)

-সেটা আমি কখন বলাম তুমি নিজেই তো বললে তোমার সতিন আনতে বলছো (তুষার)

-আমি আবার কখন বললাম (ভাবুক হয়ে কুয়াশা বলল)

-এতো একটু আগে তুমি বললে না আমার বউয়ের কাছে যেতে এখানে আসছি কেনো তার মানে তুমি আমাকে আর একটা বিয়ে করতে বলছো অবশ্য আমার সমস্যা নাই (তুষার)

-কিহহ!! (কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে বলল)

-জী (তুষার)

মেয়েরা আর যায়ই করুক স্বামী সুখ কাউকে দিতে চাই না।

-তাহলে এখানে আসছেন কেনো যান বের হন আমার রুম থেকে (কুয়াশা রেগে বলল)

তুষার কুয়াশার দিকে তাকিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল

-বউ (তুষার)

তুষারের মুখে বউ ডাকটা শুনে কুয়াশার সারা শরীরে শিহরন বয়ে গেলো চট করে তুষারের দিকে তাকালো তুষার ঘোর চোখে তাকিয়ে আছে। কুয়াশা তুষারের চোখে চোখ রাখতে পারলো না। কুয়াশা নরম হয়ে বলল

-আপনি এতো রাতে এখানে কেনো (কুয়াশা)

-কাল চলে যাবো সকালে তো দেখা করতে পারবো না তাই এখন দেখা করতে এলাম (তুষার)

কুয়াশা চমকে তুষারের দিকে তাকালো

-কোথায় যাবে? (কুয়াশা)

-ট্যুরে (তুষার)

-ওহ (কুয়াশা)

-তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না খুব কষ্ট হচ্ছে একবার জড়িয়ে ধরবে বউ (তুষার)

কুয়াশা তুষারের কাতর কন্ঠে বলা কথাটা না রেখে পারলো না তুষারকে জড়িয়ে ধরলো কুয়াশাও কেমন কষ্ট লাগছে তুষারের চলে যাবা শুনে। অনেকক্ষন জড়িয়ে থাকার পর ছাড়িয়ে তুষার কুয়াশার মুখ দুহাত ধরে বলল

-সাবধানে থাকবে, ঠিক মতো খাবে, আমি ফোন দিলে ফোন ধরতে যেনো লেট না হয় (তুষার)

কুয়াশা পিটপিট করে তুষারের দিকে তাকিয়ে রইলো

-আপনিও সাবধানে থাকবেন, ঠিক মতো খাবেন (কুয়াশার)

তুষার কুয়াশার কথা শুনে মুচকি হাসলো কুয়াশার কপালে ভালোবাসার ছোঁয়া দিতেই কুয়াশা চোখ বন্ধ করে সেটা অনুভব করলো। তুষার মুচকি হেসে চলে গেলো। কুয়াশাও তুষারের কথা ভাবতে ভাবতে লজ্জায় লাল, নীল হতে হতে ঘুমিয়ে গেলো।

★★★

বান্দরবন ট্যুরে এসেছে আজ দু’দিন হয়েছে। রিমা ও ট্যুরে এসেছে আজকাল সে আর তুষারের আশেপাশে তেমন একটা আসে না দূরে দূরে থাকে সেটা দেখে ওরা সবাই অবাক কিন্তু কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি।

তুষারের মন ঠিকছে না কুয়াশাকে একপলক দেখার জন্য ওর মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে কুয়াশা কাল থেকে ফোনটাও ধরছে না কুয়াশার বাসা কেউই ধরছে না সেটা দেখে তুষারের অস্থিরতা আরো বেরে গেলো। তুষার ট্যুর থেকে এসে সোজা কুয়াশাদের বাসায় আসলো। বাসার দারোয়ানকে না দেখে আবাক হলো বেশি না ভেবে ভিতরে গেলো। ভিতরে যেতেই তুষারের পৃথিবী জেনো থমকে গেলো। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সব কিছু কি শেষ হয়ে গেলো? দোষ কি ছিলো? পাপ কি বেশি করছিলো?

#চলবে
#Tasnim_Tamanna

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]